Tuesday, March 31, 2015

ইন্টারনেট যুগে ধর্মান্ধ

সেটা ২০০৫ সাল। মুক্তমনা ফোরামে আরাম করে ধর্মর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে অন্নগ্রহণ করতাম আমরা। বেশীরভাগ প্রবাসী লেখক।  আমি অবশ্য ধর্মকে ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞান দিয়েই বোঝার চেষ্টা করেছি সেই যুগ থেকেই। তখনই মনে হয়েছিল, নেহাত বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্পিড খারাপ। নেট সবার কাছে পৌঁছায় নি। যেদিন সবার কাছে ওয়েব পৌছাবে, জানি না কি হবে। বুঝলাম খুব ভুল ভাবি নি সেদিন।

          ভারত এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মোবাইল সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছে ইন্টারনেট সবার কাছে পৌঁছে দিতে। ইনফ্যাক্ট  স্মার্টফোন সস্তা হয়ে আসার কারনেই ভারত এবং বাংলাদেশের এক বৃহৎ অংশ সবার প্রথমে ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হল। বিশেষত গ্রামের দিকে।

   এর প্রভাব অর্থনীতি এবং সামাজিক দিয়ে অনেক সুদূর প্রসারী।  প্রথমত মেইন স্ট্রিইম মিডিয়াগুলি দিয়ে যেভাবে জনগণকে প্রভাবিত করা যেত আগে গুলিতাপ্পা গপ্পো দিয়ে-সেটা করা যাচ্ছে না । ধর্ম বা রূপকথার চরিত্রগুলোকে যেভাবে "প্রোটেকশন" দিত মেইন স্ট্রিম মিডিয়া সেটা আর সম্ভব না ।  ফেসবুকের মাধ্যমে সহজে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন এক্টিভিস্টরা। ফলে অনলাইন এক্টিভিজম অনেক বেড়েছে। গণতন্র অনেক ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ হচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো হবে।

  এবার ভাবা যাক কেন মেরে ফেলা হচ্ছে ওয়াশিকুর বাবু বা অভিজিত রায়কে?  এটা কি শুধুই ধর্মান্ধতা? 

  আমি ধর্মর আলাদা কোন অস্তিত্ব স্বীকার করি না । ধর্ম আমার কাছে রাজনীতি এবং সমাজের জন্য দরকারী, অদরকারী মিথ। এদের লেখালেখিতে কিসের, কাদের অসুবিধা হচ্ছে?

নিশ্চিতভাবেই তাদের যাদের ধর্ম বেচে খেতে হয়, ক্ষমতা দখল করতে হয়। ক্ষমতা থেকে আসে টাকা।  লোকের ধর্ম বিশ্বাস চলে গেলে হুজুরেরা খাবে কি? তাদের লোকে মানবে কেন ? রাজনীতিবিদরাই বা লুটপাঠ করবেন কিভাবে?

ধর্মান্ধরা হত্যা করছে এটা সরলীকরন। যেসব হার্মাদরা তীনুদের হত্যা করত আগে তারা কি কমিনিউস্ট ধর্মান্ধ ছিল ? না একটাও খুন হয়েছে আদর্শিক কারনে? খুঁজলে দেখা যাবে প্রতিটা খুন জমি আর টাকার লড়াই। আজকে তীনুরা কি অন্যকোন মহান কারনে সিপিএমের লোকেদের হত্যা করছে? মোটেও তা না । প্রতিটা হত্যার কারন বস্তুবাদি।

 ধর্মান্ধ, পার্টি-অন্ধ-এসব না বানালে কিছু লোক ক্ষমতা দখল করে খাবে কি করে?

 এখন ইন্টারনেট এক্টিভিস্টরা বাধ সাজছে। মহম্মদ, লেনিন স্টালিন গান্ধী- কারুর সাজানো রূপকথা চলছে না । নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ইত্যাদি চরিত্রের মধ্যে যে কত দ্বিচারিতা ছিল-ইন্টারনেট না থাকলে কি করে জানতাম ?  তার জন্য লাইব্রেরী ইত্যাদি ছুটতে হত। এখন একটা গুগল ক্লিকেই বেড়িয়ে আসছে মহম্মদ বলে আদৌ কেও ছিল কি না সেটা ইসলাম ভাল না খারাপ, তার থেকেও অনেক বেশী মৌলিক প্রশ্ন।

 ধর্ম ভাল না খারাপ-এগুলো অবান্তর আলোচনা। আমি আগেও লিখেছি-আমাদের সবার ধর্ম আছে। আমরা সবাই ধার্মিক। ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না করি-একটা সেট অব প্রিন্সিপালে বিশ্বাস রাখতেই হয়। আসল ক্ষীর হচ্ছে রাজনীতিতে। দেখতে হবে রাজনীতি কিভাবে মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ব্যবহার করছে।  ইসলাম বা গীতার ধর্ম আসলেই রাজনীতি। ক্ষমতাদখলের রাজনীতি। সমস্যা হচ্ছে সেইসব ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি  নিয়ে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে ক্ষমতায় যেতে চাইছে।

 ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পারলে-এটা সমস্যা হত না । কিন্ত সব ধর্মই আসলে রাজনৈতিক মতবাদ। প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে ইতিহাসে এদের উদ্ভব। সুতরাং ধর্মকে রাজনীতি থেকে কোন দিন আলাদা করা যাবে না ।উপায় একটাই। লোককে আরো উন্নত ধর্ম  বা জীবন মার্গ দেখানো। যা যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
 

1 comment:

Unknown said...

দারুণ যুক্তিনির্ভর বক্তব্য।