Friday, June 18, 2010

পাটের জিন মানচিত্র ঃ মাকসুদল আলমের পথই সমাধানের পথ



খবরটা নানান বাংলাদেশী ব্লগে কালকেই পড়েছিলাম। আজ আরেকটু জানলাম। জেনেটিক্স বিজ্ঞানী মাকসুদল আলম ঢাকাতেই তৈরী করেছেন পাটের জেনোম। যার ফলে তৈরী করা যাবে নতুন ধরনের পাট-যা পাটচাষ এবং শিল্পের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। তৈরী করা যাবে উন্নত মানের ফাইবার, খরচ কমানো যাবে জাগ দেওয়ার ( জলে পাট পচানো) । অথবা সেচের।

মাকসুদল আলম আমেরিকাতে বিজ্ঞানী ছিলেন-পেঁপের জেনোম নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে পাটের জন্যে কিছু করতে চাইছিলেন-এবং এক সংবাদপত্রে তার প্রবন্ধের সূত্র ধরে বাংলাদেশের বর্তমান হাসিনা সরকার ঢাকাতে তার গবেষনার ব্যাবস্থা করে দেন। বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ তার প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন-সরকারই অর্থের ব্যাবস্থা করেছে। অবশেষে এল সাফল্য!

অনেক কারনেই এই সংবাদ আমার জন্যে দারুণ আনন্দের। আমি বহুদিন থেকে বলে আসছি-পাট শিল্পের সমস্যাগুলির জন্যে রাজনীতি করলে সমস্যা বাড়বে। দরকার বিজ্ঞান গবেষনার-উন্নত প্রযুক্তির যাতে পাট মার্কেটে টিকে থাকতে পারে। পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ পাটকল বন্ধ। শুধু লক আউট । দলাদলি। শ্রমিকদের আত্মহত্যা। আমাদের ব্যারাকপুরে একটি পাট গবেষনা কেন্দ্র আছে-লোকমুখে শুনেছি সেখানে পাটের মেটিং এর বদলে পার্টির মিটিং হয়। সব থেকে বড় কথা ভারতে ১৫০ টি কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষনাকেন্দ্র আছে। তারা পাটচাষিদের জন্যে কি করেছে?

আমার ঠাকুরদা পাট ব্যাবসায়ী এবং পাটচাষি ছিলেন। সেই সূত্রে ছোটবেলায় দেখেছি পাটের ব্যাবসার রমরমা। পাটের সিজন ছিল ফেস্টিভ। আনন্দমুখর। নৌকা করে পাট আসত আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে। নৌকাতে পাটের ওপর চেপে কত এদিক ওদিক করেছি মুফতে! তারপর আশির দশক থেকেই কেমন যেন সব গুটিয়ে গেল। কারনটা সিম্পল। পাট চাষের খরচ বাড়ছিল, অথচ দাম বাড়ছিল না। কোলকাতার পাটের কলগুলো একের পর এক বন্ধ হচ্ছিল। পাট সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসের দিকে বোনা হয়।প্রচুর জল লাগে প্রাথমিক অবস্থায়। সেচের খরচ বেড়েছে, কীটনাশকের খরচ বেড়েছে। আর দাম কমেছে। আমার মফঃশহরে ছিল শখানেকেরও বেশী পাটের গুদাম। নব্বই দশকের শেষে সেখানে দেখেছি পাট পচছে।

আর আমাদের রাজনীতিবিদরা ( সিপিএম কংগ্রেস সব সমান) কি করছিলেন? একে অপরকে গালাগাল দিয়ে পাটকলের মালিকদের থেকে দু পয়সা নিয়ে, তাদেরকে শ্রমিকদের পি এফ এবং গ্রাচুইটির টাকা মারতে সাহায্য করেছেন। গবেষনা এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে যে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে-এই চিন্তাটা তাদের মাথাতেই নেই। তারা শুধু জানেন কি করে রাজনীতি করে নিজেদের গোছানো যায়।

শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উনি বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন। জয় ওয়াজেদ দেখলাম বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে আই টি সিস্টেম কে কাজে লাগাতে চান। শেখা হাসিনা এবং জয় ওয়াজেদ যা হাতে করে দেখাচ্ছেন-এই জিনিসগুলি নিয়ে আমি অনেকদিন লিখে আসছি-ভারতে অনেক ব্লগারই এই নিয়ে লিখছেন। কিন্ত আমাদের রাজ্যের রাজনীতিবিদরা এত নিরক্ষর এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি খেয়োখেয়ি করতে ব্যাস্ত, তাদের এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। দিল্লীতে বরং এই নিয়ে চিন্তা ভাবনা অনেক হচ্ছে-কিন্ত এত দালাল ওখানে, সেখানেও ভাল কিছু হওয়া কঠিন। এই জন্যে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ যে উনি একটা পায়োনিয়ারিং কাজ করে দেখালেন-দালাল আর নিরক্ষর রাজনীতিবিদদের পাশ কাটিয়ে , তৃতীয় বিশ্বে এটা করা সত্যিই কঠিন ছিল।

Thursday, June 17, 2010

রাষ্ট্রদ্রোহি-আরেকটি তিন পয়সার পুলিশ-মিডিয়া পালা


সিরামিক বিজ্ঞানী নিশা বিশ্বাস, লেখক মানিক মন্ডল এবং অধ্যাপক কনিষ্ক চৌধুরী।

রাষ্ট্রদ্রোহিতা-মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন শালবনী থেকে। তার থেকেও মারাত্মক খবর তাদের জামিন হয় নি-চোদ্দদিনের জেলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে মেদিনীপুরের জেলা কোর্ট। এরা নাকি মাওবাদি এবং জনগণের কমিটিকে সহযোগিতা করছিলেন! কিভাবে করছিলেন? সরকারি কৌন্সুলী মতে ইনারা মাওবাদি এবং জনগণের কমিটির সাথে বৈঠক করেছেন! এতেব তারা সহযোগিতা করেছিলেন। যদিও তাদের সাথে তিনজন সাংবাদিককে তারা নিয়ে গিয়েছিলেন-যাতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং হয় । তারাও জানতেন সিপিএমের পুলিশ তাদেরকে কেস খাওয়াবে-সেই জন্যেই সাক্ষী হিসাবে সাংবাদিকদের সাথে করে নিয়ে ছিলেন তারা। কিন্ত তাতেও শেষ রক্ষে হয় নি। বুদ্ধের পুলিশের অপার মহিমা- এই তিনজন বুদ্ধিজীবিকে জেলে পুরে দিল। রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারায় এমন কেস খাওয়াল-এখন আগামী পনেরদিন ইঁদুরের সাথে ভাত ভাগ করে খেতে হবে ইনাদের।

প্রিয় পাঠক ভেবে দেখুন। দৃশ্যটি মানসপটে কল্পনা করুন। ওরা তিনজন মাওবাদিদের সহযোগিতা করতে চলেছেন সাংবাদিক সহযোগে-নিজেদের ঢাকঢোল পিটিয়ে। সব থেকে বড়কথা ওদের ইতিহাসও বলছে না ওরা কমিনিউস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন অতীতে। খুব জলের মতন পরিস্কার-ইনারা মানবতাবাদি-আদিবাসিদের আসল অবস্থাটা মানবাধিকার সংস্থা থেকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের কাছে বন্দুক গুলি বিপ্লবী সাহিত্য-যা কিছুকে রাষ্ট্র ভয় করে-কিছুই পাওয়া যায় নি! তাও এরা রাষ্ট্রদ্রোহি!

কারন ইনারা আদিবাসিদের সাথে কথা বলেছেন!

বুঝুন অবস্থা! এরা মানবাধিকার কর্মী-এরা কি জঙ্গলমহলের গাছের সাথে কথা বলতে ওখানে গেছেন নিজেদের চাকরি ছেরে? পুলিশ না হয় তার সিপিএম প্রভুকে খুশী করতে কেস দিল- তারা প্রভুর কথামত সব সিপিএম বিরোধিকেই হেনস্থা করার জন্যে দিয়ে থাকে-কিন্ত কোর্টের আক্কেলটা কি?

অবশ্য ভারতীয় কোর্টে প্রেসিডেন্টের নামেও গ্রেফতারী পরোয়ানা বার করা যায় মাত্র ৪০,০০০ টাকায়। এই যখন দেশের আইন-বিচারের অবস্থা-সেই দেশে ভূপাল গ্যাস ট্রেজেডির লোকেরাও ইনসাফ পাবেন না। মিডিয়া এন্ডারসন নামে স্কেপগোট খুঁজে আসল সমস্যা থেকে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবে।

কাল যে ৮ জন মাওবাদি কিশোর কিশোরী মারা গেল-তাদের মৃতদেহ শুঁ য়োরের মতন ঝুলিয়ে জঙ্গল থেকে বার করা হল-আর পরের দিন চারিদিকে মিডিয়াতে জওয়ানী জয়ধ্বনি। সব থেকে বেশী উল্লাসিত দেখলাম "বামপন্থী আজকাল"! কোন কাগজ়ে কোন বিশ্লেষন নেই কি করে এই বাচ্চাগুলো মাওবাদি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? ওদের সমস্যাটা কি? আর নিশাদেবী মানিকবাবুর মতন যারা সেই আসল কাজটা করতে যাচ্ছেন, তাদের ধরে জেলে ভরা হচ্ছে। সাথে আদিবাসিদের রাগপ্রশমন করতে দুটাকা কিলোদরে চাল! রাষ্ট্রীয় ফর্মুলা-অভুক্ত পেটই বিদ্রোহের ধাত্রীগৃহ কি না!

অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিশেষত সিপিএমের তরফ থেকে সিগন্যালটা পরিস্কার। ওরা জানে আদিবাসিদের আসল খবরটা বেড়িয়ে পড়লে ওখানে ওদের ঠিকেদারি আর চলবে না। আদিবাসিদের উন্নতিখাতে আসা কোটি কোটি টাকা যারা মেরেছে, সেই সিপিএম পার্টির লোকজন এতদিনের মৌরসীপাট্টা ছারবে কেন? বিশেষত হাতে যখন আছে পুলিশ! সুতরাং যারাই মাওদের পক্ষে কথা বলতে যাবে, তারাই রাষ্ট্রদ্রোহি! আমি ফেসবুকে একবার জনগণের কমিটির হয়ে সওয়াল করেছিলাম-সিপিএম পার্টির এক নব্য বুদ্ধিজীবিনী ( যিনি পার্টির টাকায় ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছেন) আমাকে শাসিয়ে গিয়েছিলেন এসব লিখলে পুলিশ নাকি আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ধরবে! নেহাত আমি দেশের বাইরে থাকি। ভেবে দেখুন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে আমার থেকে বেশী কেও লিখেছে বলে জানা নেই-তবুও যদি আমি আদিবাসিদের দাবী নিয়ে, জনগণের কমিটির হয়ে কথা বলতে যায়, ওরা-সিপিএমের ভাগারের দল আমাকেও মাওবাদি বানিয়ে দেবে!

অর্থাৎ সিপিএম চাইছে না আদিবাসিদের অবস্থার আসল সত্যটা সামনে আসুক। তাদের শোষন যন্ত্রের রূপটা ধরা পড়ুক। তাই পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যারা এই সত্যকে উদ্ঘাটন করতে চান।

রাষ্ট্র কিভাবে পুলিশের সাহায্যে শোষন অব্যাহত রাখে-সেটাত কমিনিউস্টরাই পৃথিবীকে শিখিয়েছে। খুব সম্ভবত মার্ক্স সাহেব কবর থেকে সিপিএমকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, তার তত্ত্বের লাইভ ডেমো দিতে। আমি দেখতে পাচ্ছি মার্ক্স সাহেব বুদ্ধকে কানে কানে বলছেন-গত ত্রেত্রিশ বছর ধরে আমার নামে অনেক ছরিয়েছ-এবার পুলিশ দিয়ে শোষন অব্যাহত রেখে আমার তত্ত্বকে পশ্চিম বঙ্গে সামান্য প্রতিষ্ঠা দাও। তোমার পুলিশের অত্যাচারের মাধ্যেমেই লোকে অন্তত জানুক, আমি কিছু কিছু ঠিক কথাও বলেছিলাম।

Wednesday, June 16, 2010

মাওবাদি কিশোরঃ কে অপরাধি?




ছেলেটার দিকে তাকান। বয়স? ১০? ১২?
নাম? ক মুর্মু বা খ মুর্মু। যারা ঝাড়্গ্রাম বা মেদিনীপুরের আদিবাসী এলাকা ঘুরেছেন-তাদের কাছে এই মুখ কি খুব অচেনা?

ছেলেটা যৌথবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। সংঘর্ষে মারা গেছে ওর ৮ বন্ধু-তিন জন তরুণী, পাঁচ জন তরুন। তাদের মুখ কি এদের থেকে আলাদা? না বোধ হয়?

এবার আসুন সিভিল-মানে ভদ্র সমাজের দিকে আমরা টেলিস্কোপ ফেলি। কি দেখবেন? একদল বলবে ব্যাটারা পিঁপড়ের মতন জওয়ানদের মারছিল, সিপিএম করার অপরাধে দিন মজুর মারছিল, আর ওদের মারলেই মানবতাবাদিরা , ইয়ে আমাদের অরুন্ধুতিদি ট্যাঁফো করে কেন?

আরেকদল বলবে, বর্বর রাষ্ট্র। এই কিশোর কিশোরীদের এই ভাবে অভিমন্যুর চক্রবুহ্যে বেঁধে হত্যা করল। এরা কেন মাওবাদি হল দেখতে হবে না? যদি ওরা মানুষের সন্মানে বেঁচে থাকতে পারত-ওরা কি মাওবাদি হত? যদি ওদের জমি, কর্পরেট দখল করে না নিত-ওরা কি বন্দুক তুলে নিত? গণতন্ত্র ওদের কোন সমাধান দেয় নি। তাই ওরা বন্দুক তুলে নিয়েছে।

সরকার যে ওদের জন্যে কিছু বরাদ্দ করে নি তা না। যথেষ্টই করেছে। অন্যদের থেকে যে কম করেছে তাও না। কিন্ত সেই টাকা গেছে অনুজ পান্ডের অট্টালিকা বানাতে। ঘাবরাবেন না-আমাদের যাদের গ্রামে গঞ্জে ঘোরা অভ্যেস আছে-তাতে আজকাল গ্রামে গ্রামে অট্টালিকা চোখে পড়ে-এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বাড়ির মালিক পার্টির এই বা ওই। আমি শুধু সিপিএমকে দোষ দিচ্ছি না। টাকা মারার ব্যাপারে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি ভাই ভাই। কোন পার্থক্য নাই। মোদ্দা কথা খেলাটা ভদ্রলোকেদের-যা্রা তথাকথিত শিক্ষিত-রবীন্দ্রিক বাঙালী এবং আরো অনেক কিছু-তারাই আদিবাসিদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছেন। ওরা ছোটলোকেদের জাত ত! বেঁচে থাকতে সবার জন্যে অত ভাবলে কি ভাবে হবে? আমি বেশ ভালো আছি-আমার বাথরুমে জয়পুরের মার্বেল পাথর লাগছে। ছেলেটাকে প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতায় ঢুকিয়ে দিয়েছি। ঠিকেদারদের কাছ থেকে যা আসে উপরি ইনকাম-তাতে বছরে দুবার এদিক ওদিক ঘুরে আসি। অতসত ভেবে কি হবে ওই টাকাটা আদিবাসিরা পেল কি না পেল? ওরা সাপ খেয়েই ভাল আছে। আজকাল সবার দুপয়সা হচ্ছে-আমাদের বাড়ীটা একটু আধুনিক না হলে কি করে সভ্য বাঙালী সমাজে প্রেস্টিজ থাকে বলুন ত?

বন্দুক তোলা অবশ্যই কোন সমাধান না। মাওবাদের স্বরণ নেওয়া আরো ভুল-কারন এই কমিনিউস্টরাই যেভাবে আদিবাসি সংস্কৃতি এবং আদিবাসিদের তাদের বাসভূমি থেকে তাড়িয়েছে মধ্য এশিয়া ও চীনে-তার তুলনা গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। কিন্ত আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত সভ্য বাঙালী বলে মনে করি, তারাই কি কোনদিন আদিবাসি দের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছি? বরং তার বদলে কি করে সিপিএমের দুঃপয়সা অনুগ্রহ পেয়ে বুদ্ধিজীবি হওয়া যায় বা দুটো সুবিধা করে নেওয়া যায় ( লোকসভা নির্বাচনের পরে, সেই তালিকায় এখন তৃনমূল ও এসেছে) -আর না হলে বিদেশে ভাল চাকরির লোভে দেশের সমস্যাগুলোকে মায়া করে দিয়েছি। গ্রামের গঞ্জে এই অট্টালিকাগুলো ত একদিনে হয় নি-আর দুবিগত পাশে বস্তির সমাহার ও আজকের দৃশ্য না। কোথায় ছিলাম আমরা তখন? বড়জোর মনে রাগপুশে আবার সেই পার্টি অফিসের পাশেই ঘুর ঘুর করেছি! আর আজ যখন, মাওবাদি সমস্যা দগদগে ঘায়ের মতন ভারতের গায়ে ফুটে উঠছে-আমরা দরদী গান বা মিলিটারি হুমকি ছারছি!

এই ছবিটা দেখে গুরুদেবের দুই ছত্র মনে এলঃ

পথে-চলা এই দেখাশোনা ছিল যাহা ক্ষণচর চেতনার প্রত্যন্ত প্রদেশে , চিত্তে আজ তাই জেগে ওঠে ; এই-সব উপেক্ষিত ছবি জীবনের সর্বশেষ বিচ্ছেদবেদনা দূরের ঘণ্টার রবে এনে দেয় মনে ।

Monday, June 14, 2010

মার্ক্সবাদের আসল নকল ঃ জনবিপ্লব বনাম বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লব

এই ব্লগটা অনেক দিন আগে লেখার ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম অনেকটা সময় নিয়ে লিখব। কিন্ত আপাতত হাতে সময় নেই-কাজ আর ফ্যামিলি প্রেসারের মাঝে সাজে যা সময় পায়, তার মধ্যেই লিখি। তাই লিখেই ফেললাম।

সাইরিল স্মিথের মার্ক্সকে নবমূল্যায়ন করার একটি প্রবন্ধের ভূমিকাটি আমার ভালো লেগেছিল-যদিও আমি তার অনেক বক্তব্যের সাথেই একমত না। তবুও সাইরিলের সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমি ব্লগটি লিখছি। বক্তব্য খুব সোজা। আমি আরেকটু বলি।

বিজ্ঞানে আইনস্টাইনবাদ বা নিউটনবাদি হয় না। কেন হয় না? কারন এখানে কোন তত্ত্বের প্রতিই আমাদের গোঁড়ামো থাকে না। সব তত্ত্বের ত্রুটি নির্ধারনের মাধ্যেমেই আমরা নব নতুন বিজ্ঞান লাভ করি। পর্যবেক্ষনের ওপর ভিত্তি করে সমালোচনা এবং ত্রুটিই যেকোন অভিজ্ঞতাবাদি দর্শনের ভিত্তিপ্রস্তর। সমালোচনাই জ্ঞানের উৎস, আনুগত্য না।

তাহলে মার্ক্সবাদি এল কি করে? মার্ক্সবাদের মূলেই আছে এন্টিথিসিস। অর্থাৎ ত্রুটি এবং বিপরীত মুখী সিদ্ধান্তটি খোঁজ। সেখান থেকে সিন্থেসিস কর। বিজ্ঞানের পদ্ধতির সাথে কোন পার্থক্যই থাকা উচিত না মার্ক্সবাদের-এবং সেই জন্যেই মার্ক্সবাদি বলে কোন প্রাণির জন্মও সম্ভব না। কারন সমাজ পরিবর্তনশীল- এবং থিসিস এন্টিথিসিসের মধ্যে দিয়ে যে সিন্থেসিসের জন্ম, সেই সিন্থেসিসের এন্টিথিসিসের মধ্যে দিয়েই নব নব তত্ত্বের উদ্ভাবন হওয়ার কথা। কিন্ত সেসব কিছুই হয় নি গত দেড় শতকে। মার্ক্সবাদ ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মধ্যে প্রথমে ঢোকে-তাতেও কিছু সত্য ছিল-কিন্ত এর পরে লেনিনের হাতে পরে এর মধ্যেও যেটুকু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিছিল-সেটিও অচিরে কবরে ঢোকে। মার্ক্সবাদের ধর্ম হয়ে ওঠার কাহিনী আমি পাঁচ বছর আগেই লিখেছিলাম।

স্যার কার্ল পপার এবং তার অনুগামীরা যতই প্রমাণ করুন মার্ক্সবাদের কবর কিভাবে দেওয়া হয়েছিল, অধিকাংশ লোক, যারা নিজেদের মার্ক্সবাদি বলে মনে করে, তারা মার্ক্সকে বুঝেছে পার্টি লাইন অনুসারে।
আমাদের ভারতে অনেক মার্ক্সবাদি দল-সিপিএম, মাওবাদি, লিবারেশন। এদের সবার নিজস্ব মার্ক্সবাদ আছে। যিনি পার্টি মেম্বার হবেন, তাকে মার্ক্সবাদের সেই ব্যাখ্যাটিই মানতে হবে। ফলে মার্ক্সবাদ কি, তা দীর্ঘদিন নির্নয় করেছে সোভিয়েত কমিনিউস্ট পার্টি-কারন তাদের অর্থ সাহায্যেই চলেছে বিশ্বের বাকীদেশের কমিনিউস্ট পার্টিগুলি। এই জন্যেই মার্ক্সবাদের সঠিক এবং মুক্ত চর্চা মোটেও হয় নি-এবং মার্ক্সিয় সাহিত্য ও দর্শনের ওপরে প্রায় সব লেখাকেই আমার আবর্জনা বলেই মনে হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে লেখকের দর্শন শাস্ত্রে কোন জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও এখান ওখান থেকে না বুঝে টুকে দীর্ঘ সব প্রবন্ধ রচনা করে গেছেন তারা। ভারতেও সিপিএম, সিপি আই এম এল বা মাওবাদিদের মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা সেই একই ধরনের আবর্জনা।

এর মানে অবশ্যই এই নয় সোভিয়েতে ইউনিয়ানের সবাই গর্দভ ছিলেন-দর্শন শাস্ত্র তারা বুঝতেন না। মোটেও তা না। বরং ১৯৬০-৭০ সালের মাঝামাঝি পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দার্শনিকের কাছেই মার্ক্সবাদ বনাম লেনিনবাদের পার্থক্য ভাল ভাবেই ধরা পড়েছিল-তারা মার্ক্সবাদ সঠিক ভাবেই অনুধাবন করেছিলেন-কিন্ত যেহেতু পার্টিলাইনের বাইরে মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা দিতে গেলে সাইবেরিয়াতে কাটাতে হত বাকী জীবন-তারা একটি চতুর স্ট্রাটেজি নেন [1]। সাপ মেরে লাঠি না ভাঙার এই নীতি থেকে মার্ক্সীয় "বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লব" বলে একটি রাজনৈতিক দর্শনের তারা জন্ম দেন। কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে পার্টির কুনজর থেকে নিজেদের বাঁচাতে তারা মোটেও তাদের মতবাদই সঠিক মার্ক্সবাদ তা দাবি করেন নি। বরং কমিনিউস্ট বিপ্লবের পরিপূরক হিসাবে, ধণতান্ত্রিক সভ্যতার সাথে সমান তালে প্রতিযোগী করার জন্যে, তারা এটা উপস্থাপন করেন [২]। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পরে, ইউরোপের এক বিশাল অংশের একাডেমিশিয়ানরা মেনে নেন, জন বিপ্লব না, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লবই প্রকৃত মার্ক্সবাদি রাজনৈতিক পথ। কারন মার্ক্সীয় মতবাদের কোথাও লেখা নেই জনবিপ্লব বা কোন আদর্শবাদ দিয়ে সমাজ়ের পরিবর্তন হয়। মার্ক্সীয় মতবাদে সমাজের পরিবর্তন আসে এক মাত্র উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনে। আর উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন কি আদর্শবাদ দিয়ে হয়? একমাত্র বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতিই উৎপাদন ব্যাবস্থা বদলাতে পারে। অবশ্য অনেক মার্ক্সবাদিই বলবেন কেন? উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর জনগণের মালিকানা এলেই উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেল। এতেব সমাজও বদলে গেল। বেসিক্যালি এটাই ছিল দীর্ঘদিনের মার্ক্সবাদ-যা আদি মার্ক্সিয় তত্ত্বের অপব্যাখ্যা ছারা কিছু না এবং মার্ক্সের অধিকাংশ রচনার সাথে সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রিতে এর অবস্থান। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ানে খুব ভালোভাবেই প্রথম ব্যাখ্যাটিকে তাত্ত্বিক এবং বাস্তবভাবে গ্রহণ করা হয় এবং সেই অনুপাতে সোভিয়েত ইউনিয়ান আমেরিকার থেকে অনেক বেশী টাকা খরচ করেছে গবেষনাতে। কিন্ত বাস্তবে বর্তমান পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার এসেছে আমেরিকা থেকে। "ক্যাপিটাল" থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জনমুখী নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন সম্ভব হয় নি সোভিয়েত ইউনিয়ানে। ফলে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইলেকট্রনিক্স , টিভি, রেডিও থেকে ইলেকট্রিসিটি-সব কিছুই ধণতান্ত্রিক সভ্যতা থেকে এসেছে-কিছু মারণাস্ত্র ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ান সার্বিক ভাবে ব্যার্থই বলা যায়।

এই ব্লগে মার্ক্সীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লবের রাজনৈতিক লাইন নিয়েই আমি লিখছি।

বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিই মানুষের প্রতিটি জ্ঞানের ধারা নিয়ন্ত্রন করবে!
আমি পাঁচ বছর পূর্বে বিজ্ঞানবাদ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম-বক্তব্য ছিল -ভাববাদি বক্তব্য বলে আর কিছু থাকবে না। আস্তে আস্তে আমাদের জ্ঞানের প্রতিটি শাখাই বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হবে-এবং তার একটি দীর্ঘ বিবরণ দিয়ে ছিলাম।
( এটি ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন-অনলাইন পড়লে অক্ষর ভেঙে যাবে)। বাস্তবে ১৪০ বছর পূর্বে বস্তুবাদের বিবর্তন হিসাবে মার্ক্স এবং এঙ্গেলেস ঠিক একই কথা বলে গেছেন । (অবশ্য তাতে এই প্রবন্ধ পড়ে কমিনিউস্টদের আমাকে গালি দেওয়া আটকায় নি। যদি লিখে দিতাম, মার্ক্স আর এঙ্গেলেসের কথাকেই এক বিংশ শতাব্দির পার্সপেক্টিভে লিখছি-তাহলে হইত ধন্য ধন্য করতেন! বাম বাঙালী শুধু নামে চেনে! )

Outlines of the critics of Political Economy প্রবন্ধে
মার্ক্স এর বক্তব্য ছিল বিজ্ঞানের বলেই মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এবং ধণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় "পুঁজির" উদ্ভাবনের মাধ্যমেই মানুষ বিজ্ঞানের দ্বারা উন্নততর উৎপাদন করছে-এই জন্যেই বিজ্ঞানকে একটি স্বয়ংপূর্ন শাখা হিসাবে দেখতে হবে, যেখানে উৎপাদন ব্যাবস্থাটিই বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা হিসাবে পরিণত হচ্ছে ( The productive process becomes sphere of application of science)।

শেষের কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরবর্তীকালে এরই সূত্র ধরে Buchholz, Burruchter and Hoffmann বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে মার্ক্সিয় দৃষ্টিভংগী নিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন [3]।

বুছোল্ড মূলত তিনটি কারনকে জোর দিলেন-অবশ্যই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ানের পরিপেক্ষিতে। কিন্ত তার বক্তব্যের বেশ কিছু অংশ এখনো মুল্যবান

(১) ঐতিহাসিত বস্তুবাদের আসল চালক, বা সমাজ পরিবর্তনের মূল ক্যাটালিস্ট প্রযুক্তি। সুতরাং সমাজতান্ত্রিক সিস্টেম প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে না গঠিত হলে তা ধণতান্ত্রিক সমাজের উৎপাদনের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে-
(২) সামাজিক বিবর্তন মানে একই সাথে রাজনীতি, চিন্তাধারা, পোষাক, উৎপাদন ব্যাবস্থা, অর্থনীতি-সব কিছুর বিবর্তন, যারা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং মার্ক্সীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা কখনোই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন হতে পারে না-কারন এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মধ্যে দিয়েই সমাজের নানান বিবর্তনগুলির মধ্যে যোগসূত্র সংস্থাপন সম্ভব।
(৩) এই মুহুর্তে আমাদের সমাজের বৌদ্ধিক সংঘাত সাংঘাতিক রকমের বেশী-নানান ধরনের রাজনৈতিক ও আদর্শবাদের মধ্যে , তাদের অনুগামীদের মধ্যে হিংসা এবং যুদ্ধ অব্যাহত। এই সংঘাত কমাতে মানব জ্ঞানের প্রতিটি শাখাতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আবশ্যক ( এই কথাটিই আমি বিজ্ঞানবাদ প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করেছি এবং লিখেছি)

সোভিয়েত এস টি আর স্কুলের আরেকটি বিশেষ অবদান হল, তারা সামাজিক প্রগতিকে দেখছেন, সমাজে বিজ্ঞানের প্রচলন এবং বিজ্ঞানের ভিত্তি কত দৃঢ় তার ওপর ভিত্তি করে [1] । তাদের কাছে প্রতিটি সমাজের প্রগতিশীলতার নির্নায়ক হচ্ছে সেই সমাজে বিজ্ঞানের ব্যাবহার-আর পিছিয়ে থাকাটা মাপা যায় সেই সমাজে ধর্মর ব্যাবহার দিয়ে। এখানে ব্যাবহার কথাটা গুরুত্বপূর্ন-আমেরিকাতে ধার্মিক আছে-কিন্ত ধর্মের ব্যাবহার কিছু রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে সামাজিক আইন কিন্ত সমাজবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করেই বানানো হয়। অন্যদিকে মুসলিম দেশগুলিতে সামাজিক আইন ধর্ম নির্ভর-তাই এই সোভিয়েত স্কুলকে মানলে খুব পরিস্কার ভাবেই ভারতের তথা মুসলিমদেশ গুলির পিছিয়ে থাকার কারন হিসাবে ধর্মকে সরাসরি দায়ী করা যায়।

দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের বামপন্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের চেতনাটাই নেই-ফলে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গে এখন ৩০০ মাদ্রাসা তৈরী করছে মুসলিমদের খুশী করতে। অথচ সোভিয়েত মার্ক্সবাদের এই স্কুলের চর্চায় খুব পরিস্কার ভাবেই ধর্মকেই
প্রগতির বিরুদ্ধে প্রথম অন্তরায় বলে দায়ী করা হয় [১]। কারন এদের মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা সার্বিক-শুধু রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না-আর তা সার্বিক বলেই তারা মনে করেন মার্ক্সবাদের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে আরো বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে-এবং সেই পথের প্রথম অন্তরায় ধর্ম।

তাহলে শ্রেণীদ্বন্দের কি হইল? সাধের শ্রেনী বিপ্লবের কি হইবে?

এরা বলছেন, শ্রেনী দ্বন্দের ভিত্তিও অবৈজ্ঞানিক ভাববাদি সমাজ। বৈজ্ঞানিক সমাজে শ্রেণী দ্বন্দ এমনিতেই থাকতে পারে না-কারন দ্বন্দের উৎপত্তির মূলেই আছে অসাম্য-আর যেহেতু সামাজিক অসাম্য একটি আনস্টেবল হিংসাত্মক রাষ্ট্র বা সিস্টেমের জন্ম দেয়, যেকোন বৈজ্ঞানিক সমাজই-সমাজের সব দ্বন্দগুলিতে বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই দূর করবে-কারন সেটাই প্রগতিশীলতা। অর্থাৎ মানুষের মনোজগতে যে বৈজ্ঞানিক চেতনা আসবে সেটাই আসল মার্ক্সীয় বিপ্লব। কারন সেটা সাধিত হলে সামাজিক সাম্য যুক্তির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। অর্থাৎ এরা মানেন মনোজগতের বিপ্লবই আসল মার্ক্সীয় বিপ্লব।

এই মার্ক্সবাদি স্কুলের বক্তব্য অনুযায়ী বিজ্ঞান চেতনায় জনগনকে শিক্ষিত করা - রাষ্ট্র এবং উৎপাদন ব্যাবস্থার মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলির প্রতিষ্ঠাই আসল মার্ক্সবাদি লাইন। এবং এটি করতে গেলে সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে ভাববাদি বা ধর্মের প্রতিটি হাতকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে-সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যেটা বামবাঙালী ভোট হারানোর ভয়ে করে না। উলটে মাদ্রাসা স্থাপন করে।

( বহুদিন ধরে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আসল মার্ক্সবাদি লাইন বলতে কি বুঝি। এবং আমি যা বুঝেছিলাম তা বাম বাঙালীর থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই লেখাটা আবিশ্যিক ছিল। )



[1] Soviet Marxist Philosophy of Technology : Friedrick Rapp
[2] Towards conceptual interaction among Soviet Philosophy, Neo-Thomism, Pragamatism and Phenomenology : T. J . Blakeley
[3] The scientific Technological Revolution and Soviet Ideology-Buchholz

Tuesday, June 8, 2010

মৌলবাদ বিরোধি জন সংগঠন ঃ দ্বিতীয় ধাপ

আমরা আগের প্রবন্ধে কি কি করতে হবে-সেই নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার সেগুলোকে বাস্তবায়িত করার পন্থা নিয়ে ভাবতে হবে।

আদর্শকে বাস্তবায়িত করার উপায় জনসংগঠন। ইসলাম, হিন্দুত্ববাদি এবং কমিনিউস্ট-এরা সবাই জন সংগঠন গড়তে ওস্তাদ। এটাই এদের শক্তির ভিত্তি। সুতরাং তার পালটা জবাব দিতে গেলে আমাদের ও জনসংগঠন গড়তেই হবে। এবং যেহেতু আমদের গাইডিং প্রিন্সিপল গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞান-সেহেতু প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরো উন্নত গণসংগঠন গড়তে হবে। শুধু ব্লগ লিখে এর ওর পিঠ চাপড়ালে হবে না। আজকাল ফেসবুকের যুগে কোন একটা ইস্যুতে লোকজন জড় করাও সোজা-এদিকে সেদিকে মিডিয়াতে দু চারটে প্রতিবাদ পত্র ও পাঠানো যায়-কিন্ত এসবই বিন্দুতে সিন্ধু যদ্দিন না আমরা গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে সংগঠন না গড়তে পারব।

সুতরাং কি উপায়ে সংগঠন গড়া যায় তাই নিয়ে ভাবতে হবে।

সাধারণত দুই উপায়ে সংগঠন তৈরী করা যায়। একটি হচ্ছে নিজেদের গ্রুপে করে এনজিও বা ফাউন্ডেশন টাইপের। নন প্রফিট কর্পরেশন । এখানে একটি প্রাইভেট বোর্ড থাকে। মুক্তমনা ও অনেকটা এই টাইপের সংগঠন। আমি অবশ্য সম্পূর্ন ব্যাবসায়িক ভিত্তিতেই সিটিজেন সাংবাদিকতার মিডিয়া সংগঠন চালিয়ে থাকি। এই ধরনের সংগঠন থেকে প্রকাশনা, অর্থ সংগ্রহ বা সেবা মূলক কাজ ভাল হয়। অন্য আরেক ধরনের সংগঠন হল গণ সংগঠন। যেখানে তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে বিরাট সংগঠন গড়ে তোলা যায়। সেখানে প্রাইভেট বোর্ডের বদলে নির্বাচিত সংগঠকরা থাকবেন। নির্বাচিত সংবিধান থাকবে দলের। সংবিধানই হবে সেই দলের মেরুদন্ড। রাজনৈতিক শক্তির উৎস হতে গেলে এই ধরনের সংগঠন গড়ার বিকল্প নেই।

নিজের অভিজ্ঞতায় যেটুকু বামপন্থী সংগঠন দেখেছি-তার থেকে এটুকু বুঝেছি সংগঠনের সংবিধান এবং নেতাদের ভিত্তি গণতান্ত্রিক না হলে, আজকে না হলে কালকে আরো দলে ভাংবেই। সুতরাং বৈধ একটি সংগঠন করে সবাইকে নিয়ে চলতে গেলে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গুলিকে অনুসরন করতে হবে।

আমার ব্যাক্তিগত মতে মুক্তমনা বা আরো অনেক বিজ্ঞান সংগঠন নানান গঠন মূলক কাজে এগিয়ে আসতেই পারে। কিন্ত জন সংগঠন গড়ার প্রথম ধাপ হিসাবে, একটি শক্তিশালী সংবিধান গড়া দরকার, যা হবে এর মেরুদন্ড এবং তা স্বল্প পরিসরে হলেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই পাশ করাতে হবে মেম্বারদের মধ্যে। সেই সংবিধানেই নির্দেশ থাকবে, এর গঠন কাঠামো কি হবে-কি কি অপরিবর্তনীয় ধারা থাকবে। কি কি পরিবর্তনীয় ধারা থাকবে। কিভাবে নির্বাচন হবে। মেম্বারশিপ ফিস। কাজের কাঠামো ইত্যাদি। এটি পাশ হওয়ার পরে, আমাদের সাংগঠনিক নির্বাচন করতে হবে।

সুতরাং আমাদের প্রাথমিক কাজগুলি হল [ যা আমরা এই ব্লগের মাধ্যমেই করতে পারি]

[১] একটি নাম ঠিক করা
[২] সংবিধানের খসরা বানানো
[৩] একটি সংবিধান কমিটি বানানো যারা এই নতুন গণ সংবিধানের সংবিধানটি তৈরী করবে।

আসুন এই ব্লগে আমরা আলোচনা করতে পারি, সংবিধানের ভিত্তি কি হবে।

  • অপরিবর্তনীয় ধারা কি কি হবে ? অপরিবর্তনীয় ধারা হচ্ছে মূল ভিত্তি। এখানে মূল ভিত্তি হওয়া উচিত [ আমি অবশ্য সবার ইনপুট চাইছি ] বিজ্ঞান চেতনা, বিজ্ঞান প্রয়োগ এবং পরিবেশ রক্ষক। বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত জার্নালে যে জ্ঞান আহরিত হয়েছে প্রকৃতি এবং সমাজবিজ্ঞানে তাই একমাত্র গ্রহনযোগ্য জ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হবে। রাজনীতি, ধর্ম, রাষ্ট্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে দৃষ্টিভংগী হবে, বিজ্ঞান মুখী। অর্থাৎ নৃতত্ত্ব বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে ধর্ম, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে যে ধারনা আমরা গবেষনার মাধ্যমে জানতে পারছি-সেই রামধেনু রঙেই রাঙা হোক এর চেতনা যার ভিত্তি হবে গবেষনা। এছারাও আমাদের দৈন্যন্দিন সমস্যাগুলি সমাধানের জন্যে স্থানীয় এবং রাষ্ট্রীয় স্তরে বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহারের মাধ্যমে বিদ্যুত , দূষন , খাদ্য , জ্বালানী এবং দুর্নীতি সমস্যার সমাধানের পথে কাজ করতে হবে। এই ব্যাপারে আমাদের নানান ফিল্ডে এক্সপার্ট প্যানেল থাকা উচিত-যারা নানান বিষয় নিয়ে গবেষনা করবে, যার মূল উদ্দেশ্য হবে আমাদের উপমহাদেশে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আরো বেশী কি করে ব্যাবহার করা যায় রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারী উদ্যোগে। এছারাও বিজ্ঞান প্রসারের এবং ধর্মের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে আলোচনার জন্যে আমাদের নিজস্ব প্রিন্ট, কেবল, এফ এম এবং ইন্টারনেট মিডিয়া থাকতেই হবে। এগুলো অপরিবর্তনীয় ধারাতে থাকা উচিত।
  • পরিবর্তনীয় ধারা কি কি হবে? সাংগঠনিক কাঠামো, আশু উদ্দেশ্য-রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি, ভোটিং কাঠামো-এগুলি পরিবর্তনীয় ধারাতে রাখা উচিত।
  • কারা মেম্বার হবার যোগ্য? যারা বিজ্ঞানের গবেষনা লদ্ধ জ্ঞানকে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে একমাত্র পথ বলে মনে করেন। তিনি আস্তিক, নাস্তিক, কমিনিউস্ট যে কেওই হতে পারেন। কিন্ত রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তকেই সেরা সিদ্ধান্ত বলে মানতে হবে।
  • সামাজিক আইন নিয়ে অবস্থানঃ সব ধরনের ধর্মীয় আইন রাষ্ট্র থেকে বাতিল করে, সমাজ বিজ্ঞানকে ভিত্তি করে সামাজিক গবেষনার মাধ্যমে নতুন আইন আনার দাবী জানাতে হবে।-যার ভিত্তি হবে নারী-পুরুষের সমানাধিকার, দূষম মুক্ত সমাজ এবং পশুপাখিদের মানুষের সাথে বেঁচে থাকার সমানাধিকার।
  • জাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদঃ আন্তর্জাতিকতাবাদ ই একমাত্র বৈজ্ঞানিক পথ এটা যেমন ঠিক-ঠিক তেমনই প্রতিটি ভাষা এবং সংস্কৃতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও তাদের শ্রীবৃদ্ধি আমাদের কাম্য।
  • পুঁজিবাদ না সমাজতন্ত্র? বাস্তব হচ্ছে পৃথিবীতে সব রাষ্ট্রকেই বাজার এবং সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ -এই দুই নিয়েই চলতে হয়। তার কম বেশী তারতম্য থাকে। বাজারহীন রাষ্ট্র বা সমাজতান্ত্রিক কাঠামোহীন রাষ্ট্র বাস্তবে হয় না। সুতরাং মিশ্র অর্থনীতির রূপরেখা নিয়ে আরো ভাবার আছে।
  • গণতন্ত্র না ডিজিটাল গণতন্ত্র? আমাদের বর্তমানের গণতন্ত্র প্রতিনিধিত্ব মূলক পার্টি ভিত্তিক গণতন্ত্র। যা সত্যিই অসংখ্য ত্রুটিপূর্ন। সাধারন জনগনের কন্ঠশ্বর এখানে রুদ্ধ। এই ডিজিটাল যুগে চোর ডাকাত প্রতিনিধিদের রাষ্ট্র চালানোর জন্যে পাঠানোর আদৌ কোন দরকার আছে কি না তাই নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। পার্টি ভিত্তিক গণতন্ত্রের ও দরকার নেই । দরকার প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে সরাসরি জনগনের গণতন্ত্র।
এই পয়েন্ট গুলো নিয়ে সবাই ভেবে আপনাদের চিন্তা নিয়ে লিখুন। চিন্তা এবং মত বিনিময় হোক-এক বিংশ শতাব্দির উপযোগি একটি সংগঠন কিভাবে গড়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ এবং ভারতের বিজ্ঞান সংগঠনগুলি ধর্মের উত্থান ঠেকাতে ব্যার্থ হচ্ছে কেন?

বিজ্ঞান সংগঠন বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে বেশ কিছু আছে। কিন্ত তাদের চেষ্টা সিন্ধুতে বিন্দু-যা মৌলবাদ ঠেকাতে ১% ও কার্যকর না। এদের অর্থবল, জনবল , জনভিত্তি কিছুই গড়ে ওঠে নি। তার অনেক কারন আছে-আমার বিশ্লেষন বলে

[১] এরা বিজ্ঞানকে কিছু পুঁথির জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন-সামাজিক আইন, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহার নিয়ে ভাবেন নি। এদের কার্যকলাপ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বড়জোর বিশুদ্ধ পানীয় জলের মধ্যে আটকে আছে।

[২] আধুনিক মিডিয়াকে ব্যাবহার করার চেষ্টা করেন নি-পুরানো প্রিন্ট মিডিয়াতে বছরে দু একটা পাবলিকেশন করছেন। এতে ভাল কিছু লেখা আমরা পেতে পারি-কিন্ত তাতে জনভিত্তি হবে না। জনভিত্তির জন্যে চাই কেবল মিডিয়া বা নিজেদের দৈনিক পেপার।

[৩] এরা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন-কিন্ত অধিকাংশ মেম্বার বামপন্থী দলের সাথে যুক্ত। ফলে বিজ্ঞান সংগঠন গুলি রাজনীতি থেকে দূরেই থেকেছে। এতে তিনটে ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত কোন বামপন্থী দলেই রাজনীতি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা নেই বা ধর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রোগ্রাম নেই। দ্বিতীয়ত সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক চিন্তাগুলি রাষ্ট্র এবং সমাজে আসতে পারছে না-কারন পার্টিগুলির মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কোন চেতনা নেই। তৃতীয়ত এই কারনেই ইনারা ব্যাপকভাবে মিডিয়া প্রচারের কথা ভাবেন না। এই ট্রেন্ড চললে বিজ্ঞান সংগঠন করে কিস্যুই লাভ হবে না। আমাদের সেই বিজ্ঞান সংগঠন চাই যা আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে জন্ম নেবে। নইলে এসব করে লাভ নেই।

[৪] আরো একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার আছে-সেটা হল সামাজিক শক্তি হিসাবে জন্ম নিতে গেলে অর্থনীতির কাঠামোর মধ্যেও গভীর ভাবে ঢুকতে হয়। আমাদের দেশে এত শিক্ষিত বেকার। তাদেরকে বিজ্ঞান ভিত্তিক উৎপাদন প্রকল্পের সাথে ব্যাবসায়িক ভিত্তিতেই জুড়তে হবে। যেমন গ্রামে গ্রামে বায়োগ্যাস বা সোলার ইউনিট ইত্যাদি গড়ার ছোট ব্যাবসার জন্যে যে টাকা লাগবে, সেসব লজিস্টিক প্রবাসী সদস্য এবং ব্যাঙ্কের সহায়তায় গড়ে তুলতে হবে।

আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল। বাকীরা এই ব্যাপারে লিখুন।

আমি জানি এতদিন আমাদের দুই বাংলার বামপন্থীরাই বিজ্ঞান সংগঠন করেছেন-কিছুটা হলেও মৌলবাদের বিরুদ্ধে ইনারাই সামান্য হলেও লড়াই করেছেন। কিন্ত সেটা মৌলবাদিদের শক্তিবৃদ্ধির তুলনায় কিছুই না। পশ্চিম বঙ্গে বিজেপি ভোট পায় না বলে ভাবার কোন কারন নেই-এখানে মৌলবাদ নেই। ইসলামিক এবং হিন্দু মৌলবাদ খুব ভালভাবেই আছে-যেদিন রাজনীতিতে সিপিএম বনাম এন্টি সিপিএম থাকবে না, সেদিন এদের শক্তি সামনে আসবে। আর বাংলাদেশে মৌলবাদ ঠেকাতে সেদেশের বামপন্থী এবং বিজ্ঞান সংগঠনগুলো সম্পূর্ন ভাবে ব্যার্থ হয়েছে-যদিও তারা একটি ধর্ম নিরেপেক্ষ চেতনাকে ধরে রাখতে পেরেছেন। কিন্ত তা মৌলবাদের পেট্রোডলারের বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ না।

সুতরাং একটি নতুন ধরনের বিজ্ঞানমুখী গণসংগঠন গড়ার বিকল্প আমি দেখতে পাচ্ছি না।

Thursday, June 3, 2010

ধর্মীয় মৌলবাদ নির্মূল করার বাস্তব উপায় কি ?

যুক্তি তর্ক আবেগ দিয়ে কেও জিতে থাকে বা টিকে থাকে বলে জানি না। কারন তেমন হলে ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মরই বেশী টিকে থাকার কথা-বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি যুক্তি নির্ভর-বিশ্বাস নির্ভর না। তেমন কিন্ত হয় নি। বৌদ্ধদের পিটিয়ে পৌত্তলিক হিন্দু এবং যুদ্ধবাজ মুসলিমরাই টিকে গেছে। সুতরাং মৌলবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই এ জিততে হলে আমাদের স্ট্রাটেজি দরকার। প্রতিষ্ঠান দরকার। রাজনৈতিক ক্ষমতা দরকার। শুধু যুক্তি বার করে হবে না। যুক্তি দিয়ে মহম্মদকে নীচ এবং মহান-বিড়াল এবং বানর-মহৎ ও ক্ষুদ্র সবকিছুই প্রমান করা যায়। লাভ খুব বেশী হবে না।

আমাদের বাস্তব স্ট্রাটেজিগুলো এরকম হওয়া উচিত

[১] সোশ্যাল নেটোয়ার্কিং এবং প্রতিষ্ঠানের জন্মঃ
নাস্তিকতা এখন টিকে আছে এই সব ব্লগ সাইটে। কেও কেও ইউ টিউবে কিছু প্রচার করেন -এই ছোট্ট মিডিয়ার মধ্যে। নাস্তিকতার প্রচারের ও আমি খুব
একটা পক্ষপাতি না। প্রচার চালাতে হবে বিজ্ঞান মুখী চিন্তার। রাজনীতি, সমাজ, ব্যাক্তিগত জীবন সর্বত্রই যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়, সেটাই আমাদের দেখাতে হবে। বিজ্ঞানের দর্শনের মূল হল-এরর বা ভুলের পরিমান কমানো। আর আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঈশ্বরের নাম জপি? কারন সবাই চাই, তাদের সিদ্ধান্তে যেন কম ভুল থাকে, ফলপ্রসূ হয়। কিন্ত আসলেই কি তা হয়? কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দর্শনই শ্রেষ্ঠ-কারন তার ভিত্তিই হল কিভাবে ভুল কমানো যায়।

কিন্ত এর সাথে সাথে নানান রেজিস্টার্ড সংস্থা গড়তে হবে। যারা সমাজের মধ্যে নানান বিজ্ঞানের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। বিজ্ঞান দিয়ে চাষাবাদ থেকে খেলার মাঠে “পারফর্মান্স” উন্নত হয়-এটা হাতে কলমে করে দেখাতে হবে। বিজ্ঞান একটি চেতনা-যাকে ছড়িয়ে দিতে হবে ব্যাবহারের মাধ্যমে। জ্ঞানের মাধ্যমে নয়। বিবর্তনের জ্ঞান বেড়ে সাধারন মানুষের কোন লাভ নেই-কিন্ত বিবর্তন সে সেই দিনই শিখতে চাইবে যেদিন দেখবে কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নত গাছ এবং ফলের জন্ম দিতে পারছে। এর জন্যেই সর্বত্র নানান বিজ্ঞানসংস্থা গড়া দরকার।

[২] মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে নাস্তিকতাকে টানাঃ
মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে যাও বা নম নম করে হিন্দু ধর্মের সামান্য সমালোচনা চলে, ইসলামের সমালোচনা করার কেও সাহস রাখে না। সেটা মৌলবাদিদের শক্তির উৎস। আমাদের লেখা কেও শত ইচ্ছা থাকলেও মেইন স্ট্রিমে ছাপাতে সাহস পায় পাবে না। কেবল টিভিতে ইসলাম বা তার নবীর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার উপায় নেই। হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু “কোমল” সমালোচনা করা যায়-ব্যাস ওই পর্যন্তই। ওর বাইরে ওরা দেবে না। ফলে আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের মিডিয়া বানাতে হবে যা মোটেও কর্পরেট সাহায্যে চলবে না। চলবে সমভাবাপন্ন লোকেদের দেওয়া ব্যাবসায়-সাহায্য নিয়ে কোন কিছু বেশী দিন চালানো যায় না। নাস্তিকদের ও ব্যাবসাতে নামতে হবে, যাতে এই সাপোর্টগুলো আনা যায়। অধিকাংশ বাঙালী নাস্তিকই সুখী পড়াশোনা করা চাকুরীজীবি লোক-এটা একটা বিশাল সমস্যা নাস্তিক মিডিয়া করার ক্ষেত্রে। কারন মিডিয়া চলে ব্যাবসা প্রমোট করতে-সেখানে নাস্তিকদের ব্যাবসা না থাকলে এই ধরনের মিডিয়া করা খুব কঠিন। আমি এই জন্যে প্রতিটা নাস্তিককে ব্যাবসায় নামার জন্যে উৎসাহিত করব।

[৩] যারা গ্রামে, ফিল্ডে কাজ করছে, তাদের অর্থনৈতিক সাহয্য দেওয়ার জন্যে অর্গানাইজেশন তৈরী করাঃ
অল্প হলেও দুই বাংলাতে বিজ্ঞান কর্মীরা আছেন। তারা কাজ করছেন। তারা যাতে আরো বেশী করে কাজ করতে পারেন, তার জন্যে আমাদের মতন সচ্ছল নাস্তিকদের উচতি সাহায্য দেওয়া। এটাকে রেগুলারাইজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হবে। নাস্তিকরা ব্যাবসা না করায়, সেটাও একটা সমস্যা। প্রতিটা ধার্মিক লোক গ্রামে মন্দির মসজিদ বানানোর জন্যে টাকা দিয়ে থাকে। এবার বাড়ি গিয়ে দেখলাম এই ভাবে গুচ্ছ গুচ্ছ বিরাট মন্দির হচ্ছে চারিদিকে। এর পাল্টা জবাবে আমাদের যাদের সামর্থ আছে, তাদের উচিত নিজেদের গ্রামে উন্নত মানের ডিজিটাল এবং সাবেকি লাইব্রেরী করা। এখানেও সেই ব্যাবসার প্রসঙ্গ আসছে। ব্যাবসা না করলে সীমিত অর্থ থেকে এত কিছু করা সম্ভব না চাকুরীজীবি নাস্তিকদের। তাই আমি সবাইকেই বলব ব্যাবসা করা শুরু করতে। ধার্মিক ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থ মন্দির মসজিদে ব্যায় করে-আমরা লাইব্রেরী তৈরী করতে ব্যায় করব। মোদ্দাকথা এই নেটওয়ার্কিং টা দরকার। মুসলমানরা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ায়-হিন্দুরাও দাঁড়াচ্ছে-নাস্তিকদের মধ্যেও এই সাপোর্ট সিস্টেমটা বানাতে হবে।

[৪] শিশুদের জন্যে বিজ্ঞান সাহিত্য-প্রিন্ট, কেবল মিডিয়াতে ছড়াতে হবেঃ
শিশুদের মনে বিজ্ঞানকে না ঢোকালে আমাদের আন্দোলন ব্যার্থ হবে। কারন শিশু বয়সেই মানুষ ঠিক করে নেয় সে নাস্তিক না আস্তিক হবে। খুব ভাল বিজ্ঞান সাহিত্য দরকার শিশুদের জন্যে। বাংলায় বাচ্চাদের জন্যে বিজ্ঞান সাহিত্য উঠে গেছে। তাছারা আজকাল কেবল মিডিয়া সব থেকে জনপ্রিয়। বাচ্চাদের জন্যে সেখানে বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান দরকার। এগুলি ব্যাবসায়িক ভিত্তিতেই করতে হবে-কারন এর মার্কেট আছে। তাতে এই ধরনের কাজের কর্মক্ষেত্র বাড়বে।

[৫] গ্রীন এবং পিস পার্টি তৈরী করা-
বামপন্থী, দক্ষিন পন্থী সবাই ধার্মিকদের পা চাটা কুকুর। এটাই ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে। শ্রেনীতত্ত্বের মতন আধাবৈজ্ঞানিক হজপজ নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানো যাবে না। পরিবেশবাদি পার্টি তৈরী করতে হবে। ভোটে জিতে পার্লামেন্টে যেতে হবে, এর মানে নেই-কিন্ত ভোটে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে অংশ নিতে হবে। আমাদের হয়ে কোন বামপন্থী বা বুর্জোয়া পার্টি কথা বলবে না-কারন তারাও ক্ষমতা দখল ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

[৬] জনগণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিতে হবে
আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেম ত পার্ফেক্ট না। গণতন্ত্রে অনেক ঘূণ। মানুষের ওপর শোষন বঞ্ছনা এবং অত্যাচার অব্যাহত। শোষিত মানুষের পাশা না দাঁড়ালে বিজ্ঞানের কথা কে শুনবে? কিন্ত তার জন্যে লোকজন যেন লেনিনবাদ, বা হিন্দুত্ববাদ বা ইসলামের মতন ফাসিজমের কবলে না পড়ে-জাতীয়তাবাদি গড্ডালিকা প্রবাহে যেন গা না ভাসায়। আন্তর্জাতিকতাই আগামী দিনের পথ। উন্নততর সেই বৈজ্ঞানিক এবং মানবিক সমাজের রূপরেখা আমাদের রাজনীতির মধ্যে যেন অনুপ্রাণিত হয়।

বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির পথেই উন্নত ডিজিটাল গণতন্ত্র আনা সম্ভব-এবং গণতান্ত্রিক পথেই আমাদের এই দ্বন্দ্বগুলিকে সমাধান করতে হবে। লেনিনবাদের মতন ভুয়ো কিছু তত্ত্ব এবং পার্টির পাল্লায় পড়ে কিছু আদর্শবাদি তরুণ যেন তাদের জীবন নষ্ট না করে। কমিনিউজম আরেক ধরনের মৌলবাদ যা ধর্মীয় মৌলবাদের চেয়েও ভয়ংকর।

মোদ্দা কথা আমাদের আরো প্রতিষ্ঠানিক সক্রিয়তা চাই। নেতা চাই।