Saturday, August 28, 2021

প্রযুক্তির আরো ব্যবহারই সরকারকে আরো দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত করে তুলতে পারে

 আধারকার্ড যদিও কংগ্রেসজমানার মস্তিস্ক প্রসূত,  এর ফায়দা তুলেছে বিজেপি, তৃনমূল সবাই। কারন বর্তমানে সরকারের যেকোন স্কিমের টাকা স্ক্যাম ছাড়াই সাধারন মানুষের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে। একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, আজ থেকে দশ বছর আগেও "উন্নয়ন" "বিকাশ" " শিল্পায়ন" এগুলি ছিল  মূল রাজনৈতিক স্লোগান, এজেন্ডা। বর্তমানে তার জায়গায় "স্কিমে" ভরসা সবপার্টির  -সে লক্ষ্মীর ভান্ডারই হোক বা কন্যাশ্রী -বা মোদিজির জনধন যোজনা- আসলে ভোটে জিতে আসতে সবাই এখন "স্কীমের" ওপরই ভরসা রাখছে বেশী। 


  এর মূলে কিন্ত আধারকার্ডের প্রযুক্তি বিপ্লব। জনগনের কাছে টাকা সরাসরি যাওয়াটা একটা সাধারন উদাহরন কিভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ রাজনীতি, গণতন্ত্রকে বদলে দিতে পারে।  ইনফাক্ট বর্তমানে সব সরকারই স্কীমের ওপর নির্ভর করে জিততে চাইছে-এর ফলে সরকারী চাকরি আরো সংকুচিত হচ্ছে-  কারন যে সরকার মাইনের টাকা বাঁচিয়ে স্কিমের মাধ্যমে জনসাধারনের হাতে টাকা তুলে দিতে পারবে, আজকের দিনে,জেতার চান্স তারই বেশী।  কিন্ত এটার ভাল দিক হল, সরকারি চাকরি সংকোচনের জন্য, সরকার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অটোমেশন করবে।  ভারতে বর্তমানে অনেক কিছুতেই আইটির সাহায্যে অটোমেশন হয়েছে-এতে পদ্ধতি এবং পরিশেবা উন্নত -যার সুবিধা পাচ্ছে সবাই। 

আই টির সাহায্যে ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার যে সুবিধা জনগনের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছে, তারই পরের ধাপ আই ও টি প্রযুক্তি। যেখানে সেন্সর এবং ডেটা কাজে লাগিয়ে ভারতের অন্যান্য সমস্যাগুলি  যেমন খরা এবং বন্যা, যত্রতত্র আগুন লাগা্‌, জল এবং বায়ুদূষন , ট্রাফিক জ্যাম-এমন কি এই প্যান্ডেনেমিক নিয়ন্ত্রন করা-সব কিছুই সম্ভব। আর এটা তখনই সম্ভব যখন দেশের শীর্ষ কর্তারা প্রযুক্তি বা টেকনোক্রাট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসবেন।


 চীন এগুলো ভাল্ভাবে পারে কারন ওদের দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে চীনের কমিউনিস্ট পার্ট-কিন্ত পলিসি এবং মন্ত্রীত্বে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা প্রযুক্তিবিদরা।  আমেরিকাতেও প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিদের নিয়োগ করেন, যারা সেই ফিল্ডের সেরা লোক। 


 ভারতের একটা সংবিধানগত সমস্যা আছে এই ব্যপারে। ভারতে মন্ত্রীরা আসছে রাজনৈতিক পার্টি থেকে। রাজনীতি তাদের কেরিয়ার। আর তাদের আন্ডারে সেক্রেটারীরা আই এ এস।  ফলে ভারত সরকারের বা রাজ্যসরকারের "এক্সিকিউশন" লেয়ারে ইঞ্জিনিয়ারিং নেতৃত্ব ব্যতিক্রম। যেখানে চীনের সুবিধা হচ্ছে  তাদের অধিকাংশ মন্ত্রীরাই সেরা টেকনোক্রাট ও বটে। 


 তবে আশার কথা এই যে, ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যসরকার , প্রযুক্তির গুরুত্ব একটা লেভেলে বুঝেছেন। এবং কিছুকিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার থেকেও ভাল কাজ হয়েছে। কিন্ত এখন এটাকে সেকেন্ড লেভেলে, অর্থাৎ আই টি থেকে আ ও টিতে নিয়ে যেতে হবে। 

 যেমন ফায়ার সেফটি ইন্সপেক্টর রেখে কোন লাভ নেই-ঘুঁষের রাজত্ব। সেখানে সেন্সর বেসড ট্রাকিং সিস্টেম করলে, আগুন লাগা অনেক কমে যাবে।  দূষন মুক্ত হওয়ার জন্যও ফ্যাক্টরিতে সরাসরি সেন্সর বসানো যায় যার ডেটা সরকারে চলে যাবে। ইন্টারেস্টিং ব্যপার হল এই ধরনের উদ্যোগ মোদি সরকার প্রথমবার সরকার আসার সময় শুরু করেছিলেন। কিন্ত তারপর দিল্লীর বুরোক্রাটদের চাপে সব বন্ধ হয়- কারন সেক্ষেত্রে দিল্লীতে ঘুঁশের টাকা আসা বন্ধ হয়ে যেত। যেকোন কারনেই হোক, এসব নিয়ে আর কথা বলে না। 

তবে আমি আশাবাদি এসব কিছুই ভারতে একদিন হবে। দুর্নীতি লবি যারা এসবে বাধা দিচ্ছে, তাদেরকে পিছনে ফেলার সদিচ্ছা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের থাকবে। এর উদাহরন আধার কার্ড- যেখানে আজ সরকারের সদিচ্ছার জন্যই অনেক দুর্নীতি বন্ধ।