Monday, April 29, 2013

বাঙালীই কেন চিটফান্ডের ফাঁদে?

এত দিস্তা খরচ হচ্ছে, অথচ সব থেকে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নটা কেও তুলছে না। বা বাঙালীর বিদ্যাবুদ্ধি এত দ্রুত নীচে নেমেছে,  সব থেকে গুরুত্বপূর্ন বিশ্লেষণ বা আত্মসমীক্ষা এখনো আমরা করি নি।

    এই প্রশ্ন সবার আগে তোলা উচিত কেন বাংলাতে চিটফান্ড এবং চিটার -এই দুইগোত্রের সব থেকে বড় বেশি রমরমা?

    খুব সহজ উত্তর হচ্ছে বাঙ্গালির ব্যাবসায় অনীহা।  গুজরাতে মাথা পিছু আয় বাঙালীর আড়াইগুন। সেখানে চিটফান্ডের উৎপাত কেও শোনেনি। তাহলে বাঙালীর মধ্যেই এই সংক্রামক ব্যধিটি কেন? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে-বাঙালীর ব্যবসা বিমুখতাই এর মূল এবং মুখ্য কারন।


  1.     সহজলভ্য এজেন্ট। পশ্চিম বঙ্গে শিল্প নেই। কোনদিন হবেও না। সিপিএম এবং তৃণমূল উভয় পার্টি শিল্পবিরোধি পপুলিস্ট এজেন্ডাতে বিশ্বাস করে। ফলে এত বেকার আর কোথাও নেই। এতে এজেন্ট পেতে খুব সুবিধা।
  2.  বাঙালীদের অধিকাংশর ব্যবসা নিয়ে নুন্যতম ধারনা নেই। ফলে ৩০% এজেন্ট কমিশন দিয়ে যে ২০% রিটার্ন দেওয়া যায় না, সেটা বোঝার মতন সামান্য ব্যবসায়িক বুদ্ধিও অধিকাংশ বাঙালীর নেই। কেও টাকা ফেরত পাচ্ছে শুনেই যুক্তিতিরোহিত হয়ে লাফাবে।
  3.  গুজরাট বা অন্য যেকোন রাজ্যে লোকে, কিছু টাকা যেমন জমায়, কিছু টাকাতে জমি সোনা বাড়ি ইত্যাদি এসেট ও করে। খুব গরীবলোক ও জমিয়ে কিছু কিছু না কিছু এসেট করে।  চীটফান্ড আসার আগে এইসব বাঙালীর মধ্যেও ছিল। কিন্ত বাঙালী এত অলস-এসেট করাতে যে খাটনি আছে, সেটুকুও করতে তারা নারাজ।
  4.  পাঞ্জাবী বন্ধুদের মধ্যে চিট ফান্ড দেখিনি। সেখানে টাকা করার সহজ উপায় হচ্ছে বন্ধু বা আত্মীয়র ব্যবসাতে চড়াসুদে টাকা লাগানো।  বাঙালীদের মধ্যে কেও ব্যাবসা করে না। আর করলেও তাকে কেও বিশ্বাস করে না। ফলে বন্ধু বা আত্মীয়র ব্যবসায় টাকা লাগিয়ে, টাকা করার উপায়-যেটাকে কমিউনিটি ফান্ডিং বলে, সেই সুযোগ বাঙালীদের মধ্যে নেই।  সাধারনত এইভাবেই সব থেকে সহজ এবং বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। এই সুযোগটাই বাঙালী কমিউনিটির মধ্যে নেই। ফলে চিটিংবাজির রমরমা।
কম সুদ?  ব্যাঙ্কের সুদ আমেরিকাতে ১ থেকে ২%।ি

এখানে আমরা সবাই লগ্নি করতে বাধ্য যেহেতু সুদ কিছু নেই। রিয়াল এস্টেট বা বাড়ি সব থেকে নিরাপদ লগ্নীর জায়গা।  এই ২০০৮ সালের হাউসিং  ক্রাশের পরেও। কিন্ত সাধারণত লগ্নি করা উচিৎ এসেট এবং ক্যাশ বিজেনেস মিলিয়ে। সেটা না হলে বন্ড মার্কেট খোলা আছে।

 আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে বাড়তি পুজিকে আরো বাড়ানোর সেরা উপায় বাড়ি এবং জমি। হতেই পারে হত দরিদ্র বিনিয়োগকারীরা সেটাও পারে না। কিন্ত আমিত দেখছি খুব গরীবদের ও আমানতের পরিমান ১০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ ?
 সেই টাকায় রিক্স বা ভ্যান কিনে ভাড়া দিলেও সারদার থেকে বেশি রিটার্ন পেত। সেইটুকু ব্যাবসায়িক বুদ্ধিও এদের নেই। নীচু থেকে উঁচু বাঙালীর মধ্যে এক রোগ-অলসভাবে বসে থেকে টাকা কামানোর ধান্দা।

 আমি বারবার লিখেছি, বাঙালীর দুর্দশার জন্য সিপিএম বা তৃণমূল না, বাঙালী নিজেই দায়ী।  যেমন জাতি, তেমন তার পার্টি।  এমন ব্যাবসা বিমুখ জাতি যদ্দিন পারবে, তদ্দিন রবীন্দ্রনাথের দাড়ির উকুন হয়ে আঁতেল সাজবে।  হয় লোকে তার পকেট কাটবে, বা সে লোকের পকেট কাটবে।

Wednesday, April 24, 2013

মমতা না সুদীপ্ত সেন? সব থেকে বড় অভিনেতা কে?

 আমি দুবছর আগে লিখেছিলাম, সিপিএমের বিরুদ্ধে মানুষের জনরোষে এত বেশি, মমতা এমনিতেই জিতবেন। কিন্ত তৃণমূল পার্টির সাথে যেভাবে চিটফান্ডের লোকেরা জড়িয়ে যাচ্ছে, তিনি বাঘের পিঠে চেপে আজ ছাগল খেলেও, কাল বাঘের হাতেই তার শেষকৃত্য হবে। আপাতত সেদিকেই তিনি এগোচ্ছেন। সারদা দিয়ে ত সবে শুরু। রোজভ্যালি কেলেঙ্কারী এই সপ্তাহেই বাজারে আসছে। তারাও আমানতকারিদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।  তাদের পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এর পরে প্র্যয়াগ, এগ্রোটেক ইত্যাদি আরো শ খানেক ফান্ডের সলিল সমাধি সময়ের অপেক্ষা। কারন এদ্দিনে আমানতকারীরা টাকা তুলে নিতে চাইছেন। আর নতুন টাকা না এলে, পঞ্জি স্কীম সেখানেই শেষ।

     এগুলি ছিল সময়ের লিখন-শিক্ষিত বাঙালী মাত্রই জানত এদিন একদিন আসবে।  পঞ্জি স্কিম একদিন না একদিন তাদের ঘরের মতন ভাংবে।

    কিন্ত যেটা নিয়ে সবাই নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন, তা হচ্ছে সন্তান স্নেহে কুনাল ঘোষকে রক্ষা করছেন দিদি। কুনাল ঘোষ এখন তৃণমূলের সব থেকে বড় ল্যায়াবিলিটি। তাকে আগলাচ্ছেন মমতা। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে কুনালকে সরালে কিছু হারাবেন মমতা । কুনালকে রেখে দিয়ে যা হারাচ্ছেন তার থেকেও  সেই লস বেশি। সেখানেই সব থেকে বড় রহস্য।

         অর্থাৎ কুনালকে টেনে নামালে, কুনাল ও অনেককেই নামাবেন। প্রশ্ন হচ্ছে তার মধ্যে মমতা থাকবেন কি না।

   চিটফান্ডের প্রতি মমতা সহ তৃণমূলের প্রচ্ছন্ন মদত ছিল, এত তৃণমূলের নেতারাই স্বীকার করেছেন।  স্বীকার না করলেও ক্ষতি নেই টিভিতে, চিটফান্ডের টিভিতেই সেই পাপকার্য্য দেখেছে রাজ্যের লোক। সমস্যা হচ্ছে কতটা জানতেন মমতা?

  সেবি তাকে বারে বারে ছিঠি দিয়ে জানিয়েছে। কংগ্রেস সিপিএমের অনেক নেতা বিধান সভায় অন্তত তিন বার [ গত দু বছরে ] চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার জন্য মোশন আনতে বলেছেন। তৃণমূল সংহিসতার সাথে তাদের বাধা দিয়েছে। আর আজকে তিনি বলছেন তিনি কিছু জানতেন না। আর তিনি হচ্ছেন "সততার প্রতীক" ? "গরীব দরদি" ?

 সত্য এটাই মমতা সব জানতেন। চিটফান্ডগুলি ছিল তার অর্থনৈতিক মুশকিল আসান।  এদের মিডিয়া হেল্প ও দরকার ছিল। যেখানে কারখানা অধিগ্রহণ করতে হবে, সারদাগ্রুপকে দিয়ে তা করিয়েছেন। বাস নামাতে হবে, সেখানেও চিটফান্ড মালিকদের ভয় দেখিয়ে নামিয়েছেন।  এটা মমতা জানতেন সৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অত সহজে টাকা পাবেন না। অসাধু চিটফান্ডের মালিকরা হচ্ছে দুগ্ধবৎ গাভী।  চাইলেই দোয়াতে পারবেন-কারন এদের  পায়ের তলায় মাটি নেই।

 এই কুকর্ম করানো হত কুনালঘোষকে দিয়ে।  তিনিও সুযোগ বুঝে দাঁও মেরেছেন দুদিকেই।

  তৃনমূল এখন বলতে চাইছে সিপিএমের আমলে চিটফান্ডের উত্থান!! কি যুক্তি!! যদি ধরেও নিই সিপিএমের অনেক মেজ সেজ নেতা চিটফান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন, তাহলে তৃণমূলের যুক্তি এটাই-ওরা যেহেতু প্যান্টখুলে ঘুরে বেড়ায়, আমরাও বেড়াব!! এটা কোন সুস্থ রাজনীতির লজিক?

 সত্য এটাই প্রাত্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত অনেকবার চিটফান্ড বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। পারেন নি সম্ভবত পার্টির চাপেই। কিন্ত বিমান বোস ত বলছেন, তৃণমূল সিপিএমের সেই নেতাদের নামগুলো দিক। এদিকে যেমন কুনাল ঘোষ এবং সৃজিত বোসের নাম প্রকাশ্যে এসেছে এবং কোন সন্দেহ থাকার কথা না যে এই দুই পেশাদার একদম পেশাদারিত্বের সাথে চিটফান্ডের গুড় খেয়েছে, তেমন দুজন সিপিএম নেতার নাম দিক তৃনমূলীরা। আমরাও আনন্দিত হব। বিমান বোস ও হবেন।

 এবার রাজ্যবাসী নিজেকে প্রশ্ন করুন-অভিনয়ে কাকে বেশি নম্বর দেবেন? মমতা না সুদীপ্ত সেনকে?



Sunday, April 21, 2013

বস্টনে ইসলামিক সন্ত্রাস- ইসলামের দায় কতটা?


তৈমুরলেন সারানেভ এবং জওহঢ় সারানেভ। এই দুই ইসলামিক সন্ত্রাসবাদির কার্যকলাপে গত সপ্তাহে কার্যত অচল হয়ে গেল বস্টনের মতন শহর। মিডিয়াতে ঘুরে ফিরে সেই এক প্রশ্ন-ইসলাম এই ব্যাপারে কতটা দায়ি?
কেননা বড় ভাই এবং বস্টনের ম্যারাথন সন্ত্রাসবাদের মূলহোতা তৈমুর, আস্তে আস্তে গভীর ধর্মীয় ভাবাবেগে ভেসে, এই সন্ত্রাসবাদের কাজ করেছে-এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এটা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের অঙ্গ। সেই নিয়েও সন্দেহ নেই। বিতর্ক এই নিয়ে যে এর জন্য ইসলাম নামক ধর্মের দায় কতটা?
হিন্দু, ইসলাম , খ্রীষ্ঠান সব ধর্মেই সন্ত্রাসবাদী আছে। নাস্তিক সন্ত্রাসবাদি ও আছে। কিন্ত বর্তমান পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় মুসলিমরা সব থেকে বেশি জড়িত এবং ইসলাম ধর্মশিক্ষা সব থেকে বেশি সন্ত্রাসবাদির জন্ম দিচ্ছে। এখানেই প্রশ্ন তোলা উচিত-এবং যে প্রশ্নের সন্ধান আমরা ৯/১১ থেকে করছি-এর পেছনে ইসলামিক শিক্ষা-কোরান বা প্রফেট মহম্মদের জীবনী কতটা অনুপ্রেরণা দিচ্ছে?
এই নিয়ে মুক্তমনা সহ অনেক ব্লগেই দিস্তার পর দিস্তা খরচ হয়েছে। অনেকেই কোরানকে মূল অভিযুক্ত করেছেন। আমি করছি না। শুধু এই কারনে যে ভগবদ গীতা কোরানের থেকে অনেক বেশি ধর্মযুদ্ধ বা জেহাদে উস্কানি দেয়। শুধু ধর্মগ্রন্থের কারনে, মানুষ সন্ত্রাসবাদি হলে, হিন্দুরা সব থেকে বেশি সন্ত্রাসবাদি হত। কারন ভগবদ গীতা সম্পূর্ন ধর্মযুদ্ধের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যাতত্ত্ব সেটা বলছে না। প্রতি এক কোটি লোকে মুসলিম সন্ত্রাসবাদির সংখ্যা হিন্দুদের থেকে অনেক বেশি। সুতরাং ধর্মগ্রন্থে কি লেখা আছে তা গুরুত্বপূর্ন না।
মহাভারতের যুদ্ধোত্ত্বর পর্বে যুধিষ্ঠিরের প্রতি কৃষ্ণের উপদেশ প্রাণিধানযোগ্য এবং এই ঘটনায় প্রাসঙ্গিক। সেটা হচ্ছে কোন আদর্শবাদ নিজে থেকে ভাল বা খারাপ হয় না। আদর্শবাদের প্রয়োগ এবং ধারকের ওপর নির্ভর করে আদর্শবাদ সমাজের উপকার না ক্ষতি করবে।
বরং আমাদের বিশ্লেষনের অভিমুখ হওয়া উচিৎ সমাজবিজ্ঞানের লেন্সে। আমাদের দেখা উচিৎ, আমেরিকার এই হোম গ্রোন টেররিস্টদের প্যাটার্নটা কি। কেন তারা আমেরিকান সমাজে গ্রহীত হওয়ার পরেও, আমেরিকাতে এত ভাল জীবন পাওয়ার পরেও আমেরিকার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হচ্ছে। কেন তারা এত আপাত নিরীহ ভাল চরিত্রের যুবক হওয়া সত্ত্বেও কট্টর মুসলমানে রূপান্তরিত হচ্ছে?
ধর্ম খারাপ না-কিন্ত কট্টঢ় ধার্মিক নিশ্চিত ভাবেই খারাপ। এখন এক্ষেত্রে একটা সস্তার তত্ত্ব হচ্ছে ইসলামে শক্ত “ইমান” এর ওপর জোর দেওয়া হয়। বা ইসলামের ধারনা গুলি টোটালটারিয়ান। বা ইসলাম একটা সম্পূর্ন জীবন ও রাজনৈতিক দর্শনের দিশা দেখায়। এগুলো সব আপাত সত্য। কারন হিন্দু ধর্মও সম্পূর্ন। মহাভারতে যে সম্পূর্ন জীবন এবং রাজনৈতিক দর্শনের শিক্ষা আছে, তা ইসলামের থেকে অনেক বেশি বৃহৎ এবং সম্পূর্ন। এই ধরনের সম্পূর্ন পূর্নাঙ্গ জীবনের দর্শনের সন্ধান সিন্ট, কনফুসিয়াস বা জেন সহ অনেক দর্শনেই পাওয়া যাবে। এবং এই ধর্মগুলিও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে ইতিহাসের নানান সময়ে। সুতরাং ধর্মীয় উগ্রতা ইসলামের একার ভূষন না। আবার এটাও সত্য, বর্তমান সময়ে অন্যান্য ধর্মে উগ্রতা ক্রমে আসলেও ইসলামে সেটা ক্রমবর্ধমান।
ভাববাদি বিশ্লেষনে কাজ হবে না। আমাদের বস্তুবাদি চোখেই দেখতে হবে ইসলামের সমস্যা কোথায়। এখানে ইতিহাসের এবং অর্থনীতির ভূমিকা কি?
(১) প্রথমে আমেরিকার প্রসঙ্গে আসা যাক। মেজর নাদাল হোসেন, ফায়জাল ( নিউউয়ার্ক টাইমস্কোয়ার বোম্বিং) বা তৈমুরের মধ্যে একটা সাধারন থ্রেড আছে। এদের প্রত্যেকেই আমেরিকাতে নিসঃঙ্গ ছিলেন। দেখা যাচ্ছে এদের বৈবাহিক জীবন সুখের হয় নি। এটা ডিম না মুরগী আগের সমস্যা। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই এদের রক্ষণশীল মনোভাবের সাথে কোন আমেরিকান মেয়েদের মানিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে এরা এদের ব্যার্থ ফ্যামিলি লাইফের জন্য পাশ্চাত্য জীবনকেই দায়ী করেছেন এবং ক্রমশ আরো কট্টর ইসলামিক জগতে ঢুকেছেন।
এই ধরনের ঘটনা রক্ষণশীল হিন্দুদের মধ্যেও দেখেছি। তারাও আমেরিকাতে এই সমস্যার জন্য আরো বেশি রক্ষণশীল হিন্দু ধর্মে ঝুঁকেছে। কিন্ত কোন হিন্দু তারজন্য আমেরিকাকে বম্বিং করার চেষ্টা করে নি। যেটা একমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।
এর কারন কাষ্মীর, চেচেন ইত্যাদি বিচ্ছিন্নাবাদি আন্দোলনগুলি কট্টরপন্থি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে। ফলে কোন কট্টর মুসলমান যুবকের মনে, যে পৃথিবীটাকে দেখেনি বা চেনেই না-তাকে কব্জা করে সন্ত্রাসবাদি বানানোর একটা লজিস্টিক সাপ্লাই লাইন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চেচেনিয়াতে আছে। ফলে তেল যেখানে আছে-সেখানে দেশলাই ছুঁড়লে আগুন ধরবেই।
(২) মুসলিম পরিবার গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অজ্ঞান এবং অন্ধকারে ডুবে থাকা দেশগুলি থেকে আসছে-যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা নেই। প্রতিটা ধর্মেই ভাল এবং খারাপ দিক আছে। যে সমাজ সেই খারাপদিকগুলির দিকদর্শনের সুযোগ দেবে না-সেই সমাজে কট্টরপন্থা স্বাভাবিক। বাংলাদেশে যেসব ব্লগার ইসলামের অন্ধকার দিকগুলি নিয়ে লেখা শুরু করেছিল, তাদের জেলে ভরা হল। ধর্ম বা রাজনৈতিক দর্শনের সমালোচনার পরিবেশ না তৈরী হলে, লিব্যারাল বা উদার সমাজ তৈরী হবে কি করে? আর উদার রাষ্ট্রে না জন্মালে, ধর্মের খারাপ দিকের সাথে পরিচয় না থাকলে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের খারাপদিকটা একজন উঠতি যুবক কি করে বুঝবে?
ইমানের দোহাই দিয়ে যেমন একজন হিন্দুকে গরুর মূত্র সেবন করানো যায়-ঠিক তেমন ই ইমানের চাপে একজন মুসলিমকে ধর্মসন্ত্রাসী বানানো সব থেকে সহজ কাজ। ধর্মের যে বাজে দিক থাকতে পারে সেটাই সে বোঝে না বা বুঝতে ভয় পায়।
(৩) তেলের অর্থনীতি এবং রাজনীতি এর জন্য আরো বেশি দায়ী। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের জন্য বা ঠান্ডা যুদ্ধের দিনে অধিকাংশ বিদেশী রাষ্ট্র, সেখানে গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদকে আসতে দেয় নি। ফলে সামন্ততান্ত্রিক থেকে ধণতান্ত্রিক সমাজের উত্তোরনের ব্যাপারটা মুসলিমদেশগুলিতে আটকে গেছে। পাকিস্তানের সাথে ভারতের তুলনা করলে এটা আরো ভাল বোঝা যাবে। পাকিস্তানকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানাতে সব থেকে বেশি বড় ভূমিকা ছিল আমেরিকার। এর ফলে পাকিস্তান শাসন করে ডজন খানেক পরিবার। সেখানে যে শ্রেনী সংগ্রাম আছে, তা জিহাদি সংগ্রামের রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশেও দেখা যাবে সেই এক সমস্যা। ঠিক ঠাক ভাবে ধনতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ সেখানে হচ্ছে না। উদার গণতন্ত্র এবং ধনতন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলি ব্যার্থ-এর মূল কারন মুসলিম দেশগুলিতে রাজনৈতিক দলগুলির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আরো ভাল ইসলামিক রাষ্ট্র। অর্থাৎ ভাববাদি গ্যাঁজা সেবন করিয়ে, লোকের পকেট কাটা।
আধুনিক উৎপাদনশীল উদার রাষ্ট্র তারা চাইছে না। বিসমিল্লা ব্যাঙ্ক খুলে যদি লোকের ১২০০ কোটি টাকা মারা যায়, কাঁহাতক কে সৎ পথে ব্যবসা করবে? তার থেকে বিসমিল্লা আর ইসলামের নামে পার্টি চালনা করা ভাল। ইসলামিক দেশগুলি এই অন্ধকার পথেই হাঁটছে এবং মধ্যপ্রাচ্য সহ অনেক বিদেশী শক্তির মদত পাচ্ছে। কারন এই ভাবে দেশগুলি যদি ধর্মের আফিং এ মেতে থাকে, তাতে এদের শাসক শ্রেনীকে কন্ট্রোল করে, লুঠপাট করা সহজ কাজ।
ফলে ইসলামিক দেশগুলিতে খাদ্যদ্রব্যের সংকট তীব্র না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের ভাববাদি রাজনীতি চলতে থাকবে। একমাত্র পেটের আগুন, তাদের বস্তুবাদি রাজনীতির সন্ধান দিতে পারে। যদ্দিন এমন না হচ্ছে তদ্দিন মুসলিমদেশগুলি চালাবে বিসমিল্লার নামে পকেটকাটা চোরেরা। আর তাদের টেকাতে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ এবং শরিয়া হবে অপরিহার্য্য।

Sunday, April 14, 2013

নাস্তিকদের ওপর অত্যাচার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত

                                                                              [১]

আসিফ, সুব্রত, রাশেল এবং  বিপ্লব। সত্য কথনের পুরষ্কারস্বরূপ এরা এখন বাংলাদেশের জেলে।  গান্ধী লিখেছিলেন, এই দুনিয়াটাই এত অসততা এবং নির্মমতার আধার, জেল ছাড়া, সৎ লোকের অন্য কোন ঠাঁই নেই!  পয়লা বৈশাখের আনন্দের দিন আজ বিষাদঘন বেদনার আধার।  এই চার সৎ নির্ভীক যোদ্ধার নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিন প্রগতিশীলতার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হিসাবে লেখা থাকবে।  সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আজ থেকে একশ বছর ভবিষ্যতে-ধরুন এই ২১০০ সালে, প্রথাগত ধর্মের অস্ত্বিত্ব থাকবে না ( কেন এমন হবে এই নিয়ে আমার একটি বিস্তারিত ব্লগ আছে  অধ্যাপক ভিগনারের কাজের ভিত্তিতে )।

ভাবুন সে এক পৃথিবী যেখানে বাংলাদেশ নেই, ইসলাম নেই। আছে একটাই দেশ-পৃথিবী-একটাই ধর্ম মানবতা।  ভবিষ্যতের সেই পৃথিবী এই চার নাস্তিক ব্লগারের কারাবাস কিভাবে দেখবে?  শুধু ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করার জন্য এবং হজরত মহম্মদের সমালোচনার জন্য চার জন সৎ সমাজদ্রষ্টাকে রাষ্ট্র জেলে পাঠিয়েছে?  আল্লা বা ঈশ্বর অস্তিত্বহীন মিথ । সেই অস্তিত্বহীন মিথের অত্যাচারে যদি বিজ্ঞানমনস্ক জনমানসকে কোন রাষ্ট্র ধ্বংস করতে উদ্যত হয়, সেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত প্রজন্মের কি হবে?

    তেল খননে ফ্রাকচারিং এর আবিস্কারের সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার দিন সমাগত। বড়জোর আর এক দশক। এর মধ্যেই সৌদি আরব থেকে অধিকাংশ বাংলাদেশী এবং ভারতীয় শ্রমিকদের  তাড়ানো শুরু হয়েছে।   তেলের টাকায় ইসলাম করার দিন শেষ।  বাংলাদেশের ওই ক্ষুদ্র জমিতে এত লোক। বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং রাষ্ট্র না গড়তে পারলে,  পাকিস্তানের মতন পঙ্গু ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবে বাংলাদেশ।  রাষ্ট্রের জনগণকে উন্নত করতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তর ছাড়া বিকল্প কি আছে?  আল্লা কেও মানুক বা না মানুক-আশা করি বাংলাদেশের ধর্মভীরু জনগণ ও এত আহাম্মক না যে তারা মনে করে আল্লাপাক তাদের বসে বসে খাওয়াবে!

                                                                   [২]

 নাস্তিকতা মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা। আস্তিকতা হচ্ছে মনের বিকৃত অবস্থা। প্রতিটা শিশু যখন জন্মায় সে আল্লা, ঈশ্বর-হিন্দু মুসলমান কিছুই জানে না।  প্রতিটি শিশুই নাস্তিক।  এরপর তার মাথায় আল্লা, ঈশ্বর গড ভূত ভগবান এসব ঢোকানো হয়।  ভয় দেখিয়ে জোর করে প্রতিটি শিশুকে আস্তিক বানানো হয়।  ঈশ্বরে বিশ্বাস একধরের ব্রেইন ড্যামেজ। যা ছোটবেলায় শিশুমনে ভয় দেখিয়ে ঢোকানো হয়।

 যদি ভয় দেখানো না হয়, যেকোন শিশু, তার নিজের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধিতেই এইসব আল্লা ঈশ্বরের গাঁজাখুরি গল্পে হাসাহাসি করবে।  আমার সাত বছরের শিশুপুত্রকে কোন দিন আমি বলি নি ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।  বরং আমি তাকে ভারতীয় সংস্কৃতি শিক্ষার জন্য মন্দিরে পাঠাচ্ছি আবার তার সাথে বিজ্ঞানের অনেক ডকুমেন্টারি ও দেখি।  আজকাল সে আমাকে বলছে, আচ্ছা এই অস্তিত্বহীন ঈশ্বরের পেছনে লোকে এত সময় নষ্ট করে কেন?

    এখন এই প্রশ্ন যদি বাংলাদেশের কোন শিশু তার বাবাকে করে, সে নিশ্চয় বকাবাকি বা মারধোর খাবে। বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুটি এই ধরনের কোন প্রশ্ন তুলবেই না কারন আমার পুত্র যত বিজ্ঞানের ডকুমেন্টারী দেখার সুযোগ পায়, সে হয়ত পাবে না।  অর্থাৎ  আস্তিকতা, ঈশ্বরে বিশ্বাস একজন শিশুর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়।  নাহলে পৃথিবীর প্রতিটি শিশু, যারা বিজ্ঞানকে জানতে জানতে বড় হবে, তারা কোনদিন  ঈশ্বর বিশ্বাসী হতে পারে না।

 কিন্তা তাহলে ঈশ্বরের সৈনিকরা বিবর্তনের খেলায় বিজয়ী হোল কি করে?  কি করে তারা দখল করে বসল রাজনৈতিক ক্ষমতা?  এর উত্তর ও ইতিহাস থেকে সহজেই পাওয়া যায়।

    সমাজ বিন্যাসের প্রথম ধাপেই ঈশ্বরের জন্ম হয় নি।  প্রথমে জন্ম হয়েছে একটি মৌল প্রশ্নের। জীবনের উদ্দেশ্য কি?  এটি কি একটি মাত্র জীবন ? কারন জীবন যদি শুধু ক্ষণস্থায়ী বর্তমান হয়, অধিকাংশ লোক একটি নিয়ানুবর্তিক সমাজবিন্যাসের দিকে যাবে না। এই জন্য মানব সমাজে ঈশ্বরের জন্মের পূর্বে এসেছিল পুনঃজন্মের ধারনা। অর্থাৎ আবার জন্ম হবে।  এই মিথের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সব থেকে আদিমতম ধর্ম সম্ভবত জৈন ধর্ম ( এই নিয়ে অতীতের একটি আলোচনা এই প্রবন্ধে পাওয়া যাবে )।
পুনঃজন্ম যেমন একটি শক্তিশালি মিথ-ঠিক তার পরেই জন্ম হয় ঈশ্বর বা আল্লা নামক মিথের। যা ইতিহাসে আরো শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং সমাজব্যাবস্থার জন্ম দিতে সক্ষম হয়।

 এই দিক থেকে ভারতের ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ন। ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য  এবং তার সমসাময়িক ইতিহাসে দেখা যাবে ধর্ম তখনো প্রতিষ্ঠানিক না। সব ধরনের ব্যাক্তি সেখানে আছে। সম্রাট ধননন্দের রাজ সভায় দেখা যাবে রাজা নিজে শুদ্র এবং তান্ত্রিক। তার মূল ডানহাত বা সিকিউরিটি প্রধান  কাত্যায়ন বৌদ্ধ। নন্দ বংশের প্রধানমন্ত্রীরদল আবার বৈদিক ব্রাহ্মন ।  চানক্য নিজে ছিলেন ব্রাহ্মন শিক্ষক। অথচ তার প্রধান  শিষ্য  চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ৪২ বছর বয়সে সাম্রাজ্য ছেড়ে জৈন সন্নাস্যী হয়ে গৃহত্যাগ করেন। চন্দ্রগুপ্ত বৈদিক হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন নি।  আবার তার পুত্র বৈদিক হিন্দু এবং পৌত্র অশোক হলেন বৌদ্ধ।  ভারতের এই সময়ের দর্শনের  ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। কারন সবার ধর্মচারনের স্বাধীনতা ছিল। গুরু তার শিষ্যকে বা পিতা তার পুত্রকে জোর করে নিজ ধর্মে চাপতেন না।  না সমাজ, ব্যাক্তির ওপর ধর্মকে চাপাত। এই উদার ধারা বাঙালী সমাজেও বিদ্যমান ছিল বৌদ্ধ পাল রাজবংশ পর্যন্ত।

  ব্যাক্তির ওপর ধর্মকে জোর করে চাপানোর এই ইতিহাস বাংলাতে শুরু হয়, সেন রাজবংশ থেকে। সেন রাজারা অহিন্দু বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির ওপর জোর করে বৈদিক হিন্দু ধর্ম চাপানো শুরু করে। বাঙ্গালী কোন কালেই বৈদিক হিন্দু ছিল না।  ফলে সেন রাজাদের বিরুধে বাঙালী জনগোষ্ঠির অজস্র বিদ্রোহ হয়-এবং সেন রাজারা কোনদিন পালরাজাদের মতন জনপ্রিয় হতে পারেন নি।  এর জন্যেই আমরা দেখি মাত্র ১৮ জন ঘোরসওয়ার নিয়েই লক্ষন সেনকে পালাতে বাধ্য করেন বখতিয়ার খিলজি। কারন সেনেরা তখন জনবিচ্ছিন্ন।  এরফলশ্রুতি স্বরূপ বাঙালীরা দলে দলে রাজধর্ম ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে থাকে।  এই পক্রিয়া চলতে থাকে শ্রীচৈতন্যের সংস্কার আন্দোলন পর্যন্ত-যা আবার একটি উদারনৈতক সহজিয়া বাঙালী  ধর্ম তৈরী করে।
                                                                          [৩]

 বাঙালী মুসলমানরা নামেই ছিল মুসলমান। ধমনীতে তাদের ছিল সহহিয়া ধর্ম। ফলে বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্ম আস্তে আস্তে ইসলামিক সহজিয়া ধর্মে রূপান্তরিত হয় । শাহ জালালের মতন সুফীরা এই ছিলেন এই রূপান্তরের ক্যাটালিস্ট। কিন্ত সেই ইসলাম আরবের খেজুর কাঁটার ওয়াহাবি ইসলাম না।  বস্তুত নিম্নমধ্যবিত্ত বা গরীব বাঙালীর ধর্মে কোন পার্থক্য ছিল না- গরীব বাঙালী ফকির, বৈষ্ণব, সুফী ইত্যাদি সহজিয়া পথেই ছিল দীর্ঘকাল। বাঙলা ভাষাতে কোন কোরান ছিল না সেই ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত। এবং প্রথম কোরান যিনি বাংলায় লিখলেন, সেই গিরিশ ভাই একজন ব্রাহ্ম। কেশব চন্দ্র সেনের নববিধান সভা, কোরানের বঙ্গানুবাদ করার খরচ দিয়েছিল।  শুধু তাই না-বাংলার আলেমগন গিরীশচন্দ্রকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন "
আমরা বিশ্বাস ও জাতিতে মুসলমান। আপনি নিঃস্বার্থভাবে জনহিত সাধনের জন্য যে এতোদৃশ চেষ্টা ও কষ্ট সহকারে আমাদিগের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধনে নিযুক্ত হইয়াছেন, এজন্য আমাদের আত্যুত্তম ও আন্তরিক বহু কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি দেয়।
কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা, অনুবাদক সাধারণ সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন। যখন তিনি লোকমন্ডলীয় এতোদৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন, তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্ন-পরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিত।"
  আমার ধারনা এই সহজিয়া ভাবটা নষ্ট হয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে-যবে থেকে আরবের পেট্রডলারে খেজুর কাঁটাআলা ইসলামের আমদানী হয়েছে বাংলাদেশ [ এবং ভারতেও]।

 তিতুমির এর সময় থেকেই ওয়াহাবিদের একটা ক্ষীন প্রভাব বাংলাতে ছিল। নোয়াখালির দাঙ্গার পেছনে, সেই ওয়াহাবিদের প্ররোচনা কাজ করেছে।  কিন্ত ১৯৮০ সাল থেকে এরা প্রচন্ড টাকা ঢালে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে। পাকিস্তান এর মধ্যে উচ্ছন্নে গেছে। ভারতে মুসলমান-হিন্দু টেনশন ক্রমাগত বাড়ছে।

            আর বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র দেশ, যে দেশের একটা বিশাল সংখ্যক বুদ্ধিজীবি এই ওয়াহাবি খেজুর কাঁটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছে।  কিন্ত দেখা যাচ্ছে, সেই জয় ক্ষণস্থায়ী।  বাংলাদেশী সরকার ধর্মীয় মৌলবাদের পায়ের ধূলোধোয়ার জন্য নাস্তিক ব্লগারদের কারাগারে নিক্ষেপ করল।  বৃটিশ ভারতে ডিরোজিওর শিষ্যরা হিন্দু ধর্মকে আক্রমন করে। তারা হিন্দু দেবদেবী নিয়ে ব্যাঙ্গ করত।  সেই আক্রমনের জন্য পরবর্ত্তীকালে হিন্দু ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের জন্ম হয়। ডিরোজিওর বিরুদ্ধেও হিন্দুদের আক্রোশ ছিল-কিন্ত তার জন্য ডিরোজিও বা তাদের শিষ্যদের আজ থেকে দুশো বছর আগে জেলে যেতে হয় নি। আর সেই জন্য হিন্দু ধর্মে সংস্কার কিছুটা এগিয়েছে।

      অথচ বাংলাদেশে সেটুকুও সম্ভব হল না। ফলে বাংলাদেশের মৌলবাদি পচন অব্যাহত থাকবে যদ্দিন না সেই পচনশীল সমাজ ক্ষুদার অভাবে বিদ্রোহ ঘোষনা করে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে গ্রহণ করবে। এই শতাব্দিতে ধর্ম হচ্ছে সেই পচা মাছ, যা শাক দিয়ে ঢাকা যায় না। বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোন দেশের কোন সরকার পারবেনা ধর্মের দুর্গন্ধকে আটকাতে।