Saturday, October 31, 2015

ধর্মের বিরুদ্ধে মার্কেটই আশা, মার্কেটই নিরাশা

আলটিমেটলি রাজনীতিটা ক্ষমতা দখলের খেলা। আবাহমান কাল থেকেই খুন, উৎকোচ, ধর্ষন, ঘরবাড়ি ফসল জ্বালিয়ে দেওয়া-এসব কিছুই করতে হয়েছে ক্ষমতা টেকানোর জন্য। এর মধ্যে সব থেকে সূক্ষ্য যে কগনিটিভ কণ্ট্রোলের রিমোট বাটন ছিল-সেটা হচ্ছে ধর্ম।

তবে এই নিরাশার দিনেও আমি আশার আলো দেখি। আলটিমেটলি ধর্ম টিকে আছে শাসক শ্রেনীকে কগনিটিভি কণ্ট্রোল দিতে। মার্কেটের প্রসারের সাথে সাথে এটা সম্পূর্ন অন্যখেলা হবে। খেলাটা খুব সূক্ষ। ধর্ম মানুষকে একটা ভুল আশা দেখায়-ফলে পরকালে বা অন্যজন্মের আশায় তৈরী হয় তার আশাবাদ। সেটাও বেচা যায়-আধ্যাত্মিকতার আফিঙে মুড়ে সেটার ও কেনা বেচা চলে পৃথিবীর সর্বত্র। কিন্ত সেখানেই মার্কেটের কারসাজি! যদি অবজেক্টিভ ফাংশানের মধ্যে ইহজীবনের ভাল খাদ্য পানীয় সুরা নারী ঢোকানো যেত-খুব সম্ভবত বস্তুবাদি লোভ দিয়েই মানুষকে নিয়ন্ত্রন করা যেত। আধ্যাত্মিক লোভ, পরকালের সুরাহুরিদের লোভে দলে টানতে হত না। মার্কেট সেটাই করে। আমেরিকাতে মদ্য, মারিজুয়ানা, স্ট্রীপ ক্লাব, পর্ণ-এসবের বিরুদ্ধে আপত্তি কিন্ত আসে গোঁড়া ধর্মীয় আধ্যাত্মিক লোভে বিশ্বাসী লোকেদের কাছ থেকে। তবে এগুলোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় লোকেদের একটা মরাল হাই গ্রাউন্ড থাকে। কিন্ত আসল প্রতিযোগিতা আসছে একটা নতুন শ্রেনীর "গুরু" দের কাছ থেকে। যারা বলছে তারা পেশাদার "লাইফস্টাইল গুরু"- ফিটনেস-খাওয়া দাওয়া-কাজ করা-চিন্তাকরা- রিলেশনশিপ-ইত্যাদি নিয়ে তারা পেশাদার এডাভাইসার হচ্ছে-দাবী করছে-দুবছরের মধ্যে রোগ সারিয়ে দেবে-পেশাদারী জীবনে উন্নতি করিয়ে দেবে উন্নত প্রোডাক্টভিটির মাধ্যমে। আমার ধারনা এই নো ননসেন্স লাইফস্টাইল গুরুরা আস্তে আস্তে ঈশ্বর এবং ধর্ম ভিত্তিক গুরুদের রিপ্লেস করতে সক্ষম হবে। এটা এখন আমেরিকার টপ ১% এ সীমাবদ্ধ-কিন্ত আস্তে আস্তে এটাই হবে মডেল।

আধ্যাত্মিক লোভের সাথে বস্তুবাদি লোভের একটা বিরোধ আছে। আশার স্থল সেটাই যে মার্কেট তার নিজের প্রয়োজনে বস্তবাদি লোভটাকেই বাড়াতে চাইবে। তাতেও অনেক ক্ষতি আছে। কিন্ত আপাতত তা ধর্মীয় চাপাতির থেকে ভাল।

মার্কেট অবশ্যই কাজ করে। আমেরিকাতে করছে। ১৯৮৯ সালে নিধার্মিকের সংখ্যা ছিল ৮%। এখন ১৮%। পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সব দেশে নিধার্মিকরাই এখন সংখ্যাগুরু। ভারত বাংলাদেশেও করবে। মার্কেটকে খেলতে দিতে হবে। যাতে মার্কেট নিজের প্রয়োজনেই আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে সরিয়ে বস্তবাদি লোভ ঢোকাতে পারে। তবে ভারতে ধর্মীয় চাহিদাও মার্কেট হয়ে যায়! দেখা যাক নিরাশায় না ভুগে- জীবদ্দশায় দেখে যেতে চাই ধর্ম মুক্ত ভারত এবং বাংলাদেশে।

Wednesday, October 28, 2015

বিজেপি নিজের ধ্বংস নিজেরাই ডেকে আনছে

মোদি এবং তার সুযোগ্য সেনারা কি ভাবেন জনগণকে যা খুশী খাওয়ানো যায় মিডিয়া ক্যাম্পেইন দিয়ে? লোকে কিছু বুঝবে না?

 মোদির এই উত্থানের পেছনে, লোকজনের "আশার" ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। যে দেশে কিছুই হয় না- সব না এর দেশে যদি লোকটা কিছু করতে পারে! এবার ত দেখা যাচ্ছে উনি করার থেকে দেশের ক্ষতি করে দিলেন বেশী!

   শিক্ষা এবং গবেষনা হচ্ছে একটা জাতির মেরুদন্ড। শুনলাম মোদির পেয়াদারা ঘোষনা করেছেন এবার থেকে রিসার্চের টাকা ল্যাবেটরীগুলিকে নিজেদেরই জোগার করতে হবে! সি এস আই আর কে দেওয়া অনুদানের পরিমান অর্ধেক করা হচ্ছে! যাদের নেট নেই, তারা ফেলোশিপ পাবে না!

   প্রথম কথা হচ্ছে এগুলো আমেরিকাতে সম্ভব কারন এখানে প্রতিটা ফেডারেল এজেন্সি তাদের বাজেটের ৩% গবেষনা এবং নতুন প্রজেক্টের জন্য ছোট কোম্পানী গুলিকে দিতে বাধ্য। এটাকে এস বি আই আর গ্রান্ট বলে যা আমেরিকার অনেক গবেষককে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখানেও প্রাইভেট রিসার্চ গ্র্যান্ট খুব কম- অধ্যাপকদের নানান ফেডারেল এজেন্সি থেকেই গ্র্যান্ট আনতে হয়। ভারতে ত এসব কিছুই নেই প্রায়। তাহলে অধ্যাপকরা নিজেদের গ্র্যান্ট পাবে কোত্থেকে? অধিকাংশই রিসার্চ বন্ধ করে দেবে। কারন ভারতে আমেরিকার মতন অধ্যাপকদের বাজে পারফর্মান্সের জন্য তাড়ানো হয় না। তারা ফালতু কষ্ট করে গ্র্যান্ট আনতে যাবেই বা কেন? মাঝ খান থেকে ভারতের গবেষনার বারোটা বাজবে।

 ফালতু পেপার পাবলিকেশনের জন্য গবেশনা বন্ধ করে একাউন্টাবিলিটি আনা উচিত। এটা একদম ঠিক কথা। ভারতে ১৫০ টা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অথচ ভারতের কৃষকদের জন্য তাদের বলার মতন কোন প্রোডাক্ট নেই-এই সব প্রশ্ন উঠুক। গবেষনাতে একাউন্টিবিলিটী বাড়ুক। যেসব অধ্যাপকরা শুধু পাবলিকেশনের জন্য গবেষনা করে, তাদের গ্র্যান্ট কেড়ে নেওয়া হৌক। গবেষনার টাকা ভারতের গরীব লোকেদের জন্য, ভারতের সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হৌক। এগুলোতে আপত্তি নেই। এটাই হওয়া উচিত। কিন্ত গবেষনার টাকা কমালে, গোটা জাতির সর্বনাশ হবে। কারন স্কিলড ম্যানপাওয়ার না তৈরী হলে, নতুন প্রযুক্তিতে শিক্ষিত ম্যানপাওয়ার না থাকলে- কোন বহুজাতিক আসবে ?

ভারত কেন আমেরিকাতেও শিল্প সংস্থাগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষনাতে তেমন কিছু ইনভেস্ট করবে না। এর অনেক কারন আছে। কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নতুন কিছু তৈরী করলে, শিল্প সংস্থাগুলি সেটিকে প্রোডাক্টাইজ করতে পারে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় লাভ করতে পারে। আমাদের এখানে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবছর প্রায় ৮০০০ কোটি টাকার লাইসেন্স বেচেছে।  কিন্ত এই একই বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষনার জন্য সরকারি ফান্ডিং এর ওপর নির্ভরশীল বেশী।

রিসার্চ একাউন্টিবিলিটির যে মডেলটি উন্নত বিশ্বে প্রমানিত-সেটি হচ্ছে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে টাকা দেবে। তবে হ্যা, সেই গ্র্যান্ট গুলিও কম্পিটিশনের মাধ্যমেই পেতে হবে। তার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রযুক্তি বা জ্ঞান তৈরী করবে, যা ইন্ডাস্ট্রি কিনবে। তার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাবে এবং কোন গবেষনা কত বেশী মার্কেটে গেছে, কত বেশী লোকের উপকারে এসেছে, সেটার ইতিহাস দেখে সরকার সফল গবেষক এবং গবেষনাগারগুলিকে আরো বেশী গ্রান্ট দেবে।

বেসিক্যালি মোদি সরকারের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে চিন্তা ভাবনা করার লোক একদম নেই। সব দিকে ছড়াচ্ছে। ভারতের আরো ক্ষতি হচ্ছে এবং হবে। উনার উচিৎ পার্টির লোকগুলোকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড় করে পেশাদার লোকেদের এনে স্ট্রাটেজি তৈরী করা। কংগ্রেস কিন্ত সেটাই করত। পার্টির লোকদের শুধু রাস্তায় নামাত-আর দেশ চালানোর জন্য মনমোহনের মতন লোকেদের পেশাদার জগত থেকে আনা হত। আমার ত মনে হয়, সেই মডেলটা তাও চলছিল।  বর্তমানে পার্টির লোকেদের দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে, মোদি যে উদ্দাম ছড়াচ্ছেন, তা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।

Thursday, October 22, 2015

সবাইকে জানাই বিজয়ার শুভেচ্ছা

নিউজ ফিড সিঁদুর রঙে লাল। ফেসবুক জুরে বাচ্চা বুড়ী সবার হাঁসিখুশী মুখ।  শুধু দেহটাই দেশে নেই। মনটা ত্রিশঙ্কুর মতন দ্যোদুল্যমান- পুজোর আবহের ত্রিশ শতাংশ মৌতাতে মেতে আছি ভার্চুয়াল জগতে। কার্সি ফেসবুক।  এই নিয়ে পনেরো বছর পুজোতে দেশে অনুপস্থিত। আগে প্রতিবছর বিজয়াতে মনটা থাকত বিষাদে ভারাক্রান্ত-আসছে বছর আবার কবে হবে!! এখন এবছরই নেই-ত আসছে বছর !

   আসছে বছর না-আরো দূরের আগামীর প্রতীক্ষায় দিন গুনছি। যেদিন-ফেসবুকের নেক্সট ভার্সন হবে, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। খোদ আমেরিকাতে বসেও আমার সেন্সোরিয়াল অনুভূতিগুলো তৈরী হবে চারিপাশের চতুর্মাত্রিক ভার্চুয়াল জগত দিয়ে।  বাবুবাগানের পূজোর ভীড় বা ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা-বা পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য আর ছহাজার মাইল উড়ে যেতে হবে না। হাজার হাজার মাইল দূর থেকেও মনে হবে পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছি।

 আবার এটাও হতে পারে আগামী কুড়ি বছরে ভ্যাকুয়াম টিউব ট্রেইন চলে এল-যার গতি হবে ঘন্টায় পাঁচ হাজার মাইল!  মহাসাগরের জলের মধ্যে টিউব ফেলে চলবে সে ট্রেইন।  এদেশ থেকে ওদেশে পাড়ি দেব দুঘন্টায়। উইকেন্ড কোলকাতায় কাটিয়ে, কাজের দিনগুলো এখানে। চীন, আমেরিকা, জাপান সব দেশেই এই নিয়ে পরীক্ষা চলছে।

 মোদ্দা কথা দেশকালের ব্যবধান, ভার্চুয়াল হোক বা রিয়াল-তা ধ্বসবে একদিন। আশাত করাই যায়- জীবনের গোধূলী বছরগুলোতে ভারত-আমেরিকা ডেইলি প্যাসেঞ্জারী করতে পারব!

Sunday, October 18, 2015

অল্প বয়সে লোকে কেন আদর্শবাদে আকৃষ্ট হয় ?

কমিউনিজম, হিন্দুত্ববাদ, জামাতি ইসলাম ইত্যাদি আদর্শে কেন তরুন তরুনীদের মগঝ ধোলাই হয়, এটা নিয়ে ভেবে কিছু সিদ্ধান্তে এসেছি।

 মূলে যেটা আছে - "সমস্যা" বনাম "সমাধান" এই দুটো শব্দকে আলাদা করতে ব্যর্থ হওয়া। তার কারন হচ্ছে, মূলত যারা হাতে সমাধান আছে বলে দাবী করে-তারাই এই সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করে। বাকীরা করে না।  আমি উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছি।

  ধরুন মালিকদের হাতে শ্রমিকদের শোষন। বা শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী। বা আয়ের বৈষম্য । এগুলো কিন্ত সমস্যা। এবং বাস্তব সমস্যা। এগুলোকে অস্বীকার কেওই করবে না।

  কিন্ত মুশকিল হচ্ছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য যখন কেও দাবী করবে- লেনিনিজম হচ্ছে একমাত্র পথ। বা জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ান একমাত্র পথ।  আরো মুশকিল ইতিহাসটা কেও ডিটেলেস পড়তে চায় না। লেনিনিজম এবং ট্রেড ইউনিয়ানের ইতিহাস ভালো করে জানলে দুমিনিট লাগে বুঝতে লেনিনিজম এবং ট্রেড ইউনিয়ানিজম শ্রমিকদের জন্য কোনদিন কিছু দিতে পারে নি। লেনিনিজম দিয়েছে পার্টির নেতাদের প্রতি দাসত্ব, আর ট্রেড ইউনিয়ানিজমের চোটে কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিকদের রুটি রোজগার বন্ধ হয়েছে।  এগুলো অস্বীকার করবে কোন মূর্খ?

 আপনি বলবেন তাহলে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজের অধিকার, নুন্যতম মজুরী এগুলো কোত্থেকে এল ? হে মার্কেটে ঘটনা বা কমিনিউস্ট ইন্টারন্যাশানাল কোন ভূমিকা রাখে নি ? কারন ১৮৭০ সাল থেকেই ত এই দাবী গুলো তোলা হচ্ছিল?

 ইতিহাস পড়লে জানবেন শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির পেছনে-বা এই যে ১৯৩০-৫০ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বে নুন্যতম মজুরী বা চল্লিশ ঘন্টার কাজের সপ্তাহ এল-তার পেছনে শ্রমিক আন্দোলনের ভূমিকা খুব সামান্যই। হে মার্কেটের ঘটনার তিন বছর বাদে আমেরিকাতেই পেনসিলভেনিয়াতে হোমস্টেড স্টীল ফ্যাক্টরী ( যা কার্নেগী স্টিল অধিগ্রহণ করে ), কাজের সময় সপ্তাহে  ৫০ ঘন্টা থেকে ৬০ ঘন্টা বৃদ্ধি করে।  মজুরী কমিয়ে দেয়।  শুধু তাই না, হে মার্কেটের ঘটনা, যার থেকে মহান মে দিবসের রূপকথা রচিত-তার পরের ত্রিশ বছর আমেরিকাতে শ্রমিকদের অধিকার কমেছে, বাড়ে নি।  কারন ১৯১০ সাল নাগাদ রকাফেলার, মর্গান এবং কার্নেগীদের একচেটিয়া ব্যবসা শীর্ষে পৌঁছায়।  এরা নতুন কারখানা অধিগ্রহণ করতেন, শ্রমিক ছাঁটাই করে, বাকী শ্রমিকদের আরো বেশী ঘন্টা খাটিয়ে আরো বেশী লাভ দিয়েছেন শেয়ার হোল্ডারদের। এবং এগুলো হয়েছে এবং বেশ সুবৃদ্ধি হয়েছে হে মার্কেটের রূপকথার মে দিবসের পরের ত্রিশ দশকেই। হেমার্কেটের ঘটনা শ্রমিকদের কোন অধিকার দিতে পারে নি-সেটা হে মার্কেটের পরের ত্রিশ বছর আমেরিকাতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস পড়লেই পরিস্কার হয়।

 তাহলে শ্রমিকদের বর্তমান অধিকার এলো কোত্থেকে ? আমেরিকার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এর পেছনে সব থেকে বড় ভূমিকা ছিল রুজভেল্টের। কারন তিনি রকাফেলার, মর্গান এদের মনোপলি বন্ধ করে, কড়া আন্টিট্রাস্ট আইন আনেন। যাতে ছোট ছোট ব্যবসাগুলি বড় ব্যাবসার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে সমর্থ হয়। এবং এর পেছনে মূল কারন ছিল, রুজভেল্ট নিজে ওই ছোট বিজনেস লবীর লোক ছিলেন।

 ইনফ্যাক্ট ভারতের দিকে তাকালেও সেটা বোঝা যাবে। আজকে যে আই টি শিল্পের ওপর নির্ভর করে, ভারতের তরুন তরুনীরা এত ভাল স্যালারী পাচ্ছে- সেটা কি কোন শ্রমিক আন্দোলনের ফল? শ্রমিক আন্দোলন টাটা বিড়লা বা অন্য গোষ্টির কারাখানার শ্রমিকদের এত ভালো স্যালারী দিতে পেরেছে যা আই টি শিল্প পারছে?

আই টি শিল্পে ভাল স্যালারীর কারন এখানে কোন মনোপলী নেই-অসংখ্য হাজারে হাজারে কোম্পানী।  আর এই কোম্পানীগুলোর টিকে থাকতে দক্ষ শ্রমিক দরকার। ফলে শ্রমিকরা দড়াদড়ির সুযোগ পাচ্ছে- মানে তাদের হাতে চয়েস বেড়েছে। অর্থাৎ "লেবার মার্কেটে" একটা প্রতিযোগিতা আনতে পেরেছে আই টি শিল্প। এখন আই টি শিল্পে যদি শুধু টিসিএস আর ইনফোসিস থাকত-আজকে যারা টিসিএসে মাসে দুলাখ মাইনে পাচ্ছে, তারা ত্রিশ হাহার টাকাও পেত না। এই জন্য টাটারা  আই টিতে মাসে দুলাখ টাকা বেতন দিলেও, তাদের বেয়ারিং কোম্পানীতে শ্রমিকদের ১৫ হাজার টাকা বেতন ও দেয় না।

 মোদ্দা কথা শ্রমিক এবং মালিক-এই দুটি দিকেরই ব্যালান্সড বাজার দরকার। একজন শ্রমিকের  ১০০০ জন মালিকের একজনকে সিলেক্ট করার চয়েস থাকতে হবে। আর সেটা তখনই সম্ভব যখন কড়া আন্টিট্রাস্ট বা মনোপলী বিরোধি আইন থাকবে-মার্কেটকে প্রতিযোগী করার জন্য।

এগুলোর জন্য খুব যে বেশী পড়াশোনা করতে হয় -তাও না। চোখ কান খোলা রাখলেই বোঝা যায় ট্রেড ইউনিয়ানিস্ট লেনিনিস্ট বামেদের চিন্তা ভাবনার অসাড়তা।

হিন্দুত্ব বাদিদের ও এক ইস্যু।

ইসলামিক আইডিওলজি এবং তার থেকে উদ্ভুত সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই সমস্যা। বাস্তব সমস্যা। কিন্ত তার সমাধান কি গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করে? ইনফ্যাক্ট এখানেও মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বাড়ালে, আরো দাঙ্গা করলে-সেই বঞ্ছনা থেকে আরো অনেক মুসলিম সন্ত্রাসবাদির জন্ম হবে।  ট্রেড ইউনিয়ান যেমন শ্রমিকদের ভাল করার নামে, তাদের ধ্বংস করে, হিন্দুত্ববাদি ঘৃণা, দাঙ্গাও ইসলামিক মৌলবাদের সমস্যাকে আরো বাড়াবে।

যেখানে দরকার ছিল মুসলমানদের আরো বেশী বাজার অর্থনীতির সাথে জড়ানো-এবং তার জন্যে তাদের যা শিক্ষা বা স্কিল দরকার সেগুলো সরকার থেকে আরো বেশী করে খরচ করা-তারা যাতে আর বেশী করে ভাল চাকরী পায়-উচ্চ শিক্ষা পায়-এগুলোকে নিশ্চিত করা-এগুলো না করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ছড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের আগুনে ঘি ঢালছে হিন্দুত্ববাদিরা।

 জামাতিরাও এক ইল্যুউশনে ভোগে। জাস্টিস- চাই জাস্টিস। কোথাও জাস্টিস নেই-চারিদিকে অবিচার-তাই ইসলামই নাকি একমাত্র জাস্টিস বা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে!! চারিদিকে অবিচার এটা ঘটনা-কিন্ত তার সমাধান ইসলাম এটা তারা ধরে নিয়েছেন-কারন হাদিস এবং সুন্নতের অসংখ্য রূপকথা গিলিয়ে এদের মাথায় খাইয়েছে লোকজন। ৫১ টা মুসলিম দেশের কোন দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত?  এই কটা দেশ পৃথিবীর জঘন্যতম দেশ মানবাধিকারের দিক দিয়ে।
জাস্টিস চাইতে গেলে লিব্যারাল ডেমোক্রাসি ছাড়া উপায় নেই। কারন জাস্টিস  সিস্টেম বরাবর ক্ষমতাশীন টাকাপয়সাআলা লোকেদের হাতে আগেও ছিল-এখনো আছে। এগুলোর সমাধানের উপায় আরো ভাল গণতন্ত্র। ইসলামিক একনায়কতন্ত্র মানে সেই কিছু ঘুঘুদের হাতেই ক্ষমতা যাবে-এটা কে বোঝাবে মাথামোটা জামাতিগুলোকে ?

অনেকে বলেন আমিও মার্কেট মৌলবাদে বিশ্বাস করি!  আমি তাদের প্রশ্ন করি-আচ্ছা মার্কেট মানে মার্কিন সম্রাজ্যবাদ গুলিয়ে ফেলেন নি ত?

মার্কেটে মৌলবাদ বলে কিছু হয় না। মানুষ যা চাইছে-সেই চাহিদা থেকেই বাজার তৈরী। এখানে কোন কিছুর জোর চলে না-লোকে যা চায় সেটাই চলে। যেমন ধরুন এডিসন যখন ইলেক্ট্রিক বাল্ব তৈরী করলেন-তখন আমেরিকার সব থেকে বড় ধনী রকাফেলার। উনার টাকার উৎস ছিল -কেরোসিন। যা দিয়ে ল্যাম্প জ্বলত। এডিশনের আবিস্কারে ব্যবসা লাটে উঠবে দেখে রকাফেলার সমস্ত নিউজ পেপারে প্রচুর টাকা ঢালেন লোকজন কে বিভ্রান্ত করতে যে ইলেক্ট্রিসিটিতে লোকে শক খেয়ে মারা যেতে পারে। কিন্ত ইলেক্ট্রিসিটি আটকাতে পেরেছিলেন কি আমেরিকার সব থেকে বড় ধনী হওয়া সত্বেও?  এডিশন ও একই চেষ্টা করেছিলেন টেসলার এসি কারেন্ট আটকাতে। পারেন নি। কারন মার্কেটে ঔ ভাবে কোন কিছু স্থায়ী চাহিদা নেই। জনগণ নিজের জন্য যা ভাল-সেটা চাওয়া এবং কেনার স্বাধীনতাই বাজার।

সুতরাং যারা বাজারকে মৌলবাদি বলেন তারা অশিক্ষিত বামপন্থী। এজ ইউজুয়াল।

Saturday, October 17, 2015

লিব্যারাল ডেমোক্রাসি এবং ফ্যাসিস্ট পার্টি

লেখকবৃন্দের পুরস্কার ছেঁড়াছেঁড়ি বিশাল হ্যাজ ছাড়া কিছু না। প্রথমত লেখকের প্রকৃত পুরস্কার-তার লেখার কালোত্তীর্নতায়। দেশ কালের গন্ডী ছাড়িয়ে সার্বজনীন আবেদন এবং গ্রহণযোগ্যতায়।  একটা ফলক, সার্টিফিকেট আর একলাখ টাকায় লেখা মাপা সম্ভব? সুতরাং কোন লেখক যদি প্রতিবাদ করতেই চান-এই সব সার্টিফিকেট ফেরানোর নাটক বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদিদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী লেখা লিখুন।  লেখা আপনার অস্ত্র-রাজনীতি না। যদি হিম্মতআলে লেখক হৌন পেন ঝ্বলসে উঠুক বারংবার। দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত। তবেই আপনি লেখক। নইলে হ্যাজ। অমন কত লেখক,  আসে যায়, মাইনা পায়।

  আর লেখকের কন্ঠ অবরুদ্ধ করতে চায় না কোন হারামজাদা পলিটিক্যাল পার্টি?  যেসব বামপন্থীরা নেচে বেড়াচ্ছে বিজেপির হাতে লেখকদের হ্যানস্থার জন্য -পশ্চিম বঙ্গের ৩৪ বছরের বামরাজত্বে বাম বিরোধি লেখকদের অবস্থা কি ছিল? বামপন্থী বিরোধি নাট্যকাররা নাটকের মঞ্চ ভাড়া পেত ?

  বিজেপি মোটেও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সিপিএম ও করে না। একই সাথে আদর্শে এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা যায় না। কারন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা মানে বিরোধি মতের প্রতি শ্রদ্ধা।  আর আদর্শে বিশ্বাস করা মানে, আমার আদর্শেই একমাত্র সমাধান ও ভবিষ্যত সেটা মেনে নেওয়া। তেলে জলে মেশে?  বিজেপির দাবি হিন্দু সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ( যদিও সেটা পেটে খায় না মাথায় দেয়, সেটা কেওই জানে না )। এখন কেউ যদি বলে হিন্দু সংস্কৃতি আদতে একটি বর্ণবাদি বাল, তারা লেখককে খুন করতেই পারে। ঠিক যেকারনে ইসলামের সমালোচকরা খুন হচ্ছেন। লেনিন কি ১৯১৭-১৯২০ সাল পর্যন্ত তার বিরোধিদের পূজো করেছিলেন? সবাইকে খুন করেছিলেন। কমিনিউজমের সমালোচকদের কি কমিনিউস্ট দেশগুলোতে পূজো করা হত না সাইবেরিয়াতে পাঠানো হত? বিজেপির হাতে হেনস্থা হওয়া লেখকদের জন্য কমিবৃন্দের চোখের জল দেখে বিড়ালের মৎস্যপ্রেম উথলে উঠছে।

লিব্যারাল ডেমোক্রাসি একটা হাঁসজারু মার্কা ফেইলড এক্সপেরিমেন্ট।  ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা যদি এর ক্রাইটেরিয়া হয়, তাহলে গণতন্ত্রে যেকোন টোটালটারিয়ান মতবাদের পার্টিকে ব্যান করতেই হবে। আমেরিকাতে এই জন্য কমিনিউস্ট পার্টি ব্যানড-হিন্দুইস্ট বা ইসলামিস্ট পার্টি যারা টোটালটারিয়ানিজমে বা আমার আদর্শই সর্বোত্তম এবং একমাত্র সত্যে বিশ্বাস করে-তাদের আইন করেই গণতন্ত্রে নিশিদ্ধ করা উচিত। বিজেপি সিপিএমের মতন পার্টি গণতন্ত্রে থাকবে, আবার লেখকদের খুন করা হবে না, হ্যারাস করা হবে না -এসব আকাশকুসুম কল্পনা।  স্পেডকে স্পেড বলতে শিখুন।

 লিব্যারাল ডেমোক্রাসি যদি আইন করে প্রতিটা ফ্যাসিস্ট পার্টিকে আটকাতে না পারে, তারা ভোটে জিতে লিব্যারাল ডেমোক্রাসিকেই ধ্বংস করবে। এটা ইতিহাসেরই পুনারবৃত্তি হচ্ছে। আমি মনে করি আইন করে ভারতে সব কমিনিউস্ট পার্টি, হিন্দুত্ববাদি পার্টি আর ইসলামিক পার্টি গুলিকে নিশিদ্ধ করা দরকার।

আর সেটা না করলে সত্যিকারের লেখকেরা মরতেই থাকবে। সভাকবিরা পুরস্কৃত হবেন-তবে তাদের লেখা কালের বিচারে মাটির গর্তেই ঢুকে যাবে।

অনলাইন ব্যবসা - বাঙালী যুবকদের সামনে আলোর রেখা না মরীচিকা ?

অনলাইন ব্যবসা - বাঙালী যুবকদের সামনে আলোর রেখা না মরীচিকা ?
http://biplabbangla.blogspot.com/2015/10/blog-post_17.html
**********************************         
                                        (১)
  যেখানেই সমস্যা, সেখানেই আশার আলো-চাইনিজ প্রবাদ

চম্পক দে নগরচন্ডালীতে একটা গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট দিয়েছে। ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের চাপে এবার নাকি কোলকাতার পূজোর বাজারে কেনাকাটা অনেক কম। গোপা সরকার, তার পারিবারিক বুটিক ব্যবসার সূত্রে জানিয়েছে, এবার সেল প্রায় ৩০% কমেছে। পরেরবার আরো কমবে -কারন অনলাইন সেল আরো বেশী জনপ্রিয় হচ্ছে। চম্পক আরো জানিয়েছে, আগে তাও বেকার যুবকেরা মোবাইল আর প্রিপেইড চার্জ করিয়ে বাঁচছিল। অনলাইন সেখানেও থাবা বসিয়েছে। তাহলে বাঙালী বেকারেরা যাবে কোথায়? বাংলায় ত কোন ব্যবসা নেই! চম্পকের সুচিন্তক পোষ্টটার অংশ দিয়েই শুরু করি

 পূজোর কটা দিনের জন্য ছোটো বড় মাঝাড়ি ব্যাবসায়ীরা চাতক পাখির মত চেয়ে থাকে বছর ভর। এই সময় তাদের ব্যাবসা তুঙ্গে পৌছায়। বিশেষ করে পোষাকের বিপনন প্রতিষ্ঠান গুলো। বছরের মধ্যে তাদের এই সময় ব্যাবসা এবং ইনকাম কয়েক গুন বেশি হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাবসা ধিরে ধিরে তলানিতে এসে নেমেছে। বিশেষ করে এই বছর সেটা মারাত্বক আকার ধারন করেছে। যেসব দোকানে আগে কাস্টমারের লাইন লাগতো সেইসব দোকান এখন এই ভরা সিজনে প্রায় মাছি মারছে। অপর দিকে দেখা যাচ্ছে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টারে বিভিন্ন আকারের প্যাকেট এবং মানুষের ঢল। ঘুরপথে এফ ডি আই এর ফল এই সব অনলাইন ব্যাবসা এবং এর রমরমা। তাদের প্রোডাক্টের রকমারি এবং অস্বাভাবিক কম দামের সাথে পেরে উঠছেনা এই সব ছোটো ব্যাবসায়িরা। মার খাছে ছোটো বাজার তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাখো ব্যাবসায়ি, কর্মচারি এবং তাদের পরিবার। এবছর প্রায় ৩০% ব্যাবসা কমেছে যেটা আগামি বছর গুলোতে বহুগুন বাড়বে। একটা ভয়ানক পরিস্তিতির সামনে আমরা দাড়িয়ে আছি। বহু দোকান উঠে যাবে আগামি কয়েক বছরে এবং বেকার হয়ে পরবে বহু মানুষ। তারা কি করবে? 

 আমার এই লেখা মূলত সেই সব তরুন বাঙালীর জন্য, যারা অনলাইন ব্যবসা খুলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। এটা ড্রাই আন্ড কাট ব্যবসা সংক্রান্ত লেখা। আঁতেল বাঙালীর জন্য,  ইন্টেলেকচুয়াল মাস্টারবেশন না।
 প্রথমেই চম্পককে ধন্যবাদ জানাই। ফেসবুকে কোলকাতার সুখী উচ্চশিক্ষিত বাঙালীর বাইরে যে বৃহত্তর বঙ্গ-সেটাই রিয়ালিটি।  সেখানে মাসে দশ হাজার টাকা ইনকাম করতেও অধিকাংশ বাঙালী যুবক অক্ষম। চারদশকের স্বমেহনের  বাম রাজনীতিতে এই শ্বশান বঙ্গে অধিকাংশ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের ভিখারীর দশা।  যেটুকু বেঁচে ছিল-তা হচ্ছে ট্রেডিং। অনলাইন রিটেলের ঠেলায়-তাও চেলা কাঠে। 

তাহলে উপায় কি ? অনলাইন রিটেল আশীর্বাদ না অভিশাপ? 

 আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমি আমেরিকাকেও এই ফেজের থ্রু দিয়ে যেতে দেখেছি। যদি বাঙালী যুবকরা তাদের মেধা এবং পরিশ্রম কাজে লাগাতে পারে-তাহলে অনলাইন আসলেই আশীর্বাদ। আমি এই লেখাতে কি কি অনলাইন ব্যবসা অল্প পুঁজিতে, শুধু মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে করা সম্ভব-সেটা নিয়েই লিখব। 



                                                    (২)
                                                                         
আমি লেখাটাকে তিন ভাগে ভাগ করেছি। এই ভাগে মূলত আইডিয়া গুলো ডিসকাস করব। পরের ভাগে ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু মৌলিক জ্ঞান এবং স্ট্রাটেজি নিয়ে আলোচনা করব।  একদম শেষে নিজের ব্যবসা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

   অনলাইনে জামাজুতো বই বেচা ? 
                
        খুব বাজে আইডিয়া। কারন এইগুলিতে বড় বড় প্লেয়ারা অনেক টাকা নিয়ে বসে আছে।  সাপ্লাই লাইনে অভিনবত্ব না থাকলে, এখানে ঢোকা উচিত না। যেমন কেউ যদি শান্তিপুরে তাঁত অনলাইনে বেচতে চায়, তাকে নিশ্চিত করতে হবে, সে তাঁতীদের কাছ থেকে ডিরেক্ট কিনতে সক্ষম এবং তাই প্রাইস ওয়ারে পেরে উঠবে।  দোকান থেকে কিনে, দালালের কাছ থেকে কিনে অনলাইনে বেচে দিলাম-সেসব সম্ভব না। অনলাইনে দাম ভীষন কম রাখতে হয়।  লোক্যাল প্রোডিউসারের সাথে ডিরেক্ট যোগাযোগ না থাকলে, এই ব্যপারে নামা উচিত না। তাহলে কি কি জিনিস অনলাইনে বেচা যায়? যা ইনোভেটিভ? আমি পরে আসছি সেই প্রশ্নে।  তার আগে জানা যাক -কিভাবে সেট করতে হয় অনলাইন ব্যবসা 

  কি করে সেট আপ করবেন নিজের অনলাইন ব্যবসা ?
  
এটা খুব সোজা। ফ্লিপকার্ট, আমাজন, ইবে সর্বত্র সেলার আকাউন্ট খুলে আপনার ভার্চুলাল স্টোর খুলে বসুন। কেউ কেউ মাসে চার্চ কর, কেউ ফ্রিতে দেয়।  একাউন্ট খোলার পরে, নিজেই নিজের প্রোডাক্টের ফটো, বিনপন, গুনমান তুলে দেওয়া যায়। ঠিক ফেসবুকে প্রোফাইল সাজানোর মতন। আরো বড় স্টোর খুলতে হলে কনসাল্টটান্টের সাহায্য নিতে পারেন। ফেসবুক, লিঙ্কডিনে ফ্লিপকার্ট আমাজন স্টোর যারা সাজায়, তাদের বিরাট গ্রুপ আছে। সেখানে একটা পোষ্ট করলেই অনেকে এগিয়ে আসবে। খরচ পড়বে ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মতন। আপওয়ার্কে (www.upwork.com) এড দিয়েও দেখেশুনে লোক নিতে পারেন। 

নিজের সাইটেও ইকর্মাস খুলতে পারেন। ইকর্মাসের সব থেকে জনপ্রিয় সফটোয়ার হচ্ছে ম্যাজেন্টো (http://magento.com/)। ম্যাজেন্টো ফ্রি । কিন্ত চালাতে সার্ভারে বসাতে হয়। এছাড়া ম্যাজেন্টোর সাস মডেল ও আছে। আরেকটা জনপ্রিয় সফটোয়ার http://www.ucommerce.net/. যারা ওয়ার্ডপ্রেসে সাইট করেছেন, সেখানে এটা প্লাগইন হিসাবে বসানো যায়। আমি অবশ্য ম্যাজেন্টোই সাজেস্ট করব। ওদের লজিস্টিক ইন্টিগ্রেশন অনেক ভাল।

 সার্ভারের খরচ মাসে ২৫০/ থেকে ২০,০০০/ টাকা পড়বে মোটামুটি ১০ টা থেকে ১০০০ টা আইটেমের মধ্যে থাকলে-আর যদি সাইট ভিজিটর দিনে ১০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে থাকে। ভারতে আজকাল অনেকেই অনেক সস্তায় সার্ভার দিচ্ছে। 

 আর কি করে আমাজনে বা ফ্লিপকার্টে সেলার হতে হয়, তার অনেক ইউটিউব ভিডিও আছে। এগুলো দেখে নিন।

(1) https://www.youtube.com/watch?v=qeYeiXeuNMk
(2) https://www.youtube.com/watch?v=6aac8vPr3CQ


নিজের সাইট বনাম ফ্লিপকার্ট বা আমাজন ?

  দুটোর ই দরকার আছে। সাইট খুললেই ত হলো না। সাইটে লোক টানতে হবে। তার থেকেও বড় কথা বাজে মাল গছালে রিটার্নের গ্যারান্টি কোথায়? রিটার্ন গ্যারান্টির জন্য লোকে আপনার সাইট থেকে কিনবে না। সস্তায় দিলেও না। সেই আমাজন বা ফ্লিপ কার্ট থেকেই কিনবে।

 তাহলে নিজের সাইট কেন? কারন আমাজন বা ফ্লিপকার্ট ১০-১৮% কাট নেয়। ওটা দেওয়ার পরে অধিকাংশ ব্যবসাতে ১০% লাভ ও থাকে না। সেই জন্য অনেকেই যেটা করে, আমাজন বা ফ্লিপকার্টে বেচে প্রথমে ক্লায়েন্টদের নাম এড্রেস ইমেল জেনে নেয়। ফ্লিপকার্ট দিয়ে,  একবার ডেলিভারি দিয়ে সেই ক্লায়েন্টের কাছে ব্রান্ডটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আপনি নিজে তাকে ইমেল করুন আপনার ওয়েব সাইট থেকে কিনতে-তাহলে সে ১০% কমে পাবে। সেই ক্ষেত্রে আপনার চান্স আছে। কারন সেক্ষেত্রে রিটার্ন হ্যান্ডলিং এর কথা ক্লায়েন্ট নাও ভাবতে পারে।

 আরেকটা কারনে নিজের সাইট দরকার। পেরিশেবল গুডস বা সার্ভিস ব্যবসা অনলাইনে আনতে গেলে, নিজের সাইট ছাড়া গতি নেই। কারন এগুলো ভীষন ভাবে নিজের লজিস্টিক ইন্ট্রিগ্রেশনের ওপর নির্ভরশীল। অনলাইনে এই সার্ভিস বা পেরিশেবল গুডসের ব্যবসায় ধান্দা এখন বেশী। কারন এগুলো খুব বড় অনলাইন রিটেলারদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই করা অসম্ভব।


কি বিক্রি করবেন অনলাইনে ?
  জামা, প্যান্ট বই, গহনা বিক্রির ধান্দা ছাড়ুন। ওগুলো করতে গেলে ডুববেন।  আরো অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হবে যে কোথায় ফ্লিপকার্ট বা স্ন্যাপডিলের পক্ষে ঢোকা সম্ভব না। তবে কিছু কিছু কটেজ মালপত্র -যেমন নানান ধরনের লোক্যাল প্রোডাক্ট -যথা পোড়া মাটি বা কাঠ বা শাঁখের গয়না-বাঁশের কাজপত্র-যা গ্রামে তৈরী হয়-তা যদি সরাসরি কিনে সেখান থেকেই পাঠানোর লজিস্টিক ইন্ট্রিগ্রেশন করতে পারেন-তাহলে ভবিষ্যত আছে। তবে এসব ক্ষেত্রেও টার্গেট ক্লায়েন্ট পশ্চিম বঙ্গের বাইরে হলেই ভাল। কারন পশ্চিম বঙ্গের লোকেদের পকেটে টাকা নেই। 

 আমি দু একটা উদাহরন দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছি। ব্যাঙ্গালোর দিল্লীতে এখন অনেক ছোট ছোট কোম্পানী নিজেদের ওয়েব সাইটের থ্রু দিয়ে এগুলো করছে। এগুলো সব ক্যাশ অন ডেলিভারি। 
 পেরিশেবল গুডস একটা সুইট স্পট। যেমন ধরুন মাছ, মিস্টি এবং সব্জি।  ফ্রেশ মাছ এবং সব্জি কোথায় পাবেন ? উত্তর হচ্ছে পুকুরে আর জমিতে!  এগুলোর সমস্যা হচ্ছে স্টোরেজ এবং ডেলিভারি। উভয় ক্ষেত্রেই রেফ্রিজারেশন মাস্ট। কোল্ড স্টোরেজ সমস্যা না-তবে ভারতে রেফিজারেটেড ট্রাক প্রায় নেই। সুতরাং খুব লোকাল ভাবে ছাড়া এটা হবে না।  এবং বাজারের থেকে দাম ৪০% কম রাখতে হবে। সেটা অবশ্য সম্ভব যদি একদম চাষীদের কাছ থেকে ডাইরেক্ট কিনে স্টোর করতে পারেন। মিস্টি আজকাল অনেকেই অনলাইনে বেচে। কোলকাতা থেকে মিস্টি আজকাল সকালের ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালোর বা দিল্লী যাচ্ছে।    

 সার্ভিস বেচা আরো সহজ-তবে এখানে কেউ কিনবে কি না তা নির্ভর করছে অনলাইন মার্কেটিং এর ওপরে। কি কি বেচতে পারেন? একটা সহজ উদাহরন দিই আমেরিকান মার্কেট থেকে। এখানে বৃদ্ধদের পক্ষে কম্পিউটার ঠিক ঠাক করা অনেক অসুবিধা । তাই অনেক অনলাইন কোম্পানী আছে-যেখানে বৃদ্ধদের কম্পিউটার , স্মার্টফোন খারাপ হলেই লোক পাঠিয়ে দেয়।  যারা ভাল কম্পিউটার বা স্মার্টফোন সারাতে পারেন, তারা নিজেদের লোকালিটিতেই নিজেদের ব্যবসাটা অনলাইন করে দিতে পারেন। ওয়ান ক্লিক বা ওয়ান ফোন কলে লোক পাঠিয়ে দিন। অনেকে আবার এটা ওভার সিজ করছে। ভাল কমিউনিকেশন স্কিল থাকলে কোলকাতায় বসে অস্ট্রেলিয়ান বৃদ্ধের কম্পিউটার সারাচ্ছে।

 অনলাইন শিক্ষা-একটা বড় মার্কেট। অনেক ভারতীয় গায়ক এখন আমেরিকানদের গান শেখাচ্ছে স্কাইপ বা গুগল হ্যাঙ্গ আউটের মাধ্যমে। ভারত থেকে আমেরিকান বাচ্চাদের অঙ্ক শেখাচ্ছে অনেকেই। অনেকগুলো সাইট আছে এর জন্য।  ক্লায়েন্ট ধরাটাই আসল এসব ক্ষেত্রে।  কোলকাতা থেকে বসে ব্যাঙ্গালোরের বাচ্চাদেরই শেখান। ইনফ্যাক্ট অনেক প্রবাসী বাঙালী চায়, তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য বাঙলা বেসিক টিউটর । বাঙালী এতই ব্যবসা বিমুখ-সেটুকুও কেও এখনো করে উঠতে পারে নি!! 

 আরেকটা বিশাল অপারচুনিটি ট্রাভেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে। হ্যা, ভ্রুমন।  একটা নতুন ধান্দার কথা বলি যা ইউরোপে  দেখেছি। আমেরিকাতে অতটা নেই। সেটা হচ্ছে গ্রামীন টুরিজম। যেমন ধরুন কোলকাতা থেকে বেড়োনোর জায়গা খুব লিমিটেড-সেই মন্দারমনি, নইলে সুন্দরবন। গ্রামে যাদের বড় বাড়ি আছে-ক্ষেত পুকুর জমি জমা আছে-তাদের সাথে কথা বলে তাদের বাড়িতেই উইকেন্ড গেস্ট হাউস বানান। যেখানে উইকেন্ডে কোলকাতা থেকে বাবুরা ফ্যামিলি সহ এসে গ্রামের জীবন কাটাতে পারবে দুদিন। এগুলো করা খুব সহজ। উত্তর বঙ্গে সিনিক স্পটে অনেকে শুরুও করে দিয়েছে। জাস্ট একটা ফেসবুক পেজ বা গুগল পেজ খুলে ফোন নাম্বার দিন-আলব্যামে ছবি দিন গেস্ট হাউসের। ওয়েব সাইট রাখার ও খরচ নেই। 


 কি ভাবে করবেন মার্কেটিং ?
     
 গুগল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এস ই ও সব থেকে ভাল অপশন। কিন্ত খরচ খুব বেশী। গ্যারান্টি কম।  এইজন্যে
ছোট থেকে শুরু করুন। ফেসবুক গ্রুপ খুলুন-যা ইন্টারেস্ট গ্রুপ। নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে ভাল ব্লগ খুলুন। ভিডিও বানান। স্প্যাম করবেন না। লিখতে শিখুন। ব্লগ খুব এফেক্টিভ।  ভালো সার্ভিস দিলে, কাস্টমারই আপনাকে আরো অনেক কাস্টমার এনে দেবে। 

ইনফ্যাক্ট এখন শহর ভিত্তিক নিউজ পেপারগুলো মারা গেছে। যদি কেও কেও শহর ভিত্তিক ভালো ফেসবুক গ্রুপ চালু করে এবং সেই শহরের খবরগুলো ছবি সহ দেয়-সেটাও ভাল ব্যবসা হতে পারে। কারন এখন একটা জেলা শহরে নিউজ পেপার যেকজনের কাছে পৌছায়, তার থেকে অনেক বেশী লোক ব্যবহার করে ফেসবুক। কেউ যদি পেশাদারি ভাবে, নিজের শহরের একটা ফেসবুক গ্রুপ চালায়-যেখানে সেই শহরের দুই তিন হাজার লোক-রোজ খবর দেখতে বা আড্ডা মারতে আসে-সে লোক্যাল বিজনেসের কাছ থেকে প্রচুর বিজ্ঞাপন পাবেই। 

 কাদের কাছে বেচবেন ?
    
     ক্লায়েন্ট চেনা হচ্ছে ব্যবসার সাফল্যের পেছনে #১ কারন।  যেমন ধরুন-যদি বর্ধমানের মিহিদানা বা কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া  শুধু পশ্চিম বঙ্গ বাসী বা কোলকাতাবাসির জন্য অনলাইন করে দেন-সেই ব্যবসা  না চলার সম্ভাবনাই বেশী। কারন পশ্চিম বঙ্গে বা কোলকাতায় লোকের টাকা নেই। কিন্ত সেই মাল যদি ব্যাঙ্গালোর, পুনে, হায়দ্রাবাদের বাঙালীদের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করেন-ব্যবসা রমরমিয়ে চলবে।  ইনফ্যাক্ট পশ্চিম বঙ্গ বাসী কিনবে-এটা যদি ব্যবসার মডেল হয়-আমি প্রথমেই না করে দেব। কিভাবে বৃহত্তর ভারতে বা প্রবাসী বাঙালী বা পশ্চিম বঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের কাছে বেচা যায়-সেই মডেল দেখুন। 

 আরো অনেক অনলাইন ব্যাবসা আছে-যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং বা আই টি ডেভলেপমেন্ট বা অনলাইন মার্কেটিং। সেটা অন্য কোন প্রবন্ধে হবে।

                                   (৩)

এবার ব্যবসা করার ব্যপারে কিছু স্ট্রাটেজিক দিক নিয়ে বলে রাখি।

   কাকে পার্টনার করবেন ?
                ব্যাবসার শুরুতে কাউকে পার্টনার না করায় ভাল। বাঙালী পার্টনার হলে একদম না।  ব্যবসা জমে যাওয়ার পরে, আপনি কাউকে মাইনে দিয়ে রাখুন।  পার্টনার করতে হলে ভাই বোন বা ফ্যামিলির মধ্যে রাখুন। ব্যবসা বড় হলে বা হওয়ার চান্স হলে, তাকেই পার্টনার করে আনবেন যে টাকা ঢালতে পারে বা বড় ডিল এনে দিতে পারে। সোয়েট ইক্যুইটি বা দুজনে খেটে ব্যবসা দাঁড়াবে এই মডেলে যাবেন না। আর বন্ধু বান্ধব হলে ত একদমই না। পেশাদারিত্ব থাকবে না। 

  কি করে ফাইনান্স করবেন ?
             সব থেকে ভাল মডেল হচ্ছে নিজে চাকরি করতে করতে, আস্তে আস্তে ফাইন্যান্স করা। আমি সেই ভাবেই শুরু করেছিলাম। এতে বিজনেস মডেল ভ্যালিডেশনটাও হবে-আর একটা ব্যবসা জমতে টাইম ও লাগে।  বুঝতেও সময় লাগে। 

         সবকিছু ছেড়ে হঠাৎ করে নতুন করে কোন ব্যবসায় ঝাঁপালে তা আত্মহত্যার নামান্তর । একটা ব্যবসায় তখনই ফুলটাইম হওয়া যায় যখন সেই ব্যবসা লাভ করছে, ফ্যামিলি চালানোর মতন টাকা আসছে।  

  ব্যবসা ফেইলড করলে ?
  ফেইল করবে, ধাক্কা খাবেন, দেনা হবে-এসব হবেই। সেটা জেনেই এগোতে হবে। ইনফ্যাক্ট আমি ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসার চেষ্টা করছি। ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে এসে প্রথম চাকরি ছাড়ার রিস্কটা নিতে পেরেছিলাম কারন তদ্দিনে তিন বছরে ব্যবসা থেকে সংসার চালানোর মতন টাকা আসছিল।  এর মধ্যে কত উদ্যোগ যে ফেইলড করেছে তার ইয়াত্তা নেই। ১০ টার মধ্যে ৯ টাই ফেল করেছে আমার ক্ষেত্রে। কিন্ত যেটা সফল হয়েছে-সেটা ৯ টার লোকসান পুষিয়েও অনেক কিছু দিয়েছে, বড়ও হচ্ছে।  ব্যবসাতে অনেক কিছুই ট্রাই করতে হয়। অধিকাংশ চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাতে টাকাও লোকসান হবে। কিন্ত একটা সফল হওয়াই যথেষ্ট। ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে হবে। 

    পজিশন এবং ব্রান্ডিং ঃ  ইউনিক পজিশনিং সবার আগে দরকার। মার্কেটে কিসের চাহিদা আছে যা মেটানো যাচ্ছে না, বা বেশী টাকা দিয়ে লোকে মেটাচ্ছে-এগুলো বুঝতে হবে মার্কেটে ঢুকে। ব্রান্ডের ইউনিক পজিশনিং না হলে মুশকিল আছে। ধারাবাহিক ভাবে মার্কেট থেকে শিখে পজিশনিং বদলাতে হবে-যাতে প্রোডাক্টের চাহিদা আরো বাড়ে-আরো মার্জিন বাড়ে।

 ডেলিভারি ঃ  ব্যবসা শুরু করলে, ইউনিক প্রপজিশন থাকলে ক্লায়েন্ট এসেই যায়। ক্লায়েন্ট টানাতে খুব সমস্যা হয় না। মূল যেকারনে অধিকাংশ ব্যবসা ফেইল করে-সেটা হচ্ছে পুওর ডেলিভারি। ডেলিভারি ভালো না হওয়া পর্যন্ত ক্লায়েন্ট টানা উচিত না।  ডেলিভারিই আসল জিনিস। ভালো ডেলিভারি থাকলে, বেশী দামেও ক্লায়েন্ট কিনবে। খারাপ ডেলিভারিতে সস্তায় দিলেও কেও নেবে না। ব্যবসাও হবে না। ডেলিভারিতে সব থেকে বড় কাজ হল ম্যান পাওয়ার সামলানো।  শ্রমিক সামলানোর সফট স্কিল না থাকলে ব্যবসায় নামা উচিত না।

   প্রাইসিং ঃ
এটা ট্রায়াল এন্ড এরর মেথডে ঠিক করতে হয়। মার্কেট প্রাইস ডিক্টেট করে। যারা এম বি এ করেছে, তারা অনেক রকম প্রাইসিং এর গল্প জানে। কিন্ত প্রাক্টিক্যালি ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলে, একজন না অনেকের সাথে কথা বলার পরে-প্রাইস বাড়িয়ে কমিয়ে দেখতে হয়।
   
 অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য ঃ  
  প্রচুর টাকা রোজগার করব, দামী গাড়ী কিনবো-এইসব আশা নিয়ে ব্যবসা করতে আসলে, নিশ্চিত ভাবেই ডুববে। ব্যবসা ভালো চললে টাকা এমনিতেই আসবে । বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। 

  প্রথমেই জিনিসটাকে ভালো লাগা দরকার। কাজ করার মধ্যে যেন আনন্দ থাকে।  খুব কষ্ট করে কাজ করছি, টাকার আশায়-এইভাবে চললে কিস্যু হবে না।  খুব মনোযোগ দিয়ে দাবা খেলছি-খেলাটা উপভোগ করছি-সেটাই যেন হয় মনোভাব।  আর কিছু লোকের চাকরি হচ্ছে-এই বৃহত্তর সামাজিক দ্বায়িত্ববোধটাও গুরুত্বপূর্ন। 

  না বলার ক্ষমতা ঃ
 পরিস্কার ভাবে না বলতে শিখতেই হবে। সে নিজের লোককেই হৌক বা ক্লায়েন্টকেই হৌক। চাকরি জীবন মানুষকে খুব পলিটিক্যালি ইয়েস ম্যান বানিয়ে দেয়। চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসলে-ওই এডজাস্টমেন্টা সব থেকে ক্রিটিক্যাল। 

 ডিটেইলড প্ল্যানিং-প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ঃ
সফল ডেলিভারির প্রথম রুল এ থেকে বি তে যাওয়ার প্রতিটা টার্ন জানা। প্ল্যান করা। প্ল্যানিং এর জন্যে গুগল স্প্রেড শিট আমি বহুদিন থেকে ব্যবহার করি। প্রতিটা স্টেপ নিখুত ভাবে জানা উচিত-লেখা উচিত-রিভিউ করা উচিত।


                                   (৪)

অনেকেই অনেক কারনে ব্যবসায় আসে। কেও আসে পারিবারিক কারনে। কেউ বা ভাল চাকরি না পেয়ে। আমি এসেছিলাম, কারন বসিং আমার সহ্য হয় না। আমি স্বাধীনচেতা লোক। ননসেন্স নেওয়ার অভ্যেস নেই।  ব্যবসাতে ক্লায়েন্টরা বস। কিন্ত সেই বসিং অনেক ভাল। সেখানে রাজনীতি নেই। লেনদেনের সম্পর্ক। ইনফ্যাক্ট আমি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সব থেকে বেশী শিখেছি। কর্পরেট লাইফ আমার বেকার টাইম পাস বলে মনে হচ্ছিল। 

 প্রথমেই মনে রাখতে হবে জীবনে চাওয়া পাওয়াটা কাটা কুটি করে শুন্যই থাকবে।  কিছু লাভ হলে-কিছু লোকসান হবেই।  ব্যবসা যে করতেই হবে-বা আমার মত করে করতে হবে তাও না। তবে যে যাতে আনন্দ পায়, তার সেটাই করা উচিত। 

 ব্যবসা এতটাই কঠিন পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের জিনিস-খুব দৃঢ়ভাবে ইচ্ছুক না হলে-অর্ধ ইচ্ছায় আসা উচিত না। 

 যাইহোক-আমি মোটেও এক্সপার্ট নই । বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও নই। তবে চার বছর আগে চাকরী জীবনের নিরাপত্তা ছেড়ে-ব্যবসায় টিকে আছি এবং ক্রমাগত বাড়িয়েও চলেছি। ব্যর্থতার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি-কারন আমি নেহাত মধ্যবিত্ত শিক্ষক ফ্যামিলির সন্তান। বিজনেস ট্রেনিং এককালে শুন্যই ছিল।  

যাইহোক, আমি যেসব অনলাইন টপিক নিয়ে লিখলাম, সেই লাইনে অনেক এক্সপার্টকেই আমি চিনি-যারা আসলে ওইসব লাইন নিয়ে বহুদিন কাজ করেছে। এদের অনেকেই আমার হয়ে কাজ করে। যদি দেখি যে অনেক ছেলে মেয়ে ইন্টারেস্টেড, আমি তাদের নিয়ে গুগল হ্যাঙ্গ আউট করতে পারি-যদি নতুন ছেলে মেয়েরা ইন্টারেস্ট দেখায়। উইকেন্ডে আন্তারপ্রেনারশিপে উৎসুক ছেলে মেয়ে প্লাস এক্সপার্টদের নিয়ে একটা হ্যাঙ্গ আউট করার ইচ্ছা আছে যদি ইচ্ছুক লোকজন পাওয়া যায়।

 আরেকটা কথা। এই ব্লগের উত্তর আমি ফেসবুকে দেব না। কারুর আরো কিছু জানার থাকলে এই ব্লগার ডট কমের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন-আমি সেখানেই উত্তর দেব। কারন সেক্ষেত্রে ব্লগটিকে আরো ইনফর্মেটিভ করা সম্ভব হবে।

 আমি যা লিখেছি, তা খুব বেসিক আউট লাইন। হিমশৈল্যের ভাসমান অংশ। আরো অনেক অনেক গভীরে অনেক কিছু জানার আছে, যারা অনলাইন ব্যবসায় ইচ্ছুক।











Thursday, October 15, 2015

দূর্গাপূজো এবং অপচয়

দূর্গাপূজো আসতেই ফেসবুকে বিজ্ঞের বীচিদের বিতর্ক- কত অপচয় ভার্সেস কত আনন্দ। ফালতু খরচ-ভার্সেস গরীবদের এই টাকা দিয়ে দেওয়া যায় কি না। ফর্দ এবং ফরমাস দুটোই লম্বা।

  আরে বাবা, জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নাই-যতই ভাবার চেষ্টা কর আছে-কিন্ত আসলে নাই। কিন্ত তাও আছে-কারন তা না হলে, বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই হারাবে।

  দূর্গাপূজো প্যাগান সংস্কৃতি। উৎসবের অঙ্গ। এই ধরনের প্যাগান সংস্কৃতির আবাহমানকাল থেকে-মানে যদ্দিনের যদ্দুরের ইতিহাস দেখা যায়-সেই সুমেরীয় সভ্যতা থেকে গ্রীক সভ্যতার ব্যপ্তির দিনে- আসলেই যৌন মিলনের উৎসব।  সোজা কথা-নরনারীর মিলনের একটা সুযোগ করে দেওয়া। এর মধ্যে ভক্তিভাব ভব কিস্যু নাই!  সবটাই যৌনতার সেলিব্রেশন।

সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা প্রথম ট্যাবলেট পুড়িয়ে লেখা শিখেছিল। সেই জন্য চার পাঁচ হাজার বছর আগে সুমেরিয়রা কেন পূজো করত বা পূজো উপলক্ষে তাদের যেসব উৎসব-তার বিশদ বর্ণনার কিছু পুঁথি আজ ও পাওয়া যায়।  সেটা এমন এক সময়, যখন বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে মারা যেত অধিকাংশ মহিলা। অথচ শিশু মৃত্যুর জন্য সমাজে চাহিদা মহিলা পিছু এটলিস্ট ছটি বাচ্চা-নইলে পপুলেশন গ্রোথ নেগেটিভ! ফলে ব্রোঞ্জ যুগে মেয়েরাও জানত যেহেতু জীবনের কোন গ্যারান্টি নেই-যেকটা দিন বেঁচে থাকা, চুটিয়ে আনন্দ করে নেওয়াই ভাল। ছেলেরাও মারা যেত যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে-কারন তখনকার দিনে কোন প্রফেশনাল আর্মি ছিল না। সব সমর্থ যুবককেই যুদ্ধে যেতে হত। ফলে অমন সমাজে নরনারীর মেলামেশা না করলে বাচ্চা জন্মাবে কোত্থেকে?  আর বাচ্চা না জন্মালে শিশুমৃত্যু এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু থেকে সমাজকে বাঁচাবে কে? ফলে প্যাগান সংস্কৃতি এবং উৎসব বরাবরের জন্যই যৌনতার সেলিব্রেশন। নেহাৎ আধুনিক কালে উন্নত মেডিক্যাল প্রযুক্তির জন্য শিশুমৃত্যু নাই-ফলে মেয়েদের ওপর গর্ভধারনের ও চাপ নেই-এই জন্য খুল্লাম খুল্লা যৌনতার সেলিব্রেশন করতে সমাজ লজ্জা পায়।  সেই মার্কেট-ডিমান্ড সাপ্লাই এর খেলা! নইলে সুমেরীয় সভ্যতায়, কমিউনিটি পূজা অর্চনা মানে পাতি গ্রুপ সেক্স। গ্যাং ব্যাং। সেখানে আজকের দূর্গাপূজো মানে খুব বেশী হলে ঝাড়ি মারা!

 সুতরাং পূজোকে কেন্দ্র করে যৌনতার উৎসব অবশ্যই দরকার- নইলে গ্রুপ ডেটিং সুযোগ তৈরী হবে কি করে? আফটাল আল জীবনের মূলেই আছে যৌনতা।  জীবনে সেক্স ড্রাইভ  না থাকলে ঢোঁড়া সাপের মতন শীতঘুমে সারাজীবন কাটিয়েই বা কি লাভ?

        আর যৌনতা সবার দরকার। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে।



  

Thursday, October 8, 2015

ভারতের দাস এবং আমেরিকার আফ্রো আমেরিকান

ভারতের দলিত এবং আমেরিকার আফ্রো আমেরিকান দাসের ইতিহাস প্রায় এক।  এবং বর্তমান স্টাটাস তথা টার্ময়েল অনেকটাই এক খাতে বইছে।

 মুশকিল হচ্ছে,  ইতিহাসের সব আর্শীর্বাদ এবং অভিশাপ মার্কেট মহারাজের ইচ্ছা মাত্র।  আমেরিকাতে দাসত্ব টেকানোর পেছনে মূল কারন ছিল দক্ষিনের রাজ্যগুলির কটন ট্রেড।  আবার সেই দাসত্ব ধ্বংসের পেছনেও ছিল উত্তর আমেরিকার শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা। আমেরিকাতে দাসত্ব মুক্তির ইতিহাসে মেয়েদের ভূমিকা এবং সদ্য সংগঠিত মহিলা শ্রমিকদের অবদান ছিল সর্বাধিক। নারীমুক্তির কান্ডারী আর্নেস্টাইন রোজ, লুসেটিয়া মট, আবে কেলী ফস্টার -এরা সবাই দাসমুক্তি সপক্ষেও সমান বেগে জনমত সংগঠিত করেছেন। ইনফ্যাক্ট ফেমিনিস্ট এবং আবোলোশনিস্ট ( দাস প্রথা বিলুপ্ত করার আন্দোলন ) আন্দোলন একসময় ( ১৮৪০-১৮৭০) অবিচ্ছেদ্দ ছিল।

  আমি এই ইতিহাস টুকু এই জন্যেই আনলাম যে একটু ভেবে দেখা দরকার ভারতে দলিত প্রথা এখনো কেন দূর করা গেল না। আমেরিকার উত্তরের রাজ্যের লোকেরা যেভাবে দাসপ্রথা বিলোপের জন্য রক্ত পর্যন্ত দিল, ভারতে সেই ধরনের এনলাইটমেন্ট এল না কেন? উচ্চর্বনের লোকেরা দলিতদের জন্য রক্ত দেওয়া ত দূরের কথা, মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিতে চাইল না!

  ইতিহাস পড়ে আমার এটাই মনে হল-ভারতে সাম্প্রদায়িকতা এবং দলিত অপ্রেশনের মূল কারন , নারীবাদি আন্দোলনের অনুপস্থিতি। ইন জেনারেল যেকোন দেশের নারীবাদি আন্দোলন একটা প্রগ্রেসিভ আন্দোলনের অংশ।  ভারতে সে অর্থে কোন প্রগ্রেসিভ আন্দোলন হয় নি- ত নারীবাদি আন্দোলন আসবে কোত্থেকে ? এই দেশের মেইন স্ট্রিম বামেরা,  মানে সিপিএমও আরেক অর্থে চূড়ান্ত রিগ্রেসিভ পুরুষতান্ত্রিক পকেটপন্থী পার্টি ছাড়া কিছু ছিল না।  আরো একটা ব্যপার হচ্ছে আমেরিকাতে প্রগ্রেসিভ ওই আন্দোলনটা কিন্ত বামপন্থী ছিল না-সেটাও ছিল শিল্পবিপ্লবের ফলে একটি "মার্কেট চাহিদা"।  ভারতে শিল্প বিপ্লবও ঠিক ঠাক করে হয় নি--বেসিক্যালি সামন্ততন্ত্রটাই এক্সটেন্ড করে চলেছে।  ভারতে শিল্প বিপ্লব এবং  ক্যাপিটালিজম ঠিক ঠাক করে না এলে-প্রগ্রেসিভ আন্দোলনের চাহিদাটাই ঠিক করে তৈরী হবে না। সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে চে গুয়েভেরা পার্টি খুললেও, তা আদতেই রিগ্রেসিভই থাকবে।