Saturday, November 28, 2015

প্রাচীন ভারতের গণিত- মিথ বনাম বাস্তব

হিন্দুদের অতীত আদৌ গৌরবের কি না-তাই নিয়ে কয়েকদিন আগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। চাড্ডিদের এমন পোষ্ট ভালো লাগার কথা না-কারন তারা একদমই পড়াশোনা করে না-আর এই অতীতের ইতিহাসটাও গোলমেলে। তবে আমার পোষ্টটাও ছিল বেশ দুর্বল। অনেক কিছুই পরিস্কার করে না লেখার জন্য, অনেকেই সঠিক মেসেজটাই ধরতে পারে নি। 

  প্রথম কথা হচ্ছে-প্রাচীন হিন্দু ভারত, বিশ্বমানব সভ্যতাকে এমন কিছু কি দিয়েছে, যা সভ্যতার গতিপথ পাল্টেছে? বা মানব সভ্যতায় ব্যাপক অবদান রেখেছে ?

  আমি সেইসব প্রাচীন ভারতের আবিস্কার খুঁজছিলাম-যাদের ইম্প্যক্ট ফ্যাক্টর খুব বেশী গোটা বিশ্বে। সব খুঁজে পেতে মোটে দুটো জিনিস পেলাম- যেটা বলা যেতে পারে, প্রাচীন ভারতের অবদানে হাই ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর । কিন্ত এইসবের পরেও সামগ্রিক বিচারে দেখা যাবে ইজিপ্ট, চীন,  সুমেরিয়ান বা গ্রীস সভ্যতার অবদান সভ্যতার ইতিহাসে সামগ্রিক ভাবে অনেকটাই বেশী। এর একটা বড় কারন এই যে বৈদিক ধর্ম বস্তুবিমুখ ছিল। সেখানে চীনের দর্শন বস্তু বা সমাজমুখী। ফলে গানপাউডার, কম্পাস, পেপার, প্রিন্টিং, মেটালার্জিক্যাল ফার্নেস এর মতন প্রায় সব গুরুত্বপূর্ন  প্রযুক্তির জন্মস্থান প্রাচীন চীনে।

    সভ্যতার ইতিহাসে ভারতের সব থেকে বড় অবদান দশমিক পদ্ধতি। গোটে বিশ্বে যে দশমিক নাম্বার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়-তা হিন্দু-আরবিক নিউমেরাল বলে পরিচিত। যদিও এটা ভারতের আবিস্কার এবং পরে পার্সি-আরবিক বণিকের মাধ্যমে, তা ইউরোপের আসে।

 গণিতে ভারতের বাকী অবদানগুলির স্ক্রুটিনি দরকার।

  যেমন শুন্যের আবিস্কার। প্রচলিত ধারনা এটি ভারতের আবিস্কার। যা সম্পূর্ন ভুল। মিশরে খৃপূঃ ১৭০০ সাল থেকেই শুন্যের ব্যবহার চালুছিল।  মেসোপটেমিয়া, রোমান, গ্রীস সব সভ্যতাতেই শুন্যের ব্যবহার ছিল।

  ভারতের অবদান এই যে শুন্যকে কাজে লাগিয়ে দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং তার ব্যপক ব্যবহার। যদিও দশমিক পদ্ধতি ইজিপ্টেও জানা ছিল-কিন্ত ব্যবহার ছিল না।

  অনেকেই মনে করেন নেগেটিভ নাম্বার এবং বীজগণিতের ব্যবহার ও ভারতে প্রথম হয়। এই দাবীটি সর্বসম্মত নয়।
 
  দুশো খৃষ্ঠাব্দেই চীনে ঋনাত্মক নাম্বার এবং বীজগণিতের প্রাথমিক প্রয়োগ দেখা যায়। ভারতে আর্য্যভট্ট এবং মূলত ভাস্করাচার্য্যের কাজেই ঋণাত্মক নাম্বার এবং বীজগণিতের প্রয়োগ দেখা যায়। কিন্ত  তা চীনের কয়েক শতক পরে । 

  দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় গণিতবিদেরা মূলত "নিউমেরিক্যাল" নির্ভর ছিলেন। বীজগণিতে সিম্বলের ব্যবহার বা জ্যামিতিতে চিত্রের ব্যবহার এবং গ্রীস ইন্ডাক্টিভ বা ডিডাক্টিভ লজিক-এই তিনটে গুরুত্বপূর্ন জিনিসের ব্যবহার তারা জানতেন না। ফলে তাদের কাজ সেই অর্থে পরবর্তীকালে আর কোথাও প্রভাব ফেলে নি। 

 আরেকটা মিথ, ভাস্কারা-২ নিউটন বা লেইবিঞ্জের অনেক আগেই ক্যালকুলাস আবিস্কার করে ছিলেন। এর ভিত্তি হিসাবে তারা দেখান ভাস্করের কাজে  (১)  গ্রহগুলির ম্যাক্সিম্যাম অবস্থানে যে ডিফারেন্সিয়াল শুন্য হওয়ার ধারনা (২) ভ্রাম্যমান পথের ম্যাক্সিমাম অবস্থানে রেট অব চেঞ্জ শুন্য হওয়ার ধারনা -তার ট্রিটিজে পাওয়া যায়।

   সমস্যা হল, ক্যালকুলাসের ভাষা হয় জ্যামিতিক ( যা নিউটনের প্রিন্সিপিয়াতে আমরা দেখি) না হলে এলজেব্রিক। এর কোনটাই ভাস্করের জানা ছিল না-যেহেতু ভারতে এদুটি জনপ্রিয়তা লাভ করে নি। ফলে ক্যালকুলাস নিয়ে তার প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলি নিউটন বা লেইবিঞ্জের মতন গণিতের কোন শাখার জন্ম দিতে পারে নি।


   ভারতে গণিত প্রতিভা অবশ্যই ছিল-আর্য্যভট্ট, হলায়ুধ, ভাস্কর -এরা সম্পূর্ন স্বাধীন ভাবেই গণিতের উচ্চ গবেষনা করেছেন। কিন্ত তিনটি কারনে প্রাচীন  ভারতের গণিত গবেষনা- গণিতের  বা মানব সভ্যতার ইতিহাসকে প্রভাবিত করে নি 

    (১) ভারতের গণিত গবেষনা ছিল অন্যদেশের গণিতজ্ঞদের থেকে বিচ্ছিন্ন । আরবেরা যেমন গ্রীস, ভারত, চীন সব দেশের জ্ঞান সিঞ্চন করে, গণিত গবেষনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন-ভারতের গণিতজ্ঞরা ছিলেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। ফলে প্রাচীন ভারতে জ্যামিতির প্রসার হয় নি যাতে গ্রীকেরা পারদর্শী ছিল। ফলে ভাস্করাচার্য্যের পক্ষে ক্যালকুলাসের প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলি আবিস্কার করা সত্ত্বেও নতুন গণিতিক শাখার জন্ম দেওয়া সম্ভব হয় নি
 
  (২) দ্বিতীয় সমস্যাটা হচ্ছে- গণিত চর্চায় ভারতীয়রা ডিডাক্টিভ বা ইনডাক্টিভ লজিকের ব্যবহার করত না। শুধু ইনটিউটিভলি সিদ্ধান্তগুলি লিখে রাখত। এর ফলে ভারতে গণিত চর্চা একটা ধাপের পরে আর এগোতে পারে নি। কিছু ভুল সিদ্ধান্তও পাওয়া যাবে । যেমন হলায়ুধ সিদ্ধান্তে এসেছিলেন ০/০ এর মান শুন্য হওয়া উচিত।

  (৩) তৃতীয় সমস্যাটা ঐতিহাসিক। ভারতের গণিত চর্চা ছিল বিশুদ্ধ-ফলিত কারনে না।  ইউরোপে বা আরবে জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চার মূল কারন আরো ভালো নৌ নেভিগেশন সিস্টেমের জন্ম দেওয়া। ইজিপ্টে জ্যামিতির জন্ম- জমির ট্যাক্সেশন থেকে।  চীনে গণিতের চর্চা হয়েছে মূলত আরো ভাল যুদ্ধ স্ট্রাটেজির উদ্ভাবনের জন্য। আরবে গণিতের পেছনে মূল ড্রাইভার ছিল-উন্নত যুদ্ধাস্ত্র, নেভিগেশন সিস্টেম।  ইউরোপেও তাই।  ভারতে গণিত চর্চার একটা কারন যজ্ঞের কারনে বেদী, ইত্যাদির জ্যামিতিক মাপ নেওয়া। যা মোটেও কোন ড্রাইভিং বস্তুবাদি কারন ছিল না। ফলে ভারতের গণিত আরব বা ইউরোপের সাথে বেশী দিন পাল্লা দিতে পারে নি। কারন সব কিছুরই রাজকীয় অনুগ্রহ  দরকার হত।  যুদ্ধ বা রাজকার্য্যে ( ট্যাক্সেশন ) না লাগলে, সেই বিদ্যার চর্চা বেশী টানা সম্ভব ছিল না । 

  ভারতের দ্বিতীয় অবদান অবশ্যই দর্শন শাস্ত্রে। উপনিষদের দর্শন পার্শীদের হাতে অনুদিত হয়ে ইউরোপে আসে। সফোমেয়ারের হাত ধরে ইম্যানুয়েল কান্টের হাতে প্রথম ভারতীয় এবং ইউরোপিয়ান দর্শনের সিন্থেসিস হয়। যদিও পরবর্তী কালে নিৎসে বা আধুনিক ইউরোপিয়ান দর্শন মোটেও কান্টিয়ান না। কিন্ত তা সত্ত্বেও , ইম্যানুয়েল কান্ট এখনো ক্ল্যাসিকাল ওয়েস্টার্ন দর্শনের সব থেকে বড় স্তম্ভ। এবং তার দর্শনের অনেকটাই উপনিষদ প্রভাবিত।

 তবে প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদি অবদান প্রায় শুন্য। সেই দিক দিয়ে চীনকেই বস্তবাদি সভ্যতার ভিত্তিভূমি বলা যায়।



Thursday, November 26, 2015

অতীত গৌরব

                                                           (১)
আগে যা ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে, পর্দার আড়ালে, ফিস্ফাস, গুঞ্জন-এখন তা  সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ্যে আছড়ে উঠছে সুনামীর মতন।

  যারা বাঙাল-শৈশবের স্মৃতি নিশ্চয় ভোলেন নি। হয়ত স্মৃতি না-এখনো জীবন্ত সেসব আলোচনা। বিকেলে কোন মেসো বা জেঠু এসেছে বাড়িতে। চায়ের কাপে ঠোঁট ভিজতেই শুরু মুসলমানদের গালি দেওয়া। মুসলমানদের হাতে দেশ ছাড়া হওয়ার দুঃখ তারা কেউ ভোলেন নি। মুসলমান মানে কোন এক  দাড়িওয়ালা মূর্তিমান তলোয়ার হাতে হিন্দুদের ছাগলের মতন জবাই করছে-এমন এক বিভীষিকাময়  খন্ড ঐতিহাসিক উপন্যাস অশরীরির মতন ঘুরে বেড়ায় এই সব বাঙাল বৈঠকিতে।   অজান্তে, অজ্ঞানে, নিভৃতে  প্রায় প্রতিটা হিন্দু বাড়িতেই শিশুমনে রোপিত হয় ভবিষ্যতের চাড্ডি হওয়ার বীজ।

  তবে মুসলমানদের গালি দেওয়াটা বহুদিন সীমাবদ্ধ ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে। বাজারে, স্কুলে, রাস্তায় ইনারাই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক-অনেকেই সিপিএম বা কংগ্রেসের কার্ড হোল্ডার। পাবলিক প্লেসে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক প্রমান করার একটা "পিয়ার প্রেসার" কাজ করত।

   মোদির ক্ষমতায়নে, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত বিজেপিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়াতে, অনেক ক্লোজেট হিন্দুত্ববাদিই খোল ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন। এখন একজন ডাক্তার, শিক্ষক বা ইঞ্জিনিয়ার প্রকাশ্যেই মুসলমানদের গালি দেওয়াটা "আউট অব প্লেস" বা অভদ্রতা বলে মনে করেন না।

 অবশ্য বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে মুসলমানরা এটা বহুদিন আগেই এচিভ করেছে। পাকিস্থানের টেক্সট বইতে হিন্দু বিরোধি, ভারত বিরোধি উপাখ্যানে সরকারি সিলমোহর আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাতে সরকারি সীলমোহর হয়ত নেই-কিন্ত সেখানেও হিন্দুদের মালু বলে গালাগাল দেওয়াটা এখন আর অসভ্যতা না। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের মনের কথা।

  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দফারফা হচ্ছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি আদৌ কোন কালে ছিল ভারতে? না কোন দেশে যেখানে মুসলমিরা ঐতিহাসিক ভাবে রাজত্ব করেছে?

  ভারতে বা বাংলায় কোন কালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল না। এগুলো ঐতিহাসিক গুজব। সিরাজের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র সংগঠিত হচ্ছে-মূল সংগঠক নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় হিন্দু রাজা বা এবং বণিকদের অনেকগুলো চিঠি লিখেছিলেন। সেগুলো  দেখে নিতে পারেন। তাহলেই বুঝবেন মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে হিন্দু প্রজাদের উষ্মা বহুদিন থেকেই ছিল। আবার বৃটিশ আমলে তীতুমীরের উপাখ্যানেই পরিস্কার হবে মুসলমান প্রজারা কতটা ঘৃণা করত হিন্দু জমিদারদের।  নোয়াখালির দাঙ্গা একদিনে হয় নি। এর সাম্প্রদায়িক পটভূমি প্রায় শত বছরের পুরাতন।

কোন শর্টকাটে এই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প যাওয়ার না। ধর্ম থাকবে-আমরা হিন্দু মুসলমান থাকবো- আবার এক অসাম্প্রদায়িক বাঙালী বা ভারতীয় সমাজ তৈরী হবে-এগুলো অবান্তর দুর্বল মনের চিন্তা।  ধর্ম থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকবেই।  ইসলাম মানেই ত ইসলামে বিশ্বাসী এক সম্প্রদায় তৈরী করা। হিন্দু ধর্মে এই সেক্ট বা সম্প্রদায়ের ধারনাটা ছিল গুরুকূল ভিত্তিক। হিন্দুত্ব পার্টিগুলির সাফল্য এই যে উনারাও হিন্দু ধর্মকে ইসলাম-২ বানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় তৈরী কর‍তে সক্ষম হয়েছেন।  ইসলাম ভীতিই এর মূল কারন।

 সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে গেলে ধর্মকে কোনঠাসা করতেই হবে। আল্লা ভাল, মহম্মদ ভাল, কৃষ্ণনাম ভাল-সব ধর্মীয় গাঁজাখুরী ভাল- কিন্ত কিছু  মৌলবাদি মুসলিমের জন্য বা কিছু হিন্দুর জন্য দুর্নাম হচ্ছে- ধর্ম ভালো কিন্ত ধর্মের লোকগুলো খারাপ- এগুলো ভীষন দুর্বল যুক্তি। দুর্ভাগ্য এই যে ভারত বাংলাদেশে সোকল্ড সেকুল্যার পার্টিগুলোও এই মিথ, সম্পূর্ন অবাস্তব ভিত্তিহীন বাস্তবতাকেই প্রচার করে।

             সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু বা মুসলমান মনে করে তাদের ধর্ম ভাল। তাদের ধর্মেই সমাধান নিহিত আছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আধুনিক যুক্তিবাদি চিন্তাকে আশ্রয় করে নিজেদের জীবন এবং ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করার চেষ্টা কজন বাঙালী বা ভারতীয়র মধ্যে আছে?

 হ্যা, নিজেদের ছেলেমেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সবাই পাঠাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে এই  প্রযুক্তির ছাত্ররাই হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মূল কারন ধর্মীয় মিথ, ধর্মের ইতিহাস থেকে নিজেকে উদ্ধার করার জন্য যে সার্বিক পড়াশোনা করার দরকার ছিল-সেই চেষ্টা প্রায় কারোর মধ্যেই নেই। আর কোন সরকারি ইতিহাসের বই সেটা চায় ও না। আজ ইন্টারনেটের যুগে অনেক কিছু জানার সুযোগ হচ্ছে বলে, হিন্দু বা মুসলমানদের ইতিহাস কত বিভৎস এবং কলঙ্কিত সেটা গোচরে আসছে। ইতিহাসটাও ইস্যু না। এই পরিবর্তিত সময়ে যেখানে কম্পিউটার এবং অটোমেশনের সামনে কারো চাকরিই সুরক্ষিত না-উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়া বর্ধিত জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর কোন উপায় নেই-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া কেওই উন্নত জাতির জন্ম দিতে পারবে না-সেখানে ইসলাম এবং হিন্দু ধর্ম মহান, এদের অবাস্তব মিথগুলোকে বিশ্বাস করা জাতিগত ভাবে আত্মহত্যা ছাড়া কিছু না।  ধর্মে বিশ্বাস থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকবেই। কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্ত এই কথাটা বলার মতন রাজনৈতিক সাহস কারুর নেই। বামেদের ও নেই।


                                  (২)


চীনের শেষ রাজকূল কুইঙ্গ সাম্রাজ্য ( ১৬৪৪-১৯১১)।  সম্রাট কুইনলনের (১৭১১-১৭৯৯) আমলে চীন পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্য এবং অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়।  এই সময়  রপ্তানীতে চীন পৃথিবীর এক নম্বর দেশ ছিল। আমদানি কিছু করতে হত না। চীনারা নিজেদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি বলে মনে করত।   চল্লিশ বছর বাদে, প্রথম আফিং যুদ্ধেই ধরা পরে চীনারা নিজেদের নিয়েই যতই গর্বিত বোধ করুক না কেন-আধুনিক ইউরোপিয়ান শক্তির কাছে তারা নস্যি। মাত্র কুড়ি হাজার বৃটিশ আর্মির কাছে হার মানে প্রায় দুলাখ সৈন্যের চাইনিজ এম্পিরিয়াল আর্মি।  সেই সময় মাত্র একটি  বৃটিশ স্টিম যুদ্ধহাহাজ -নেমেসিস প্রায় দেড়শো শক্তির চাইনিজ নৌবহরের মোকাবিলা করে! কারন নেমেসিসের বাস্প  শক্তির জন্য এটি অনেক ভারী কামান বহন করতে পারত-এর রেঞ্জ ছিল অনেক বেশী-এবং শ্রোত বা বাতাসের  বিরুদ্ধে এটিকে সেইল করা ছিল সহজ।  এর ফলে ১৮৪২ সালে চীনের সম্রাট অপমানজনক শর্তে ন্যানকিং চুক্তি করতে বাধ্য হোন।

 ন্যাংকিনের চুক্তি থেকে কুইং রাজবংশের পতন পর্যন্ত ( ১৯১১) চীন এক দীর্ঘ গভীর রক্তক্ষয়ী বিতর্কে নিমজ্জিত হয়। সেটা হচ্ছে পাশ্চাত্য শক্তির হাতে মার খাওয়ার পরে এটা নিশ্চিত ছিল যে সংস্কার দরকার। সরকার, মিলিটারী, আইন সর্বত্রই দরকার। কিন্ত তার অভিমূখ কি হবে? তারা প্রাচীন চৈনিক ঐতিহ্যকেই গ্রহন করবে বা পাশ্চাত্যকরন দরকার?

     সংস্কারের প্রথম দফাতে রাজ বংশ বুঝল আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র এবং প্রযুক্তি ছাড়া মিলিটারী টিকবে না। কিন্ত সরকার এবং শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক করতে গেলে রাজ বংশ কতৃত্ব হারাবে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা হল-কিন্ত চাইনিজ আদিম রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে থাকল।

 কিন্ত তাতে কি শেষ রক্ষা হয়?  ১৮৯৪-৯৫ সালের চীন-জাপান যুদ্ধে, চীনের ভরাডুবি হল। চীন বরাবর জাপানকে একটা পুঁচকে দেশ হিসাবেই ভাবত। তাদের হাতে গো হারা হেরে সম্রাট বুঝলেন আর সেদিন নেই।

 এবার সম্রাট গুয়াংগু দেখলেন ওই জার্মান ইঞ্জিনিয়ার হায়ার করে চীনা সেনাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে চীনা সাম্রাজ্য বাঁচানো যাবে না। দরকার আপাদ মস্তক আধুনিক রিফর্ম।

 এর ফলশ্রুতি ১৮৯৮ সালের ১১ই জুন উনি ১০০ দিনের রিফর্ম চালু করলেন।  যার মূল উদ্দেশ্য চীনকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা। এই সংস্কারের মধ্যে ছিল (১) স্কুল সিলেবাসে বিজ্ঞান, গণিত চালু করা ক্ল্যাসিকাল চাইনিজ টেক্সট বাদ দিয়ে -ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনিক্যাল স্কুল খুলতে হবে   (২) সম্রাট হবে বৃটেনের মতন কন্সটিউশনাল-গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন  (৩) মিলিটারী অর্গানাইজেশন হবে আধুনিক ইউরোপিয়ান স্টাইলে (৪) শিল্প স্থাপন, রেইল লাইন স্থাপনে জোর দেওয়া হবে  ৫) মার্কেট রিফর্ম করতে হবে-মার্কেটের ওপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রন কমাতে হবে।

  কিন্ত একশো দিনের সংস্কার সফল হয় নি।  সংস্কার করতেই দেওয়া হল না সম্রাটকে। বাধ সাধলেন রাজমাতা ডগার সিকি। যিনি ছিলেন সিংহাসনের পেছনে আসল শক্তি। তার হাতেই ছিল ইম্পিরিয়াল পাওয়ার। উনি প্রচার চালালেন গুয়াংগু পাশ্চাত্য শক্তির এজেন্ট।  ফল হল এই যে ১৯১১ সালে বেইজিং আক্রমনের সাথে সাথে ধ্বংস হল চীনের শেষ রাজবংশ।

  আমি এই ইতিহাসটা এই জন্যেই নিয়ে আসলাম-শুধু বোঝাবার জন্য সামাজিক এবং ঐতিহাসিক বিবর্তন বড়ই নির্মম। আমাদের আশেপাশটা বদলে যাচ্ছে বুঝতে না পারলে-এবং অতীতকে আঁকরে ধরে বসে থাকলে-  নিজেদের এবং জাতির ভবিষ্যতে দুর্দিন আসবেই। চীন বহুদিন ধরেই জ্ঞান প্রযুক্তিতে গোটে বিশ্বেই এগিয়ে ছিল-কিন্ত ওই অতীত থেকে নিজেদের বার করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে উনবিংশ শতাব্দিতে তারা সব কটা যুদ্ধে হেরেছে-বিংশ শতাব্দিতে জাপানের হাতে পদললিত হয়েছে। মহান গৌরবান্বিত চীনের অতীত তাদের বাঁচাতে পারে নি।

 চীন এটা বহু নির্যাতন এবং রক্তের বিনিময়ে বুঝেছে বলেই তারা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আজ এত বিনিয়োগ করছে এবং গোটা পৃথিবীতে আবার তারা শ্রেষ্ট স্থানের দাবিদার হিসাবে ফিরে এসেছে।

 ঠিক তেমন  ভারতের গৌরব ধরে বসে থাকলে, আর গণেশ মামার সার্জারীর গল্পকে বিজ্ঞান হিসাবে চালালে,  ভারতের অবস্থা হবে উনবিংশ শতাব্দির চীনের মতন। চীন যেখানে গবেষনা খাতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, ভারতের হিন্দুত্ববাদি সরকার-তা কমিয়ে চলেছে!  অতীতের গৌরব প্রচার খাতে টাকা আছে-অথচ গবেষনা খাতে বরাদ্দ কমছে- গবেষকদের সংখ্যা কমানো হচ্ছে।

 অতীতের গৌরব ধরে বসে থেকে বর্তমানে ধ্বংস হয়েছে এমন উদাহরন বহু আছে।  আমেরিকাতে আমি হেনরি ফোর্ডের গল্প বলব।  ১৯০৮ সালে ফোর্ড মটোর কোম্পানী বাজারে আনে মডেল টি। মাত্র আটশো ডলারের গাড়ি সেই যুগে ছিল বৈপ্লবিক। নেক্সট দশ বছরে আমেরিকাতে গাড়ি বলতে বোঝাত মডেল টি- ১৭ মিলিয়ান বিক্রি হয়েছিল সেই মডেল টি। কিন্ত ১৯২০ সাল পেরোতেই মডেল টির বিক্রি কমতে থাকে। বাজারে আসে জেনারেল মটোরস।

 হেনরি ফোর্ডের ছেলে ইজেল ফোর্ড বাবাকে বার বার বোঝাতে থাকেন, বাজারে নতুন মডেল আনতে হবে। ফোর্ড দাবী করতে থাকেন, আসলে তার ছেলে ফোর্ড মটোরসের অতীতকে ফেরাতে পারছেন না। যাইহোক ১৯২৭ সালে যখন জেনারেল মটোরস ফোর্ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে-তখন একরকম বাধ্য হয়ে হেনরি ফোর্ড নতুন মডেল চালু করেন। তদ্দিনে ফোর্ড মটোরস তিন নাম্বারে নেমে গেছে । ফোর্ড মটোরসের বাকী দিনগুলিতেও হেনরি ফোর্ড প্রলাপ বকতেন-যে নাম্বার ওয়ান পজিশনে ফিরতে তাদের অতীতের গৌরবোজ্জল দিনগুলিতে ফিরতে হবে! গবেষনা, ডেভেলেপমেন্টের দরকার নেই! ইনফ্যাক্ট আজকের বিজেপির জাতীয়তাবাদ দেখে আমার হেনরী ফোর্ডের ইতিহাস খুব মনে দাগ কাটে!

 শুধু কি প্রাইভেট কোম্পানী বা রাজবংশ? সিপিএমের দিকে তাকান। মার্কিস্ট-লেনিনিস্ট তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করার কোন বাস্তবতা আজ আর নেই- এই নিঠুর বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই নিয়েই কিন্ত ল্যাটিন আমেরিকাতে নব্য বামেরা লেনিনকে ছুঁড়ে ফেলে কোয়াপরেটিভ এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমে নতুন জনশক্তি গড়েছেন। এতে ল্যাটিন আমেরিকাতে বাম শক্তি আজও প্রাসঙ্গিক। কিন্ত ভারতে প্রকাশ কারাতের অবস্থা চীনের রাজমাতা ডাওগার জি বা হেনরি ফোর্ডের মতন। পার্টি দেওলিয়া, বেস হারাচ্ছে-আর যত হারছে তত সেই অতীতকে আঁকরে ধরে টিকে থাকতে চাইছে।

 যার হিন্দু বা মুসলমান হয়ে থাকতে চাইছেন-তারাও সেই অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকা পাবলিক। যারা প্রযুক্তির ফলে উদ্ভুত পরিবর্তনকে মানতে চাইছেন না বা বুঝতে চাইছেন না। ফলে সর্বোনাশটা তাদের ব্যক্তি জীবনেই শুধু আসবে না-জাতীয় জীবনেও আসবে।

   











Sunday, November 22, 2015

গণতন্ত্রের হত্যা

সিপিএমের প্রাত্তন বিধায়ক ধীরেন লেটের ওপর যে অত্যাচার করা হল-যেভাবে তাকে হিউমিলিয়েট করা হল- একজন সাধারন মানুষ হিসাবে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সিপিএম গণতন্ত্রকে খুন করেছিল, ধীরেন বাবু একজন হামার্দ-কোন যুক্তিই যথেষ্ট হতে পারে না, তাকে পিটিয়ে কান ধরে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ।  এই ভাবে একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধকে হেনস্থা করা -বা করার মতন সাহসের উৎস কি? অবশ্যই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যারা এই ঘটনার পরেও বলছেন সিপিএম দোষী-তারাই গোলমাল পাকাতে চেয়েছিল!!


         তিনো নেতৃবৃন্দরা  কি ভুলে যাচ্ছেন যখন  ক্ষমতা থাকবে না, তাদের কেউ প্রকাশ্যে কান ধরে প্রায়শ্চিত করালে একটা কাক ও কাঁদবে না আলিন্দে? ভুলে যাচ্ছেন যে ক্ষমতা হারাবার পরেও তাদের পশ্চিম বঙ্গে থাকতে হবে?   সিপিএম  দোষী হলে,  পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করুক। নিজেদের দলের লেঠেল পাঠিয়ে হিউমিলিয়েট করার অধিকার কোন আইন বা কোন গণতন্ত্র দেয়? এত চেঙ্গিস খানের জমানা চলে এল। যেসব চৈনিক অধিপতিরা চেঙ্গিস খানের বশ্যতা স্বীকার না করে মোঙ্গল আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেত, তাদের হারানোর পরে চেঙ্গিস খান সেইসব রাজা এবং রাণীদের নগ্ন করে তাদের প্রজাদের মধ্যেই ঘোরাতেন। হিউমিলিয়েট করার মধ্যযুগীয় আনন্দ।  আনন্দবাজারে ধীরেন লেটের জবাবনন্দীতে এটাই পরিস্কার তিনোগুন্ডারা তাই করতে চেয়েছিল। উনি কান ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।

  আমি পশ্চিম বঙ্গে গণতন্ত্রের হত্যা নিয়ে আগে অনেক লেখা লিখেছি। এটাও পরিস্কার যে এর পেছনে মূল কারন ১৯৭৮ সালে জনতা সরকারের গড়া ন্যাশানাল পুলিশ কমিশনের সুপারিশ  কার্যকর করতে জ্যোতিবসুর ব্যর্থতা। উনারা ভাবেছিলেন, সারা জীবন রাজত্ব চলবে। একবারো ভাবেন নি, যদি পুলিশ নিরেপেক্ষ না থাকে, উনারা ক্ষমতা হারালে কি হবে। কিছুদিন আগে বিরোধি নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর বিরুদ্ধেও হাত উঠেছে। এত ক্ষমতা গুন্ডারা পায় কি করে যেখানে মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিরোধি নেতার জীবন ও সুরক্ষিত না? কারন অবশ্যই যে পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। যা অবশ্যই পার্টি নিরেপেক্ষ কোন সংস্থার হাতে থাকা উচিত। ইন্দ্রজিত গুপ্ত ন্যাশানাল পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট মেনে-তাই চেয়েছিলেন। জ্যোতিবাবু পাত্তা দেন নি । ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে। জ্যোতিবাবুকেও তা অন্ধ করেছিল। আজ যেমন ক্ষমতার মাদকতায় অন্ধের মতন আচরন করছে তৃণমূলের নেতৃত্ববৃন্দ।

 হয়ত ধীরেন লেটের জন্য আজ  বঙ্গের একটা চড়ুই পাখিও দুঃখ পাবে না। হয়ত এর জন্যে সিপিএমের জমানার গণতন্ত্র খুন করার সংস্কৃতিই দায়ী। কিন্ত এত কিছু হয়তর পরেও যে সমাজ একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতার চরম হেনস্থার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে ব্যর্থ হবে, কালকে তাদের ঘরের মেয়েকে যখন গুন্ডারা বিবস্থ করবে প্রকাশ্য রাজপথে, তাদের পাশেও কেউ থাকবে না।  জনগন যদি পার্টি, রাজনৈতিক রঙের উর্ধে উঠে এই ঘটনার প্রতিবাদ না করে, তার ফল ভুগবে তারা নিজেরা।


   সিপিএমের বিরুদ্ধেই আমি লিখে চলেছি আজ এক দশক। তাদের হার্মাদ সমর্থকরা আমাকে সব থেকে জঘন্য ভাষায় খিস্তি মেরেছে । আমি এটাও নিশ্চিত যে তারাও গণতান্ত্রিক বিতর্কে না এসে  খিস্তি খাস্থা আর হিউমিলিয়েশনেই বিশ্বাস রাখে বেশী। কিন্ত আমি একবারো বলবো না, ধীরেন লেটের পার্টি নিজেদের পাপের ফল নিজেরা ভোগ করুক। কারন এই লুম্পেনগিরি আর পুলিশের পার্টির লেজুর হওয়া থামাতে না পারলে, পশ্চিম বঙ্গে গুন্ডারাজ আর স্বৈরতন্ত্র চলতেই থাকবে। যার থেকে রাজ্যকে মুক্ত করা দরকার। এর জন্যে সবার আগে দরকার নাগরিক সমাজের কন্ঠশ্বর। তাদের প্রমিনেন্ট মুখরা ত আবার টাকা আর পদ ছাড়া নাগরিক দ্বায়িত্ব পালন করেন না।

Saturday, November 14, 2015

সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলাম বা মুসলমানদের সম্পর্ক কি ?

সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলাম বা মুসলমানদের সম্পর্ক কি ?

          ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ঘটলেই সোশ্যাল মিডিয়া এই ডিবেটে মজে । কিছু মুসলিম, বামেরা মিলে প্রাণপনে প্রমানের চেষ্টা করে-এর সাথে ইসলামের বা মুসলমানদের সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে ইসলাম বিরোধিরা জল খেয়ে ঘাটে নামে কোরানের আয়াত ধরে-ইসলাম আর মুসলমান মাত্রই পচা ডিম।  আর এই ডিবেটের ধোঁয়াশায় হারিয়ে যায় সন্ত্রাসবাদের আসল কারনগুলো।

  প্রথমত কারুর কি কোন সন্দেহ আছে যে আল্লাহু আকবর বলে যারা প্রেক্ষাগৃহে ১৫০ জনকে মারল, নিজেরাও আত্মঘাতি হল, তারা ইসলামিক আইডিওলজিতে উদবুদ্ধ না?

এখন প্রশ্ন উঠবে কোরান হিংসা স্যাংশন করে কি না! কোরানের সঠিক ব্যাখ্যা কি!!

  এগুলো বোকা বোকা প্রশ্ন। কারন প্রথমত ধর্মের বই গুলো-যাকে আমরা ধর্মগ্রন্থ বলি-সেগুলো বহুদিন আগে খুব দুর্বল দুর্বোধ্য বাক্যে লেখা-যার একাধিক মানে হয়। কোরান যখন লেখা হয়- আরব ভাষাটা তখন ও ঠিক ঠাক ভাবে তৈরী হয় নি। আরবের লিপিও ছিল না। সিরামিক লিপিতে আরবের লোকেরা ব্যবসা করত।

         লিঙ্গুইস্টিকে একে বলে উইক টেক্সট। যেমন বিজ্ঞানের পেপার লেখার সময় ল্যাঙ্গুয়েজ এমন হওয়া দরকার, যাতে একটাই মানে হয়। তাই বিজ্ঞানের টেকনিক্যাল টেক্সট হচ্ছে স্ট্রং টেক্সট। কিন্ত ধর্মের ক্ষেত্রে তা হয় না।  বাইবেল বা গীতা কোরানের থেকে আরো কঠিন ভাষাতে হিংসাকে অনুপ্রেনিত করে। এবং যার জন্য মধ্যযুগে আমরা ক্রুসেডের দেখা পায়।  সুতরাং কোরান সুন্নতে হিংসা আছে, তাই মুসলমানরা হিংস্র এগুলো অতিসরলিকরন।

 এই জন্যেই সঠিক ধর্ম, বেঠিক ধর্ম বলে কিছু নেই। ১৮০ কোটি মুসলমানের প্রত্যেকের নিজস্ব ইসলাম ধর্ম আছে। কোন ধর্মই মনোলিথিক না। ওসামা বিন লাদেন ও মুসলমান, আগাখানের মতন দানবীর ও মুসলমান। কে ঠিক মুসলমান, কে ভুল-এই বিতর্কগুলো অর্থহীন। কারন সব ধর্মেই ভাল খারাপ, উগ্রপন্থী আছে।  এবং সেই উগ্রপন্থীগুলো খুব পরিস্কার ভাবেই সেই ধর্মেরই সদস্য।  সুতরাং খুব পরিস্কার ভাবেই আগা খানের ইসলাম ও ইসলাম, ওসামার বিধর্মী মারার ইসলাম ও ইসলাম।

   সমস্যা এই যে ইসলামিক উগ্রপন্থীদের পলিটিকাল স্পনসর আছে, যারা টাকা বন্দুক দেয়। খালিস্তান ত এই ভাবেই তৈরী হয়েছিল। ইসলামিক উগ্রপন্থীরা আরব, আমেরিকা সহ অনেকের কাছ থেকেই টাকা পেয়েছে।  যেকোন ধর্মের উগ্রপন্থীদের পেছনে টাকা আর অস্ত্র দিলেই সন্ত্রাসবাদি তৈরী হবে-এই ইতিহাস পৃথিবী বহুবার দেখেছে।

 মুশকিল হচ্ছে তাতে মুসলমানদের দোষ কি? তারা ত এসব পছন্দ করে না।  সমস্যাটা এখানেই । আমিও ত আমেরিকার বিদেশ নীতি পছন্দ করি না। কিন্ত সেই নীতির পাপের কোন হিস্যাই কি আমার নেই?  অবশ্যই আছে। আমি এখানে টাকা কামাতে এসেছি-ফলে আমেরিকান রাজনীতিতে শান্তিবাদিদের আন্দোলনে খুব কমই গেছি। অধিকাংশ মুসলমানদের ও এক অবস্থা। তারাও দিন আনে দিন খাই পাবলিক । তারপরে একঘরে হবার ভয়ে নিজের ধর্মকে দোষ দেওয়া থেকে দূরে থাকে। আবার ধর্মভীরুও বটে। ফলে ইসলাম উগ্রপন্থীদের হাতে ছিনতাই হয়েই গেছে।


এখন সঠিক আর বেঠিক ইসলামে গল্প শোনালে কেউ শুনবে?


   আরো পরিস্কার ভাবে বললে-ইসলাম হচ্ছে এবং ছিল আরব সম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক রূপ। খ্রীষ্ঠান ধর্ম যেমন রোমান সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে বড় হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের সৈনিক পাওয়ার জন্য,  ওমন মরাল সুপিরিয়ার মিথের দরকার হয়।  যেমন এখন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের মরাল মিথ- গনতন্ত্র এবং স্বাধীনতা। আসলে কিন্ত ব্যপারটা তলায় তলায় সব-এক। জমি আর সম্পতি দখলের খেলা।  সেটাকে সিদ্ধ করার জন্য বড় বড় মরাল জাস্টিফিকেশন দিতে ইসলাম, খ্রীষ্টান ধর্ম এবং বর্তমানে " গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার" মরাল সার্কাস। এবং এই সব মরাল সার্কাসে বিশ্বাসী অনেক সৈনিক এবং তাদের স্পনসর ও আছে। যারা এইসব সন্ত্রাসবাদের ঘটনা থেকে প্রচুর লাভ করে।

  মোদ্দা কথা এখানে কতগুলি সাম্রাজ্যবাদি শক্তি খেলছে। সাধারন মানুষ মুর্গী হচ্ছে। এটাই মরাল স্টোরী। বা সামারী।

Wednesday, November 11, 2015

সেকালের দীপাবলি

সে ছিল আরেক দীপাবলি।  নদী থেকে এঁটেল মাটি তুলে দুদিন আগেই বানাতাম চোদ্দটা মাটির প্রদীপ। রোদে শুকাতো দুদিন। মা শর্ষের তেল দিয়ে পলতে ভিজিয়ে দিত। সন্ধ্যে নামতেই তুলসীতলায় চোদ্দটা প্রদীপ জ্বালাতাম পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্য।

  সাথে থাকত এক প্যাকেট সরু সরু মোমবাতি। দোতালার বারান্দায় সেগুলোর কিছু জ্বালিয়ে, বাকীগুলো বরাদ্দ ছিল নারকেলের খোলে টর্চ তৈরীর খেলায়।

  অমবশ্যা আর লোডশেডিং মিলে  গ্রাম বাংলা ডুবে থাকত নিকষ অন্ধকারে। ওই একটা দিনে অন্ধকারটাই ছিল মজার। অন্ধকার না জমলে, জমত না আমাদের নারকেলের খোলে বানানো টর্চের খেলা।

  বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে শ্বশান। শহর থেকে শ্বশানের রাস্তাও আমাদের বাড়ির ওপর দিয়েই যেত।  সেখানেই হত সব থেকে "জাগ্রত" কালীর পূজো!  তখনো কালীপূজো এত বারোয়ারী হয় নি করিমপুরে। কিছু তান্ত্রিক এবং শাক্ত ফ্যামিলিতেই পূজো হত।  বাড়ির পূজোত কি? গ্রামের দিকে অত নিমন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। সবাই যেত বাড়ি পূজো গুলোতেও।

 শ্বশানকালীর পূজোতে যাওয়ার মধ্যে একটা বেশ ভৌতিক ছমছমে ব্যপার ছিল। তখন করিমপুরের শ্বশানের দিকটাতে বাড়ির থেকে জঙ্গল বেশী।  মাটির রাস্তা, জঙ্গল, শিয়ালের ডাক-ঘুটঘুটে অন্ধকার পেরিয়ে দর্শন হত শ্বশান কালীর!  ছাগল বলি হত তখন। তাই দেখতে হাজার হাজার মানুষের ভীর।  আমরা কয়েকটা বখাটে ছেলে মিলে শ্বশানের ধারে নারকেলের খোলের টর্চ নিয়ে ঘুর ঘুর করতাম-যদি ভূতের দর্শন পাই।  মনে ভয়-কিন্ত ওপরে বাতচিত-ধ্যুস ভুত আছে নাকি?

সবকিছুই ত বদলে যায়। দিন, কাল, স্থান। সেই অন্ধকার, জঙ্গল, শিয়াল, তান্ত্রিক, ছাগবলি-মাটির প্রদীপ হয়ত আর নেই। নগরায়ানের, কেবল টিভির দৌলতে ছেলেবেলা, শহরবেলা, গ্রামবেলা-সব হমোজেনাস, একমাত্রিক রসায়ন।  স্মৃতিতেই বেঁচে থাক সেই পুরানো দিনের গ্রামের দীপাবলি।

Tuesday, November 10, 2015

কালী নগ্ন কেন?

হিন্দুদের সব দেবীদের পড়নেই বেশ ভালো ভালো শাড়ি , শুধু কালীকেই কেন টপলেস করা হল-এটা নিয়ে কিছু খোঁজাখুজি করছিলাম। ইন্টারনেট ঘাঁটলে প্রচুর আধ্যাত্মিক গ্যাস বেড়োবে-যথা কালী হচ্ছে রিয়ালিটির প্রতীক-অসীম-তাই তাকে "সসীম" কাপড় পড়ানো যায় না। বা তার উন্মুক্ত স্তন  প্রতীকি-তিনিই যে জনগণকে খাইয়ে দাইয়ে টিকিয়ে রেখেছেন তার প্রতীক। মানে আমরা  সবাই তার ওই ব্রেস্ট ফি্ডেড সন্তান আর কি !

    কিন্ত এগুলো সব মনগড়া গ্যাস। যেকোন দেবীর পোষাকই সমকালে, মেয়েরা যেসব পোষাকে অভ্যস্ত, সেগুলোই।

  কালি বৈদিক দেবী নন। কেউ কেউ বলেন অথর্ব বেদে তার উল্লেখ আছে-কিন্ত সেই কালিকা, আর কালিকাপূরাণের কালী এক নন।

 কালী আসলেই অন্যার্য্যপূজিত দেবতা। এবং আর্য্যদের আগমনের আগে ভারতে অনার্য্য জাতিগোষ্টির মধ্যে মেয়েরা উর্ধাঙ্গ ঢেকে রাখত না। এখনো আদিবাসিদের মধ্যে অনেক উপজাতিতেই মেয়েরা স্তন ঢেকে রাখে না।

এর সব থেকে বড় উদাহরন মহাভারতে।  একে একে পাশায় হেরে পঞ্ছ পান্ডব সবাই দাস হয়েছেন। দুঃশাসন তাদের উত্তরীয় খুলতে বলছেন। কারন দাশেরা ( যারা অন্যার্য্য ছিল) তারা উর্ধাঙ্গ নিবারন করত না। শুধু গোল বাধল যখন দ্রোপদীকে পনে রেখে হেরে গেলেন যুধিষ্ঠীর। দাসীদের ও সেকালে উর্ধাঙ্গ নিরাভরনই থাকত। ফলে দুঃশাসন দাবী করে বসলেন, দ্রোপদীকে তার স্তনযুগলের ওপর কাপড় সরাতে-হবে। কারন দাসীদের স্তনযুগল নিরাভরন থাকত সেই যুগে। এবং সেখান থেকেই বস্ত্র হরণের শুরু।


সুতরাং আদি অনার্য্যদের দেবীরা টপলেসই ছিলেন। শুধু কালিকা নন-আদিম অন্যার্য্য জাতি গোষ্ঠির দেবীদের যত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় সেখানে দেবীরা টপলেস।

  ফেমিনিস্ট টপলেস মুভমেন্টের দৌলতে , ইউরোপের অনেক দেশেই এখন পাবলিক প্লেসে মেয়েদের টপলেস থাকা স্বীকৃত। আশা করা যায়, ভারতেও মেয়েদের টপলেস থাকা স্বীকৃত হবে একশো বছরের মধ্যে। দুর্ভাগ্য এই যে আর্য্যদের আগমনের আগে, মেয়েদের টপলেস থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। তখন কালী টপলেস কেন-এই প্রশ্ন আর উঠবে না।

 আজ থেকে একশো বছর বাদে দ্বাবিংশ শতাব্দিতে, মেয়েদের খোলা মেলা পোষাকটাই যখন হবে নর্ম ( ট্রপিক্যাল দেশে এমনই হওয়া উচিত। আর্য্যরা ঠান্ডার দেশ থেকে এসেছিল বলে ওদের মেয়েদের উর্ধাঙ্গ ঢাকা থাকত। ভারতের গরম আদ্র আবাহাওয়াতে, গরমের সময় স্তন ঠেকে রাখা খুব স্তস্থিকর না। আর সেই জন্য অনার্য্য নারীদের মধ্যে স্তনবন্ধনীর চল ছিল ও না।), তদ্দিনে যদি হিন্দু ধর্ম টিকে থাকে, তাহলে তাদের গায়েও খোলামেলা পোষাকই উঠবে! স্লীভলেস, লোকাট ব্লাউজত এখনই দেবীদের গায়ে উঠে গেছে। আগামীদিনে ভারতীয়রা বিকিনিতে অভ্যস্ত হলে, বিকিনি পরিহিত লক্ষীও সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

Sunday, November 8, 2015

রাজনৈতিক স্ববিরোধিতা

কিছু কিছু রাজনৈতিক ধোঁয়াশার উত্তর আমার জানা নেই। 

  যেমন ধরুন ভারত এবং আমেরিকা-এই দুই দেশের রাজনীতিতেই ধর্ম এবং মার্কেটপন্থীদের জোটবন্ধন। অথবা কমি/বাম দের সাথে লিব্যারালদের জোট। দুই সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী রাজনীতি হয়েও তেলে জলে কি করে মেশে জানা নেই। যদি আমার পাঠকরা কিছু লাইট ফেলেন।

  প্রথমে আসি ধর্ম এবং মার্কেটপন্থীদের জোটবন্ধন। আমেরিকাতে রিপাবলিকান এবং ভারতে বিজেপি-দুই পার্টির বেস-ধর্মীয় রক্ষনশীল এবং মার্কেটপন্থী লিব্যারাল। মুশকিল হচ্ছে এই দুটি বিপরীতমুখী রাজনীতি। মার্কেটের মুলে চাহিদা এবং লোভ। ধর্মের মূল ওই দুটো কমানো।  সব সময় যে তেলে জলে মেশে তাও না। রিপাবলিকান পার্টিতে মার্কেটপন্থীদের সাথে ধর্মপন্থীদের ফাটাফাটী সবসময় হচ্ছে। এখন প্রেসিডেন্সিয়াল রেসে বেন কার্সন বনাম ডোনাল্ড ট্রাম্পের কেসটা ওই ধর্মপন্থী বনাম মার্কেটপন্থীদের লড়াই।  কার্সন সব কিছু ঈশ্বর প্রেরিত, ঈশ্বরের কল্যানে নিয়োজিত-ইত্যাদি প্রচার করে চলেছেন। মাইরী, না দেখলে বিশ্বাস হত না-আমেরকাতে জিওপির ফোর রানার ক্যান্ডিডেট ঈশ্বেরের নামে ভোট চাইছেন। তার কোন অর্থনৈতিক এজেন্ডা নেই! দেশটাকে আবার খ্রীষ্ঠান নেশন বানাবেন যেমন বিজেপি ভারতকে হিন্দু নেশন বানাতে চায়।  এই নিউরোসার্জেনটি সত্যই এক বিনয়ী, সৎ লোক। ফলে বাজারে কাটছে তার ঈশ্বরভক্তি!  বিজেপির অন্দরেও আর এস এস বনাম উদারপন্থীদের লড়াই চলছে।  মুশকিল হচ্ছে-এই তেলেজলে মিশে এরা কেন বাম লিব্যারালদের বিরোধিতা করছেন?

 বাম লিব্যারালদের মধ্যে অবশ্য কালেক্টিভিজম বনাম লিব্যারিলিজমের  এই ভার্টিক্যাল স্পিল্ট  শুধু মাত্র গে রাইট ইত্যাদি ইস্যুতেই প্রকট হয়। ভারতে যেমন গে ইস্যুতে সুসি সহ অনেক কমিনিউস্ট পার্টি ছিল বিরুদ্ধে-কারন তারা মনে করে ওটা লিব্যারিলজমের ইস্যু-যা মার্কেটপন্থী। গে ইস্যুতে ভারতে বামেদের মধ্যে এই প্রভেদ খুব দৃষ্টিকটূ ভাবে দৃশ্যমান ছিল।

আমেরিকাতে কালেক্টিভিস্ট বামেরা ক্ষমতার থেকে অনেক দূরে থাকায়, এগুলো ইস্যু হয় নি। তবে "ইসলামের" মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমেরিকান বামেদের মধ্যেও এই ভার্টিক্যাল স্প্লিটটা দেখি। লিব্যারাল বামেরা ইসলামের মূল্যায়নে অনেক হার্শ-কর্কশ। কারন ইসলাম গে রাইট সহ অনেক হিউম্যান রাইট বিরোধি। অন্যদিকে কালেক্টিভিস্ট বামেরা ইসালামের ক্ষেত্রে অনেক নরম। কারন তারা মনে করে ইসলামের কালেক্টিভিজম প্রি-ক্লাস স্ট্রাগলের ফসল। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে দুই তরফের বামেরাই কালেক্টিভিস্ট। মানে অধিক হারে ট্যাক্স চাপিয়ে স্যোশাল বেনিফিট বাড়ানোর তত্ত্বে বিশ্বাসী।

এবার মোদির কথায় আসি। উনার দুটো বেস।  একটা হিন্দুত্ব ছাড়া কিছু বোঝে না। অন্যটা মার্কেটপন্থী, অর্থনৈতিক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তাকে সাপোর্ট করে।  এই দুই বিপরীত মুখী শক্তিকে নিয়ে কি আদৌ চলা সম্ভব?  অর্থনৈতিক বেসটা চাইবে, কম্যুনাল হার্মোনি। যেমন নায়ারানমূর্তি। ভোটের আগে এবং পরে উনি মোদিকেই সমর্থন করছিলেন। কিন্ত হিন্দুত্বের কুৎসিত মুখ বেড়োতে উনিও মোদিকে সমালোচনা করছেন। বলা যায় বাধ্য হচ্ছেন। কারন এইসব ঘটনায় বিশ্বের কাছে ভুল সংকেত যাচ্ছে। ব্রান্ড ইন্ডিয়ার ভ্যালু পড়ছে। ফলে ইনফির ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এই তেলে জলে মেশানো একদম অসম্ভব। দিল্লীতে গোপন সূত্রে খবর, মোদি এই দুই গোষ্ঠীর দিক থেকেই চাপে থাকেন বলে-উনি ইদানিং ভারতের বাইরে থাকতেই পছন্দ করছেন বেশী। মানে পাতি পালাচ্ছেন আর কি। 

Sunday, November 1, 2015

কমিনিউস্ট ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিরতে এস্টোনিয়া কি রোল মডেল হতে পারে

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট, আনন্দবাজারের রিপোর্টে কোলকাতায় বৃদ্ধের সংখ্যা বাড়ছে, তরুন ছেলে মেয়েদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমছে। ফার্টালিটি রেট নেগেটিভ-মানে পপুলেশন সাসটেইন করার ক্ষমতা নেই। সব থেকে উদ্বেগের কথা কোলকাতায় দম্পতিরা সন্তান নিতে চাইছেন না। না এটা চাইল্ডলেস বাই চয়েস লিবারলিজম না। এর কারন কোলকাতায় ওয়েল পেইং জব খুব কম। ফলে ফ্যাইনান্সিয়াল কারনেই এখানে কাপলরা সন্তান নিচ্ছেন না। আর যারা সক্ষম কর্মক্ষম তাদের বৃহত্তর অংশ অনেক আগেই কোলকাতা ছেড়েছে।

 গোটা শহরটাই এখন কাকু মাসীদের। এদের দেখার জন্য যুবক সম্প্রদায় প্রায় নেই।

 ৩৪ বছরের বামপন্থা বা ভ্রান্ত ভামপ্যান্টিদের ভোট দেওয়ার কুফল বইতেই হত। পাপের ফল কোন না কোনদিন ত ফলতই!

  কমিউনিজম যেখানেই যায়, সেই জাতিকে ধ্বংস করে। অতীতে ধ্বংস হয়েছে রাশিয়ান, রুমানিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান, ইউক্রেনিয়ানরা।  ধ্বংস হয়েছে সমৃদ্ধশালী রাশিয়ান সাহিত্য।  এখন ধ্বংসের পথে বাঙালীরা, বিশেষত বাঙালী হিন্দুরা।  তবে আশার আলোও আছে। ইস্ট ইউরোপিয়ানরা খুব দ্রুতই আই টি এবং আধুনিক শিল্পের ওপর ভিত্তি করে, মার্কেটে ইকোনমির উইং এ ভর করে ফিরে এসেছে।  কমিনিউস্টদের হাতে ধ্বংস হওয়ার পরে ইস্টোনিয়া এখন আই টি হাব-স্কাইপ , কাজার জন্মস্থান। ওদের পার ক্যাপিটা জিডিপি এখন আটাশ হাজার ডলারের কাছাকাছি। যা উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি। ২০২২ সালের মধ্যে এস্টোনিয়ার পার ক্যাপিটা জিডিপি জার্মানি, ইউকের সমান হবে। ফ্রান্স, ইটালিকে ছাড়িয়ে যাবে।

 এস্টোনিয়ার উদাহরন নিলাম এইজন্যে -যে এস্টোনিয়া বাঙালীদের কাছে রোল মডেল হতে পারে। ১৯৪০ সালে স্টালিন স্বাধীন  এস্তোনিয়া দখল করেন। এস্তোনিয়ার বুদ্ধিজীবি বিজ্ঞানী প্রযুক্তিবিদ-এদের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় বাল্টিক দেশগুলিতে। সমৃদ্ধশালী দেশ এস্তোনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ানের আরেকটা ব্যর্থ পরাধীন প্রদেশ হয়ে কাটিয়েছে পঞ্চাশ বছর । কিন্ত ১৯৮৯ সালে কমিউনিজমের পতন হতেই প্রবাসী এস্তোনিয়ানরা দেশে ফিরতে শুরু করেন এবং সেখানে উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প স্থাপনে মন দেন। এই ভাবেই সেখানে জন্ম হয়ছে কাজা, স্কাইপের মতন কোম্পানী। বর্তমানে এই উদ্ভাবনী শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই দ্রুত এগোচ্ছে ইস্টোনিয়া।

 বাঙালীদের ও এক হাল। কমিনিউসস্টদের ৩৪ বছরের রাজত্বে রাজ্য ছেড়েছে সমস্ত সক্ষম বাঙালীরা।  বলা যায় বাধ্য হয়েছে।  রাজ্যটাকে বামপন্থার ভাইরাসশুন্য করতে পারলে, শিল্পের পরিস্থিতি ফেরালে অনেক বাঙালীই ফিরতে পারে-রাজ্যে উদ্ভাবনী শিল্প স্থাপন করতে পারে।  কমিনিউস্ট ধ্বংসস্তুপ থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করতে এস্টোনিয়া একটা মডেল হতে পারে। তবে তার জন্য দরকার এস্টোনিয়ার মতন প্রশাসন-যেখানে নাগরিক সুবিধা সব অক্ষুন্ন রেখেও মার্কেট ইকনোমিকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়।  যারা দেশে ফিরে শিল্প গড়তে চাইছে সরকার তাদের সব ধরনের সুবিধা দেয়। ইনফ্যাক্ট এস্তোনিয়া স্টার্ট আপের জন্য এখন আমেরিকার থেকেও বেশী সুবিধা দিচ্ছে।

সেই জন্য যখনই কোন বামপন্থীকে হেজাতে দেখবেন- তাদের মনে করিয়ে দেবেন, তারা  আসলেই মূর্খ কালিদাস। যে ডালে বসে আছি, সেই ডাল কেটে উন্নয়ন হয় না।