Tuesday, November 30, 2010

উষা্লোক

অনেক আশাহত অন্ধকার দিনগুলোর মধ্যেও কিছু কিছু খবর আসে, যা সত্যই আশাব্যাঞ্জক। আমাদের বড় বড় ধর্ম নিরপেক্ষ নেতারা যেভাবে "ধর্ম নিরেপেক্ষতার" নামে সংখ্যালঘু নারীদের অধিকার বিরোধি কিছু মৌলবাদি ভাঁড়ের পায়ে নিজেদের আত্মসমর্পন করেছেন-সেই শ্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বেঙ্গল ফোরাম ফর মুসলিম উইমেন্স রাইট এন্ড এম্পাওয়ারমেন্ট-খুব পরিস্কার ভাবেই মুসলিম মহিলাদের ওপর অত্যাচার রুখতে মুসলিম সমাজেও ধর্মনিরেপেক্ষ আইনের দাবী তুলেছেন। আইন হলেই যে অত্যাচার আটকায় তা না। ভারতে মহিলাদের প্রতি অত্যাচার সর্বাধিক এবং তা আইন দিয়ে কিছু মাত্রায় কম করা সম্ভব হলেও, প্রতি বছর আট হাজার বধূ হত্যা সর্বভারতীয় লজ্জা। ভারতীয় সমাজে মেয়েদের এই করুন অবস্থার জন্যে সনাতন হিন্দু ধর্মের দায় একশো ভাগ। তবুও সমাজসংস্কার এবং আইনের জন্যে, আস্তে আস্তে হলেও ভারতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। কিন্ত এই অধিকার থেকে বঞ্চিত মুসলিম মেয়েরা। শাহবানু মামলায় সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পরে, মুসলিম মেয়েদের সামনে শরিয়া আইন ছারা ধর্ম নিরেপেক্ষ পারিবারিক আইন খোলা নেই। বলা যায় তথাকথিত ধর্ম নিরেপেক্ষ রাজনীতির(?) শিকার ভারতের মুসলিম নারী-যাদের জন্যে মধ্যযুগীয় আইন প্রনয়ন হচ্ছে "ভারতীয় ধর্ম নিরেপেক্ষতা"। বাংলাদেশ, মালেশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে মুসলিম নারীদের যেটুকু অধিকার আছে-ভারতীয় মুসলিম নারীদের তার ছিঁটেফোটাও নেই। কারন ভারতে ধর্ম নিরেপেক্ষতার সংজ্ঞা হচ্ছে সংখ্যালঘু তোষন এবং
তার জন্যে মুসলিম মেয়েদের অধিকার জাহান্নামে গেলে যাক। মুসলিম মেয়েদের ওপর সামাজিক অত্যাচারের যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেওয়ার লাইনে রাজীব গান্ধী থেকে মানস ভুইজ্ঞা সবাই আছেন।

মানবসমাজ বিবর্তনের সর্বশক্তিমান প্রোডাক্টটির নাম ঈশ্বর। তিনি আবার পুরুষ-কেন না তা না হলে, সন্তান বেশী জন্মাত না। যাইহোক, এই পুরুষ ঈশ্বরটির হাতে সব ধর্মেই মেয়েদের অবস্থান নাকাল। হিন্দু ধর্মে তা গাভীবৎ-ইসলামে দাসীবৎ। সুতরাং ধার্মিক আইন প্রচলন করলে হিন্দুধর্মে মেয়েদের অবস্থান হবে গৃহপালিত গাভীর চেয়ে কিছু কম-আর শরিয়া আইনে চললে, মেয়েদের অবস্থান হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রথমটি আইন দিয়ে দূর করা সম্ভব হলেও, দ্বিতীয়টি বিদ্যমান। ফলে ধর্ম নিরেপেক্ষতার সার্কাস বজায় রেখে ধর্মীয় আইন চালু রাখার পক্ষে যারা-তাদের একটাই শ্রেনী- সুবিধাবাদি রাজনৈতিক ভাঁড়।

ইদানিং কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি মানস ভুইজ্ঞা এবং সইফুদ্দিন চৌধুরী মুসলিম ভোট পাবার আশায় যে পার্টির লেজ ধরেছেন তার নাম জামাই ই ইসলামি হিন্দ। তাদের আমীর এই নারীবাদি সংগঠনের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে কারন তার মতে মুসলমান মেয়েদের শরিয়া মেনে চলতে হবে ( আনন্দবাজারে রহমত আলির বক্তব্য দ্রষ্টব্য)!!! এবার বুঝুন কংগ্রেস এবং পিডিএসের "ধর্ম নিরেপেক্ষ" জোটসঙ্গীতে কারা আছে। এবং ধর্মনিরেপেক্ষতা কারে কয়।

সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদিরা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। এর একটা বড় কারন এই ধরনের ভ্রান্ত ধর্ম নিরেপেক্ষতার সার্কাস। এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে মুসলমানদের জন্যে আলাদা পারিবারিক শরিয়া আইন ভারতবর্ষের জন্যে লজ্জাত বটেই-মুসলিম মেয়েদের বিরুদ্ধে তা মুসলিম পুরুষদের শোষন এবং নিপীড়নের যন্ত্র। এবং মেয়েদের বিরুদ্ধে সেই শোষন অব্যাহত রাখার পেছনে জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকাও খুব উজ্জ্বল।

জেনেটিক্সের এই যুগে যখন আমরা জানি দুজন যেকোন মানুষের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য এক ভাগের একলক্ষ ভাগও না-এবং সেই সূত্রে খুব জোর দিয়েই বলা যায় হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্য অবৈজ্ঞানিক, কল্পনাপ্রসূত এবং ফালতু, তখন দেখা যাচ্ছে শুধু কিছু রাজনৈতিক সুবিধাবাদি নেতাদের মদতে এই পার্থক্য টেকানো হচ্ছে। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস-সব পার্টিই এই বিভাজনের তাস খেলে। তবে এতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভারতের মুসলিম মেয়েরা।

Sunday, November 28, 2010

আদর্শবাদি মহানুভব না ছাগলামি?

বাঙালি হিসাবে আদর্শবাদের সাথে পরিচয় ছেলেবেলা থেকে। মহান নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ ইত্যাদির শ্রদ্ধাবাসর সম্পন্ন করে কৈশোর থেকে যৌবনে, জীবনযুদ্ধে নামতেই বাঙালী বাবা-মা রা স্বপরিচয়ে আবির্ভূত হন। ঘুঁশ না নিলেও, তখন দেখা যায় ঘুঁশ দেওয়া থেকে জীবনের নানা রকমারী কম্প্রোমাইজে তাদের আপত্তি ত নেই-বরং উনারা এটাকে স্বীকৃত সারভাইভাল গেম হিসাবে মেনে নেন। তারপরেও অনেকেই অনেক কিছু মানতে পারেন না-এবং বাঙালী মানস আদর্শবাদের ব্যাপারে একটা অদ্ভত দ্বিচারিতায় ভোগে। আমেরিকা বিরোধিতা, ইসলাম বিরোধিতা, হিন্দুত্ববাদ বিরোধিতা, গান্ধীবাদ বিরোধিতা, কংগ্রেস বিরোধিতা, বাম বিরোধি, এসি ঘরে বসে বাম ছাগলামি-অনেক কিছুই বিশুদ্ধ বাঙালী আদর্শবাদের লক্ষণ । এই মিমগুলো নিয়ে আমার আপত্তি নেই-মানুষের যৌত্বিক নির্মান বলতে কিছু হয় না। মানবিকতা ব্যাপারটা অনেকটাই সারভাইভাল স্ট্রাট্রেজি। আপত্তি শুধু একটা ব্যাপার নিয়ে- সেটা হচ্ছে এরা সবাই এদের নিজেদের পজিশনটাকে খুব যৌত্বিক ভাবেন-এবং মনে করেন এই বিরোধিতা না করলে পৃথিবী রসাতলে যাবে। বাপ্যারটা এমন-আমেরিকা, মুসলমান, বিজেপি, টাটা, সিপিএম, তৃণমূল, ইউনুসের মাইক্রোক্রেডিট-সবাই বাঙালীর পেছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা আছোঁলা বাঁশ নিয়ে।

কিছুদিন আগে একটা ভাল খবর শুনলাম। সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণাতে জানা গেছে বামেরা দুশ্চিন্তা করতে "ভালবাসে"। মানে যেখানে দুশ্চিন্তা নেই-সেখানেও দুশ্চিন্তা করাটা নাকি বামেরদের মাথাতে ইনবিলট। আর দক্ষিন পন্থীরা ফিল গুড ফ্যাক্তরে বিশ্বাসী। মানে আমেরিকা রসাতলে গেলেও উনারা মনে এটা ভেবে খুশী এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ। ভারতের ৭০% লোক ঠিক ঠাক না খেতে পেলেও ইনারা শাইনিং ইন্ডিয়াতে বিশ্বাসী।

বামপন্থী এবং দক্ষিণপন্থীদের যারা বিলক্ষণ চেনেন-বা এদের হাতে ভুগেছেন-তারা নিশ্চিত ভাবে অবগত আছেন, এদের জগতের সাথে বাস্তবতার দূরত্ব বিস্তর কয়েক আলোকবর্ষ। বাস্তবতা বা রিয়ালিজমের সংজ্ঞায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে পারসেপশন-বা জাগতিক অনূভুতি। সেই অনুভূতিটা যদি সত্যিকারের ভালোবাসার হয়, মানুষ আদর্শবাদের পাঁক থেকে এমনিতেই মুক্তি পায়। কিন্ত তার বদলে হাজারটা ভুল তথ্য এবং তত্ত্ব জোগার করে, নিজেদের পজিশনকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাগলামি।

Monday, November 8, 2010

ওবামার ভারত সফর এবং আমরা


আমি টিভি প্রায় দেখিই না-শুধু ট্রেডমিলে উঠে সি এন এন চালিয়ে দিই। গত তিনদিনে কত আশা করেছিলাম, সি এন এন প্রেসিডেন্টের ভারত ট্যুর নিয়ে কত কিছু দেখাবে। আফটার অল ওবামা ভারতে এমন তেল মারা শুরু করলেন, আমি ত ভাবছিলাম আমেরিকায় হার নিশ্চিত জেনে, উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে ইলেকশন লড়ছেন! তার সাথে মিশেল ওবামার বাচ্চাদের সাথে কিছু অসাধারন নাচের দৃশ্যত ছিলই। ধুস আমেরিকান মিডিয়া কিছুই দেখাল না। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জানালেন ভারত এখন পৃথিবীতে গণতন্ত্রের জন্যে নেতৃত্ব ও অনুকরনীয় দেশ-ভারতের থেকেই শেখা উচিত একটা দেশ কি করে শিক্ষায় বিনিয়োগ করে ভবিষ্যত তৈরী করে। গোটা পৃথিবীতে যখন মন্দা-তখনো ভারত বেড়েছে ৭-৮% হারে। ভারত নিয়ে উনি এত ভাল ভাল কথা বললেন, আমি নিশ্চিত আদবানীজি শুধু বলতে বাকী রেখেছিলেন দাদা এবার বিজেপির হালটাও ধরুন-আমাদের নেতা নেই!

তবে ভারতের ছাত্রদের সামনে ওবামাকে বেশ বেসামাল লাগল। পাকিস্তান নিয়ে চেপে ধরতে উনি এদিক ওদিক দিয়ে পালাচ্ছিলেন। ভাল লাগল আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে দেখে না ঘাবরিয়ে ওরা জিজ্ঞেস করল, পাকিস্তান নিয়ে আপনারা চোর পুলিশ খেলেন কেন? আমাদের সিংজীর যদি এতটুকু সাহস ও থাকত। এদিকে ওবামা যা তেলমাস্টার উনি সিংজীকে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক নেতা বানানোর ঘি খাইয়েছেন। সিংজী নাকি ওবামার অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা এটা ওবামা অনেকবার বলেছেন! এতেই সিংজী কাত-উনি কৃতজ্ঞতা বশত পাকিস্তানের ন্যায় অসস্তিকর ব্যাপারে আলোচনা করতে ভুলে যান-অথচ ১৯-২০ বছরের ছেলে মেয়েদের সামনে পাকিস্তান নিয়ে ওবামার ঘুরি ভোকাট্টা!

ওবামার ভারতীয় পার্লামেন্টে ভাষন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দুর্লভ সন্মান খুব কম রাষ্ট্রপ্রধানের ভাগ্যেই জুটেছে। তাই ওবামা সুযোগটা ভালোই কাজে লাগালেন। মহত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ( উনি উচ্চারন করলেন, ঠান্ড ), আম্বেদকর-অধুনা ভারতের রূপকারদের কেও তার ভাষন থেকে বাদ গেল না। উনাকে উনার স্ট্রাটেজিস্ট নিশ্চয় জানিয়ে দিয়েছে যে ভারতীয়দের সাথে কানেক্ট করার জন্যে এই নামগুলোর একটা একটা করে উদ্ধৃতি দিতে হবে। ভারতের ইতিহাস ভূগোল সব কিছুতেই গোল দিয়ে ওবামা লক্ষ্য করেন নি কয়েকটা গোল সেমসাইডেও খেয়েছেন।

প্রথমত উনি এসেছিলেন বাণিজ়্য সফরে। ভারত সফর থেকে আমেরিকাতে ৫০,০০০ চাকরি সৃষ্টিই তার আসু উদ্দেশ্য ছিল। শোনা যাচ্ছে উনি সফল-বোয়িং , লকহীড থেকে সব যুদ্ধবাজ কোম্পানীগুলি অনেক কনট্রাক্ট সাইন করেছে। অথচ আমেরিকার কাছ থেকে ভারতের দরকার ছিল সবুজ প্রযুক্তি এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার। তার বদলে ফাইটার প্লেন কেনাতেই দেখছি আগ্রহ বেশী। তাতে ভারতের জনগনের কি লাভ?
আমেরিকান জনগনের ও লাভ নেই। শুধু দালালদের লাভ। আমেরিকা আর ভারতে দালালরা ছারা আর কেও বাস করে না নাকি?