Saturday, November 28, 2009

জনচেতনা মঞ্চের মত সিটিজেন ফোরাম কেন দরকার?



আমি জনচেতনা মঞ্চ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার সময় আমার সুহৃদ রাজনৈতিক বন্ধুদের কাছ থেকে যেসব ফিডব্যাক পেলাম তা নিম্নরূপ

(১) সফিদা বা সোমনাথদা সারাজীবন ভ্যাঙ্গার্ড পার্টির ত্তত্ব ( সবার ওপর পার্টি সত্য) অনুশীলন করে জনচেতনা মঞ্চের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাস খুঁজছেন ? কারন জনচেতনা মঞ্চের বহুত্ববাদি ধারনা-অবশ্যই লেনিনের সবার ওপর পার্টি সত্য এর বিরোধি
(২) এটা কি চা বিস্কুট খাওয়ার আড্ডা?
(৩) কেন রাজনৈতিক দল ঘোষনা না করে একটা ফোরাম ঘোষনা করা হল? একটা নতুন রাজনৈতিক দল কেন গঠন করা হল না?

তৃতীয় প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই আমি আলোচনা করব বিস্তারিত ভাবে তার আগে প্রথম প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন সোমনাথ চ্যাটার্জি তার লেখাতে এই উত্তর দিয়েছেন সফিদাও এক সাক্ষাতকারে এই ব্যাপারে তার বক্তব্য জানিয়েছেন তাও নিজের দুকথা জানিয়ে রাখি

সবার ওপর পার্টি সত্য- এই মারাত্মক ব্যাধিটি পশ্চিম বঙ্গের কি ক্ষতি করেছে তা রাজ্যবাসী মাত্রই জানেন নন্দীগ্রাম থেকে সিঙ্গুর-অফিস থেকে আদালত-স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-আজ কোন জায়গায় পশ্চিম বঙ্গে রাজ্যবাসীর কথা, তাদের জীবিকা সংস্থানের কথা আগে ভাবা হয়? সর্বত্রই পার্টি পার্টি পার্টি করে ব্যান্ডবাদ্যের কুনাট্য এই কুম্ভীপাককে বধ করে, যারা পরিবর্তনের কথা বলছেন-তাদের মধ্যেও সেই প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে যেসব বুদ্ধিজীবি তৃণমূলের সাথে, মমতা তাদের মাসোহারার ব্যাবস্থা করছেন ( নৈতিক দ্বায়িত্ব বোধ হয়) -কমিটির শীর্ষপদে বসাচ্ছেন ঠিক যেমন করে পার্টির সব চামচা-তাবেদারবৃন্দকে পারিতোষিক পাইয়ে দিয়ে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা সহ যাবতীয় পরিকাঠামোকে উচ্ছনে পাঠিয়েছে পরিবর্তনের সাথে সাথে সিপিএমে গুন্ডারা তৃনমূলে এসে তরী ভেড়াচ্ছে এটা হচ্ছে আমাদের পশ্চিম বঙ্গে পরিবর্তন পরিবর্তন আমিও চাই-কারন তা না হলে বহুত্ববাদি গণতন্ত্রই টেকে না কিন্ত রাজা যদি আলখাল্লা বদলিয়ে সিপিএম এর বদলে তৃনমূল হয়, রাজ্যবাসীর লাভটা কি? সবার ওপর পার্টি সত্য কি মারাত্মক ব্যাধি-তা আমরা জেনেছি, দেখেছি সফিদা বা সোমনাথদার সাথে সিপিএমের সম্পর্ক বিচ্ছেদের মাধ্যমে পার্টির সংবিধানকে দেশের সংবিধানের চেয়ে বড় বলে মানতে হবে! মামার বাড়ির দাবি নাকি? কিন্ত তাও সিপিএম এই রাজ্যে ৩৩ বছর টিকেছে-কারন বাঙালীর কূট কাচালের ধারাটাই আত্মঘাতি রাজনীতির ( এই নিয়ে অতীতে লিখেছিলাম)।
কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে নতুন রাজনৈতিক দলের বদলে কেন ফোরাম? দল ভিত্তিক রাজনীতির প্রতি কেন অনাস্থা?

এর উত্তর ভাল করে জানা দরকার আমি যা বলছি, তা একান্ত ভাবেই আমার নিজের কথা গণতন্ত্রের প্রতি আমার ১০০% আস্থা আছে কিন্ত দলীয় রাজনীতির প্রতি নেই

প্রথমত গনতন্ত্র একটি ডাইনামিক সিস্টেম-যা বিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত হয় বিবর্তনের সুযোগ আছে বলেই সংসদীয় গণতন্ত্র বাকি সব রাজনৈতিক সিস্টেমের থেকে শ্রেষ্ঠ এই সিস্টেমে আজকে লোকে খেতে না পেলেও কালকে পাবে-কারন সেই ক্ষুদাটা ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হতে পারে আবার সমস্যা এখানটাতেই-গরীব মানুষের ভাষা কি পার্লামেন্টে পৌঁছাচ্ছে? উত্তরটা সরাসরি ভাবেই না কারন তা হলে ছত্তিসগড়ের জঙ্গলগুলি যা আদিবাসিদের গত হাজার বছরের আবাসস্থল ওইভাবে সরকার কর্পরেটদের হাতে দিয়ে দিতে পারে না তা সত্ত্বেও আমরা দেখছি এবার জাতীয় কংগ্রেস জিতে গেল-কারন তারা মুখে অন্তত ১০০ দিনের কাজের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছে বেশী-ধর্ম, জাতপাতকে অন্তত দূরে সরিয়ে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদি পার্টিগুলিকে কোনঠাসা করেছে এর জন্যেই গণতন্ত্র শ্রেষ্ট অর্থাৎ প্রথমেই যে কাজটা করা ভীষন ভাবে জরুরী-সেটা হচ্ছে জন সাধারনের ভয়েস, পার্লামেন্টে পৌঁছে দেওয়া এই কাজটা কোন পার্টিই করছে না তারা ব্যাবসায়ীদের দালাল মাত্র আর তথাকথিত বামপন্থীরাও পার্টির ক্রীতদাস -হুইপ মেপে কথা বলেন নতুন পার্টি খুলে অবস্থার পরিবর্তন হবে-সেই আশা ক্ষীন কারন সব দেশের মতন এখানেও গণতন্ত্র ঠিকাদারতন্ত্রে পরিনত। ৮-১০ কোটি টাকা খরচ করে ভোটে জিতে জ়নপ্রতিনিধিদের সামনে ঠিকাদারি করা ছাড়া উপায় কি? টাকাটা উঠবে কোথা থেকে?

দ্বিতীয় সমস্যাটা পরিবেশ এবং রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক হিংসার উৎস সেই ঠিকাদারতন্ত্র এই যে এত কোটি টাকা লাগছে নির্বাচনে জিততে-ফলে টাকাটা তুলতে পঞ্চায়েত মিউনিসিপালিটি গুলো লুটতে হবে ত প্রমোটারদের সুবিধা করে দিতে হবে নইলে ভোটে জেতার টাকাটা উঠবে কি করে? আজকে খানাকুলে এই মারামারি-কাটাকাটির উৎস কি? ওখানকার সবলোকই জানে এটা পঞ্চায়েতকে লুঠ করার অধিকারের জন্যে সিপিএম এদ্দিন লুঠ করেছে-আজ তৃনমূল যেসব জায়গায় এসেছে-সেই সমস্ত জায়গায় লুঠের ভাগ নিয়ে কোন্দল নিউজ পেপারে চোখ রাখুন এটা বন্ধ হবে না কারন আমাদের গনতন্ত্র এখন সত্যিকারের ঠিকাদারতন্ত্র। আবার কোলকাতার দূষন থামানোর জন্যে সিপিএম আজও সি এন জি আলা বাস বা অটো চালু করতে পারল না কারন তৃনমূলের বিরোধিতা এবং নিজেদের ভোট হারানোর ভয় দিল্লী কিন্ত এটা পেরেছে বাংলা পারে নি ঢাকাও পেরেছে আমরা পারি নি বি বি সির রিপোর্ট বলছে কলকাতা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর ৪% লোকের এখানে ক্যান্সার হবেই-৬০% লোক পঞ্চাশ পার করার আগেই কোন না কোন রোগে ভুগবে এই হচ্ছে কলকাতার বাস্তব অবস্থা অথচ কোন পার্টি এই নিয়ে কোন আন্দোলন করল? বুদ্ধিজীবিদের শহরের তকমাতে কি লাভ যে শহর জীবন্ত মৃত্যপুরী? কিসের বুদ্ধিজীবিতা যেখানে শহরের স্বাস্থ্য নিয়ে কোন আন্দোলন নেই? এর থেকে নিদারুন বন্ধ্যাজীবিতাও ভাল!

এখানেই সিটিজেন ফোরামগুলি পৃথিবীর সবদেশে দুর্দান্ত কাজ করে চলেছে কারন ব্যাবসায়ী-রাজনীতি চক্র ভাংতে এর থেকে ভাল কোন উপায় নেই আমেরিকাতে আমার অভিজ্ঞতা খুব ভাল দুটো গল্প বলি ২০০২ সালে নিউজার্সির মিডলটাউনের ডেমোক্রাট মেয়র ঘোষনা করেন শহরের মাঝখানে, যা ছিল ছোট খাট কিছু দোকানের সমষ্টি সেখানে বৃহৎ মল হবে-মিনি ম্যানহাটন গড়ে উঠবে শহরের সিটিজেন ফোরাম এর বিরুদ্ধে প্রতি শনিবার-রবিবার সেখানে জনসভা করেছে মেয়রকে কয়েক মাসের মধ্যেই পিছু হটতে হয় সেই আন্দোলন কিন্ত রিপাবলিকান পার্টি করে নি-কারন তারাও ব্যাবসায়ীদের দালাল ছাড়া কিছু না দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা লং বীচে ২০০৭ দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার অত্যন্ত সুন্দর মনোরম শহর-পাঁচ লাখ লোকের বাস কিন্ত বিচ গুলো ও সমুদ্রের জল সেখানে সাংঘাতিক ভাবে দূষিত হচ্ছিল কারন মেয়র এবং কং গ্রেস ম্যানটা সমুদ্রের ধারে ঢালাও কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্সে অনুমোদন দিচ্ছিলেন টাকার খেলা এখানেও চলে এগুলির পেছনে ছিল ডেমোক্রাটিক পার্টি এখানেও রিপবলিকান পার্টি কিছুই করে নি-কারন তাদের টিকিও ব্যাবসায়িদের কাছে বাঁধা পরিবেশ সচেতন লোকেরা সেখানে ফোরাম তৈরী করে, সেখানকার কংগ্রেসম্যানকে ভোটে হারায় নিজেদের ক্যান্ডিডেট দিয়ে আমি ওদের হয়ে কিছু কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি-সব দেশেই গনতন্ত্রের সাথে ঠিকাদারদের যোগসাযোগ এত দৃঢ়-এটা থামাতে সিটিজেন ফোরামের কোন বিকল্প নেই যারা এই ফোরামে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন-তাদের অনেকেই ডেমোক্রাটিক বা রিপাবলিক্যান পার্টির কার্ড হোল্ডার কিন্ত তবুও ওরা জানতেন, ওদের পার্টি এসব ব্যাপারে কিছু করবে না ফোরামের মাধ্যমেই এগোতে হবে

তাই আমি আমার সমস্ত রাজনৈতিক বন্ধুদের অনুরোধ করব-জনচেতনা মঞ্চ সফল করার কাজে এগিয়ে আসুন আপনাদের পার্টি অনেক কিছুই করতে পারবে না-কারন তাদের টিক ব্যাবসায়িদের কাছে বাঁধা আছে যা এই ফোরাম পারবে এটা পার্টির সমর্থকরা যত শীঘ্র বুঝবেন-ততই মঙ্গল

তাই তাদের অনুরোধ করছি এই লিংকে ক্লিক করে জনচেতনা মঞ্ছে যোগ দিন

Tuesday, November 24, 2009

ভারতীয় রাজনীতি না সাম্প্রদায়িকতার অন্ধ গলি?

বাবড়ি মসজিদ ভাঙা নিয়ে লিব্রাহাম রিপোর্ট এর পর্যালোচনায় আজ ভারতীয় সংসদে যে নাটক অনুষ্ঠিত হল, তা এক কথায় ধর্মনিরেপেক্ষ ভারতবর্ষের জন্যে এক চুড়ান্ত দুঃস্বপ্ন। বিজেপি সাংসদরা অনুতাপের বদলে জয় শ্রী রাম হাঁকলেন-আর তার প্রত্যুত্তরে সমাজবাদি দল সংখ্যালঘু ভোট আবার কাছায় তোলার আশায় আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিল! হায় ভারতের মহান ধর্ম নিরেপেক্ষ গণতন্ত্র-কংগ্রেস বা অধুনা তৃণমুল এই ঘটনার প্রতিবাদ এখনো জানাচ্ছে না-কারন তাহলে হিন্দু মুসলমান দুদিকেই ভোট হারানোর ভয়। এই হচ্ছে তাদের ধর্ম নিরেপেক্ষতার স্বরূপ। একমাত্র সিপিএম ছাড়া আর কেওই সংসদে এই ধরনের নোংরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল প্রতিবাদ জানাই নি। যদিও সিপিএম পশ্চিম বংগে মাদ্রাসা শিক্ষায় দান খয়রাত করে, সংখ্যালঘু তোষন ভালভাবেই করে চলেছে-তবুও সংসদে এই ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্যে প্রকাশ কারাতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি কংগ্রেস এবং তৃনমূল কংগ্রেসের নীরবতা একধরনের বিচ্ছিরি সুবিধাবাদি মনোভাবকেই প্রকট করে তুলছে-সেই সুবিধাবাদি মনোভাব হল সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তোষন করা। বাবরি মসজিদ যার ফলশ্রুতি। এই ভাবে বাঘের পিঠে চেপে নদী পার হওয়া যায় বটে-কিন্ত নদী পার হওয়ার পরে, সেই বাঘ কিন্ত সওয়ারীকে গিলে খেয়ে ফেলবে।

Sunday, November 22, 2009

নাটক কলি বুলি এবং ব্রেখটের এপিক থিয়েটার


প্রবাসে বাংলা নাটক দেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে এখনো অব্দি বেশ তিক্ত। আমেরিকাতে প্রায় ৩৫ টি বাংলা নাটকের গ্রুপ আছে এবং বাংলা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে এদের প্রচেষ্ঠাকে আমি অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কিন্ত ভাল স্ক্রিপ্ট ছাড়া যেমন হলিউডের সুপার সিনেমাটিক ডিজিটাল সিনেমাও বক্স অফিস বাঁচাতে অক্ষম , ঠিক ঠাক নাটক সিলেকশন না হলে , এপিক থিয়েটারের মতন চমকপ্রদ টেকনিকও ম্লান হতে বাধ্য।

নাটকের একটি মূল উপাদার দর্শক। ব্রেখটের এপিক থিয়েটারে তা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারন এর সব টেকনিকই দর্শকের মনে সামাজিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর জন্যে। সমাজে চলে আসা অনাচার অত্যাচার শোষনগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষনের নানা ছলা কলা কৌশল এপিক থিয়েটার নিয়ে থাকে। সুতরাং নাটকের থিমের সাথে যদি দর্শকের নাড়ির যোগ না থাকে-এপিক থিয়েটারের দিকে পা মাড়ানোই উচিত না। প্রবাসী বাঙ্গালীদের কেওই শোষিত বা অত্যাচারিত না-বরং সবাই বুর্জোয়া এলিট। তাদের জন্যে সত্তরের দশকের বামপন্থী বাতিল তত্ত্ব কি মানসিক চিন্তার খোরাক দেবে?

ব্রেখটের এপিক থিয়েটার-সাধারনত কোন ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক উপাখ্যান যার মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক বস্তবাদের দন্দগুলিকে ক্যানভাসের মতন আঁকে। এবং নাটকের মধ্যেই কুশীলবরা অপ্রত্যাশিত আচরন করেন, চরিত্র থেকে বেড়িয়ে আসেন( এলিনিয়েশন টেকনিক)-যাতে দর্শকের মনে সামাজিক দ্বন্দগুলি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই প্রশ্ন ওঠা তখনই সম্ভব, যখন দর্শক তার জীবনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেই দ্বন্দগুলিকে অনুভব করে। সুতরাং নাটকের থিমটা যদি আজ লে-অফ, সাব-প্রাইম ক্রাইসিস নিয়ে হত-যেখানে ওয়াল স্ট্রীটের ফ্যাইনান্সিয়াল জিনিয়াসরা হচ্ছে আজকের কংস মামা -যাদের জন্যে প্রবাসী বাঙালীদেরও সারাজীবন একটা অস্থিরতা অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়-তাহলে, অবশ্যেই কুশীলবদের প্রশ্ন দর্শকদের ভাবাত। সেসব না করে কংস-হিটলার-অত্যাচারী-স্বৈরাচারী ইত্যাদি তাত্ত্বিক ভুতের ডায়ালোগ ছুড়ে বা অদ্ভুত অঙ্গিভংগী করে ( জেস্টাস -এপিক থিয়েটারের আরেকটি টেকনিক) লোক হাঁসানো যায়-এপিক থিয়েটার ও হয়-কিন্ত এপিক থিয়েটারের আসল উদ্দেশ্য-দর্শককে ভাবিয়ে তোলা, তা কিন্ত সর্বত ভাবে ব্যার্থ হচ্ছে।

এছাড়া কিছু টেকনিক্যাল স্ন্যাগ আমার কাছে অগ্রহনযোগ্য।

প্রথমত রাধা এবং তস্য নায়িকাদের বয়স ষাটের কাছাকাছি। ব্রেখটের নাটকে স্টেজ, আলো, পোষাক পার্ফেক্ট হতে হবে বা নায়িকা রাধিকাকে অষ্টাদশী হতে হবে তার কোন মানে নেই। বরং দর্শক কনসাসলি বুঝবে একটা নাটক চলছে-সেটাই ব্রেখট চাইতেন ফোর্থ ওয়াল ভাংতে। কিন্ত ষাট বছর বয়সের ভদ্রমহিলা যদি স্টেজে অষ্টাদশী তরুনীর রোল করতে চান ( চাইতে দোষ নেই) তাহলে ত তাকে গলার টোন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ , লাস্যময়তা, মেক-আপ ঠিক করতে হবে। রাধিকার মুখঅয়বয়ে ভাবের কোন পরিবর্তনই লক্ষিত হল না-আর এদিকে ক্রমাগত সে সমাজ সংস্কারের কথা তোতাকাহিনীর মতন বলে চলেছে। রাধিকার রোলে নাটকটি সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে।

কংসের অভিণয় বেশ ভাল লাগল। সাডেন চেঞ্জগুলো বেশ সার্থক। অধিকারীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক ছিল-কিন্ত গলার স্বরে কোন মড্যুলেশন ডেপথ নেই। ওটা না থাকলে অধিকারী মানায় না। বাকী সবার ভয়েস মনোস্কেলে। মড্যুলেশন ব্যারিটনে এরা বোধ হয় বিশ্বাস করেন না। সমস্যা হচ্ছে ব্রেখটের নাটকে কুশীলবরা যদি এমন গলায় কথা বলেন যে তাতে মনে হয়, ভাষা এবং বাক্যটি তার নিজস্ব না-তাহলে এলিনিয়েশন বা দ্বন্দের সেখানেই সলিল সমাধি। কেও কেও এটা ঠিকই করেছেন-কেও কেও পারেন নি। ফলে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ভালোই ডিসপ্যারিটি পরিলক্ষিত হয়।

যাইহোক রাধিকার অভিনয় ছাড়া বাকি নাটক বসে দেখা যায়। উপভোগ্যও বটে।
ভিডিওটা এই লিংকে দিলাম।

Sunday, November 8, 2009

প্রবন্ধ সংকলন (২০০৫-২০০৭) বার করলাম

[ ২০৬ টি প্রবন্ধের সংকলন যা ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে লিখে ছিলাম-এই লিংকে প্রকাশ করলাম]

চোখের সামনে প্রকাশনার বিবর্তন যত দ্রুত ঘটছে- আমি মাঝে মাঝে নিজেই ভাবি দশ বছর বাদে ভবিষ্যত কি? মনে মনে লিখতে হবে না ত?

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটা ছোট গল্প লিখে মুক্তমনা তথা বাংলা ওয়েবে খাতা খুলেছিলাম। তখন ব্লগ ছিল না। পিডিএফ করে সার্ভারে পুরে অভিজিত মুক্তমনায় আর কুদ্দুস খান ভিন্নমতে প্রকাশ করতেন। অভিজিতের উৎসাহেই বাংলায় লেখার চেষ্টা শুরু করি। '৯৫ সালে শেষ বাংলা লিখেছিলাম-তারপর ২০০৫ সালে এসে বাংলায় দুটো বাক্য ঠিক ঠাক লিখতে পারব-সেটাই ভাবতে পারতাম না। অভিজিত সেই সব অজস্র বাংলা বানান ভুলে ভরা লেখা ছাপিয়ে আমাকে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে গেছে। অভিজিত মুক্তমনা প্রকাশনাটা না চালিয়ে গেলে, আমার বাংলায় লেখা লেখি কোন কালেই সম্ভব হত না। আমার মতন আরো অনেক বাঙালী লেখকই অভিজিতের কাছে এই ব্যাপারে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে, সে ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ।

মৌলবাদের বিরুদ্ধেই মূলত লিখে গেছি এই সময়। আসলে এই সময়টা বাংলাদেশে বি এন পির সময়কাল এবং ইসলামিক মৌলবাদ তার সহস্রফণায় আমাদের ভীত করে তুলেছিল। পাশাপাশি গুজরাটের দাঙ্গার টাটকা ঘা তখনও দগদগে। ফলে ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধি লেখাই এই সময়টাতে অনেক বেশী লিখেছি। সেটাই ছিল সময়ের দাবী। তবে আমি বরাবরই সমাজ এবং নৃতত্ব বিজ্ঞান দিয়েই ধর্মকে বোঝার চেষ্টা করে আসছি। এছারাও এই সংকলনে অনেক নারীবাদি প্রবন্ধ আছে। আসলে আমার কাছে ধর্মটা মূলত পুরুষতন্ত্রের ম্যালাডিস হিসাবেই প্রতিভাত। তাই এতগুলি নারীবাদি লেখা বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে এসে গেছে। তবে যাদের যৌনতা নিয়ে শুচিবাই আছে, তারা নারীবাদি লেখাগুলো না পড়লেই ভাল করবেন কেন না তা আপনাদের রক্ষনশীল মনোভাবে ভীষন ভাবেই আঘাত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশেষ করে, মার্কিন সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটা সিরিজ লিখছিলাম। ১১টা কিস্তি লিখে আর শেষ করি নি। আমি ইরান, ইস্রায়েল, আমেরিকা-আসলে এদের কাওকেই পছন্দ করি না। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে, বেশ কিছু ভুল করেছি আগে। মুম্বাই এর ২০০৬ সালের বিষ্ফোরনের পরে আমার মনে হয়েছিল যেহেতু বি এন পি সন্ত্রাসবাদি পুষছে ( যা এখন খুব ভাল ভাবেই প্রমাণিত) , সেহেতু ভারত সরকারের উচিত সন্ত্রাসবাদি ক্যাম্পগুলোতে ইস্রায়েলের স্টাইলে বোমা বর্ষন করা । এই নিয়ে ফরিদ ভাই এর সাথে বাদ-বিতন্ডাও হয়েছে। আমার এই বিশ্লেষনে ভুল ছিল। এই জন্যে নয়, যে আমি কোন দেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি। কারন আমার ধারনা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অতি দ্রুতই বিলুপ্ত হবে । তাই উত্তর আধুনিকতার প্রতিনিধি হিসাবে জাতিয়তাবাদ পরিহার করে চলার পথপ্রদর্শক আমাদেরই হওয়া উচিত। আমার আসলে ভুলটা হয়েছিল এই জন্যে যে গণতান্ত্রিক সরকারের নেপথ্যের কুশীলবদের চিনতাম না তখন। পরবর্তীকালে আমি সখের সাংবাদিকতা শুরু করি ( আমি লস এঞ্জেলেস প্রেসক্লাবে কার্ডধারী জার্নালিস্টও হয়েছি) । সরকার, মিডীয়া এবং ব্যাবসায়ীদের মধ্যে নেক্সাস, যা আমাদের সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে, সেটা বেশ ভাল ভাবে টের পেতেই অনেক ভুল ভেঙে গেছে। ফলে দিল্লী এবং ওয়াশিংটনে আসল খিলাড়িদের জানার পরে, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হই যে মেইন স্ট্রীম মিডিয়া সবদেশেই যেভাবে ঘটনাটা খাওয়ানোর চেষ্টা করে-তা একধরনের আই ওয়াশ। সব রাজনীতিই আসলে পুতুল নাচের ইতিকথা। পুতুলই আমরা দেখি-সুতো আর খেলোয়াড় আমাদের চোখে পড়ে না। তাই বি এন পির কিছু নেতার জন্যে আমার উগ্র জাতিয়তাবাদি অবস্থান নেওয়া বেশ ভুল ছিল। ভুলের মধ্যে দিয়েই আমরা শিখি-এবং এই শেখাটাই উত্তোরনের একমাত্র পথ। তবে ভুল ঠিক-সব লেখাই দিলাম।

এখন বাংলা লেখা আরো সহজ হয়ে গেছে, অভ্র ফন্ট আসার পর। নিজের ব্লগে লিখে সোস্যাল নেট ওয়ার্কিং ফোরাম গুলোতে ছেড়ে দিলেই কাজ শেষ। ইনফর্মেটিভ লেখা আমি লিখি না-কারন আমার ধারনা লোকে গুগুল করে সব ইনফর্মেশন জোগার করতে পারে। এবং সেটাই হবে ভবিষ্যতে তথ্য সংগ্রহের মডেল। তাই তথ্য শুধু বিশ্লেষনের জন্যেই ব্যাবহার করা উচিত। ব্যাক্তিগত উপলদ্ধি এবং অনুভুতির জগতটাকে আমরা আজ সোস্যাল মিডিয়ার জন্যে যত ভাল ভাবে জানছি-তা আগে সম্ভব ছিল না। স্যোশাল মিডিয়া থেকে যে সামাজিক উপলদ্ধি তৈরী হচ্ছে-আইডিয়া গুলোর একটা ডারুইনিয়ান প্রসেসে ছড়িয়ে যাচ্ছে-এটা ভবিষ্যতের প্রকাশনা এবং জ্ঞান বৃদ্ধির মডেল। তাই আমার ধারনা স্যোশাল মিডিয়াতে সম্পাদকরা মেম্বারদের ব্যাক্তিগত উপলদ্ধির জগতটা নিয়ে বলতে বাধা সৃষ্টি না করলেই ভাল হয়। তথ্য আমরা অনেক ওয়েব সোর্স থেকেই জানতে পারব-কিন্ত ব্যাক্তিগত উপলদ্ধি জানার জন্যে স্যোশাল মিডিয়ার বিকল্প নেই। আমার লেখাগুলো মূলত সেই উপলদ্ধির জগৎ থেকেই উঠে আসা। এটা ঠিক না বেঠিক স্টাইল আমি জানি না-তবে তথ্যভারাক্লান্ত লেখাতে আমার বেশ অনীহা। যাইহোক মোটামুটি ৮০% লেখা আমি উদ্ধার করতে পেরেছি ওই তিন বছরের। বানান ঠিক করতে পারলাম না-কারন প্রায় সবটাই বর্নসফটে লেখা, আর বর্নসফটের লাইসেন্স আমার কবে হারিয়ে গেছে! ফলে সেই পিডিফ যা ছিল তাই ভরসা!

পাঠক আমার পল্লবগ্রাহীতা নিজগুনে ক্ষমা করবেন আশা করি। লিংকের পেজটির বাম দিকের নীচে নানান টপিকে ভাগ করে লেখাগুলি ফেলা আছে। সেখান থেকে আপনারা বিষয় অনুসারে লেখা ব্রাউজ করতে পারবেন।