Saturday, March 27, 2021

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য মোদির সত্যাগ্রহ এবং বিরোধিদের দুর্ভাগ্যজনক প্রতিক্রিয়া

 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য মোদির সত্যাগ্রহ এবং বিরোধিদের দুর্ভাগ্যজনক প্রতিক্রিয়া

-বিপ্লব পাল ২৭ শে মার্চ, ২০২১
(১)
আমি মোদিভক্ত বা বিজেপি ভক্ত নই। কিন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মোদির বক্তব্যের বিরুদ্ধে যেভাবে মোদিবিরোধিরা মিম এবং ব্যাঙ্গচিত্র নামাতে শুরু করেছে, তাতে খুবই পরিস্কার, মোদি বিরোধিরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সেই সময় ভারতের রাজনীতি নিয়ে সম্পূর্ন ভাবে নিরক্ষর।
মোদি দাবি করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন জনসঙ্ঘের একজন সাধারন ক্যাডার। বয়স ছিল ২০-২২। এবং সেই সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে জেলে গেছেন।
এই ব্যাপারে অনেকেই ঠাট্টা করছেন, কারন আমি জানি, অধিকাংশ ভারতীয়র ধারনা, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষেই ছিল। তাহলে কোন ভারতীয় রাজনৈতিক দলের ( জনসঙ্ঘ) কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনের দরকার হল?
ঠিক এই ইতিহাসটাই অনেকে জানেন না। কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের যোগদানের ক্ষেত্রে ভারতের সব বিরোধি পার্টির বিরাট ভূমিকা ছিল-এবং আমি সেটাই সংক্ষেপে লিখব। যদিও আসল ইতিহাস আরো দীর্ঘ।
তার আগে আরো একটা লাইন লিখি। ২০১৫ সালে মোদি ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা সেবার অটল বিহারি বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য স্বীকৃতি দেয়। সেই পুরস্কারের মঞ্চেও, সেদিন ও মোদি একই দাবী করেছিলেন। গুগুল করলেই দেখতে পাবেন। কিন্ত তখন কোন জল ঘোলা হয় নি-কারন দেখবেন, তখন বাংলাদেশ সরকার ও উল্লেখ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আন্দোলনে অটলজীর অতুলনীয় ভূমিকার কথা- মাঠে, ময়দানে এবং পার্লামেন্টে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে যাতে ভারত স্বীকৃতি দেয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে তার জন্য জনসঙ্ঘ ১-১১ই আগষ্ট, ১৯৭১ সালে সত্যিই দেশজুরে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিল। ১২ই আগষ্ট পার্লামেন্টের সামনে তারা বিক্ষোভ দেখায়। এবং তারজন্যেই অনেক সঙ্ঘী জেলে যান। যাদের মধ্যে নরেন্দ্রমোদিও ছিলেন। কিন্ত যেখানে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গোটা বিদেশ চষে ফেলছেন-তখন ভারতে কেন বাংলাদেশের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হয়েছিল? উল্লেখ্য এই যে শুধু জনসঙ্ঘ না। ভারতের কমিনিউস্ট পার্টিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতে মিটিং মিছিল করেছে। কেন এমন ইতিহাস? এই প্রশ্নটা অধিকাংশ ভারতীয় মাথায় ঢোকে নি। কারন তারা ভেবেছেন ইতিহাস খুব সহজ এবং এক রৈখিক। বা তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস কিছুই জানেন না। তাতে দোষ নেই। আমিও এককালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে কিছুই জানতাম না। কারন বাংলাদেশের ভূতপূর্ব স্বাধীনতাবিরোধি সরকার তাদের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পূর্ন চেপে দিতে চেয়েছিল। ফলে ভারতীয় কেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকজন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানত না বহুদিন।
তাই আসুন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তাতে ভারতের বিরোধি রাজনৈতিক দলে ভূমিকা নিয়ে একটু জানি।
(২)
আমি এবার ইতিহাসটা অন্যভাবে লিখি। একেবারে সময় তারিখ না দিয়ে ব্যক এন্ড ফোর্থ স্টাইলে লিখব-যাতে সবাই কার্য-কারন সম্পর্ক বুঝতে পারেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয় ২৫শে মার্চ, ১৯৭১। যেদিন রাত্রি ১১-৩০ এ পাকিস্তানি মিলিটারি অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে। অপারেশন সার্চ লাইট হলোকাস্টের মতন আরেক কুখ্যাত গণহত্যা। যেদিন একরাতে শুধু ঢাকাতেই মিলিটারির হাতে প্রায় ৩০,০০০ নাগরিককে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার জগন্নাথ হলের ৬০০-৭০০ হিন্দু ছাত্রও ছিল। সবাইকে মেশিনগানের সামনে দাঁড়িয়ে গুলি করা হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই ৫০০০ লাশ পড়ে। এই ঘটনা ভিডিও করতে সক্ষম হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল উল্লাহ। যা পরে বিবিসির মাধ্যমে গোটা বিশ্ব দেখবে। ওই রাতেই বাংলাদেশে প্রায় সব শহরেই পাকিস্তানি মিলিটারি চড়াও হয় এবং নির্বিচারে সাধারন জনগণকে হত্যা করা শুরু করে । গোটা বাংলাদেশে একরাত্রে তিন লাখ লোক পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে খুন হয়। যার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ছিল। কিন্ত হিন্দুদের সংখ্যা ছিল বেশ বেশী। কারন বেছে বেছে হিন্দু অধ্যুশ্যিত এলাকাগুলোর ওপর পাকিস্তানি সেনা বেশী বেছে বেছে বেশী খুন করছে। কারন তারা মনে করত বাংলাদেশের হিন্দুরাই পাকিস্তানের মুসলিম ঐক্যের ফাটলের জন্য দায়ী।
প্রশ্ন হচ্ছে - বাংলাদেশে ২৫শে মার্চ এত বড় গণহত্যা চলছে যা ইতিহাসে শুধু ইহুদি নিধনের ফাইনাল সল্যুউশনের সাথে তুলনীয়-তখন ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধী কি করছিলেন???
(১) তখন মুজিব কোথায়?
(২) বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষনা দিল কিভাবে? কবে বাংলাদেশ নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে ঘোষনা করল? কবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অফিশিয়ালি স্বীকৃতি দিল?
(৩) কিভাবে তৈরী হল মুক্তিবাহিনী?
(৪) ইন্দিরা গান্ধী কি করছিলেন?
(৫) কবে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে মিলিটারি সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
শুধু টাইম লাইন গুলো দেখে নিই। তাতেই অনেক ইতিহাস পরিস্কার হবে।
অপারেশন সার্চ লাইট-পাকিস্তানের মিলিটারির গণহত্যা -২৫ শে মার্চ
কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন মেজর জিয়া -২৭ শে মার্চ। এই খবর বাংলাদেশের বাইরে এল জাপানী এক জাহাজের রেডিওর মাধ্যমে- বিবিসি প্রচার করে ২৮ শে মার্চ।
কিন্ত ২৬শে মার্চ থেকেই ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা আসাম মেঘালয়ে স্বরনার্থীর ঢল নেমেছে। ভারতের ইন্টালিজেন্সের কাছে খবর পৌছে গেছে বাংলাদেশে কি হয়েছে ২৫ শে মার্চ।
কিন্ত?
বাংলাদেশকে মিলিটারি সাহায্য করা উচিত না এক্সাক্টলি কিভাবে ভারত সরকার এই ক্রাইসিস ডিল করবে, সেই নিয়ে প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠক হল ২৮শে এপ্রিল। একমাস বাদে। এই বৈঠকে ম্যাকেনশকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হল সেনা প্রস্তুতি নিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র সাহায্য দেওয়ার জন্য।
ইন্দিরা গান্ধী নিজে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ব্যাটিং শুরু করেন জুলাই ১৯৭১। কারন জুন মাসে এন্থনি মাসকরনেস বাংলাদেশে যে পাকিস্তান বিরাট স্কেলে গণহত্যা চালাচ্ছে তার বিরাট রিপোর্ট গোটা বিশ্বের সামনে ফাঁস করেন। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশের অনূকুলে ছিল না। কারন সবাই মনে করছিল, এসব কিছুই ভারতের প্রপাগান্ডা।
এবং ভারত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ৪ ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার প্রায় ৯ মাস বাদে। কেন এদ্দিন লাগল? যেখানে ২৭ শে মার্চই ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া?
পাকিস্তানের গণনিধন থামাতে ২৬-২৭ মার্চ কেন ভারত মিলিটারি নামালো না? কেন সেটা ৪থ ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াল ? ইন্টারেস্টিং ২৫ শে মার্চ কিন্ত বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের শক্তি ডিসেম্বর মাসের থেকে অনেক অনেক কম ( প্রায় ছ ডিভিসন কম সেনা)! তাহলে?
(৩)
আসুন এবার বেশ কিছু বিতর্কিত ইতিহাস জানা যাক।
মুজিব দিয়েই শুরু করি। ২৫ ই মার্চ সন্ধ্যা সাতটাই মুজিবের সাথে দেখা করতে এলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন। উদ্দেশ্য দুটি। যাতে মুজিব ভারতে পালিয়ে যান। দুই তিনি স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র চারিদিকে ছড়িয়ে দেন। তখনো পাকিস্তানি মিলিটারি সেনা ছাউনি থেকে বেড় হয়নি। কিন্ত যেভাবেই হোক, তাজউদ্দিনের কাছে খবর এসেছে ক্রাকডাউন হবে।
মুজিব তখন রাজী হোন নি। রাত দেড়টাই তাকে পাকিস্তানি মিলিটারি গ্রেফতার করে । কিন্ত তার আগে তিনি তার সাঙ্গপাঙ্গদের টেলিগ্রাম পাঠাতে সক্ষম হোন, গোটা দেশ যেন পাকিস্তানি মিলিটারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে ।
প্রশ্ন হচ্ছে ২৫ শে মার্চ মুজিব দ্বিধায় ভুগছিলেন কেন? এই জন্যে মুজিব বিরোধিরা এই প্রশ্ন বারবার তুলেছে ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি নিধন যজ্ঞের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের কোন যুদ্ধ প্রস্তুতিই ছিল না। সম্পূর্ন অপ্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ। কেন?
আমি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি। এবং মোদিকে কেন সত্যাগ্রহ করতে হয়েছিল, তার সমাধান ও, এই প্রশ্নের উত্তরেই আছে।
এর মূলকারন মুজিব ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে সম্পূর্ন গ্রীন সিগন্যাল পান নি। চেষ্টা করেছেন ভারত সরকারকে বোঝাতে। ভারতের কাছে গ্রীন সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা হত মুর্খামী। সুতরাং মুজিব ঠিক কাজই করেছেন ২৫ শে মার্চ।
কিন্ত ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে মিলিটারি অভিযানে কোন মতেই রাজী ছিলেন না মার্চ মাসে। এপ্রিলে সিদ্ধান্ত নিলেন। তাও নমাস বাদে মাঠে নামার জন্য। কিন্ত কেন?
মূলত দুটি কারন ছিল।
ইন্দিরা গান্ধী সবে ইলেকশন জিতে ক্ষমতা এসেছেন। ২৫ শে মার্চ তার প্রধানমন্ত্রীত্বের বয়স দু সপ্তাহ। গরিবী হঠাও ছিল তার পাখীর চোখ। তার আগে ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দুই ভাগ হয়েছে। একদিকে বিরোধি দলে জনসঙ্ঘে অটলজীর মতন নেতা। কংগ্রেস বিভক্ত। অন্যদিকে নক্সাল এবং মাওবাদিদের উৎপাত। তিনি নিজেই কাঁটার সিংহাসনে বসে আছেন! প্রতিদিন ঘরে বাইরে রাজনৈতিক যুদ্ধ করছেন, নিজের ক্ষমতা টেকাতে। সে আরেক বিশাল গল্প। এই অবস্থায় বাংলাদেশ তার প্রায়োরিটি হতে পারে না। বিশেষত রিফিউজি ইনফ্লাক্সের জন্য তার গরিবি হটাও আন্দোলন মায়ের ভোগে।
আরেক সমস্যা ভারতের মিলিটারির দুর্বলতা। পাকিস্তানি মিলিটারি তখন চীন এবং আমেরিকা থেকে সাহায্য প্রাপ্ত। ভারত সমাজতান্ত্রিক দেশ। মিলিটারি বাজেট সীমিত। ভারতের মিলিটারি হার্ডোয়ার খুব পুরাতন। ইনফাক্ট ডিসেম্বর মাসে যখন পাকিস্তান বনাম ভারতের যুদ্ধ শুরু হয় সেটা মিলিটারি হার্ডোয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে কানা বনাম খোঁড়ার যুদ্ধ। ৩ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভারতের পশ্চিম উত্তর প্রান্তের সব বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়। একটি ক্ষেত্রেও ভারতীয় র্যাডার সেই বিমানের আগমন ধরতে পারে নি। কিন্ত সেই বিমান হামলায় ভারতের ক্ষতিও খুব কম হয়। কারন অধিকাংশ পাকিস্তানি বোম যা বিমান ঘাঁটিতে নিক্ষেপিত হয়েছিল, তা ফাটেই নি!! কারন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দুর্নীতি এবং বাজেটের অভাব। অর্থাৎ ৭১ এর যুদ্ধ ছিল কানা বনাম খোঁড়ার যুদ্ধ।
সেই জন্য ২৮ শে এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধী যখন ম্যাকেনশকে জিজ্ঞেস করলেন সেনা অভিযান এখুনি হবে কি না-ম্যাকেনশ নাকচ করে দেন। কারন ভারতীয় সেনা বাহিনীর কোন প্রস্তুতিই ছিল না। মিলিটারি হার্ডোয়ার ছিল অত্যন্ত পুরাতন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের।
যুদ্ধে গিয়ে হারলে ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবন সেখানেই শেষ হয়ে যেত। সুতরাং তিনিও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের মাধ্যমে ধীরে চলার নীতি নেন।
(৪)
কিন্ত রিফিউজি ক্যাম্পে তখন বাংলাদেশ থেকে আসা স্বরনার্থীরা উপচে পরছে। ভারতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ২৭ শে মার্চই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেয়। জনসঙ্ঘ কমিনিউস্ট সহ সকল বিরোধিদের চাপেই ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বাধ্য হোন এপ্রিল মাসে।
ইন্দিরা গান্ধির নিজের গদি নড়বরে ছিল। কিন্ত যখন দেখলেন গোটা ভারতই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইছে-তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকেই নিজের পলিটিক্যাল ক্যাপিটালে পরিনত করলেন। আর এটা সম্ভব হয়েছিল এই কারনেই যে অটল বিহারী বাজপেয়ী, জ্যোতি বসুর মতন বিরোধিরা ইন্দিরা গান্ধীকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে গেছেন। ঠিক সেই কারনেই অটলজি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতির জন্য ১০ দিনের সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন।
সেই সময় পৃথিবীর বাকি ৫০ টা ( তখন ৪০) মুসলমানদেশের ভূমিকা কি ছিল? তারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। পাকিস্থানি মিলিটারিকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে নানান ভাবে সাহায্য করেছে-যাতে ইসলামের জয় হয়!! ইরান তার বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সুলতানরা পাকিস্থানী মিলিটারিকে অর্থ সাহায্য দিয়েছিল যাতে তারা বাংলাদেশের আরো অনেক লোক মারতে পারে। এগুলোও নথিবদ্ধ ইতিহাস!!
আর আজকে মোদি হলেন বাংলাদেশ বিরোধি-আর যাবতীয় আরবের মুসলমানরা বাংলাদেশের পেয়ারের লোক!! এটাও ইতিহাসের আইরনি হিসাবেই লেখা থাকুক!
জয় বাংলা!
ফুটনোট
***
ফুটনোটে আরো দুটো ইতিহাস ক্লিয়ার করা দরকার। একটি জেনারেল ম্যাকেনশর ইন্টারভিউ। যে বর্ষার সময় তিনি বাংলাদেশ আক্রমন করতে চান নি। কারন ট্যঙ্ক নিয়ে ঢোকা যেত না। এটি উনি গল্প দিয়েছেন। কারন বাংলাদেশে পাকিস্তান আর্মির সর্ব সাকুল্যে ছিল চারটি ফাইটার জেট। আর চারটি আর্মি বোট। ইনফ্যাক্ট মনসুনই ছিল বাংলাদেশ আক্রমনের উপযুক্ত সময়। যেহেতু পাকি আর্মির কোন গানবোট ছিল না। কিন্ত আসল সত্য হচ্ছে ভারতের মিলিটারি হার্ডোউয়ারের ছিল আরো খারাপ অবস্থা। এপ্রিল-নভেম্বর-ভারত প্রচুর মিলিটারি অস্ত্র কিনেছে গোপনে। ১২ ই ডিসেম্বর ভারত কি ট্যাঙ্ক নিয়ে ঢাকায় ঢোকে? প্যারাড্রপিং হয়! বাংলাদেশে নর্মাল সময়তেই ট্যাঙ্ক চালানো মুশকিল!!
দ্বিতীয় এই যে ১৯৬৮ সাল থেকেই পাকিস্তান ভাঙার জন্য গুপ্তচর সংস্থা র সক্রিয় ছিল। ১৩ ই এপ্রিল মেহেরপুরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার স্থাপিত হয়। এর মানে ভারত সরকার বরাবরই সাহায্য করেছে। উত্তর হচ্ছে । হ্যা। কিন্ত গোপনে। কারন ওই অস্থায়ী সরকারকে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিতে ৪ ই ডিসেম্বর লাগে। আর ২৫ শে মার্চের জন্য র বা মুক্তিযোদ্ধারা তৈরী ছিলেন না। তৈরী থাকলে ৩ লাখ লোক এক রাতে পাকি আর্মি মারতে পারে না। আসলে বাংলাদেশ গড়ার জন্য র এর তত্ত্ববধানে আস্তে আস্তে প্রস্তুতি চলছিল। কিন্ত কেউ ভাবে নি ২৫ ই মার্চ পাকিস্তানি আর্মি ক্রাক ডাউন শুরু করবে। সুতরাং ভারত সরকার ও এই ২৫ শে মার্চের ঘটনায় হঠাতই বুঝতে পারে এবার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আরেকটা সত্য হচ্ছে রিফিউজিদের জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল কম । ভারতের সাধারন মানুষের ভিক্ষায় টিকেছে তাদের জীবন। এমন কি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের মান ও ছিল নীচু মানের। কারন ভারত সরকারের সাহায্য ছিল খুবই কম। যেহেতু ভারত সরকারি ভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল না আন্তর্জাতিক চাপে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধিদের চাপ খুবই দরকার ছিল।

জনসঙ্ঘের সত্যাগ্রহ এবং জেল ভরোর একটি ভিডিও হাতে এসেছে। দেখুন সেখানে খাঁকি প্যান্ট সাদা শার্টের সঙ্ঘীরা কারাবরন করছে ( ১২ ই আগষ্ট, ১৯৭১)। ফলস ভিডিও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারন এটি এসোসিয়েট প্রেসের ভিডিও। দেখলেই বুঝতে পারবেন, ভারত সরকার কেন তখনো স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয় নি, তাই নিয়ে জনসঙ্ঘ আন্দোলন করছে। আশাকরি আপনার সবাই বুঝবেন, নিজেদের আদর্শ নিজেদের ঘৃনার দ্বারা পরিচালিত হয়ে সত্যকে আপনার মিথ্যে করতে পারবেন না। সত্য দিনের সূর্য্যের মতন প্রকাশ পাবেই। https://www.youtube.com/watch?v=0RomY1OQI0M

Sunday, March 21, 2021

প্রতিশ্রুতি- না আসল কাজ-ভোটে জিততে কোনটা বেশী দরকার?

 প্রতিশ্রুতি- না আসল কাজ-ভোটে জিততে কোনটা বেশী দরকার?

- বিপ্লব পাল, ২২/৩/২০২১
ভারত এবং আমেরিকার রাজনীতিতে একটা মৌলিক পার্থক্য, রাজনৈতিক পার্টিগুলির গঠন এবং বিবর্তন।
ভারতের রাজনীতিতে সব পার্টিই একটা আদর্শের রূপরেখাতে চলার চেষ্টা করে- সেই আদর্শের ভিত্তিতে জনগণকে স্বপ্ন দেখায় তারা পরিবর্তন আনবে ।
এবার জনগণ সেটা বিশ্বাস করবে কি না, সেটা নির্ভর করছে, সেই পার্টিটি টেস্টেড স্পেন্ট ফোর্স না নতুন ফোর্স । যেমন ধরুন সিপিএম ইস্তাহারে যতই ভাল কথা লিখুক বা বাম রাজনীতি কেন উপাদেয় এই নিয়ে লেখালেখি করুক না কেন, তাদের কথাকে বিশ্বাস করার মতন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারন তারা যে অপদার্থ তা জনগণ গত ৩৪ বছর বুঝে নিয়েছে। কংগ্রেসের ও প্রায় তাই এক অবস্থা। তুলনামূলক ভাবে তৃনমূল এবং বিজেপি বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন ফোর্স। এর মধ্যে ১০ বছর রাজত্ব করার জন্য তৃনমূলের প্রতিশ্রুতিও অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আবার অনেকেই আছে যারা মনে করেন দিদি কথা রেখেছেন। মূলত এই পটভূমিকাতেই বিজেপির পোয়াবারো। যেহেতু বাংলায় তারা টেস্টেড ফোর্স না। অনেক বাম সমর্থকই বিজেপিকে সুযোগ দিতে চান যদি বিজেপি বাংলার জন্য ভাল কিছু করে । কিন্ত বিজেপি যেহেতু দেশের গদিতে গত সাত বছর-সেহেতু অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে যে চাইলেই বিজেপি ম্যাজিক্যালি কিছু করতে পারবে না। এবং ভারতের অর্থনীতি এখন ধুঁকছে। যারা ভারতের অর্থনীতি ভাল ভাবে চালাতে পারে নি, তারা বাংলার অর্থনীতি ঘোরাবে, এই বিশ্বাস অনেকেই হারিয়েছেন।
অর্থাৎ নতুন "আশা" এবং "দিশা" ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন। জনগণকে বোঝাতে হবে আপনি নতুন কিছুতে সক্ষম। বামেদের ব্যর্থ হওয়ার মুল কারন, তারা যতক্ষন না পর্যন্ত সব কিছু খোল নলচ বদলে নতুন ধরনের পার্টি হওয়ার প্রতিশ্রুতি না দিচ্ছে, কেউ তাদের বিশ্বাস করবে না। কিন্ত আব্বাসের হাত ধরে বা ঐশীদের নামিয়ে তারা প্রমান করেছেন, বাংলার বাম, আরো পচাগলা বামে পরিনত হচ্ছে। ফলে যেকোন গণতন্ত্রে যেখানে হেসে খেলে ২০-৩০% বাম ভোট পাওয়া যায়, তারা ৫% পাবেন কি না সন্দেহ। এবং সেটাই তৃনমূলের গলার ফাঁস এখন। কারন বামেরা তাদের ২০% ভোট ব্যাঙ্ক না রাখতে পারলে, সেটা বিজেপির কাছে যাবে।
আমেরিকার গণতন্ত্রেও এই "হোপ" বা আশা খুব গুরুত্বপূর্ন। কিন্ত সেক্ষেত্রে পার্টি না ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ন। আমেরিকার পার্টিগুলো একটি টেন্ট। সেই টেন্টে সব আদর্শের লোক থাকে। ডেমোক্রাটদের মধ্যেও বিদেন এবং বার্নির মত পথের পার্থক্য অনেকটাই-কংগ্রেস বনাম সিপিএমের সমান। এখানে সুবিধা হচ্ছে এই হোপ বা আশা দেন নতুন পার্থী। যেহেতু পার্টি পার্থীর আদর্শকে সেন্সর করে না বা করতে পারে না। সেহেতু পার্টির আদর্শ বলে কিছু হয় না। নতুন নতুন পার্থীরা নতুন আদর্শ নতুন আশার আলো দেখান।
আমি আরেকটু গভীরে ব্যখ্যা করি। আসলেই আমাদের জীবন খুব কঠিন, এবং রাফ। এই জীবন আগেও কঠিন ছিল, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। স্টয়িক দর্শনের এটাই ভিত্তি।
যদিও জীবন খুবই কঠিন, এবং সেটাই বাস্তব- সেই ভাবে ভেবে গেলে কিন্ত আবার বাঁচার ইচ্ছাটাই চলে যাবে। মানুষ সব সময় বেঁচে থাকে সামনে ভাল দিন দেখবে বলে। প্যারাডক্স এটাই, সেই ভাল দিন আর আসে না। কিন্ত অতীতের দিন গুলো যা তখন মনে হত খারাপ, কত কঠিন, তার স্মৃতি চারনেই মানুষ বোঝে সেই দিনগুলি হয়ত ভালোই ছিল।
সেইজন্যে গণতন্ত্রে স্টয়িক দর্শন চলে না। আসলে মানুষযে এত গান শোনে, সিনেমা দেখে- এর একটাই কারন। এই কঠিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য দরকার "আশা" বা "হোপ"। Light at the end of the tunnel. সেই জন্য সব গণতন্ত্রেই প্রতিটা পার্টি দাবি করে , সাধারনের দুর্দশার জন্য অন্য পার্টি দায়ী আর তারাই "হোপ"-তারাই ভবিষ্যতের আশা।
মানুষও এই ভাবেই ভাবতে ভালবাসে। ফলে ভারতের গণতন্ত্রে ক্ষমতাশীল দলগুলি বা যারা আগে ক্ষমতায় ছিল-তারা যদি নতুন মুখ, নতুন ফর্মে নিজেদের রিনোভেট না করে, তাদের প্রতিশ্রুতিতে কেউ বিশ্বাস করবে না। এখানেই বাংলার রাজনীতিতে বাম এবং কংগ্রেস ব্যর্থ সম্পূর্ন। তৃনমূল পিকে কে এনে কিছুটা রিনোভেশন করেছে। সবটা না। বিজেপির রিনোভেশনের দরকার এখনো পড়ে নি যেহেতু বাংলায় তারা নতুন এবং ডেমোগ্রাফিক এনেক্সজাইটি তাদের ফেবারে। কিন্ত আস্তে আস্তে তাদের হিন্দুত্ববাদের এপিল ও ফিকে হবে। যেমন বামেদের গরিব দরদি এপিলে এখন লোকহাঁসাহাসি ছাড়া কিছু পাওয়ার নেই।
মোদ্দা কথা স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং জনগন সেই স্বপ্নে বিশ্বাস করবে। এই ভাবেই চলে গণতন্ত্র। মোদি স্বপ্ন দেখাতে ওস্তাদ এবং তার জন্যেই ক্ষমতায়। কিন্ত যত দিন যাবে লোকে স্বপ্ন এবং স্বপ্নদোষের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হবে। এটাও সব পার্টিকেই মাথায় রাখতে হবে।
আসলে আমরা ব্যর্থ রাজনীতির ভিক্টিম- এটা ভেবে শান্তনা পাওয়া যায় যে আমাদের দুর্দশা, কঠিন জীবনের জন্য অন্য কেউ দায়ী। তাকে হটালেই স্বর্গ নেমে আসবে। এটা এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল টনিক। যা মানুষকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে । রাজনীতি সেটার প্রতিফলন মাত্র।