Saturday, August 28, 2021

প্রযুক্তির আরো ব্যবহারই সরকারকে আরো দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত করে তুলতে পারে

 আধারকার্ড যদিও কংগ্রেসজমানার মস্তিস্ক প্রসূত,  এর ফায়দা তুলেছে বিজেপি, তৃনমূল সবাই। কারন বর্তমানে সরকারের যেকোন স্কিমের টাকা স্ক্যাম ছাড়াই সাধারন মানুষের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে। একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, আজ থেকে দশ বছর আগেও "উন্নয়ন" "বিকাশ" " শিল্পায়ন" এগুলি ছিল  মূল রাজনৈতিক স্লোগান, এজেন্ডা। বর্তমানে তার জায়গায় "স্কিমে" ভরসা সবপার্টির  -সে লক্ষ্মীর ভান্ডারই হোক বা কন্যাশ্রী -বা মোদিজির জনধন যোজনা- আসলে ভোটে জিতে আসতে সবাই এখন "স্কীমের" ওপরই ভরসা রাখছে বেশী। 


  এর মূলে কিন্ত আধারকার্ডের প্রযুক্তি বিপ্লব। জনগনের কাছে টাকা সরাসরি যাওয়াটা একটা সাধারন উদাহরন কিভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ রাজনীতি, গণতন্ত্রকে বদলে দিতে পারে।  ইনফাক্ট বর্তমানে সব সরকারই স্কীমের ওপর নির্ভর করে জিততে চাইছে-এর ফলে সরকারী চাকরি আরো সংকুচিত হচ্ছে-  কারন যে সরকার মাইনের টাকা বাঁচিয়ে স্কিমের মাধ্যমে জনসাধারনের হাতে টাকা তুলে দিতে পারবে, আজকের দিনে,জেতার চান্স তারই বেশী।  কিন্ত এটার ভাল দিক হল, সরকারি চাকরি সংকোচনের জন্য, সরকার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অটোমেশন করবে।  ভারতে বর্তমানে অনেক কিছুতেই আইটির সাহায্যে অটোমেশন হয়েছে-এতে পদ্ধতি এবং পরিশেবা উন্নত -যার সুবিধা পাচ্ছে সবাই। 

আই টির সাহায্যে ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার যে সুবিধা জনগনের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছে, তারই পরের ধাপ আই ও টি প্রযুক্তি। যেখানে সেন্সর এবং ডেটা কাজে লাগিয়ে ভারতের অন্যান্য সমস্যাগুলি  যেমন খরা এবং বন্যা, যত্রতত্র আগুন লাগা্‌, জল এবং বায়ুদূষন , ট্রাফিক জ্যাম-এমন কি এই প্যান্ডেনেমিক নিয়ন্ত্রন করা-সব কিছুই সম্ভব। আর এটা তখনই সম্ভব যখন দেশের শীর্ষ কর্তারা প্রযুক্তি বা টেকনোক্রাট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসবেন।


 চীন এগুলো ভাল্ভাবে পারে কারন ওদের দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে চীনের কমিউনিস্ট পার্ট-কিন্ত পলিসি এবং মন্ত্রীত্বে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা প্রযুক্তিবিদরা।  আমেরিকাতেও প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিদের নিয়োগ করেন, যারা সেই ফিল্ডের সেরা লোক। 


 ভারতের একটা সংবিধানগত সমস্যা আছে এই ব্যপারে। ভারতে মন্ত্রীরা আসছে রাজনৈতিক পার্টি থেকে। রাজনীতি তাদের কেরিয়ার। আর তাদের আন্ডারে সেক্রেটারীরা আই এ এস।  ফলে ভারত সরকারের বা রাজ্যসরকারের "এক্সিকিউশন" লেয়ারে ইঞ্জিনিয়ারিং নেতৃত্ব ব্যতিক্রম। যেখানে চীনের সুবিধা হচ্ছে  তাদের অধিকাংশ মন্ত্রীরাই সেরা টেকনোক্রাট ও বটে। 


 তবে আশার কথা এই যে, ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যসরকার , প্রযুক্তির গুরুত্ব একটা লেভেলে বুঝেছেন। এবং কিছুকিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার থেকেও ভাল কাজ হয়েছে। কিন্ত এখন এটাকে সেকেন্ড লেভেলে, অর্থাৎ আই টি থেকে আ ও টিতে নিয়ে যেতে হবে। 

 যেমন ফায়ার সেফটি ইন্সপেক্টর রেখে কোন লাভ নেই-ঘুঁষের রাজত্ব। সেখানে সেন্সর বেসড ট্রাকিং সিস্টেম করলে, আগুন লাগা অনেক কমে যাবে।  দূষন মুক্ত হওয়ার জন্যও ফ্যাক্টরিতে সরাসরি সেন্সর বসানো যায় যার ডেটা সরকারে চলে যাবে। ইন্টারেস্টিং ব্যপার হল এই ধরনের উদ্যোগ মোদি সরকার প্রথমবার সরকার আসার সময় শুরু করেছিলেন। কিন্ত তারপর দিল্লীর বুরোক্রাটদের চাপে সব বন্ধ হয়- কারন সেক্ষেত্রে দিল্লীতে ঘুঁশের টাকা আসা বন্ধ হয়ে যেত। যেকোন কারনেই হোক, এসব নিয়ে আর কথা বলে না। 

তবে আমি আশাবাদি এসব কিছুই ভারতে একদিন হবে। দুর্নীতি লবি যারা এসবে বাধা দিচ্ছে, তাদেরকে পিছনে ফেলার সদিচ্ছা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের থাকবে। এর উদাহরন আধার কার্ড- যেখানে আজ সরকারের সদিচ্ছার জন্যই অনেক দুর্নীতি বন্ধ। 



Monday, May 17, 2021

সিবিয়াই, রাজ্যপুলিশ-এরা কি শুধু শাসকের লেঠেল হয়েই থাকবে? ভারতের সংবিধান এত দুর্বল কেন?

 তীব্র কোভিড প্যান্ডেমিকের মধ্যে ছবছরের পুরাতন নারদা স্টিং কেলেঙ্কারির প্যান্ডোরা বাক্স খুলে আবার গ্রেফতারি-তাও তৃনমূলের নেতাদের সিলেক্টিভ গ্রেফতারি -সবার প্রথমেই যে প্রশ্নকে সামনে আনবে-- ভারতে সংবিধান বলে কিছু আছে? নাকি বিজেপিই তা উঠিয়ে দিয়েছে? নাকি সংবিধানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই বিজেপি সিবিয়াইকে পোষাকুত্তার মতন বিরোধিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে?? 

কেসটা যদি শুধু এই হত যে বিজেপি তার রাজনৈতিক চাল হিসাবে বিরোধিদের হ্যারাস করতে নেমেছে-বাংলায় ৩৫৬ নামাতে চাইছে-তাহলে আমার এত মাথব্যাথা হত না। কারন বাংলায় বিজেপির এখনো কোন শক্ত বেস নেই। এই ধরনের হনুমানের লেজে আগুন দিয়ে লাফাতে থাকলে, তাদের ৭৫ টা সিট ,  সিপিএমের মতন পরের নির্বাচনে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। আমার চিন্তা হচ্ছে এই কারনে যে ভারতের সংবিধান এতই দুর্বল, যে তাদিয়ে দিল্লী একটি প্রদেশিক সরকারকে এতটা হেনস্থা করতে পারে। বিজেপি চাইলেও মুসোলিনী বা হাসিনা লেভেলের স্বৈরতন্ত্রও ভারতে কায়েম করতে পারবে না। কারন বিজেপির স্টিয়ারিং হুইল আছে ক্যাপিটালিস্টদের হাতে। ভারতের ক্যাপিটালিস্ট ক্লাস নিজেদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থেই , বিরোধি বাঁচিয়ে রাখবে। নইলে পলিটিক্যাল ক্লাসের কাছে তাদের নিজেদের মৃত্যু অবধারিত-যেটা চীনে তারা দেখছে। সুতরাং বিজেপির ফ্যাসিজিম একটা লিমিট পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্ত এই যদি সিপিএম বা অন্যকোন কমিনিউস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসত, তাহলে ভারতের সংবিধানকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই একপার্টিতন্ত্র চালু করতে পারে। এটা আরো বেশী ভয়ের। 

কেন লিখছি ভারতের সংবিধান সম্পূর্ন ডিফাংক্ট গণতন্ত্রকে নিরাপত্তা দিতে? 

তাহলে প্রথম থেকেই দেখুন। ভারতের এম এল এ, এম পিদের বিরুদ্ধে ক্রিমিন্যাল কেস আনতে গেলে সংবিধান কি বলে?  যে কাউকে বলুন। সবাই বলবে কেন? সংবিধানের ১০৫ নাম্বার আর্টিকেলের তিনটে অনুচ্ছেদে তা লেখা আছে! ভাল, আসুন আমরা দেখি ভারতের সংবিধান কি বলেছে 

"Article 105 in The Constitution Of India 1949

105. Powers, privileges, etc of the Houses of Parliament and of the members and committees thereof
(1) Subject to the provisions of this constitution and the rules and standing orders regulating the procedure of Parliament, there shall be freedom of speech in Parliament
(2) No member of Parliament shall be liable to any proceedings in any court in respect of anything said or any vote given by him in Parliament or any committee thereof, and no person shall be so liable in respect of the publication by or under the authority of either House of Parliament of any report, paper, votes or proceedings
(3) In other respects, the powers, privileges and immunities of each House of Parliament, and of the members and the committees of each House, shall be such as may from time to time be defined by Parliament by law, and, until so defined shall be those of that House and of its members and committees immediately before the coming into force of Section 15 of the Constitution (Forty fourth Amendment) Act 1978
(4) The provisions of clauses ( 1 ), ( 2 ) and ( 3 ) shall apply in relation to persons who by virtue of this constitution have the right to speak in, and otherwise to take part in the proceedings of, a House of Parliament or any committee thereof as they apply in relation to members of Parliament"

এগুলি এত জটিল ভাবে লেখা, এদের জন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ লাগে। কিন্ত দুচারবার রিডিং দিলেই জিস্টটা বুঝতে পারবেন 
    (১) এম এল এ বা এম পিদের সুরক্ষা আলাদা কিছু নেই -সবাই একই আর্টিকলে সুরক্ষিত
    (২)  এই সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে পলিটিক্যাল এক্টিভিটির জন্য- স্পিচ, রাইটিং, ভোটিং। মোটেও কোন  ক্রিমিন্যাল কেসে সুরক্ষা দেওয়া হয় নি। নারদার কেস একটা প্রেটি ক্রিমিন্যাল কেস। এই কেসে মোটেও কোন আইনি সুরক্ষা কোন এম এল এ এম পি দের নেই। সুতরাং তৃনমূলের দাবী যে সি বি আই বিধান সভার স্পিকারের অনুমতি নেয় নি, তা কোর্টে টিকবে না। আবার বিজেপির দাবীযে সিবিয়াই শুভেন্দুকে বা মুকুলকে গ্রেফতার করতে পারে নি তার কারন, রাজ্যসভা বা লোকসভার স্পীকারের অনুমতি লাগবে, তাও বুলশিট। সিধা কথা হচ্ছে সিবিয়াই বা রাজ্যের পুলিশ ইচ্ছা করলেই এদের সবাইকেই গ্রেফতার করতে পারে ইনভেস্টিগেশনের জন্য। ইনফ্যাক্ট সংবিধান অনুসারে রাজ্য পুলিশের আরো বেশী ক্ষমতা আছে এই গ্রেফতারি করার জন্য। সিবিয়াই এর যা নেই। সুতরাং রাজ্য পুলিশ যদি পালটা হিসাবে শুভেন্দু বা মুকুলকে গ্রেফতার করে, তাও সংবিধান সম্মত। 
   (৩) আরো কিছু বিশেষ সুবিধা চাইলে, ভারতের পার্লামেন্ট তা আইন করে আনতে পারে। মুশকিল হচ্ছে ১৯৭৮ সালে এমন শুধু একটাই এমেন্ডমেন্ট হয়েছে- যাতে করে যদি কোন মেম্বার ঘুশ খেয়ে ভোট দেয়-তাহলে তার বিরুদ্ধে স্পিকার ক্রিমিন্যাল প্রসিডিং শুরু করতে পারে-তার পদ বাতিল করতে পারে। এর বেশী কোন সুবিধা ভারতের কোন এম এল এ বা এম পিকে দেওয়া হয় নি। স্পিকারের অনুমতি শুধু ওই একটি ক্রিমিন্যাল একশনের জন্যেই লাগে! 
  ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্ট এম এল এ , এম পিদের গ্রেফতারের সময় বারে বারে  এই ১০৫ এর ইন্টারপ্রেটেশনেই এসেছেন। 
 এবার দেখুন ভারতের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড ঃ মধুসুধন রাও, এই আর্টিকল ১০৫ নিয়ে কি বলছেন। উনার এই পেপারটা পড়লে আপনারা ১০৫ আর্টিকলের নানান প্রয়োগ নিয়ে ডিটেলসে জানতে পারবেন 


 তাহলে রাজ্যপালের অনুমতি?  ওটা টোটাল  সিবিয়াই আইওয়াশ বুলশিট-  যাতে শুভেন্দু এবং মুকুলকে গ্রেফতারি কেন করে নি তার জন্য একটা এক্সকিউজ হাজির করা যায়!    কোন ক্রিমিন্যাল কেসে এম এল এ এম পিদের গ্রেফতার করতে রাজ্য পুলিশ বা সিবিয়াই এর কারুর পারমিশন দরকার নেই০সেটা আর্টিকল ১০৫ এবং এখনো পর্যন্ত এই নিয়ে যত সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্টের রায় এসেছে তাতেই স্পষ্ট! 

 তাহলে বুধবারে হাইকোর্টে কি হবে? কেস দু তিন মাস ঝুলে যাবে। 
 টাকা নিলেই ক্রাইম প্রমান হয় না।  প্রিভেনশন অব কোরাপশন এক্টে -টাকা নিয়ে কোরাপ্টশনটাও করতে হয়।   এখানে এক্ট অব কোরাপশন অব্দি কেস গড়ায় নি।  এক্ট অব ক্রাইম শুধু টাকা নিলেই হয় না- এটা আইনের খুব সাধারন বেসিক।     সুতরাং শুধু শুধু ইচ্ছাকৃত ভাবে কোলকাতাকে বাংলাকে জ্বালানোর জন্য বিজেপির সি বি আই এই শো দিচ্ছে। যাতে তৃনমূলের লোকজন আইন শৃঙ্খলা ভাংলে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করার সুযোগ পায়। সেটা আল্টিমেট স্টুপিডিটি-কারন তার পরের নির্বাচনে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

মাঝখান থেকে লস সাধারন মানুষের। মদন মিত্র একমাত্র লোক যিনি বেসরকারি হাসপাতালের ডাকাতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। ফিরহাদ হাকিম এই কোভিড পরিস্থিতিতে কোলকাতাকে হৃদয়হীন দিল্লী হতে দেন নি।  শোভন বাবু রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বান্ধবীর সাথে নিভৃতে সময় কাটাচ্ছিলেন। উনি বহুদিন থেকেই প্রেমে আছেন, রাজনীতিতে নেই। তাকেও বেড্রুম থেকে খামোকা জেলে টানা হল। জনগণ সবই দেখছে। আমি খুব অবাক হব না, বিজেপির একগাদা এম এল এ, নেতা এই ঘটনায় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৃনমূলে না জয়েন করে। তারাও বুঝতে পারছে, দিল্লীর ভরসায় থাকলে, তাদের পলিটিক্যাল কেরিয়ার মায়ের ভোগে! 

দিল্লী থেকে রাজ্য শাসন করার খোয়াব গান্ধী ফ্যামিলির ছিল। ইন্দিরা গান্ধী নেহেরু এসব আগে করেছেন। কিন্ত তা সফল হয় নি। কারন ভারত বহুভাষা বহুসংস্কৃতির দেশ। ঐতিহাসিক ভাবে বাংলা, তামিলনাডু এগুলো ইউরোপের মতন আলাদা দেশ হওয়ার কথা।  হয় নি কারন বৃটিশরাজ এবং তাদের কলোনিয়াল শাসন। দুর্ভাগ্য এই যে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় সেই কলোনিয়াল শাসনের কাঠামো ১০০% অক্ষত রেখেছে- যার উদাহরন গর্ভনর, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি।  যে কোন গণতন্ত্রে ওই পোষ্টগুলো স্থানীয় ভোটে নির্বাচিত হওয়া উচিত-দিল্লী থেকে চাপালে, সেখানে দিল্লীর উপনিবেশিক শাসনের দিনই ফিরে আসবে। এবং সেই ক্যান্সারই আস্তে আস্তে বাড়ছে। রাজনৈতিক সংস্কার করে, এই পদগুলি, আমেরিকার মতন নির্বাচন ভিত্তিক করে দেওয়া হোক।   দিল্লীর ইচ্ছা গর্ভনরের মাধ্যমে জোর করে চাপালে, প্রতিরোধ হবেই- মমতা ব্যানার্জির মতন প্রতিবাদি শক্তি উঠে আসবেই। 
কিন্ত তারও আগে সিবিয়াই এবং রাজ্যপুলিশের সংস্কার দরকার। এদের এটর্নি জেনারেলের হাতে দেওয়া হোক। যেমন সব উন্নত গণতন্ত্রে হয়। ভারত ব্যতিক্রম এবং বৃটিশ কলোনিয়াল পুলিশ আইন এখনো চলছে। যা তৈরী হয়েছিল ভারতকে শোষন এং দমন করতে।  ১৯০৯ সালের পুলিশ আইন এখনো কোন নেতা, কোন পার্টি সংস্কার করতে ইচ্ছুক না। কেন? কেননা এই বৃটিশ পুলিশ আইনই নেতাদের ক্ষমতা এবং দুর্নীতির উৎস। কে আর নিজেদের ডানা ছাঁটতে চাইবে?  অত বোকা লোকেরা রাজনীতিতে আসে না। 





Tuesday, April 27, 2021

আরো কিছু ভ্যাক্সিন বিরোধি অপপ্রচারের উত্তর


১.ভ্যাক্সিন কোম্পানি গুলি ইমারজেন্সি এপ্রুভালের জন্য যে ডেটা জমা দিয়েছে তার মধ্যে তারা যে Vaccine Enhanced Disease এর সমস্যা দূর করেছে - এই ডাটা খুঁজে এনে দিন >>ভ্যাক্সিন এনহান্সড ডিসিজ কাকে বলে? ওই বলে কিছু নেই। সম্ভবত ভ্যাক্সিন এসোসিয়েটেড এনহান্সড ডিসিজের ( VAED) কথা এরা বলছেন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা কি বলছে দেখুন। যেখানে ভাইরাসের বয়সই মাত্র ১৫ মাস এবং সার্স-কোভিড-২ এর এনহান্সড ডিজিসই সম্পূর্ন বোধগোম্য না, সেখানে মাত্র আট্মাসে ভ্যাক্সিনের VAED বোঝা অসম্ভব। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7901381/#:~:text=Vaccine%2Dassociated%20enhanced%20diseases%20(VAED,vaccination%20for%20the%20same%20pathogen.

এই ধরনের আলোচনা ফালতু ! দুটো কারন। প্রথমত যারা এই করোনা থেকে অসুস্থ হচ্ছে, খুব সিরিয়াস লেভেলের অসুস্থ হচ্ছে, তাদের এনহান্সড ডিজিসের জন্য ক্ষতি ভ্যাক্সিন এর জন্য যেটুকু হবে, তার থেকে অনেক অনেক বেশী হবে। এটা খুব সাধারন বাচ্চা যে বায়লজির এবিসিডি বোঝে সেও বুঝবে। মুশকিল হচ্ছে সার্স কোভিডের ক্ষেত্রে সেই ধরনের এভিডেন্সই নেই!
দ্বিতীয়টা হচ্ছে এন্টিবডি ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেন্ট কোভিড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না -কেন হবে না সেটাও বিজ্ঞানীরা ব্যখ্যা করছেন https://www.medpagetoday.com/special-reports/exclusives/91648 "From the early stages of COVID-19 vaccine development, scientists sought to target a SARS-CoV-2 protein that was least likely to cause ADE. For example, when they found out that targeting the nucleoprotein of SARS-CoV-2 might cause ADE, they quickly abandoned that approach. The safest route seemed to be targeting the S2 subunit of the spike protein, and they ran with that, wrote Derek Lowe, PhD, in his Science Translational Medicine blog "In the Pipeline." Scientists designed animal studies to look for ADE. They looked for it in human trials, and they've been looking for it in the real-world data for COVID-19 vaccines with emergency use authorization. So far, they haven't seen signs of it. In fact, the opposite is happening, Lowe noted." "Current COVID-19 vaccines were developed to protect against the original strain of SARS-CoV-2 that became dominant worldwide. As more variants arise, scientists have raised questions about whether one of these could become different enough to cause ADE. So far, that concern seems to be hypothetical, according to Lichty. "To date, there's really no evidence of ADE with the COVID-19 vaccines. It's all theoretical," he said. "I think all the evidence so far is that ADE is not turning out to be a problem with any existing vaccines or viral variants." One reason could be that SARS-CoV-2 just may not affect macrophages in a way that can produce ADE, although scientists are still working out the details. ADE has been reported after natural infection with other viruses, such as HIV, Ebola, and coxsackievirus, as well as other coronaviruses like SARS and MERS. Throughout the pandemic, scientists have been looking for ADE associated with SARS-CoV-2, but so far they haven't found any cases of it, noted Lichty." সোজা বাংলায় বললে ভ্যাক্সিন বিরোধিরা এখান ওখান থেকে টুকে ঝাড়ছেন। বিজ্ঞানের বেসিক বলে কিছু আছে!! এগুলো না জানলে আপনি নিজেও বিভ্রান্ত হবেন, অন্যরা যারা অধিকাংশই এসব কিছু বোঝে না, তারা আরো বিভ্রান্ত হবে। ২. যারা ১৮বছরের নিচে এবং ৫৫ বছরের ওপরে তাদের ওপর ভ্যাক্সিন প্রয়োগের এফিকেসি এবং।নিরাপত্তা জনিত ডাটা দিন। >> কোভিড এপিডেমিক যখন শুরু হয়, অরিজিনাল স্ট্রেইন বাচ্চাদের জন্য খতরনাক ছিল না, ফলে স্টাডি ডিজাইনে বাচ্চাদের নেওয়া হয় নি। কিন্ত ৭৫ বছর পর্যন্ত বয়স্করা ছিল। আমি নিজেই এই ডিজাইনের অংশ। আপনি সব ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেই এই ডেটা পাবেন। মর্ডনার ক্ষেত্রে এফ ডি এর ডেটা দিচ্ছি e efficacy study was a randomized Phase 3 observer-blind clinical trial in which the efficacy was determined on 28,207 participants ages ≥ 18 years who received 2 doses a month apart where 14,134 received the vaccine and 14,073 received the placebo (2, 3). The %efficacy for participants ages 18 to < 65 years was calculated to be 95.6% while for ages ≥ 65 years was 86.4% (3, 4). https://www.bmj.com/content/372/bmj.n74/rr-7 এগুলো যে কেউ গুগুল করলেই পেয়ে যাবে। খুবই বেসিক। ৩.প্রেগন্যান্ট এবং ল্যাকিটেটিং মায়েদের ওপর এফিকেসি এবং নিরাপত্তা জনিত ডাটা দিন >> প্রেগনান্ট মেয়েদের জন্য ফাইজার এবং মর্ডানা সম্পূর্ন সেফ ঃ ভ্যাক্সিন যখন ছাড়া হয়, তখন শুধু এনিমাল ট্রায়ালের ডেটা ছিল https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/vaccines/recommendations/pregnancy.html কিন্ত বর্তমানে ফিল্ড ডেটাও আসছে "The research team studied a group of 131 women who received the Pfizer or Moderna vaccine, including 84 pregnant, 31 breastfeeding and 16 non-pregnant women. All three groups had similar high antibody levels. The study also found no significant differences in vaccine side effects between pregnant and non-pregnant women." https://www.webmd.com/vaccines/covid-19-vaccine/news/20210328/pfizer-moderna-covid-vaccines-safe-for-pregnant-women একজন মহিলা প্রেগনান্ট অবস্থায় কোভিড আক্রান্ত হলে, খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়বেন। তার সন্তানের লং টার্ম ডিসাবিলিটি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সুতরাং প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সবার আগে ভ্যাক্সিনেটেড করা উচিত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইনারা , আবার কিছুই না জেনে, ভয় ছড়াচ্ছেন, তাতে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের সমূহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। ৪. অটো ইমিউন কন্ডিশনের ক্ষেত্রে কি হবে তার ডেটা দিন। ৫. ইমিউন কম্প্রোমাইজড ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিন কি প্রভাব ফেলিবে তার ডেটা দিন। >> পৃথিবীর কোন ভ্যাক্সিন ট্রায়ালেই অটোইমিউন বা ইমিউন সাপ্রেসড পেশেন্টদের ধরা হয় না। সেক্ষেত্রেও হয় নি। কিন্ত ফিল্ড ডেটা যেটুকু পাওয়া গেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সিডিসি বলছে "Immunocompromised people can receive COVID-19 vaccination. Data are currently insufficient to inform optimal timing of COVID-19 vaccination among people who are planning to receive immunosuppressive therapies. However, based on general best practices for vaccination of immunocompromised people, ideally COVID-19 vaccination should be completed at least two weeks before initiation of immunosuppressive therapies. When it is not possible to administer a complete COVID-19 vaccine series (i.e., two doses of an mRNA vaccine or a single dose of Janssen COVID-19 vaccine) in advance, people on immunosuppressive therapy can still receive COVID-19 vaccination. Decisions to delay immunosuppressive therapy to complete COVID-19 vaccination should consider the person’s risks related to their underlying conditio" Immunocompromised people can receive COVID-19 vaccination. Data are currently insufficient to inform optimal timing of COVID-19 vaccination among people who are planning to receive immunosuppressive therapies. However, based on general best practices for vaccination of immunocompromised people, ideally COVID-19 vaccination should be completed at least two weeks before initiation of immunosuppressive therapies. When it is not possible to administer a complete COVID-19 vaccine series (i.e., two doses of an mRNA vaccine or a single dose of Janssen COVID-19 vaccine) in advance, people on immunosuppressive therapy can still receive COVID-19 vaccination. Decisions to delay immunosuppressive therapy to complete COVID-19 vaccination should consider the person’s risks related to their underlying conditio https://www.cdc.gov/vaccines/covid-19/info-by-product/clinical-considerations.html#:~:text=Immunocompromised%20people%20can%20receive%20COVID,to%20receive%20immunosuppressive%20therapies. ৬.ভ্যাক্সিন প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা পুনরায় ভাইরাস ছড়াবে কি না, তার ডেটা দিন >> খুব সাধারন বায়োলজিও বলে দেবে, ভ্যাক্সিন প্রাপ্ত লোকেরা যে ভাইরাস ছড়াবে তার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্ত ডেটা? কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিল মাস থেকে এই ব্যাপারে বিশদ এক স্টাডি শুরু হয়েছে। কিন্ত অনেক ছোট ছোট স্টাডিতেও এটা ধরা পড়েছে-পরে নিন https://www.krqe.com/health/cdc-evidence-suggests-fully-vaccinated-people-do-not-transmit-covid-19/ ৭.এই ভ্যাক্সিন কোভিড আক্রান্ত মানুষের মৃত্যহার কমাবে কিনা তার ডেটা দিন >> এটা নিয়ে অভিজিত ,আমি অনেক পোষ্ট দিয়েছি। প্রচুর তথ্য সব দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। ইস্রায়েল সব চেয়ে ভাল উদাহরন। ভ্যাক্সিন মৃত্যুহার শুধু কমাবেই না, অন্তত ৯৯% কোভিডের মৃত্যুহার কমাবে। এগুলো ইনারা পড়েন নি এবং না পড়ে বিভ্রান্তের মতন ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, এটাই হতাশার।
৮. এই ভ্যাক্সিন নেওয়ার কতদিন অবধি প্রোটেকশন থাকবে তার ডেটা দিন। >> এই ডেটা কারুর কাছেই নেই। কারন এখনো এর পরীক্ষা চলছে। আমি নিজেই সাবজেক্ট। প্রতি তিন মাসে ব্লাড দিচ্ছি। মর্ডানা দেখছে এন্টিবডি কিভাবে কমছে। কিন্ত আপাতত বোঝা যাচ্ছে নুন্যতম ১/২-২ বছর থাকবয়ে। https://www.healthline.com/health-news/long-haul-covid-19-may-be-a-public-health-crisis-after-the-pandemic https://nymag.com/intelligencer/2021/04/how-long-does-the-covid-vaccine-last.html **** । আর কোলকাতারর কিছু ডাক্তার যারা ভ্যাক্সিনের বিরোধিতা করছে, তাদের বায়োলজির দশা দেখে বুঝতে পারছি না, এরা কি মানুষ মারার ডাক্তার? এদের লাইসেন্স দেয় কে?

Sunday, April 25, 2021

ভ্যাক্সিন সম্পূর্ন নিরাপদ- ভ্যাক্সিন বিরোধিদের প্রচারে ভুলে নিজের এবং দেশের ক্ষতি করবেন না

 

ভ্যাক্সিন সম্পূর্ন নিরাপদ- ভ্যাক্সিন বিরোধিদের প্রচারে ভুলে নিজের এবং দেশের ক্ষতি করবেন না

   বিপ্লব পাল  ৪/২৫/২০২১

গোটা পৃথিবীজুরে বিশেষত আমেরিকা এবং পশ্চিম বাংলায় একগুচ্ছের পন্ডিত লোক তৈরী হয়েছে, যারা ফেসবুকে রটিয়ে বেড়াচ্ছে- ভ্যাক্সিন নেওয়া আনসেফ। ভ্যাক্সিন নিলে অসুস্থ হতে পারেন। ভ্যাক্সিন মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীর উচ্চলাভের চক্রান্ত।  ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরেও প্রচুর লোকে কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে-তাহলে ভ্যাক্সিন নিয়ে লাভ কি? ভাইরাস দ্রুত মিউটেট করছে। তাহলে ভ্যাক্সিন নিয়ে কি লাভ?  ভ্যাক্সিন নিলে যৌনক্ষমতা কমে যাবে। ভ্যাক্সিন তৈরী করা কোম্পানীগুলিকে বিশ্বাস করা যায় না। ইত্যাদি ইত্যাদি। নানান ধরনের গুজব চারিদিকে ছড়াচ্ছে। আমি এই লেখায় ভ্যাক্সিন বিরোধি সমস্ত যুক্তিগুলিকে একত্র করে একে একে উত্তর দিচ্ছি

 

(১)    ভ্যাক্সিন নেওয়া আনসেফ। ইউরোপে এস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড স্থগিত। আমেরিকাতে জনসন এন্ড জনসনের ভ্যাক্সিন বাজারে ছেড়েও স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ফাইজার এবং মর্ডানা ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরেও প্রচুর লোক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  তাই ভাই নিয়ে কাজ নেই। আমার শরীরে কি হবে কে জানে!”

 -এবার আসুন গভীরে গিয়ে দেখি আসলে কি হচ্ছে।

ভেক্টর বাহিত ভ্যাক্সিন যেমন কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড বা জনসন এন্ড জনসনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ব্লাড ক্লটিং হতে পারে ( থ্রম্বসিস)। কিন্ত এটা হচ্ছে ৪০ বছরের নিচের মহিলাদের। অর্থাৎ যারা রিপ্রোডাক্টিভ এজের। এরপরেও এই সংখ্যাটা কম। জনসন এন্ড জনসনের ক্ষেত্রে ছ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে ৬০ লাখের মধ্যে। এস্ট্রাজেনেকার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৭৯ , দুই কোটির মধ্যে। অর্থাৎ ১০ লাখে একজনের কম।

এটি নতুন কিছু না। কারন করোনা হলে, চল্লিশের নীচের মেয়েদের ব্লাড ক্লটিং এর সমস্যা আরো বেশী হয়। এডিনোভাইরাসে তৈরী সব ভ্যাক্সিনে এই সমস্যা থাকে যাদের অটোইমিউন ডিজিজ থাকে। এটি বহুদিন থেকেই জ্ঞাত তথ্য।

এবারে ভেবে দেখুন।  ভ্যাক্সিন না নিলে করোনা হওয়ার চান্স ১০০০ এর মধ্যে এক। শহরের ঘিঞ্জিতে থাকলে ১/১০০, কি ১/০।  আর নিলে,- শুধু ৪০ এর নীচের মহিলাদের ক্ষেত্রে ১ লাখে ১ জন। পুরুষ হলে চান্স নেই।  এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন। ভ্যাক্সিন না নিয়ে,   ১০০জনের মধ্যে একজন হয়ে করোনাতে ভুগবেন?   না, ভ্যাক্সিন নিয়ে ১০ লাখে একজন হওয়ার চান্স নেবেন [ তাও মহিলা হলে] ?

 মডার্না বা ফাইজারে কোন থ্রম্বসিস সমস্যা নেই। কিন্ত যাদের একিউট এলার্জি কন্ডিশন আছে, তাদের খুব বাজে রিয়াকশন হয়। কিন্ত কজন? ফাইজারের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ লাখে ৪ জন। মর্ডানার ক্ষেত্রে ১০ লাখে ২ জন। যাদের খুব বাজে এলার্জি হয়, তাদের ভ্যাক্সিন নেওয়ার দরকার নেই। একটা দেশের ৮০% মানুষ ভ্যাক্সিনেটেড হলেই প্যান্ডেমিক ঠেকানো যাবে।

 

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সব ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বর্তমান ভ্যাক্সিন মোটে আট্মাসে তৈরী হয়েছে। সুতরাং অনেক ক্ষেত্রেই সব সেফটি ডেটা হাতে আসে নি। কিন্ত যেটুকু এফ ডি এ পেয়েছে, তা যথেষ্ট বাজারে মার্কেটজাত করার জন্য। এরপরও এফ ডি এ কন্টিনিউয়াস মনিটরিং চালাচ্ছে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ধরুন আপনি ভ্যাক্সিন নিয়েছেন। কিন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে আপনি জানাতেই পারবেন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ( এর নাম ভারস )।

VAERS | Vaccine Safety | CDC

 

এখনো পর্যন্ত যা ডেটা আসছে-তাতে ওই ১০ লাখে একজনের এলার্জিক রিয়াকশন বা থ্রম্বোসিস বা ব্লাড ক্লটিং ( ভেক্টর ভ্যাক্সিন অর্থাৎ কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে বা কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে)। এর বেশী কিছু নেই।

 (২) “ আমি যদি ভ্যাক্সিন না নিই সরকার কি করতে পারে?”  -হ্যা, গণতান্ত্রিক দেশে সরকার আপনাকে ভ্যাক্সিন না নেওয়ার জন্য চীনের মতন জেলে পাঠাতে পারবে না বটে-কিন্ত সব দেশেই ভ্যাক্সিনের ওপর ভিত্তি করে পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন চালু থাকে। যেমন আমেরিকাতে বাচ্চাদের ভ্যাক্সিনেশন না হলে তাদের স্কুলে বা কোন স্পোর্টস ক্লাবে নেবে না। আমেরিকাতে বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট চালু হচ্ছে। ভারতেও ৫০% ভ্যাক্সিনেশন হলে, সেই দিকে এগোবে। এই পাসপোর্টের উদ্দেশ্য যেসব রেস্টুরেন্ট বিজনেস অফিস ফ্যাক্টরি – তারা ভ্যাক্সিনেটেড লোক ছাড়া অফিসে বা ব্যাঙ্কে ঢুকতেই দেবে না। প্লেনে উঠতে দেবে না। এগুলো আস্তে আস্তে চলে আসবে যদি আমরা একটা দীর্ঘ লং টেইল  প্যান্ডেমিকের মধ্যে ঢুকি। এবং সেই দিকেই আমরা এগোচ্ছি। সুতরাং ভ্যাক্সিন না নিলে আপনাকে ব্যাঙ্ক, প্লেইন, ট্রেইন, অফিস, মল, দোকান অনেক জায়গাতেই এরপরে ঢুকতে দেবে না।

কারন ভ্যাক্সিন না নিলে, আপনি ভাইরাসের বাহক হিসাবে আরো বেশী দক্ষ। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরেও আপনি ভাইরাস ট্রান্সমিট করতে পারেন। সম্ভাবনা কম। অনেক কম।

 

 সুতরাং সুযোগ পেলেই ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন।

 

(৩) “ভ্যাক্সিন কাজ করছে না। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরেও প্রচুর লোকের করোনা হচ্ছে। তাহলে খামোকা রিস্ক নিতে যাব কেন?” –

 -এখনো পর্যন্ত সব ডেটা সামারি-

     ভারতে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ভ্যাক্সিন নেওয়া সত্ত্বেও ২৪,০০০ জন লোকের কোভিড পজিটিভ এসেছে। কিন্ত মনে রাখতে হবে ভারতে ১০ কোটি লোক একটি ডোজ হলেও টীকা নিয়েছে। সুতরাং সংখ্যাটা ২৪,০০০/১০ কোটি বা এক লাখে মোটে ২৪জন।

অর্থাৎ ভ্যাক্সিন যারা নিচ্ছে তাদের মধ্যে ১ লাখে ২৪জন ইনফেক্টেড হচ্ছে।

আর ভ্যাক্সিন না নিলে সংখ্যাটা এক লাখে ১০০০ জন ( ৯০০জনের কাছাকাছি)।

 গ্লোবাল ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে, ভ্যাক্সিন না নিলে, ১০০০ জনে জন ইনফেক্টেড হচ্ছে ( রাফ এস্টিমেট) , আর ইনফেক্টেড লোকেদের ১০% হাসপাতালে যাচ্ছে।

 

ভ্যাক্সিন নিলে,  সিঙ্গল ডোজের ক্ষেত্রে এটি ৫০০০ জন, আর হসপিটালাইজেশন রেট  % ডবল ডোজে /১৫,০০০ এবং % অর্থাৎ সম্পূর্ন ভ্যাক্সিনেশন করলে একটি দেশ তার হসপিটালাইজেশনের পরিমান /৭৫ ভাগ কমাতে পারবে। যেটি ইস্রায়েলে হয়েছে। তাদের হসপিটালাইজেশন ৯৯% কমে গেছে। তারা অফিশিয়ালি মুক্ত প্যান্ডেমিক থেকে।

 

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ভ্যাক্সিনের জন্য একটা দেশ করোনা মুক্ত হতে পারে। এবং তার জন্য এটিও সত্য কিছু লোকের মৃত্যু হতে পারে-কিছু লোকের সাইড এফেক্ট হতেই পারে। কিন্ত সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে তার সংখ্যা ভাইরাসের জন্য যা মৃত্যু হত তার /১০,০০০ ভাগ না। এটি আরো কম হবে যদি ডাক্তাররা বুঝেশুনে বা লোকজন বুঝেশুনে ভ্যাক্সিন নেয়। যাদের আগে ভ্যাক্সিন নেওয়ার সময় বিশাল এলার্জি রিয়াকশন খেয়েছে, তারা নেবে না-নেওয়া উচিত না। অসুবিধা নেই। একটা দেশের ৮০% লোক ভ্যাক্সিনেশন নিলেই দেশটি প্যান্ডেমিক মুক্ত হবে। কিছু লোক যদি মনে করে যে ভ্যাক্সিনের জন্য বাজে , খুব বাজে এলার্জি রিয়াকশন হবে ( তাদের যদি কেস হিস্ট্রি থাকে)  - তারা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।  

 

 সবাই যদি ধরে নেয় যে ভ্যাক্সিন দিলে তার ক্ষতি হতে পারে, এবং সেই জন্যে ভ্যাক্সিন যদি কেউ না নেয়-দেশটিতে মহামারী কেউ ঠেকাতে পারবে না।  সেই ক্ষেত্রে প্রতিটা লোকেরই ক্ষতি বেশী। কারন ভ্যাক্সিন নিলে তার মরার চান্স ছিল কোটিতে ১। করোনা মহামারীতে লাখে ১। সুতরাং এথিকাল প্রশ্নে চয়েস অভিয়াস-যে আমাদের ভ্যাক্সিন নেওয়া উচিত।

 

 

(৩) “ আপনি বলছেন রিস্ক সামান্য হলেও আছে। পরে আরো ভাল ভ্যাক্সিন আসবে। সেফটি ডেটাও অনেক বেশী থাকবে। তাহলে ভ্যাক্সিন দুদিন বাদে নেওয়াই ভাল। কি বলেন? “

 - নিজে স্বার্থপরের মতন চিন্তা করে দেশকে ডোবাবেন না প্লিজ। ভ্যাক্সিন শুধু আপনার নিজের সুরক্ষার জন্য না। দেশের জন্যও। কারন আপনি ভ্যাক্সিনেটেড হলে,  কোভিড-১৯ ভাইরাস ট্রান্সমিট করার সম্ভবনা কমবে ১/১০০। প্যান্ডেমিক ঠেকাতে আপনার আমার সবার, অন্তত একটা দেশের ৮০% লোকের ভ্যাক্সিনেশন করা দরকার। যেমন ইস্রায়েল করেছে। ওদের দেশের ৮০% লোক এখন ভ্যাক্সিনেটেড। ফলে হাসপাতালে করোনা পেশেন্ট ৯৯% হ্রাস পেয়েছে। ইস্রায়েল অফিসিয়ালি করোনা মুক্ত দেশ। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পেরেছে। সুতরাং আপনার ভ্যাক্সিন নেওয়ার নির্ভর করছে দেশ কত দ্রুত প্যান্ডেমিক থেকে মুক্ত হবে।

আমি আরেকটা ছোট তথ্য দিই। আগেরবার এই সময় এপ্রিল মাসেই মর্ডানার ফেজ ওয়ান ট্রায়াল শুরু হয়। আমি ভল্যুউন্টার হওয়ার জন্য আবেদন করি। মোটে ৮০ জনের দরকার ছিল। আমি চান্স পাই নি ।মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই নাকি হাজারের বেশী লোক এপ্লাই করেছিল! কেন? আপনারা হয়ত জানেন না, যারা ওই ফেজ ওয়ান ট্রায়াল নিয়েছিল, ওভারডোজের জন্য ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। একজন ৭ দিন হাসপাতালে ছিল। এরা রিস্ক নিল কেন বলুন ত? কি দরকার ছিল? এর জন্যে কেউ টাকা দেয় না। কিন্ত ওটা ছিল সামাজিক দ্বায়িত্ব। সবাই ভয় পেয়ে ট্রায়ালে পিছিয়ে আসলে, ভ্যাক্সিন তৈরী হবে কিভাবে? আমি ফেজ থ্রি ট্রায়ালে চান্স পেয়েছি এবং সেপ্টেম্বর মাসেই দুই ডোজ মর্ডানা নিয়েছি। তখন সেফটি ডেটা আসে নি এবং আমার এলার্জির হিস্ট্রি আছে। কিন্ত এটা আমার সামাজিক দ্বায়িত্ব বলে মনে হওয়াতে রিস্ক নিয়েছিলাম। ফেজ থ্রি ট্রায়ালের জন্য প্রতিবার আমাকে প্রায় ৩০ টি ব্লাড স্যাম্পল দিতে হয়েছে। ১০ মিনিট সুঁচ বিঁধিয়ে এতটা রক্ত বার বার দেওয়া খুব সুখপ্রদ অভিজ্ঞতা না। কালকেও আমাকে ব্লাড স্যাম্পল দিতে যেতে হবে। যাতে তারা টি সেল এবং এন্টিবডি কাউন্ট দেখতে পারে যে কিভাবে ভ্যাক্সিনের এফিসিয়েন্সি কমছে। এগুলো আমি করি। আরো অনেক আমেরিকানই ( প্রায় ত্রিশ হাজার মর্ডানা ভলিউন্টিয়ার)  এই পেইন টা নিচ্ছে।  কারন সবাই যদি রিস্ক এড়িয়ে যায়, ভ্যাক্সিনের ডিপ্লয়মেন্ট হবে কি করে ?

আপনি একা বেঁচে থাকতে পারেন না। সবাই বাঁচলে তবে আপনি বাঁচবেন।

 

(৪) “ ভাইরাস মিউটেট করছে দ্রুত। ভ্যাক্সিন নতুন মিউটান্টের বিরুদ্ধে এফেক্টিভ না-তাহলে ভ্যাক্সিন নিয়ে কি হবে? “

- আচ্ছা। তাহলে এটা ভাবুন। ফাইজার ভ্যাক্সিন ব্রাজিলিয়ান এবং বৃটিশ ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে এফেক্টিভ। কিন্ত সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে না।

এখানে আপনাকে যেটা জানতে হবে একটা নতুন ডেঞ্জারেস মিউটান্ট এফেক্টিভ হতে ৩-৫ মাস সময় নেয়। এই জন্যে ফ্ল ভ্যাক্সিনের সময় গোটা দেশকে  ৩০-৪০ দিনের মধ্যে ভ্যাক্সিনেটেড করে ফেলতে হয়। কেন?

কারন একটা দেশকে দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন করলে, মহামারী ছড়ানোর প্রকোপ কমবে । ফলে মিউটান্ট ও অনেক কমে যাবে। তাদের গ্রোথ ও কমবে। ফলে ভ্যাক্সিন বেশী দিন এফেক্টিভ থাকবে।

তবে ফ্লু ভ্যাক্সিনের মতন কোভিড ভ্যাক্সিন ও প্রতি বছর হয়ত নিতে হবে। যেহেতু নিত্য নতুন মিউটান্ট বা ভ্যারিয়ান্ট আসবে।

সুতরাং মিউটান্টকেও ভ্যাক্সিন দিয়ে রোখা যায় যদি দুটো শর্ত মানা হয়

   এক, দেশে দ্রুত ভ্যাক্সিনেশন শেষ করা

    দুই, প্রতি বছর নতুন বুস্টার ডোজ নেওয়া

 

(৫) “যেসব কোম্পানী ভ্যাক্সিন বার করেছে, অতীতে আমেরিকান সরকার বা ইউরোপিয়ান উনিয়ান তাদের সেফটি ডেটার জন্য ফাইন করেছে “

 

-       আমেরিকাতে সব ফার্মা কোম্পানীকেই ফাইন করা হয়। বিশ্বের এমন কোন ফার্মা কোম্পানী নেই যারা সেফটি ডেটা কম্প্রোমাইজ করার জন্য ফাইন খায় নি আমেরিকাতে। এখন আপনি বলবেন তাহলে আমি কেন আপনার ওই   দশ লাখে দুজনের ব্লাড ক্লটিং ডেটাকে বিশ্বাস করব?

-        

আমরা এই ডেটাকে বিশ্বাস করব,  এর কারন ভ্যাক্সিন বাজারে দ্রুত ছাড়ার পর, বর্তমানে এফ ডি এ এবং সি ডি সি-এরা ভাক্সিন সেফটি ডেটা মনিটর করছে। সব অনলাইন। সবাই দেখতে পারে। আমি আগেই লিংক দিয়েছি।  এগুলো সরকারি সংস্থা। এদের বিশ্বাস না করলে বলতে হয় আপনার অন্ধবিশ্বাস, ধর্মান্ধদের থেকেও বেশী।

 

 

(৬) “এর আগে এম আর এন ভ্যাক্সিন বা ম্যাসেঞ্জার আর এন এ ভাক্সিনের ( ফাইজার/মর্ডানা) কোন সাফল্য নেই। হঠাত করে কোভিডের ক্ষেত্রে তারা কি করে সাফল্য পাচ্ছে। সন্দেহজনক”

 

 -ম্যাসেঞ্জার আর এন এ দিয়ে ভ্যাক্সিন তৈরী করা নতুন পদ্ধতি। মাত্র কুড়ি বছরে এর ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয়েছে। এটি খুব কঠিন প্রযুক্তি। এর আগে তেমন সাফল্য আসে নি, কারন এত টাকা কেউ ঢালে নি-যা কোভিড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে ঢালা হয়েছে। কারন সরকার থেকে ইনভেস্টর সবাই প্রচুর টাকা দিয়েছে। আমেরিকান সরকার মর্ডানাকে ২ বিলিয়ান ডলারের গ্রান্ট দিয়েছিল।  যেখানে এর আগে এই প্রযুক্তি সফল করার জন্য ওই লেভেলে টাকা বা রিসোর্স লাগানোই হয় নি।

কিন্ত বর্তমানে প্রায় ২০০ মিলিয়ান ( ২০কোটি) ডোজ এম আর এন ভ্যাক্সিন আমেরিকাতে দেওয়া হয়েছে। এবং প্রশ্নাতীত ভাবেই মর্ডানা বা ফাইজার ভেক্টর ভ্যাক্সিনের থেকেও অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আরো বেশী প্রোটেকশন দিচ্ছে।

 

যারা ভ্যাক্সিনের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন, লোককে ভয় দেখাচ্ছেন, তারা কিন্ত আপনার এবং দেশের ক্ষতি করছেন। এবং না বুঝেই।