Sunday, December 31, 2017

অস্তিত্ববাদের দৃষ্টিতে আরেকটি বছর

এই মহাবিশ্বের বয়স ১৩৭৭ কোটি বছর। পৃথিবীর জন্ম ৪৫৪ কোটি বছর আগে। মানুষ এল সেইদিন - খুব বেশী হলে দুই লাখ বছর আগে।

এই অনন্ত চক্রে ২০১৮ আরো একটি এডিশন- কি যায় আসে! কিন্ত আমাদের ছোট ছোট চাওয়া পাওয়ার কুয়োর মহাবিশ্বে, একটা বছর অনেকটাই। সেই অনুন্নত প্রযুক্তির যুগে মাত্র এক বছরেই গোটা গ্রীসকে একত্রিত করেছেন আলেক্সজান্ডার। পরের বছর জয় করেছেন মিশর, পারস্য। সেই কালেও এক বছর ছিল অনেক। মুশকিল হচ্ছে আমরা আলেক্সান্ডার নই- ভাঙা গড়ার সুতীব্র ইচ্ছা আমাদের নেই- আছে শুধু গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে পিঁপড়ের জীবন মৃত্যুচক্রে একটা ফুঁটকি হয়ে বেঁচে থাকা।

এক্সিস্টেন্সিয়ালিজম বা অস্তিত্ববাদের সমস্যা সবাইকেই নাড়া দেয়। কখনো জ্ঞাতে অজ্ঞাতে। জীবনের আসলেই ত কোন পরম উদ্দেশ্য নেই। তাহলে কিসের জন্য বেঁচে থাকা? মৃত্যু আসবেই, এই ভেবেত আর বেঁচে থাকা যায় না। পরম বিশ্বাসীদের এই সমস্যা নেই-তাদের জন্য আছে জন্নত, স্বর্গ, পরজন্মের হাতছানি। আমাদের মতন নিধার্মিকদের সেই আশা ভরসার জায়গাটাও নেই-এটাই জীবন - এই জীবনেই যতটুকু পাওয়া তার চেষ্টা করে যেতে হবে।

আলটিমেটলি জীবনটাই হচ্ছে সেই তালা খোলার চেষ্টা করা যার চাবি আমার কাছে নেই। কিন্ত চেষ্টাটা করে যেতে হবে, কারন নইলে সময় কাটবে না। শুধু আশাটা রেখে যেতে হবে- তালাটা খুললেও খুলতে পারে কোনদিন। ঠিক এই কারনেই কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্টরা ক্রমশ র‍্যাডিক্যাল হয়ে ওঠেন- কারন তাদের দৃঢ় ধারনা- তাদের দর্শনে ওই চাবিটা আছে-বাকী কারোর দর্শনে নেই! আর যতই তারা হতাশাই ভুগতে থাকেন যে চাবিটা কিন্ত পাওয়া যাচ্ছে না- তারা বুঝতে চান না, চাবিটাই নেই-তারা আরো র‍্যাডিকাল বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন যে বিশ্বাসের গভীরতাই সেই চাবি আসিবে। কিন্ত না, আসে না। আসে মৃত্যু। আসে ধ্বংশ। আসে হতাশা।

সবটাই ছলনা। শ্রী রামকৃষ্ণের যত মত তত পথের আসল মানে হল- যত মত তত পথে ভুলিয়া থাক-চাবি আসিবেই। যত মত তত আলেয়ার আশা- চাবি মিলিবেই।

Saturday, December 16, 2017

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি

বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যারা স্বাধীনতার পরে, মুক্তিযুদ্ধের প্রামান্য ইতিহাস তৈরী করার চেষ্টা করে নি বহুদিন। আমরা ভারতীয়রা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানি না-এটা যদি লজ্জার হয়-তাহলে ভাবুন ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, সরকারি ভাবে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা প্রায় বন্ধ ছিল-যা চলত তাও সরকারি ভাবে বিকৃত। বাংলাদেশে যারা বড় হয়েছে ঐ সময়টাতে, তারাও জানেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। কারন সরকারি বইগুলো এমন ভাবে লেখা হত, যাতে শেখ মুজিবর রহমান, আওয়ামী লীগের ভূমিকা এবং ভারতের মিলিটারি ও ইন্দিরা ভূমিকা সম্পূর্ন অজ্ঞাত থাকে।

আমি মাস খানেক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অবদান নিয়ে একটা পোষ্ট দিই। বিষয়টা এই, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অতি সক্রিয় ছিলেন। এতটাই যে আমেরিকার নির্দেশে সৌদি আরব, জর্ডন এবং ইরান পাকিস্তানকে ফাইটার প্লেন দিয়ে সাহায্য করছিল- ইরান ত তার বিমান ঘাঁটিও ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। শুধু তাই না নিক্সন চিনকে সঙ্গে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেন জাতি সঙ্ঘে-তাতে কাজ না হলে ইন্দিরাকে ফোন, ফ্যাক্স হুমকি কিছুই বাকী রাখেন নি। একসময় সোভিয়েত ও ভারতে জানিয়ে দেয়, আমেরিকা ভারত আক্রমন করবে বাংলাদেশ ইস্যুতে । তবে তারাও নৌবহর পাঠাচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধী জেনারেল ম্যকেনশকে প্রশ্ন পর্যন্ত করেছিলেন আমেরিকা আক্রমন করলে কি হবে? ম্যাকেনশর উত্তর ছিল, তার আগেই বাংলাদেশ মুক্ত হবে। চীন এবং আমেরিকার সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে নার্ভ ঠিক রেখে ইন্দিরা গান্ধী গোটা পৃথিবী চষে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের সমর্থনে। জানাচ্ছিলেন কিভাবে খুন ধর্ষন এবং জেনোসাইড চালাচ্ছে খান সেনারা। ইউ টিউবে তার অসংখ্য ইন্টারভিঊ পাওয়া যাবে কখনো বিবিসি, কখনো ফরাসী টেলিভিশনকে দেওয়া ( যা ফ্রেঞ্চেই দিয়েছিলেন ইন্দিরা) । পুরো ব্যপারটা পড়ার পরে আমার মনে হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী না থাকলে বাংলাদেশের রক্তক্ষয় হত আরো বেশী- হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হত-কিন্ত রক্ত ঝড়ত আরো আরো অনেক। শেখ মুজিব যদি জাতির পিতা, ইন্দিরাকে বাংলাদেশ নামক জাতির মাতা বললে ভুল হবে না। এটা শুনে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমাকে জানালেন, আমি নাকি ইতিহাস ফ্যাব্রিকেট করছি বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকে ছোট করার জন্য! আসল সত্যটা হচ্ছে এই-এরা সেই ১৯৭৫-৯৬ এর বাংলাদেশের প্রোডাক্ট। যেখানে আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব, ইন্দিরা, ইন্ডিয়া সব কিছুই অস্বিকার করা হত।

১৯৮৫ সালের একটা ঘটনা বলি। তখন রাজশাহী রিলে স্টেশনের দৌলতে মুর্শিদাবাদ নদীয়াতে বাংলাদেশের সরকারি টিভি চ্যানেলের সব অনুষ্ঠান আমরা দেখতে পেতাম। ১৬ ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসে ভারতের দূরদর্শনে এমনিতেই অনেক কিছু হয়। আমাদের আশা ছিল বাংলাদেশে দূরদর্শনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারী দেখাবে। করিমপুরের মতন ভারতের এক প্রান্তিক মফঃশহরে টিভি তখন সবে এসেছে। পাড়ার বয়স্ক লোকেরা একাত্তর নিয়ে অনেক কিছু জানতেন। কারন একাত্তরের যুদ্ধে গোটা করিমপুরেই আশ্রয় নিয়েছিল প্রায় চার লাখের বেশী শরনার্থী। অনেক আশা নিয়ে ১৬ ই ডিসেম্বর তারা বাংলাদেশ টিভির সামনে বসেছিলেন।

অহ-কোথায় কি। টিভিতে দেখায় শুধু জেনারেল এরশাদের কবিতা। বাংলাদেশে তখন এরশাদের ডিক্টেটরশিপ। এই এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাও নন। একাত্তরের যুদ্ধে তার পোস্টিং ছিল পাকিস্তানে। ফলে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ১৯৭৩ সালে সিমলা যুক্তির জন্য মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাকে মিলিটারীতে উচ্চ পজিশনে পুনঃবাসন দেন শেখ মুজিব নিজে।

অথচ এই এরশাদ মালটা নিজের ডিক্টেটরশিপের সময়,এই ১৬ ই আগস্ট বিজয় দিবসে টিভিতে শুধু কবিতা চালাত-সাথে যুদ্ধের ফটো ভিডিও। দেখে মনে হতে পারে জাস্ট এরশাদের শব্দের জোরে স্বাধীনতা এসেছে। ব্যাচারা কিই বা আর করবে! কারন ওই দিন ইতিহাস ঘাঁটলে গেলে দেখা যেত, এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাই না! কে আর টিভিতে নিজের প্যান্ট খোলে! না ওই সময় বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধের চর্চা প্রায় নিশিদ্ধই ছিল। শুধু তাই না। যদিও বা কখনো সখনো মুক্তযুদ্ধের সিনেমা আসত বাংলাদেশ টিভিতে- সেখানে সিনেমার চরিত্ররা যদি কখনো সখনো মুজিবের নাম মুখে আনতেন, সেখানে অডিও সাইলেন্স করা হত। এই সময়টাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস মোছার সব চেষ্টা হয়েছে যঘন্য ভাবে।

এটা এখন কিছুটা বদলেছে। শেখা হাসিনার শাসনকালে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আবার ফেরানো হয়। অনেক ব্লগার ইতিহাস রক্ষায় সচেতন হয়ে অনেক নতুন দলিল তৈরী করেছেন। ফলে এখন গুগল করলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কিছুই আমরা জানছি।

আমি অবশ্য বই এর অভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে জেনেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেই। আমেরিকাতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অভিবাসন নিয়েছেন। তাদের সাথেই নানান পার্টিতে গল্প করে জেনেছি কিভাবে তারা জেলে সেজে নৌকা নিয়ে রেইড করতেন -কিভাবে থানা রেইড হত। খান সেনারা ভয়ে সেনা ছাউনির বাইরে ট্যাঙ্ক ছাড়া বেড়ত না। এত বীরত্ব এবং আত্মহুতির গল্প আমি নিজেই জানি সেগুলো লিখলে ডজন খানেক সিনেমার স্ক্রিপ্ট তৈরী। আমার ধারনা, মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাগুলো যদি সেলুলয়েডে বন্দি করার চেষ্টা হয়- অন্তত দুশো সিনেমা নেমে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এখনো হলিউড ফি বছর তিনটে চারটে সিনেমা নামাচ্ছে। কিন্ত বাংলাদেশে কালে ভদ্রে একটা আধটা সিনেমা নামে মুক্তি যুদ্ধের ওপরে। আমার কোন সন্দেহই নেই মুক্তিযুদ্ধই বাঙালীর ইতিহাসের সব থেকে গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তযুদ্ধে ঘটনা সিনেমা বন্দী না করলে, আবার এরেকটা এরশাদ আসবে না কে বলতে পারে?

Friday, December 8, 2017

হ্যাজব্যান্ড নামক হ্যাজটার ল্যাজ রেখে হবেটা কি?

ডিসেম্বর বিয়ের মাস-ফেসবুক ফিড খুলতেই বিয়েবাড়ির ফ্যাশনে হাসিখুসি মুখের রোশনাই। এর মধ্যে কটা বিয়ে পাঁচ বছর অব্দি টিকবে জানি না-তবে ডিভোর্স রেট সর্বত্রই এত বেশী, এই প্রশ্নটা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভাবে তোলাই উচিত- একবিংশ শতাব্দিতে "বিয়ে" নামক ইন্সটিটুশনটা আর কদ্দিন ?

যেহেতু কৃত্রিম গর্ভে সন্তানের জন্ম হতে এখনো ত্রিশ চল্লিশ বছর বাকী- সেহেতু প্রশ্ন উঠতেই পারে, সন্তান মানুষ করতে বিবাহ নামক সেই বাতিল প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় কি? ফ্রান্স সহ ইউরোপে পোষাকি বিয়ে প্রায় উঠে গেলেও -সেখানে লিভ টুগেদার করাকে বিয়ের লিগ্যাল স্টাটাস দেয় রাষ্ট্র। নাগরিকের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে রাষ্ট্রই কোলাপ্স করবে- বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চিকিৎসার খরচ চালাতে তরুন সমাজকেই ট্যাক্স দিতে হয়। সুতরাং ভারত চীনের মতন জন সংখ্যায় জর্জরিত হাতে গোনা কিছু দেশ বাদ দিলে, উন্নত বিশ্বে যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রসারের সাথে সাথে "মা" হওয়ার প্রবণতা কমে এসেছে- সেখানে রাষ্ট্রকে প্রচুর খরচ করতে হয় মা হওয়ার জন্য ঘুঁশ দিতে। ইউরোপের কমবেশী সবদেশেই এটা সমস্যা -এর মধ্যে রাশিয়ার জন সংখ্যা কমছে এত দ্রুত হারে ২০০৬ সালে পুতিন পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন, জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য তারা "মায়েদের" প্রচুর ইন্টেন্সিভ দেবেন। রাশিয়াতে যেসব মেয়েরা তিনটি সন্তান নেয়, রাষ্ট্র তাদের বিনা পয়সায় ফ্ল্যাট এবং গাড়ি দেয়। এতে অবশ্য লাভ হয়েছে সামান্যই। রাশিয়ার ফার্টালিটি রেট 1.34 থেকে বেড়ে এখন 1.46. অর্থাৎ অধিকাংশ মেয়েরাই ফ্ল্যাট গাড়ির লোভের থেকে চাইল্ডলেস থাকাই পছন্দ করছেন বেশী।

অধিকাংশ ডিভোর্সের ক্ষেত্রে, মেয়েদের নিজস্ব কেরিয়ার সংক্রান্ত চাহিদাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেহেতু শিল্প বিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সংসার কেন্দ্রিক থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কেরিয়ার কেন্দ্রিক অবজেক্টিভ গুলিকেই রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে মেনে নিচ্ছি- সেহেতু অধিকাংশ চাকুরীজীবি বিবাহিত মহিলারাই প্রশ্ন তুলছেন একটা হ্যাজবান্ড রেখে হ্যাজ ছাড়া জীবনে পাচ্ছি টা কি? সন্তান নেওয়া এর অনেক পরের ব্যপার। আসলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা, তার সাথে বলিউডের আফিঙে বড় হওয়া এই নতুন প্রজন্মের মেয়েরা প্রায় সবাই বিবাহিত জীবনে অখুশী। যেহেতু স্বামীর রোজগারের দরকার এদের নেই, অধিকাংশই একটা "কারন" থেকেই ডিভোর্স করছে। একটা অচেনা ছেলে, যার ওপর ডিপেনডেন্ট ও নই, তার জন্য আমরা কেরিয়ার বিসর্জন দেব কেন?

মুশকিল হচ্ছে বিবাহিত জীবনে রোম্যান্স কোন কালেই ছিল না-সাধে কি বৈষ্ণব সাহিত্যে প্রেম মানেই পরস্ত্রীর সাথে পরকিয়া! কিন্ত এই শারুখ খান, আমির খান, ঋত্বিক রোশনের মতন রোম্যান্টিক নায়কদের যুগে কোন মেয়ে বিশ্বাস করতে রাজী না- বিয়ে সংসারের অধিকাংশটাই কর্তব্য-বাকীটা মায়াময়।

এই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির সংজ্ঞা নিয়েও নৃতাত্ত্বিকদের মধ্যে একাধিক মতানৈতক্য। বিবাহে স্বামী এবং স্ত্রীর অধিকার ঠিক কি কি হবে, কি কি হওয়া উচিত-সেই নিয়ে কোন কোনসেন্সাস নেই কোন দেশে, কোন সংস্কৃতিতে। শুধু ডিভোর্স আইনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অধিকাংশ রাষ্ট্রের ঐক্যমত -ইহা মৌলিক অধিকার হতে পারে না। পৃথিবীর সব থেকে লিব্যারাল কোর্ট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের সুপ্রীম কোর্ট ও মেনে নিয়েছে, ডিভোর্স মৌলিক অধিকার হতে পারে না।

তবে আসল সমস্যার দিকে ফিরি। মূল সমস্যা এটাই আজকে মেয়েরা যেখানে কেরিয়ারে এগোতে চাইছে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই মা হতে গেলে তাদের কেরিয়ারে স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে। খাস ভারতেই ২৭% মহিলা আই টি ইঞ্জিনিয়ার শুধু মা হওয়ার জন্য কেরিয়ার বিসর্জন দেন। যারা টিকে যান, তারাও কেরিয়ার কম্প্রোমাইজ করেই টেকেন। যারা কম্প্রোমাইজ করতে চান না-তারা ডিভোর্স করে বেড়িয়ে আসেন। কিন্ত এর কোনটাই কি সমাধান?

খুব অদ্ভুত হলেও সত্যি- মেয়েদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রকে যে সন্তান পালনের দ্বায়িত্ব নিতে হবে, এটা প্রথম কার্যকর করেন লেনিন- অক্টবর বিপ্লবের সাথে সাথেই। রাশিয়াতে বিয়ে প্রায় তুলে দেওয়া হয়, আবর্শণ আইন শিথিল হয়-এবং সাথে সাথে সরকারি ক্রেশ বা সন্তানালয় গড়া হয়। কিন্ত কমিনিউস্ট রাষ্ট্র ত- এরা যত পরিকল্পনা করে-বাস্তবে হয় তার উলটো। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সরকারি কেয়ারটেকার সংস্থা গুলোতে দেখভালের অভাবে শুধু ১৯১৯-২৩ সালের মধ্যেই ৫ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। ফলে স্টালিন ক্ষমতা হাতে পেয়েই দেখলেন, লেনিনের আদর্শবাদি কার্যকলাপে রাশিয়ার জনসংখ্যা কমছে। মিলিটারিতে লোক পাওয়া সমস্যা হতে পারে। ১৯২৫-২৯ একাধিক ডিক্রি জারী করে স্টালিন আবার লোকজনকে বিয়ে করতে বাধ্য করলেন। আবর্শন প্রায় বন্ধ হল। রাষ্ট্রীয় শিশুপালন সংস্থা বন্ধ করে, মেয়েদের মায়ের দ্বায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করলেন স্টালিন। ইনফ্যাক্ট ১৯৩৪ সালের মধ্যেই রাশিয়াতে বিভিন্ন উচ্চ পজিশনে মেয়েদের সংখ্যা কমে আসে-সেন্ট্রাল কমিটিতে বোধ হয় মোটে দুজন ভদ্রমহিলা ছিলেন-কারন তখন লেনিনের "নারীবাদ" বাতিল করে সর্বত্র স্টালিনের "মাতৃবাদের" ভজনা চলছে। সোভিয়েত ইউনিয়ানের ইতিহাসের এই দিকটা অনেকেই জানে না-- যে নারীর সমানিধিকার সংক্রান্ত সব থেকে বড় পরীক্ষাটি এক শতাব্দি আগেই ব্যর্থ হয়েছে।

অর্থাৎ এই মৌলিক সমস্যা-যে ছেলে মেয়ে মানুষ করার ক্ষেত্রে মেয়েদের অনেক বেশি দ্বায়িত্ব নিতে হয়-এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত- ডিভোর্স কিন্ত বাড়তেই থাকবে।

তবে সবটাই দিশাহীন না। আমেরিকাতে ১৯৮০ সালে ডিভোর্স রেট ছিল হায়েস্ট। আস্তে আস্তে সেটা কমেছে। এখন প্রায় ৭০% সম্ভাবনা যে একটা বিয়ে ১০ বছর টিকবে। যেটা ১৯৮০ সালে ছিল ৪৮%। এটা কি করে হল?

আসলে ভুল থেকেই সবাই শিক্ষা নেয়। এখন আমেরিকাতে বিয়ের আগে ছেলে মেয়েরা "আবেগ" এবং "প্রেম" বাদ দিয়ে, প্রাক্টিক্যাল কন্সিডারেশন গুলোকে সামনে রেখেই বিয়ে করে। ইহার্মোনির মতন ডেটিং সাইট, এখন ডেটাসায়েন্স ম্যাচিং করাচ্ছে-অর্থাৎ একজনের কাছ থেকে প্রায় সাতশো আটশো রকমের প্রেফারেন্স জেনে, জানিয়ে দিচ্ছে কোন পার্টনার তার জন্য স্টেবল। প্রেমের থেকে প্যার্টান ভিত্তিক বিয়ের দিকেই এগোচ্ছে আমেরিকান সমাজ, যার সুফলও মিলছে কম ডিভোর্স রেটে। ভারতে এখনো এটা আসে নি। হয় এরেঞ্জড মেরেজ না হলে লাভ মেরেজ। দুটোই আসলে ডিজাস্টার। হওয়া উচিত ডেটা সায়েন্স ভিত্তিক মেরেজ-যেখানে আগে থেকেই বলে দেওয়া সম্ভব-এই পার্টনারশিপ চলবে কি না।

অর্থাৎ সমাধান সেই বিজ্ঞানের পথেই। আবেগ, আইন, প্রেম -কোন কিছুই বিবাহ নামক এই অচলায়তনকে বাঁচাতে পারবে না।