Saturday, July 26, 2014

ফেমিনিজম না স্ববিরোধিতা ?

 সব আদর্শবাদই কমবেশী স্ববিরোধিতায় ভোগে। তবে দ্বিচারিতার প্রশ্নে ফেমিনিজম না নারীবাদ অদ্বিতীয়। জন্ম থেকেই একজন মেয়েকে এত বেশী পরস্পর বিরোধি আইডিয়া এবং টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, অধিকাংশ নারীচরিত্র ময়দার তালের মতন। সমাজ, ধর্ম, মার্কেট, টিভি, গ্যাজেট এবং বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়া একজন মেয়েদের শরীরের কার্ভ থেকে কথন-প্রতিটি ইঞ্চি গড়ে দিচ্ছে।  ফলে আধুনিক নারী সব দেশেই মার্কেট এবং মিডিয়া প্রভাবিত এক অদ্ভুত ককটেল জীব।

   এবার নারীবাদ প্রসঙ্গে আসি। নারীর দেহ প্রদর্শন কি নারীবাদি না পুরুষবাদি? এই ব্যাপারেও নারীবাদিরা ভার্টিক্যালি স্পিল্ট।  সেক্স পজিটিভ ফেমিনিস্টরা মনে করে, বেশ্যা বা পর্ন নায়িকারাই একমাত্র স্বাধীন-কারন তাদের দেহ, তাদের অধীন।  একজন বেশ্যা তার সঙ্গী নির্বাচিত করতে পারে-কিন্ত একজন বিবাহিত বা সামাজিক নারীকে তার সাথেই শুতে হয়, যা আইন তাকে মনোনিত করেছে। সুতরাং কে বেশী নারী স্বাধীনতা ভোগ করে, তা সহজে অনুমেয়। অন্যদিকে রক্ষনশীল ফেমিনিস্টরা মনে করেন নারীর দেশপ্রদর্শন পুরুষতান্ত্রিক লিপ্সা মেটাতে। সুতরাং  তা পুরুষতন্ত্রের অন্যপিঠ।

  কি হ্যাপা? উভয় দিকেই কট্টর যুক্তি!  তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল ?  নারীর দেহ প্রদর্শন একই সাথে নারীবাদি এবং পুরুষবাদি!! মানে নারীবাদ  হচ্ছে সোনার পাথরবাটি!

  আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি।  মেয়েদের নিরাপত্তা ভারতে খুব কম-আমেরিকাতে খুব বেশী বলতে পাচ্ছি না। আগে মেয়েরা খুব বেশী নিরাপদ ছিল তাও না। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা অনেক বেশী খবরে আসছে। আগে আসত না। যুদ্ধ থেকে দাঙ্গা-সর্বত্র ধর্ষনের শিকার সবার আগে হয় মেয়েরা।  সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই পুরুষের বলাৎকারের শিকার মেয়েরা। আমার কাছে এমন কোন ডেটা নেই যার থেকে বলতে পারি ইতিহাস কখনো কোন সভ্যতার জন্ম দিয়েছে যেখানে  মেয়েরা ছিল নিরাপদ।  ক্ষমতার চাবিকাঠি আবাহমান কাল থেকে পুরুষের হাতে-এবং সেটা যদ্দিন থাকবে, মেয়েদের নিরাপত্তা অলীক স্বপ্ন।

তবে এটা আমার লেখার বিষয় না।প্রশ্ন হচ্ছে নানান টাইপের নারীবাদিরা এটাকে কিভাবে দেখে?

       এটা নিয়ে ঘাঁটতে গেলে দেখা যাবে এই ইস্যুতে তারা ৩৬০ ডিগ্রি।  কেও বলে পুরুষবাদি সমাজে এটাই হবে-কেও বলে নারীকে নিজের অস্ত্র নিজেকে ধরতে হবে। কেও কড়া আইন চাইছে। কেও টিভিকে দোষ দিচ্ছে। কেও ইন্টারনেট পর্ন কে। কেও নারীর চাল চলন পোষাককে।

 মেয়েরাই বোধ হয় সব থেকে ভাল জানে যে নারীবাদ  হচ্ছে সোনারপাথরবাটি সমগ্র।  ফলে ফেসবুক থেকে ট্রামে বাসে-সর্বত্র তারা নিজেদেরকে দেখানোর প্রতিযোগিতায় । ফেসবুকের লাইক বাটনের দৌলতে-এই প্রতিযোগিতা আরো তীব্রতর এবং ভয়বহ !  এখন যেকোন পার্টিতে গেলে পাশের মেয়েটি তার ফোনটা হাতে দিয়ে বলবে, দাদা একটা ফটো তুলে দিন। দুটো পোজ। ক্লিক করে ফেসবুকে উঠে গেল মেয়েটির লেটেস্ট পার্টি ড্রেস বা সেলফি।  তারপর সে মুহুর্মুহু চোখ রাখে লাইক কাউন্টে।

   আমা্র কাছে নারীবাদের ডেফিনিশনটা শর্টকার্ট। নারী নিজেকে দেখাতে চাইছে। আপনি দেখুন। আপনি পুরুষবাদি এবং পুরুষালী।  আর বিবেকানন্দর মতন, ইগনর করতে পারলে-আপনি নারীবাদি, মাইয়্যা!

  ভাববেন না ঠাট্টা করছি!

Wednesday, July 16, 2014

যারা ইস্রায়েলের স্থাপনার জন্য আমেরিকাকে দোষ দিচ্ছেন, তাদেরও ইতিহাসটা ভাল করে জানা দরকার

যারা ইস্রায়েলের স্থাপনার জন্য আমেরিকাকে দোষ দিচ্ছেন, তাদেরও ইতিহাসটা ভাল করে জানা দরকার। বৃটিশরা ইস্রায়েল ছারার দুদিন আগেও ( মানে ইস্রায়েল রাষ্ট্রএর ঘোষনার দুদিন আগে) আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং স্টেট সেক্রেটারি জর্জমার্শাল ইস্রায়েল রাষ্ট্রএর স্বীকৃতি অস্বীকার করেন। ইস্রায়েলকে মেনে নিতে চাইছিলেন না মার্শাল -কারন উনি জানিয়েছিলেন, ইস্রায়েলের জন্ম হলে অশান্ত হবে মধ্য প্রাচ্য। যুদ্ধ হবেই। এমন অবস্থায় পালেস্টাইনে বৃটিশদের আর দুদিন বাকী আছে ( ১৪ ই মে, ১৯৪৮)-বেন গ্রুন ট্রুম্যানের কাছে দূত পাঠালেন ইস্রায়েলের স্বীকৃতির জন্য। ট্রুম্যান জিউ ভোটব্যাঙ্কের জন্য ইস্রায়েলের স্বীকৃতিদিতে চাইলেন। মার্শাল এসব শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ট্রুম্যানের কাছে জানতে চাইলেন, আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ তিনি চাইছেন কি না। ট্রুম্যান এসব কিছু শুনলেন না-আমেরিকা ইস্রায়েলকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়ে দিল।

    সবার আগে ইস্রায়েলকে স্বীকৃতি দেয় স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ান সহ সব কমিনিউস্ট দেশগুলি।  শুধু তাই না। প্রথম আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধ, যেটাতে হারলে ইস্রায়েল পটল তুলত, সেই যুদ্ধে ইস্রায়েলকে অস্ত্র সাহায্য করে একমাত্র চেকোশ্লোভাকিয়া সহ সব সোভিয়েত ব্লক। আমেরিকা তখন ইস্রায়েলের ওপর ব্লকেড চাপিয়েছিল।

  কিন্ত কেন? আসলে জর্জ মার্শালের কারনে আরব রাষ্ট্রগুলি তখন আমেরিকান পোলাপান। কারন আমেরিকার তেল কোম্পানীদের চাপ। ফলে আরব বিশ্বে সোভিয়েত ব্লক নিজেদের রাষ্ট্র হিসাবে ইস্রায়েলকে চাইছিল -বিশেষত ইস্রায়েল মিলিশিয়া ঐতিহাসিক কারনে সোভিয়েত ইউনিয়ানের কাছে বহুদিন থেকে সাহায্য পেয়ে এসেছে।   কারন ইস্রায়েল মিলিশিয়া হাগানা ১৯৪৫ সাল থেকেই বৃটিশদের ওপর গেরিলা আক্রমন করতে থাকে ( যদিও তার আগে তারা বৃটিশদের সাথেই ছিল)-এবং বৃটিশ তখন আমেরিকানদের দোশর।  ফলে ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইস্রায়েলের একমাত্র ভরসা ছিল স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ান সহ ইস্টার্ন ব্লক। সব থেকে বেশী সাহায্য এসেছিল চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে।
 
 চেকোশ্লোভাকিয়ার ফাইটার প্লেন এবং অস্ত্র না পেলে ইস্রায়েল প্রথম আরব-প্যালেস্টাইন যুদ্ধেই অক্কা পায়-কারন তখন মিশরের হাতে আধুনিক আমেরিকান অস্ত্র।

  আজকের বঙ্গীয় কমিনিউস্টরা ইস্রায়েলের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করছে!! অথচ ইতিহাস পুরো উল্টো। ইস্রায়েল নামক রাষ্ট্রটা জন্মলগ্নে টিকে গেছে শ্রেফ সোভিয়েত ব্লকের অস্ত্র সাহায্য। সেখানে আমেরিকা প্রথমে তার বিরোধিতাই করেছিল আর সোভিয়েত ছিল সমর্থনে। প্যালেস্টাইনের আরব দের মারতে অস্ত্র এসেছিল কমিনিউস্ট ব্লক থেকেই!!

  এর পরে ইতিহাস দ্রুত বদলাবে। ইজিপ্ট সোভিয়েতের বন্ধু হতেই-ইস্রায়েল আমেরিকার সব থেকে বড় মিত্র হিসাবে দেখা দেবে। কিন্ত সেসব হয়েছে ইস্রায়েলের জন্মের কুড়ি বছর বাদে।

 ভ্যাগ্যিস হয়েছে!! নইলে বঙ্গজ কমিনিউস্টরা মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের জন্য ফিলিস্থিনি কান্নার সুযোগ হারাতেন!! মনে রাখবেন ১৯৭৮ন্সালে সোভিয়েত যখন আফগানিস্তান দখল করে, মিগ ২৭ বিমান আফগান মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বোমা মারছিল, বংগের কমিনিউস্টরা আফগানিস্থানে সোভিয়েত আগ্রাসনের জন্য একটু চোখের জল ফেলে নি। যদিও বলে রাখি মাত্র ২ বছরে সোভিয়েত প্রায় ৩০০,০০০ আফগান নিধন করেছিল।

  এতেব বঙ্গের কমিনিউস্ট বৃন্ধ- ইতিহাস বড়ই নির্মম এবং তোমাদের ফিলিস্থিনি কান্না দেখে হাঁসছে! মানবতার জন্য সিলেক্টিভ পলিটিক্যালি কারেক্ট কান্না ( সোভিয়েত এপ্রুভড এবং প্রো ইসলামিক) থেকে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের আওয়াজ নির্গমন হয়-সেটা আর এদের কে বোঝাবে।

Saturday, July 12, 2014

মার্কেটের মহিমা ধর্মের চেয়েও বড়

এই ফোরামে হামাস-ইস্রায়েল ইস্যুতে সবাই বেশ পোলারাইজড।  বাম-মুসলিম জোট ইস্রায়েলের মুন্ডপাত করছে ত বাকীরা মুসলমান এবং ইসলামের মুন্ডপাত করছে।

     প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ইসলাম নিয়ে অন্যান্য ধর্মের মতন হতাশ হলেও মুসলিমদের নিয়ে হতাশ আমি নই। যারা ভাবছেন মুসলমানদের ভবিষয়ত নেই কারন ওরা ইসলামের অন্ধকারে ধর্মান্ধ-তারাও ভুল ভাবছেন। একসময় আমরা হিন্দুরা, বা খ্রীষ্টানরাও ধর্মান্ধই ছিলাম। কিন্ত পরিবর্তিত রাজনীতি ও সমাজ-আরো পরিস্কার করে বললে পরিবর্তিত উৎপাদন ব্যবস্থা আমাদের ক্রমশ ধর্ম প্রসঙ্গে লিব্যারাল এবং সেকুলার করেছে।

  এর মূল কারন অবশ্যই উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন। আমেরিকার অধিকাংশ মুসলমান ইমিগ্রান্ট হলেও নিজেদের আমেরিকান ভাবে এবং তাদের একটা বড় অংশই ধর্মান্ধ বিরোধি। ভারতে বা ইউরোপে মুসলিমদের মধ্যে ইসলামি ভাব বেশী এবং ধর্মান্ধও বেশী। কেন এমন হয়?

  এর মূল কারন অবশ্যই ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা। আমেরিকাতে মুসলিমরা দেখেছে, মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মার্কেটের কারনে প্রতিভা এবং কর্মদক্ষতার খাতিরে তারা যোগ্য কাজ পেয়ে থাকে। এই সিস্টেমে ধর্মের চেয়ে অর্থ বড় এবং সেখান থেকে উপকৃত হয়ে তারা আস্তে আস্তে আমেরিকান সিস্টেমের উপকারিতা বোঝে -ইসলাম তাদের কাছে একটা স্পিরিচুআল লেভেলে থেকে যায়। তাতে অসুবিধা নেই। মাথা থেকে শরিয়া, পলিটিক্যাল ইসলামের ভূত নামে।

  ভারতে সামন্ততান্তিকতার রমরমা আর ইউরোপে স্যোশালিজমের।  মুসলমানদের এখানে যোগ্যতা এবং প্রতিভার খাতির যথাযত হয় না। তারা অনেক বঞ্ছনার শিকার।  ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্ছনাটা ধর্মীয় জিহাদের রূপ নেয়। সেটাই আমরা দেখি এবং এটা বুঝতে অসমর্থ হই-এর পেছনে অনেক আর্থ সামাজিক কারন আছে।

  আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের ভাল দিক-খারাপ দিক অবশ্যই আছে। ভাল দিক যেটা দেখি-সেটা হচ্ছে এই সিস্টেম জাতি ধর্মের ওপরে উঠে যোগ্যতাকে, প্রতিভাকে সন্মান দিয়ে থাকে। মুসলমান সমাজের মধ্যে বা মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে যথাযত ক্যাপিটালিজম এলে, মার্কেট তার নিজস্ব কায়দায় ধর্মকে কাবু করবে। কিন্ত সেটা হওয়ার নয়-কারন মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে প্রিন্সরা। পাকিস্তান চালায় ৪০০ জমিদার ফামিলি।

  আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগেও ভারতে মেয়েদের কাজ করা বা উচ্চশিক্ষার চল ছিল না। কিন্ত ৩০-৪০  বছর আগে মধ্যবিত্ত দেখল, বাড়ির মেয়েরা কাজ না করলে, সংসার চালনো মুশকিল। ফলে মূলত হিন্দু মধ্যবিত্ত মেয়েরা চাকরি করতে এল-পশ্চিম বঙ্গে এটা আরো আগে এসেছে-কারন অনেক বাঙাল ফামিলিতেই  মেয়েরা চাকরি না করলে সংসারগুলো পথে বসত।

 এর নীট ফল হয়েছে দুটি-প্রথমত ফামিলি সাইজ কমে দুই সন্তানে এসেছে। আর মেয়েদের স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে ধর্মের প্রকোপ কমেছে। ধর্মের প্রকোপ কমাতে গেলে নারীর চাকরি সবার আগে দরকার। ধর্ম আসলেই পুরুষতান্ত্রিকতার দশাননের মূল মুখ।

  কিন্ত মুসলিম মেয়েরা চাকরিতে এল না ভারতে। না তারা যোগ দিতে পারল পারিবারিক ব্যবসায় ।  এটাই মূল কারন ভারতে মুসলিমদের পেছনে চলে যাওয়ার এবং এর জন্য নেহেরু দায়ি। কারন ভারতে মুসলিমদের শরিয়া আইনের কবলে রেখে মুসলিম মেয়েদের সব অধিকার হরন করা হয়।

 সুতরাং আমেরিকার মতন একটি ইকুয়াল অপারচুনিটি নির্ভর মার্কেট ইকোনমির সাথে মুসলিম সমাজ যোগ দিলে মার্কেটের চাপেই ইসলাম বাস্প হবে।  মার্কেটের মহিমা ধর্মের চেয়েও বড়। এর জন্যে মুসলিম দেশগুলিতে গণতন্ত্র এবং ধনতন্ত্র দুটোই দরকার। দুর্ভাগ্য এই যে আমেরিকানরা মুসলিম দেশে তার উল্টোটিই চালিয়েছে।