Sunday, March 15, 2015

ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভংগী

কমিউনিউজমের সমালোচনা করলেই আপনি ক্যাপিটালিস্ট? আমেরিকার দালাল?
ইসলামের সমালোচনা করলেই আপনি চাড্ডি?
 হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করলেই আপনি পচা বাম বা সিকুলার?

  স্যোশাল মিডিয়া ফোরামে যবে থেকে লিখছি-তা আজ বারো বছর হতে চললো আমার অনলাইন লেখালেখি -ক্যাডার গোত্রীয় লোকেদের কাছ থেকে এই ধরনের "হ্যাশ ট্যাগ" আমার গা সওয়া। আমি এর জন্যে মোটেও কমিউনিস্ট বা আর এস এস ক্যাডারদের দোষ দিই না । দোষ ভারতের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা " সমালোচনামূলক"  দৃষ্টিভংগী সম্পূর্ন অনুপস্থিত।

 আমি উদাহরন দিচ্ছি। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের জনক থমাস জেফারসন। আমেরিকান সংবিধানে " All men are created equal " বাক্যের লেখক। জন এডামসএর পরে উনি আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট (১৮০১-১৮০৯)। শুধু এইটুকু লিখলে, জেফারসনের প্রতিভার প্রতি অবিচার করা হয়।  সর্বত অর্থেই তিনি সেকালের একজন সেরা পন্ডিত, জ্ঞানী এবং মানবিকতাবাদি। ১৮০৭ সালে আমেরিকাতে দাশ আমদানির ওপর নিশেধাজ্ঞার আইন ও তিনি প্রথম মোতায়েন করেন। আমেরিকান সংবিধানে "সেকুলারিজমের" ধারনাও তার অবদান ""shall be free to profess, and by argument to maintain, their opinions in matters of religion"।

কিন্ত এহেন জাতির জনকের ইতিহাস আমেরিকার পাঠ্য বইতে যখন পড়ানো হচ্ছে শিশুদের জন্য-সেখানে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, জেফারসন সমকালীন পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ মানুষত বটেই-"কিন্ত" দাশেদের ব্যপারে তার অবস্থানে দ্বিচারিতা। তার  এস্টেটে প্রায় শখানেকের ওপর দাশ ছিল। তিনি লিখেছিলেন "সব মানুষ সমান" -কিন্ত তবু দাশপ্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে এক লাইন লেখেন নি।

শুধু জেফারসন না -জর্জ ওয়াশিংটনের জীবনী যেটা এখানে পড়ানো হয়-সেখানেও সমালোচনার ছাপ স্পষ্ট।

 অথচ ভারতের এমন দুরাবস্থা, জাস্টিজ কার্টুজ যখন গান্ধীকে দোষী করেন ভারতের রাজনীতিতে ধর্মকে ঢোকানোর জন্য, ভারতের আপামর ডান, বাম এম পিরা তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করায়। আমি নিজে গান্ধীবাদি। কিন্ত জাস্টিস কার্টুজ কিছু মাত্র ভুল বলেন নি গান্ধীকে নিয়ে। হিন্দু এবং ইসলামিক মৌলবাদকে চূরান্ত ভাবে প্রশয় দিয়েছেন গান্ধী-এটা নিয়ে ইতিহাসে সংশয় থাকারই কথা না । তবে হ্যা, তাকে বৃটিশদের এজেন্ট বলাটা নিঃসন্দেহে অতিরঞ্জিত।

 সুতরাং যে দেশের এম পিদের এই অবস্থা, তাদের ক্যাডাররা সমালোচকের দৃষ্টি ভংগী ছেড়ে, নিজেদের আরাধ্য দেবতাদের বিরুদ্ধে কিছু শুনতে চাইবে না বা সমালোচকদের গালি দেবে এটাই বাস্তব। লেনিন , স্তালিনের বিরুদ্ধে আমি ত অল্পই লিখেছি। কিন্ত ইউক্রেনের লোকেরা যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানে স্তালিনকে হিটলারের সমান কুখ্যাত বলে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করিয়েছে, সেই খবরটা কি বাংলার বামেরা রাখেন? ইনফাক্ট কোন বাঙালী বামকেই দেখিনি, স্টালিন বা লেনিনের জীবনী নিয়ে গভীরে ঘেঁটেছে। স্টালিন সম্মন্ধে এদের বিদ্যার দৌড়, উনি হিটলারকে থামিয়েছিলেন। কেও এইটুকুও জানে না, স্পেনের সিভিল ওয়ারে, রাশিয়ান বিমানসেনারা নাজিদের নাস্তানাবুদ করেছিল সেই ৩৭ সালেই। কিন্ত স্টালিন গ্রেট পার্জের নামে রাশিয়ার সক্ষম মিলিটারী জেনারেলদের ৯০% কে খুন করার দরুন নেতৃত্ববিহীন হয়ে ওঠে সোভিয়েত মিলিটারি। যা প্রকট হয় যখন সোভিয়েত ফিনল্যান্ড আক্রমন করে। মাত্র ত্রিশ হাজার ফিনিশ সৈন্য, তিনলাখ রাশিয়ানকে আটকে দিয়েছিল প্রায় ন মাস। সেটা দেখেই হিটলার বোঝেন গ্রেট পার্জের দরুন সোভিয়েত মিলিটারীর করুন অবস্থা। নইলে স্প্যানিশ ওয়ারে সোভিয়েতের কাছে মার খাওয়া নাজি সেনাদের সাহস হত সোভিয়েত আক্রমন করার??  এদের জীবনী নিয়ে একটু চর্চা করলেই বোঝা যাবে, এরা রূপকথার নায়ক হতে পারে, কিন্ত বাস্তবের ইতিহাসে ভিলেন।

ইনফ্যাক্ট প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা প্রথমে মানুষ। মানুষের দুর্বলতা সবার চরিত্রেই থাকবে। কিন্ত লেনিনের বা স্টালিনের সমালোচনা করার জন্য কাওকে ক্যাপিটালিস্ট বলে হ্যাশ ট্যাগ দেওয়া চূড়ান্ত রকমের বালখিল্যতা এবং নিরক্ষরতার উদাহরন।

আরেকটা বিষম বস্তু গণতন্ত্র নিয়ে লোকের মধ্যে ভুল ধারনা। গণতন্ত্র মোটেও কোন সিস্টেম না । এটি একটি স্বাভাবিক বিবর্তন । আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেমের। আজকের গণতন্ত্রের সাথে কালকের গণতন্ত্র মিলবে না । এটি একটি ধারাবাহিক উন্নতির পদ্ধতি। গণতন্ত্রই পারে উন্নত গণতন্ত্র আনতে। কোন স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারনার মাধ্যমে উন্নত গণতন্ত্র আসে নি, আসবে না । আজকের পৃথিবীতে ক্রনি ক্যাপিটালিজম, লবিং এর যে সমস্যা, তা দূর হবে যদি ডিরেক্ট ডেমোক্রাসি আসে।  কিন্ত সেই সরাসরি গণতন্ত্রের বিবর্তন , এই পার্লামেন্টারী ডেমোক্রাসি দিয়েই আনতে হবে। কোন ফ্যাসিস্ট শাসককে ক্ষমতায় বসালে কি তা হবে?

No comments: