Tuesday, May 31, 2011

অসীম দাশগুপ্তর ধাপ্পাবাজি বামফ্রন্ট পতনের অন্যতম কারন


রাজ্যের দেনা এই মুহূর্তে ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।

অসীম বাবু দাবী করছেন- এই দেনা এত বেশী লাগছে কারন "এর অধিকাংশই ক্ষুদ্র সঞ্চয় ঋণ"।
রাজ্যের লোক খুব ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে জমাচ্ছে, তাই রাজ্যের দেনা এত বেশী।

রাজ্যের লোক চীট ফান্ড ছেরে রাজ্যকে ধার দিচ্ছে-এটা ভাল সিস্টেম। কিন্ত সেই ধারটা কোন কাজে লাগিয়েছেন অসীম
বাবু? ওই ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের টাকাটা যদি রাজ্যের উন্নয়নের কাজে যেত-তাহলে সেটা ভাল ইনভেস্টমেন্ট। কারন সেক্ষেত্রে সেই উন্নয়ন থেকে বর্ধিত হারে রাজস্ব আসত রাজ্যের হাতে-তাই দিয়ে ধার শোধ হত। কিন্ত সেটাত হয় নি-রাজ্যকর্মচারীদের মাইনে দিতেই চলে গেছে সব টাকা। অমিতবাবুর দেওয়া তথ্য থেকে আমরা জানলাম, এই রাজ্য মাথাপিছু উন্নয়ন বাজেট সব থেকে কম। কারন মাইনে দিতে হচ্ছে ধার করে।

ধার- আমি মারোয়ারী, ব্যাঙ্ক বা ক্ষুদ্রঋণ-যার কাছ থেকেই নিই না কেন -সেটা ধারই। এবং সেই টাকা উন্নয়নে ইনভেস্ট না করে , মাইনে দেওয়া মানে সাংঘাতিক বিপর্যয়। ওই টাকাটা যার কাছ থেকেই ধার নিই না কেন-তা শোধ দিতে হবে-এবং সুদও দিতে হবে। সুতরাং সেই ধারের টাকাটা যদি আমি এমন খাতে ব্যয় করি, যাতে বর্ধিত রাজস্ব আসার পথ না খোলে, তাহলে তা সাংঘাতিক বিপদ। রাজ্যে লোকেরা টাকাটা ত দান করে নি!

মন্টেক সিং, মনমোহন এবং প্রণব বাবু বারবার অসীম বাবুকে বুঝিয়েছেন, স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা ধারের টাকা। ওটা রাজস্ব না। তাই ওই গুপি দিয়ে রাজস্ব ঘাটতি মেটানো দেখাবেন না। অসীম বাবু শোনেন নি। এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন ক্ষুদ্র ঋণ আর ব্যাঙ্কের ঋণ আলাদা!

ফল এই যে, দেনার চাপে আজকে কাহিল রাজ্য- মাইনে দিতেও ধার করতে হচ্ছে বাজার থেকে। অসীম বাবুর কথা শুনে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাত্তন অর্থনীতির শিক্ষক শুধু হেঁসেছেন-নিশ্চয় আশ্চর্য্য ও হয়েছেন কি করে এক জন " অর্থনীতিবিদ" এই ধরনের পাতি ধাপ্পাবাজি চালিয়ে এসেছে এতদিন।

এর ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বামফ্রন্ট সরকার নিজে। বেতন দিতে গিয়ে, কোন মন্ত্রকেই কোন টাকা ছিল না। সবাই নামেই ছিল মন্ত্রী-একটা টাকাও তাদের দিতে পারেন নি অসীম বাবু। এই নিয়ে তাদের মধ্যেও ক্ষোভ ছিল। কিন্ত পার্টির জন্যে কিছুই বলতে পারেন নি মন্ত্রীরা-শুধু ভোটে দাঁড়িয়ে জ্যন্ত ভুত হয়েছেন জনগণের হাতে।

ধাপ্পাবাজির ফল আর কোন কালে ভাল হয়েছে? তবে সিপিএম এর থেকেও শিক্ষা নিল না। এখনো চেঁচাচ্ছে রাজ্যের হাল ভাল ছিল। এই ধরনের মিথ্যে কথা বললে কি লোকে শুনবে? এর থেকে ভুল স্বীকার করে শিক্ষা নিলেই জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখবে।

Monday, May 30, 2011

মুসলমানদের আর কতোদিন মুসলমান হিসাবে দেখবে রাজনৈতিক নেতৃত্ত্ব?

মমতা ব্যনার্জি ক্ষমতায় আসার পর, তার অন্যতম সিদ্ধান্ত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে মাদ্রাসা শব্দটি লাগানো। নির্বাচনী
প্রতিশ্রুতি। বা ধর্মীয় সুড়সুরি দিয়ে সংখ্যালঘু ভোট টানার চেষ্টা-কারন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ইসলামিক ছাত্র ইউনিয়ানের সেটিই ছিল নাকি দাবী। ভোটের আগে সিপিএম এবং তৃণমূল-দুটি দলই মুসলমানদের মন পেতে, ঢালাও ভাবে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছে বাংলার রাজনীতিতে। সেই ধরনের অনেক ধর্মীয় তোষনের মণিমুক্তোর, এটি একটি ছোট মুক্ত।

আপাতত বিধি বাম। আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে "মাদ্রাসা" শব্দটির যোগ করায় আতঙ্কিত-এবং তারা পরীক্ষা বয়কট করছে। আনন্দবাজারের রিপোর্টঃ

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি যুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরীক্ষা বয়কট শুরু করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবারের পরে সোমবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ামককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এর আগে শুক্রবার ওই পড়ুয়ারা মহাকরণের সামনেও বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের রাগ খুব স্বাভাবিক। তারা সেখানে এসেছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার হতে। সেখানে ডিগ্রির আগে মাদ্রাসা শব্দটা জুরলে, তাদের অসুবিধা সাংঘাতিক। এমনিতেই মুসলমান নাম থাকলে, ভারতে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি পাওয়া খুব মুশকিল। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে যদি মাদ্রাসা শব্দটা বসে, তাহলে অবস্থা কি হবে সহজে অনুমেয়।

এই সমাজে তাদের ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার হিসাবেই বেঁচে থাকতে হবে-মুসলিম ডাক্তার বা মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নয়। এটা তারা ভালো বোঝেন। কিন্ত বোঝেন না মমতা ব্যানার্জি সহ এই রাজ্যের সমস্ত হিন্দু নেতৃত্ব। তারা মুসলমানদের উপকার করতে গিয়ে হয় দেন ৩০০ মাদ্রাসার উপহার ( সিপিএমের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি) বা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের আগে মাদ্রাসা জুরে সংঘালঘুদের সুরসুড়ি দেওয়া। স্বাধীনতার পরে, এটাই হিন্দু রাজনৈতিক নেতৃত্ব করে এসেছে-এবং তাতে হিন্দু-মুসলমানদের দূরত্ব আরো বেড়েছে।

হিন্দু মুসলমান পরিচয়টা টেকানোর জন্যে রাজনীতি আজকে বিপজ্জনক। কেরালাতে কমিনিউজমের এত চাষাবাস হয়েছে সেখানে হিন্দু খ্রীষ্ঠান এবং মুসলিম ভোটের বিভাজন সম্পূর্ন এবং ধর্মীয় পার্টিগুলি দারুন রেজাল্ট করেছে। আসামে প্রধান বিরোধি পার্টি এখন একটি ধর্মীয় মৌলবাদি দল। "মুসলমানরা" আলাদা এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল এবং সেই বৃত্ত থেকে আজও আমাদের রাজনীতিবিদরা বেড়তে পারলেন না। কারন তারা মুসলমানদের মানুষ হিসাবে না ভেবে মুসলমান হিসাবেই ভেবে চলেছেন।

কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি-কেওই এর ব্যতিক্রম না।

Sunday, May 29, 2011

মমতাতন্ত্র


সেদিন মাধ্যমিকের কৃতীছাত্রদের সাথে সবে কথা বলা শুরু করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য।

প্রথম দুটো বাক্যের পরে তৃতীয় বাক্য আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী...।।

কাল পূর্নেন্দু চ্যটার্জির সাথে বৈঠক শেষে পার্থ চ্যাটার্জি জানালেন, আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানাব!

অমিত মিত্র প্রতিদিনে মমতা ব্যনার্জিকে বানালেন মার্টিন লুথার কিং!

বাকী সব মন্ত্রীরাই দেখছি প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টা করছেন, তারা কতটা মমতাময়ী! কে কত বড় ভাই তা প্রমান করার ইঁদুর দৌড় দেখতে পাচ্ছি মমতার সমস্ত মন্ত্রীদের মধ্যে।

মমতা পশ্চিম বঙ্গের জন্যে জোর কদমে কাজ শুরু করছেন-দলতন্ত্র ভাঙছে-হাঁসপাতালে কিছুটা গতি আসছে- শিল্পপতিরা আসতে চাইছেন-ব্যাঙ্ক সরকারকে লোন দিয়ে চাইছে। খুব ভাল কথা। আমিও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে ১০ এ ১০ দিচ্ছি। কিন্ত তার মানে এই নয় দলতন্ত্রের বিবর্তিত রূপ হবে মমতাতন্ত্র! সেটা রাজ্যে একধরনের নতুন অগণতান্ত্রিক দিদিবাদি ফ্যাসিজম এর সূত্রপাত হিসাবেই গণ্য হবে।

মমতা ব্যানার্জির সাথে ইন্দিরা গান্ধীর দারুণ মিল। দুজনেরই রাজনৈতিক দর্শন হল "বেনিভোলেন্ট ডিক্টেটরশিপ" বা উপকারী স্বৈরাচার। অর্থাৎ সমস্যার সমাধানের জন্যে ইনারা মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রীকতাকে বিশ্বাস করেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন পশ্চিম বঙ্গের লোকজনকে অধিকার দিয়েছে-কিন্তু তা জনসেবা দিতে সম্পূর্ন ব্যর্থ। তাই সমস্ত সরকারী হাঁসপাতালে পরিকাঠামো বলে আর কিছু নেই।

এই নাই এর নৈরাজ্য এই রাজ্যে।

সেখান থেকে রাজ্যকে একবিংশ শতকে ফেরানোর জন্যে দুটোপথ খোলা-স্বৈরাচারী শাসন অথবা আমেরিকার মতন "সিস্টেম" কে প্রতিষ্ঠা করা। মমতা ইন্দিরার পথকেই বেছে নিলেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন ভারতে লোকেরা যতটা অধিকার সচেতন, তার সিকেভাগ দ্বায়িত্ব সচেতন না। বস্তুত তার এমার্জেন্সির মূল কারনটাই ছিল, একটা ভেঙে পড়া দেশকে সামাল দেওয়ার জন্যে সিস্টেমের ওপর নির্ভর না করে, স্বৈরতন্ত্রের পথে সমাধান খোঁজা। ইন্দিরা গান্ধী পরে নিজেই তার পদ্ধতির ভুল স্বীকার করেছেন।

মমতা রাজ্যের হাল এই স্বৈরাচারী শাসনের মাধ্যমেই ফেরাচ্ছেন-ভাল কথা। মুসোলিনী, হিটলার বা স্টালিনের আমলে ইটালী, জার্মানী এবং রাশিয়ার দুর্দান্ত উন্নতি হয়েছে-এগুলো সব সত্য। এবং হিটলার ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে কড়া হাতে শাসনযন্ত্রকে সচল করেছিলেন, তার জন্যে আকুন্ঠ সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছিলেন জার্মান নাগরিকদের কাছ থেকে, আজ মমতাও জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা, সমর্থন পাচ্ছেন। মুসোলীনিও কম জনপ্রিয় ছিলেন না-স্টালিনের ভক্ত রাশিয়াতে আজও আছে। কারন এরা সুদক্ষ দেশপ্রেমী শাসক-কিন্ত এদের অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কি আমাদের কাম্য?

পশ্চিম বঙ্গে মমতার স্বৈরাচারী শাসনের ফলে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিসেবার হাল আস্তে আস্তে ফিরবে-সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এবং আমরা দেখছি জনগণের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে রাজ্যের হাল ফেরানো পছন্দ করছেন। ১৯৩৩ সালের থার্ড রাইখ এবং 1922 সালে মুসোলিনীর ক্ষমতায় আসার পর বিদ্ধস্ত ইটালী এবং জার্মানীতে "স্বৈরাচারী" শাসনের প্রতি মানুষ আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। আজ পশ্চিম বঙ্গেও একই ঘটনা। তারা সত্যিই ভাল প্রশাসন উপহার দিয়েছিল, যা তাদের আগের সমাজতন্ত্রী পার্টিগুলি পারে নি। এর পরের করুণ ইতিহাস সবার জানা।

এবং দুটি ক্ষেত্রেই বামপন্থীরা ইটালি এবং জার্মানীতে গণতন্ত্র ফেরাতে ব্যার্থ হয়। মমতার বিরুদ্ধে এখন এই রাজ্যের প্রাত্তন সিপিএম একদম চুপ। ওদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কোঠায়-কারন সিপিএম এই রাজ্যের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ভূতের মুখে রামনাম আর কবে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে? পশ্চিম বঙ্গের আজকের ইতিহাসে সেই জার্মানী এবং ইটালীর ছায়া- বামপন্থী ব্যর্থতা-ফ্যাসিবাদের জনপ্রিয়তা এবং সেটা ঠেকাতে বামপন্থার আবার ব্যার্থতা। কারন তাদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কিছু নীচে।

মনে রাখতে হবে দেশের এবং কোষাগারের হাল ফেরাতে ফ্যাসিজম জলদি ফল দেয় বটে কিন্ত তা দীর্ঘদিন টেকে না। হিটলার, স্টালিন, মুসোলিনি সবার পতন হয়েছে। কিন্ত আমেরিকান গণতন্ত্র এবং তার সিস্টেমের সাফল্যই গোটা পৃথিবী নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মূল কারন, আমেরিকানরা উন্নত সিস্টেমে বিশ্বাস করে। ব্যাক্তিভজনা এখানে অচল। ওবামা যত ভুল করছে, এখানকার মিডিয়া তাকে একদম ছিন্নপত্র বানিয়ে দিয়েছে। মমতার ক্ষেত্রে পুরো উলটো-পশ্চিম বঙ্গের সব মিডিয়া এখন তার সাথে। কোন নিউজ পেপার বা মিডিয়াতে তার সমালোচনা নেই।

এই ধরনের সিস্টেম দীর্ঘদিন ভাল থাকতে পারে না, যেখানে চেক এন্ড ব্যালান্স নেই।

Saturday, May 21, 2011

ওবামা, মমতা এবং "চেঞ্জ"



(১)
সেটা ২০০৮ সালের জানুয়ারী। ওবামা বনাম হিলারি যুদ্ধ তুঙ্গে। আমি হিলারি ক্যাম্পের হয়ে কাজ করতে নামি। ওবামার চেঞ্জ ব্যাপারটা তখনই কেমন গোলমেলে মিডিয়া ম্যাজিক মনে হত। ইনসিওয়ারান্স এজেন্টদের হাতের পুতুল জো বিডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্টিয়াল রেসের জন্যে ডাকতেই বুঝলাম- ওবামা ম্যাজিক দেখে লজ্জা পেতেন জাদু সম্রাট পি সি সরকার। কি সুন্দর সবাইকে বোঝালেন আসলেই আমি তোমাদের একজন। তারপর ইরাক, আফগানিস্তান থেকে একটাও সেনা সরল না ( দেশের সরকারগুলোই নাকি চায় না)।

ওয়াল স্ট্রীটের ডাকাতদের বিরুদ্ধে দু একবার হুঙ্কার ছারলেন। ব্যাস। সেটাই চেঞ্জ! এদিকে আমেরিকাতে রিপাবলিকান অধ্যুসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের ছাঁটাই অব্যাহত। তাদের ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। ওবামা এখনো চেঞ্জ চেঞ্জ করছেন না হয়ত লজ্জায়। চেঞ্জ ফেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে এখন তিনি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ড্রোন দিয়ে আরো দু একটা আল কায়দা ঘায়েল করে, পরের বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফন্দি আটছেন। বুশপোলা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না-সে ইরাক আক্রমন করেই জনপ্রিয় হওয়া পছন্দ করেছে। চেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে শত্রুর পেছনে কাঠি নেরে,জাতিয়তাবাদি জালে যা ওঠে আর কি। চেঞ্জ ফেঞ্জ অনেক কঠিন ব্যাপার! কে যাবে ব্যাবসায়ীদের লবির বিরুদ্ধে? যদিও সেই প্রতিশ্রুতি ছিল ষোলআনা। তার থেকে দু একটা দাড়িওয়ালা মারলেই মিলে যাবে দ্বিতীয়বারের চাবি।

২০০৯ এর বিশে জানুয়ারী ছিল ওবামার অভিষেক। এমন ভীর ছিল-শপথ গ্রহনের তিন ঘন্টা আগে পৌঁছেও ঢুকতে পারলাম না ক্যাপিটল হিলে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক চেনা কংগ্রেসম্যানের কাছ থেকে অনেক কাঠখর পুরিয়ে এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চেয়েছিলাম। ওবামাকে একপলক দেখার জন্যে কত আকুতি চারিদিকে।

যাইহোক মেট্রোতে ঢোকার জন্যে সেদিন লম্বা লাইন। আমার পাশে ছিল আলাবামার এক শিক্ষক। ওবামা না জিতলে নাকি সে আমেরিকা ছেরে চলেই যেত! এতই তার বিশ্বাস ওবামা এবং "চেঞ্জের" ওপরে। সবাই দারুন খুশী।

আসল সত্য এই বুশের জমানাতে আমেরিকার তখন এত বেহাল অবস্থা-চারিদিকে চাকরী নেই-অর্থনীতি কোমাতে-আমেরিকা ওবামাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল। বিশ্বাস না করে কোন উপায় ছিল না। ডুবন্ত মানুষের কাছে ভেসে থাকা কাঠই পরিবর্তন। সেই খরকুটো জরিয়ে ধরেই সে ভেসে থাকতে চায়। সেটাকেই সে নৌকা বলে বিশ্বাস করতে চাইবে।

(২)
বিশে জানুয়ারী ২০০৯ থেকে বিশে মে ২০১১-ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল এবার কোলকাতায়। সেদিন কোলকাতায় ছিলাম না-কিন্ত সমস্ত টিভি চ্যানেলে খুশী খুশী যেসব মুখ ভেসে উঠল-মনে করিয়ে দিচ্ছিল ২০ শে জানুয়ারীর সেই শিক্ষকের কথা। সেই জনপ্লাবন, জনউচ্ছ্বাস-মুক্তির স্বাদ, নতুন ভোরের স্বপ্ন চারিদিকে। আমি অবশ্য ঘর পোড়া গরু-তাই তাদের উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে গেলেই, অজান্তেই চেপে বসেছিল পা হরকানোর ভীতি। বুশের অপশাসন থেকে সেদিন যেমন লোকে মুক্তি চেয়েছে-এদিন মুক্তি চেয়েছে সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসন থেকে। তাই উচ্ছ্বাসের মাত্রা ছিল বাঁধন ছাড়া। ওবামাও যেমন একটিও ঘন্টা নষ্ট না করে প্রথম দিন থেকেই কাজে নেমে গিয়েছিলেন-মমতাও শপথ গ্রহনের পর সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন। মিডিয়া সেদিন ওবামাকে সুপ্যারম্যান সাজিয়েছিল-এখানেও মমতাকে সুপারউম্যান প্রমানের জন্যে প্রতিযোগিতাতে নেমেছে সব মিডিয়া। ওই যে বললাম ডুবন্ত মানুষ। সে বিশ্বাস করতে চাইছে ভেসে থাকা কাঠই নৌকা-মিডিয়াও সেটাই খাওয়াচ্ছে। এখানে তাও রিপাবলিকান মিডিয়া বিরোধিতা করেছে-বঙ্গে এখন সেটাও দুর্লভ। মমতা বিরোধি কেবল চ্যানেল গুলো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে! তারাও নেমেছে মমতা বন্দনাতে! নইলে বিজ্ঞাপন আসবে কোথা থেকে? যতই দেখছি-ততই অবাক। একই আবেগ, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। এখানেও সবাইকে বিশ্বাস করানো হচ্ছে মমতা তোমাদের লোক! ঠিক ওবামা ক্যাম্পেনের মতন! একই ভাবে সবাই বিশ্বাস করছে একটা শব্দে "চেঞ্জ"।

(৩)
চেঞ্জ?

তৃণমূল আসলেই একটা গণপ্রতিরোধের নাম। সিপিএমের লাল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ। ২০০৭ সালের পর থেকে এটাই তৃণমুমের মুখ। তার আগে তারা ছিল কংগ্রেসের একটা পতিত অংশ। যা কখনো বিজেপি, কখনো কংগ্রেসের লেজুর হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করত। কিন্ত সিঙ্গুরে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা অগ্রণী হতেই-সাধারন মানুষ সিপিএমের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করে। যেটা আগে দেখা যায় নি কখনো। সিপিএমের গুন্ডারাই নিয়ন্ত্রন করেছে রাজনীতি। কিন্ত বোষ্টনের বিদ্রোহ যেমন আমেরিকার কলোনীগুলোতে দ্রুত সাহস জুগিয়েছিল শতগুন শক্তিশালী বৃটিশ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে-এখানেও নন্দীগ্রামের প্রতিরোধ মানুষকে শিখিয়েছে-সিপিএমের গুন্ডা মেশিনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

সেই অর্থে ওবামাও ছিল কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। ওয়াল স্ট্রীটের চালে ঘর হারিয়েছে কোটি কোটি আমেরিকান। কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভকে পুঁজি করেছেন ওবামা। অনেক রিপাবলিকানরাও তাকেই ভোট দিয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বামপন্থীরাও আছেন মমতার পাশে। কারন "চেঞ্জ"। "চেঞ্জ" এ বিশ্বাস করলে অনেক কিছুই সম্ভব।

এই পরিবর্তন ছারা গণতন্ত্র অসম্ভব। এই পরিবর্তন ছারা যেকোন সিস্টেমই ফ্যাসিস্ট সিস্টেমেরর দিকে এগোবে। এই পরিবর্তন ছারা সামাজিক বিবর্তন আটকে যাবে। যা হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে। ১৯৭৭ সালে ভারতের প্রথম সারির একটি রাজ্য, বর্তমানে শিক্ষা থেকে শিল্প-সব কিছুতেই পেছনের বেঞ্চে। অর্জন বলতে সাধারন জনতার হাতে ক্ষমতার স্বাদ-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সিপিএমের শাসনে হয়েছে। কিন্ত কোন রাজনৈতিক সিস্টেম উন্নততর উৎপাদন শক্তি না দিতে পারলে, তার মৃত্যু অবধারিত। তাই ভারতের বামশক্তিও মৃত্যু শয্যায়। উন্নততর বাম চিন্তা না এলে, ভারতের বামশক্তি কংগ্রেসের মাধ্যমেই টিকে থাকবে-বামনামধারি পার্টিগুলি সাইনবোর্ড হয়ে যাবে।

কিন্ত আসলেই চেঞ্জ আসবে কি? ৬ ই মে তপন দত্ত নামে তৃনমুলের এক যুবকর্মী খুন হয় হুগলীর বালিতে। সেই ছেলেটি জলাভূমি বাঁচাতে স্থানীয় লোকেদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। তার খুনের পেছনে হাত প্রোমোটারদের-এবং দেখা যাচ্ছে ছেলেটি সিপিএম তৃণমুল সব নেতৃত্বের চক্ষুশুল হয়ে উঠেছিল। শশাঙ্কের মৃত্যু সিম্বলিক-নিতান্তই সাধারন ব্যাপার যে সে নেতাদের টাকাপয়সা কামানোর অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। গত দুবছরে দলে দলে সিপিএমের গুন্ডারা তৃনমুলে যোগ দিয়েছে। আরো দেবে। এটাই বাস্তব। মমতা বা বুদ্ধ মুখোশের নাম-আসল মুখ, নেপথ্যের কুশীলবরা বদলান নি কিন্ত।

উৎপাদক এবং উৎপাদনের ব্যাবস্থার মালিকানার মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন না এলে কোন পরিবর্তন বা চেঞ্জ আসা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেই অসম্ভব। তবুও মমতা যেটা পারবেন-সেটা হচ্ছে ভারতের উন্নত রাজ্যগুলি যেমন গুজরাট বা মহারাষ্ট্রের মতন রাজ্যের অর্থনীতিকে কিছুটা শক্তিশালী করতে পারেন। এর মধ্যে গুজরাত থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ওখানে কোয়াপরেটিভ আন্দোলন সফল। একমাত্র গুজরাতেই আমি দেখেছি সাধারন লোকজন দলে দলে উদ্যোগী হয়ে কিছু না কিছু ব্যাবসা করার চেষ্টা করে। ফলে গুজরাতের মাথাপিছু আয় পশ্চিম বঙ্গের প্রায় চারগুণ। এবং এর জন্যে টাটা আম্বানীদের লাগে নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাবসা করার চেষ্টা এবং রাজ্য স্তরে তার জন্যে সব ধরনের সাহায্যই, তাদেরকে আজ ভারতের সেরা অর্থনৈতিক রাজ্যে পরিণত করেছে। মমতা একা খেটে সব চেঞ্চ করে দেবেন এমন ভাবনাটাই ভুল।

বাঙালীর জীবনে পরিবর্তন আনতে গেলে, প্রতিটা বাঙালীকে ব্যাবসামুখী হতে হবে। মমতা ব্যবসার বাতাবরন তৈরী করতে পারেন মাত্র। নইলে বাংলা যে তিমিরে আছে সেখানেই থাকবে। পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতি প্রায় ৬০% মারোয়ারীদের কন্ত্রোলে। আমাকে একজন বিখ্যাত বাঙালী ডিরেক্টর বলছিলেন, কি করে ভালো বাংলা সিনেম হবে? সব টাকাত মারোয়ারীদের হাতে-আমি তাদের কিভাবে বোঝাবো বিভূতিভূষন? বাংলায় আপনি সিনেমাই করুন, বা নিউজ পেপারই খুলুন বা নিউজ চ্যানেলই খুলুন। সব কিছুতেই হাত পাততে হয় মারোয়ারীদের কাছে। সংস্কৃতিতে উন্নত নাসিকা বাঙালীর এটাই আসল পরিচয়। এর থেকে পরিবর্তন? শোষনের হাত থেকে পরিবর্তন?

আসবে না। অত চেঞ্জ কেও চাইছে বলেও মনে হচ্ছে না। মাছ ভাত খেয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী। চেঞ্জটাও খুশী হওয়ার জন্যেই। আসল চেঞ্জ নাই বা এল-চেঞ্জ নিয়ে দু একটি গান গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী।

Thursday, May 19, 2011

Minimum wage for the housemaids, a long awaited Bill

Despite all said and done, in India-middle class household will be completely paralyzed without helping hands from the housemaids. Such is the acute pain of dependence once my sister told me, she is not worried for her poor health but if her kajer masi ( housemaid) could not report due to illness, all hell will break lose!! It is difficult to think of a middle class Indian doing all the domestic chores
by himself which is otherwise the most common scenario for any citizen in the advanced countries.

Over the time, following the rules of free market, their wages have soared in the metros. In the affluent cities like Delhi or Bangalore, housemaids charge between 4000/ to 6000/ a month.In less advanced areas like Kolkata or Bhubeneshwar, wages can be close to a thousand. In the village towns, it can be even as less as 300/ to 500/ per month. While I have seen this whole spectrum, one crude reality remains the most notorious apprehension against the maids everywhere. Most of their masters think that they are irresponsible, unpunctual and lesser of a human being just because they could not make to the work occasionally. I am not sure, whether their masters ever asked them whether she has been forced to put sleeping pills to her son's breakfast so that she can come to work!

But that is another side of being Indians! Even if class consciousness exists in all the societies of the world, in India, it is exploded out of proportion. In Bengal, where the leftist ideals of equality and emancipation of the poor is held in high esteem among the intellectual mass, I have seen this division between the maids and the masters prevail exactly with the same propensity like any other state. While leftist Babu may preach for a classless society, he also can not think of a living without a housemaid cooking for him or cleaning his dishes. Leftist ideals in Bengal are more for romanticism, politics and poetry. It is not for a self evolution to act in a classless consciousness where he or she would be able to do all of his domestic works starting from cooking to cleaning. In that respect, I found monks in R K Mission are more leftist as they do all of their works without housemaids irrespective of their ranks.

However, this housemaid industry, if I am allowed to say so-is perhaps the largest industry in India. Where workers have no right, no vacation and no minimum wage.

Thankfully for the first time in Indian history, Sonia Gandhi is trying to bring a bill to enforce a minimum wage and vacation rule for these unorganized workers. I don't know how far it is possible to implement such labor law in India where even the organized labors do not get their PF and gratuity but the move and the gesture is welcome. Ironically, a strict imposition of the law can kill the housemaid market as minimum supporting wage may act as deterrent to the growth of this market. But question is-do we want the growth of this market when this kind of feudalism is a trait of less advanced country. Therefore even it is more likely that such a bill will lead to a symbolic protection of the poorest of the poor Indians, it would be a reminder to transit to a new social structure without maids. The reason here in USA, we respect all the professions has to do with the fact that every
American is learned to do all kinds of domestic work from cleaning to fixing of the roof from the very childhood.

A productive classless society in India will be born with that consciousness of respecting and learning all the manual works and not with the slogans of Leninism or Marxism. People of West Bengal already routed them out in favor of a very pragmatic political alliance. If the lefts in India can not have a better and pragmatic idea of how to organize the poorest of the poor labors, they may do better by joining the bandwagon of Sonia Gandhi to implement such labor reform which is long due in India!

Wednesday, May 11, 2011

এক ঐতিহাসিক মুহুর্তের প্রাক্কালে

৩৫ বছর একটা রাজ্যে কমিনিউস্ট বা লেনিনবাদিরা থাকলে কি হাল হতে পারে, সেটা ইতিহাসের অন্যান্য
লেনিনবাদি পরীক্ষা থেকেই বোঝা যায়।

রাজ্যের জন্যে সিপিএম কিছু করে নি এমন না। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে এ রাজ্য শিল্পে পিছিয়ে থাকলেও
ভূমি বন্টনের জন্যে এ রাজ্যের চাষীদের অবস্থা কিছুটা ভাল। তবে ভূমিহীন চাষী এবং শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ।
গুজরাতে বা মহারাষ্ট্রে যেখানে বছরে ১৮০ দিন কাজ পায় তারা, এরাজ্যে ৪০ দিন ও কাজ পায় না ভূমিহীন লেবারের
দল। এদের অধিকাংশই কাজ করতে চলে যাচ্ছে কেরালা বা গুজরাতে।

মূলত ভুল শিল্পনীতির জন্যেই বিদায় নিচ্ছে আজ সিপিএম সরকার। তারা জানত যুবকদের চাকরী দিতে হবে। কিন্ত
কিভাবে হবে, সেটা কিছু মাস্টারমশাইদের জানা সম্ভব ছিল না-যারা জীবনে কোনদিন কোন উৎপাদন পদ্ধতির
সাথে যুক্ত ছিলেন না। শেষে শিল্প স্থাপনের জন্যে টাটা সেলিমদের গোলাম হতে গিয়ে এক দালাল চক্রের হাতে
আসে সিপিএম। জনগনের পার্টি দালালদের পার্টিতে পরিণত হয়।

এর পরেও টিকে যেত সিপিএম। যদি না মাথার ওপরে প্রকাশ কারাতের মতন এক নিরেট নেতার বোঝা টানতে হত।
মমতাকে ঠেকানোর সব থেকে সহজ উপায় ছিল কংগ্রেসের সাথে কেন্দ্রে একসাথে দেশ শাসন করা। সেক্ষেত্রে বিজেপি
ছারা মমতার গতি ছিল না-এবং সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোটও হারাতে হত না। এই সামান্য পাটিগণিত বোঝার ক্ষমতাও
যার নেই-তিনি সিপিএমের বড়কর্ত্তা। ফলে যা হবার , তাই হচ্ছে।

যাইহোক ১৩ ই মে সব অর্থেই এক ঐতিহাসিক বিজয় হবে। এ বিজয় হবে গণতন্ত্রের। আশা করা যায়
তৃণমূল দ্বায়িত্ববান অর্থবহ শাসকের ভূমিকা নেবে। যা নিতে বুদ্ধ সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছেন। লেনিনবাদ মেনে
রাষ্ট্রর চেয়ে পার্টি বড় বানাতে গিয়ে পার্টি এবং রাজ্য -দুটোকেই ডুবিয়েছেন। যেখানে রাজ্য দেনায় ডুবে
যাচ্ছে-চাষীভুষো বেকারের দল নিজেদের মেয়েকে মুম্বাই এ বেচতে বাধ্য হচ্ছে সেখানে
আমেরিকা কোথায় হাগছে তাই নিয়ে মিছিল করা এক অবাস্তব ভাঁড়ামো এবং ছাগলামোতে পরিণত হয়েছিল
পশ্চিম বঙ্গে। তার সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক বনধ সংস্কৃতি জুরে আজকে ফল এই যে দেশের সব থেকে বেশী বেকার
এবং বেশ্যার সাপ্লাই লাইন আজ পশ্চিম বঙ্গ। ২০,০০০ শিক্ষক এখনো পেনসন পান নি।

উৎপাদন ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করে কোন আন্দোলন আজ পর্যন্ত ইতিহাসে জেতে নি। তাই অবাস্তব বাম আন্দোলন ত্যাগ
করে বাস্তবমুখী বাম আন্দোলনের সময় এটা। নইলে জনগনের আন্দোলন চলে যাবে দক্ষিন পন্থীদের হাতে-যেটা
মহারাষ্ট্রে হয়েছে-সেখানে জটাই পুরে জমি আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে শিব সেনা। কারন মহারাষ্ট্রে বাম আন্দোলন
আজ মৃত। গোটা দেশেই বাম আন্দোলন মৃত হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা যদি না এই হার থেকে সিপিএম শিক্ষা নিয়ে
নতুন ধরনের বাস্তববাদি বাম আন্দোলনে মানুষকে সামিল করে যা উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থার শর্তগুলি লঙ্ঘন করবে না।

Tuesday, May 3, 2011

ওসামার মৃত্যু এবং পাকিস্তান -অসমাপ্ত প্রশ্ন

ওসামা মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এত গরম-ভাবলাম এই মহামৃত্যুতে নিশ্চিত ভাবেই বিরাট কিছু একটা পরিবর্তন হবে। কিন্ত যতই যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি, ততই দেখছি, যুক্তিতে আবেগের রেশ টানা যাচ্ছে না। সত্যিই কি ওসামার মৃত্যুতে বিরাট কিছু বদলাবার সম্ভবনা আছে? না ওসামা রাবণের অনেক মুখের একটি-যতই কাট ততই গজাবে?

২০০১ এর ১১ ই সেপেটম্বর আমি নিউয়ার্কের পথেই ছিলাম। টুইন টাওয়ার ধ্বসের ছাই এবং ধোঁয়া এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান। সেই আতঙ্কের দিনের ভয়াবহ স্মৃতিতে খুশী হওয়ারই কথা- পয়লা মে যখন হোয়াইট হাউসের সামনে জনোৎসব শুরু হয়েছে-তখন একবার ভাবলাম, ওদের ভীরে সামিল হই। কিন্ত কোথাও সুরটা কেটে গেল। অনেক প্রশ্নের জবাব নেই!

(১) ৯/১১ এর পরেও অনেক অনেক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবী দেখেছে। বালি মুম্বাই মাদ্রিদ লন্ডন-অক্টোপাসের সকল শুঁড় পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। এর মধ্যে একটি বাদ দিলে, বাকীগুলিতে ওসামার কোন ভূমিকা নেই। তাহলে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুতে কি যায় আসে? বরং হামিদ মীরের ভাস্য অনুযায়ী ওসামা তার অনুগামীদের কাছে কথা রেখেছেন। জ্যান্ত ধরা দেন নি। শহীদ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।

(২) বলা হচ্ছে তিনি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের আইকন! তার মৃত্যুতে তার সাঙ্গপাঙ্গরা মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়বে!
ব্যাপারটা তাই কি? সবাই জানত আজ না হলে, কাল, ওসামা শহীদ হবে। বরং তার মৃত্যু বা আত্মত্যাগ অনুপ্রেরণার জন্ম দেবে আরো বেশী। আত্মত্যাগী শহিদরা জনমানসে হিরো-এটা আমাদের বিবর্তন সঞ্জাত মননের গভীরে প্রেথিত। একটা দলের জন্যে যে প্রাণ দেয়, তাদের প্রতি বাকীদের শ্রদ্ধা একটা সমাজের সারভাইভ্যাল স্ট্রাটেজির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর যদি আইকন মেরেই সব কিছু করা যেত, মক্কা মদিনাতে একটা হাইড্রোজেন বোম ফেললেই ইসলামি ফ্যানাটিসিজম খতম হওয়ার কথা। ব্যাপার স্যাপার কি অতই সহজ না কি?

(৩) সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের তিনটি পিলার-আদর্শবাদ,টাকা এবং অস্ত্র। ওসামার মৃত্যুতে কোনটা কমল? পাকিস্তানের মাদ্রাসাতে এই সন্ত্রাসী আদর্শের চাষাবাদ হয়-টাকা আসে আরবের দেশগুলোর ইসলামিক সহমর্মীদের কাছ থেকে-আর অস্ত্র এবং প্রশিক্ষনের জন্যে আই এস আই ত আছেই। নইলে মিলিটারীর নাকের ডগায় ওসামা পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিল?

ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদের পেছনে আসল নাটের গুরু পাকিস্তান নামে একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র। তাদের কব্জা না করতে পারলে-এই সন্ত্রাসবাদ শেষ করা অসম্ভব। আরো অসংখ্য ওসামার জন্ম দিতে পারে তারা। আমেরিকা তাদের সন্ত্রাস দমনে যে টাকা দিচ্ছে, হয়ত সেটাই সন্ত্রাসবাদিদের কাছে যাচ্ছে! হতেই পারে। আমেরিকান সেনেটররাই আজ এই প্রশ্ন তুলছেন। পাকিস্তানের অবস্থা এতই বাজে সন্ত্রাসবাদিরা যেকোন দিন যেকোন মন্ত্রীকে মারার ক্ষমতা রাখে কারন রাষ্ট্রর যন্ত্রের মধ্যেই হাজার হাজার সন্ত্রাসবাদি ঢুকে বসে আছে।

যারা ইসলামি শাসন ব্যাবস্থা বা শরিয়া রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর-তাদের তাকানো উচিত পাকিস্তানের দিকে। মধ্যযুগীয় কোন চিন্তাধারার ( শরিয়া) ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র চালাতে গেলে, কি হাল হবে, তার উজ্জ্বল উদাহরন পাকিস্তান। ভারতেও জাতিদাঙ্গা এবং ধর্মীয় টেনশনের পেছনে বড় কারন, মুসলিমদের অতীতকে ( শরিয়া) আঁকরে থাকার প্রবণতা। এরা বিজ্ঞান বলতে কোরানে অপবিজ্ঞানের সন্ধান করে। ফলে সমগ্র ইসলামিক বিশ্বে শুধু সন্তানেরই উৎপাদন হয়-কোন উন্নত প্রযুক্তি-বা উন্নত উৎপাদন কাঠামোর জন্ম সেখানে হয় না। তরুন সমাজ বেকার। তীব্র খাদ্য সংকট। ফলে আজ গণতন্ত্রের জন্যে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। ইসলামিক বিশ্বে জনসংখ্যার বিস্ফোরন এবং সেই আগত নবীন সমাজকে খেতে না দিতে পারা-গোটা বিশ্বের সংকট হয়ে দাঁড়াবে।

সেটাই সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর। উৎপাদন কাঠামোর আধুনিকরন নেই-উৎপাদন বৃদ্ধি নেই-অথচ জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিল চক্রাকারে। বিন লাদেনের বাবা মহম্মদ লাদেনের ২২ স্ত্রী, ৫৪ সন্তান। একজন স্ত্রীর একটু বয়স হলেই, তিনি তাকে ডীভোর্স করে নতুন স্ত্রী নিতেন। ইনি নাকি আবার খুব ধর্মপ্রান মুসলিম বলে সমগ্র আরব বিশ্বে সমাদৃত। এই যখন একটা ধর্মের লোকেদের অবস্থা যারা আধুনিক চিন্তাধারাকে সম্পূর্ন বর্জন করে ঘরির কাঁটা উলটো দিকে ঘোরাতে চাইছে-তখন সন্ত্রাসবাদ কমার লক্ষ্ণন দেখছি না।

আর আমেরিকাতেও যুদ্ধ ব্যাবসায়ীর অভাব নেই। জাপান, জার্মানীর সাথে এখন যুদ্ধ সম্ভব না। এখন যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সম্ভব কারন সেখানে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো এখনো আছে। সেখানে লোকে জাতি, ধর্মে বিশ্বাস রাখে বেশী। আধুনিকতায় বিশ্বাস নেই ইসলামিক সমাজে। যুদ্ধ ব্যাবসার জন্যে সেটা আদর্শ। সেই জন্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্বের সাথে বলতে পারেন-এত রাখঢাক করে কি হবে? ওখানে যুদ্ধ ব্যাবসা করেই লাভ করা উচিত! মুসলিমদের এই মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করার জন্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ডে অনেক লোক আছে।

ওসামা একটা ক্যান্সারের সামান্য লক্ষণ। পচন অনেক গভীরে-পাকিস্তানে। সেই রাষ্ট্রটা ঠিক না হলে-এই ক্যান্সার শুধুই ছড়াবে।