Saturday, April 30, 2016

হে মার্কেট এবং রোবটিক বিপ্লব

আজ পয়লা মে। ফেসবুকে কমরেডদের লাল বিপ্লবের ডাক। আমি অবশ্য বহুদিন থেকেই লিখে আসছি ইহা আরেকটি পবিত্র কমিনিউস্ট তিথি- যাহা বাম শব সাধনার পুণ্যলগ্ন।

আজ সকালে ন্যাশানাল ইলেকট্রনিক্স মিউজিয়ামে রোবোটিক্স ফেয়ারে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য আমার ছেলে, ভাগ্নে ভাগ্নীরা যেতে অটোমেশন ব্যপারটা কি -একটু এক্সপোজার পায়। অটোমেশনের জন্য সেন্সর বানানো আমার পেশা-সেই সূত্রে কিভাবে আস্তে আস্তে শ্রমিক শ্রেনীর বিলোপ ঘটছে বা ঘটবে-সেটা আমার কাছে খুবই পরিস্কার। কিন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ বামপন্থীর বিদ্যে বইতেই সীমাবদ্ধ-ফলে তাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল কিভাবে ১৯৮০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকাতে ফ্যাক্টরি শ্রমিক কমেছে ৯০% ( হ্যা, এখন ১৯৮০ সালের এক দশমাংশ শ্রমিকেই কাজ চলে যায় ), অথচ প্রোডাকশন বেড়েছে প্রায় আড়াইগুন।

কিছুদিন আগে জামসেদপুরে টাটা স্টীলে গিয়েছিলাম। সেখানেও এক গল্প। ১৯৯০ সালে টিসকোতে ছিল সত্তর হাজার শ্রমিক । আজকে প্রায় চোদ্দ হাজার। তার মধ্যেও দশ হাজার উদবৃত্ত।

তাও ত এখনো ফ্যক্টরিতে রোবটের ব্যবহার খুব কম-সবে শুরু হয়েছে। তাতেই এই হাল।

গুগল, আমাজনে সেলফ ড্রাইভিং কারের জন্য আগামী দুই দশকে চাকরি হারাবে প্রায় ৭০% ড্রাইভার। অবশ্য আমেরিকাতে। ভারতের রাস্তায় সেলফ ড্রাইভিং কার কাজ করবে কি না কে জানে।

ডোমেস্টিক রোবট-যা বাড়ির ঝাঁড়পোছ, রান্না করতে পারবে-মানে ডোমেস্টিক মেইড-সেটা ব্যাপক স্কেলে আসতে এখনো পনেরো কুড়ি বছর লাগবে। সেটা হলে রেস্টুরেন্ট, হোটেল ইত্যাদি ব্যবসায় যে কোটি কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়, তাদের অধিকাংশই বেকার বসে যাবে। আরো চল্লিশ বছর বাদে, ভারতেও সব ঘরে ঘরে কাজের মাসির বদলে ডোমেস্টিক রোবট থাকবে।

প্রশ্ন হচ্ছে ২০৫০ সালে বামপন্থীরা কি রোবটদের স্বার্থে মেদিবস পালন করবে? শিক্ষক, নার্স, উকিল , ডাক্তারদের চাকরি যাবার ভয় নেই । কিন্ত অটোমেশনের জন্য এই সব সেক্টরেও চাকরি কমবে। ইউটিউব এবং উইকির চেয়ে ভাল শিক্ষক হওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

আগের বার মে দিবসেও এই প্রশ্নই তুলেছিলাম। বাসু আমাকে একটা বই এর পিডিএফ দিয়েছিল। নামটা মনে নেই। তবে বইটার প্রতিপাদ্য ছিল এই যে--

প্রযুক্তি উন্নত হলে শ্রমিকের ডেজিগনেশন চেঞ্জ হয়। শোষনের বদল হয় না। যেমন আই টি কর্মীরা নাকি আরো বেশী শোষিত। তাদের কাজের ঘন্টার শেষ নেই। কিন্ত লেখক যেটা বেমালুম ভুলে গেলেন কোডিং এর ক্ষেত্রে দক্ষতার দাম ওপেন মার্কেটে খুব বেশী- দক্ষ কোডাররা কোন কোম্পানীর হয়ে কাজ করেন না সাধারনত-তারা নিজেদের মতন কনসাল্টিং করেন এবং সেক্ষেত্রে তারা যদি সপ্তাহে ষাট ঘন্টা খাটেন, তাহলে সেটাই বিল করবেন এবং তাদের স্টান্ডার্ড অব লিভিং মালিক শ্রেনীর কাছাকাছিই। কোন টপ কোডার এই সব ইনফোসিস টিসিএসের হয়ে কাজ করে না। কারন এসব কোম্পানীর মাইনে টপ কোডারদের থেকে অনেক অনেক কম। আই টি তে যেসব কর্মীদের ওপর শোষন হয়, তাদের অধিকাংশই আসলে গ্লোরিফায়েড ক্লার্ক। এবং আরো মুশকিল হচ্ছে, এই সব লো এন্ড আই টির কাজ ও অটোমেশনের দৌলতে উঠেই যাবে। আগামী দিনগুলিতে আই টিতেও লো এন্ড স্কিলের কর্মী ঊঠে যাবে-একমাত্র হাইলি পেইড টপ কোডার বা আর্ক্টিটেক্টদেরই চাকরি থাকবে।

মোদ্দা কথা শ্রমিক বলে কিস্যু থাকবে না।

আরেকটা ট্রিভিয়া। হে মার্কেটের ঘটনা ঘটে ৪ঠা মে, ১৮৮৪। ওই সময়টা (১৮৮০-১৯১০) আমেরিকার শ্রমিক ইতিহাসের সব থেকে টার্বুলেন্ট অধ্যায়। অসংখ্য শ্রমিক-মালিক সংঘাত হয়েছে এই সময়। হে মার্কেটের ঘটনা খুব ছোট সেই স্কেলে। হোমস্টেড স্টিলের শ্রমিক মালিক সংঘাত এর থেকেও বড় ঘটনা ছিল -যেখানে শ্রমিকদের ওপর মেশিন গান দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। এবং হোমস্টেড স্টিলে শ্রমিক নিধন, আমেরিকার ক্যাপিটালিজমের সব থেকে বড় কলঙ্ক। হে মার্কেটের ঘটনা , আমেরিকার শ্রম ইতিহাসে কেউ মনে রাখে নি । হোমস্টেড স্টীলের ঘটনা এখানে অনেক বেশী চর্চিত -কারন ওই ঘটনা পরবর্তীকালে অনেক শ্রম আইন নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত।

ছোটবেলা থেকে মেদিবস নিয়ে আরেকটা রূপকথার গল্প ফেঁদেছে কমিনিউস্টরা। আমার বহুদিন ধারনা ছিল হে মার্কেটের ঘটনা থেকেই আট ঘন্টার কাজ বাধ্যতামূলক করতে বাধ্য হয় সরকার। এটা ডাঁহা মিথ্যে।
১৮৮০ সাল থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক কাজের লোড বৃদ্ধি পেয়েছিল। কমে নি। মোদ্দা কথা শ্রমিক আন্দোলন ছিল গ্রসলি ইনএফেক্টিভ।

তাহলে দৈনিক আটঘন্টা কাজের আইন বা শ্রম সুরক্ষা আইনগুলোর উৎস কি?

আমেরিকাতে শ্রমিকদের রক্ষাকবচ দিয়েছিলেন এফ ডি আর বা প্রেসিডেন্ট ফ্রাংলিন রুজভেল্ট (১৯৩৩-৪৫)। এবং তা করা হয়েছিল মূলত আন্টিট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে মর্গ্যান বা রকাফেলারদের মনোপলি ভেঙে। বাজারে বড় কোম্পানীগুলোর মনোপলি ভেঙে, শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন এবং সুরক্ষার নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হোন রুজভেল্ট। তার সাথে হে মার্কেটের কোন সম্পর্ক নেই। সেটা আরেকটা ইতিহাস। এবং সেই ইতিহাসের দাবী শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা করতে গেলে দরকার রুজভেল্টের মতন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা-যিনি মার্কেটের দক্ষতা বাড়িয়েও শ্রম সুরক্ষা দিতে পারবেন।

তবে হে মার্কেটের ঘটনা আমেরিকাতে কেউ মনে রাখে নি-লেবার ইউনিয়ানগুলোও এখানে পয়লা মে পালন করে না। এখানে অনেক বেশী আলোচিত হোমস্টেড স্টীলের শ্রমিক প্রতিরোধের ইতিহাস।



Thursday, April 28, 2016

এভি সচ, ওভি সচ!

বাংলার মসনদে কে আসবে?
কেস পুরো ঘেঁটে ঘ হয়ে উপনিষদের নারদ-বিষ্ণুর গপ্পো।

নারদ বিষ্ণুর কাছে জিজ্ঞেস করলেন-প্রভু মায়া কি?

বিষ্ণু গাছের তলায় দিবানিদ্রায় মগ্ন-নারদকে কাছে পেয়ে বল্লেন, যাও নদী থেকে জল নিয়ে এসোত-আগে তৃষ্ণা মেটাই-পরে বলছি মায়া কি।

নারদ নদীতে জল আনতে গিয়ে দেখলেন এক পরমা সুন্দরী কন্যা। জলের কথা ভুলে গিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছেন-এবং যথারীতি পিছু ধাওয়া করে মহিলার বাড়ি গিয়ে বাবাকে পটিয়ে, বিয়েটাও সেরা ফেললেন। সেটি ছিল এক ধনী বণিকের এমমাত্র কন্যা। নারদ প্রচুর সম্পত্তির মালিক হলেন। কালক্রমে পুত্র, পৌত্র এল ঘরে। নাতি নাতনি নিয়ে সুখের সংসার।

তারপরে হঠাৎ একদিন বন্যা। জলের সুনামিতে ভেসে গেল নারদের প্রাসাদ। নারদ বাঁচানোর চেষ্টা করলেন তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, নাতি নাতনী। কিন্ত আস্তে আস্তে ডুবে গেল সবাই। নারদ ও একবুক জলের তলায় ডুবে বাতাসের জন্য হাঁস্ফাস করছেন। মৃত্যু নিকটে-বহুদিন বাদে বিষ্ণুর স্বরণ নিলেন-প্রভু বাঁচাও।

বিষ্ণু দুহাতে নারদকে জল থেকে তুল নিয়ে বসালেন পাশে। সেই গাছতলায় যেখান থেকে বিষ্ণুর নির্দেশে জল নিতে বেড়িয়েছিল নারদ।

বিষ্ণু মৃদু হেসে বল্লেন- আরে আমার জল কোথায় গেল?

নারদ- বলে-প্রভু-তাহলে যা দেখিলাম, উপভোগ করিলাম স্বপ্নে সবই ভুল? কোন কিছু বাস্তব না? কোন কিছু সত্য না?

বিষ্ণু বল্লেন দূর পাগল-ওভি সচ, এভি সচ!

আনন্দবাজার এবং সিপিএমের কথাবার্ত্তা যখনই শুনি-এরা নিশ্চিত মমতার পতন ১৯ শে মে। সাধারন লোকেদের সাথে কথা বললে, তারা বলে তৃনমূলের আসন কমবে-কিন্ত হারবে না। কোনটা যে মায়া, আর কোনটা বাস্তব কে জানে!

পৃথিবীর প্রথম ডেমোক্রাসি ছিল এথেন্সে -আড়াই হাজার বছর আগে। গনতন্ত্র থেকে যাতে স্বৈরতন্ত্র না হয়- কোন নেতা জনপ্রিয় হলেই ভোটাভুটি করে তাকে নির্বাসনে পাঠানোর রেওয়াজ ছিল এথেন্সে।

সেই আড়াই হাজার বছর আগেও যা, জনগণ এখনো তাই আছে। গণতন্ত্রের বস্ত্র হরন-কারুর পছন্দ না। সবাই নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভালো করে বুঝে নিতে চাইছে । সেই হিসাবে নিলে, সিপিএমের জেতার কথা। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে সিপিএমের ৩৪ বছর বনাম মমতা ব্যানার্জির পাঁচ বছর -কোন শাসনে মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার বেশী পেয়েছে- এটার চুলচেরা বিচার করতে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দরকার। সিপিএম পার্টির স্বৈরাচারীর শাসনে যারা ক্রদ্ধ ছিল- সিপিএমের প্রতি তাদের আস্থা ফিরেছে-এমন আলামত দেখিনি। সিপিএম ইনফ্যাক্ট এই আস্থা ফেরানোর কোন চেষ্টাও করে নি শেষ পাঁচ বছর। কমরেডরা এখনো সেই একই রকম উদ্ধত আছেন। মমতার কিছু ভুল না করলে, এইবারেই পার্টিটা সাইন বোর্ড পার্টিতে পরিণত হত। কিন্ত সেটা হবে না-না জিতলেও সিপিএম পায়ের তলায় শক্ত মাটি ফিরে পাবে। আর যদি জেতে তাহলে বুঝতে হবে, দিদির স্বৈরাচার পার্টির অত্যাচারকে ছাড়িয়ে গেছে।



যাইহোক, ১৯শে নভেম্বর পর্যন্ত আমার কাছে সবই মায়া। এভি সচ, ওভি সচ।

Tuesday, April 26, 2016

আমেরিকাতে ভোট-প্রাইমারী

 আজ সকাল সাতটাই উঠেই ভোট দিতে গেলাম। বাড়ী থেকে দুমিনিট দূরে বুথ। এলিকট মিডল স্কুলে।
 বুথে কোন লোক নেই -অন্তত বাইরে। হিলারী বা বার্নি কারুর প্ল্যাকার্ড নেই। ট্রাম্পের প্ল্যাকার্ডে ছয়লাপ। স্কুলবোর্ডের পার্থীদের এজেন্টরা বাইরে ক্যানভাসিং করছে।

    বুথের ভেতরে ছিলাম দশ মিনিট। এখানে ডাইভার লাইসেন্স দেখালে ওরা ডেটাবেস থেকে বার করে আনে ভোটার কিনা। সেটা দেখে ব্যালট দেয়। ঐ দশ মিনিটে আমি এবং আমার স্ত্রী ছাড়া আর মাত্র একজন ভোটার ছিল। বুথের ইলেকশন কর্মীদের গড় বয়স সত্তরের ওপরে। সবাই মজা করে ভল্যুউন্টারিং করছেন।

  প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন মোটেও এত ফাঁকা ফাঁকা হয় না। বিরাট লাইন থাকে। আজকে আসলে প্রাইমারী ইলেকশনের দিন।  এর মানে হল, আজকে যারা পার্টিকার্ড হোল্ডার তারা তাদের নেতা বা ক্যান্ডিডেট কে হবে সেটা নির্বাচন করে। এখানে ব্যারাক ওবামা বা হিলারী ঠিক করে না কংগ্রেসম্যান বা সেনেটর কে হবে। এখানে শতব্দি বা দেবকে ওই ভাবে টিকিট দেওয়া যায় না। পার্টির স্থানীয় মেম্বাররা ভোট দিয়ে ঠিক করে- কে পার্টি ক্যান্ডিডেট হবে। ভাবুন তৃনমূলের পার্থী কে হবে-সেটা মমতা বা মুকুলের হাতে নেই। স্থানীয় পার্টি কার্ড হোল্ডাররা ঠিক করে সেটা। যে কেউ দাঁড়াতে পারে।  আজকে ছিল তার দিন। প্রেসিডেন্টিয়াল ক্যান্ডিডেট হিসাবে বার্নি বনাম হিলারী শুধু না-আজকে সেনেট, কংগ্রেসম্যান কে হবে-তার জন্যেও ভোট ছিল। অধিকাংশ লোক স্থানীয় সেনেটর বা কংগ্রেসম্যানের নামই জানে না। আমি বরং জেনেছি তাও কিছু পার্টি করার সুবাধে। বাকী অধিকাংশ লোক একদমই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।


               টার্ন আউটের অবস্থা বেশ খারাপ। এই কেন্দ্রে প্রায় ৩০০০ রেজিস্টারড ডেমোক্রাট বা রিপাবলিকান আছে। দেখছিলাম দুই বৃদ্ধ ইলেকশন অফিসার আলোচনা করছে ৩০০ ভোট দিতে এলে হয়।

   এটা আমেরিকান গণতন্ত্রের একটা বাজে দিক । জনগনের পার্টিসিপেশন কম। ফলে টাকা দিয়ে এই গণতন্ত্র ম্যানেজ করা সহজ এবং সেটাই হচ্ছে।  ভালোর দিকে যেটা চোখে পড়ল-আমেরিকার কালোদের মধ্যে প্রায় ১০০% রাজনীতি সচেতন এবং তারা প্রায় সবাই ডেমোক্রাটিক পার্টির কার্ড হোল্ডার। এরাই হিলারীকে জেতাল এবার। এবং এক্টিভ ও। ডেমোক্রাটিক পার্টির মিটিং মানে এখানে কারুর বাড়িতে দশ কুড়িজনের সমাবেশ-তার মধ্যে ৮০% ই  ব্ল্যাক। এটাই মেরীল্যান্ডের চিত্র।

Monday, April 25, 2016

আজকের বাংলাদেশ, কালকের পশ্চিম বঙ্গ

(১)
জুলহজ মান্নানের রুপবান ম্যাগাজিনের কথা প্রথম দেখেছিলাম মুক্তমনার পাতায়। অভিজিত বাংলাদেশে প্রথম সমকামিতা বিষয়ে লেখালেখি শুরু করে ২০০৫-৭ সাল নাগাদ। সমকামিতা নিয়ে বাংলায় প্রথম কোন মননশীল বইটাও ওর লেখা। রুপবান ম্যাগাজিন যখন প্রকাশিত হয়-ও খুব খুশী ছিল। বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অন্ধকার কেটে আলো আসছে-অনেক নতুন ছেলেমেয়েরা রক্ষণশীলতার খোলশ ছেড়ে নতুন বিশ্বের দিকে এগোচ্ছে-রূপবান ম্যাগাজিন প্রকাশের সময় অভিজিত এমনই ভেবেছিল।

কিন্ত সেই ২০১৪ থেকে আজ ২০১৬। মাত্র চোদ্দমাসে ধর্মান্ধ মুসলিমদের চাপাতির কোপে বাংলাদেশ এখন উটের পেছনে চেপে সপ্তম শতকের আরবের পাসপোর্টের জন্য বেহস্তের দরজায় দাঁড়িয়ে।

ইসলাম আর তার প্রফেটকে গালাগাল দিয়ে কিস্যু হবে না। কারন ধর্ম একটা উইক টেক্সট। যে যেমন ভাবে পারবে ব্যখ্যা করবে। প্রফেট একজন কাল্পনিক চরিত্র-১% ও ঐতিহাসিক প্রমান নেই তার অত্বিত্বের। এমন ধর্মের রূপকথার জগতে যে যেমন পারবে-সে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ইসলামকে কাজে লাগাবে। উইক টেক্সট এবং কাল্পনিক প্রফেটদের নিয়ে এটাই সমস্যা যে তাহা রাজনীতির কাজে প্রচুর লাগে।

শেখ হাসিনা বলেই দিয়েছেন নাস্তিকদের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে না। মানে নাস্তিকদের হত্যা করার সীলমোহরে ছাপ দিয়ে যদ্দিন স্বৈরতন্ত্র কায়েম রাখা যায় আর কি। নাস্তিকদের হত্যা যাক- বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহেই হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারধোর আছেই। এবং সেগুলো করছে শেখ হাসিনার আওয়ামি লীগের লোকজনই-যারা আবার সেকুলার পার্টি নাকি। এর থেকেত ভারতের সাম্প্রদায়িক বিজেপির ট্রাক রেকর্ড অনেক ভাল।

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ঘটনা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় পশ্চিম বঙ্গ যেদিন মুসলিম প্রধান হবে সেদিন এই রাজ্যের হিন্দু, নাস্তিক এবং উদারমনা মুসলিমদের কি হবে? পশ্চিম বঙ্গের দুজন মুসলিম নেতার নাম ভাবুন-এই মুহুর্তে সবার প্রথমে মনে আসবে রেজ্জাক মোল্লা আর মহম্মদ সেলিমের নাম। এরা মুখ্যমন্ত্রী হলে আপনার বাকস্বাধীনতা, বা ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে বলে মনে হয়? তসলিমা বিতাড়নের ক্ষেত্রে সেলিমের ভূমিকা কি ছিল? সেলিম রাজাবাজারে প্রকাশ্য জনসভায় তসলিমাকে শিয়ার চর-ইসলামের শত্রু বলে মুসলমানদের নাকি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। আজকে শেখ হাসিনা "নাস্তিকদের জান মালের দ্বায়িত্ব নিতে পারবেন না" বলে বাংলাদেশের মুসলমানদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্যাটার্ন ত এক। রেজ্জাক মোল্লাকে ছেড়ে দিলাম। উনি স্বগোষিত ইসলামের সেবক।

এর মানে এই অবশ্যই না মুসলমানদের মধ্যে প্রগতিশীলরা নেই। কিন্ত তাদের কে সবাই পেছনে ঠেলছে। পশ্চিম বঙ্গেই নজরুল ইসলামের মতন দক্ষ মুসলমান নেতা আছেন-কিন্ত তৃনমূল থেকে সিপিএম সবাই তাকে পানিশমেন্ট দিতেই ব্যস্ত ছিল। প্রগতিশীল মুসলমানদের না ঠাঁই দেয় সিপিএম, না তৃনমূল। তারা তুলে আনে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক রক্ষণশীল রেজ্জাক মোল্লা বা মহম্মদ সেলিমের মতন লোকেদের। অথচ সইফুদ্দিন চৌধুরীর মতন আসল প্রগতিশীল মুসলিমরা কোনদিন নেতা হতে পারেন না। তাদের বহিস্কার, তিরস্কার করা হয়।

এর কারন এই যে মুসলমানদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট লোক এত সাম্প্রদায়িক ( হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ট লোকেরাও সাম্প্রদায়িক-কিন্ত তুলনায় কম), রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক নেতা ছাড়া ওই ভোট ব্লক কেউ টানতে পারে না। ফলে যেদিন পশ্চিম বঙ্গ মুসলমান প্রধান হবে-ধ্রুন এই ২০৩০-৪০ সালের মধ্যে-তখন একজন বিশিষ্ট সাম্প্রদায়িক মুসলিম নেতাই পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। যিনি শেখ হাসিনার মতন প্রকাশ্যেই বলার সাহস রাখবেন ইসলামের বিরোধিতা মানে খুন হলে সরকার দ্বায়িত্ব নেবেনা। পরোক্ষ ভাবে বুদ্ধিজীবি খুন উস্কে দেওয়া হবে। হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটতরাজ উস্কে দেওয়া হবে ভোটিং ব্লক খুশী রাখতে। যা বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে ধারাবাহিক ভাবে হচ্ছে। আজকে যারা বামেরা এইসব শুনে নাক শিঁটকাচ্ছেন-তারা ইসলামের হাতে সবার আগে বিলুপ্ত হবেন। যেমন হয়েছেন পাকিস্থান এবং বাংলাদেশে। দেশভাগের আগে এই দুই দেশেই কমিনিউস্ট আন্দোলন ছিল বেশ শক্তিশালী। বিশেষত চাষীদের মধ্যে। কিন্ত ইসলাম ধর্মের চাপে দুই দেশেই কমিনিউস্টরা এখন প্রান্তিক শ্রেনী। পাঁচ বার নামাজ পড়ে কমিনিউজম করার পারমিশন মেলে। এই ত অবস্থা মুসলমানদেশের লুপ্তপ্রায় কমিনিউস্টদের।

দুর্ভাগ্যজনক শোনালেও এটাই পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত।

(২)
কোন সমাধান আছে কি? ইনফ্যাক্ট পশ্চিম বঙ্গে যে ভোটিং ভায়োলেন্সে আজ আকন্ঠ ডুবে-তার সমাধান এবং সাম্প্রদায়িকতার সমাধান একসূত্রে বাঁধা। রাজ্যে চাকরি দরকার-শিক্ষার প্রসার দরকার, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার দরকার। হিন্দুত্ববাদিদের দিয়ে পশ্চিম বঙ্গে ইসলামিস্টদের উত্থান আটকানো যাবে না। বিজ্ঞানমুখী প্রগতিশীল আন্দোলনই একমাত্র এটা রুখতে পারে। কিন্ত এই রাজ্যে বামেরা না প্রগতিশীল, না ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে।  পশ্চিম বঙ্গে কোন শক্তিশালী যুক্তিবাদি বিজ্ঞানবাদি ব্লক নেই। যারা রাজ্যের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত-তারা বেশ্যাজীবিদের অধ্ম। তাদের দিয়ে কিস্যু হবে না।


ফলে পশ্চিম বঙ্গে হিন্দু-মুসলমান গৃহযুদ্ধ সময়ের অপেক্ষা। রাজ্যটা আরেকটা কাশ্মীর হবে।


Saturday, April 9, 2016

জলযুদ্ধ

                                                                (১)
মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার তীব্র জল সংকট  এককথায় অকল্পনীয়। ড্যাম, লেক শুকিয়ে গেছে। গ্রাউন্ড ওয়াটার বহুদিন আগেই লুঠ।  ইনকামের এক তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে জল কিনতে! ভাবা যায়?  গরীব লোকেরা মাসে একদিন স্নান করার সুযোগ পাচ্ছে। যাদের মাসিক ইনকাম ৫০,০০০ টাকার ওপরে, একমাত্র সেইসব ফ্যামিলিগুলো স্নান করার জন্য কয়েকশো লিটার জল কেনার ক্ষমতা রাখে। তাতেও স্নানের কোটা সপ্তাহে একদিন।

  ব্যঙ্গালোরের অবস্থা ? মারাথালির মতন নতুন গজিয়ে ওঠা শহরের দিকগুলোতে
 জল নেমে গেছে ১০০০ ফুটের নীচে। ১৯৮০ সালে মাত্র ত্রিশ ফুট নীচেই পাওয়া  যেত জল।
  মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ব্যাঙ্গালোরে জল এত নীচে নেমে যাবে শহরের অধিকাংশ
 অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হবে। যদিও এই আশঙ্কায় ব্যাঙ্গালোরে ওয়াটার হারভেস্টিং এখন জনপ্রিয় । চৈনিক প্রবাদ ক্রাইসিসই সমাধানের জন্ম দেয়। দেখা যায় ব্যাঙ্গালোরের ওয়াটার হারভেস্টিং আস্তে আস্তে শহরটাকে বাঁচাতে পারে কি না।


 দিল্লীতে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের সপ্তাহ ছিল ভয়াবহ। ৭০% দিল্লীবাসি জলকিনে খেতে বাধ্য হয় কারন যমুনা নদীতে আমোনিয়াদূষন। দিল্লির জলে এমোনিয়ার পরিমান চার পি পিএমের বেশী-যেখানে মাত্র এক পিপিএমই দূষনের কারন হতে পারে। দিল্লির পানিপথে কোন কোন স্থানে জলে ৫০ পিপিএমের বেশী এমোনিয়া। দিল্লীতেও ওয়াটার হারভেস্টিং বাধ্যতামূলক হতে চলেছে।

 কোলকাতায় জলের ক্রাইসিস হওয়ার কথা না-কিন্ত হচ্ছে চুরির জন্য। মাটির তলার জল এবং পাইপের জল-দুই টাইপের জলই চুরি হচ্ছে কোলকাতায়। সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পাইপলাইন থেকে জল চুরি করে বেচার ব্যবসা একমাত্র কোলকাতাতেই সম্ভব। যেজল লোকেদের ফ্রিতে পাওয়ার কথা, কিছু লোক পাম্প বসিয়ে চুরি করে, সেটাই তাদের বিক্রি করছে।  কোলকাতায় বেয়াইনি ডিপগটিউবয়েলের সংখ্যা ২০,০০০ এর বেশী।  রাজারহাট সহ পূর্বদিকের জলাভূমি বুঁজিয়ে দেওয়ার ফলেও কোলকাতায় জলের লেভেল কমেছে। কোলকাতাতেও ওয়াটার হারভেস্টিং দ্রুত শুরু করা দরকার কারন পূর্বদিকের লেকগুলো যে গ্রাউন্ড ওয়াটার ব্যালান্স করত তা ধ্বংশ করেই উঠেছে সেক্টর ফাইভ।

                                                              (২)
  জলের ও যে ক্রাইসিস হতে পারে -সত্যিকথা বলতে কি আমি সেটা ইদানিং ভারতে গেলে হারে হারে টের পাচ্ছি।

 আমার ছোটবেলা কেটেছে করিমপুরে। এসব এলাকার সব দিকেই নদী। টিপিক্যাল বদ্বীবস্থ এলাকা। বাড়ির সামনেও ছিল নদী। বাড়িতে ছিল দুটো  টিউবয়েল। মনে আছে মাত্র দশফুট খুঁড়লেই জল। নদীর ধারে মাত্র চারপাঁচ ফুট খুঁড়লেই জল ওঠে। তবে সেই জল বিশাক্ত হতে পারে বলে, ত্রিশ চল্লিশ ফুট নীচে তৃতীয় লেয়ার থেকে জল তোলা হত।

  জলের ওপর অত্যাচার হতে পারে সেটা প্রথম টের পাই যখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি। হঠাৎ আওয়াজ উঠল এই ডেল্টা বেসিনে নাকি প্রচুর তেল আছে। তাই ওএনজিসি খোঁড়াখুড়ি শুরু করেছে এই এলাকায়।  মাঝে মাঝেই মাটির অনেক নীচে ডিনামাইট চার্জে কেঁপে উঠত এলাকা। তারপর থেকেই দেখলাম টিউবয়েলে জলে মাঝে মাঝেই তেল ভাঁসছে।  খুব সম্ভবত তেলের লেয়ারের কাছে ডিনামাইট ব্লাস্টে-সেই প্রাকৃতিক তেল গুলো ছড়িয়ে যাচ্ছিল পানীয় জলের লেয়ারে।

  আজকে গোটা আমেরিকাতে জুরে তেল তোলার জন্য ফ্রাকিং নষ্ট করে দিচ্ছে পানীয় জলের লেয়ার।  তার বিরুদ্ধে এখানেও প্রতিবাদি আন্দোলন ।  যখনই এসব দেখি, খুব মনে পড়ে করিমপুরের বাল্য অভিজ্ঞতা।

  পশ্চিম বঙ্গে শিল্প না আসা হয়ত একধরনের ব্লেসিং। আশীর্বাদ। ভারতে শিল্পে কোন রেগুলেশন নেই। যা আছে সব পেপারে। ফলে ভারতের যেসব শহরগুলো শিল্পোন্নত হয়েছে-আজকে প্রায় সবগুলোই ধ্বংসের সামনে। গুঁরগাউর অবস্থা গত পাঁচ বছরে এত বাজে হয়েছে যে তা বলার না। শিল্প আসে নি বলে পশ্চিম বঙ্গের অধিকাংশ শহরগুলো অন্তত জলদূষন থেকে অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে।

 যেভাবে দূষন বেড়েছে, জলের লেয়ার কমেছে, ভীর বাড়ছে-ভারতের শহরগুলো কতদিন বসবাসযোগ্য থাকবে কে জানে।










    

Thursday, April 7, 2016

প্লেটোর পশ্চিমবঙ্গ

(১)
 গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম বা বিবর্তন যে রাজনৈতিক নিয়তি তা রিপাবলিক গ্রন্থে ( অষ্ঠম খন্ড) বহুদিন আগে লিখে গেছেন মহামান্য প্লেটো। গণতন্ত্র কিভাবে গুন্ডারাজ নিয়ন্ত্রিত স্বৈরতন্ত্রের জন্মদাত্রী সেই প্রসঙ্গে প্লেটো লিখছেন -"গণতন্ত্রের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হবে এই যে মানুষ আরো স্বাধীনতা ভোগ করতে চাইবে-এবং সেই স্বাধীনতার কলা ও মূলো দেখিয়ে জনপ্রিয় বিদ্রোহি নেতা ক্ষমতা দখল করবেন এবং গুন্ডারাজ / খুন জখমের ভয়ার্ত আবহ কায়েম করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরন করবেন। লোকে এই স্বৈরাচারের প্রতি চূড়ান্ত রুষ্ট হবে-কিন্ত অসহায় হয়ে দেখবে, শাসক বদলানোর কোন উপায় নেই।"

  ইনফ্যাক্ট ১৯৭২-৭৭ এর কংগ্রেস আমল থেকে সিপিএম, সিপিএম থেকে তৃনমূল, প্রতিটা ক্ষেত্রেই সরকার গুলো তৈরী হয়েছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তাদের ক্ষেত্রে প্লেটোর বাণী খেটেছে কিনা, তার নির্ধারনের দায় আপনাদের। একটা বড় প্রশ্ন, জনগণের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা সত্যিই কতটা এসেছে?

  এখানে আনন্দবাজার এবং বাংলার বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় মানুষকে ভুল পথে চালিয়েছে এবং এখনো চালাচ্ছে।  পার্লামেন্টিয় রাজনীতিতে ভোটের মাধ্যমে শাসক বদলিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়া যায় না। এটাও আশা করা ভুল যে রাজনীতিবিদরা তাদের জন্য কাজ করবে নিঃস্বার্থ ভাবে। ইনফ্যাক্ট এথেন্সের গণতন্ত্র নিয়ে শুধু প্লেটো না এরিস্টটল, সত্রেটিস সবাই হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং শুধু ভোট দেওয়ার ক্ষমতা এলেই জনগনের হাতে আসল ক্ষমতা এল এসব আকাশ কুসুম কল্পনা।


জনগণের হাতে ক্ষমতা গণতন্ত্রও দিতে পারে নি-অতীতের কমিউনিজম ত পারেই নি। আমেরিকাতেও জনগণ বৃহৎ বিজনেসের হাতে জিম্মি। এর কারন মোটেও এই না যে এই বৃহৎ কর্পরেশনগুলো রাজনৈতিক নেতাদের কিনে নেয়। তা হয়ত নেয়- পশ্চিম বঙ্গ সহ যেখানেই যে তন্ত্রই কায়েম হৌক না কেন, যে পার্টি বা নেতা সিংহাসনে বসুন,  ক্ষমতার চাবিকাঠি ব্যবসায়ীদের হাতেই থাকবে। এর মূল কারন উৎপাদনের দখল যাদের হাতে ক্ষমতা সব সময় তাদের হাতেই থাকবে।  জনগণের হাতে উৎপাদনের চাবিকাঠি না থাকলে কি তন্ত্র, কে শাসক, তাতে কিস্যু যায় আসে না।

এই অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে একমাত্র কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনে। যা আস্তে আস্তে চেষ্টা করতেই হবে নইলে শেষের সেদিন আরো ভয়ংকর।  প্রথমেই চিকিৎসার কথায় আসি। সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা। বেসরকারি হাসপাতালে ঢোকা মানে জিন্দা জবাই হতে গলা বাড়ানো। ইনফ্যাক্ট শিক্ষার অবস্থাও তাই। সরকারি স্কুলে ক্লাস হয় না-আর বেসরকারি স্কুল মানে পকেট্মার ম্যানেজমেন্ট।

 এর উল্টোদিকটাও আমেরিকাতে দেখছি। কিছু সাইনিং রেখা আছে-যা আসলে ভারতও ছিল- সমাধান আমাদের সামনেই ছিল-কেউ সমাধানটা দেখতে চায় নি। এর সমাধান অবশ্যই হাঁসপাতাল এবং স্কুলগুলো সরকারি বা বেসরকারি হাতে না রেখে স্থানীয় কমিউনিটির হাতে থাকুক। অবশ্যই নির্বাচিত কমিটি হতে হবে।  স্থানীয় নির্বাচনে-পঞ্চায়েতে, মিউনিসিপালিটিতে বা স্কুল কমিটি ইত্যাদিতে পার্টির ইন্টারভেনশন আইন করে বন্ধ করা উচিত। ভারতে এই মর্মে অনেকেই আবেদন তুলেছেন-কিন্ত যারা জনপ্রতিনিধি তারা সবাই পার্টির লোক। তারা স্থানীয় নির্বাচনে পার্টি বিহীন বোর্ডের ধারনার পক্ষে ভোট দিয়ে নিজের পার্টির ক্ষতি করবেন কেন? ফলে ভারতে জনগণের ভবিষ্যত হয় সরকারি হাসপাতালে কুকুরের সাথে বেড শেয়ার করা নইলে বেসরকারি হাসপাতালে এসি রুমে নিজেকে ডাকাতের হাতে তুলে দেওয়া।

 আমি যেখানে থাকি সেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটোই কমিউনিটি ভিত্তিক।  যেহেতু দুটো ক্ষেত্রেই খরিদ্দার এবং বিক্রেতা আপনি নিজে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুটি ক্ষেত্রেই জনগনের কথা ভেবেই হাসপাতাল এবং শিক্ষা চলতে বাধ্য। এখানে ঘুঘুর বাসা তৈরী হতেই পারে কিন্ত যেহেতু দিনের শেষে সবাইকেই কমিউনিটিতে কোথাও না কোথাও মুখ দেখাতে হয়-সেহেতুে একাউন্টেবিলিটি অনেক বেশীই থাকে। সব থেকে বড় কথা যিনি নেতা-দিনের শেষে তার ছেলে মেয়েও কমিউনিটি স্কুলেই যাচ্ছে, তিনিও সেই একই হাসপাতালের ওপরেই ভরসা করছেন।

 জ্যোতিবসু যখন আমেরিতে ভর্তি থাকতেন বা সিপিএমের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ছেলেমেয়েরা নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হত বা পরবর্তীকালে অনেক নেতার ছেলে মেয়েরাই প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে এখন আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরি করে ফেসবুকে বামপন্থী ফলাচ্ছে--- আমি এই জন্যে প্রতিবাদ করেছিলাম, আজও করি। সিস্টেম ঠিক করতে গেলে, সিস্টেমের নেতাদের সেই সিস্টেমের প্রথম ক্রেতা বা ভোক্তা হতে হবে। তা না হলে সবটাই ফাঁকি। এবং ফাঁকিবাজি জিনিস বেশীদিন চলে না-সিপিএম ও চলে নি।

 মমতা ব্যার্নার্জি পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ঠিক করতে পারবেন কি না জানি না-তবে তার পার্টির নেতারাও যদি নার্সিং হোমে ভর্তি হোন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে পশ্চিম বঙ্গ যে তিমিরে ছিল-সেখানেই থাকবে।

                 (২)

পশ্চিম বঙ্গের সব থেকে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এটা শুধু পশ্চিম বঙ্গ না-গোটা বিশ্বজুড়েই সমস্যা।  পশ্চিম বঙ্গে এটা বেশী-কারন রাজনৈতিক অস্থিরতার এবং ভ্রান্ত আদর্শবাদিদের উৎপাতের কারনে এখানে শিল্প আসা একটু চাপের। কিন্ত শিল্প আসলেই বেকারত্ব ঘুচবে এমন নয় আজকের দিনে। কারন এখনকার শিল্পে অটোমেশন বেশী-শ্রম নির্ভর শিল্পের কোন ভবিষ্যত নেই । তবে শিল্প আসলে যেটা হবে-সেটা হচ্ছে কাঁচামাল ইত্যাদি সাপ্লাই এর জন্য ছোট ছোট ব্যবসা তৈরী হবে। যেটা ভীষন দরকার।

 কিন্ত পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের মূল সমস্যা (১) উদ্যোগী লোকের অভাব (২) ক্যাপিটাল নেই বাঙালীদের কাছে। এ এমন জাত যে এদের সিনেমাও তৈরী হয় অবাঙালীদের ক্যাপিটালে (৩) জাতিগত মানসিকতা চাকরি করার

তবে সিলভার সাইনিং ও আছে । বর্তমানে জ্ঞান ভিত্তিক শিল্পে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট কম লাগে। সেই সব শিল্পে কিন্ত বাঙালী ভাল করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে করছেও।  এক্ষেত্রেই সরকার ভূমিকা রাখতে পারত-ব্যপক ভাবে "স্কিল ট্রেনিং" এর ব্যবস্থা করে।

 কিন্ত মুশকিল হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের বেকারদের সেই একই কলা এবং মূলো দেখানো হচ্ছে-সেই এস এস সি এবং প্রাইমারী স্কুলের চাকরি। একটা জাতির লোকেদের যদি মূল উদ্দেশ্য হয় স্কুলের চাকরি জোটানো-সেই জাতির ভবিষ্যত সিন্ডিকেট। কারন স্কুলের চাকরি পাবে একশো জনে একজন। বাকী নিরানব্বই জন কি করবে? সুতরাং সিপিএম-কংগ্রেস জোট যে এস এস সি এবং টেট নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন-সেটাতে তাদের রাজনৈতিক দেওলিয়াপনায় প্রকট।  এই যে এত জোট জোট হচ্ছে- আমি যদি প্রশ্ন করি-পশ্চিম বঙ্গে চাকরি সৃষ্টিতে তাদের প্ল্যান কি? কেউ বলতে পারবে না। শাসক দলের ও সেই প্ল্যান কি-সেটাও অবশ্য কেউ জানে না। এটাই নিঠুর বাস্তব।

 সামনের দিন মোটেই ভাল না। পশ্চিম বঙ্গে সেই নেতা এবং নেতৃত্বই নেই যে রাজ্যের জন্য লং টার্ম চিন্তা ভাবনা করবে। হয়ত সেসব চিন্তা ভাবনা করে ক্ষমতায় আসা যায় না।

 দিনকাল সত্যিই হতাশার। ডাক্তারের হাতে মানুষ মরছে। ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতিতে ব্রীজ ভেঙে মরছে। শিক্ষকদের হাতে পঙ্গু ছাত্র সমাজ।  শুধু রাজনীতিবিদদেরই কেন দোষ দেওয়া হচ্ছে বুঝছি না। সবাই ত যে যার মতন করে কালো টাকা তৈরী এবং আইনকে কলা দেখাতে ব্যস্ত।

 অদ্ভত-সত্য অদ্ভত। সবাই চাইছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক  রাজনীতিবিদ এরা সৎ নির্লোভ ভগবানের অবতার হৌক। কিন্ত  নিজেরা সবাই আইন ভেঙে কালোটাকা বানিয়ে যাব। তাই কখনো সম্ভব?  ক্যন্সার যখন গোটা দেহে ছড়ায়-তখন কি তা দেহের কোন অঙ্গকে বাদ দেয়?