অভিজিতের মৃত্যু আমার জীবনের সব থেকে বড় আঘাত । আমি শুধুই কারন খোঁজার চেষ্টা করছি-ওরা কেন মারল এই নৃশংস ভাবে। ঘৃণা ? তাহলে কেন এত ঘৃণা ? যে বাংলাদেশের মানুষকে ও এত ভালোবেসে গেল, তারা ওর মৃত্যুর পর কেন সর্বত্র লিখে যাচ্ছে নাস্তিকরা নরকের কীট-তাদের ওমন শাস্তি প্রাপ্য! কেন এত ঘৃণা নাস্তিকদের প্রতি যে তাদের মেরে ফেলতে হবে ?
নাস্তিকদের প্রতি ঘৃণা মুসলিমদের একার না । খৃষ্টানরাও মনে করে নাস্তিকরা শয়তান । তবে খ্রীষ্টানরা আধুনিক হয়েছে বলে সেই ঘৃণা খুনের রক্তে রাঙাবে না । হিন্দু ধর্মে নাস্তিক্য ট্রাডিশন ধর্মের অংশ বলে, এই ধর্মে নাস্তিক থাকা অত কঠিন না -তবে সামান্য সমস্যা আছে শ্রাদ্ধ শান্তি ইত্যাদি লৌকিকতা না করলে। লৌকিকতাটুকু করলে, হিন্দু ধর্মে কে নাস্তিক কে আস্তিক তাই নিয়ে কেও মাথা ঘামায় না ।
নাস্তিকদের বুঝতে মুসলমানদের বিরাট ভুল হচ্ছে । হয়ত এটা আমার, আমাদের , মুক্তমনাদের দোষ। আমরা বোঝাতে পারি নি।
মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্ঠান-সবার জানা উচিত নাস্তিকরাও ধার্মিক। তাদের ও সবার ধর্ম বিশ্বাস আছে। ধর্ম বিশ্বাস নেই এমন লোক পৃথিবীতে থাকতে পারে না । শুধু আমাদের ধর্মে ঈশ্বর নেই -প্রফেট নেই । ধর্মগ্রন্থ নেই ।আছে যুক্তি, বিজ্ঞান, বাস্তবতা । আমরা জীবন , বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখি, তাই দিয়ে তৈরী হয় আমাদের ধর্ম। আমাদের বিশ্বাস ।
আমার নিজের বিশ্বাস- বুদ্ধি, কঠোর পরিশ্রম, আর সততায়। এই তিন বিশ্বাসের পিলার আমার নিজের ধর্ম। আমি নিজের জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্ত এই তিনটে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে নিই। অভিজিতের বিশ্বাস ছিল না ? নিশ্চয় ছিল। ও বিশ্বাস রাখত যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসায়। সেটাই ওর ধর্ম আর ধর্ম বিশ্বাস। সেই ধর্ম বিশ্বাসেই ও প্রাণ দিয়েছে।
কেন ধর্মগুরু, প্রথাগত ধর্ম ছেড়ে, ধর্মগ্রন্থ ছেড়ে নিজের অধিত বিদ্যায়, অভিজ্ঞতায় বিশ্বাস রাখি?
অন্যের কারন জানি না । নিজেরটা বলার দরকার। ধর্মগ্রন্থ গুলি উইক টেক্সট। সেটা কি? সেটা নিয়ে মুক্তমনাতে আমার একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে । তার আগে বুঝুন স্ট্রং টেক্সট কি। যেমন ধরুন নিউটনের সূত্র। এটার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যা হয় না । পৃথিবীর সবাই নিউটনের সূত্র মানে ওর তিন গতিসূত্র বুঝবে এবং তার গণিতিক রূপ সর্বত্র এক। কিন্ত কোরান বা গীতার ক্ষেত্রে প্রতিটা আয়াতের ব্যখ্যা আলাদা। আল কায়দা, সৌদি, আমেরিকান আর বাংলাদেশের মুসলিম -সবাই এক ইসলাম মানে না । সবাই ইসলামের কোন না কোন ব্যখ্যা মানে। আঠারোশো মিলিয়ান মুসলমানের জন্য মোটেও একটা ইসলাম না । কোন দুই মুসলমান পাবেন না -যাদের কাছে ইসলামের মানে এক।
এতে যেটা হয় ধর্মগুরুরা নিজেদের মতন ব্যখ্যা দেয়। ভাল লোক হলে, তার ইসলাম ভাল হয়। খারাপ লোক হলে তার ইসলাম খারাপ হয়। হিন্দুদের এই ভাবে আছে অসংখ্য ধর্মগুরু। কিছু ভাল । অধিকাংশ খারাপ।
তারমানে ধর্মগ্রন্থ মানেই তার সবটা খারাপ এটা মনে করি না । যেহেতু এগুলো উইক টেক্সট, কেও যদি উন্নত মানবিকতার হয়, সে ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে মানবিক দিকের সন্ধান পাবে, যে রাজনীতিবিদ, সে ধর্মগ্রন্থগুলিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবে। আমি নিজেও দিনরাত উপনিষদ, গীতা, কোরান, ধর্মপাদ, জৈনসূত্র , মহাভারত পড়ি। শুধু লেখালেখির কারনে এই পড়াশোনা তা না। এসবের মধ্যে থেকে এমন কিছু পাব, যা জীবনের কাজে আসবে, সেই আশাতেই পড়ি। ঠিক একই ভাবে সান জুর আর্ট ওব ওয়ার ও পড়ি। এর মধ্যে যা কাজের মনে হয়, সেটা জীবনে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও ভাবি। উপনিষদের গল্পগুলো আমার জীবনের সব থেকে বড় স্ট্রেস রিলিভার। প্রচন্ড কাজের চাপে থাকলে, আমি কোটিকর্ন এবং অষ্টবক্রর গল্পে মুখ গুঁজি। কারন তা এই পার্থিব বাস্তবতা থেকে -এর বাইরেও যে একটা রিয়ালিটি আছে, সেই চেতনাকে সামনে এনে আমার অহংকার কমায়।
কিন্ত এর জন্যে কেন আমাকে হিন্দু মুসলমান হতে হবে ? ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতে হবে? এই ত বেশ ভাল আছি-সব ধর্ম বিজ্ঞান দর্শন থেকে, যা মনে হয় জীবন পাথেয় তা সংগ্রহ করি-যদি জীবনের কঠিন সময়ে কাজে লাগে!!
নাস্তিকেরা কি অবাধ যৌন জীবনের পরকীয়ার লাইসেন্স খোঁজে ? তারা কি ছেলে মেয়ের যত্ন নেয় না ? আত্নসুখী? এরকম নাস্তিক দেখেছেন কখনো? নাস্তিক বা আস্তিক। আমরা সবাই বায়োলজিক্যাল। ছেলে মেয়ে মানুষ করতে হবে-এটা কি ধর্ম শেখায়? এটা ত আমাদের ডিএন এতে আছে!! অভিজিত রায় বা আমি কি অন্য কোন মুসলমান বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা? তৃষার জন্য অভিজিতের যে চিন্তা, আমার মেয়ের জন্য আমার যে চিন্তা-সেটা কি কোন মুসলমান বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা? না আমরা নাস্তিক বলে আমাদের ছেলেমেয়েদের কম ভালোবাসি? আরে বাবা এটা আমাদের সবার মধ্যের একটা জৈবিক দায়িত্ব। বাবা হিসাবে আমরা আস্তিক নাস্তিক সবাই এক । তাহলে আমরা কি করে নরকের কীট হলাম ??
অনেকেই বলবেন, মশাই আপনি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছেন, তাই আপনি নাস্তিক হলেও আচরনে আস্তিকদের মতন রক্ষণশীল। বাকী নাস্তিকরা না । সেই যুক্তিও হাস্যকর । পরকীয়া, অবাধ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার লোক আস্তিক নাস্তিক দুই ক্যাম্পেই আছে। খুনী, অপরাধি দুই ক্যাম্পেই আছে। আস্তিক নাস্তিক দিয়ে লোক বিচার করতে যাবেন না । একটা লোক ভাল অথবা খারাপ। ভাল নাস্তিক, খারাপ নাস্তিক যেমন আছে-ভাল মুসলমান, খারাপ মুসলমান ও আছে।
তাই অভিজিত রায় নাস্তিক-তাই দিয়ে অভিজিতকে মাপলে আপনাদের সব থেকে বড় ভুল হবে। একজন মুসলমানকেও যদি আমি এইভাবে মাপি যে ও মুসলমান তাই ও ফারাবী বা ওসামা-তাহলেও সেই একভুল হবে। লোকটাকে দেখুন। দেখুন সে দেশ, সমাজ, পরিবারকে কত ভালবাসে??
আমার বোনকে বলছিলাম- বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে এত বড় ভুল অভিজিত করলো -আমি ভাবতে পারছি না । আমার বোন বরং বললো, যারা দেশকে মাতৃভূমিকে এত ভালবাসে তারা ভুল ঠিকের হিসাব করে না । করলে কোন দেশ নেতাকে আমরা পেতাম না যারা জেল খেটে প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছে। অভিজিত রায় সেই পর্যায়ের একজন মহান ব্যক্তি। আস্তিকতা নাস্তিকতা দিয়ে এই মহান প্রানের হিসাব করা যায় না । তাজুউদ্দিন একজন ধর্মপ্রান মুসলিম ছিলেন। আমি নাস্তিক- কিন্ত তাও আমি বলবো উনি আমার জানা সেরা বাঙালী রাজনীতিবিদ। লেনিন, স্তালিন নাস্তিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। নাস্তিকতার জন্য আমি তাদের তাজুউদ্দিনের থেকে বেশী পছন্দ করবো? মোটেও না । আস্তিকতা নাস্তিকতা না -আমি একজন ব্যক্তিকে মুল্যায়ন করবো-তার কাজের ভিত্তিতে। তার সততার ভিত্তিতে।
আমি ব্যবসায়ী লোক । বুদ্ধিজীবিদের মতন পড়াশোনা, পান্ডিত্য, থিওরী-কোনটাই আমার নেই । আমি শুধু জানি ব্যবসা চালাতে প্রতিটা মুহুর্তে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত গুলি যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে না নিয়ে, আল্লা বা ঈশ্বরের ভরসায় নিলে ভরাডুবি অবসম্ভাবী। তাতেও অনেক ভুল হয়। কিন্ত তখন ঈশ্বরের কাছে নালিশের সুযোগ থাকে না । যেহেতু আমার ভুল, ওটার দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়। ঠিক এই জন্যে আমার নাস্তিক থাকা ছাড়া উপায় নেই ! ঠিক এই জন্যেই আমেরিকার টপ সি ই ও দের বা এদেশে ব্যবসার নেতৃত্ব স্থানীয় লোকেদের ৯০% নাস্তিক বা নিধার্মিক। আমার কাছে এটা শখ বা ফ্যাশন না । প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকে থাকার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন একটা প্র্যাকটিস।
এখন বলতেই পারেন টাকার জন্য তাহলে ঈশ্বর ত্যাগ?? তাহলে ত আপনি সেই নরকের কীটই হইলেন?
নারে ভাই টাকার জন্য আমি ব্যবসায় আসি নি। আমি স্বাধীনচেতা লোক, কারুর অধীনে কাজ করা, চাকরি বাকরির অধীনতা পোষায় না । স্বাধীন ভাবে, মুক্তচিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য, আমি নাস্তিকতার চেয়ে আর ভাল কোন পথ পাই নি। তাই আমি নাস্তিক। নরকের কীট নই। আমার দুই ছেলে মেয়ে-তারা যাতে ভাল নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে সেটাই আমার উদ্দেশ্য। সেখানে আমি, আপনি-কোন ধর্মের লোক, রাজনীতির লোক আলাদা হতে পারে না । তাহলে এত বিভেদের রাজনীতি কেন?
আমি মোটেও বলছি না আপনি নাস্তিক হৌন। বলছি না ইসলাম ভুল না ঠিক। আমার কাছে বহুদিন থেকে ইসলাম, হিন্দু, নাস্তিকতা, কমিনিউস্ট সব ফালতু। ভাল মানুষ হওয়া অনেক বেশী জরুরী।
মুসলমান, হিন্দু, কমিনিউস্ট, নাস্তিক অনেক পাওয়া যায়রে ভাই। ভাল মানুষ পাওয়া যায় না -যার হৃদয় আছে, মনন আছে, মানুষকে ভালোবাসতে পারে। অভিজিত রায় ছিল সেই বিরল মানুষ।
নাস্তিকদের প্রতি ঘৃণা মুসলিমদের একার না । খৃষ্টানরাও মনে করে নাস্তিকরা শয়তান । তবে খ্রীষ্টানরা আধুনিক হয়েছে বলে সেই ঘৃণা খুনের রক্তে রাঙাবে না । হিন্দু ধর্মে নাস্তিক্য ট্রাডিশন ধর্মের অংশ বলে, এই ধর্মে নাস্তিক থাকা অত কঠিন না -তবে সামান্য সমস্যা আছে শ্রাদ্ধ শান্তি ইত্যাদি লৌকিকতা না করলে। লৌকিকতাটুকু করলে, হিন্দু ধর্মে কে নাস্তিক কে আস্তিক তাই নিয়ে কেও মাথা ঘামায় না ।
নাস্তিকদের বুঝতে মুসলমানদের বিরাট ভুল হচ্ছে । হয়ত এটা আমার, আমাদের , মুক্তমনাদের দোষ। আমরা বোঝাতে পারি নি।
মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্ঠান-সবার জানা উচিত নাস্তিকরাও ধার্মিক। তাদের ও সবার ধর্ম বিশ্বাস আছে। ধর্ম বিশ্বাস নেই এমন লোক পৃথিবীতে থাকতে পারে না । শুধু আমাদের ধর্মে ঈশ্বর নেই -প্রফেট নেই । ধর্মগ্রন্থ নেই ।আছে যুক্তি, বিজ্ঞান, বাস্তবতা । আমরা জীবন , বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখি, তাই দিয়ে তৈরী হয় আমাদের ধর্ম। আমাদের বিশ্বাস ।
আমার নিজের বিশ্বাস- বুদ্ধি, কঠোর পরিশ্রম, আর সততায়। এই তিন বিশ্বাসের পিলার আমার নিজের ধর্ম। আমি নিজের জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্ত এই তিনটে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে নিই। অভিজিতের বিশ্বাস ছিল না ? নিশ্চয় ছিল। ও বিশ্বাস রাখত যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসায়। সেটাই ওর ধর্ম আর ধর্ম বিশ্বাস। সেই ধর্ম বিশ্বাসেই ও প্রাণ দিয়েছে।
কেন ধর্মগুরু, প্রথাগত ধর্ম ছেড়ে, ধর্মগ্রন্থ ছেড়ে নিজের অধিত বিদ্যায়, অভিজ্ঞতায় বিশ্বাস রাখি?
অন্যের কারন জানি না । নিজেরটা বলার দরকার। ধর্মগ্রন্থ গুলি উইক টেক্সট। সেটা কি? সেটা নিয়ে মুক্তমনাতে আমার একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে । তার আগে বুঝুন স্ট্রং টেক্সট কি। যেমন ধরুন নিউটনের সূত্র। এটার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যা হয় না । পৃথিবীর সবাই নিউটনের সূত্র মানে ওর তিন গতিসূত্র বুঝবে এবং তার গণিতিক রূপ সর্বত্র এক। কিন্ত কোরান বা গীতার ক্ষেত্রে প্রতিটা আয়াতের ব্যখ্যা আলাদা। আল কায়দা, সৌদি, আমেরিকান আর বাংলাদেশের মুসলিম -সবাই এক ইসলাম মানে না । সবাই ইসলামের কোন না কোন ব্যখ্যা মানে। আঠারোশো মিলিয়ান মুসলমানের জন্য মোটেও একটা ইসলাম না । কোন দুই মুসলমান পাবেন না -যাদের কাছে ইসলামের মানে এক।
এতে যেটা হয় ধর্মগুরুরা নিজেদের মতন ব্যখ্যা দেয়। ভাল লোক হলে, তার ইসলাম ভাল হয়। খারাপ লোক হলে তার ইসলাম খারাপ হয়। হিন্দুদের এই ভাবে আছে অসংখ্য ধর্মগুরু। কিছু ভাল । অধিকাংশ খারাপ।
তারমানে ধর্মগ্রন্থ মানেই তার সবটা খারাপ এটা মনে করি না । যেহেতু এগুলো উইক টেক্সট, কেও যদি উন্নত মানবিকতার হয়, সে ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে মানবিক দিকের সন্ধান পাবে, যে রাজনীতিবিদ, সে ধর্মগ্রন্থগুলিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবে। আমি নিজেও দিনরাত উপনিষদ, গীতা, কোরান, ধর্মপাদ, জৈনসূত্র , মহাভারত পড়ি। শুধু লেখালেখির কারনে এই পড়াশোনা তা না। এসবের মধ্যে থেকে এমন কিছু পাব, যা জীবনের কাজে আসবে, সেই আশাতেই পড়ি। ঠিক একই ভাবে সান জুর আর্ট ওব ওয়ার ও পড়ি। এর মধ্যে যা কাজের মনে হয়, সেটা জীবনে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও ভাবি। উপনিষদের গল্পগুলো আমার জীবনের সব থেকে বড় স্ট্রেস রিলিভার। প্রচন্ড কাজের চাপে থাকলে, আমি কোটিকর্ন এবং অষ্টবক্রর গল্পে মুখ গুঁজি। কারন তা এই পার্থিব বাস্তবতা থেকে -এর বাইরেও যে একটা রিয়ালিটি আছে, সেই চেতনাকে সামনে এনে আমার অহংকার কমায়।
কিন্ত এর জন্যে কেন আমাকে হিন্দু মুসলমান হতে হবে ? ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতে হবে? এই ত বেশ ভাল আছি-সব ধর্ম বিজ্ঞান দর্শন থেকে, যা মনে হয় জীবন পাথেয় তা সংগ্রহ করি-যদি জীবনের কঠিন সময়ে কাজে লাগে!!
নাস্তিকেরা কি অবাধ যৌন জীবনের পরকীয়ার লাইসেন্স খোঁজে ? তারা কি ছেলে মেয়ের যত্ন নেয় না ? আত্নসুখী? এরকম নাস্তিক দেখেছেন কখনো? নাস্তিক বা আস্তিক। আমরা সবাই বায়োলজিক্যাল। ছেলে মেয়ে মানুষ করতে হবে-এটা কি ধর্ম শেখায়? এটা ত আমাদের ডিএন এতে আছে!! অভিজিত রায় বা আমি কি অন্য কোন মুসলমান বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা? তৃষার জন্য অভিজিতের যে চিন্তা, আমার মেয়ের জন্য আমার যে চিন্তা-সেটা কি কোন মুসলমান বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা? না আমরা নাস্তিক বলে আমাদের ছেলেমেয়েদের কম ভালোবাসি? আরে বাবা এটা আমাদের সবার মধ্যের একটা জৈবিক দায়িত্ব। বাবা হিসাবে আমরা আস্তিক নাস্তিক সবাই এক । তাহলে আমরা কি করে নরকের কীট হলাম ??
অনেকেই বলবেন, মশাই আপনি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছেন, তাই আপনি নাস্তিক হলেও আচরনে আস্তিকদের মতন রক্ষণশীল। বাকী নাস্তিকরা না । সেই যুক্তিও হাস্যকর । পরকীয়া, অবাধ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার লোক আস্তিক নাস্তিক দুই ক্যাম্পেই আছে। খুনী, অপরাধি দুই ক্যাম্পেই আছে। আস্তিক নাস্তিক দিয়ে লোক বিচার করতে যাবেন না । একটা লোক ভাল অথবা খারাপ। ভাল নাস্তিক, খারাপ নাস্তিক যেমন আছে-ভাল মুসলমান, খারাপ মুসলমান ও আছে।
তাই অভিজিত রায় নাস্তিক-তাই দিয়ে অভিজিতকে মাপলে আপনাদের সব থেকে বড় ভুল হবে। একজন মুসলমানকেও যদি আমি এইভাবে মাপি যে ও মুসলমান তাই ও ফারাবী বা ওসামা-তাহলেও সেই একভুল হবে। লোকটাকে দেখুন। দেখুন সে দেশ, সমাজ, পরিবারকে কত ভালবাসে??
আমার বোনকে বলছিলাম- বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে এত বড় ভুল অভিজিত করলো -আমি ভাবতে পারছি না । আমার বোন বরং বললো, যারা দেশকে মাতৃভূমিকে এত ভালবাসে তারা ভুল ঠিকের হিসাব করে না । করলে কোন দেশ নেতাকে আমরা পেতাম না যারা জেল খেটে প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছে। অভিজিত রায় সেই পর্যায়ের একজন মহান ব্যক্তি। আস্তিকতা নাস্তিকতা দিয়ে এই মহান প্রানের হিসাব করা যায় না । তাজুউদ্দিন একজন ধর্মপ্রান মুসলিম ছিলেন। আমি নাস্তিক- কিন্ত তাও আমি বলবো উনি আমার জানা সেরা বাঙালী রাজনীতিবিদ। লেনিন, স্তালিন নাস্তিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। নাস্তিকতার জন্য আমি তাদের তাজুউদ্দিনের থেকে বেশী পছন্দ করবো? মোটেও না । আস্তিকতা নাস্তিকতা না -আমি একজন ব্যক্তিকে মুল্যায়ন করবো-তার কাজের ভিত্তিতে। তার সততার ভিত্তিতে।
আমি ব্যবসায়ী লোক । বুদ্ধিজীবিদের মতন পড়াশোনা, পান্ডিত্য, থিওরী-কোনটাই আমার নেই । আমি শুধু জানি ব্যবসা চালাতে প্রতিটা মুহুর্তে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত গুলি যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে না নিয়ে, আল্লা বা ঈশ্বরের ভরসায় নিলে ভরাডুবি অবসম্ভাবী। তাতেও অনেক ভুল হয়। কিন্ত তখন ঈশ্বরের কাছে নালিশের সুযোগ থাকে না । যেহেতু আমার ভুল, ওটার দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়। ঠিক এই জন্যে আমার নাস্তিক থাকা ছাড়া উপায় নেই ! ঠিক এই জন্যেই আমেরিকার টপ সি ই ও দের বা এদেশে ব্যবসার নেতৃত্ব স্থানীয় লোকেদের ৯০% নাস্তিক বা নিধার্মিক। আমার কাছে এটা শখ বা ফ্যাশন না । প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকে থাকার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন একটা প্র্যাকটিস।
এখন বলতেই পারেন টাকার জন্য তাহলে ঈশ্বর ত্যাগ?? তাহলে ত আপনি সেই নরকের কীটই হইলেন?
নারে ভাই টাকার জন্য আমি ব্যবসায় আসি নি। আমি স্বাধীনচেতা লোক, কারুর অধীনে কাজ করা, চাকরি বাকরির অধীনতা পোষায় না । স্বাধীন ভাবে, মুক্তচিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য, আমি নাস্তিকতার চেয়ে আর ভাল কোন পথ পাই নি। তাই আমি নাস্তিক। নরকের কীট নই। আমার দুই ছেলে মেয়ে-তারা যাতে ভাল নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে সেটাই আমার উদ্দেশ্য। সেখানে আমি, আপনি-কোন ধর্মের লোক, রাজনীতির লোক আলাদা হতে পারে না । তাহলে এত বিভেদের রাজনীতি কেন?
আমি মোটেও বলছি না আপনি নাস্তিক হৌন। বলছি না ইসলাম ভুল না ঠিক। আমার কাছে বহুদিন থেকে ইসলাম, হিন্দু, নাস্তিকতা, কমিনিউস্ট সব ফালতু। ভাল মানুষ হওয়া অনেক বেশী জরুরী।
মুসলমান, হিন্দু, কমিনিউস্ট, নাস্তিক অনেক পাওয়া যায়রে ভাই। ভাল মানুষ পাওয়া যায় না -যার হৃদয় আছে, মনন আছে, মানুষকে ভালোবাসতে পারে। অভিজিত রায় ছিল সেই বিরল মানুষ।
No comments:
Post a Comment