Saturday, April 14, 2012

টুনটুন ব্যানার্জির রূপকথা

বিপ্লব পাল, পয়লা বৈশাখ-২০১9

রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন। কুট্টি আঁকিয়াছিলেন। কোন কোন প্রতিবাদি কবির ছেঁড়া শান্তিনিকেতনী ব্যাগের কাগজের টুকরোগুলি বিদ্রোহ করিতে যাইয়া, প্রকাশকের অভাবে কাঁদিতেছিল। কবিতার মার্কেট নাই। গানের বিক্রি নাই। সিনেমা করিয়া লাভ নাই। এমন নাই নাই এর বঙ্গদেশে লালরাজাদের শাসন চলিতে ছিল। সর্বহারার রাজা এবং তাহাদের বিরোধী নাটক দলের অভিনেত্রী টুনটুন ব্যাণার্জির অভিনয় প্রতিভায় বঙ্গদেশের রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চ মুখরিত ছিল।

লালরাজারা প্রজাপালন নিমিত্ত কিছু লালমুখো বাণর পুশিতেন। ইহাদের মানুষে হার্মাদ কহিত। এই বানরকূলের কিছু কীর্তিহেতু, বঙ্গদেশে নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর বলিয়া দুটি মার্কেটের উদয় হইল। কবি, গায়ক, অভিনেত্রী-যাহাদের প্রতিভা মার্কেটের অভাবে বঙ্গদেশের গোডাউনে ঘুণ ধরিতেছিল-তাহারা নতুন মার্কেটের সন্ধান পাইলেন। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম। টুনটুন ব্যানার্জির অভিণয় প্রতিভায় বাঙালী বরাবরই মুগ্ধ। এই দুই নতুন থিয়েটারের আবির্ভাবে, টুনটন ব্যার্নাজি বাংলার বুদ্ধিজীবি গোডাউনে ছোঁ মারিয়া, তাহার নাটকের দলটিকে আরো প্রতিভা সমৃদ্ধ করিলেন।

বঙ্গবাসী লালশাসনে অসন্তুষ্ট হইলেও, অভিনেত্রীর হাতে রাজ্যের শাসনভার তুলিয়া দিতে দ্বিধায় ভুগিতেছিল। টুনটুন ব্যার্নাজির নব্য দলটি দেখিয়া, তাহাদের ভরসা জন্মিল। লালরাজাদের পতন হইল। টুণটুন ব্যানার্জি বঙ্গের সিংহাসনে বসিলেন। পরিশদরা সেলাম ঠুকিল। কিছু চাষী দেনার দায়ে আত্মহত্যা করিল। বস্তি উচ্ছেদ করিয়া নীল কোলকাতার স্বপ্নে বিভোর হইলেন টুনটুন ব্যার্নাজি। ৯০ দিনের মধ্যে ৯০% প্রতিশ্রুতি পূরণ করিয়া, অতিরিক্ত কাজের সন্ধানে বাহির হইলেন।

জনগণ বুঝিতে ব্যার্থ হইতেছিল ৯০% কাজ বঙ্গদেশের কোন স্কোয়ারফুটে হইয়াছে। ফলত অসন্তোষ যখন ক্রমবর্ধমান, বাকী ১০% কাজ সমাপ্ত করিবার উদ্দেশ্যে টুনটুন ব্যানার্জি মিডিয়াকে সিধা করিতে মাঠে নামিলেন। তাহা ব্যাকফায়ার করিল। পারিষদরা সাধু কহিলেও, জনগণ খাইল না। প্রতিদিন সহ সব চ্যানেল একদা, তাহাকে মঞ্চের অভিনেত্রী হইতে রূপকথারা রাণী বানাইবার চেষ্টা চালাইয়াছিল। ইহাতে উক্ত মিডিয়াগুলির টি আর পি পড়িতেছিল। জনগণ সাথে নাই দেখিয়া-উহাদের কেও কেও পালটি খাইল। রাণী হইতে খলরাণী হইতে কাহারও ভাল লাগিবার কথা নহে। টুনটুন ব্যার্নাজির ও লাগিল না। ইহার পর, জনগণ তাহাকে ক্রমাগত টুনটুন ব্যার্নার্জি ছাড়িয়া কার্টুন ব্যার্নাজি বলিয়া টিপ্পনি মারিতেছিল। ধর্য্যের বাঁধ ভাঙিল। টুনটুন ব্যার্নাজি, মিডিয়া ছাড়িয়া, নিরীহ জনসাধারনের ওপর পুলিশি প্রমোদকর চাপাইলেন। কার্টুন শেয়ার করিবার সাজা হইল জেল। পরিশদরা কহিল, রুপকথার রাণীকে মাঠে নামাইলে, জেল ত হইবেই। প্রতিদিন কহিল, কাহার এত অশ্লীল স্পর্ধা যে টুনটুন ব্যার্নাজির কার্টুন আঁকিতেছ?

টুনটুন ব্যার্নাজিকে বঙ্গদেশের ভাবী টিনটিন বানাইতে যাহারা মাঠে নামিয়াছিলেন, তাহাদের সাপের ব্যাঙ গিলিবার দশা। ফাটা বাঁশে পা পড়িয়াছে। যাহারা তাহার যাত্রাদলে নাম লিখিয়াছিল, তাহাদের কেহ কেহ আজ পঞ্চাশ হাজারী এম পী। বাজনা বাজাইতে যাহাদের দলে স্থান হইয়াছিল, তাহার বুঝিতে পারিতেছেন না, শ্রোতারা সভাস্থল ছাড়িয়াছেন কি না। শুধু বঙ্গবাসী বুঝিতেছে , পরিবর্তন নাটকের যবনিকা পড়িতেছে।