Sunday, August 31, 2014

পথ চলা শুরু নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের

আজ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হল। প্রায় হাজার বছর বাদে খুললো নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যা মধ্যযুগের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে খ্যাতিলাভ করে। সপ্তম শতাব্দিতে হিউয়েন সাং এর ভ্রুমন বৃত্তান্ত থেকে আমরা জানতে পারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০০ এর বেশী শিক্ষক এবং ১০,০০০ ছাত্র ছিল। লাইব্রেরী বিল্ডিং ছিল তিনটি। ১১৯৭ সালে বখতিয়াল খিলজি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেন-হাজার খানেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর শিরোচ্ছেদ করা হয়। লাইব্রেরী পুড়িয়ে দেওয়া হয়। লাইব্রেরী পোড়ানোর আগে খিলজি জানতে চেয়েছিলেন, ঐ লাইব্রেরীতে কোরান আছে কি না ? কোরান নেই শুনে উনার মন্তব্য ছিল-তাহলে ওই লাইব্রেরী ফালতু-কাফেরদের অনিষ্ট। আজকে খিলজির সুযোগ্য উত্তরাসুরীরা একই ভাবে ধ্বংস করছে ইরাকের ব্যাবিলনীয় সভ্যতা। অবশ্য শুধু খিলজিই নন-তার আগে নালন্দাকে ধ্বংস করেছিলেন গৌড়ের শৈব রাজারা। পরে পাল রাজবংশের অর্থে নালন্দা আবার গড়ে ওঠে।

   এটাই ভীষন দুঃখের যে আজকের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বা কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় জন্ম নেয় ১২০০ শতাব্দীতে। নালন্দার ধ্বংসের সময়েই। সেই সময় কেন, ১৭০০ সাল নাগাদ ও ধারে, ভারে, সাইজে অক্সফোর্ড আদি নালন্দার সমত্যুল্য ছিল না। ভারতে নালন্দা আর তক্ষশীলার হাত ধরেই জন্ম বিশ্ববিদ্যলয় সংস্কৃতির। ভারতেই জন্ম হওয়ার কথা নিউটন, লেইবিঞ্জ দের। কিন্ত তার বদলে, মুসলমান আক্রমনের ফলে গভীর আঁধারে নিমজ্জিত হয় সমগ্র ভারত  বর্ষ।  দুর্বল মিলিটারী শক্তি কোন কালেই নিজেদের জ্ঞানকে রক্ষা করতে পারে নি। ভারত ও তার ব্যাতিক্রম না। ইংল্যান্ডে অক্সফর্ড বা কেম্ব্রিজ ক্রমশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানপীঠে পরিনত হয়েছে এর মূল কারন বৃটিশরা মিলিটারী শক্তিতে তা শুধু রক্ষা করে নি-অন্যদেশের জ্ঞান ভান্ডার ও সেখানে জমা হয়েছে। বৃটিশরা যদি ১০০ বছরের যুদ্ধে ফ্রান্সের হাতে হারত-অক্সফোর্ডের হাল হত নালন্দার মতন।

 নালন্দা এবং অক্সফোর্ড/ কেম্ব্রিজের ইতিহাস থেকে সব থেকে বড় শিক্ষা-জ্ঞানকে মিলিটারী শক্তি দিয়ে রক্ষা করতে না পারলে, সেই জ্ঞান অন্ধকারের শক্তির হাতেই পড়বে।

Saturday, August 30, 2014

বাংলাদেশ- উদার না মৌলবাদি সমাজের পথে?

বাংলাদেশের পাঠক পাঠিকারা , মূলত নাস্তিকরা -এই প্রশ্ন আমাকে প্রায় করেন। বাংলাদেশে নাস্তিকতার ভবিষ্যত কি?

 বাংলাদেশ বা এই বাংলা ঐতিহাসিক ভাবেই উদার সমাজের উত্তরাসূরী।  সহজিয়া এই মাটির সূর। রবীন্দ্রনাথ, লালন সাঁই, নজরুল এই গৌরবাজ্জ্বল উত্তরাধিকারের শ্রেষ্ঠ সন্তান।

 কিন্ত গত দুই বছরে বাংলাদেশের নাস্তিকরা যেভাবে তাদের দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন-রাষ্ট্রযন্ত্রের কায়েমী স্বার্থ আসিফ মইউদ্দিনের মতন ব্লগারদের জেলে ঢুকিয়েছে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মনে অনেক ভয়। সংশয়। যুক্তি বুদ্ধিতে অবিচল থেকে পথ চলা যেন বর্ষার অমবশ্যার রাতে কাদায় পা রাখা। কখনো না জানা খাদ, কখনো উঁচিয়ে আছে সাপ। কল্লাকাটা মৌলবাদি সাপের ছোবল নিয়ে যায় রাজীব হায়দারের মতন তরুন যুক্তিবাদিদের জীবন। অহল্যার অভিশপ্ত জীবন-সাপমোচনে অপেক্ষায় দিন গুজরান। অনেকেই হতাশ। আশা হারাচ্ছেন।

 আমি বাংলাদেশীও নই-সমাজবিজ্ঞানীও নই।  তাই বাংলাদেশে নাস্তিকতার ভবিষ্যত নিয়ে লেখা অনেকটা অনধিকার চর্চা। কিন্ত আমার চোখ কান খোলা. ইতিহাস ঘাঁটা।  প্রযুক্তিবিদ হওয়ার কারনে ভবিষ্যত দেখার সুযোগটা আরেকটু বেশী। সেই অভিজ্ঞতার ওপর  ভিত্তি করেই লিখছি।  যেটা মনে হচ্ছে ঠিক-সেটাই লিখছি।

(১) সমাজ উদার হবে না কট্টর পন্থী-এর ভিত্তি উৎপাদন কাঠামো। এবং ইতিহাস। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বিবর্তন না বুঝলে, ভবিষ্যতবাণী সম্ভব না।

 বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে-যার আবার অধিকাংশ জল- ষোল কোটি লোকের সংস্থান অসম্ভব।  বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত সেই দিকেই যাবে যেদিকে জমি প্রতি উৎপাদন বেশী।

 বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পের উদ্ভব এবং কৃষি থেকে আস্তে আস্তে মেশিন নির্ভর কুটির শিল্পের বিকাশ-- কৃষি শ্রমিক থেকে শিল্প শ্রমিকের বিবর্তনের গল্প। যা অন্যান্য দেশেও হয়েছে অতীতে। একটা দেশ যখন কৃষি থেকে আস্তে আস্তে শিল্পের দিকে এগোতে থাকে- প্রকৃতির নিয়মেই সেই সমাজে আস্তে আস্তে ধর্মের গিঁট ঢিলা হতে থাকে।

   ক)  শিল্প শ্রমিক মূলত নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির জন্ম দেয়-যারা অনেকটাই স্বাধীন স্বতন্ত্র জীবন ( অন্তত গ্রামের থেকে) কাটাতে সক্ষম

   খ)  মহিলা শ্রমিকের উদ্ভব-আরেকটি গুরুত্বপূর্ন সামাজিক বিপ্লব-যা মৌলবাদকে অনেকটাই রুখতে সাহায্য করবে। শরিয়ার বিরুদ্ধে সব থেকে সরব সমর্থন আসবে মহিলা শ্রমিকদের কাছ থেকেই। ইসলামের থেকে পেট, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন এদের কাছে।

 গ) শিল্প শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনেই-সমাজে "স্কিল" এর গুরুত্ব বাড়বে। "স্কিল" অর্জন করা সমাজের ফোকাস হলে-সেই সমাজ ইহকালের "স্কিল" এবং তার থেকে কি করে উপায় বাড়ানো যায়-সেই চিন্তাতে চলবে। নতুন বাংলাদেশ জাভা, পি এচ পি শিখতে যতটা আগ্রহী হবে-ধর্মের ব্যাপারে অতটা আগ্রহ থাকতে পারে না। ব্যাতিক্রম থাকতেই পারে।

 তবে আজ বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পের যে  রমরমা, সেটা-আর খুব বেশী হলে চলবে আগামী কুড়ি বছর। অটোমেশনের ফলে আমেরিকাতে পোষাক তৈরী করা আস্তে আস্তে বাংলাদেশ থেকে আমদানীর চেয়ে লাভজনক হবে। বর্তমানে থ্রি ডি অটোমেশনের দৌলতে একজন লোকের থ্রিডি মডেল জানা থাকলে, তার মাপের একদম ফিট পোষাক, মেশিন থেকে অটোমেটিক বার করা কোন সমস্যাই হবে না। ফলে বাংলাদেশের দরকার হবে নতুন জীবিকার। নতুন শিল্পের।

 এই দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যান্য আধুনিক জীবিকার দিকে ঝুঁকবে। যেমন সফটওয়ার প্রোগ্রামিং, বিপিও, কেপিও, বায়োটেক ইত্যাদি।

 বাংলাদেশে বৃহৎ পুঁজি নেই। বিদেশীরাও বিনিয়োগে ভয় পায়। এর ভাল দিকটাই বেশী। এর কারনে বাংলাদেশে এই নব্য আই টি ফিল্ডে অসংখ্য ছোট ছোট উদ্যোগী।  এই মার্কেটে টিকে থাকতে গেলে, একদম লেটেস্ট "স্কিল" দরকার। ভারতের ইনফোসিস, টিসিএসের একটা বড় অংশই ২০ বছরের পুরাতন আই বি এম মেইন ফ্রেইম -ইত্যাদি মেইন্টেনেন্সের কাজ করে। বাংলাদেশের এই সব ছোট কোম্পানীগুলিকে টেকার একটাই পথ। লেটেস্ট এন্ড গ্রেটেস্ট স্কিল। মূলত ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং স্কিল ছোট কোম্পানীর ব্যবসার জন্য ঠিকঠাক। এই জন্য বাংলাদেশের আই টি মার্কেটে বুদ্ধিমান, দক্ষ প্রগ্রামারদের দড় বাড়বে। পৃথিবীর সর্বত্রই এই শ্রেনীর বুদ্ধিমান প্রোগ্রামাররা লিব্যারাল সমাজের অংশ।  যাদের মাথায় বুদ্ধি আছে, মহম্মদের কাল্পনিক চরিত্রদিয়ে তাদের বুদ্ধু বানানো মুশকিল। অর্থনীতির নিয়মে বাংলাদেশে এদের সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়বে। টাকার জোরে বাড়বে এদের সামাজিক প্রতিপত্তি, ইনফ্লুয়েন্স।

সব থেকে বড় কথা-এই উন্নত অর্থনীতির শরিক হতে গেলে আগের মত-জাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি আছে যথেষ্ঠ না।  মাথায় বুদ্ধি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাও থাকতে হবে। গয়ংগচ্ছ জ্ঞানে চলবে না। আমি জানি অনেকেই বলবেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে মৌলবাদি বেশী। সেটা আস্তে আস্তে কাটবে,বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে। কারন চোখ কান খোলা রাখলে দেখা যায় এই সব গয়ংগচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারদের, মধ্যমমেধার উচ্চডিগ্রীধারীদের মধ্যেই মৌলবাদের প্রভাব বেশী। সেটা কমবে-কারন ডিগ্রির মূল্য হবে অর্থহীন। অটোমেশনের যুগে যেখানে প্রোগ্রাম ও লিখে দেবে মেশিন-সেখানে মানুষ তার বুদ্ধির সেরাটা না দিলে, চাকরিই পাবে না।

 এই বৌদ্ধিক বিকাশ হবে মার্কেটের দাবী। এবং কে না জানে-এই যুগে মার্কেটের শক্তিই সর্বশক্তিমান। মানুষের মনে বুদ্ধির বিকাশ হলে, সে আধ্যাত্মিক থাকতেই পারে। কিন্ত কৃষ্ণ মহম্মদের গাঁজাখুরী গল্পে বিশ্বাস করবে না।

(২)  দ্বিতীয় আশার কারন রাজনীতি। বাংলাদেশ ভারত বেষ্ঠিত। ভারতের স্বার্থের বিরোধি কিছু হওয়া বাংলাদেশে মুশকিল। এর ভাল খারাপ দিক দুটোই আছে।

 ভালটাই লিখি। সেটা হচ্ছে ভারতের কারনে মৌলবাদিদের প্রতি আমেরিকার ফোকরদালালি বাংলাদেশে চলবে না। সেটা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সুস্পষ্ট। বি এন পি কোন সাহসে ভোট বয়কট করেছিল ? তার ধারনা ছিল, আমেরিকাতে লবিস্টদের টাকা ঢেলে, তারা হাসিনার বৈধতা নষ্ট করবে।  আমেরিকা অদ্ভুত জাত। অদ্ভুত এই ডিসির রাজনীতি। এখানে টাকা দিয়ে সেনেটর কেনা বৈধ ব্যবসা। পোষাকি নাম লবিং। বি এন পির লবিস্টরা আমেরিকা, ইংল্যান্ডকে দিয়ে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক স্টেটমেন্ট বাড় করেছিল। কিন্ত ভারতের বিরোধিতায় সফল হয় নি সেই চক্রান্ত। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কখনো যাবে না আমেরিকা বা ইউরোপ। কারন ভারতের বিশাল মার্কেটের টান। ফলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মৌলবাদিরা চেকমেট। তাদের পক্ষে পাকিস্তান। মধ্যপ্রাচ্যও যাবে না ভারতের বিরুদ্ধে যেহেতু ভারত তাদের তেলের বৃহত্তম ক্রেতা। সব কাটাকুটি-সাপ লুডো শেষ। পড়ে রইল পাকিস্তান!

সাধে ম্যাডাম জিয়া দিল্লীতে গিয়ে নাকখঁত দিয়ে বিজেপি নেতাদের দূর্গাপূজোতে বাংলাদেশে আমন্ত্রন দিয়েছেন? উনিও বুঝছেন দিল্লীর কৃপা না হলে, তারপক্ষে মসনদ ফিরে পাওয়া মুশকিল!

(৩) তৃতীয় আশার কারন ডেমোগ্রাফি এবং শিক্ষা । বাংলাদেশের ফার্টালিটি রেট এখন দুই দশমিক পাচ। অর্থাৎ মা প্রতি আড়াই জন সন্তান । পঁচাত্তর সালে এটা ছিল ৬ এর কাছাকাছি। মাত্র তিন দশকে ! শিশুশিক্ষা এবং শিশুমৃত্যর হার কমাতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও বেশী সফল। ফ্যামিলি সাইজ দুই এর কাছে হলে, বাবা মা ছেলে মেয়ের শিক্ষার প্রতি যত্নবান হবেই, তারা চাইবেন ছেলে মেয়েদের জন্য ভাল জীবিকা।

ছেলে মেয়ে থাকুক দুধে ভাতে-এই চাওয়াটা উদার সমাজের ভিত্তিভূমি। কারন এখান থেকেই বস্তুবাদি, যুক্তিবাদি মননের শুরু। ছেলেমেয়ে আছে ১০ জন-খাওয়ানোর ক্ষমতা নেই। পড়ানো দূরের কথা। সুতরাং আল্লা জানে, আল্লা খাওয়াইবে-এই ধরনের চিন্তা থেকেই ভাববাদ-সেখান থেকে মৌলবাদ আরো বেশী গভীরে ঢোকে।

ছেলে মেয়েকে দুধে ভাতে রাখতে সমাজ চাইবে উন্নততর শিক্ষা, উন্নত অর্থনীতি। তারা ভালোই জানে মৌলবাদি সমাজে এসব পাওয়ার না।

(৪)  চতুর্থ কারন পরিবেশ বিপর্যয়। বাংলাদেশে ভূর্গভস্থ জলের অবস্থা খারাপ। আর্সেনিকে ভর্তি। বরিশালের জলে নুন। আস্তে আস্তে বাংলাদেশের অনেক জমিই বসবাসের অযোগ্য হবে। এই টুকু মাত্র দেশ। এত লোক। যাবে কোথায়? খাবে কি?

 পরিত্রানের উপায় কি? উপায় একটাই।  আরো বেশী বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ। যে সমাজ শিখবে জল বাঁচাতে, বৃষ্টির জল বাঁচাতে-আর্সেনিক মুক্ত করতে ফিল্টারিং করতে। বিজ্ঞান কখনোই বই পড়ে জীবনে আসে না। তা আসে জীবনের সাথে যুক্ত হলে। শ্রেফ বেঁচে থাকার জন্য বাংলাদেশের মানুষ বাধ্য হবে আস্তে আস্তে বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনে ঢুকতে।

 (৫) পঞ্চম কারন- যৌন জীবনের নয়া বিন্যাস। এই ফেসবুকে যুগে, মোবাইলের যুগে ছেলে মেয়েদের মেলামেশা বোরখা দিয়ে আটকানো যায়? বোরখা দিয়ে বুকের খাঁজ কাটকানো যায়-কিন্ত ফেসবুক আর মোবাইলে বুকের হৃদপিন্ডের আদান প্রদানের সুযোগ ত কেও আটকাতে পারবে না!! কোন মেয়ে চাইবে মৌলবাদি বর ? পার্টনার সিলেকশনের প্রশ্নে কেও হয়ত নাস্তিক ছেলে বা মেয়ে নাও পছন্দ করতে পারে-কিন্ত মৌলবাদি দের ও কেও পছন্দ করবে না প্রেমের এই ওপেন মার্কেটে। প্রকৃতির নিয়মে এখানে উদার মনের ছেলে মেয়েরাই জিতবে। এখন হয়ত একজন মৌলবাদির বিয়েতে অসুবিধা হয় না। বোরখা পড়া বিবি জুটেই যায়। আর কবছর বাদে জুটবে না। সেটা হবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সব থেকে বড় প্রতিরোধ।

 সমাজ, তার চাহিদা বদলায় দ্রুত। বিবর্তন হয় সেই দিকে-যেদিকের উৎপাদন শক্তি বেশী।  সবাই ভাল থাকতে চায়। এই চাওয়াটাই বস্তবাদি উদার সমাজের ভিত্তি। বাংলাদেশ সেই দিকেই এগোচ্ছে। আস্তে না-দ্রুত। মৌলবাদ ধ্বংসের ক্ষেত্রে হয়ত ভারতকেও দ্রুত ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।





Friday, August 29, 2014

দুই পৃথিবী

হিন্দুত্ববাদি কে? ইসলামিস্টই বা কে?
 আমার সংজ্ঞা সহজ, সরল, সরলবোধ্য।

 ধর্মানুভূতি আসলেই একধরনের যৌনসুড়সুড়ি। হিন্দুধর্ম বা ইসলামের সমালোচনা শুনলেই যাদের মধ্যে এই  সুরসুড়ি যাগে, তারা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্ট। আর এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক নেতাদের ভূমিকা হচ্ছে যাদের মধ্যে এই সুরসুড়ি আছে,  বীর্য্য পতন না হওয়া পর্যন্ত তাদের হ্যান্ড জব দেওয়া।

  আমি দুই পৃথিবীর বাসিন্দা।  আমেরিকার মিট আপগুলো যখন এটেন্ড করি-সে অন্য পৃথিবী। এই পৃথিবী, প্রযুক্তিকে কাজ লাগিয়ে নিরন্তর উন্নতির সাধনা। তা শিক্ষা, সম্পদ, নিরাপত্তা-আরো সার্থক গনতন্ত্র এবং অর্থনীতির সন্ধানে মানুষের জয়যাত্রা। নিরলস প্রচেষ্টা।

 আরকটা পৃথিবী ভেসে আসে ফেসবুক ফিডে। কখনো আই সি সিসের নিষ্ঠুরতা, লাভ জিহাদ, গনেশ চতুর্থী, গাজায় বোমাবর্ষন-কখনো বা মমতাময়ী সার্কাস।  মনে হয় টাইম মেশিন উনবিংশ শতাব্দিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের। আই সি সিসের গণহত্যা নিয়ে যায় সেই সপ্তম শতকের আরবে যেখানো কোন এক কাল্পনিক মহম্মদ অসংখ্য নৃশংস যুদ্ধের মাধ্যমে এক নতুন ধর্মের প্রচেষ্ঠায় রত।

 খুব কঠিন সময় মানুষের সামনে। সভ্যতার সামনে।  দ্রুত বদলে যাচ্ছে জীবিকা। আজকের স্কিল, কাল আসবে না কোন কাজে। অটোমেশনের ফলে কাজ হারাবে আরো অসংখ্য মানুষ। কেও ইম্যুইন নয়। এই আগের মাসেই গণহারে লে অফ হয়েছে আই বি এম, গুগল, মাইক্রোসফটে। ইনফি ব উইপ্রো এরা গোপনে তাড়িয়েছে অসংখ্য প্রগ্রামার।  নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের চাকরি নেই-যাদের আছে তাদের কবে যাবে কেও জানে না। অবশ্য এর মানে এই নয়, অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে। বরং উলটো। অটোমেশনের দৌলতে খুব কম কর্মী দিয়েই মুনাফা আসছে দ্রুত, অনেক বেশী। পৃথিবীর টপ ২% , যারা প্রযুক্তির, উৎপাদনের মালিক, তাদের ধন দৌলত সম্পদ বাড়ছে গুনিতক হারে। না চুরি ডাকাতি বা কোন রাজনীতি নেই এর মধ্যে। প্রযুক্তির উন্নতি এবং অটোমেশনের জন্য আজ যে ফাক্টরীর মালিক সে আরো ধনী-যে আগে কর্মী ছিল সে বেকার।  আর হ্যা, ফাক্টরীর নাম মাইক্রোসফট, গুগল, আই বি এম সব হতে পারে। কর্মীদের হাল সেই এক বা আরো খারাপের দিকে।

 ৯৮% এর সামনে এক অনিশ্চিত অন্ধকার। এর থেকে পরিত্রানের রাস্তা একটাই। শিক্ষা।  শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল  পরবর্তন। চাই সেই শিক্ষা, যে শিক্ষার ফলে ছেলে মেয়েরা হবে সৃজনশীল। নতুন ব্যবসা, নতুন প্রযুক্তি-নতুন ভাবনার জন্ম দেবে। দিতেই হবে। আগে এগুলো ছিল অপশনাল। ভাল , মেধাবীদের জন্য। এখন সবার জন্য। কারন গয়ংগচ্ছ চাকরির ক্ষেত্রটাই হবে সংকুচিত। আমেরিকার স্কুলগুলিতে এই নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে-পাইলট প্রোগ্রাম ও চালু হয়েছে।

 পৃথিবীর অনেক দেশই এই পরিবর্তিত যুগের যাথে পা মেলাতে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এরা চীন, দক্ষিন কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান।

এই সব গুটীকয় দেশ বাদ দিলে, বাকী দেশগুলি এগোনোর বদলে,  ফিরে যাচ্ছে মধ্যযুগে। ধর্ম, জাতি, সাম্প্রদায়িকতার পাঁকে গলা পর্যন্ত ডোবা। যেসব জাতি, দেশ উন্নত আধুনিক সৃজনশীল শিক্ষার ওপর ফোকাস না রেখে ধর্ম আর ট্রাডিশনের এঁটো পাত পরিস্কারে ব্যস্ত, তারা আজ না হলে কাল গৃহযুদ্ধ থেকে ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছে।

সিরিয়া, ইজিপ্ট, লিবিয়া, ইরাক। হ্যা, আপনি আমেরিকাকে গালাগাল দিতেই পারেন। কিন্ত আসল সত্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের এই ধর্ম, জাতি ভিত্তিক সমাজ রাজনীতি এবং তজ্জন্য হানাহানি অন্যপৃথিবীর। কালের যাত্রার ধ্বনি যারা শুনতে পায় না- গৃহযুদ্ধে  ধ্বংসই তাদের অলঙ্ঘ্য নিয়তি।

Friday, August 22, 2014

বিরাট কোহলির লিভ ইনে গাভাসকারের অশুচি?

গাভাসকার রক্ষনশীল ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেটে, ব্যক্তিগত জীবনে। সলিড ডিফেন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর।

                    মুশকিল হচ্ছে এ হেন ব্যক্তিও সদ্য সম্পন্ন ইংল্যান্ডের হাতে ছাতু হওয়া ভারতীয় দলের পরাজয়ের পেছনে "মেয়েদের" -থুরি ক্রিকেটার বান্ধবীদের বাগড়া দেখতে পাচ্ছেন। বিরাট কোহলির লিভ-ইন পার্টনার অনুস্কা একই হোটেলে বিরাটের সাথে ছিলেন। অন্যান্য ক্রিকেটার স্ত্রীদের সমান মর্যাদা পেয়েছেন। ব্যাপারটা সাম হাও গাভাসকারের হজম হচ্ছে না। উনার বক্তব্য যা বিদেশীদের পেটে সয়, তা ভারতীয়রা করতে গেলে ডুববে! ওই কুকুরের পেটে ঘি না সহ্য হওয়ার গপ্পো।

     অদ্ভুত যুক্তি! স্ত্রীরা ক্রিকেটারদের সাথে থাকতে পারবেন! কিন্ত বান্ধবীরা থাকলেই গেল!  অবিবাহিত বান্ধবীরা কি বিছানায় স্ত্রীর থেকে বেশী দাপাদাপি করে ক্রিকেটারটির ঘুমের বারোটা বাজাবেন ?  না বান্ধবীদের জন্য সেক্সড্রাইভ থাকে  -কিন্ত বিবাহিত স্ত্রী হলেই শামুকের মতন ভেতরে ঢুকে যায়? কি সব অদ্ভুত যুক্তি!

   সত্যিই কি লিভ-ইন পরদেশী মেঘ আর সাত পাকে পাঁকে পড়া ভারতীয় সংস্কৃতি?

  বিবাহ বলতে আজকের সমাজ যেটা দেখছে, জানে-সেই মন্ত্র আর আইনের কাগজপত্র খুবই আধুনিক ব্যপার স্যাপার। ঘটা করে, অনুষ্ঠান করে বিয়ে প্রাচীনকালে একমাত্র রাজা উজিরদের মধ্যেই চালু ছিল। গ্রীসে সেটাও ছিল না। নারী পুরুষ একসাথে থাকলেই সমাজ তাকে স্বীকৃতি দিত। রোমেও সাড়ম্বর বিবাহ বলতে অভিজাত শ্রেনীদের মধ্যে রাজনৈতিক পুনঃবিন্যাস। সাধারন মানুষের এত ঘটা করে বিয়ে করার কোন উপায় ছিল না। লিভ ইন করত-আর তাহাই ছিল বিবাহ। ভারতেও প্রেম করে বিবাহ হচ্ছে গান্ধর্ব্য বিবাহ। বাকী সব ফেক।  রাজনীতি বা ব্যবসার কারনে কন্যাসন্তানকে ঘটা করে বেচার পোষাকি নাম ছিল বিবাহ। সেটা করত সমাজের উচুশ্রেনী। সে যুগের আমআদমীর জন্য যাহাই লিভ-ইন, তাহাই বিবাহ।

 টোরা বা বাইবেলে দেখা যায় ইস্রায়েলিরা প্রথম বিয়ের ব্যাপারে কড়াকরি শুরু করে। এডাল্ট্রি বা বিবাহবর্হিভূত সেক্সের জন্য শাস্তির ধারনা একেশ্বর বাদি ধর্মগুলির আমদানি। কনস্টানটাইন-যিনি আদতে খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা, তার আমলেই প্যাগান রোমানদের বিবাহের "পবিত্রতার" প্রথম প্রকাশ।  এরপরে ইসলাম এসে বিবাহের পবিত্রতার ওপর আরেক প্রস্থ পোঁচ লাগায়। ক্যাথলিক চার্চ বিবাহের পবিত্রতা রক্ষায় এবং নরনারীর এডাল্ট্রি আটকাতে অদ্ভুত অদ্ভুত সব আইন জারী করে মধ্য যুগে।   নরনারীর স্বভাবসিদ্ধ আকর্ষন এবং তা হেতু আরো স্বাভাবিক লিভ-ইন সম্পর্কের ফল্গুধারা ধ্বংস করে আব্রাহামিক ধর্মগুলি।

ফলে চার্চের বন্ধন আলগা হতেই এখন ফ্রান্সের ৩০% লোক ও বিবাহিত নয়-সেখানে লিভ-ইনকেই বিবাহের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউরোপের বাকী সভ্য দেশগুলিতেও আস্তে আস্তে বিবাহ প্রায় অবলুপ্তির দিকে।

সময়ের নিয়মে যে কোন সভ্য সমাজে বিবাহর অবলুপ্তি দরকার। বিয়ের পেছনে না আছে যুক্তি, না স্ফূর্তি। এক পার্টনারের সাথে সারাজীবন কাটানো যাব্জজীবন কারাদন্ড। প্রেমের সমাধি।  যদি ধরে নেওয়া যায় সন্তানের কারনে সেটা দরকার, তাহলেও এটা পরিস্কার নয় কেন ঘটা করে, এত অপচয় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হবে। কেও যদি সারাজীবন এক পার্টনারের সাথে থেকে খুশী থাকে-থাকুক।  কিন্ত কেও যদি সেটা না চায়,  উকিলদের পকেটে পয়সা দিয়ে ডীভোর্স মামলা, খরপোশ মামলা কেন?

   বিবাহ একটি অসভ্য প্রথা। জোরকরে দুই নরনারীকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় ভরে সামাজিক তামাশা। এই বৈবাহিক অসাড়তা আমরা যত দ্রুত বুঝব,  ততই মঙ্গল।





  

Sunday, August 17, 2014

কৃষ্ণ চেতনা

 কৃষ্ণ কোন ব্যক্তি না। কৃষ্ণ মানুষের চেতনার উচ্চ স্তর।

  মানুষের প্রথম চেতনার স্তরে অর্জুন। সেখানে মানবিকতা, লোভ, দ্বন্দ, জ্ঞাতি, পুত্র, সংসার। আমাদের প্রতিদিনের, প্রতি মুহুর্তের সাধারন মনের স্তর।

  কতটা সত্য আমাদের চেতনার সেই স্তর?  কে "আমি" -আমি কি আমার দেহ?  প্রতি ১২০ দিনে আমার দেহের ৯৯% অনুপরমানু সম্পূর্ন বদলে যায়। বদলে যায় ৯৫% কোষ, কোষানু!  তাহলে কি "আমি" আমার মন? না। আমি কাল কমিনিউস্ট ছিলাম, আজ বাজারী, পরশু আধ্যাত্মিক। মনেরই বা স্থিরতা কোথায়? কি সেই "আমি" যা বদলায় না?
 বদলায় দেহ, বদলায় মন। বদলায় না "আমি"-তাহলে কে সেই আমি?

  আমাদের এই আশা আকাঙ্খা ঘৃণা ভালোবাসা-সবই মনের ক্ষনস্থায়ী ভাব। গিরগিটির রং। চিরস্থায়ী কিছু না।

 কৃষ্ণ আসলে আমাদের চেতনার সব স্তর-ক্ষনস্থায়ী থেকে স্থায়ী-কামনা, বাসনা, লোভ, দ্বন্দ, নাড়ির টান থেকে স্বাশ্বত চেতনায় উত্তোরন। সেইজন্য কৃষ্ণ একই সাথে নারীলোলুপ, উভকামী, ত্যাগ, যোদ্ধা এবং সন্ন্যাসী-মানুষের সব চেতন এবং অবচেতন মন।

Saturday, August 16, 2014

বিগডেটা -ধর্ম, গণতন্ত্র এবং রাজনীতির ভবিষ্যত

                                                                             (১)
   এই  টেকনোলোচনায় ঢোকার আগে, আসুন স্বরণ করি গত তিন দশকে কি দ্রুত বদলেছে আমাদের বেঁচে থাকা। পদ্ধতি, স্টাইল। সমাজ, সরকার, রাজনীতি।

  ২০০৮ সালে প্রাইমারীতে হিলারীর বিরুদ্ধে জিতলেন ব্যারাক ওবামা। যাকে দুদিন আগেও কেও চিনত না। ক্লিনটন পত্নী আমেরিকাতে প্রবল জনপ্রিয়। দুইদফার বুশ শাসনে দফারফা আমেরিকা চাইছিল-ওয়াশিংটনে আমূল পরিবর্তন। ওবামা শোনালেন সেই আশার কথা "চেঞ্জ"- কিন্ত এই গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সম্ভব করল ফেসবুক। হিলারী যেখানে জিতবেন নিশ্চিত জেনে টাকা তুলছিলেন-ওবামা জোর দিচ্ছিলেন, স্যোশাল মিডিয়াতে সাধারন মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে। আশ্বাস দিতে "চেঞ্জ"।

          এরপর স্যোশাল মিডিয়ার হাত ধরেই মিশর, টিউনেশিয়া মরোক্কর গোলাপি বিপ্লব। মানুষের মন, মতামতকে আর নিয়ন্ত্রন করতে পারল না মেইন স্ট্রিম মিডিয়া। তার মালিক মিলিটারি ব্যবসায়ী শ্রেনী।

  কেও যদি ভাবেন ফেসবুক বিপ্লবই যথেষ্ট-ধর্ম, রাজনীতির আমূল পরিবর্তন করা গেছে-আগে মহম্মদ, কৃষ্ণ, যীশু ইত্যাদি কাল্পনিক চরিত্রদের মৌরসীপাট্টায় আঘাত করা যেত না। এখন যাচ্ছে।  স্যোশাল মিডিয়ার দুনিয়া এক বিরাট সামাজিক বিপ্লবের পথ খুলে দিয়েছে দুহাত চওড়া করে। তাহলে লিখি, প্রযুক্তি বিপ্লব কি করে মানুষের রাজনীতি এবং সমাজকে বদলে দেবে, তার ১% ও আপনি দেখেন নি। বাকী ৯৯% খেলা আসিতেছে। আর যে প্রযুক্তির হাত ধরে এই নতুন দিন, নতুন দেশ, নতুন আইন আসছে-তার পোষাকি নাম বিগডেটা।

  আমি খুব অবাক হব না যদি দেখি ত্রিশ বছর বাদে, আর কোন রাজনৈতিক পার্টি নেই। রাজনৈতিক প্রতিনিধি নেই। স্কুল নেই। কলেজ নেই। শিক্ষক নেই। ডাক্তার নেই।  উকিল নেই। আছে শুধু বিগ ডেটা ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম। যার ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে নতুন  এ আই শিক্ষক । যে আপনার শিশুর সাথে বাড়িতে ক্রমাগত কথা বলে বুঝছে আপনার শিশুর কি কি শেখা দরকার-সে কি লিখবে-কি দেখবে-কি পড়বে-এবং তারপরে মূল্যায়ন ও করে দেবে। ডাক্তারীর ক্ষেত্রেই একই কথা। ডি এন এ, এম আর আই, ব্লাড রিপোর্ট সব বিশ্লেষন করে আপনার যদি কোন ওষুধ লাগে, তার ফর্মুলেশন আপনি কম্পুটারেই পেয়ে যাবেন। আপনার রোগ নিয়ে যা বুঝতে চাইবেন-কি কি করনীয় জানতে চাইবেন-সবই পাবেন হাতের মুঠোয়। সরকার, গর্ভনমেন্টের ভূমিকা ক্রমশ সংকুচিত হবে। ট্যাক্স কালেকশন, কে ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে-কে ঘুষ খাচ্ছে-সরকারের কোথায় টাকা খরচ করা উচিত-কিভাবে করা উচিত-সব কিছুর জন্যই থাকবে বিগডেটা রেকমেন্ডেশন সিস্টেম। বাজেট বিতর্কের দরকারই হবে না। নতুন আইন প্রণয়নের ও দরকার হবে না-কারন সোশিওলজিক্যাল বিগডেটা বিশ্লেষন করে বলে দেওয়া সম্ভব হবে, নতুন আইনের দরকার আছে কি নেই! আর ক্রাইম? আমরা এত বেশী সেন্সর নিয়ে ঘুরব-আমরা কোথায় ছিলাম, মনে কিছিল-কোথায় কি করেছি-তা সব সময় এখনি ট্রাক করে যাচ্ছে গুগল, ফেসবুক। এর পরে আসছে আই ও টি বা ইন্টারনেট অব থিংঙ্কস। বিগডেটাই প্রমান করে দেবে কে অপরাধী। এই ফিল্ডটাকে বলে ইডিসকভারী।

   কোন সমাজ বিপ্লব, বৈপ্লবিক চিন্তা, বিপ্লবী-কেও নাই। নাই কোন রক্তপাত।  নেই গৃহযুদ্ধ। ছোট ছোট  কিছু কিছু আবিস্কার। ছোট ছোট ধাপ। বেবী স্টেপ এট আ টাইম। ট্রানজিস্টর-থেকে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তি বিপ্লব। এক ইঞ্চি সিলিকন টুকরোর মধ্যে লাখ লাখ ট্রানসিস্টর। সিলিকন ভ্যালীতে ফেয়ার চাইল্ড সেমিকন্ডাক্টরের হাত ধরে আস্তে আস্তে তৈরী হতে শুরু করল, ছোট্ট ছোট্ট কম্পইউটার যার ক্ষমতা আজকের যেকোন মোবাইল ফোনের ১% ও না।  তৈরী হোল মাইক্রোসফট আপলের মতন কোম্পানী যারা কম্পুটারের দাম মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে নিয়ে আসল।

   সত্যিকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব এল ইন্টারনেটের হাত ধরে। ইন্টারনেটের পূর্বসূরী আরপানেট। শুধু কম্পিউটার তৈরী করলেই হবে না-তাদের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থাও চাই। এই ভাবনা থেকেই উদ্ভব সার্ভার, ওয়েব সার্ভার, ওয়েব দুনিয়া। কিভাবে একজায়গায় তথ্য রেখে সব তথ্য গোটা দুনিয়াকে সার্ভ করা যেতে পারে। ওয়েব সাইটের জন্ম, ইমেল কমিউনিকেশন প্রথম প্রজন্মের তথ্য বিপ্লব। হাজার হাজার ওয়েব সাইট যখন তৈরী হচ্ছে , ১৯৯৪ সালে স্টানফোর্ডের ছাত্র জেরী ইয়াং এর মাথায় ঢুকল এক নতুন ব্যবসার প্ল্যান-একটা ওয়েব সাইট বানালে কেমন হয় যেখানে পৃথিবীর সব ওয়েব সাইটের ডাইরেক্টরী থাকবে? আসলে তখনো ওয়েব সাইট মুড়িমুরকির মত তৈরী হয় নি। সেই ১৯৯৪ সালে সব মিলিয়ে হয়ত ছিল লাখ খানেক সাইট। সেটাই উয়াহুর জন্ম। কিন্ত এত লাখে লাখে ওয়েব সাইট তৈরী হতে শুরু হল প্রতিদিন, জেরী ইয়াং বুঝলেন ডিরেক্টরী ঘেঁটে কেও ওয়েব সাইট খুঁজে পাবে না। চাই সার্চ ইঞ্জিন। সেখান থেকেই ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনের জন্ম। যার প্রতিদ্বন্দী হিসাবে ১৯৯৮ সালে জন্ম গুগুলের।

বিগডেটার জন্ম গুগুলের হাত ধরেই-এবং সেই সার্চ ইঞ্জিনের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে। আজ বিগডেটার ব্যবহার ক্ষেত্র এবং ভবিষ্যত সুদূর প্রসারী। তাই এই প্রযুক্তি বুঝতে গুগুলের সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে, সেটা বোঝা দরকার।
 সাথে সাথে বুঝতে হবে একেকটি ছোট ছোট আবিস্কার কিভাবে আমূল পরিবর্তন আনছে আমাদের জীবনে। সমাজে। রাজনীতিতে। অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছে সমস্ত রাজনৈতিক তত্ত্ব।  বেকারত্ব বাড়বে-কারন মানুষের ৯৯% স্কিল আর কোন কাজেই আসবে না।

আমার নিজের  মূল ব্যবসা বিগডেটা নিয়েই। যদিও আমার নিজের পেশাগত এবং শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড টেলিকমে। কিন্ত গততিন বছর ধরে আমি বিগডেটা এনালাইটিকের ব্যবসাতেই আছি-এবং  চলমান এক বিরাট পরিবর্তন ভূমিকম্পের মতন আমার চিন্তাকে ক্রমাগত নাড়াচ্ছে।  আমি জানি না এর শেষ কোথায়। শুধু চোখের সামনে যেসব চিত্র ভেসে উঠছে-তাই লিখে যাচ্ছি মাত্র। এর কিছু কিছু ঠিক হবে-অধিকাংশই ফলবে না। কারন আমি জানি না-কাল কি নতুন প্রযুক্তি আসতে চলেছে বিগডেটা ক্ষেত্রে। শুধু এটা টের পাচ্ছি এক বিরাট প্রযুক্তি বিস্ফোরনের মধ্যে দাঁড়িয়ে। এর ভলকানিক লাভাশ্রোত কবে কোথায় কাকে ভাসাবে-জানা নেই।

                                                                 (২)

                  যেকোন প্রযুক্তির সমাধান বুঝতে, সমস্যাটা বোঝা জরুরী।  সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি যে সমস্যাগুলির মুখোমুখি হচ্ছিল-সেটা বুঝলেই আমরা বুঝবো বিগডেটা কি ও কেন। আমি যতটা সম্ভব কম প্রযুক্তিগত টার্ম ব্যবহার করব।

     পৃথিবীতে প্রতি ঘন্টায় লাখে লাখে নতুন ওয়েব পেজ, পেজ কনটেন্ট তৈরী হচ্ছে। আবার অনেক কিছু মুছেও যাচ্ছে। এবার ধরুন আপনি খুঁজছেন   skin cancer.    কেন না চামড়ায় কিছু স্পট তৈরী হওয়াতে আপনার সন্দেহ হয়েছে, আপনার স্কিন ক্যান্সার হয়েছে। কি করে আপনাকে সঠিক তথ্য জানাবে সার্চ ইঞ্জিন ?    

          (১) প্রথমত কোটি কোটি ওয়েব সাইট আছে-তাতে তথ্য আছে  হাজার হাজার পেটা বাইট লেভেলে ( ১০০০ টেরা বাইটে এক পেটা বাইট।  এক টেরা বাইট মানে ক্যানন ক্যামেরাতে তোলা ১০০,০০০ ছবির আর্কাইভ )। এত তথ্য রাখবেন কি করে?
           
        (২) ধরা যাক বিরাট বিরাট ডেটা সেন্টার বানিয়ে সব তথ্য রাখা গেল। গুগলের এরকম ৩৭ টা ডেটা সেন্টার আছে শুধু আমেরিকাতেই। আর এই সব ডেটাসেন্টারে আছে লাখে লাখে সার্ভার-তারা সম্লিলিত ভাবে যে ইলেক্ট্রিসিটি খায়-তা গোটা কোলকাতায় যে ইলেকট্রিসিটি লাগে তার দশগুন।

       এর পরের সমস্যা হচ্ছে এই কোটি কোটি ওয়েব সাইট ঘেঁটে তার মধ্যে থেকে কিভাবে বাছা সম্ভব সেইসব পেজ-যার মধ্যে স্কিন ক্যান্সার আছে? এই কোটি কোটি ওয়েব সাইট ঘাঁটতেই চলে যাবে দিনের পর দিন!

       (৩)  ধরা যাক, (১) এবং (২) সমস্যার সমাধারন হয়েগেছে। তার পরের প্রশ্ন-এই যে প্রতিদিন হাজারে হাজারে নতুন ওয়েব সাইট আসছে, তার তথ্য রাখবেন কি করে?

        (৪) এবার ধরা যাক, ১-৩ সমস্যার ও সমাধান হয়েছে। তারপরের প্রশ্ন তথ্যত শুধু টেক্সটে না। তা আছে ছবি, গান, ভিডিও সব কিছুতে! কোন ভিডিওতে স্কিন ক্যান্সার নিয়ে কিছু বলা হলে, সেটাই বা কি করে টানা যায় সার্চ ইঞ্জিনে?

  গুগুলের দুই ইঞ্জিনিয়ার জেফরি জিম এবং সঞ্জয় খেমাওয়ার ২০০৪ সালে প্রথম দুই সমস্যার জন্য ম্যাপ রিডিউস নামে এক ড্রিস্টিবিউটেড কম্পিউটেশন সিস্টেমের প্রস্তাবনা রাখেন। উৎসাহী পাঠকেরা এখানে পেপারটি দেখতে পারেন। গুগল ২০০১ সাল থেকেই প্রথম দুই সমস্যার জন্য এই ম্যাপ রিডিউস সিস্টেমের ব্যবহার করছিল। যেখানে কোন সার্চ এর নির্দেশ এলেই সেই সার্চ ফাংশনটা গুগলের হাজার হাজার সার্ভারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত-এই প্রসেসটাকে বলে ম্যাপিং। আর রেজাল্টগুলোকে যখন ফিরিয়ে নেওয়া হয় হাজারটা সার্ভার থেকে এক সার্ভারে-সেই পদ্ধতিকে বলে রিডিউস।  সংক্ষেপে এম-আর বা ম্যাপ রিডিউস সিস্টেম। ২০০৭ সালে এর থেকেই তৈরী হবে ওপেন সোর্স এপাচি হাডুপ যাতে নেতৃত্ব দেবে গুগলের প্রতিদ্বন্দী ইহাহু।  এর থেকেই বিগডেটার প্রথম প্রজন্মের প্রযুক্তি হাডুপ ইকোসিস্টেমের জন্ম।

কিন্ত তার আগে বোঝা দরকার কেন দরকার পড়ল হাডুপ ইকোসিস্টেমের। ফেসবুক দিয়েই ব্যাপারটা বুঝি। সহজ হবে। এই যে যেকোন মুহুর্তে ফেসবুকে আমরা এত স্টাটাস দিচ্ছি, ফটো আপলোড করছি-এগুলো ফেসবুক সার্ভারে শুধু স্টোর করলেই হবে না-আপনার স্টাটাস ফিডগুলি আপনার বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও চাই! কাজটা খুব সহজ না।

প্রথমে ধরুন একটা বিরাট বিরাট সার্ভার দিয়ে ফেসবুক এই কাজ করতে চাইছে। তাহলে কি সমস্যা হত?  প্রতি সেকেন্ডে ফেসবুকে কয়েক টেরাবাইট তথ্য ঢোকে। সমস্যা এখানে অনেক। এত তথ্য এত দ্রুত একটা মেমরীতে লিখতে গেলে এত দ্রুত কাজ করা ফ্ল্যাশ মেমরী দরকার- সেটা নেই। একমাত্র উপায় যদি নানান ডেটাসেন্টারে অসংখ্য মেমরীর ডেটাবেসে এই তথ্য ভাগ করে লেখা যায়। শুধু তথ্যটা ভাগ করলেই ত হবে না। পরে সেটাকে বার করতেও হবে মেমারী থেকে। ফলে তথ্য ভাগ করে জোরা লাগানোটাও একটা কঠিন কাজ-আর এই জন্যেই জন্ম হয় ড্রিস্টিবিউটেড ডেটাবেসের। আধুনিক কালে এসেছে আরো উন্নত নতুন টাইপের ডেটাবেস যেমন ট্রি ডেটাবেস, এটমিক ডেটাবেস,  গ্রাফিক্যাল ডেটাবেস-যাদের কাজ একটাই। ডেটার মধ্যে সম্পর্ক নির্নয় করে, ডেটাটাকে কাটা আর জোরা লাগানো। এই স্টিচিং অপারেশনটা বিগ ডেটার বেসিক। এটাকে ঠিক ঠাক না করতে পারলে বিগডেটার অধিকাংশ কাজ করা সম্ভব না।

 পরের সমস্যা হচ্ছে, এই যে নানান সার্ভারে কাজ করানো হচ্ছে-ডেটার আদান প্রদান হচ্ছে-সেটাকে কিকরে দ্রুত করা যায়। ম্যাপ রিডিউস সিস্টেম যে ক্ল্যাসিক্যাল প্যারালাল কম্পিউটিং ফ্রেমওয়ার্কের চেয়ে খুব বেশী কিছু ভাল না-এই নিয়ে কম্পুটার সমাজেই বিতর্ক আছে। এম আই টির অধ্যাপক প্রফেসর স্টোন ব্রেকার মনে করেন, ম্যাপ রিডিউস সিস্টেম একটা হাইপ। এই সমস্যার সমাধানে আসে দ্বিতীয় প্রজন্মের ম্যাপ রিডিউস সিস্টেম-যেটাকে বলে ইন মেমরী সিস্টেম-পোষাকী নাম স্পার্ক। এটি বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভুত ওপেন সোর্স। এখানে তথ্যগুলির গুরুত্বপূর্ন অংশ র‍্যাম বা ডাইনামিক মেমরী রেখে দেওয়া হয়-যাতে তথ্যের আদান প্রদান কমানো যায়। কারন ওখানেই ৯০% সময় যায়। স্পার্ক ফ্রেম ওয়ার্কটির বয়স বছর খানেক হতে চললো। এটিই বিগডেটার এখন জনপ্রিয়তম ফ্রেমওয়ার্ক। হাডুপ এখন অতীত।

স্যোশাল মিডিয়ার উদাহরন থেকে দেখতে গেলে দেখব, বিগ ডেটার চারটি মূল স্তম্ভঃ এগুলিকে বলে ফোর ভি।

  (১) ভল্যুউম-বিশাল তথ্যভান্ডার। এটা টেরাবাইট লেভেলেও হতে পারে, এক্সবাইট লেভেলেও হতে পারে
  (২) ভেলোসিটি- দ্রুত ঢুকছে তথ্য। দ্রুত বেড়ে উঠছে তথ্য ভান্ডার
  (৩) ভ্যারাইটি- নানান ধরনের তথ্য। লেখা, ছবি, গান, ভিডিও ইত্যাদি
   (৪) ভেরাসিটি- অধিকাংশ তথ্যই পরিস্কার না। ৯৯% তথ্যই কাজের না।

 এত গেল তথ্য। এবং ফ্রেমওয়ার্ক। তথ্য দিয়ে কি হয়? তথ্য থেকে দরকার জ্ঞান বা কাজের কাজ লাগানোর মত সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ। এর জন্যে দরকার আধুনিক মেশিন লার্নিং সিস্টেম। যেমন ধরুন আমি ফেসবুকের ডেটা থেকে জানতে চাইছি মোদির নেপাল সফর নিয়ে ভারতের মানুষ খুশী কিনা? এটাকে সেন্টিমেন্ট এনালিসিস বলে। অন্তত ১ মিলিয়ান লোকে মোদির ভারত সফর নিয়ে কমেন্ট করেই থাকবে। ওই এক মিলিয়ান কমেন্ট পড়া সম্ভব না। তাহলে কি করে বুঝবো ওই এক মিলিয়ানের মধ্যে অন্তত ৭০% মোদির পক্ষে?  এই কাজটাই সহজ করে লার্নিং সিস্টেম। আমার দরকার ১০০টার মতন স্টাস্টাস যেখানে মোদির নেপাল সফর নিয়ে লোকে কমেন্ট করেছে।  সেখান থেকে বেছে আমি  দুটো ট্রেনিং সেট বানাবো-একটাতে লোকে মোদির ব্যাপারে পজিটিভ-অন্যটি নেগেটিভ। এই ট্রেনিং সেট মেশিং লার্নিং সিস্টেমে ঢুকিয়ে দিলেই বাকী ১ মিলিয়ান স্টাটাসে ব্যাপারে সে সিদ্ধান্ত নেবে কোনটি মোদির ব্যাপারে পজিটিভ-কোনটি নেগেটিভ। এতে ভুল থাকবে। কিন্ত এক মিলিয়ান স্টাটাস কারই বা পড়া সম্ভব?

বিগডেটা প্রযুক্তির তিনটি স্তম্ভ।  প্রথমে বিশাল তথ্যভান্ডার-যার উৎপত্তি হতে পারে মানুষের লেখা, ছবি, গবেষনাপত্র, সেন্সর ডেটা, টেস্ট রেজাল্ট ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইনফ্রাস্টাকচার-যার মধ্যে আচ্ছে হাডুপ বা স্পার্কের মতন ম্যাপ-রিডিউসড সিস্টেম। তৃতীয়টি মেশিন লার্নিং এলগোরিদম-সেটা কাজে লাগিয়ে বার করা যাবে তথ্যভান্ডারের মধ্যে আছে টা কি! সুপারিশ বা রেকোমেন্ডেশনটাই বা কি দিচ্ছে !

 আমি খুব সংক্ষেপে বিগডেটা প্রযুক্তি নিয়ে লিখলাম-এর বাইরেও অসংখ্য উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি আসছে বিগডেটা ফিল্ডে।
 রাজনীতি, সমাজে-আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিগডেটা কি প্রভাব ফেলবে সেটা জানতে এই টুকু বেসিক মাথায় রাখলে ভাল হয়।

                                                                           
                                                                          (3)

এবার আসি ধর্ম, রাজনীতি এবং সমাজ নিয়ে।

                    আমেরিকান সরকার এখনই বিগডেটাকে প্রবলভাবে কাজে লাগাচ্ছে নানান এরিয়াতে। এখানে মেডিকেড বা মেডিকেয়ারে ফ্রড হত সাংঘাতিক। সরকারি ফান্ড থেকে চুরি হত ২০০ বিলিয়ান ডলারের বেশী। ওবামা সরকার এই অপচয়ের অনেকটাই বাঁচিয়েছেন বিগডেটা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে। আবার এই একই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকারের ওপর নজরদারী চালিয়েছে-যার ফলশ্রুতি শ্নোডেন কান্ড।
নানান যাত্রায় ভিন্ন ফল আর কি।

   সব থেকে বড় কথা ওবামা নিজে ২০১২ সালে জিতলেন বিগডেটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ওবামার ক্যাম্পেইনের হাতে আমেরিকার সব নাগরিকদের তথ্য ছিল-তাদের রাজনৈতিক মনের খবর ছিল। এটা কিভাবে সম্ভব-তার জন্য অন্য একদিন লিখব। এই ফিল্ডটাকে বলে পলিটিক্যাল বিগডেটা। এর মূল সমস্যা কি করে বার করা যায় ভোটারদের মনের খবর-আর কারা সুইং করতে পারে।  ডেভিড এলেক্সরড ছিলেন তার মূল সেনাপতি। যাইহোক ওবামার লোকজন জানত মিঃ এক্সকে কি করে পটাতে হবে-অর্থাৎ কি টোপ ফেলবেন- পরিবেশ না স্যোশাল বেনিফিট-ইত্যাদি!! এইভাবে তৈরী করা হয় ভোটিং ব্লক।

 ভারতে মোদিও ডেটা সায়েন্সকে সব থেকে ভাল পেশাদারি ভাবে কাজে লাগিয়েছেন।  ফল পেয়েছেন হাতে নাতে। আবেগে না ভেসে, প্রতিটা ভোটারের মনের খবর জেনে, যে রাজনীতিবিদ গিরগিটির মতন রং পরিবর্তন করতে পারবেন-তিনিই এই নতুন যুগের জো জিতে ওহি  সিকান্দার!  মোদিও কি সুন্দর হিন্দুত্বর রং ছেড়ে-উন্নয়নের আলখাল্লাতে উন্নিত। কারন তার টিম ভোটারদের মন সব থেকে ভাল বুঝে, সেই মতন রং বদলেছে। হিন্দুত্ববাদের আদর্শ আঁকড়ে ধরে ডোবে নি।   ওবামা অবশ্য মানুষের মন বুঝে বদলানোর ব্যাপারে গুরুদেব।

 তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? পৃথিবীর দুই বৃহত্তম গণতন্ত্রে ওবামা, মোদির নির্বাচন থেকে পরিস্কার আদর্শের দিন শেষ। জনগন চাইছে বাস্তববাদি রাজনীতি-যা তাদের প্রতিদিনের সমস্যা-দুর্নীতি,  চাকরি, ইনফ্রাস্টাকচার, সুলভ এবং নির্ভরযোগ্য মেডিক্যাল সিস্টেম উপহার দেবে।

সুতরাং রাজনীতি এবং গনতন্ত্র তার নিজের স্বার্থেই বিগডেটাকে আরো ব্যাপক ভাবে কাজে লাগাবে বা লাগাচ্ছে। বিগডেটা কাজে না লাগালে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব না। ইনফ্রাস্টাকচার এবং বাজেটের সৎব্যাবহার সম্ভব না। সুলভ সরকারি পরিশেবা দেওয়া সম্ভব না। অর্থাৎ উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক দাবীর কারনেই আস্তে আস্তে সরকারে আমলাদের জায়গায় আসবে বিগডেটা নির্ভর সরকারি মেশিনারী-যেখানে নাগরিকরা তাদের পরিশেবা পাবে দ্রুত। দেওলিয়া সরকারে খরচ ও কমবে অনেক।

 এর একটা উদাহরন স্মার্ট সিটি। মোদি ভারতে ১০০ টি স্মার্ট সিটি গড়তে চান।  স্মার্ট সিটি আই ও টি বিগডেটার উদাহরন। সেখানে শহরের লাইটিং, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রিত হবে সেন্সর দিয়ে, ভিডিও দিয়ে। সর্বত্র সার্ভিলেন্স থাকায় রাস্তাঘাট হবে নিরাপদ। পুলিশ, আমলা ছাড়াই সম্পূর্ন অটোমেশনের ভিত্তিতে চলবে শহরগুলি।  খুব স্বাভাবিক কারনে এই শহরগুলি হয়ে উঠবে ব্যবসার তীর্থক্ষেত্র।

 তবে এসব ও অতীত। ভবিষ্যত কি?

 ধর্ম টিকে আছে রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায়। কৃষ্ণ মহম্মদ যীশুর ন্যায় কাল্পনিক রূপকথার গল্পে বিশ্বাস করে লোকজন নিজেদের মধ্যে মারমারি হানাহানি করে-এটার কারন একটাই। সমাজ এবং সরকার জোর করে ধর্ম নিয়ে বাচ্চাদের ব্রেইন ওয়াশ করে। এই জিনিসটাই থাকবে না। একজন বাচ্চাও আস্তে আস্তে সমাজ, স্কুল বাদ দিয়ে ওয়েব থেকেই শিখবে বেশী।

আর শেখার পদ্ধতিতেই থাকবে বিগডেটা এনালাইটিক। যেখানে কেও যদি জানতে চায় মহম্মদ কে ছিলেন-তাকে প্রথমেই সিস্টেম জানাবে, মহম্মদ ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্বীকৃত এক "কাল্পনিক" চরিত্র। কারন তার অস্তিত্বের কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। কোন প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মহম্মদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন নি। ডেটা আনালাইটিক নানান তথ্য ঘেঁটে সত্যতে অনায়াসেই উপনীত হতে পারে। ভুল তথ্য দিয়ে কায়েমি স্বার্থ সেখানে ঢাকা যাবে না।

 আর আজকে  ইসলামিক দেশে একজন শিশু কিভাবে শিখছে মহম্মদকে? তাকে শেখানো হচ্ছে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ-তার মতন কেও জন্মান নি-তিনি পারফেক্ট! কিন্ত সেই শিশু একবারের জন্যও জানতে পারছে না মহম্মদের চরিত্রটাই স্পাইডারম্যান বা সুপারম্যানের যতটা পারফেক্ট-ততটাই কাল্পনিক।  কারন শিক্ষাপদ্ধতিতে সেই অটোমেশন এখনো আসে নি।

এটা যেদিন আসবে ধর্মের রূপকথা সেদিনই শেষ!

একই ব্যাপার ঘটবে নর-নারীর সম্পর্ক স্থাপনে। ই-হার্মোনি বলে একটা ওয়েব সাইট এটা প্রথম শুরু করে-এখন এই ম্যাচিং রেকোমেন্ডেশন বিরাট  বড় ইন্ড্রাস্টি।  ধরুন আপনি জানতে চাইছেন-আপনার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে কে সব থেকে ভাল জীবন সঙ্গী হতে পারে ?  এরজন্য আপনাকে অত কিছু করতে হবে না। আপনি শুধু সিস্টেমকে জানিয়ে দেবেন-আমি ঠিক এই এই টাইপের বর চাই। সিস্টেম আপনাকে জানিয়ে দেবে, আপনার ফ্রেন্ড প্রোফাইলের মধ্যে কে কে আপনার প্রত্যাশার কাছাকাছি। শুধু তাই না-প্রথম দিন ডেটিং এ আপনাদের মধ্যে কি কি কথা হয়েছে, সেটা বিশ্লেষন করেও বলে দেওয়া সম্ভব আপনাদের সম্পর্কের ভবিষ্যত আছে কি না।

 আমূল পরিবর্তন হবে পেশাদারি ক্ষেত্রে।  আগেই লিখেছি ডাক্তার, উকিল, শিক্ষক,  ম্যানেজার, সাধারন প্রোগ্রামার ইত্যাদি পেশাগুলির অস্তিত্ব সংকটে। কেরানী ত উঠেই গেছে অনেক দিন আগে। শিল্পে অটোমেশনের ফলে শিল্প শ্রমিকও আর লাগবে না। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এত এত মানুষ যাবে কোথায়? কাজ না পেলে খাবে কি?

এখানেই মার্ক্সের লেখাগুলির প্রাসঙ্গিকতা ফিরে আসে। উৎপাদন ব্যাবস্থার মালিকানা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন ভবিষ্যতের জন্য। কারন শ্রমিক বা কর্মীর প্রাসঙ্গিকতা প্রায় থাকবে না। একটা লোক সম্পূর্ন অটোমেশন এবং রোবটিক্সের সাহায্যে একাই ১ থেকে ১০ মিলিয়ান ডলারের প্রোডাকশন করতে সমর্থ হবে। যা আগে ছিল না।

 এই প্রশ্নটা আমাকে অনেকেই করেন-আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত কি? কোন পেশাতে গেলে ভাল হয়?

  আমার কাছে উত্তর নেই। শুধু এটাই বলি আমাদের সন্তানদের দুটো স্কিল সাংঘাতিক ভাল থাকতে হবে। এক, প্রোগ্রামিং, দুই বিজনেস এনালাইটিক বা ব্যবসা বোঝার ক্ষমতা।  চাকরির স্কোপ এত সাংঘাতিক ভাবে কমবে আগামী বছরগুলিতে, সবাই  স্বেচ্ছায় অনিচ্ছায় ব্যবসার দিকেই আসতে বাধ্য হবে । টিসিএস, ইনফি, সিটিএস-এই সব বিগ জায়েন্ট কোম্পানী অলরেডি অতীত। কারন বিগডেটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগে যে  আই টির কাজে ১০০০ লোক লাগত-এখন লাগবে ১০ জন। সুতরাং নতুন যে ব্যবসার দিকগুলি খুলবে, তা সেই হাই এন্ড প্রোগ্রামিং মার্কেটেই। ইল্যান্স, ওডেক্স -যা অনলাইন স্কিল মার্কেটপ্লেস-তাদের ব্যবসা বাড়াছে সাংঘাতিক হারে।

 তবে কি হবে আগামী দশ বছরে, সেটা কেও জানে বলে মনে হয় না। আমি ত কোন ছাড়!






                                       
  

Thursday, August 14, 2014

ঋষি অরবিন্দ- নির্মোহ দৃষ্টিতে

আজ ঋষি অরবিন্দের জন্মদিন।
বিপ্লবী অরবিন্দ আমার পছন্দ। বাংলার অগ্নিযুগের অগ্নিমন্ত্রের তিনিই পুরোহিত। কিন্ত আধ্যাত্মিক অরবিন্দ আমার কাছে আরেক প্রস্থ ভাববাদি আফিং।  উনার আধ্যাত্মিক চিন্তায় "সুপারম্যানে" বিবর্তনের প্রসঙ্গ রীতিমত অবৈজ্ঞানিক। যে ভাইসগুলির উর্ধে ওঠার কথা সব ভাববাদি বলে থাকে-যেমন ঈর্ষা, হিংসা,লোভ, কাম-এগুলি আমাদের জৈবিক জীবনের অঙ্গ। হার্ডওয়াড় ইন ব্রেইন। মানুষ তার জীবনে এইসব ভাইস গুলো কমাতেই পারে আলট্রুইজম বা পরোপকারের মাধ্যমে-কিন্ত সেটাও বায়োলজিক্যাল। জৈবিক সারভাইভালের অংশ।

 আর একজন সুন্দরী মেয়েকে দেখে যদি না ওঠে-তাহলে সেই বেঁচে থাকারই বা কি মূল্য আছে? বায়োলজীর বৃত্তের বাইরে উঠে এসব সুপার কনসাসনেস ইত্যাদি শ্রেফ গাঁজাখোর কল্পনা। কারন এসবের কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয় নি-আর আমাদের কনসাসনেসটাও জৈবজীবনের বাইরে কিছু না।

 তাই বিপ্লবী অরবিন্দ আমার নমস্য। ঋষি অরবিন্দ সেই বিপ্লবীর মৃত্যু।