Saturday, December 1, 2018

প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাবলিউ বুশ

প্রাত্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লু বুশ প্রয়াত। আমেরিকাতে তিনি "ড্যাডি বুশ" নামেই বেশী পরিচিত।

পৃথিবী তাকে চেনে সাদ্দাম বিরোধি প্রথম গলফ ওয়ারের জন্য। বাঙালীকে জর্জ বুশের সাথে পরিচয় করিয়েছিল সিপিএম- যুদ্ধবাজ বুশ হিসাবে যিনি নাকি "ঋষিতুল্য" সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন!!!! ১৯৯০ সালে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামে শহরে পোষ্টারে ছয়লাপ করেদিয়েছিল সিপিএম- যুদ্ধবাজ বুশ!
আমেরিকা তাকে চেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দেশপ্রেমিক বীর সেনানী হিসাবে। ১৯৪৩ সালে তিনি নেভি পাইলট হিসাবে যোগ দেন। প্রাশান্ত মহাসাগরে তখন জাপানের সাথে ঘোর যুদ্ধ। ৪৩-৪৫, মোট ৫৩ বার উড়েছেন জাপানের বিরুদ্ধে। ১৯৪৪ সালে ইচো জিমা দ্বীপে আক্রমন চালাতে গিয়ে, তার বিমান এন্টি এয়ারক্রাফট গানের গুলিতে ধ্বংস হয়। তার দুজন সাগরেদ প্লেনেই মারা যায়। উনি কোন রকমে আহত অবস্থায় প্যারাড্রপিং এ সক্ষম হৌন। প্রায় তিনদিন অবচেতন অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরে ভেসে থাকার পরে আমেরিকান সাবমেরিন তাকে উদ্ধার করে। ভাগ্য যে হাঙরের পেটে তিনি যান নি। কিন্ত তাতেও তাকে দমানো যায় নি। একটু সুস্থ হয়েই আবার জাপানের বিরুদ্ধে বিমান হানায় নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। সেনেটর বাপ, প্রেমিকা বারবারা কেউই তাকে দ্বিতীয়বার আটকাতে পারেন নি। তার কাছে দেশপ্রেম ছিল ব্যক্তিগত প্রেমের ওপরে ।

যুদ্ধে যোগ দেওয়ার তার কোন দরকার ছিল না। বাবা এবং শশুর দুজনেই ধণকুবের। বাবা প্রেসকট বুশ আবার রিপাবলিকান সেনেটর ও বটে। কিন্ত আমেরিকার জন্য তিনি প্রাণ হাতে নিয়েই লড়েছেন। মৃত্যু অভিজ্ঞতাও তাকে থামাতে পারে নি। তার দেশপ্রেম ছিল নিখাদ এবং অটুট।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি উনাইটেড নেশনে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সিয়ার দ্বায়িত্ব ও সামলেছেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ও ছিলেন। রেগান জমানায় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ছিলেন। সব লেভেলের আমেরিকান রাজনীতিই তিনি সামলেছেন। তাকে বলা হয় বিংশ শতাব্দির আমেরিকান রক্ষনশীল রাজনীতির পোষ্টার চাইল্ড। রিপাবলিকান পার্টিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান।

তার সব থেকে বড় কৃতিত্ব সাদ্দামকে দমানো না। কমিনিউমের পতনকে সুদৃঢ় করেছেন ম্যাজিক্যাল মেথডে। বার্লিন ওয়াল ভাংল, সোভিয়েতের পতন হল, কিন্ত বাবা বুশ আবেগহীন -কোন উল্লাস নেই। কেন নেই? কারন ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, লোকে দুদিন কমিউনিজমের পতনে উচ্ছাস করবে। কিন্ত যদিন পেটে টান পড়বে, আবার কোন না কোন চতুর নেতা কমিউনিজমের নামে একনায়কতন্ত্র জাহির করবে। ১৯৮৯ সালে বার্লিন ওয়ালের পতনের পর ইস্টার্ন ইউরোপে সিয়া ছিল ভীষন সতর্ক। তাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ ছিল, কমিউনিস্ট নেতারা যাতে আর ক্ষমতায় ফিরতে না পারে। এবং সেই জন্য খাদ্য ঔষধ সহ নানান সাহায্যে দিয়ে প্রাক গণতান্ত্রিক সরকার গুলোকে টিকিয়ে রাখছিল আমেরিকা। ১৯৯০ সালে সাদ্দামকে দুদিনে হারিয়ে অনায়াসেই ইরাক দখল করতে পারত আমেরিকা। কিন্ত সেই দিকে যান নি বুশ। কারন সেটা করলে, "প্রোকমিউস্ট" রাশিয়ান ন্যাশানালিস্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হত। তখন তার প্রধান চিন্তা কি ভাবে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের রিএন্ট্রি আটকানো যায়।

উনি উনার রাজনৈতিক লাইনের কাছে সৎ ছিলেন। রাজনীতিতে লোকের বিভিন্ন চিন্তাধারা থাকবে। বিরুদ্ধ চিন্তার কেউ হলেই, তিনি খুব বাজে লোক- এই ধরনের চিন্তা বালখিল্যতা। তিনি তার রাজনৈতিক লাইনের প্রতি কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন, সেটাই মুখ্য বিবেচ্য।

আমেরিকানরা অবশ্যই তাকে মনে রাখবে বীর দেশপ্রেমিক যোদ্ধা হিসাবেই।

Saturday, November 3, 2018

সর্দার প্যাটেল বনাম নেতাজি বোস

সর্দার প্যাটেল এবং নেতাজি বোস ঃ রাজনৈতিক দ্বন্দ এবং সত্যের সন্ধানে
****
(১)
ছোটবেলায় যখন ইতিহাস পড়তাম, সেটা স্কুলপাঠ্যই হৌক আর নেতাজির জীবনী - ছাপার অক্ষরে লেখা সেই ইতিহাসকে সত্য বলেই ধ্যানজ্ঞান করতাম। গুগল সেই সাজানো বাগান ভেঙে তছনচ করে দিয়েছে। কারন এখন একটু গুগল করলেই দেখতে পায়, কৌন ঐতিহাসিকই রাজনৈতিক নিরেপেক্ষ না। নিজেদের রাজনৈতিক মতকে প্রাধান্য দিয়ে ঐতিহাসিক সত্যকে বলিকাঠে পাঠানোটাই ভারতের ইতিহাস রচনার ঐতিহ্য।

ছোটবেলায় বাঙালী ঐতিহাসিকদের লেখা নেতাজির জীবনী যারা পড়েছেন, সর্দার প্যাটেল বনাম নেতাজীর রাজনৈতিক শত্রুতার অধ্যায় নিয়ে তারা অবগত আছেন। ইদানিং সেই দ্বন্দই আবার উঠে আসছে। কারন বিজেপি ভারতের ইতিহাসের নেহেরু-গান্ধী মুক্ত অলটারেন্টিভ ন্যারেটিভ তৈরী করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ সর্দার প্যাটেল এবং নেতাজি বোস। সর্দার প্যাটেলের স্টাচু অব ইউনিটি এবং নেতাজিকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলে ঐতিহাসিক ঘোষনা দেওয়ার এই নতুন ন্যারেটিভের অঙ্গ।

কিন্ত রামচন্দ্র গুহর মতন বাম ঐতিহাসিকরা প্রশ্ন তুলেছেন, তেলে জলে কি মেশে? নেতাজি এবং সর্দার একে ওপরের রাজনৈতিক বিরোধি ছিলেন। সেক্ষেত্রে কি করে বিজেপি এই ন্যারেটিভ তৈরী করবে? সুতরাং প্যাটেল-বোস বিরোধিতার ইতিহাসের সত্যটা সামনে আসা জরুরী। অধিকাংশ বাঙালী ঐতিহাসিকই নেতাজি বিরোধিতার কারনে সর্দার প্যাটেলকে ভিলেন বানিয়েছেন। সুতরাং সেই সত্যও জানা দরকার যে বল্লভ ভাই প্যাটেলের প্রতি বাঙালী বাম ঐতিহাসিকরা সুবিচার করেছেন নাকি ট্রু টু বাম স্পিরিট, সবটাই সত্যের অপলাপ?

(২)
প্যাটেল-বোস বিরোধ তুঙ্গে ওঠে ১৯38-৩৯ সালের কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে। এই দ্বন্দ সঠিক ভাবে বুঝতে আরো কিছু আনুসাঙ্গিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন।

প্যাটেল কংগ্রেসের সভাপতি হৌন করাচি অধিবেশনে (১৯৩৩)। ১৯৩৮ সালে নেতাজি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেন হরিপুরা অধিবেশনে ( ১৯-২২ ফেবু) । হরিপুরা গুজরাটের এক সমৃদ্ধ গ্রাম। এই অধিবেশনে নেতাজি সভাপতি হলেন বটে- সংগঠনের দ্বায়িত্ব ছিল সম্পূর্ন প্যাটেলের হাতে। এজেন্ডা, ভেনু-সব কিছুর দ্বায়িত্বেই ছিলেন প্যাটেল।

আসলে ১৯৩৮ সাল নাগাদ, কংগ্রেসে দুটি সমান্তরাল দল। একদিকে গান্ধী, প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, কৃপালিনী। অন্যদিকে তরুন বাম বিগ্রেড নেহেরু এবং নেতাজি। মুশকিল হচ্ছে এই বাম বিগ্রেডের জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্ত সাংগঠনিক ক্ষমতার রাশ ছিল না। সেটি ছিল সর্দার প্যাটেলের হাতে । কারন কংগ্রেস চলত দেশীয় পুঁজিপতিদের ( যেমন জেডি বিড়লা ) টাকায়। এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলার ব্যপারে প্যাটেলেই ছিলেন শেষ কথা। ফলে কংগ্রেসের সংগঠনে, কে নেতা হবেন, কে কে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন সব কিছুই ঠিক করতেন সর্দার প্যাটেল।

এটা আরো পরিস্কার হবে ১৯৪৬ সালে। বৃটিশ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অন্তর্বতী কালীন সরকার তৈরী হবে। সারা দেশে কংগ্রেসের তখন ১৩ টি প্রাদেশিক কমিটি। ১৩ টির মধ্যে ১০ টি কমিটিই , সর্দার প্যাটেলের নাম অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রস্তাব করে। নেহেরুর নাম কোন প্রদেশ কমিটি প্রস্তাব করে নি। কিন্ত গান্ধী চাইলেন নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হৌক। তিনি সর্দার প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রীর রেস থেকে সরে যেতে বল্লেন। যদিও প্রকাশ্যে বললেন, প্যাটেল এবং নেহেরু, তারা তার ডান এবং বাম হাত। নেহেরু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সামলাবেন, প্যাটেল ঘোর গোছাবেন।

এ এক বিরাট ধাঁধা। কারন সর্দার প্যাটেল গান্ধীর সব থেকে বেশী কাছের লোক। বহুদিন থেকেই। গোটা কংগ্রেস সংগঠনের ভরসা প্যাটেলে কিন্ত গান্ধী চাইছেন নেহেরুকে। এই ধাঁধার উত্তরও আমি পেয়েছি। কিন্ত আপাতত এটুকুই জানা যাক- গান্ধীর কথা মেনে, এ আই সিসি, নেহেরুকেই নির্বাচিত করে। এবং গুরুর কথা মেনে, প্যাটেলই নেহেরুর নাম প্রস্তাব করেন। অর্থাৎ অনেকগুলো সত্য এখানে সামনে আসে।

এক, কংগ্রেসে মহত্মা গান্ধীর ডিক্টেটরশিপ চলত।

দুই, গান্ধী স্বজনপোষনে বিশ্বাসী ছিলেন না। কারন প্যাটেল ছিল তার সব থেকে কাছের লোক। কিন্ত নেহেরুর ছিল জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক পান্ডিত্য। ফলে নেহেরুকেই তিনি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য যোগ্যতম মনে করেছেন। তার জন্য প্রিয় শিষ্যকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিলেন না। যেখানে গোটা কংগ্রেস চাইছিল, প্যাটেল প্রধানমন্ত্রী হৌক।

তিন, কংগ্রেস সংগঠনের শীর্ষে ছিলেন প্যাটেল, তিনিই ছিলেন কংগ্রেসীদের সব থেকে পছন্দের লোক। কংগ্রেসে সব কিছু এজেন্ডা, পার্থী- বলতে গেলে, তার কথাতেই চলত। এর বহু প্রমান আছে। ইনফ্যাক্ট ১৯৪০-৪৬, কংগ্রেসের প্রায় সব বড়সর সিদ্ধান্তেই নেহেরু-প্যাটেল মতানৈক্য ছিল। কিন্ত সব ক্ষেত্রেই প্যাটেল জয়ী-কারন সংগঠন ছিল তার পেছনে।

চার, প্যাটেল ছিলেন গান্ধীর ভাব শিষ্য। গুরুর কথায় প্রধানমন্ত্রীত্বও ছেড়ে দিলেন। গান্ধীর কথাই ছিল তার আদেশ।

এবার আমরা ফিরে আসি ১৯৩৯ সালে ত্রিপু্রি কংগ্রেসে। মার্চ মাস।

তার আগেই ডিসেম্বর মাসে বোস-প্যাটেল সম্পর্কে তিক্ততা ক্রমবর্ধমান।

কারনটা এরকম। কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিত ওয়ার্কিং কমিটি। যা বকলমে চলত গান্ধীর কথায়। আর এক্সিকিউশনে প্যাটেল। কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন পোষাকি মুখ-যিনি শুধুই "গ্লোরিফায়েড মুখপত্র"।

কিন্ত সুভাস স্বাধীনচেতা। আবার কিছুটা স্বৈরতান্ত্রিক ও বটে। ওয়ার্কিং কমিটির সাথে তার বিরোধ লাগল , বিশ্বযুদ্ধের আবহে বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন নিয়ে। কারন যুদ্ধের শুরুতে গান্ধী চাইছিলেন না বৃটিশ বিরোধি আল আউট আন্দোলন করতে। তার ভরসা ছিল, যুদ্ধে সাহায্যের বিনিময়ে, স্বাধীনতা আসবে। কিন্ত নেতাজি প্রথম থেকেই তীব্র বৃটিশ বিরোধি এবং সহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতি।

যদিও ইতিহাসের পরিহাস এটাই- ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে গান্ধী এবং প্যাটেল যে বৃটিশ বিরোধি অল আউট লাইন নিলেন, ১৯৩৯ সালে সেটাই ছিল সুভাস লাইন। নেতাজি বোস যেটা ১৯৩৯ সালে বুঝে ছিলেন, প্যাটেল গান্ধী বুঝলেন ১৯৪২ সালে।

প্যাটেলই নেপথ্য থেকে কংগ্রেসকে চালাতেন। এ আই সিসির বৈঠকে যা "সর্বজন গ্রাহ্য" সিদ্ধান্ত হত, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট যাকে বলাহত রাষ্ট্রপতি, সেই মতেই চলতেন। কিন্ত সুভাস চললেন না। গান্ধী এবং প্যাটেলকে অগ্রাহ্য করে নিজের মতে চললেন। প্যাটেল প্রথমে বোসকে দুবার সাবধান করলেন। শেষে, নেতাজির দাদা শরত বসুকে লিখলেন সুভাসকে সামলাতে।

কিন্ত সুভাসকে বাগে আনতে পারলেন না প্যাটেল। ফলে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরি কংগ্রেসের জন্য এ আই সিসি কমিটি চাইল সীতারামাইয়াকে। কিন্ত সুভাস চাইলেন নির্বাচন। তাতে আরো খচে উঠলেন প্যাটেল। কারন কংগ্রেসে বরাবর ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। কিন্ত সুভাস বল্লেন ওটা ঐক্যমত না, গান্ধী-প্যাটেল যাকে চাইবেন, সেটা গোটা ভারতের মত হতে পারে না। ফলে নির্বাচন হোল। প্যাটেলের বিশ্বাস ছিল সুভাষ হারবেন। কারন সংগঠন তার হাতে। কিন্ত দেখা গেল সুভাষের জনপ্রিয়তা প্যাটেল যা ভেবেছিলেন, তার থেকে অনেক বেশী।

গান্ধী সুভাষের এই জয় মেনে নিতে পারেন নি। কিন্ত প্যাটেল মেনে নিয়েছিলেন । কারন প্যাটেল প্রকৃত অর্থেই বহুমতে বিশ্বাস করতেন । গান্ধীকে ডিক্টেটর বলেছেন। গান্ধীর অগনতান্ত্রিকতা বিরুদ্ধেও বহুবার বলেছেন।

কিন্ত সমস্যা হল এই সময় নেতাজির শরীর একদম ভেঙে পরে । তিনি তখন অসুস্থ। প্যাটেল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকলেন। নেতাজি জানালেন তিনি আসতে পারবেন না, বৈঠক পেছতে হবে। বৈঠক হবে না। এতেই ঘৃতে অগ্নাহুতি হয়। কারন নেতাজির সেই টেলিগ্রামকে স্বৈ্রাচার হিসাবে দেখলেন প্যাটেল। ফলে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি ইস্তফা দিল।

নেতাজিও বুঝলেন গান্ধী-প্যাটেলের বিরোধিতা করে কংগেসে টেকা অসম্ভব। তিনিও পদত্যাগ করলেন।

আমার ব্যক্তিগত মত-প্যাটেলের ভূমিকাতে আমি ভুল কিছু দেখছি না। কারন বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে, কংগ্রেসের নেতাদের ঐক্যবদ্ধতা দেখানো ছিল জরুরী। যার জন্য স্যোশালিজম নিয়ে মাতামাতি করার কারনে প্যাটেল নেতাজি এবং বোসকে বকে দেন ১৯৩৬ সালে। প্যাটেলের বক্তব্য ছিল সাফ- কংগ্রেসের লক্ষ্য ভারতের স্বাধীনতা। গোটা পার্টিকে সেটাকেই অর্জুনের চোখ করতে হবে। সাংগঠনিক ঐক্য ছিল, তার কাছে প্রধান। অন্যদিকে নেতাজির পাখির চোখ তার আদর্শ। ফলে এই বিরোধ মূলত রাজনৈতিক।

এবং আমি মনে করি, এই বিরোধ ভারতের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। কারন গণতন্ত্রে বহুমতের বিরোধ থাকবেই।

(৩)
কিন্ত ব্যক্তিগত লেভেলে বিরোধিতা?
এর উদাহরন হিসাবে আসে কিভাবে সর্দার প্যাটেল, বিঠলভাই এর সম্পতি থেকে নেতাজিকে বঞ্চিত করেন। কিন্ত এখানেও জল অনেক।

বিঠল ভাই প্যাটেল সর্দার প্যাটেলের দাদা। ১৯৩০ সাল নাগাদ বিঠল ভাই প্যাটেল এবং নেতাজি দুজনেই গান্ধীর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। বিঠল ভাই প্যাটেল স্বরাজ বলে একটি নতুন পার্টি তৈরী করেন।

১৯৩৩ সালে বিঠল ভাই এবং নেতাজি দুজনেই ভিয়েনা যান চিকিৎসার জন্য। নেতাজি সেরে উঠলেন, কিন্ত বিঠল ভাই এর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকল। নেতাজি ইউরোপে বিঠল ভাই এর সেবা শুশ্রয়ায় লেগে থাকলেন। বিঠল ভাই দেখলেন গান্ধী না, নেতাজিই ভারতের স্বাধীনতা আনতে পারবেন। উনি মৃত্যুর আগে ১,২০,০০০ টাকা নেতাজিকে দিয়ে যান, যে নেতাজি ভারতের উন্নতির জন্য ঐ টাকা খরচ করবেন “for the political uplift of India and preferably for publicity work on behalf of India’s cause in other countries.।

কিন্ত সুভাস যখন এই টাকা প্যটেল ফ্যামিলির কাছ থেকে দাবী করতে গেলেন, তখন উইলের ইন্টারপ্রেটেশন নিয়ে বিবাদ হয়। গান্ধী দাবী করলেন, এই টাকা কংগ্রেসের প্রাপ্য। কারন সুভাস কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে এই টাকা পেয়েছেন এবং ভারতের উন্নতির কাজের টাকা কোন ব্যক্তি পেতে পারেন না। সেই টাকা কংগ্রেসের প্রাপ্য। এই মর্মে বোম্বের হাই কোর্টে এই মামলা ওঠে। সর্দার প্যাটেল নিজে এই মামলার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন নি, যে ভুল তথ্য বাঙালী ঐতিহাসিকরা দিয়েছেন।নেতাজি নিজেও এই মামলা বেশী দিন লড়তে চান নি-কারন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়লে, কংগ্রেসে তার ভবিষ্যত নষ্ট হত।

সুতরাং এই ঘটনাতে কিছুই প্রমান হয় না।

বরং যে ঘটনার কথা বলা হয় না, ১৯৪৬ সালে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের পুনঃবাসনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় সর্দার প্যাটেলকে। এই দ্বায়িত্ব তিনি স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নেন এবং তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।

ঠিক এই সময় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত জার্মানিতে অর্থ কষ্টে ভুগছিলেন নেতাজি পত্নী এমিলি শেঙ্কল এবং তার সদ্যজাত কন্যা। সর্দার প্যাটেল নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে নেতাজি ফামিলির জন্য মাসে ১০০০ টাকার মাসোহারা ঠিক করেন। যা ভিয়েনাতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে দেওয়ার কথা। কিন্ত ছমাস বাদে উনি খবর পেলেন, এমিলি শেঙ্কল সে টাকা পাচ্ছেন না। নেহেরুর কাছে সেই নিয়ে অভিযোগ জানালে, নেহেরু মাসোহারা ২৫০ টাকা করে ছমাসের প্রাপ্য ১২৫০ টাকা দূতাবাসকে পাঠাতে বলেন। এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন সর্দার প্যাটেল এবং নেহেরুকে তার সিদ্ধান্তের কথা পুনঃবিবেচনা করতে বলেছিলেন।
নেতাজির সাথে তার বিরোধ রাজনৈতিক মত এবং পথের। ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রশ্ন সেখানে ওঠে না। ১৯৪৫ সালে তার অনেক ভাসনেই নেতাজি এবং আজাদ হিন্দ ফৌজে ভূমিকা আকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন সর্দার প্যাটেল। সেখানে বামেদের কাছে নেতাজি ছিলেন তেজোর কুত্তা।

(৪)
এছাড়াও বাম ঐতিহাসিকদের অনেক অভিযোগ আছে সর্দার প্যাটেলের বিরুদ্ধে। যে উনি হিন্দুত্ববাদি, লেবার ইউনিয়ান বিরোধি, ভূমি সংস্কার বিরোধি ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোও ইতিহাস গভীরে গিয়ে না পড়ার ভুল। অন্যকোন দিন এই নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল। প্যাটেলের কাজকর্ম নিয়ে যা জেনেছি, তাতে উল্টোটাই প্রমানিত হবে।

শুধু ভারতের পার্টিশনে উনার ভূমিকাটা জানা দরকার। কেন উনি ভারত বিভাজনের প্ল্যান মানলেন। প্যাটেল ছিলেন বাস্তববাদি। খুব পরিস্কার ভাবে বলেছিলেন প্রতিটা মুসলমান লীগের সাপোর্টার। তারা পাকিস্তান চাইছে। লীগের দাবি না মানলে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা আরো বাড়বে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা হিন্দুদের অধীনে থাকতে চাইছে না, সেখানে তাদের ওপর জোর করে অখন্ড ভারত চাপাতে গেলে, গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে।

উনি বাস্তববাদি লোক। লিব্যারালদের মতন আকাশ কুসম কল্পনায় ভেসে থেকে কোটি কোটি লোকের জীবন নিয়ে খেলতে চান নি। তার জন্য তাকে কম্যুনাল আখ্যায়িত করা ভুল।

আর কেনা জানে বাস্তবতার বির্সজনতাই বামপন্থা।

বাস্তব বির্বজিত বামপন্থীরা যখন সর্দার প্যাটেলের মতন একজন কঠোর বাস্তববাদির মুল্যায়ন করবেন, তখন তা কাঁঠালের আমসত্ত্বই হবে। হিন্দুস্থান টাইমসে বামপন্থী ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহর রচনাও সেই পর্যায়ের।

সর্দার প্যাটেল স্টাচু অব ইউনিটি- এবং বাম বিরোধিতা

সর্দার প্যাটেলের ১৮৫ মি উঁচু স্ট্যাচু নিয়ে বাঙালীর অতিবাম ফেসবুক বিপ্লব অব্যহত। বক্তব্য ৩০০০ কোটি টাকা বাজে খরচ। কেন কৃষিকাজে বা শিক্ষাখাতে সে খরচ হবে না ইত্যাদি। যদিও বলে নেওয়া ভাল, শুধু এফ সি আই এর মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকার বছরে খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে থাকে বছরে ৭০,০০০ কোটি টাকার ওপর। বাকি ভর্তুকি ছেড়েই দিলাম।

যারা এই অতিবিপ্লব করছেন, তাদের কাছে এই প্রশ্ন রাখা নিশ্চয় সঙ্গত যে আপনারাই বা সিনেমা দেখেন কেন? মাল্টিপ্লেক্সে একটা সিনেমার টিকিটের টাকায় দশজন গরীবের খাওয়া সম্ভব। তাহলে সিনেমা না দেখে গরীবদের জন্য পংতি ভোজন করান?

আমি জানি এই ক্ষেত্রে উত্তর আসবে -কেনরে বাপু। আমি সিনেমাও দেখি, আবার সাধ্যমত গরীবদের সাহায্য ও করি।

তা সরকার কি আলাদা হবেরে পাগলা? সরকার ও প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ওপরে গরীবদের জন্য ভর্তুকি দেয়। আবার তাদের ও ত আদর্শ অনুযায়ী শখ আহ্লাদ আছে। তাই সামান্য কিছু স্ট্যাচু খাতে খরচ ও করে! ১৯32-১৯৩3 পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ানে চলেছে পৃথিবীর সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষ। হলডোমার। যাতে ইউক্রেনে মারা যায় ৭০ লাখের বেশী লোক। সেই বছর কি সোভিয়েত ইউনিয়ানে লেনিনের স্ট্যাচু বসানোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল ?

এবার প্রশ্ন উঠে্বে জাতির জনক মহত্মাগান্ধী বা ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী নেহেরুর স্ট্যাচু না কেন? সর্দার প্যাটেল কোন হনু?

মহত্মা গান্ধীর স্ট্যাচুর দরকার নেই। তিনি এবং গৌতম বুদ্ধ, সর্বকালের সেরা ভারতীয়। যাদের গোটা পৃথিবী চেনে।

আর কংগ্রেস ৪০ বছর ক্ষমতায় থেকে এত কিছু নেহেরুর নামে চালিয়েছে, ভারতের একটু ডিনেহেরুফিকেশন হলে খারাপ কিছু হবে না।

প্রশ্ন উঠবে তাহলে নেতাজি, বাবা সাহেব আম্বেদকর এদের স্ট্যাচু?
এখানে খেয়াল রাখতে হবে, স্ট্যাচুর অর্ধেক টাকা দিয়েছে গুজরাত সরকার। এটা গুজরাতের মানুষের টাকা। তারাত নিজেদের ভূমিপূত্রকেই সন্মান জানাবে।

কিন্ত সর্দার প্যাটেল গুজরাটের জন্য কি করেছিলেন?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুজন ব্যক্তি আমার বিশেষ পছন্দের। বাবা সাহেব আম্বেদকর এবং সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল। বাবা সাহেবের লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ হই তার রাজনৈতিক জ্ঞানের গভীরতায়। পরিস্কার ভাবেই বলা যাক, গান্ধী, নেহেরু, নেতাজি বা অন্য কোন ভারতীয় নেতা রাজনৈতিক দর্শনের প্রজ্ঞায় বাবা সাহেবের সমান ছিলেন না। কিন্ত তিনি মহারাষ্ট্রের ভূমিপুত্র।

দ্বিতীয় জন বল্লভ ভাই প্যাটেল। সর্দার প্যাটেল ছিলে্ন দক্ষ এক্সিকিউটিভ। তাকে যখনই যে কাজ দেওয়া হয়েছে দ্বায়িত্ব নিয়ে তাতে সফল হয়েছেন। সাংগঠনিক ক্ষমতায় তার ধারে কাছে কেউ ছিল না।

রাজনীতিতে তার প্রবেশ খেদা সত্যাগ্রহে (১৯১৮)। তিনি তখন বৃটেন ফেরত স্যুটেড বুটেড ব্যরিস্টার। আমেদাবাদে ভাল পসার।

খেদা গুজরাটের একটা জেলা। খরার কারনে চাষীরা ট্যাক্স দিতে পারছিল না। পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট শুরু করে অত্যাচার। গান্ধীর নির্দেশে খেদার গ্রামে গ্রামে ঘুরে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করেন সর্দার। ছমাসে প্রায় হাজার খানেক গ্রাম ঘুরেছেন সর্দার প্যাটেল। পুলিশ গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে কৃষকদের ছাগল গরু সব কিছু বাজেয়াপ্ত করেছে। এরকম কোনঠাসা অবস্থায় ও সম্পূর্ন অহিংস ভাবে আন্দোলন করতে থাকে কৃষকরা। তারা কোন মতেই বৃটিশকে ট্যাক্স দেবে না। এক বছরের মধ্যে কর মকুব করতে বাধ্য হয় বৃটিশ রাজ। এটিই ছিল ভারতের তৃতীয় সত্যাগ্রহ, যা সব থেকে বেশী সফল হয়। অন্যদিকে সর্দার প্রমান করলেন-তিনি কাজের লোক। বাজে বকতেন কম, কাজ করেন বেশী। খেদা সত্যাগ্রহের ফলে তিনিই হলেন গুজরাতের সর্বজনগ্রাহ্য কৃষক নেতা।

সর্দার প্যাটেলকে ভাল লাগার আমার অন্য আরেকটা কারন আছে। নেতাজি, ফিদেল কাস্ট্রো, লেনিন, স্টালিন এরা একদম ছাত্র অবস্থা থেকে আগুন খেকো বিপ্লবী। যাকে বলে, হার্ড ওয়ারড বিপ্লবী।

সর্দার কিন্ত আমাদের মতন সাধারন মানুষ ছিলেন প্রথম জীবনে। পাতিদার কাস্টে ( যা এখন ওবিসিভুক্ত) জন্ম, অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে, চাকরির টাকা জমিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন পাশ করেন ( বই কেনার টাকা ছিল না, এর ওর কাছে ধার করে পড়তেন)। নেহেরু, নেতাজি বা গান্ধীর মতন বাপের টাকায় উনি বৃটেন যান নি। ফিরে এসে আমেদাবাদে আইন ব্যবসায় ভাল পসার করছিলেন। ব্রীজ খেলতে খুব ভালবাসতেন। একদম সাধারন পরিশ্রমী, মেধাবী একজন মানুষ।

কিন্ত এই মানুষটাকেই আগাপাস্তালা পালটে দিলেন গান্ধী। গান্ধীর সাথে প্যাটেলের দেখা অক্টবর ১৯১৭ । এর আগে গান্ধীর রাজনীতি নিয়ে বন্ধু মহলে হাসি ঠাট্টা করতেন সর্দার। গান্ধীই তাকে দেখালেন খেদা জেলায় কৃষকদের দুর্দশা। সুটেড বুটেড ব্যরিস্টার লোকটা সব কিছু ছেড়ে খাদি ধরল। কৃষকদের সাথে ওঠা বসাই তাকে চিনিয়ে দিল আসল ভারত বর্ষ। তিনি হয়ে উঠলেন কংগ্রেসের নাম্বার ওয়ান ওর্গানাইজার, ফান্ড রেইজার। বাকী সবাই নেতা। কিন্ত কংগ্রেসের সংগঠন সর্দারকে ছাড়া ভাবা যায় না। লোকটা গোছানো, সিস্টেমেটিক এবং কার্যসিদ্ধির জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

আমি আগেই লিখেছি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আসে নি-এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে। কিন্ত তা সত্ত্বেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসের সব থেকে গৌরবাজ্জ্বল অধ্যায়। কারন এই আন্দোলনই জন্ম দিয়েছে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের । শত্রুকে ভালোবেসে বিজয়ের শিক্ষা আর কোন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেই পাওয়া যাবে না। আর এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ক্ষেত্রে গান্ধী যদি হৌন বুদ্ধ, তাহলে সর্দার প্যাটেল ছিলেন আনন্দ।
ঠিক এই কারনেই ৫০০ টি দেশীয় রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্যাটেলই ছিলেন যোগ্য কমান্ডার। খুব বেশী লিব্যারাল নেতাকে এই কাজ দিলে, ভারতের অনেক জমি হাতছাড়া হত। আবার খুব বেশী দক্ষিনপন্থী নেতার হাতে এই কাজ এলে, প্রচুর রক্তপাত অবধারিত ছিল। কিন্ত সর্দার প্যাটেলের সুদক্ষ নেতৃত্বে এর কোন এক্সট্রিমই হয় নি- খুব কম মিলিটারি ইন্টারভেনশনেই অধিকাংশ দেশীর রাজ্যের ভারতভুক্তি সম্ভব হয়েছে।

শুধু তাই না, গুজরাতে নারী শিক্ষা, মেয়েদের ভোটাধিকার, মুসলমান, দলিতদের জন্য স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া, কৃষক সভা, শ্রমিক ইউনিয়ান -ইত্যাদি সব বিষয়ে তিনিই পথিকৃত। এমন একজন মহামানব গুজরাত পুত্রকে যদি গুজরাট বাসী তিন হাজার কোটি টাকার স্ট্যাচু তৈরী করে সন্মান জানায়, তাতে বাঙালীর গাত্রদাহ কেন? বাঙালীর ট্যাঁকে জোর থাকলে তারা ২০০ মিটার উচ্চতার নেতাজি বা বিদ্যাসাগরের স্ট্যাচু তৈরী করুক।

সাহিত্যের পথে গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন "অতএব, যদি এমন কথা কেহ বলিত যে, আজকাল বাংলাদেশে কবিরা যে সাহিত্যের সৃষ্টি করিতেছে তাহাতে বাস্তবতা নাই, তাহা জনসাধারণের উপযোগী নহে, তাহাতে লোকশিক্ষার কাজ .... কিন্তু, কালিদাস যদি কবি না হইয়া লোকহিতৈষী হইতেন তবে সেই পঞ্চম শতাব্দীর উজ্জয়িনীর কৃষাণদের জন্য হয়তো প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী কয়েকখানা বই লিখিতেন -- তাহা হইলে .."

কবিগুরুর কথা ধার করেই বলি, দারিদ্র দুর্দশাত পৃথিবীতে থাকবেই-তাই বলে কি ১০০০ কোটি টাকা বাজেটের অভতার বা বাহুবলির মতন সিনেমা তৈরী হবে না?

১৮৫ মিটার লম্বা স্টিল স্ট্যাচু ইঞ্জিনিয়ারং মার্ভেল ও বটে। একটা খবর বাজারে ঘুরছে, যে স্ট্যাচুটি মেইড ইন চাইনা। সেটাও ঠিক না। এর ডিজাইনার ভারতের লার্সন এন্ড টুব্রো। স্টিল ভারতেরই। শুধু ব্রোঞ্জ কাস্টিং চীনের ফাউন্ড্রি থেকে করিয়ে আনাতে হয়েছে, কারন অত বড় ফাউন্ড্রি ভারতে নেই। এটি ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিজ্ঞাপন ও বটে। ইঞ্জিনিয়ারং আউটসোর্সিং থেকে ভারতের ইনকাম ১৫০ বিলিয়ান ডলার বা 150 x7000 = 1050,000 কোটি টাকা। ৩০০০ কোটি টাকা, তার 0.3% মাত্র। ওই টুকু ভারতের প্রযুক্তির বিজ্ঞাপন খাতে খরচ বলেও ধরা যায়।

Saturday, October 27, 2018

ইতিহাসের ন্যারেটিভের দখল

বাচ্চাদের মাথার দখল নেওয়াটা বোধ হয় সব রাষ্ট্রের শিক্ষানীতির অংশ। এবং সবটাই শাসক শ্রেনীর স্বার্থ মেনে।

ভারতে যেহেতু অধিকাংশ সময় কংগ্রেস রাজত্ব করছে, ভারতীয় ইতিহাস বইগুলোও সেই ভাবেই তৈরী। যাতে দেখানো হচ্ছে, কংগ্রেসের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে, আরো বললে নেহেরু, গান্ধী সহ কংগ্রেসী নেতাদের আত্মত্যাগই ভারতের স্বাধীনতা এনেছে।

ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদিদের উত্থানের আগে,বামেরাই ছিল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধি শত্রু। তারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরেকটা কাউন্টার ন্যারেটিভ আনার চেষ্টা করে - যে গান্ধীর অহিংস আন্দোলন না, সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি। এর একটা বড় কারন, অতীতের বিপ্লবীদের অধিকাংশই আন্দামানে জেল খেটেছেন। সেখানকার সেলুলার জেল থেকে মার্ক্সীয় মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে পরবর্তী কালে বামপন্থী রাজনীতি করেছেন।

এইদিক দিয়ে দেখলে, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপির কোন লেগাসি নেই। কারন আর এস এসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বালিরাম হেজোয়ার নিজে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী- প্রাত্তন কোর অনুশীলন সমিতি ক্যাডার। কিন্ত আর এসে এসের উদ্দেশ্য নিয়ে খুব পরিস্কার ভাবে লিখেছেন- এই সংগঠনের কাজ স্বাধীনতা সংগ্রাম না- হিন্দুদের শারীরিক এবং মানসিক উন্নতিই তার লক্ষ্য। উনি আর এস এসকে এতটাই স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন, ১৯৩০ সালে গান্ধী যখন সত্যাগ্রহের ডাক দিলেন, তখন উনি নিজে স্বাধীনতা আন্দোলনে আবার যোগ দিলেন। কিন্ত আর এস এসকে ওর মধ্যে টানলেন না। সংঘ প্রচারকরা বরাবরই স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন । হিন্দুদের আত্মিক, দৈহিক উন্নতিই ছিল তাদের পলিটিক্যাল লাইন।

নেতাজিকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ঘোষনার মধ্যে দিয়ে, বিজেপি কংগ্রেসের একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরী করার চেষ্টা করছে-কিন্ত তা বুমেরাং হবে। কারন এক - নেতাজি জাপান অধিকৃত ভারতের ( যেমন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ) প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আসলেই জাপানের হাতের পুতুলমন্ত্রী ছিলেন। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে জাপানী সেনারা ২০০০ স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করে ( ১৯৪২-৪৪)। আসল ক্ষমতা জাপানীদের হাতেই ছিল। দুই- নেতাজি হিন্দু মহাসভার বিরোধি ছিলেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন চিরকাল। তার রাজনীতির সাথে বিজেপির রাজনীতির কোন সংযোগ নেই।

ইতিহাস খুব ভাল ভাবে পড়লে বিজেপির হাতে কাউন্টার ন্যারেটিভ ছিল। ভারতের স্বাধীনতা নেতাজির হিংসা বা গান্ধীর অহিংসা-কোন পথেই আসে নি। এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির আবহে। ১৯৪২ সালে বৃটেন যখন যুদ্ধ করতে দেউলিয়া, চার্চিল হাত পাতলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে। তখনো পল হার্বার হয় নি। আমেরিকানরা যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না। কারন তারা মনে করে বৃটেনের জমিদারি টেকানোর ভার আমেরিকা কেন নেবে? সেটাই জানালেন রুজভেল্ট চার্চিলকে। আগে ভারত সহ ৪০ টা রাষ্ট্রের কলোনীর স্বাধীনতা ঘোষনা কর, কারন তা নাহলে জার্মানীর কলোনাইজেশনের বিরোধিতা করা অনৈতিক। চার্চিলের তখন দেওয়ালে পিঠ। ফলে নাই নাই করে বাধ্য হলেন আটলান্টিক সনদে সাইন করতে। যাতে বলা হল যুদ্ধের পরে বৃটেনের আন্ডারে থাকা চল্লিশটা দেশ স্বাধীন হবে!

কিন্ত বৃটেনে ফিরেই চার্চিল উলটো গাইলেন। এর মধ্যে জাপান পল হার্বার ঘটিয়েছে। আমেরিকা জাপানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। ফলে জাপানকে হারাতে ভারতকে পাশে দরকার আমেরিকার। আমেরিকার চাপ খেয়ে, চার্চিল পাঠালেন স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপসকে, যা ক্রিপ্স মিশন নামে খ্যাত। ক্রিপস লোকটা ভাল ছিল-জেনুইনলি কাজ শুরু করতেই চার্চিল ব্যাগরা দিলেন। এদিকে চার্চিল ভারতের স্বাধীনতা বিরোধি জেনে, ক্রিপস মিশন যাতে ব্যর্থ না হয়, তার জন্য রুজভেল্ট ভারতে পাঠালেন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত থমাস উইলসনকে। থমাস উইলসন , ক্রিপ্স , রুজভেল্ট -এরা চার্চিলকে ক্রমাগত চাপ দিয়েও ভারতের স্বাধীনতা আদায় করতে পারেন নি। এর মধ্যে আমেরিকা ব্যাটল অব মিডীওয়েতে জেতার পর পরিস্কার হয়, জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমেরিকার দরকার নেই ভারতকে-তারা একেলাই যথেষ্ট। ফলে ১৯৪৩ সালের পরে রুজভেল্ট আর চার্চিলকে ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে বিরক্ত করেন নি।

চার্চিল ভারতের স্বাধীনতা দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন ১৯৪৫ সালেও। কিন্ত ১৯৪৫ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেন লিব্যারাল ক্লিমেন্ট এটলি। যার ম্যনিফেস্টোতেই ছিল, বৃটেন সমস্ত কলোনী ছেড়ে দেবে। এটলির হাতেই ভারত, জর্ডন , প্যালেস্টাইন-সমস্ত কিছু স্বাধীনতা পায়। চার্চিল জিতলে, ভারতকে স্বাধীনতা পেতে আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হত। বাই দ্যা ওয়ে, জর্ডনের কোন স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল না- কিন্ত তারাও ভারতের সাথে স্বাধীন হয়েছে! সুতরাং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ বোসের অবদান অতিরঞ্জিত। তার থেকে অনেক বেশী কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন স্বয়ং হিটলার যিনি বৃটেনকে ব্যাঙ্করাপ্ট করে ছেরেছিলেন-যার ফলে বৃটেনের সাধারন জনগন ভারতের স্বাধীনতার সমর্থনে এটলীকে বিপুল ভোটে জয়ী করে।

কিন্ত ভারতের কোন ইতিহাস বইতে, এই ন্যারেটিভ পাওয়া মুশকিল। কারন তাহলে কংগ্রেসের ঝুলিতে ক্রেডিট কিছু কম হইবে।

ভারত কোন ব্যতিক্রম না। পাকিস্তানের স্কুল বইতে এত ভারত বিরোধি ন্যারেটিভ, যে পাকিস্তানে ভারত বিরোধি সন্ত্রাসবাদি তৈরী হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা।

আমেরিকাও ইম্যুউন না। এই বছর ক্লাস সেভেনে আমার ছেলে পড়ছে আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস। এখানে তাদের প্রথম পরিচয় হয় কমিউনিউজমের সাথে। তাদের শিক্ষক কমিউনিজম চেনার জন্য পড়তে দিয়েছে জর্জ ওরোয়েলের এনিম্যাল ফার্ম। ওদের বন্ধুরা কমিউনিজম এবং স্বৈরতন্ত্র নিয়ে কি হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ান, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনামে খুব ভাল করেই শিখছে। চীনের কালচারাল রিভোলিউসন নিয়েও টিচার প্রজেক্ট দিচ্ছে। এবং আমি মনে করি এটা খুব ভাল ইতিহাস শিক্ষা হচ্ছে, যেটা পশ্চিম বঙ্গে শেখালে রাজ্যটা ৩৪ বছরে বামপন্থীদের গাধার ঘারে যেত না। কিন্ত আমেরিকান স্কুলে যেটা সেখাচ্ছে না- সেটা হচ্ছে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আমেরিকা ডজনে ডজনে স্বৈরাচারী মিলিটারী জেনারেলদের সিংহাসনে বসিয়েছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে।

এতেব দুঃখ করে লাভ নাই- ইতিহাস বিকৃত হবেই। কারন ইতিহাসের ন্যারেটিভ একটা জাতির, পার্টির পরিচয়। সেখানে বিকৃতিই বাস্তব।

Saturday, October 20, 2018

চীনকে দেখে শিখুন

আমরা যা নিয়ে সারাদিন ভাবি, সেই দিকেই গড়ায় আমাদের জীবন। যে সারাদিন ধন সম্পত্তি নিয়ে ভাবে, সে আস্তে আস্তে ধনী হয়। যে জ্ঞানের পিপাসায় ঘোরে, সে জ্ঞানী হয়ে ওঠে। অধিকাংশ মানুষই সাধারন স্তরে থেকে যায়, কারন সে নিত্যদিনের আহার নিদ্রা মৈথুন আড্ডা ফাঁকির কুম্ভিপাকের বাইরে কিছুই ভাবে না!

রাষ্ট্রের জীবন ও তাই। একটা রাষ্ট্রর "অবশেসন" কি, তাই দেখে বোঝা যাবে, সেই রাষ্ট্রের নাড়ির গতি। যেমন ধরুন, ভারত। আলোচনার শীর্ষে সবরিমালা মন্দিরে নারীর প্রবেশ। তাই নিয়ে লিব্যারাল বনাম রক্ষণশীলদের ফেসবুক কাজিয়া। ঠিক যেন ছেঁড়া জাঙ্গিয়ার বুক পকেট বাঁদিকে না ডান দিকে লাগাবে, তাই নিয়ে মারামারি। ইশ্বর আছে কি নাই, তার ঠিক নাই। থাকলেও তিনি মন্দিরে মসজিদে মানুষের মতন শীত ঘুম দ্যান কিনা, তারো ঠিক নাই। আর থাকলেও তিনি পুরুষ না নারী তাও কেহ জানে না। আর যদি তিনি পুরুষ ও হৌন মর্ত্যের মানুষদের ন্যায়, "মিট্যু" এফেক্টেড হবেন - মানে ঋতুমতী নারীদের প্রেমে কামাসক্ত হবেন সেই ভয়ে মন্দিরে কোন মেয়েকে ঢুকতে দেওয়া হবে না -সেটা হচ্ছে একটা জাতির আলোচনার অবশেসন! এবার বুঝুন একটা জাতির বুদ্ধি চেতনা কি হাস্যকর লেভেলে ঊঠলে সবরিমালা নিয়ে অবশেসন হয়। বা দুশেরার দেখতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পরে।

উল্টোদিকে চীনকে দেখুন। গত সপ্তাহে চীন থেকে আসা তিনটে খবর। এক, ওরা শহরকে আলোকিত করতে কৃত্রিম চাঁদ তৈরী করছে ২০২২ সালের মধ্যে। দুই, ওরা নতুন ধরনের বুলেট ট্রেন তৈরী করেছে, যার গতি হবে ৮০০ কিমির ওপরে। তিন, গবেষনা খাতের খরচে আমেরিকাকে ধরে ফেলেছে। ২০১২ সালে যা ছিল আমেরিকার ৩৪% , এখন তা ৮৮%।

আমি আগের সপ্তাহে, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আই ও টির প্রয়োগ সংক্রান্ত কিছু জার্নাল পাবলিকেশনের খোঁজে ছিলাম। দেখি সব ভালো কাজই চীন থেকে। আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ, ভারত ধারে কাছেও নেই। কাজ গুলো আবার চাইনিজে লেখা ( এবসট্রাক্ট ছিল ইংরেজিতে)। যা দিনকাল এল। এবার দেখছি, আপ টু ডেট থাকতে চাইনিজটা শিখে নিতেই হবে। অতীতে অবশ্য এমনটাই ছিল। চীন ছিল জ্ঞান এবং প্রযুক্তির পীঠস্থান। ১৬০০ সাল পর্যন্ত জিডিপি, রপ্তানি, প্রযুক্তিতে চীন ছিল পৃথিবীর সেরা। যার জন্য ইতিহাসে দেখি- কি ইউরোপ, আরব বা ভারত- আমরা দেখব, নতুন কিছু প্রযুক্তি বা কার্যকরী জ্ঞান শিখতে লোকে চীনে যেত। হজরত মহম্মদ মুসলমানদের উপদেশ দিয়েছিলেন চীনে গিয়ে নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান শিখতে । সেই দিনকালই ফিরে আসছে।


আজকে চিনের এই চমকপ্রদ উন্নতির পেছনে কমিউনিজম বা ক্যাপিটালিজমের ভূত দেখতে গেলে ভুল হবে। চীন বা ভারতের মতন প্রাচীন সভ্যতার ডি এন এ বহুদিন আগেই তৈরী। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে লিডারশিপ পজিশনে থাকা চীনের কাছে নতুন কিছু না-আগেই বলেছি ইউরোপের রেনেশাসের আগে চীনই ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের নেতা । চীনই একমাত্র দেশ-যাদের দর্শন ঈশ্বর ভিত্তিক না। মানুষের কর্ম ভিত্তিক। যে সময় ভারতের অশোক রাজত্ব করছেন, সেই সময়টা চীনের ইতিহাসে ১০০ বছরের যুদ্ধের যুগ। যদিও কনফুসিয়াস বুদ্ধের সমসাময়িক, চীনের অভূতপূর্ব প্রযুক্তির উন্নতি এই "ওয়ারিং স্টেটের" সময়টা থেকেই যখন ছটি চৈনিক রাজ্য একে অপরের সাথে যুদ্ধে রত। এই যুগেই জন্মেছেন কালোত্তীর্ন চৈনিক দার্শনিকরা - সান জু, ওয়ে লিওবি। বৌদ্ধ দর্শন, কনফুসিয়াস, সান জু ইত্যাদি নানান দার্শনিকদের চিন্তার ওপরে তৈরী চৈনিক সভ্যতা- যা সম্পূর্ন ভাবেই ঈশ্বর বিহীন, মানুষের কল্যানকামী। আবার উন্নত মিলিটারী শক্তির ও পূজারী।


ভারতে প্রতিভার অভাব কোনদিনই ছিল না। ভারতের বৌদ্ধ ধর্ম , আয়ুর্বেদ, গণিত চীনে গেছে অতীতে। এবং চীনের দার্শনিক চিন্তাবিদদের হাতে তা উন্নতি প্রাপ্ত হয়েছিল। আর ভারত থেকে আস্তে আস্তে সব কিছুই হারিয়ে গিয়েছিল।
এখনো অবস্থাটা প্রায় তাই। ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্ত রাজনৈতিক সিস্টেম যেভাবে ধর্মের কাদায় পচা জল খাচ্ছে, তাতে প্রতিভাবান ভারতীয়দের হাতে বিকল্প খুব কম।