Saturday, March 10, 2018

শ্যমাপ্রসাদ মুখার্জী- একটি নির্মোহ বিশ্লেষন

শ্যমাপ্রসাদ মুখার্জী- একটি নির্মোহ বিশ্লেষন
  (১)
শ্যমাপ্রসাদের মূর্তিকে কালিমালেপনে, বাম এবং রাম, দুই দলই এখন ফেসবুকে যুযুদ্ধমান।  কি কৈশর, কি যৌবন কি বর্তমান ইউটিউব-গুগুল-ফেসবুক নির্ভর দিনগত ইতিহাসক্ষয় জীবনে, শ্যমাপ্রসাদের ওপর ভাল কোন লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয় নি। ফলে এই ভদ্রলোক সম্মন্ধে আমার জ্ঞান ভাসা ভাসা। মূর্তি বিতর্কের সূত্র ধরে আশাছিল, বিবদমান রাম-বামের পোষ্টের লড়াই এ শ্যমাপ্রসাদকে নিয়ে কিছু জানব। কোথায় কি। শ্যমাপ্রসাদ সম্মন্ধে – রাম/বাম দুই দলেরই অবস্থা দেখলাম সঙ্গীন। অগত্যা নিজেই খোঁজাখুজি শুরু করি। তাতে দেখি শ্যমাপ্রসাদকে নিয়ে প্রমান্য ঐতিহাসিক কাজ প্রায় নেই।  হয় সঙ্ঘের প্রপাগান্ডা, না হলে বামেদের কাউন্টার প্রপাগান্ডা। কনটেক্সট বিহীন, অর্থহীন।  ফলে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া কিছু কিছু তথ্যকে ছেঁকে এ লেখা সাজাচ্ছি। এই ধরনের কাজের জন্য যে পরিমান সময় এবং গবেষনা দেওয়া উচিত তার ১% সময় ও আমার হাতে নেই। গোদের ওপর বিষফোঁড়া, শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে জানতে গিয়ে দেখলাম ১৯৪২-১৯৫১ সাল পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস ও গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার ধারনা ছিল দেশ ভাগের ইতিহাস মোটামুটি বুঝি-অন্তত একটা সুতোয় বাঁধতে পারি। গত দুদিন ধরে দেশভাগ সংক্রান্ত যত ইতিহাস পড়ছি বা শুনছি, তাতে প্রচুর পরস্পর বিরোধি তথ্য দেখতে পাচ্ছি। তবুও এই লেখার ধৃষ্টতা করছি-যে আমার ভুল পাঠক শুধরে দেবেন। আলোচনার শেষে সত্যিকারের শ্যমাপ্রসাদকে আমরা উদ্ধার করতে পারব। আমি এই লেখায়, তার জীবন নিয়ে না লিখে, তাকে নিয়ে ওঠা কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি।

 (২) শ্যমাপ্রসাদকে বাঙালী কেন মনে রাখবে?
                 ফেসবুক এই প্রশ্নে উত্তাল। বামেদের বক্তব্য যে ভদ্রলোক বৃটিশ পতাকা ইউনিয়ান জ্যাক না তোলার অপরাধে, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের  দুই জাতিয়তাবাদি ছাত্রনেতা্কে রাস্টিকেট করেছিলেন , কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সময় বাঙলার গভর্নরকে চিঠি লিখে, আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করেছিলেন-তিনি কি করে বাঙলা তথা ভারতের জাতীয়তাবাদি নেতা হতে পারেন? বামদের শ্যমাপ্রসাদ একজন বৃটিশদের পাচাটা সাম্প্রদায়িক হিন্দুনেতা।

অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদিদের দাবী-শ্যমাপ্রসাদ না থাকলে আজকে পশ্চিম বঙ্গ, বাংলাদেশে চলে যেত। বাঙালী হিন্দুদের জন্য স্বাধীন রাজ্যের দাবী তিনিই তোলেন।

উভয়ক্ষেত্রেই “ফ্যাক্ট” সামান্য, দৃষ্টি মায়োপিক, আসল শ্যমাপ্রসাদ অন্যকেও!

প্রথমে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে আসি। শ্যমাপ্রসাদ চার বছর কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য  ১৯৩৪-৩৮। কেন তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্বদেশী ঢুকতে দেন নি, সেটা বুঝতে স্যার আশুতোষ, তার বাবার আদর্শকে বুঝতে হবে। কারন ওই চারবছর, বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি তার পিতা স্যার আশুতোষের অসমাপ্ত কাজ এবং আদর্শকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

 সেটা ১৯১৭ সাল। স্বাধীনতার আকাঙ্খায় বাংলার দামাল মেধাবী ছেলেরা বিপ্লবী মন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে বোমা, বন্দুক তুলে নিচ্ছে। মেঘনাদ সাহা ফলিত গণিতে এম এস সি ক্লাসে প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতীয় হলেন। কিন্ত পাশ করে বেকার। সাইকেল চালিয়ে টিউশুনি করেন। আর সাথে সাথে স্বদেশী আখরায় যাতায়াত শুরু।  খবর গেল স্যার আশুতোষের কাছে।  মেঘনাদ সাহা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসম্ভব মেধাবী ছাত্রটি স্বদেশী হতে চলেছে। স্যার আশুতোষ ডাকলেন মেঘনাদা সাহাকে। বললেন দেখ স্বদেশী করার ছেলে প্রচুর। শুধু বোমাবাজি, আন্দোলন করলেই ভবিষ্যতের ভারত দাঁড়াবে হে ছোকরা? বিদেশীরা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে বলিয়ান হয়ে আজ আমাদের প্রভু।  তাদের সমানতালে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় না এগোলে, আমরা কোনদিন জাতি হিসাবে উন্নত হতে পারব না। আমি তোমার আর সত্যেনের জন্য দুটো লেকচারার পদ খুলে দিচ্ছি। বিদেশে পদার্থবিদ্যার নবযুগ শুরু হয়েছে। আমার দেশ পদার্থবিদ্যায় পিছিয়ে থাকতে পারে না। পদার্থবিদ্যার মাস্টার ডিগ্রি ক্লাশ শুরু করে দাও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে!

আজ স্যার আশুতোষ না থাকলে সত্যেন বোস বা মেঘনাদ সাহা কেউ থাকতেন না। স্যার আশুতোষের স্বপ্ন ছিল, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কেম্ব্রিজ, হার্ভাড।  ভারতীয়রা এগিয়ে যাবে বিজ্ঞানচর্চায় সমানতালে। এবং তিনি সফল। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান চর্চায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণযুগ। এই সময় সিভি রামন শুধু বিজ্ঞানে নোবেলই আনেন নি, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস, সি আর মিত্র-ইত্যাদি অনেক তরুন ভারতীয় বিজ্ঞানী জানান দিয়েছেন ভারতীয়রা মেধায় পিছিয়ে নেয়। জাতীয়তাবাদ ত শুধু  বোমা বন্দুকের প্রতিবাদি রাজনীতিতে হয় না, জাতির শিক্ষা মেধার উন্নয়ন তার থেকেও গুরুত্বপূর্ন। যে গুরুদায়িত্ব নিয়েছিলেন আশুতোষ, রবীন্দ্রনাথ,  সিভি রামন, সি আর টাটা, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর মতন দিকপাল।

কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলত অনুদানে।  এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে অল্প সাহায্যই আসত। বৃটিশরা চাকর বাকর ভারতীয় দেখতে চায়, সত্যেন বোস, মেঘনাদ সাহার মতন দিকপাল বিজ্ঞানী তৈরীর জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দেবে না কি?  আশুতোষ সারা জীবন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমিদার, রাজাদের কাছে ভিক্ষা করেছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেই কারনে উনি চাননি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যায়লে স্বদেশী রাজনীতি ঢুকুক।  রাজনীতি ঢুকলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতা নষ্ট হবে, অনেক মেধাবী ছাত্রদের তিনি বিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ করে তুলেছেন, তা নষ্ট হত।  ফলে আশুতোষ একদিকে যেমন স্বদেশী ভাষা এবং শিক্ষা জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছেন, অন্যদিকে মেধাবী ছাত্ররা যাতে স্বদেশী “বিপ্লবী” দের খপ্পরে না আসে, তার জন্য, অত্যন্ত কড়া ছিলেন।

 শ্যমাপ্রসাদ তারা বাবাকেই ফলো করেছেন মাত্র। কারন তার কাছে স্বদেশী মানে বোমা আন্দোলন না, স্বদেশী ভাষা ( বাংলা হিন্দির) উন্নতি, স্বদেশী বিজ্ঞানের উন্নতি, স্বদেশী শিল্পের উন্নতি।  কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তার চার বছরে এক্সাক্টলি, এই কাজগুলিই  দিবারাত্র করেছেন শ্যামাপ্রসাদ। তার এই চারবছরে, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার অবদান প্রচুর, আমি সামান্য কিছুই লিখছি।

 (১) বাংলা ভাষার বিজ্ঞান ও উচ্চশিক্ষা চর্চার জন্য -কমিটি ঘটন করে, বাংলার বিজ্ঞান শব্দকোষ তৈরী করলেন। যা বাংলার প্রথম বিজ্ঞানকোষ। 
 (২) তার সময় থেকেই স্নাতক স্তরে ছাত্রছাত্রীরা যাতে বাংলায় পরীক্ষা দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা হয়।
 (৩) ফলিত পদার্থবিদ্যা এবং কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট শুরু হল, সেই সূত্র ধরেই কোলকাতার বিখ্যাত রেডিও ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট শুরু হবে। ইলেকট্রনিক্স সাবজেক্টের শুরু এই ফলিত ডিপার্টমেন্টেই।

 (৪) কেমিস্ট্রি যাতে শুধু ক্লাসরুমে আটকে না থাকে, উনি স্পেশাল গ্রান্ট আনলেন, কেমিস্ট্রির ছাত্ররা, অধ্যাপকরা যতে নিজেরাই স্বদেশী স্টাইলে দেশেই কেমিক্যাল তৈরী করে বিদেশ থেকে না ইম্পোর্ট করে। প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এ ব্যপারে তার আদর্শ।

 (৫) কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক ইতিহাস চালু হল। না উনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না, চলমান রাজনীতি তাকে বাধ্য করেছিল হিন্দুমহাসভা এবং আর এস এসের সাহায্য নিতে।

 (৬) মেয়েরা যতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, মেয়েদের জন্যও আসন সংরক্ষন করলেন তিনি।

    বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য, আরো অনেক কিছু করেছেন, যা এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে লেখা সম্ভব না। শুধু সেই জন্যেই বাঙালী মনে রাখতে পারে শ্যামাপ্রসাদকে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন হত ইংরেজিতে-উনিই রবীন্দ্রনাথকে প্রধান অতিথি করে, বাংলায় কনভোকেশন চালু করলেন। রবীন্দ্রনাথ যাতে বাংলার মাস্টার ডিগ্রির ক্লাস নেন, সেই ব্যপার ও পাকা করে ফেলেছিলেন গুরুদেবের সম্মতিতে। কিন্ত বাঙালী সেকালেও ছাগল এবং কূট রাজনীতি করত। যেমন একালেও করে। রবীন্দ্রনাথের “ডিগ্রী” নেই বলে সিন্ডিকেট আপত্তি তুললো! যদিও শ্যামাপ্রসাদ, তা ওভাররুল করেন, কিন্ত গুরুদেব কিছু সিন্ডিকেট মেম্বারদের এই আপত্তিতে ব্যথিত হয়ে, শ্যামাপ্রসাদকে ফিরিয়ে দিলেন।
 একমাত্র বাঙালীর মতন  নির্বোধ জাতির লোকজনই বোধ হয় পারে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নোবেল প্রাইজ বিজেতার বাঙলায় মাস্টার ডিগ্রির ক্লাসে পড়ানোর যোগ্যতা আছে কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে!  কারন রবীন্দ্রনাথের কোন ডিগ্রি নাই! কি মারাত্মক!
সুতরাং আজকে সেই আহাম্মক বাঙালী জাতির উত্তরপুরুষরা যখন শ্যমাপ্রসাদ স্বদেশী শিক্ষা, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা, দেশীয় শিল্প, নারীশিক্ষার জন্য কি করেছিলেন সেটা না জেনে, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বদেশী আন্দোলনকারিদের প্রতি কঠোর ছিলেন কেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন অবাক হওয়ার অবকাশ নেই। বাঙালী অমনই। তারা রবীন্দ্রনাথের ডিগ্রিগত যোগ্যতা দাবী করতে পারে, স্বদেশী বলতে শুধু বোমাবাজি, মিছিল বুঝতে পারে।  বাঙালী চিত্তের বুদ্ধিবিদ্যার যা “হাল” তাতে এর বেশী কিছু আশা করা অন্যায়।

  (৩) এবার আসি কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট, ভারত ছাড় আন্দোলনে শ্যামাপ্রসাদের ভূমিকা নিয়ে।  সেটা ১৯৪২ সাল। এবং এটা সত্য, তখন তিনি বৃটিশ সাথে, স্বদেশী আন্দোলন, বিশেষত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কিন্ত কেন ?
 কারন তখন তিনি হিন্দুমহাসভার নেতা।  বৃটিশদের সাথে সহযোগিতা করে, হিন্দুদের জন্য সুযোগ বেশী করে দেওয়াটাই যে পার্টির একমাত্র রাজনীতি ছিল।

আজকে বিজেপির পূর্বাসূরী, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা, কেন বৃটিশদের পাচাটার রাজনীতি করত?

এটা বুঝতে পারলেই বুঝবেন, এদ্দিন ধরে আমি যা বলে আসছি, যে ভারতের হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি, ইসলামিক মৌলবাদি রাজনীতির রিয়াকশন ছাড়া কিছু না, তা আরো স্পষ্ট হবে।

 সুতরাং আসুন,  স্বাধীনতার পূর্বে এই হিন্দুমহাসভার রাজনীতির সাথে আমরা পরিচিত হই।

 হিন্দু মহাসভার সৃষ্টি শ্রেফ মুসলীম লীগকে কাউন্টার করতে। সুতরাং মুসলিম লীগের রাজনীতি কি, কেন তারা ইতিহাসে আলো করে এল, সেটাও বুঝি চলুন।  মুসলিম লীগের জন্ম ১৯০৬ সালে।  কংগ্রেস তখন একটা হিন্দুদের দলে পরিনত। ভারতের অধিকাংশ উচ্চপদস্থ চাকরি হিন্দুদের দখলে। স্বভাবতই শিক্ষিত মুসলমানরা “মার্জিনালাইজড” বোধ করলেন। এবং ভারতে মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য ১৯০৬ সালে মুসলীম লীগ তৈরী হল।

 বৃটিশরা হাতে মোয়া পেল। মর্লি মিন্টো সংস্কার, যার দরুন ভারতে প্রথম গনতান্ত্রিক ভোটাভুটি-বা স্থানীয় স্বয়ত্ব শাসনের শুরু, তারা মুসলীম লীগের সব দাবী স্বীকার করে। কারন তখন বৃটিশরা বুঝেছে, মুসলীম লীগ তাদের তুরুপের তাস-কারন এই লীগকে সামনে রেখে তারা রাজনীতি এবং সরকারি কাজে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ করবে। যেহেতু সরকারি চাকরি, শিক্ষা সর্বত্রই হিন্দুদের প্রাধান্য, এই ধরনের আইন হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করবে, ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু হবে।  ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টো সংস্কার ছিল, সেই দাবার প্রথম চাল। বোরেটাকে প্রথম এগোনো। সেখানে মুসলীম লীগের দাবী মেনে নিয়ে,  মুসলিম এবং হিন্দুদের জন্য আলাদা প্রতিনিধিত্ব চালু হয়।

মর্লি-মিন্টো সংস্কারে আইন সভায়, মুসলীমদের জন্য আলাদা প্রতিনিধিত্ব থাকায়, প্রমাদ গনলেন উত্তর-পশ্চিমের হিন্দুরা যেখানে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অনেক বড় মার্জিনে। সেই জন্য ১৯১০ সালটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদি রাজনীতির আঁতুর ঘর। ওই বছর পাঞ্জাব, সিন্ধ দিল্লী ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স- যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু-   সর্বত্রই প্রাদেশিক হিন্দু সভা গঠিত হল। উদ্দেশ্য এরা একটি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা গড়বেন। যার কাজ হবে, মুসলীম লীগের রাজনীতিকে কাউন্টার করা।  হোতা মদন মহন মালব্য, লালা লাজপত রায়।

সেই মোতাবেক আমলাতে ১৯১৩ সালে হিন্দু মহাসভার প্রথম অখিল ভারতীয় অধিবেশন হয়। প্রথম প্রেসিডেন্ট এক বাঙালী- কুচবিহারের মহারাজা মহিন্দ্র নন্দী। প্রথম অধিবেশনেই মত এবং পথ নিয়ে সাংঘাতিক গন্ডোগল। কারন এই হিন্দু মহাসভার আহ্বায়করা অধিকাংশই উত্তর-পশ্চিমের “পলিটিক্যালি এনলাইটেন্ড”  উচ্চশিক্ষিত হিন্দু। রক্ষনশীল হিন্দু এরা নন, অধিকাংশই ছিলেন আর্যসমাজি।  সুতরাং জাতিভেদ প্রথাকে নিন্দা করে অখন্ড হিন্দু জাতির প্রস্তাব পাশ হয়, কিন্ত বৃটিশদের সাথে সহযোগিতার লাইন ও ঘোষিত হয়। বৃটিশদের পা চাটার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আর্য্য সমাজের বিখ্যাত সন্ন্যাসী  স্বামী শ্রদ্ধানন্দ        ।  কিন্ত দেখা গেল অধিকাংস সদস্য, মুসলীমের লীগের হনুকরনেই বিশ্বাসী-তাদের ধারনা বৃটিশ মহলে প্রভাব না ফেললে-মুসলীম লীগ চাকরি, বাকরি-আইন সব নিয়ে যাবে।  সেই লাইনেই চলেছে হিন্দু মহাসভার রাজনীতি। যাতে ১৯৩৬ সালে জয়েন করেছেন শ্যমাপ্রসাদ -কিছুটা বাধ্য হয়ে, কিছুটা সাভারকরের প্রভাবে।

অর্থাৎ বিজেপির জন্ম মুসলীম লীগের রাজনীতির হনুকরনে। সুতরাং তাদের হিন্দুত্ববাদ যে ইসলাম ২  ভার্সান হবে, সেটাই স্বাভাবিক এবং ঐতিহাসিক ও বটে।

 হিন্দু মহাসভা ,  বলাই বাহুল্য রাজনৈতিক দিক থেকে ব্যর্থ এক সংগঠন ছিল। কারন জাতিভেদ, বর্ণহিন্দুত্বের বিরুদ্ধে এই সংগঠন শুরু হলেও অচিরেই তা বর্ণহিন্দুদের সংগঠনে পরিণত হয়। তাছাড়া, বৃটিশদের পাচাটার কারনে তাদের গ্রহনযোগ্যতাও কমে আসে। গান্ধী, নেহেরু, সুভাষের মতন মেধাবী নেতা তারা পায় নি।

এবার দেখাযাক শ্যমাপ্রসাদ হিন্দু মহাসভায় যোগ দিলেন কেন। উনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন কিন্ত কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে আইনসভায় ১৯২৯ সালে। ১৯৩০ সালে কংগ্রেসে “ আইন অমান্য আন্দোলন “   - লবন সত্যাগ্রহের জন্য সব নির্বাচিত সদস্যকে আইনসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলে। ফলে শ্যামাপ্রসাদের আর আইনসভায় থাকা হল না। কিন্ত উনি ইন্ডিপেন্ডেট ক্যান্ডিডেট হিসাবে বাংলার আইন সভায় আবার এলেন ১৯৩১ সালে।  কংগ্রেস যেহেতু আইন সভা বর্জন করেছে, সেহেতু বাংলার আইন সভায় তখন হিন্দুদের প্রতিনিধি বলতে শুধু শ্যামাবাবু- বাকী সবাই মুসলিম লীগ, বা ফজলুল হকের কৃষক প্রজাপার্টি।

যেহেতু বাংলার আইনসভায় তখন কৃষক প্রজাপার্টি এবং মুসলীম লীগের একাধিপত্য,সমস্ত চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলীমদের জন্য সমানুপাতিক “সংরক্ষন”-অর্থাৎ ৫৪% সংরক্ষন চালু হল।  সেই সময় বাংলায় টোট্যাল ৫৪% মুসলমান, কিন্ত শিক্ষা, চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ৫% এর ও নীচে। ফলে এটা হওয়ারই ছিল।

এতে বর্নহিন্দুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যেহেতু হঠাৎ করে তারা দেখে, চাকরির ক্ষেত্র, শিক্ষার ক্ষেত্র সংকুচিত। শিক্ষিত বর্নহিন্দুরা ক্ষেপে ওঠে-কিন্ত কংগ্রেস মুসলীম লীগ এবং কৃষক প্রজাপার্টির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু করবে না।  শ্যমাপ্রসাদ এর বিহিত করতে সুভাষ বোস, নেহেরু, গান্ধী-সবার কাছেই দরবার করেছেন। কিন্ত কংগ্রেস তাকে পাত্তা দিল না-কারন মুসলমানদের ৫৪% সংরক্ষন দরকার ছিল। যেহেতু তারা শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।

এই সুযোগ নিল হিন্দু মহাসভা। সাভারকর দেখা করলেন শ্যামাপ্রসাদের সাথে।  বল্লেন দেখ শ্যামাবাবু, কংগ্রেস মুসলীম স্বার্থই দেখবে, তুমি সময় নষ্ট না করে হিন্দু মহাসভায় যোগদাও।  তোমার মতন সংগঠককে হিন্দু মহাসভার দরকার। এদ্দিন ধরে হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কংগ্রেসের সব নেতার কাছে গেছেন। সুভাষ তার বন্ধুতুল্য। সুভাষ বোস ও কোলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির চাকরিতে মুসলমানদের সংরক্ষনের পক্ষে!   বুঝলেন হিন্দুমহাসভাই হবে তার প্ল্যাটফর্ম।  তিনি তার প্রেসিডেন্ট ও হলেন।

এখানে বুঝতে হবে শ্যমাপ্রসাদ আদতে একজন প্রগতিশীল শিক্ষাবিদ, কংগ্রেসই তার ন্যাচারাল প্ল্যাটফর্ম।  ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি বৌদ্ধধর্ম অনুরাগী, মহাবোধি সোশাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সমস্ত বৌদ্ধদেশ ভ্রুন করেছেন। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে অনেক কিছু করেছেন। এমন এক উদার প্রগতিশীল শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি কি করে হিন্দুমহাসভার আশ্রয় নিতে বাধ্য হল?

 এর উত্তর জটিল কিছু না। আজকে প্রগতিশীল নাস্তিক বাঙালীর অধিকাংশই বিজেপি প্রেমী হচ্ছে। কেন? কারন তারা দেখছেন কংগ্রেস এবং তথাকথিত সেকুলার পার্টিগুলো ইসলামিক মৌলবাদ ঠেকাতে কিছু করছে না। অধিকাংশ মুসলমান ত, তাদের মধ্যে বর্ধিত মৌলবাদকে স্বীকার করতেই রাজী না। শ্যামাপ্রসাদের কেসটাও তাই। উনি দেখলেন মুসলীম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ঠেকাতে কংগ্রেস কিছুই করছে না-যদিও তিনি লীগকে ঠেকাতে কংগ্রেসের স্বরণাপন্ন হয়েছেন অনেকবার।  ফলে বাধ্য হয়েই তিনি হিন্দু মহাসভার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন।  সেই ধারাই এখন বর্ধিষ্ণু- সর্বত্রই দেখছি শিক্ষিত হিন্দু যুবসমাজের মধ্যে ধর্ম নিরেপেক্ষ রাজনীতি নিয়ে “সঙ্গত কারনেই” বিরাট ডিসিল্যুউশনড”। আশাহত। ফলে গোবলয়ের রাজনীতির স্বরণাপন্ন হচ্ছেন তারা, যাদের ক্যাডারবেসের সাথে, এই প্রগতিশীল হিন্দু বাঙালীদের কোন মিলই নেই।

 এবার ফিরে আসি কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট প্রসঙ্গে। ১৯৪২ সালে শ্যমাপ্রসাদ তীব্র কংগ্রেস বিরোধি। ফলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গর্ভনরকে লিখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্ত তার বিবেক জাগ্রত ছিল। সেই বছরই নভেম্বর মাসে শ্যামা-হক মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন। বৃটিশদের বিরুদ্ধে সেই ছিল তার প্রথম প্রতিবাদ। এবং তিনি সেটা করলেন তমলুকের মানুষদের জন্য। তমলুক তখন ভারত ছাড় আন্দোলনের ঘাঁটি। স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার সেখানেই তৈরী হয়েছে।  সেই বছর আছড়ে পড়ল ঘূর্নিঝড়। দশ হাজার লোকের মৃত্যু। অসংখ্যলোক খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন। কিন্ত বৃটিশ নির্লিপ্ত। তমলুকবাসীকে শিক্ষা দিতে হবে। এই প্রথম বৃটিশদের ওপর বিরক্ত হলেন শ্যামাপ্রসাদ।  মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে ঝড় বিধ্বস্ত এলাকার লোকেদের সেবায় নিয়োজিত হলেন। ১৯৪৩ সালেও তিনি রাজনীতির থেকে অবসর নিয়ে দুর্ভিক্ষে পীড়িত লোকেদের সেবা করেছেন। তার সেবাকার্যের সব থেকে বড় সঙ্গী ছিল  বিধানচন্দ্র রায়।  তিনি মাতঙ্গিনী হাজরা বিরুদ্ধে গুলি চালানোর প্রতিবাদ করেন নি, এই তথ্যও ঠিক না।  না তিনি তার জন্য পদত্যাগ করেন নি, কিন্ত বৃটিশ পুলিশের ভূমিকা “এক্সেসিভ” এবং “রিগ্রেসিভ” ছিল, তা কিন্ত বলেছেন।  সুতরাং হিন্দুমহাসভার লাইন মেনে তিনিই শুধুই বৃটিশদের পা চেটেছেন, এ কথা ঠিক না।

(৪) আবার আসি আরেকটি বিতর্তিক প্রশ্নে।  শ্যামাপ্রসাদকে পশ্চিম বঙ্গ সৃষ্টির কৃতিত্ব দিয়ে হিন্দুত্ববাদিদের অনেক পোষ্ট দেখি। এটিও ইতিহাসের অতিকথন, অসৎকথন না হলেও।  আমি এটাকে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডাই বলব।

 ক্যাবিনেট মিশন  (১৯৪৬) ব্যর্থ হল মুসলীম লীগ এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা করতে। অখন্ড ভারত সম্ভব না, সবাই বুঝেগেছে। এর মধ্যে বৃটিশরা চাইছিল, যাতে ১৯৪৮ সালের জুন মাসের আগেই ক্ষমতার হস্তান্তর হয়।  ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে মাউন্ট ব্যাটেন এলেন ভারত ভাগের পরিকল্পনা নিয়ে। তাতে পরিস্কার ভাবেই ছিল, বাংলা এবং পাঞ্জাব ভাগের জন্য রেফারেন্ডাম হবে।  সেই সময় কোলকাতা এবং নোয়াখালির দাঙ্গার পরে, হিন্দু মুসলমান একসাথে থাকতে চাইছিল না। কারন অবিশ্বাসের পরিস্থিতি। গান্ধীও নোয়াখালি ঘুরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

 এই সময় শরত বসু, ফজলুল হক, সুরাবর্দীরা চাইছিলেন স্বাধীন অখন্ড বাংলা সরকার। যা মুসলীম লীগ এবং কংগ্রেস দুজনেই অস্বীকার করে মানতে। ফলে বাংলা ভাগের রেফারেন্ডেম তৈরী হয় এবং আইন সভায় তা পাশ হয়।

 সুতরাং  পশ্চিম বাংলার গঠনের ক্ষেত্রে দুটি ঘটনা দেখা যাচ্ছে
 (১) ক্যাবিনেট মিশনের ব্যর্থতা-যেখানে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ানের ধারনা খারিজ হল। ফল এই যে ভারত ভাগের ম্যান্ডেট নিয়ে মাউন্টব্যাটন এলেন। সেটা মার্চ মাস, এবং তাতে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগের ক্ষেত্রে রেফারেন্ডেমের কথা ছিল।

 (২) দেখা গেল বাংলার মুসলিম নেতারা পূর্বপাকিস্তানের ধারনার বিরোধি। তারা অখন্ড স্বাধীন বাংলা কিছু হিন্দু নেতাদের সাথে চাইলেন, পূর্ব পাকিস্তান চাইলেন না।  কিন্ত কংগ্রেস এবং মুসলীম লীগ, তার বিরোধিতা করার কারনে, সেই প্রস্তাব এগলো না। ফলে বাংলা ভাগ নিশ্চিত হয়।

এক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের অবদান
 ১)  শ্যমাপ্রসাদ ও অখন্ড স্বাধীন বাংলার বিরোধি ছিলেন। কিন্ত তার বিরোধিতায় কিস্যু যায় আসত না, আসেও নি-কারন মাউন্টব্যটন কংগ্রেস এবং মুসলীম লীগকেই ভারতের “ রিপ্রেজেন্টেশন” হিসাবে ধরেছেন। কংগ্রেস এবং মুসলীম লীগের নেতারা অখন্ড বাংলার ধারনা বাতিল করার জন্যই, বাংলা ভাগ নিশ্চিত হয়। হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবে বৃটিশদের কাছে হিন্দুমহাসভা কোনদিনই পাত্তা পায় নি-কংগ্রেসকেই তারা হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবে ধরত।

২) বলা হয় ১৯৪৭ সালের মে মাসে শ্যমাপ্রসাদ মাউন্টব্যাটনকে লেখেন বাংলা ভাগের জন্য। তাতে কি? তার দু মাস আগেই মাউন্টব্যটন বাংলা ভাগের রেফারেন্ডেম নিয়ে ভারতে এসেছেন। সব থেকে বড় কথা হিন্দু মহাসভার কোন নেতাকে তাদের পাত্তা দেওয়ার কথাও না-বৃটিশদের কাছে সর্বদাই কংগ্রেসই হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে।

সুতরাং শ্যামাপ্রসাদের জন্যই পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের জন্ম হয় এটা শ্যামাপ্রসাদকে বাঙালীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করার বৃথা রাজনৈতিক চেষ্টা। যার কোন দরকারই নেই। কারন শ্যমাপ্রসাদ বাংলা ভাষার জন্য যা করেছেন, সেটাই যথেষ্ট তার লেগাসির জন্য। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে বাঙালী হিন্দুত্ববাদিদের মধ্যে বুদ্ধিজীবির বড় অভাব।

(৫) এবার আসি স্বাধীনতার পরবর্তী শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে। তার রাজনীতি কি সত্যিই খুব বেশী সাম্প্রদায়িক ছিল ? প্রগতিশীলতার বিরোধি ছিল?
  কতগুলো জিনিস জানা দরকার।
    এক, প্রথম নেহেরু মন্ত্রীসভায় মোটে দুজন কংগ্রেস বিরোধির নাম গান্ধীজি নিজে সুপারিশ করেছিলেন নেহেরুকে। তার মধ্যে একজন শ্যামাপ্রসাদ, অন্যজন আম্বেদকর। কেন?  শ্যামাপ্রসাদের রাজনীতি এত সাম্পদায়িক হলে গান্ধী তার নাম সুপারিশ করতেন না।

 দুই, ১৯৫১-৫৩, খুব সংক্ষিপ্ত তার সাংসদীয় জীবন। তিনি ছিলেন বিরোধি দলনেতা। তার প্রতিষ্টিত   জনসঙ্ঘ তখন বাকী সব বিরোধি দল, কমিনিউস্টদের সাথেও হাত মিলিয়ে কাজ করছে নেহেরু তথা কংগ্রেসের স্বৈরাচার, অগনতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে রোখার জন্য। হিরেন মুখার্জি,  সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ অনেক কমিনিউস্ট নেতাই তার গুনমুগ্ধ ছিল।  কি কি ব্যাপারে তিনি নেহেরুর বিরোধিতা করেছেন ?

- ৩৭০ , যা ভারতে কাশ্মীরকে স্পেশাল স্ট্যাটাস দেয়।
-  ইউনিফর্ম সিভিল কোড
-আরো বেশী বাকস্বাধীনতার দাবী
- রাজ্যের হাতে আরো বেশী ক্ষমতা
 সহযোগিতাও করেছেন নেহেরুকে। জমিদারি বিলোপ আইনের ক্ষেত্রে। ১৯৫১ সালে জন সঙ্ঘের এম পি ৩ জন, এম এল এ ৩৫। তিনজনের দুজন বাংলার, একজন রাজস্থানের।  এম এল এর মধ্যে ৭ জন বাংলার , ৬ জন রাজস্থানের। কিন্ত রাজস্থান লবির সবাই জমিদার বংশের । তারা বললো, তারা কেন নিজেদের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। শ্যমাপ্রসাদ বল্লেন দিতে হবে, কারন সেটাই আমাদের ম্যানিফেস্টো। রাজস্থান লবিকে বহিস্কার করেন তিনি। ক্ষমতার জন্য আপোশ করেন নি।লালকৃষ আদাবানী, পার্টিমিটিং অনেক বার এই গল্পটা শুনিয়েছেন দাবী করার জন্য বিজেপি্র ক্যাডারদের নিয়মনিষ্ঠ হতে হবে।

কিন্ত বাংলার বুকে যে বিজেপি শুরু হল, সেই পার্টি পশ্চিম বাংলা থেকে উঠে গেল কি করে ?

হ্যা, আজকের যে বিজেপি, তার শুরু হয়েছিল বাংলার মাটিতেই।  ১৯৫১ সালের ইলেকশনে জনসঙ্ঘের এম পি, এম এল এদের অধিকাংশই পশ্চিম বাংলার। কিন্ত তারা উঠে গেল।

 সেই গল্প অন্যদিন।  জন সঙ্ঘ গঠনের সময়, আর এস এসের সাহায্য নিলেন শ্যামাপ্রসাদ। গুরু গোলাওয়াকার এবং শ্যমাপ্রসাদ দুজনেই হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি করলেও, শ্যামাপ্রসাদের রাজনীতি ছিল অনেক প্রগতিশীল।  শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর পর আর এস এস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, জনসঙ্ঘের রাজনীতি সম্পূর্ন ভাবে নিজেদের হাতে আনে।  যা এখনো চলছে।  শ্যামাপ্রসাদের রাজনীতি গোরক্ষার রাজনীতি, দাঙ্গা বাঁধানোর রাজনীতি ছিল না। দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গার রাজনীতি, সামরিক শিক্ষা -এই মার্শাল বা মারেঙ্গা টাইপের হিন্দু রাজনীতির প্রবক্তা আর এস এস। হিন্দু মহাসভা ছিল শ্রেফ দাবী আদায়ের রাজনীতি।  আর এস এসের প্রতিষ্ঠাতা গুরু কেশব বলরাম হেডগেওয়ার ডাক্তারী পড়তে কোলকাতায় আসেন। এসে অনুশীলন সমিতিতে  যোগ দেন। অস্ত্র শিক্ষা স্বদেশী শিক্ষা পেলেন। পুনেতে গিয়ে বৃটিশ বিরোধি কার্যকলাপ করতে গিতে জেল খাটলেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার মোহভঙ্গ হয়।  ভারতের ইতিহাসে যারা সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী ছিলেন, বৃটিশদের জেল খাটার পর, তারা হয় কমিনিউস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, না হলে আর এস এসে।  কেন? কারন গুরু হেডগেওয়ার দেখলেন এই ভারতীয়দের দিয়ে রাজনীতি হবে না। এটা হাঁটতেই শেখে নি, দুর্বল শরীর, দৌঁড়াবে কি? ফলে হিন্দুদের অস্ত্র শিক্ষায় শিক্ষিত করার দীক্ষা নেন। সেই সুযোগ হাতে আসে গান্ধীর ভ্রান্ত খিলাফত আন্দোলনের ফলে। যার জন্য দক্ষিন ভারতে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়।  নাগপুরে প্রথম দাঙ্গায় হিন্দুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দুবছর বাদে আর এস এস পালটা দাঙ্গা বাধায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। এবার নাগপুরের অনেক মুসলমান শহর ছাড়তে বাধ্য হয়।

আর এস এসের ইতিহাস নিয়ে অন্যকোন স্থানে লিখব। কিন্ত যেটা লিখতে চাইছি, সেটা হচ্ছে এই যে আজকের যে বিজেপি, সেটা আর এস এসের, গুরু হেডগেওয়ারের রাজনৈতিক সন্তান। এটা শ্যামাপ্রসাদের রাজনৈতিক আদর্শ না। সুতরাং আজকের বিজেপিকে দেখে শ্যামাপ্রসাদকে মুল্যায়ন করা ভুল হবে।

(৬) আমি হিন্দুত্ববাদ এবং বামপন্থী, দুই ধরনের রাজনীতিরই বিরোধি। আমার কাছে বাম ও রাম এক মুদ্রার দুই পিঠ। মুদ্রাটা হচ্ছে “ভিক্টিমাইজেশনের গল্প ফেঁদে” রাজনীতি।  হিন্দুত্ববাদের রাজনীতির ভিত্তি “হিন্দুরা ঐতিহাসিক ভাবে মুসলমানদের হাতে নির্যাতিত”। বাম রাজনীতির ভিত্তি কৃষক শ্রমিক ধনী শ্রেনীর হাতে নির্যাতিত। আপনি বলবেন, এই দুই গ্রান্ড ন্যারেটিভই ত ঠিক।  কিন্ত এই ধরনের ভিক্টিমাইজেশনের রাজনীতিই পৃথিবীতে হিটলার, লেনিন, স্টালিনদের মতন দানবদের জন্ম দিয়েছে।  সুতরাং সেই পথ কাম্য না। কারন গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের আড়ালে সত্য , জ্ঞান, কর্ম সবই চাপা যায়।  আমি আগেও লিখেছি, সেই রাজনীতিই সফল হয় যা জ্ঞান, বুদ্ধি, বোধ এবং “ফ্যাক্ট” ভিত্তিক। সব থেকে বড় কথা এটা জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগ। একমাত্র প্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশের , সমাজের ব্যক্তির উন্নতি সম্ভব। সুতরাং শিক্ষা ও প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসা করার সুযোগ, এটাই হওয়া উচিত এই যুগের রাজনীতি।  কিন্ত ভোট সর্বস্ব রাজনীতি হিন্দু মুসলমানের পরিচয়টাই আগে এনে দিচ্ছে। এটাই আজকের দিনের লিব্যারাল রাজনীতির ব্যর্থতা। কারন ভোটের জন্য, প্রতিটা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাথা সাম্প্রদায়িক নেতাদের কাছে বিক্রিত।

Tuesday, March 6, 2018

লেনিন ধরে মারো টান লেনিন হবে খান খান!

ত্রিপুরায় লেনিনের স্টাচ্যু বুল্ডোজার দিয়ে গোঁড়ানোই বামপন্থী আবেগ ফেসবুকে একদম উথলে উঠছে!  লেনিন স্টালিনের মতন কুখ্যাত খুনীদেরকে শ্রমিক এবং কৃষকের ভগবান বানালে, গরুকেও গাছে তোলা সম্ভব।

 ঠিক আছে। আমি না হয় একজন বাম বিরোধি লোক। নোয়াম চমস্কিকেত সমকালীন সব বামেরাই সন্মান করেন, তার বামপন্থী আমেরিকা বিরোধি লেখা বামবাঙালীরা দেদারসে শেয়ার করেন। তা আমার কথা বাদ দিন। স্বয়ং চমস্কিই লেনিনকে বামপন্থার চরম বিশ্বাসঘাতক একজন দক্ষিনপন্থী বলে অভিহিত করেছেন [১]।

  লেনিন কিভাবে শ্রমিক কৃষক শ্রেনীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন সেই ইতিহাস এতই ব্যপৃত এবং নৃশংস, তার মধ্যে এখনই ঢুকছি না।  ধরুন বামেরাই ঠিক। লেনিন শ্রমিক কৃষকের একজন ভগবান ছিলেন।  ভাল কথা। তাহলে বামেরাত এটাও মানবেন লেনিন মানে স্ট্যাচু না-লেনিন মানে লেনিনবাদ, লেলিনের লেখা, কর্ম? রাইট? এই নিয়ে নিশ্চয় দ্বিমত থাকার কথা না।


   এবার বামবাঙালীদের কতগুলো তথ্য দিই। উনাদের সাধ্য থাকলে খন্ডন করুন।

 (১)  লেনিনের লেখা সোভিয়েত ইউনিয়ানেই সেন্সর করা হয়েছিল স্টালিন জমানায়।  লেনিনের লেখা স্টালিন সংগ্রহ করে রেখেছিলেন মার্ক্স এঙ্গেলস লেনিন ইন্সটিউটে। খুব কম লোকের ছাড়পত্র ছিল তার সব লেখা দেখার। জনসাধারনের জন্য স্টালিন পাঁচ খন্ডে লেনিনের লেখা প্রকাশ করেন (১৯২৭-৪০)। প্রিয় পাঠক, এবার আসুন সচেতন বাঙালী বামেদের  কিছু প্রশ্ন করি


  •         ওই পাঁচ খন্ডে, লেনিনের লেখাগুলির ৫০% এর ও কম প্রকাশ করা হয়-কেন?
  •         যেটুকু করা হয়, সেখানেও তার বাক্যকে হয় বাদ দেওয়া হয়েছিল, না হলে বদলানো হয় স্টালিনের নির্দেশে যাতে লেনিনের লেখা স্টালিনের স্বৈরাচারকে কমিনিউস্ট কবর থেকে সাপোর্ট করে। লেনিনের স্ট্যাচু ভাঙা অপরাধ না তার লেখার ভর্তা বানানো অপরাধ? 
  •  শুধু তাই না, লেনিনের লেখার ( অরিজিন্যাল, স্টালিন কতৃক সম্পাদিত নকল নহে) অনেক জায়গায় লেনিন তার নিজের অরিজিন যে ইহুদি এবং তিনি রাশিয়ান না-লিখেছেন। স্টালিন বিলকুল সেসব বাদ দিয়েছিলেন! স্টালিনের জমানায় লেনিনকে রাশিয়ান খৃষ্ঠান ফ্যামিলির বলে চালানো হয়।  উনি ছিলেন মায়ের দিক থেকে ইহুদি ফ্যামিলির। বাবা চুজাস জাতির, মা ছিল জার্মান সুইডিশ।  কিন্ত প্রশ্ন হল স্টালিন এসব চেপে গিয়েছিলেন কেন? 
  •  ক্রশ্চেভ এসে ওই পাঁচ খন্ড বই এর নতুন এডিশনে, স্টালিনের বিকৃতি থেকে লেনিনকে মুক্তি দেন। নতুন কিছু লেখাও যোগ হয়। এবার দেখা যায় লেনিনের রাজনৈতিক আদর্শের প্রকৃত সন্তান ক্রুশ্চেভ।
  •   গর্ভাচেভ আবার গবেষকদের নির্দেশ দেন (১৯৮২)  লেনিনের লেখাগুলি অথেন্টিক কি না চেক করতে। তার আমলেও লেনিনের নতুন নতুন লেখা এবং ফুটনোট এল। দেখা গেল লেনিনই চাইছিলেন গ্লস্তনস্ট!   গর্ভাচেভ নিমিত্ত মাত্র। 

   ১৯৯১ সালে কমিউনিজমের পতন ঘটে। এর পরে কমিনিউজমের ঘোর শত্রু বরিস ইয়েলতসিন নির্দেশ দিলেন গবেষকদের যাও লেনিনের সব লেখা উদ্ধার কর।   প্রিয় পাঠক লেনিনপ্রেমিক বাঙালীদের প্রশ্ন করুন -লেনিনের কতগুলি লেখা অপ্রকাশিত ছিল? এনি গেজ?

   লেনিনের ছহাজার লেখা প্রকাশিতই হয় নি সোভিয়েত জমানায়। লেনিনের মুক্তি ঘটান ইয়েলতসিন ওই ছহাজার লেখা প্রকাশ করে।

 এবার বাম বাঙালীকে প্রশ্ন করুন-বিজেপির লোকজন না হয় শুধু স্টাচু ভেঙেছে-কিন্ত "শ্রমিক কৃষকের ভগবান" লেনিনের লেখাকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কমিনিউস্ট স্টেটই চেপে রেখেছিল? কোনটা বড় অপরাধ????

    আপনি বলবেন লেনিনের চ্যালা চামুন্ডারা ছিল ভন্ড-তার দোষ কেন হবে?  ভন্ড গুরুর শিষ্যরা কি সাধু হবে?   জনগণকে বিভ্রান্ত করতে রাজনৈতিক ভন্ডামোর সীলমোহরে ছাপ্পাটা লেনিনই দিয়েছিলেন। সেই ডিডেলসে যাচ্ছি না। শুধু আরো একটা ছোট তথ্য দিই। পৃথিবীর ইতিহাস শুধু একটা দেশই পার্লামেন্টে আইন এনেছিল -সেই দেশে লেনিনের সব স্ট্যাচু ( প্রায় হাজার খানেক ছিল ) ভেঙে দেওয়ার জন্য । দেশটার নাম, ইউক্রেন , আইনের নাম " ডিকমিউনাইজেশন আইন"। ২০১৫ সালের  এপ্রিল মাসে।  ২০১২ সালে রাশিয়াতে স্টালিনের সব স্ট্যাচু ভাঙার জন্য প্রস্তাব আসে লিব্যারাল ডেমোক্রাটিক পার্টির তরফ থেকে। যেকটা লেনিনের স্ট্যাচু রাশিয়ার জনরোষ বাঁচিয়ে টিকে আছে, সেগুলোও ভাঙা হৌক। যাইহোক, তাদের প্রস্তাব ভোটে জেতে নি।

 লেনিন জমানায় অসংখ্য কৃষক এবং শ্রমিক গণহত্যা হয়েছে। আমি শুধু দুটো ঘটনাকে সামনে আনছি। কারন এগুলো ছিল কৃষক-শ্রমিক বিদ্রোহ যা নির্বিচারে দমন করেছিলেন লেনিনের রেড আর্মি। 

  (১)  কনস্টাড বিদ্রোহ ।  মার্চ  ৭-১৭, ১৯২১।  এই বিদ্রোহে সামিল ছিল নৌসেনা এবং শ্রমিকরা।  রেড আর্মি প্রায় ১০০০ লোকে খুন করে, ৪০০ সেনার ফাঁসি হয়। নেহাৎ সেনা বিদ্রোহ হলে এই বিদ্রোহের প্রসঙ্গ এখানে আনতাম না। আপনারা বাম বাঙালীদের প্রশ্ন করুন এই কনস্টাড বিদ্রোহের বিপ্লবীদের দাবী কি কি ছিল ???

   শুনবেন?  ওদের ১৫ দফা দাবী ছিল ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার ফেরাতে হবে, গণতন্ত্র বাক স্বাধীনতা ফেরাতে হবে,  সোভিয়েতের শ্রমিকদের হাতে ক্ষমতা ফেরাতে হবে! অর্থাৎ বাই ১৯২১, সোভিয়েত ইউনিয়ানের শ্রমিক কৃষকরা বুঝে গেছে,  শ্রমিক দরদির টুপি পরিয়ে, তাদেরকে জারের জমানা থেকেও অধপতনে ফেলা হয়েছে! কারন তদ্দিনে  শ্রমিক কৃষকের ভগবান লেনিন, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার, সোভিয়েতে শ্রমিকদের অধিকার বেয়াইনি ঘোষনা করেছেন! ইয়েস, লেনিন ফ্যাক্টরী কাউন্সিলকে ধ্বংশ করেছিলেন। 

 (২)  তম্ভব কৃষক বিদ্রোহ - ১৯২০।  প্রায় ৭০,০০০ কৃষক বন্দুক হাতে বিদ্রোহ করে, কারন রেড আর্মির  খাবার জোগাতে তাদের ওপর অসম্ভব অত্যাচার শুরু হয়। এরা কেউ দক্ষিন পন্থী ছিলেন না-অধিকাংশই ছিলেন বলশেভিকদের কৃষক সংগঠনের লোক।  রেড আর্মিরই একটা ফ্যাকশন। ১৯১৭ সালে লেনিনের সাথেই এরা ছিলেন।  যখন দেখলেন লেনিন বিশ্বাসঘাতক, মারাত্মক এক ফ্রড, এবং যার হাতে পরে, তারা সর্বস্ব খোয়াতে বসেছেন, তখন বলশেভিকদের কৃষক সংগঠন ভেঙেই এই বিদ্রোহের শুরু।  প্রায় ১৪,০০০ কৃষক হত্যা করে লেনিন এই বিদ্রোহ দমন করেন।

 আমি এই লিস্টটা আরো অনেক অনেক লম্বা করতে পারতাম- শুধু একটা ছোট্ট তথ্য। লেনিন জমানায় প্রায় ৫০০,০০০ কৃষক হত্যা হয়েছিল। 

শ্রমিকদের সাথে লেনিন কিভাবে একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তার ইতিহাস বিরাট লম্বা। যার জন্য চমস্কির মতন বিখ্যাত বামপন্থী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন লেনিন  বামপন্থার কোন প্রফেট না- বামপন্থার কুলাঙ্গার বিশ্বাসঘাতক দক্ষিন পন্থী। 

 এসব অবশ্য বাঙালী বামদেরকে বলে লাভ নেই। কারন এরা পড়াশোনা করে না, আবেগে চলে। বাম বাঙালীর চেয়ে বড় অশিক্ষিত গোটা পৃথিবীতেই বিরল। বাঙালী সব কিছুতেই ফাঁকি মারে। রাশিয়ার ইতিহাস পড়তেও ফাঁকি দিয়েছে। ফল এই যে আবেগপ্রবন বামপন্থায় ভেসেছে। 

 সেটা অবশ্য ব্যক্তিগত ইচ্ছা। মুশকিল হচ্ছে না পড়াশোনা করে আবেগে ভেসে এরা পশ্চিম বঙ্গকে ৩৪ বছর ধরে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছে। একটা এগিয়ে থাকা রাজ্য, এই সব আবেগে ভাসমান রাজনীতির পাল্লায় এসে ভারতের সব থেকে পিছিয়ে থাকা একটা রাজ্যে পরিনত হয়। 

 আর মার্ক্সের পাশে লেনিনকে বসিয়ে মার্ক্স-লেনিনিস্ট তত্ত্ব বানাতে গেলে দর্শন শাস্ত্রে রীতিমত অশিক্ষিত হতে হয়। মার্ক্স দর্শন শাস্ত্রে পি এই চ ডি ছিলেন-উনার যেকোন লেখা বুঝতে আরো গভীরে যেতে হয়। যেখানে লেনিনের লেখা সব কিছুই লিফলেট মার্কা- বুলি আড়ম্বর রেটোরিক- সেখানে দর্শন বা গভীর চিন্তার ছাপ নেই।  এটা আজ ঐতিহাসিক ভাবে প্রমানিত মার্ক্সের অধিকাংশ লেখাই লেনিনের কাছে ছিল না-কারন সে যুগে মার্ক্সের বই অত সহযে পাওয়া যেত না। লেনিন মার্ক্সের লেখার সাথে বিশেষ পরিচিত ছিলেন না-তার কাছে মার্ক্সের অধিকাংশ লেখাই ছিল না।    লেনিনকে মার্ক্সের সাথে একাসনে বসানোর লজিকটা ওই ছাগলের ও দাঁড়ি আছে, রবীন্দ্রনাথের ও দাঁড়ি আছে তাই ছাগল ও রবীন্দ্রনাথ-ওই গোত্রের। 

 যাইহোক, গরুকে গাছে চড়িয়ে লেনিনকে মহান বানালে বামপন্থার ক্ষতিই হবে। নতুন বামপন্থার সন্ধান করুন কমরেড, যা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়।  ঘৃণা এবং হিংসা থেকে কোন মহানপন্থার জন্ম হতে পারে না।  ভারতের মাটিতে শ্রীচৈতন্যই প্রকৃত বামপন্থী আইকন -যিনি অহিংস পথেই কৃষকদের সাথে কীর্তন করতে করতে ট্যাক্স বিদ্রোহ করেছেন। অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে লাঠি না খোল করতাল নিয়ে সবাইকে নিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। সেখানে হিংসা না, ভালোবাসার পথেই আন্দোলন হয়েছে -প্রেমের পথেও গণতান্ত্রিক  রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়। প্রতিটা ধর্মের উত্থানই প্রতিবাদি বামপন্থী আন্দোলন যা সময়ের গর্ভে দক্ষিনপন্থা হয়ে ওঠে। 

 লেনিনের মতন ফ্রড বিশ্বাসঘাতকে ছেড়ে ভারতের বামপন্থী উপাদানগুলিকে না চিনলে, ভারতের বামেরা হারতেই থাকবে। ভারতের বাম আন্দোলন দুর্বল হতেই থাকবে।

[১] 
https://www.youtube.com/watch?v=7nUNNSMQwTc







 





       

       







  

Sunday, March 4, 2018

সফিদার কথা না শুনলে ভারতের বামেদের ভবিষ্যত শুন্য

সেটা ২০০৭-৮ সাল। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে উত্তাল বাংলার রাজনীতি। তখনো সিপিএম ক্ষমতায়, কিন্ত ভিত নড়ছে। সেই সময় স্যোশাল মিডিয়াতে সিপিএমের দুটো দল- একট শোকেস, অন্যটা গোডাউন। আপনি খুভ ভদ্রভাবে সিপিএমের সমালোচনা করলেও গোডাউনের হার্মাদ পার্টি আপনাকে অকথ্য গালাগাল দিয়ে যেত। তারপরে সিপিএমের শোকেসের যুবনেতৃবৃন্দ আপনার চরিত্র হননে নেমে যেত- যাদের অধিকাংশই প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সেক্টর ফাইভে চাকরি করা আই টি কর্মী। সিপিএমকে নিয়ে যুক্তি তর্ক তথ্যানুসন্ধানের কোন যায়গা তখন স্যোশাল মিডিয়াতে ছিল না। কেউ সিপিমের বিরুদ্ধে যুক্তপূর্ন উপদেশপূর্ন কিছু লিখলেও তাকে খিস্তি মার- এই ছিল সিপিএম। এগুলো বাস্তব, অর্কুটের পাতায় পাতায় নথিবদ্ধ। পলিটিক্স ইন ওয়েস্টবেঙ্গল নামে একটা গ্রুপে সব থেকে বেশী রাজনৈতিক আলোচনার যায়গা ছিল- কিন্ত সেখানেও সিপিএম মানে আত্ম্রম্ভিকতায় ভোলা হার্মাদ বাহিনী-যুক্তির স্থান নেই-শুধুই গালি দিতে নামত।

ওই সময় সফিদা, মানে সিপিএম থেকে বহিস্কৃত এমপি সইফুদ্দিন চৌধুরীর সাথে অনলাইনে পরিচয় হয়। সফিদা খুবই পন্ডিত, ভদ্র এবং অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন। ওমন ভদ্র এবং পন্ডিত লোক সিপিএমে টিকবেন না, সেটা বুঝতে পিইচডির দরকার হয় না।

সফিদার সাথে অনেক কথা হত-উনার কাছ থেকে সিপিএমের আভ্যন্তরীন কোন্দল নিয়েও অনেক কিছু জেনেছিলাম। সোভিয়েতের পতনের পরে ১৯৯৩ সাল থেকেই সইফুদ্দিন চৌধুরী চাইছিলেন সিপিএম নতুন ধরনের বামপন্থা নিয়ে ভাবুক। কারন লেনিনবাদ বহুদিন স্বর্গে গেছে। অথচ এই বিমান বুদ্ধ অনিল বিশ্বাসরা তখনও বালক ব্রহ্মচারীর সন্তান দলের মতন লেনিনের মৃতদেহকে হিমঘরে রেখে নাম সংকীর্তন গাইছেন-তাদের লেনিনবাবা আবার বেঁচে উঠবেন। প্রকাশ কারাত, সিতারাম ইয়েচুরীরা তখন যুব নেতা। গুন্ডা-ভোট্মেশিনারী মিশিয়ে একটা রেজিমেন্ট তৈরী করে তখনো ভোটে জিতে আসা পার্টি ভাবেই নি জনগণ কি চাইছে-আদৌ এই ভাবে চললে পার্টি বেশীদিন চলবে কি না। সফিদা ভাবছিলেন। এবং তার ভাবনার কথাগুলো নিয়ে প্রকাশ কারাত ইয়েচুরির সাথে অনেক কথাও বলেছেন। কিন্ত পার্টির অভ্যন্তরে কেউ তাকে পাত্তা দেয় নি। দরকার ছিল না-সবাই ভেবে বসেছিল পশ্চিম বঙ্গের লোকজন সিপিএমকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ইজারা দিয়েছে। ক্ষমতা লোভে অন্ধ হলে, সব মানুষকেই রাবণ রোগে ধরে।

সফিদা আমাকে বলেছিলেন, সিপিএম যেদিন পশ্চিম বঙ্গে গদি হারাবে, তার দশ বছরের মধ্যে পার্টিটা সাইনবোর্ড হবে। সেটা হয়েই যেত-কিন্ত মমতা ব্যানার্জি সম্ভবত তা হতে দেবেন না। কারন বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএমের ১৪% বর্তমান ভোট ব্যঙ্ক ধরে রাখা জরুরী। সেতা যাতে হয় তার জন্য সিপিএমকে অক্সিজেন দেওয়ার যাবতীয় চেষ্টা উনি করবেন।

সব গণতন্ত্রেই বামেদের ১০-২৫% ভোট থাকে। ওটা ধনতান্ত্রিক সমাজের সেফটি ভাল্ভ। ২৫%+ এর বেশী হয়েগেলে সেই রাজ্যে ধর্মঘট, কর্মহীনতায় অর্থনীতিতে লালবাতি জ্বলবে। যা পশ্চিম বঙ্গের ৩৪ বছরের শাসনের লেগাসি। ১০-২৫% বামভোট থাকা ভাল-তাতে শ্রমিক, জনবিরোধি আইনের বিরুদ্ধে কিছু সেফটি ভালভ থাকবে। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে এই সিপিএমের নেতৃত্ব এতই অপদার্থ, জনসাধারনের জন্য দরকারি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ। একটা উদাহরন দিই। সিপিএম স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ কেন হচ্ছে না তাই নিয়ে আন্দোলন করছে। অথচ আজকের খবর কোলকাতায় ৭৫ টা সরকারি স্কুল বন্ধ হচ্ছে কারন ছাত্র নেই। কেন নেই? কারন সরকারি স্কুলে পড়াশোনা হয় না। শিক্ষকদের জন্য সিপিএম আন্দোলন করেছে, কিন্ত শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার জন্য কোনদিন কিস্যু করে নি। কারন তাদের রাজনীতিটাই ছিল মধ্যবিত্তশ্রেনীকে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। "প্রোডাক্টিভিটির উন্নতি" নিয়ে তাদের কোনদিন কোথাও মাথাব্যাথা নেই। অথচ সেটাই মার্ক্সবাদের ফান্ডামেন্টাল! এরা মার্ক্স এবং মাছভাত এক করে দিয়েছে!

ফলে ১৪% ভোট শেয়ার ও সিপিএম ধরে রাখতে পারবে কি না সন্দেহ। এসবের ওপরে আছে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন সংখ্যালঘু ভোট টানার জন্য প্যালেস্টাইন বন্দনা। এদিকে বাংলাদেশের হিন্দুদের দুরাবস্থা দেখিয়ে যে বাঙালী হিন্দুভোটে বিজেপি বিরাট থাবা বসিয়েছে, সেদিকে লক্ষ্যই নেই। ইনফ্যাক্ট পৃথিবীর যেকোন গণতন্ত্রে যদি কোন বাম পার্টির ভোট ১০% এর নীচে নেমে আসে, সেই দেশের বামপার্টির নেতারা যে অপদার্থ সেই নিয়ে সন্দেহ থাকে না। কিছু না করে যদি শুধু জনসাধারনের দুর্দশা নিয়েই এরা বলতে থাকে, তাহলেও ১৫-২০% ভোট পৃথিবির অধিকাংশ বামদলই পায়। কিন্ত এরা পাবে না। কারন দুই জ্ঞানপাপী মূর্খ এদের নেতা। ফলে ত্রিপুরাও গেল। আর ফিরবে না-৪৫%, ১৫% হতে ৫-১০ বছর লাগবে। পশ্চিম বঙ্গ সাক্ষী।

অথচ মাঠ ছিল ফাঁকা। কংগ্রেস বিজেপি দুটো দলের বিরুদ্ধেই জনগণের অসংখ্য অশন্তোষ। কিন্ত সেই ঝোল বামঘরে তুলতে হলে বিজেপির হিন্দুত্বের ন্যারেটিভে থাবা বসাতে হবে। সেটাও আমার মতে খুবই সহজ কাজ। দরকার দুটো- এক ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং পরিস্কার অবস্থান, দুই মার্ক্স ছাড়িয়া শ্রী চৈতন্যের সাম্যবাদকে গ্রহন। যেমনটা ইভো মরালেস করেছেন বলিভিয়াতে -মার্ক্সের সাম্যবাদ ছেড়ে যীশুর সাম্যবাদ এনে সাধারন লোকেদের সাথে মিশে গেছেন। সিপিএম, বিজেপির হিন্দুত্বের কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরীর চেষ্টাই করল না। অদ্দুর বুদ্ধি বা শিক্ষা নাই। কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরী করতে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধেই চলে গেল পার্টি টা। যা আরো বোকা বোকা। জাতিভেদের বিরুদ্ধে বলে কি হবে? বর্নবাদ বিরোধি ম্যাসেজ মহাভারতে আরো কড়া করে বলাআছে আছে এবং আর এস এস জাতিভেদের বিরুদ্ধেই। কৃষ্ণলীলার বিরুদ্ধে বলবেন? হিন্দু কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বলবেন? কিভাবে বলবেন? হিন্দু ধর্মের ছটা মূল দর্শনের মধ্যে পাঁচটাই নাস্তিক্যদর্শন। হিন্দু দর্শনেই বেদ এবং বেদ বিরোধি দুই অবস্থানই আছে। আর এস এসের প্রতিষ্ঠাতাও নাস্তিক হিন্দু ধর্মের লোক। বর্তমানে বাঙালী নাস্তিকদের অধিকাংশ বিজেপির ছুপা সাপোর্টার। হিন্দু ধর্ম নিয়ে ডিটেলসে না জেনে ওপর ওপর ফালতু দুচার কথা শুনিয়ে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরী করা যায় না।

কিন্ত এসব কথা বলে লাভ নেই। ওপরে এসব কিছুই সফিদা অনেকদিন আগে বলে গেছেন। আজকে ত্রিপুরা, কালকে কেরালাও ফুটবে। সিপিএম তথা ভারতের বামেদের বাঁচার পথ একটাই। সফিদা ১৯৯১-৯৫, বিভিন্ন পার্টি দলিলে যেসব বিতর্ক সামনে আনতে চেয়েছিলেন, সেগুলো পড়ুন। ভাল করে বুঝুন। সেটা এদ্দিন করলে, কংগ্রেসের হেগো পোঁদ পরিস্কার করবেন , না করবেন না-তাই নিয়ে বোকা বোকা বিতর্ক করে পার্টির ৯৫% শক্তি কেউ ক্ষয় করে না। জেনিউ এর সব নাবালকরা যদ্দিন পার্টির মাথায়, কিস্যু হবে না।

শিক্ষিত মুসলমানদের মৌলবাদ বিরোধি অবস্থানই একমাত্র পারে বিজেপিকে আটকাতে

ত্রিপুরায় বিজেপির বিজয় নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানরা হতাশ। কিছুটা শঙ্কায় ও হয়ত যে কোলকাতাও গেরুওয়া হওয়ার অপেক্ষায়।

এই প্রসঙ্গে তৃনমূলের আই টি সেলের শ্রীপর্না একটি মুল্যবান কথা লিখেছেন। যে হিন্দুত্ববাদের উত্থানকে ঠেকানোর ক্ষমতা এবং জীয়নকাঠি একমাত্র শিক্ষিত মুসলমানদের হাতে। তারা তাদের সম্প্রদায়ের মৌলবাদিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন না বলেই আজকে হিন্দুত্ববাদিদের সমর্থন হিন্দুদের মধ্যে এতটা বেড়েছে।

এর সাথে সাথেই শ্রীপর্নাকে হিন্দুত্ববাদের দালাল বলে গালাগাল দেওয়া করা শুরু করে কিছু তথাকথিত "সেকুলার" মুসলিম যুবক। খুব পরিস্কারভাবেই অবস্থা হতাশাজনক। কারন শিক্ষিত মুসলমানরা ভাবছে হিন্দুত্ববাদ স্বয়ংভূ- তাদের সম্প্রদায়ের মৌলবাদ নেই!

একই অভিজ্ঞতা হল জিম নওয়াজ বলে এক পশ্চিম বঙ্গীয় শিক্ষিত মুসলমানের ওয়ালে। সেখানেও বিজেপির বিজয়ে তারা যাবতীয় সেকুলার পার্টিকে দোষারোপ করছে। আমি সেখানে শ্রীপর্নার কথাটাই লিখলাম-আপনারা নিজেদের ধর্মের উগ্র মৌলবাদিদের না ঠেকাতে পারলে, পশ্চিম বঙ্গের সব হিন্দু হিন্দুত্ববাদি হয়ে যাবে। কোন স্ট্রাটেজি, কোন পার্টিই দীর্ঘদিন ধরে এদের আটকাতে পারবে না। সেখানেও শ্রীপর্নার অভিজ্ঞতা হল। জীম নওয়াজ, তিন বছর আগের বিতর্কের স্ক্রীনশটের সূত্র ধরে আমাকে হিন্দুত্ববাদের দালাল ইসলামোফোব বলে গালাগাল দেওয়া শুরু করল। সে ত মানতেই চাইছে না যে হিন্দুত্ববাদ কংগ্রেসের সিপিএমের ইসলামিক মৌলবাদকে তোষন করার ফসল। অভিন্ন দেওয়ানি আইন, শাহবানু মামলা-যতই রেফারেন্স দিন, শিক্ষিত মুসলমান সমাজ এখনো প্রস্তুত নেই এটা মেনে নিতে, তাদের সমাজের আধুনিক সংস্কার দরকার।

সুতরাং হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঠেকাবে কে?

এর মধ্যেই খবর বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক, জাফর ইকবাল মৌলবাদিদের হাতে ছুরিকাহত। এর পরেও এরা মানবে না ইসলামিক মৌলবাদ বলে কিছু আছে! তাহলে হিন্দু মুসলমানরা একটা সেকুলার ছাতার তলায় আসবে কি করে? সিপিএম তৃনমূলের সমর্থনকারি মুসলমান সমাজের একটা বড় অংশ ত প্রকৃত সেকুলার না-তারা হিন্দুত্ববাদের উল্টো পিঠ।

ভারতের মুসলমান সমাজ যদি এই ভাবে ডিনাইয়েল, সম্পূর্ন অস্বীকার করতে থাকেন তাদের সম্প্রদায়ের সংস্কার প্রয়োজন নেই, তাদের মৌলবাদি শক্তি দমন করার দায় তাদের নেই, তাদের মধ্যে গজানো বিশাক্ত সাপগুলোকে ধ্বংস করার দায় তাদের নেই- তাহলে বিজেপি উত্থান কে ঠেকাবে?

এর সাথে সাথেই বামপন্থীদের সেই ভাঙা কাঁসর- আগামী দিনে আরো কঠিন লড়াই!!

মৌলবাদটা সমাজে এলার্জির মতন। এলার্জি একটা রিয়াকশন। মুসলিম মৌলবাদ ও সব দেশে বিভিন্ন বিভিন্ন রিয়াকশন। হিন্দু মৌলবাদ খুব পরিস্কার ভাবেই ইসলামি মৌলবাদের বারবাড়ন্তের বিরুদ্ধে রিয়াকশন। ইসলামিক মৌলবাদের জন্য দেশভাগ এবং দাঙ্গা তারা দেখেছে, দেখছে। শঙ্কায় আছে। এটা এখন ঘরে মধ্যে থাকা ন্যারেটিভ না, ভারতের সব থেকে বড় পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ। এটাকে আটকানোর ক্ষমতা সিপিম কংগ্রেস তৃনমূলের নেই। এটাকে আটকাতে পারে একমাত্র শিক্ষিত মুসলমানরাই।

বিজেপিকে আটকাতে পারে একমাত্র শিক্ষিত মুসলমানরাই । যদি তারা সৌদি রাজপুত্র মহম্মদ বিন সালমানের মতন ভারতে কোন নেতা পায়, যে মুসলমান সম্প্রদায়কে এক বিংশ শতাব্দির উপযুক্ত হওয়া স্বপ্ন দেখাবে। দেখাবে তারা সংস্কারে ইচ্ছুক। কিন্ত তিন তালাক বিল থেকে সর্বত্রউ উলটো চোখে পড়ছে।

Friday, March 2, 2018

ট্রাম্প এবং মোদির সাপোর্ট বেস- পোস্টমর্ডানিস্ট প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে পুরুষ বিদ্রোহ ?

১৯৭০ সাল থেকেই ফ্রান্সে কমিনিউস্ট বুদ্ধিজীবিরা ব্রাত্য। কারন ততদিনে সোভিয়েত ইউনিয়ানের দানবীয় রূপ সবার সামনে কদর্য্য ভাবে উলঙ্গ। তখন কমিনিউজিমের জয়গান করলে লোকে বলত উন্মাদ-মোদ্দা কথা স্রিরিয়াসলি কেউ নিত না। ফলে সার্তের মতন মার্ক্সবাদি দিকপাল ও সোভিয়েতের নিন্দায় মুখর হন।

তাছাড়া ওই শ্রমিক বিপ্লবের ন্যারেটিভ ও খাচ্ছিল না। কারন পাশ্চাত্যে শ্রমিকরা তখন গাড়ি বাড়ি হাঁকিয়ে মধ্যবিত্ত-কারুর দায় পরে নি আরামের জীবন ছেড়ে গুলাগের দাস শ্রমিক হওয়ার।

কিন্ত বুদ্ধিজীবি হওয়ার জ্বালা এই যে, বুদ্ধি হইতে উদ্ভুত লেখাগুলি মার্কেটে না কাটলে পত্রিকাওয়ালা বা পাবলিশার্সও টাকা দেবে না।

ঠিক এই সময় মার্ক্সবাদি বুদ্ধিজীবিরা দেখলেন বামপন্থার মার্কেট টেকাতে নতুন কিছু আনতে হবে। মানে পুরাতন মদ যাতে নতুন বোতলে ঢোকানো যায়। বামপন্থার মদ হচ্ছে একটাই। সেটা হচ্ছে শ্রমিক-কৃষক শ্রেনীর ওপর অত্যাচার, অবিচার। কিন্ত বাজারে সেটা চলছে না।

কিন্ত বাজারে খাওয়াতে গেলে সেই অত্যাচার, অবিচারের গল্প ছাড়া কাটবে না। "এমপ্যাথি" মানে " পাঠকের সহানুভূতি" না উথলালে লেখা কাটে না। উনারা আবিস্কার করলেন-আচ্ছা, শ্রমিকরা অত্যাচারিত না হয় নাই হল। তাই বলে কি সমাজে অত্যাচার অবিচার নাই? মহিলারা পুরুষদের হাতে, কালোরা সাদাদের হাতে, সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুর হাতে অত্যাচারিত হয়েই চলেছে।

অর্থাৎ সহানুভূতির নতুন এঙ্গল আবিস্কার হল।

সেই পরিস্থিতিতে মার্ক্সিস্টদের নতুন বোতলের নাম হল -পোষ্ট মর্ডানিজম। বলা হল দেখ বাপু- যেদিকে তাকাও দেখিবে পাওয়ার স্ট্রাকচারের দৌলতে কেউ না কেউ কারুর ওপর অত্যাচার করেই চলেছে। তাহাই ইজম। বর্তমানে পাশ্চাত্যের বামপন্থা সেই খিচুরি- সব কিছুই সেই এমপ্যাথি ভিত্তিক হোমিওপ্যাথি।

এদ্দিন অব্দি ছিল ধনীরা চুরি ডাকাতি করে বড়লোক। এবার পোষ্টমডার্নিজমের নতুন তত্ত্বে- যার হাতে ক্ষমতা-সে ছলে বলে কৌশলে হাতিয়েছে। মানে কোম্পানীর যে সিইও-তার যোগ্যতা নেই। ডাকাতি করতে পারবে বলে বোর্ড তাকে বসিয়েছে। পুরুষের নারীর ওপর অত্যাচারের কারন ও সেই সামাজিক ক্ষমতায়ান। তা বায়োলজিক্যাল বলে মানতে নারাজ পোস্টমর্ডানিস্টরা।

পোষ্টমর্ডানিজমের দৌলতে সব থেকে বেশী ক্ষতি হয়েছে সক্ষম পুরুষদের যারা ইকনমির পিলার এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু। আজকে ট্রাম্পের বা মোদির সমর্থক কারা ? যেসব সক্ষম পুরুষ এই পোস্ট মর্ডান ন্যারেটিভের স্টিমরোলারের ( সেটা ভারতে এস সি এস টি দের রিজার্ভেশন, আমেরিকাতে বলে এফার্মেটিভ একশন, কখনো বা ফেমিনিজিম) চাকায় প্রতিদিন পিস্টোচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে আমাকে এঙরি হোয়াইট মেল মানে যাকে বলে রাগী শেতাঙ্গ পুরুষদের সাথেই বেশী সময় কাটাতে হয়েছে। এদের অনেকেই খুব ট্যালেন্টেড-কিন্ত যেহেতু আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের জন্য কোন রিজার্ভেশন নেই -কিন্ত মেয়েদের জন্য আছে, কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আছে -সেহেতু এরা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় নি। আবার চাকরির ক্ষেত্রে একজন হোয়াইট মেলকে ফায়ার করতে কিস্যু ভাবতে হয় না-কিন্ত কোন মহিলা বা কৃষ্ণাঙ্গকে ফায়ার করার আগে কোম্পানীকে অনেক নথি তথ্য তৈরী করতে হয়। ফলে আমেরিকার এই সাদা চামরার পুরুষদের মধ্যে রিজার্ভেশনের বিরুদ্ধে এক বিরাট রাগ। ঠিক যেমনই ভারতে জেনারেল কাস্টের লোকজনের মধ্যে রিজার্ভেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি। এরাই কিন্ত ট্রাম্প এবং মোদির বেস। আপনি বলতে পারেন না এদের ক্ষোভের কারন নেই।

সত্যি কথা বলতে কি এই পোস্টমর্ডান ন্যারেটিভের চাপে সক্ষম পুরুষদের ঘরে বাইরে করুন সঙ্গীন দশা। ঘরে ফেমিনিজম, কর্মক্ষেত্রে রিজার্ভেশনের ফেবারিজম।

ঘরের মহিলাদের প্রাধান্য সর্বদাই ছিল। কিন্ত সেটা সংসার টেকানোর জন্য। এখন ঘরে ঘরে পুরুষ ত্রিফলা চাপে ফালফাল।

এক - পুরুষ কেন বলিউডের খানদের মতন রোম্যান্টিক না-নাচতে না পারলেও নিদেন পক্ষে কেন মিস্টি মিস্টি প্রেম করতে পারে না? এতেব আমার লাইফটাই ফেইল্ড-কারন র‍্যোমান্স নেই।
দুই- ভুল করলেও বকতে পারবেন না। কারন বাবা-মায়ের আতুপুতু ননীর দুলালী। বকলেই এরা যাবে গলে। তখন মনে হবে কেন বাবা-কি কুক্ষনে বকতে গেছিলাম, ভুল ধরাতে গেছিলাম!

তিন --তাকেও স্বামীর সমান কেরিয়ারের মই বেয়ে উঠতে হবে। এই চিন্তায় অসুবিধা নেই। কিন্ত বাস্তবে সন্তানের জন্মের পরে কেরিয়ারে ব্রেইক হবেই। তখন অধিকাংশ মেয়েই সেটা না মানতে পেরে মানসিক রুগী হয়ে ওঠে।

এব কিছুই ফেমিনিস্ট পোস্টমর্ডান চিন্তার ফসল। পোগতিশীলতার দায়। ভুগছে সক্ষম পুরুষ। নারীও কিন্ত সুখে নেই।

ঘরে এবং বাইরে এই ধরনের চাপ থেকে মুক্তি নেই বলেই মোদি এবং ট্রাম্পের সাপোর্টবেসের বড় অংশই সংখ্যাগুরু পুরুষ।

Thursday, March 1, 2018

সমস্ত ইসলামিক সমাজেই গৃহযুদ্ধ কেন?

মিডলইস্ট পৃথিবীর আর্মপিট! সব গন্ডোগল ওখানে। ইয়েমেন, সিরিয়া,ইরাক- গৃহযুদ্ধের লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে। আমেরিকা এবং রাশিয়া ওখানে অস্ত্র বেচে ভাল লাভ করছে।

কিন্ত সমস্যাটা এখানেই। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে শুধুই কি সামাজ্যবাদি শক্তির দোষ দিলেই পোস্টমর্টেম শেষ? এই প্রশ্ন কেন ওঠে না যেখানেই ইসলামিক দেশ, সেখানেই কেন গৃহযুদ্ধ, মৃত্যু এবং বিভীষিকা? কেন গণতন্ত্র নেই?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানী এবং জাপান মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই আমেরিকান সাহায্য নিয়ে আবার গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে প্রথম বিশ্বে ফিরে আসে। কিন্ত আফগানিস্থানে ওর থেকে বেশী সাহায্য নিয়েও কিস্যু হয় না। ইরাকেও কিস্যু হয় না। কেন? ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থার ডি এন এতে দোষটা কোথায়?

পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তি কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্ম না- সেটা হচ্ছে গ্রীক এবং রোমান সভ্যতা। ইনফ্যাক্ট ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মতন গাধার ঘাড়ে ছিল মধ্যযুগে যখন ইউরোপিয় সভ্যতা মানে ছিল খ্রীষ্ঠান সভ্যতা। মানে অন্ধকারের যুগ। আজকের উন্নত পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তি কিন্ত প্রাচীন ক্ল্যাসিক্যাল গ্রীসের নগরদর্শন,যা বেশ কিছুদিন রোমান সভ্যতাতেও টিকে ছিল।

কিসের জন্য পাশ্চাত্য সভ্যতা, যা গ্রীস এবং রোমান সভ্যতা থেকে উদ্ভু- তা উন্নত জীবনযাত্রার জন্ম দিতে পেরেছে? ইসলামিক বা খ্রীষ্ঠান সভ্যতা, বা কমিউনিজম যা দিতে অক্ষম ? সেই দর্শনের গভীরে যাওয়া দরকার। গ্রীস এবং রোমান সভ্যতার ভিত্তি ছিল স্টয়কিজম ( Stoicism) ,

স্টয়কিজমের অনেক ধারা বর্তমান- যার মোদ্দা কথা সমাজ হবে জ্ঞান এবং বুদ্ধি নির্ভর। ধন সম্পতি, স্বাস্থ্য-সব কিছুই দরকার-কিন্ত সেটাও ওই বেসিক সূত্র মেনে যে ওসব কিছুই দরকার উন্নত বুদ্ধি চিন্তার চর্চায়। স্টয়কিজমের সাথে ইসলাম মার্ক্সবাদি বা খীষ্ঠান চিন্তার পার্থক্য হচ্ছে- স্টয়কিজম কোন গ্রান্ড ন্যারেটিভে বিশ্বাস করে না। যেমন ইসলামের ক্ষেত্রে "গ্রান্ড ন্যারেটিভ" হচ্ছে ইসলামিক জাস্টিস- যা দুনিয়াটাকে বিশ্বাসী অবিশ্বাসীতে ভাঙে। এবং ইসলামিক দেশের রাজনীতি কখনোই জ্ঞান ভিত্তিক বা ফ্যাক্ট ভিত্তিক হতে পারে না- তা্রা ওই ইসলামিক ভাবাদর্শের গ্রান্ড ন্যারেটিভেই পরিচালিত হয়। যা মধ্যযুগীয়। এটা কমিনিউস্টদের জন্যও সত্য। তারা সর্বদাই ফ্যাক্ট এবং জ্ঞান দুটোকেই বিকৃত করে, তাদের গ্রান্ড ন্যারেটিভ- শোষক এবং শোষিত- এই স্কিমাতে ফিট করতে।

ইসলামিক বা কমিনিউস্ট চিন্তার সমস্যা এই যে, তা তাদের ফলোয়ারদের ভাবতে শেখায় তারাই ভিক্টিম- তারা শোষিত অচ্যাচারিত। হয়ত কিছুটা ঠিক-কিন্ত তার অধিকাংশটাই না। বাস্তব হচ্ছে স্টয়িকিজমের লেন্সে ভাবলে "ফ্যাক্ট" হচ্ছে সব জীবনই সংগ্রাম। সেখানে শোষন নিপীড়ন যেমন আছে, তেমনই নিজের উদ্যোগে পরিশ্রমে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার রাস্তাও আছে। মুশকিল হচ্ছে মানুষ কমিউনিজম বা ইসলামে স্পেলে এসে গেলে, নিজের উন্নতি নিয়ে না ভেবে দল বেঁধে গুন্ডাগর্দি করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলেই মন দেয় বেশী ( পড়ুন বৈপ্লবিক আন্দোলন, প্রতিবাদি আন্দোলন ইত্যাদি )। কারন ওই " অত্যাচারিত" ন্যারেটিভের বাইরে তারা ভাবতেই পারে না। সম্পদ তৈরী করার চেয়ে গুন্ডাগর্দি করে সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়াতেই আগ্রহ বেশী থাকে।

আজ দেশভাগের পেছনেও কিন্ত সেই ইসলামি ন্যারেটিভ। বৃটিশ আমলে বাংলাদেশের মুসলমান প্রজারা অত্যাচারিত ছিল সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। ঠিক সেই কারনেই কৃষক প্রজা পার্টির সৃষ্টি- এবং অতি শিঘ্রই তা মুসলীমলীগের তিমির তলপেটে ইসলামিক ন্যারেটিভে গলিয়ে যায়। যার ফল এই যে মুসলিমরা হিন্দুদের হাতে অত্যাচারিত-তার ন্যারেটিভেই পূর্বপাকিস্তানের সৃষ্টি। সুতরাং সব গৃহযুদ্ধের পেছনে ( দেশভাগের পেছনেও) "আমরা অত্যাচারিত" এই ইসলামি ন্যারেটিভের ভূমিকাটাই মুখ্য। সেটা ভুল না ঠিক- সেই বিচারে আমি যাচ্ছি না। কারন স্টয়িকিজমের দৃষ্টিতে অমন ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট সিদ্ধান্ত সম্ভব না।

সিরিয়া ইরাক ইয়েমেন-সবর্ত্রই সেই ন্যারেটিভের খেলা। ওখানে শিয়া সুন্নী। ক্ষমতা দখল করে বসে আছে শিয়া সংখ্যালঘুরা-যার বেশী শিক্ষিত এবং উন্নত। ফলে সংখ্যাগুরু ধর্মান্ধ সুন্নীদের মধ্যে ওই অত্যাচারিত গ্রান্ড ন্যারেটিভ খাওয়ানো খুব সহজ। ফলে আইসিসি এবং গৃহযুদ্ধ। পোয়াবারো আমেরিকা রাশিয়ার অস্ত্র ব্যবসায়।

কোনটা ভাল খারাপ তার মধ্যে যাচ্ছি না। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে রাজনীতি যদি জ্ঞান, বুদ্ধি এবং ফ্যক্ট দ্বারা পরিচালিত না হয়ে গ্রান্ড ন্যারেটিভ দ্বারা পরিচালিত হয় ( ইসলাম, কমিনিউজম, হিন্দুত্ব ইত্যাদি) তাহলে ধরে রাখুন গৃহযুদ্ধ আসন্ন। ঘরে আপনার আগুন লাগবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না।