Tuesday, March 31, 2015

ইন্টারনেট যুগে ধর্মান্ধ

সেটা ২০০৫ সাল। মুক্তমনা ফোরামে আরাম করে ধর্মর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে অন্নগ্রহণ করতাম আমরা। বেশীরভাগ প্রবাসী লেখক।  আমি অবশ্য ধর্মকে ইতিহাস এবং সমাজবিজ্ঞান দিয়েই বোঝার চেষ্টা করেছি সেই যুগ থেকেই। তখনই মনে হয়েছিল, নেহাত বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্পিড খারাপ। নেট সবার কাছে পৌঁছায় নি। যেদিন সবার কাছে ওয়েব পৌছাবে, জানি না কি হবে। বুঝলাম খুব ভুল ভাবি নি সেদিন।

          ভারত এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মোবাইল সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছে ইন্টারনেট সবার কাছে পৌঁছে দিতে। ইনফ্যাক্ট  স্মার্টফোন সস্তা হয়ে আসার কারনেই ভারত এবং বাংলাদেশের এক বৃহৎ অংশ সবার প্রথমে ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হল। বিশেষত গ্রামের দিকে।

   এর প্রভাব অর্থনীতি এবং সামাজিক দিয়ে অনেক সুদূর প্রসারী।  প্রথমত মেইন স্ট্রিইম মিডিয়াগুলি দিয়ে যেভাবে জনগণকে প্রভাবিত করা যেত আগে গুলিতাপ্পা গপ্পো দিয়ে-সেটা করা যাচ্ছে না । ধর্ম বা রূপকথার চরিত্রগুলোকে যেভাবে "প্রোটেকশন" দিত মেইন স্ট্রিম মিডিয়া সেটা আর সম্ভব না ।  ফেসবুকের মাধ্যমে সহজে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন এক্টিভিস্টরা। ফলে অনলাইন এক্টিভিজম অনেক বেড়েছে। গণতন্র অনেক ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ হচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো হবে।

  এবার ভাবা যাক কেন মেরে ফেলা হচ্ছে ওয়াশিকুর বাবু বা অভিজিত রায়কে?  এটা কি শুধুই ধর্মান্ধতা? 

  আমি ধর্মর আলাদা কোন অস্তিত্ব স্বীকার করি না । ধর্ম আমার কাছে রাজনীতি এবং সমাজের জন্য দরকারী, অদরকারী মিথ। এদের লেখালেখিতে কিসের, কাদের অসুবিধা হচ্ছে?

নিশ্চিতভাবেই তাদের যাদের ধর্ম বেচে খেতে হয়, ক্ষমতা দখল করতে হয়। ক্ষমতা থেকে আসে টাকা।  লোকের ধর্ম বিশ্বাস চলে গেলে হুজুরেরা খাবে কি? তাদের লোকে মানবে কেন ? রাজনীতিবিদরাই বা লুটপাঠ করবেন কিভাবে?

ধর্মান্ধরা হত্যা করছে এটা সরলীকরন। যেসব হার্মাদরা তীনুদের হত্যা করত আগে তারা কি কমিনিউস্ট ধর্মান্ধ ছিল ? না একটাও খুন হয়েছে আদর্শিক কারনে? খুঁজলে দেখা যাবে প্রতিটা খুন জমি আর টাকার লড়াই। আজকে তীনুরা কি অন্যকোন মহান কারনে সিপিএমের লোকেদের হত্যা করছে? মোটেও তা না । প্রতিটা হত্যার কারন বস্তুবাদি।

 ধর্মান্ধ, পার্টি-অন্ধ-এসব না বানালে কিছু লোক ক্ষমতা দখল করে খাবে কি করে?

 এখন ইন্টারনেট এক্টিভিস্টরা বাধ সাজছে। মহম্মদ, লেনিন স্টালিন গান্ধী- কারুর সাজানো রূপকথা চলছে না । নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ইত্যাদি চরিত্রের মধ্যে যে কত দ্বিচারিতা ছিল-ইন্টারনেট না থাকলে কি করে জানতাম ?  তার জন্য লাইব্রেরী ইত্যাদি ছুটতে হত। এখন একটা গুগল ক্লিকেই বেড়িয়ে আসছে মহম্মদ বলে আদৌ কেও ছিল কি না সেটা ইসলাম ভাল না খারাপ, তার থেকেও অনেক বেশী মৌলিক প্রশ্ন।

 ধর্ম ভাল না খারাপ-এগুলো অবান্তর আলোচনা। আমি আগেও লিখেছি-আমাদের সবার ধর্ম আছে। আমরা সবাই ধার্মিক। ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না করি-একটা সেট অব প্রিন্সিপালে বিশ্বাস রাখতেই হয়। আসল ক্ষীর হচ্ছে রাজনীতিতে। দেখতে হবে রাজনীতি কিভাবে মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ব্যবহার করছে।  ইসলাম বা গীতার ধর্ম আসলেই রাজনীতি। ক্ষমতাদখলের রাজনীতি। সমস্যা হচ্ছে সেইসব ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি  নিয়ে যা মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে ক্ষমতায় যেতে চাইছে।

 ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে পারলে-এটা সমস্যা হত না । কিন্ত সব ধর্মই আসলে রাজনৈতিক মতবাদ। প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে ইতিহাসে এদের উদ্ভব। সুতরাং ধর্মকে রাজনীতি থেকে কোন দিন আলাদা করা যাবে না ।উপায় একটাই। লোককে আরো উন্নত ধর্ম  বা জীবন মার্গ দেখানো। যা যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
 

Friday, March 20, 2015

সমকামিতা ও প্রবীর ঘোষ

সমকামিতা নিয়ে যুক্তিবাদি বনাম লিব্যারালদের যুদ্ধ এখন একদম সামনাসামনি। এইদিন আসবে সেটা জানতাম। কারন আমাদের লাইফ স্টাইল এবং যৌন নির্বাচনের অধিকাংশ কারন এখনো আমাদের জানা নেই অথবা এই জাতীয় প্রশ্নগুলি বিজ্ঞানের গণ্ডীর বাইরে কারন পপারিয়ান ফলসিফিকেশনে এসব প্রশ্নের টেস্টেবিলিটি নেই । গত দুই দশকে সমকামিতার ওপর যত বৈজ্ঞানিক গবেষনা হয়েছে, তার অধিকাংশই আজ ভুল বলে প্রমানিত। কেও গে হয়ে জন্মায় না -আবার গে হওয়াটা রোগ ও না যে সারানো যাবে। ফলে যুক্তি, বিজ্ঞান দিয়ে সমকামিতা ভুল না ঠিক-এগুলো কোনদিন নির্নয় করা যাবে না । সমকামিতা স্বাভাবিক যৌনতা এই নিয়ে বিজ্ঞানে দ্বিমত নেই । সেই অব্দি ঠিক ছিল। কিন্ত স্বাভাবিক যৌনতা মানেই সমাজে গ্রহণযোগ্য-এই যুক্তি মানতে গেলে, বাকী অনেক কিছু যৌনতা যা স্বাভাবিক-যেমন পরকীয়া, পিডোফেলিয়া-ইত্যাদি সব কছুই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা বলে পরিচিত-সেসব কিছুও গ্রহণযোগ্য হয়। সুতরাং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা, তাই সমকামিতা গ্রহণযোগ্য, এই দৃষ্টিভংগী নিলে তা যুক্তিতে টিকবে না ।

 তাহলে কেন আমরা সমকামিতাকে সমাজে স্বাভাবিক যৌন আচরন বলে গ্রহণ করবো-আর পিডোফেলিয়া হবে পানিশেবল অফেন্স ?  খুব স্বাভাবিক ডিমার্কেশন হবে, এই ধরনের যৌন আচরন সমাজের জন্য ক্ষতিকর কি না । দুটো ব্যপা্রে ফ্যক্ট চেক করাই যায়। (১) সমকামিদের মধ্যে কি যৌন রোগ বেশী?  (২)  সমকামী দম্পতিরা কি সন্তান মানুষ করতে ব্যর্থ ?  (১) এবং (২) এর ক্ষেত্রে উত্তর কনক্লুসিভ না । সন্তান মানুষের ক্ষেত্রে লেসবিয়ান দম্পতিরা সবার থেকেই এগিয়ে। মোদ্দা কথা সমকামিতা সমাজে ক্ষতি করে এমন অনেক অভিযোগ, স্টাডি ইত্যাদি রক্ষণশীল গ্রুপ গুলো করেছে-কিন্ত কোনটার রেজাল্ট এখনো পর্যন্ত প্রশ্নাতীত ভাবে সঠিক না ।

ফলে যেহেতু সমকামিতা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং জৈববিজ্ঞানের গবেষনাগুলি প্রশ্নাতীত না এবং প্রায়শই কয়েক বছরের মধ্যে ভুল প্রমান হয়ে যাচ্ছে-বাস্তব সম্মত অবস্থান হচ্ছে, সমাজে সমকামিতাকে স্বীকার করে নেওয়া-কারন ঐতিহাসিক ভাবে সব দেশেই সমকামিতা ছিল। আরো সঠিক ভাবে বললে প্রাচীন ভারতীয়, গ্রীস বা রোমান সম্প্রদায় ছিল উভকামী।  রোমান মিলিটারী যুদ্ধে বাইরে থাকলে, সেনা ছাউনিতে  ছিল সমকামী। আবার যুদ্ধ শেষে বৌএর কাছে ফিরত দু  দশটা যৌন দাশদাশী নিয়ে। এমন কোন সভ্যতা জানা নেই যেখানে সমকামিতা বা উভকামীতা ছিল না । এসব নিয়ে প্যাগান সমাজে লোকে মাথা ঘামাত না । সমকামিতা যে অপরাধ যেটা মূলত এসেছে খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ইত্যাদি আব্রাহামিক ধর্মগুলির মধ্যে বিশুদ্ধ যৌনতার আইন আনতে। প্যাগান সংস্কৃতিতে সমকামিতাকে কখনোই অস্বাভাবিক আচরন বলে ধরাই হত না । হমোফোবিয়া, পরকীয়ার বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা, গণিকাদের সামাজিক অবস্থানের অবক্ষয়-এসব প্যাগানিজম খারাপ প্রমান করতে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদি খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামি সভ্যতার দান। রক্ষণশীলতা বলতে আজকে যেটা বোঝায় সেটা শ্রেফ জুডিও-খ্রীষ্ঠান-ইসলামিক সংস্কৃতি। প্যাগানদের থেকে আমরা ভাল , আমরা বিশুদ্ধ, প্যাগানিজম পাপ-ইত্যাদি প্রমান করতে প্যাগানদের যৌন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যতসব আইন এবং অপসংস্কার চালু হয়-তার মধ্যে হমোফোবিয়াও ছিল।

 সুতরাং সমকামিতার  পক্ষে এবং বিপক্ষে বিজ্ঞান ও যুক্তি ইনকনক্লুসিভ হলেও ইতিহাস খুব পরস্কার যে ইহা ছিল মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্ম - ধর্মীয় ক্লাব কালচার চালু করতে-এসব নিশিদ্ধ বলে ঘোষনা করে যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মোহনবাগানের সমর্থক তাই ইলিশ খাবে না এর বেশী কিছু না । 

 প্রবীর বাবুদের যুক্তিবাদি সংগঠনের অবস্থান নিয়ে আমার কিছু বলার নেই । উনার লেখাপত্র ছোটবেলায় পড়েছি। তখন ভালোই লাগত। বর্তমানে সমকামিতা, সাম্যবাদ, মার্ক্সবাদ ইত্যাদি নিয়ে উনার লেখা বা ভাষন শুনে মনে হয়েছে বিজ্ঞান এবং দর্শনে উনার প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও নেই । আর উনার চেল্যাদের সোশালমিডিয়াতে দেখে মনে হচ্ছে এরা হিন্দু হনু, ইসলামিক ছাগুদের তৃতীয় অবতার -একই রকম অশিক্ষিত এবং অসহিষ্ণু। এই ধরনের অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করার দ্বায়িত্ব কেও কেও কেন নিচ্ছে সেটাও পরিস্কার না । তবে ইতিহাস নির্মম । খারাপ লাগছে এইভেবে, ইতিহাসে প্রবীর বাবুর স্থান হবে জোকার নায়েকের সাথে-ভুলভাল অপবিজ্ঞানের প্রচারক হিসাবে।

  

Wednesday, March 18, 2015

ভারত বাংলাদেশ কোয়াটার ফাইনাল

আমেরিকাতে এসে একটা বড় জিনিস ছাড়তে হয়েছে-সেটা ক্রিকেট দেখা। স্ট্রিমিং এ খেলা দেখা অসুবিধা না -কিন্ত খেলার সময়টা বড় অসময়ে হয়। আমি এখনো বিশ্বকাপ দেখা শুরু করি নি-শুধু হাইলাইট দেখছি ।

 ভারত-বাংলাদেশের খেলাতে স্যোশাল মিডিয়াতে এত উত্তেজনা দেখে বুঝলাম-মূল সমস্যা এরা কোন দিন ক্রিকেট খেলে নি। আসলে দুই দেশেই মাঠ ফাট আর নেই । সব স্ক্রাইস্ক্রাপার এখন। খেলবে কোথায়?

 সেই কারনে, খেলার থেকে জাতীয়তা প্রদেশিকতাকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে লোকে। আমাদের সময় এসব ভাবতে পারতাম না । আমরা যারা ছোটবেলায় খেলতাম -কি কলেজ লেভেলেও খেলেছি- ভারতকে সমর্থন করতাম ঠিকই -কিন্ত আমরা যারা বোলার-আক্রামের বোলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ জিতল ত বটে। কিন্ত পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসে ৮-০ তে হারাল ভারতকে। ভারতের মাটিতে। মনে আছে ইডেন টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম বলেই গাভাসকার আউট। গাভাসকার ক দুজো বো মার্শাল   ০।   তখন আমরা ক্লাস ফাইভের বাচ্চা। মার্শাল হোল্ডিং রবার্টস গার্নারের জবাবে এক কপিল দেব। ভারতকে ইস্ত্রি করে দিয়েছিল ক্লাইভের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই দেখে আমার এক বন্ধু-বেশ হৃষ্টপুষ্ট ছিল-তার কি দুঃখ। সে প্রতিদিন ত্রিশ পা দৌঁড়ে বল করতে শুরু করে দিল-ফাস্ট বোলার হতেই হবে!! কারন ভারতে ফাস্ট বোলার নেই !! আমরা যারা খেলতাম -প্রায় ধর্মোন্মাদের মতন ছোটবেলায় ভারতের প্রতিটা খেলায় দেখতাম-কিন্ত ইমরান খান বা আক্রামের বোলিং যে কপিলের থেকে অনেক বেশী সুক্ষ এবং বিধ্বংসী ছিল, সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিমত ছিল না । জাতীয়তাবোধ সেখানে আসত না । আজো আসে না ।

ক্রিকেট শুরু হয় বোলিং দিয়ে। একটা সাধারন বল যদি ব্যাটসম্যান পেটায়-সেটা মোটেও ভালো ক্রিকেটের উদাহরন না । একটা অসাধরন বলই একমাত্র উচ্চতর ক্রিকেটের সূচনা করে। কারন ভালো বোলিং এর বিরুদ্ধে ডিফেন্স বা অফেন্স দুটোই উপভোগ্য। কিন্ত সাধারন ম্যারমেরে বোলিং ব্যাটসম্যানরা মেরে ফাটাচ্ছে-সেটা বেসবল হয়ে যায়। ক্রিকেটের সূক্ষতা থাকে না । উন্নত ক্রিকেট, উন্নত বোলিং ছাড়া লজিক্যালি অসম্ভব।

 ১৯ তারিখে আমি অবশ্যই খেলা দেখব। আমার লক্ষ্য থাকবে শামি, উমেশ যাদব, মোর্তাজা, রুবেল এরা কেমন বোলিং করছে। নিজে পেস বোলার ছিলাম বলে, ক্রিকেটে আমি পেসারদের দলে। বিরাট কোহলির ব্যাটিং আধিপত্যের চেয়ে সামি বা রুবেলদের আগুন ঝড়ানো বোলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকব। ইনফ্যাক্ট কোন ম্যাচে ম্যারেমেরে বোলিং হলে, আমি আর দেখি না । ওটাকে ক্রিকেট বলে মনে হয় না । ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেলের শেষ দুটো উইকেট দেখলাম-ছেলেটা একদম শেষ ওভারে ওই পুরানো বলে যা রিভার্স সুইং করালো-আমার ওয়াকার ইউনুসের কথা মনে পরে যাচ্ছিল। পুরাতন বলে ওই ধরনের রিভার্স সুইং শিল্প। এগুলো দেখার জন্যই ক্রিকেট। ভারত জিতলে বোনাস। সেটা না জেতার কোন কারন দেখতে পাচ্ছি না । কারন ভারতের প্রথম ছজন ব্যাটসম্যানের সবাই একা হাতে ম্যাচ ঘোরাতে পারে-ফলে হারাতে গেলে অন্তত পাঁচটা উইকেট ১০০ রানের মধ্যে ফেলতে হবে-যেটা প্রায় অসম্ভব।

Tuesday, March 17, 2015

বাবার ভবিষ্যত

প্যালিওলিথিক মানব সমাজে, যা কৃষি সমাজে আগে ছিল-তাতে "বাবা" বলে কোন বস্তু ছিল না । গোষ্ঠি বদ্ধ জীবনে
নারী পুরুষ দল বেঁধে থাকত। কোন  সন্তান জানত না তার বাবা কে, কারন গোষ্ঠির সব পুরুষদের সাথেই , সব নারীর যৌন সম্পর্ক থাকত। এসব নিয়ে কেও ভাবত না । কারন সন্তান ছিল গোষ্ঠির, খাদ্য ছিল গোষ্ঠীর, নারী ছিল গোষ্ঠির। মাতৃপরিচয় ছিল একমাত্র। "বাবা" এসেছে কৃষি সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে। পরিবারের জন্ম কৃষির
হাত ধরে। কারন ব্যক্তি মালিকানা কৃষির জন্য অপরিহায্য হয়ে ওঠে যেহেতু যৌথ খামারে কেও বেশি, কেও কম কাজ করার জন্য প্রচুর ঝগড়া হত। ফলে ব্যক্তিমালিকানা হয়ে ওঠে অপরিহার্য্য। এই ভাবে ব্যক্তি মালিকানা থেকে বাবার জন্ম হয়। যেখানে পরিবার আর সন্তানের মালিক হল বাবা। কিন্ত এখন প্রযুক্তির উন্নতির জন্য বাবা অপরিহার্য্য না । গবেষনার ফলে আমরা জেনেছি লেসবিয়ান দম্পতিরা "স্বাভাবিক দম্পতিদের থেকে" বাচ্চাদের আরো ভাল কেয়ার নিচ্ছে । গে দম্পতিরা সেটা পারে না । বাচ্চাদের কেয়ারের ব্যাপারে রিসার্চ বলছে গে দম্পতি< স্বাভাবিক সম্পতি < লেসবিয়ান দম্পতি। এই নিয়ে 

আমার আর বন্যার সাথে একটা ভাল বিতর্ক ছিল মুক্তমনা সাইটে। পরিবার দ্রুত লুপ্ত হবে। কারন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সমাজে ব্যক্তি মালিকানার দরকার হবে না । কারন সবার সিকিউরড জীবন থাকলে, ব্যক্তিমালিকানার আর দরকার থাকে না ।

আপের পাওয়ার স্ট্রাগলের নেপথ্য ইতিহাস

আপের পাওয়ার স্ট্রাগলের একটা নেপথ্য ইতিহাস আছে। যোগেন্দ্র যাদব এবং প্রশান্ত ভূশন নিশ্চিতভাবেই বাম লিব্যারাল ঘরানার । কিন্ত কুমার বিশ্বাস এবং সঞ্জয় সিং সহ আপের মূল শ্রোত এখন তত্ত্ব বিহীন "ক্লিন" ইন্ডিয়া। মেইন স্ট্রিম ভারত এখনো অত লিব্যারাল না । সুতরাং যোগেন্দ্রযাদবের লাইনে গেলে যে আপের দশা হবে আরো পাঁচটা ভুঁইফোর নক্সাল পার্টির মতন -সে ব্যপারে সন্দেহ নেই ।

 আমার ব্যক্তিজীবনের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি কেজরিওয়ালের স্ট্রাটেজি-আগে দিল্লীকে ঠিক করি-একদম সঠিক। অনেকেই বিশেষত তাত্ত্বিক বামেরা প্রশ্ন তোলেন আপের তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে।  কিন্ত আমার অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনীতি, ব্যবসা, ক্যারিয়ার, একাডেমিক্স, নাটক, সিনেমা-সব ক্ষেত্রেই "ফোকাসের" একটা বিরাট ভূমিকা আছে। কোন পার্টি হাজারটা এজেন্ডা নিয়ে নামলে কিস্যু হবে না । সিপিএমের গত ৩৪ বছর দেখুন। এত বাম মারিয়ে পশ্চিম বঙ্গে কটা বামপন্থী লোক তৈরী হল? পশ্চিম বঙ্গের কটা লোক একটেবিলে তার ঝি, চাকর ড্রাইভারদের সাথে খেতে বসতে কুন্ঠিত হন না ? কজন বামপন্থী নিজের জামাকাপড় নিজে ধোন ? কজন বামপন্থী জীবনে ধর্মের সাথে জড়িত না ? সবই  গায়ে সামন্ত্রতান্তিক চামড়ার ওপর প্যালেস্টাইন আর লেনিনের সেন্টমাখা হাঁসজারু স্পেসিস। সমাজতান্ত্রিক মানুষ তৈরী না হলে ভোটে জিতে আর আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মিছিল করে সমাজতন্ত্র আসে না ।

 সেই জন্য আপের স্ট্রাটেজি সঠিক। শুধু আগে সীমাহীন দুর্নীতি দূর করুক। দুর্নীতির দূর করতে না পারলে কোন ভাল কাজ সম্ভব না ।  প্যালেস্টাইন, নিওলিবার‍্যালিজম, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদি হাজার হজপজ ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করতে নামলে বাস্তবে ফল হবে নীটশুন্য।  কারন কোন কিছুই তারা করতে সমর্থ হবে না । আপ যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই সিঙ্গল পয়েন্ট ফোকাস রাখতে পারে, দিল্লীর লোকেদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিতে পারে, অন্য রাজ্যে তাদের বিজয়রথ কেও ঠেকাতে পারবে না ।

Sunday, March 15, 2015

ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভংগী

কমিউনিউজমের সমালোচনা করলেই আপনি ক্যাপিটালিস্ট? আমেরিকার দালাল?
ইসলামের সমালোচনা করলেই আপনি চাড্ডি?
 হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করলেই আপনি পচা বাম বা সিকুলার?

  স্যোশাল মিডিয়া ফোরামে যবে থেকে লিখছি-তা আজ বারো বছর হতে চললো আমার অনলাইন লেখালেখি -ক্যাডার গোত্রীয় লোকেদের কাছ থেকে এই ধরনের "হ্যাশ ট্যাগ" আমার গা সওয়া। আমি এর জন্যে মোটেও কমিউনিস্ট বা আর এস এস ক্যাডারদের দোষ দিই না । দোষ ভারতের স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেখানে, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা " সমালোচনামূলক"  দৃষ্টিভংগী সম্পূর্ন অনুপস্থিত।

 আমি উদাহরন দিচ্ছি। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের জনক থমাস জেফারসন। আমেরিকান সংবিধানে " All men are created equal " বাক্যের লেখক। জন এডামসএর পরে উনি আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট (১৮০১-১৮০৯)। শুধু এইটুকু লিখলে, জেফারসনের প্রতিভার প্রতি অবিচার করা হয়।  সর্বত অর্থেই তিনি সেকালের একজন সেরা পন্ডিত, জ্ঞানী এবং মানবিকতাবাদি। ১৮০৭ সালে আমেরিকাতে দাশ আমদানির ওপর নিশেধাজ্ঞার আইন ও তিনি প্রথম মোতায়েন করেন। আমেরিকান সংবিধানে "সেকুলারিজমের" ধারনাও তার অবদান ""shall be free to profess, and by argument to maintain, their opinions in matters of religion"।

কিন্ত এহেন জাতির জনকের ইতিহাস আমেরিকার পাঠ্য বইতে যখন পড়ানো হচ্ছে শিশুদের জন্য-সেখানে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, জেফারসন সমকালীন পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ মানুষত বটেই-"কিন্ত" দাশেদের ব্যপারে তার অবস্থানে দ্বিচারিতা। তার  এস্টেটে প্রায় শখানেকের ওপর দাশ ছিল। তিনি লিখেছিলেন "সব মানুষ সমান" -কিন্ত তবু দাশপ্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষে এক লাইন লেখেন নি।

শুধু জেফারসন না -জর্জ ওয়াশিংটনের জীবনী যেটা এখানে পড়ানো হয়-সেখানেও সমালোচনার ছাপ স্পষ্ট।

 অথচ ভারতের এমন দুরাবস্থা, জাস্টিজ কার্টুজ যখন গান্ধীকে দোষী করেন ভারতের রাজনীতিতে ধর্মকে ঢোকানোর জন্য, ভারতের আপামর ডান, বাম এম পিরা তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করায়। আমি নিজে গান্ধীবাদি। কিন্ত জাস্টিস কার্টুজ কিছু মাত্র ভুল বলেন নি গান্ধীকে নিয়ে। হিন্দু এবং ইসলামিক মৌলবাদকে চূরান্ত ভাবে প্রশয় দিয়েছেন গান্ধী-এটা নিয়ে ইতিহাসে সংশয় থাকারই কথা না । তবে হ্যা, তাকে বৃটিশদের এজেন্ট বলাটা নিঃসন্দেহে অতিরঞ্জিত।

 সুতরাং যে দেশের এম পিদের এই অবস্থা, তাদের ক্যাডাররা সমালোচকের দৃষ্টি ভংগী ছেড়ে, নিজেদের আরাধ্য দেবতাদের বিরুদ্ধে কিছু শুনতে চাইবে না বা সমালোচকদের গালি দেবে এটাই বাস্তব। লেনিন , স্তালিনের বিরুদ্ধে আমি ত অল্পই লিখেছি। কিন্ত ইউক্রেনের লোকেরা যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানে স্তালিনকে হিটলারের সমান কুখ্যাত বলে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করিয়েছে, সেই খবরটা কি বাংলার বামেরা রাখেন? ইনফাক্ট কোন বাঙালী বামকেই দেখিনি, স্টালিন বা লেনিনের জীবনী নিয়ে গভীরে ঘেঁটেছে। স্টালিন সম্মন্ধে এদের বিদ্যার দৌড়, উনি হিটলারকে থামিয়েছিলেন। কেও এইটুকুও জানে না, স্পেনের সিভিল ওয়ারে, রাশিয়ান বিমানসেনারা নাজিদের নাস্তানাবুদ করেছিল সেই ৩৭ সালেই। কিন্ত স্টালিন গ্রেট পার্জের নামে রাশিয়ার সক্ষম মিলিটারী জেনারেলদের ৯০% কে খুন করার দরুন নেতৃত্ববিহীন হয়ে ওঠে সোভিয়েত মিলিটারি। যা প্রকট হয় যখন সোভিয়েত ফিনল্যান্ড আক্রমন করে। মাত্র ত্রিশ হাজার ফিনিশ সৈন্য, তিনলাখ রাশিয়ানকে আটকে দিয়েছিল প্রায় ন মাস। সেটা দেখেই হিটলার বোঝেন গ্রেট পার্জের দরুন সোভিয়েত মিলিটারীর করুন অবস্থা। নইলে স্প্যানিশ ওয়ারে সোভিয়েতের কাছে মার খাওয়া নাজি সেনাদের সাহস হত সোভিয়েত আক্রমন করার??  এদের জীবনী নিয়ে একটু চর্চা করলেই বোঝা যাবে, এরা রূপকথার নায়ক হতে পারে, কিন্ত বাস্তবের ইতিহাসে ভিলেন।

ইনফ্যাক্ট প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা প্রথমে মানুষ। মানুষের দুর্বলতা সবার চরিত্রেই থাকবে। কিন্ত লেনিনের বা স্টালিনের সমালোচনা করার জন্য কাওকে ক্যাপিটালিস্ট বলে হ্যাশ ট্যাগ দেওয়া চূড়ান্ত রকমের বালখিল্যতা এবং নিরক্ষরতার উদাহরন।

আরেকটা বিষম বস্তু গণতন্ত্র নিয়ে লোকের মধ্যে ভুল ধারনা। গণতন্ত্র মোটেও কোন সিস্টেম না । এটি একটি স্বাভাবিক বিবর্তন । আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেমের। আজকের গণতন্ত্রের সাথে কালকের গণতন্ত্র মিলবে না । এটি একটি ধারাবাহিক উন্নতির পদ্ধতি। গণতন্ত্রই পারে উন্নত গণতন্ত্র আনতে। কোন স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারনার মাধ্যমে উন্নত গণতন্ত্র আসে নি, আসবে না । আজকের পৃথিবীতে ক্রনি ক্যাপিটালিজম, লবিং এর যে সমস্যা, তা দূর হবে যদি ডিরেক্ট ডেমোক্রাসি আসে।  কিন্ত সেই সরাসরি গণতন্ত্রের বিবর্তন , এই পার্লামেন্টারী ডেমোক্রাসি দিয়েই আনতে হবে। কোন ফ্যাসিস্ট শাসককে ক্ষমতায় বসালে কি তা হবে?

Saturday, March 14, 2015

খেলাঘরের পুতুল

স্যোশাল মিডিয়া ইন্টারনেট বিষ্ফোরনের ফলে , এ এক ভয়ংকর পৃথিবীর বাসিন্দা আমরা।  মতের, ধর্মের,  আদর্শের অলিখিত যুদ্ধ। মাত্র দুই দশক আগেও এটা ছিল না । হিন্দু মুসলমান কেও জানত না তাদের ধর্মে কি লেখা আছে। জানত তাদের ধর্ম ভাল -সেখানে সব ভাল ভাল মানবিক লেখাপত্র আছে। পড়ালেখা করা কমিউনিস্টরাও জানত না সোভিয়েত বলে যে রূপকথা আর তার নায়ক লেনিন স্টালিনের আসল কীর্তি। সবাই কি সুন্দর চালু রূপকথায় বিশ্বাস করত। এত তথ্য কোথায় তখন? ফলে অধিকাংশ মানুষের সময় কেটেছে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে, রোজগার করতে।

 হঠাৎ করে পৃথিবী পালটে গেল। ইসলাম ভাল , হিন্দু ধর্ম ভাল , কমিনিউজম ভাল -এই সব ভুলভাল ভালো ধারনাগুলো যে সবটাই রটানো রূপকথা-সবাই আস্তে আস্তে জানতে পাচ্ছে। সাজানো অট্টালিকার পলেস্তেরা খসছে একটু একটু করে।

 এতদিনের সাজানো ঘর যে পুতুল নাচের খেলা ঘর এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। ফলে অনেকেই হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। কে আর মানতে চায়, তারা খেলাঘরের পুতুল ভিন্ন অন্যকিছু নয়।

Thursday, March 12, 2015

নাস্তিকতা মানে ধর্মকে ঘৃণা করা ?

এমনিতেই লোকে যখন নিজের হিন্দু মুসলমান কমিনিউস্ট ভারতীয় এমনকি নাস্তিক পরিচিতি জোর করে জাহির করার চেষ্টা করে, আমি সেটাকে শিক্ষা এবং বোধের অভাব বলে মনে  করি। হিন্দু ধর্মে জন্মেছেন, আপনি না চাইলেও মুসলমান বা খ্রীষ্ঠানরা আপনাকে সেই পরিচিতিই দেবে। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্ত সেই পরিচিতিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, লোকে যখন নিজের ধর্মের সমালোচনা শুনতে পছন্দ করে না -সেটা কিন্ত একধরনের মানসিক রোগ। হ্যাঁ অসহিষ্ণুতা একধরনের মানসিক রোগ। আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আমরা, নাস্তিকরা যখন লড়ছি-সেটা লিখে বা যুক্তি দিয়ে সম্ভব না । আপনি আচরি ধর্ম।  আমরা যদি নিজেরাই অন্যদের আদর্শ বা ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু হই , তাহলে কি করে তাদের কাছ থেকে সহিষ্ণুতা আশা  করি?  অন্যকে উদার হতে বলছি-অথচ আমি নিজে আদর্শের ব্যপারে কট্টরপন্থী-এটাত বিশাল দ্বিচারিতা।

 অভিজিতের মৃত্যুর পর দেখলাম, তার লেগ্যাসি নিয়ে নাস্তিকদের মধ্যে বিবাদ বেধেছে। একদল উগ্রনাস্তিক প্রচার করছে, ধর্মকে যে ঘৃণা করে না -সে কি করে নাস্তিক হয়!!! নাস্তিক হতে গেলে নাকি ধর্মকে ঘৃণা করতেই হবে!!  এই ধরনের ধারনাও একধরনের শিক্ষার অভাব ঃ

              (১)  নাস্তিক মানে যে আস্তিক না -বা যার ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই । পৃথিবীতে অনেক ধর্মেই ঈশ্বর নেই । যেমন বৌদ্ধ, জৈন।  তাহলে নাস্তিকরা বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মকে ঘৃণা করবে কোন যুক্তিতে ?
               (২) নাস্তিক এবং নিধার্মিক একশব্দ না । ধরা যাক, তারা নিধার্মিক  শব্দটা ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্ত সেক্ষেত্রেও সমস্যা। ধর্ম মানে শুধু হিন্দু ইসলাম না । পৃথিবীতে দেড়শো কোটি মুসলমান থাকলে, তাদের প্রত্যেকের ইসলাম আলাদা। কারন ধর্ম মানে ধৃ+অনট -যা আমাদের ধারন করে  । পদার্থের যেমন ধর্ম আছে, প্রতিটা মানুষের ও আছে। সেটা বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা যেখান থেকেই আসুক না কেন। সুতরাং ধর্মকে ঘৃণা করতে হবে-সেই কথাটা সেম্যানটিকের দৃষ্টিতে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন।

              (২) ধরা যাক তারা বলতে চাইছেন সংগঠিন ধর্মগুলিকে যারা সমাজ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে-তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। সমালোচনা করতে অবশ্যই হবে-কিন্ত ঘৃণা কেন করতে হবে? দিওয়ালির রাতে আমরা পূর্বপুরুষদয়ের স্বরণ করে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালি। এটা কুসংস্কার, অযৌত্বিক সন্দেহ নেই । কারন আত্মার অস্তিত্ব নেই । কিন্ত এই উৎসবের মধ্যে যে মাধুর্য্য আছে, মানবিকতা আছে সেটা অস্বীকার করে, এই সুন্দর প্রথাকে শুধুই কুসংস্কার বললে, নিসন্দেহে তা আরেক ধরনের নাস্তিক অসহিষ্ণুতা হবে।

   আবার এটাও ঠিক-পাঁঠাবলি বা বকরি ইদের দিনে পশুবলি-এই ধরনের অমানবিক প্রথাগুলির বিরুদ্ধে প্রচার চালানো দরকার।

  অনেক ফেমিনিস্ট বাঙালী বিয়ের রীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিজয়ার দিন সিঁদুর খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারন এইসব লোকাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে পুরুষতন্ত্র। সেটা অবশ্যই ঠিক।  কিন্ত পাশাপাশি এটাই বা ভুলে যাওয়া হয় কি করে, যে এই সব বৈবাহিক লোকাচার মেয়েরাই পছন্দ করে বেশী। ফেমিনিস্ট রীতিতে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করলে সেই মজা কি আর থাকবে ?  বরযাত্রীরা অসভ্যতা করে এটা যেমন সত্য, মজাও হয় অনেক। পৃথিবীতে অবিমিশ্রিত "ভালো" র অস্তিত্ব নেই । সব ভালোর সাথে কিছু খারাপ থাকেই।  ফাইনাল মাপকাঠি মানবিকতা ।

 অভিজিতকে মিলিট্যান্ট নাস্তিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সেটা ত ও ছিল। ধর্মকে সজোরে আক্রমণ করত।  কিন্ত অন্যকে ও মিলিট্যান্ট নাস্তিক বা ঘোর নাস্তিক হতে বলেছে কি? বরং আমি উলটো উদাহরন দেখাতে পারি মুক্তমনা ফোরাম থেকে। ও আমাকে লিখেছিল, তোমার উদার নাস্তিক থাকাই ভাল । কারন ফোরামে কট্টর নাস্তিকদের সংখ্যা অনেক বেশী।  এটাই প্রকৃত মুক্তমনের পরিচয়। যে অন্যের সাথে মতের পার্থক্যটাকে উপভোগ করে, শ্রদ্ধা করে।

Tuesday, March 10, 2015

প্রাচীন অট্টালিকা

ধর্ম ধর্মই । প্রাচীন অট্টালিকা-তাহাতে মস, ফার্ন শেওলা জমিয়াছে। শেয়ালেরা হুক্কা হুয়া ডাক ছাড়িতেছে। খ্রীষ্ঠান, ইসলাম, হিন্দু ধর্ম-কোন ধর্মই তাহার ব্যক্তিক্রম নহে। সে গৃহ বসবাসের যোগ্য নহে। কিন্ত ইসলাম ইহা সত্ত্বেও ব্যতিক্রম।  কারন ইহার প্রাচীন বাসিন্দারা সেই পুরাতন চুন খসা অট্টালিকা ছাড়িতে ইচ্ছুক নহেন। তাহারা সেই পুরাতন জীর্ন দীর্ন গৃহে মশককুলের ম্যালেরিয়া সহ মরিবেন, তবুও আধুনিক গৃহে যাইবেন না -ইহা তাহাদের মরনপণ। ইহাই আধুনিক বিশ্বে মুসলমানদের ধর্মাচরনের সমস্যা।

বন্যা আহমেদ

বিবিসিতে বন্যা আহমেদের ইন্টারভিউ ইন্টারভিউ শুনলাম। কিছুক্ষন আগে চ্যাটে কথাও হল। মাথায় চারটে বড় ক্ষত। সারা দেহে চাপাতির দাগ। হাতে বেঁচে থাকা বাকী নটা আঙুলে অনেক স্টিচ। বিবিসির ইন্টারভিঊ এবং ব্যক্তিগত ভাবেও সে জানিয়েছে, সে অভিজিতের মুক্তমনা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
https://soundcloud.com/bbc-world-service/rafida-bonya-ahmed-murdered-blogger-avijit-roys-wife-i-will-not-be-quiet

 বন্যাকে নিয়ে অন্য কোনদিন অন্য কোন কারনে অনেক লেখার ইচ্ছা রইল। আসলে ও এত প্রচার বিমুখ, ওকে নিয়ে লেখালেখি, মিডিয়া একদম পছন্দ করে না । গত চার বছর ধরে ও লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছিল। কেন জানি না । অভিজিতের এটা নিয়ে বিরাট খেদ ছিল। আমি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। বললো-ধুস আর ভাল্লাগছে না । লিখে কি হয়? আমি স্বীকার করলাম লিখে কিছু হয় না -শুধুই নিজের কথা অন্যকে বলে মানসিক শান্তি। ওই টুকুই!!

 এত বিশাল পান্ডিত্য এবং সুগভীর সংবেদনশীলতা সত্ত্বেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল এতদিন।

 আমার , অভিজিতের এবং মুক্তমনার বাকী সদস্যদের খেদ ছিল অন্য যায়গায়। বন্যা রাজনীতি এবং দর্শন নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছে। আমরা যারা ওর সাথে ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছি, তারাই শুধু সেই সুবিশাল উচ্চতাকে কাছ থেকে দেখেছে। কিন্ত কোনদিন রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করে নি। নব্য ধারার বামপন্থী আন্দোলন কেমন হওয়া উচিত, সেই নিয়ে আমাদের প্রচুর আলোচনা হত এক সময়। আমি কমিনিউজিমকে খিস্তি মেরে লিখলে, প্রকাশ্যে কিছু লিখত না -তবে ফোনে লেখাটার দুর্বলতা নিয়ে বলে দিত।  ওকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের সময় ক্যান্সার সত্ত্বেও ও মিছিলে হেঁটেছিল। ল্যাটিন আমেরিকাতে কার্যসূত্রে থাকার সুবাধে বোধ হয় ল্যাটিন ঘরানার বামপন্থা নিয়ে ওর উৎসাহ ছিল বেশ।  আমি এগুলো নিয়ে ওকে লিখতে বলেছি অনেকদিন-কিন্ত কেন জানি না -ও এসব নিয়ে লেখে নি।  নতুন ঘরানার বামপন্থা নিয়ে বাংলাতে লেখালেখি হয় না বললেই চলে।

 মুক্তমনা আন্দোলন নেতৃত্ববিহীন, সংগঠকবিহীন হবে না -এটাই বড় আশা ভরসার স্থল।

Saturday, March 7, 2015

বিষাদ সিন্ধু

মনটা খারাপ। ভীষন খারাপ।  সাধারনত আমি আনন্দ বিষাদের অনেক উর্ধেই থাকি। কিন্ত আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

     অভিজিত হত্যা এবং তার পরবর্তী কালে সেই হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের মডারেট মুসলিমদের উল্লাস আমাকে যেভাবে ব্যথিত করেছিল, একই ভাবে ন্যাগাল্যান্ডের ঘটনায় আমি মূঢ়।  লোকটা কি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী? লোকটা কি সত্যই ধর্ষন করেছে?

  লোকটার পদবী যেহেতু খান, দেখলাম মহাপন্ডিত অর্নব গোস্বামী থেকে ভূভারত ধরেই নিল লোকটা বাংলাদেশী এবং ধর্ষক।   এখন কি জানলাম ? #১ সে খাঁটি ভারতীয় #২ মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে ধর্ষনের প্রমান নেই ।  কেও অভি্যোগ করলেই সেই অভিযোগ যতই নিন্দানীয় হৌক না কেন-তা সত্য হয় না ।

 একথা কি ঢাকা যাবে যে ঘটনার পরবর্তীতে যেভাবে বেছে বেছে মুসলিমদের ব্যবসা গুলিকে আক্রমন করা হয়েছে সেটাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নাগাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বুঝতে অসুবিধা হওয়া উচিত?

 আর মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা নাগা সহ আদিবাসিদের হাত থেকে অর্থনীতি কেড়ে নিচ্ছে তাই  আদিবাসীদের রাগ সঙ্গত? তাহলে আমরা আমেরিকাতে কি? আমরা আমেরিকানদের চাকরি খাচ্ছি বলে কালকে, আমদের ও আমেরিকানরা পেটাতে পারে?

 এটাই কি লজিক?

 রোগটা ত খুব গভীরে।  জাতি বিদ্বেশ। যার জন্যে দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে। রিসোর্স সমস্যা হলে প্রথমেই জাতিগোষ্ঠিকে দোষ দিয়ে তাদের গণহত্যা ঘটানো- ইতিহাস জুরে নির্মম।

বাংলাদেশ  ইসলামিক বিপ্লবের দিকে এগোচ্ছে। হাসিনা সরকার যেভাবে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ব্যর্থ, তাতে প্রথমেই তাকে মারবে জঙ্গীরা। কাল চেষ্টা করে ছিল। এক মিনিটের জন্যে বেঁচে গেছে। মনে হচ্ছে মিলিটারী এবং ইন্টালিজেন্সের ওপর কতৃত্ব হারিয়েছে হাসিনা। এখন বাংলাদেশ ইসলামিক বিপ্লবীদের হাতে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেক্ষেত্রে হিন্দু শরনার্থীর শ্রোতে আবার ভেসে যাবে পশ্চিম বঙ্গ। বাংলাদেশে ঘটা হিন্দু নিধন যজ্ঞের প্রতিক্রিয়াতে ভারতে মুসলিম বিরোধি দাঙ্গা হবে সর্বত্র।  আরো বহু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে চলেছে।

 গরুর মাংস আর নির্ভয়ার ডকুমেন্টারী নিয়ে লিব্যারালরা ব্যস্ত-কারন তাদের পা মাটিতে নেই । সব আর্ম চেয়ার আড্ডাবাজ। বাংলাদেশে ইসলামিস্টরা ক্ষমতায় এলে আরো হাজার হাজার ঘটনা ঘটবে যা অভিজিত রায় বা ন্যাগাল্যান্ডের ঘটনার থেকেও ভয়াবহ হবে। আদিম মধ্যযুগে ফিরে যাবে এই উপমহাদেশ।

Thursday, March 5, 2015

মুক্তমনারা কি ইসলামকে আঘাত করেছে? ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করেছে ?

স্যোশাল মিডিয়া এবং বাংলাদেশের অনেক সংবাদপত্রেও প্রচার চালানো হচ্ছে অভিজিত রায় ইসলাম এবং তার নবীকে নিয়ে অনেক কটুক্তি এবং ব্যাঙ্গোক্তি করেছে। তার সাপোর্টে সদালাপে রায়হান বলে আমাদের পরিচিত এক ইসলামিস্ট লেখকের লিংক (http://insidebd.net/news/2015/02/27/details/12093)  সর্বত্র ছড়ানো হচ্ছে যেখানে হাদিস থেকে মহম্মদের জীবনী নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা দুটোই আছে। কিন্ত লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেই লিংকেও অভিজিত রায় এবং মুক্তমনারা শুধুই প্রমান্য হাদিস থেকে লেখা তুলে দিয়েছেন।  নিজেরা কিছু লেখেন নি। সেই সব হাদিস পড়ে যদি মুসলমানদের ভাবাবেগে, ধর্মানুভুতিতে আঘাত লেগে থাকে, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন উঠবে- আপনারা মুক্তমনা লেখকদের পেছনে কেন?  সেই সব হাদিসের লেখকদের ধরুন।  মুক্তমনার লেখকরা সেই হাদিস লেখেনি। তারা হাদিস থেকে কোট করেছে। নিজেদের ধর্মগ্রন্থ পড়ে যদি আপনাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগে, তাহলেই বুঝুন আপনারা কোন ধর্মের অনুসারী!! আপনারা পড়াশোনা করেন না বলে মুক্তমনারা শুধু আপনাদের চোখ খুলে দেখিয়ে দিচ্ছে।

   আমি নিজে হাদিস, কোরান বেদ নিয়ে বেশী লেখালেখি করি না কারন এসব ধর্মগ্রন্থ মার্কা উইক টেক্সটে কি লেখা আছে সেই নিয়ে বিতর্ক করার ইচ্ছা আমার নেই । যেহেতু সেসব করে  কোন লাভ নেই । কারন ধর্মগ্রন্থের একই বানী দুভাবে ব্যখ্যা দিয়ে-ভাল এবং খারাপ বানানো যায়। সুতরাং ধর্মগ্রন্থের ওপর বিতর্ক সম্পূর্ন অর্থহীন-এটা নিয়ে মুক্তমনাতেই আমরা আলোচনা করেছি ( এখানে দেখুন ঃ    http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=2313  ) এবং এই প্রবন্ধের কমেন্টগুলো থেকেই বুঝতে পারবেন, অনেক মুক্তমনারা একমত ধর্মগ্রন্থ নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন-যেহেতু কি লিখেছে, কেন লিখেছে, তার নানা মুনির নানা মত।  ইসলামের মধ্যেই হাজার হাজার সেক্ট। দল উপদল । এই ব্যখ্যা নিয়ে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্ঠান ধর্মেও তাই । বরং মুক্তমনারা সব সময় স্বীকার করেছে ধর্মের সমালোচনা করার থেকে  বিজ্ঞান চর্চা করা অনেক বেশী দরকার। ব্যক্তি ও দেশের জন্য।  বিজ্ঞানে সঠিক ধারনা এলে একজন তার সঠিক জীবনদর্শন খুঁজে নেবে। এটাই অধিকাংশ মুক্তমনারা লিখে এসেছে। অভিজিত এবং বন্যার সাথে একাধিবার এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাবলিক ফোরামে এবং ব্যক্তিগত ভাবেও।   বন্যা এই ব্যাপারে সব থেকে অগ্রনী ছিল যে  মুক্তমনাকে বিজ্ঞান চর্চার প্ল্যাটফর্ম হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ধর্মের মতন এমন এক হজপজ জিনিস যা নিয়ে নানামুনির নানান মত,  তা নিয়ে আলোচনা বিতর্ক সবটাই সময় নষ্ট।  এই অবস্থান নিয়ে মুক্তমনার অনেক পুরাতন সদস্য যারা কোরানের আয়াত তুলে  ইসলাম সমালোচনা করতে ভালবাসেন, তারা মুক্তমনা ছেড়ে চলে গিয়েছিল!

অভিজিতের ভাষায়
  "--- আর মুক্তমনা নিয়ে যা বলেছেন তা ওই একই গতানুগতিক কথাবার্তা। আমরা ইসলামের নামে লিখছি, ইসলাম ধবংস করতে চাই, বাংলাদেশের লোকজন নাকি খুব ধর্মসহিষ্ণু, আমরা নাকি ধর্মকে আক্রমন করে বিভক্তি ছড়াচ্ছি – ইতাদি ইত্যাদি। মুফাসিল ইসলাম যদি সত্যই মনে করেন আমাদের একটু টোকাতেই ইসলামের বারোটা বেজে যাবে, তা হলে সত্যই চিন্তার কথা। আর তাছাড়া ধর্ম যদি এতোই ‘সহিষ্ণু’ হয় গুটি কয় লোকের ধর্মের সমালোচনাকে সহজ ভাবেই নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সামান্য বিরুদ্ধ মত প্রকাশের জন্য হুমায়ুন আজাদের মত ব্যক্তিত্বকে চাপাতির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে প্রলম্বিত মৃত্যু দিকে চলে যেতে হয়েছে, নির্যাতিত হতে হয়েছে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী মানুষজনকে যুগে যুগে..." - অভিজিতের কমেন্ট [ http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=2133&cpage=2]

 আমি আগেও লিখেছি অনেকবার- প্রফেট মহম্মদের জীবনীর অধিকাংশ রূপকথা এটা একাধিক ঐতিহাসিক লিখে গেছেন ( বিস্তারিত ঃ    http://en.wikipedia.org/wiki/Historicity_of_Muhammad   )। সপ্তম শতাব্দীতে আর্মেনিয়ান  পন্ডিত সেবেসের লেখা ছাড়া আর কোন সমসাময়িক  লেখাতে প্রফেটের অস্তিত্ব নেই "সুর্নিদিষ্ট" ভাবে।  সুতরাং  হজরত মহম্মদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব আদৌ ছিল কি না -সেটাই যখন  ঐতিহাসিকদের প্রশ্নের মুখে ,প্রফেটের জীবন নিয়ে বিতর্ক করার কোন যৌত্বিক এবং বৌদ্ধিক কারন আমি দেখি না । আগে মুসলমানরা উনার ঐতিহাসিক অস্তিত্ব প্রমান করুন -তারপরে উনি কি করেছেন, তাই নিয়ে ভাবব।  এটাও আমি মুক্তমনাতেই লিখেছিলাম আগেই যে আগে প্রফেটের অস্তিত্ব প্রমান হৌক, তারপরে তার জীবন নিয়ে আলোচনা করা অর্থপূর্ন হবে  (http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=36539 )। প্রফেটের মৃত্যুর দুশো বছর বাদে তার জীবনী লেখা হয় তার সম্মন্ধে চালু গল্পগুলি নিয়ে। তার কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা কি এখন কেও বলতে পারবে? সুতরাং এইসব অর্থহীন ব্যপারে বিতর্ক না করে বিজ্ঞান সাহিত্য চর্চা করাই ত ভাল । অভিজিতের ভাষায়

  হজরত মহম্মদের অস্তিত্ব সমস্যা নিয়ে তথ্য উউকি সহ অনেক  বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা পত্রে পাবেন। উইকিতেই লিংকগুলো আছে। এবার বলুন উইকিপেডিয়া তুলে দেওয়া হৌক কারন তা হজরত মহম্মদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করছে!! উইকির প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস ইসলামিক ভাবাবেগ, ধর্মীয় অনুভুতিকে আঘাত করছে!! 

           সমস্যা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদি এবং ইসলামিস্ট দুদলের কাছেই  প্রফেট মহম্মদের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ন। হিন্দু, খ্রীষ্ঠানরা স্যোশাল মিডিয়াতে পাতার পাতা লিখে যাচ্ছে হজরত মহম্মদ কত বাজে ছিল, খুন খারাপি করত, যৌনদাসী রাখত, নিজের পালিত পুত্রের বধূকে বিয়ে করেছিল, নাবালিকা আয়েশাকে বিয়ে করেছিল ইত্যাদি। অন্যদিকে ইসলামিস্টরা দিনরাত এর বিরুদ্ধে জিহাদ করে যাচ্ছে -দেখাচ্ছে হজরত মহম্মদ কত দয়ালু ক্ষমাশীল দানবীর ইত্যাদি ছিলেন। কেও একবার ও প্রশ্ন করছে না হজরত মহম্মদ সম্মন্ধে যে তথ্যগুলি পাওয়া যায় তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য বা ঐতিহাসিক ভাবে নির্ভরযোগ্য?  হাওয়ার ওপর ভেসে হাওয়া যুদ্ধ ছায়া যুদ্ধ চলছে।

 আমি আরো মৌলিক প্রশ্ন করছি। আপনারা বলতে চাইছেন ধর্ম নিয়ে কোন আলোচনা করা আমাদের উচিত না ? কিন্ত রাজনীতির আলোচনাতে কি করে ধর্মকে বাইরে রাখবেন বিশেষত ভারতে বা বাংলাদেশে?  ভারতে হিন্দুত্বের কার্ড খেলে একটা দল মসনদে এল। বাংলাদেশে এক কাজ করে বিম্পি এবং জামাত। আসল উদ্দেশ্যটা কি? খুব সহজ। এই ধর্মীয় ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে একদল রাজনৈতিক দুবৃত্ত ক্ষমতায় এসে দেশগুলোকে লুঠপাঠ করবে। ভারত বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত দুর্নীতি কেন? এর মূল কারন রাজনৈতিক নেতারা কোন না কোন ভাবাবেগ কাজে লাগাচ্ছে ক্ষমতায় আসার জন্য-সেটা ইসলাম, হিন্দু, বাঙালী জাতিয়তাবাদ, জাতপাত-অনেক কিছু হতে পারে। সুতরাং আপনার ধর্মীয় ভাবাবেগ আজ এই উপমহাদেশটাকে ভাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ষোলআনা দায়ী। হ্যা বলতেই পারেন, আপনাদের আমেরিকা এই ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে তালিবান বানিয়েছে। আমি মেনে নেব। সে ভুল আমেরিকার হয়েছে। ৯/১১ দিয়ে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ও করেছে আমেরিকা। কিন্ত এই ধর্মীয় ভাবাবেগ যার জন্য গোটা উপমহাদেশের আজ করুন রাজনৈতিক অবস্থা-তার সমালোচনা না করলে আপনি কোনদিন উজ্জ্বল বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষ পাবেন না । ওই ভাবাবেগের টুপি পড়িয়ে সুবিধাবাদি রাজনৈতিকরা দেশগুলোকে ধর্ষন করবে।

 ফারাবির মতন এইসব মৌলবাদিদের পৃষ্ঠপোষক কারা? ধর্মীয় মৌলবাদি দলগুলো। কেন? কারন ক্ষমতায় গেলে তারা ক্ষীর খাবে। কোটি কোটি টাকা কামাবে।ফারাবীরাত জাস্ট পুতুল নাচের পুতুল। সুতোগুলো আমেরিকা ইংল্যান্ডে বসে থাকা জামাতিদের হাতে।  আমি দেখলাম আমাদের দিকের হিন্দুগুলো আঁতকে উঠেছে-- ইসলামিস্টরা খুনী ফারাবীর সমর্থনে ফেসবুকে আন্দোলন শুরু করেছে! ভাবা যায়!! আমি অবাক হই নি। মহত্মাগান্ধীর হত্যাকারী নথুরাম গডসের মূর্তি বসেছে গুজরাতে। এটাও কি কোনদিন ভাবতে পেরেছিলাম। মহত্মা গান্ধীর হত্যাকারীকে পূজো করছে হিন্দুত্ববাদিরা। ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের হাতে জাতির জনক গান্ধীর যদি এই দশা হয়, মৌলবাদের অন্ধকারে ডুবে থাকা বাংলাদেশে ফারাবিকে হিরো বানানোর লোকের অভাব হবে না এটা বুঝতে কষ্ট হওয়া উচিত না ।

  হিংসা, অজ্ঞতা, খুন, নৃশংস খুন পৃথিবীতে বরাবর ছিল। খুন এবং খুনীদের সমর্থনে ধর্মান্ধদের অভাব এই পৃথিবীতে কোনদিন হয় নি। অভাব ছিল গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, অভিজিত রায়ের মতন লোকেদের যারা এই পৃথিবীকে অন্ধত্ব , হিংসা থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। এবং হ্যাঁ গান্ধী হত্যার পরে হিন্দুত্ববাদিরা বলেছে গান্ধী আসলে মুসলমানদের চর ! তাই খুন হওয়াটা যৌত্বিক। মার্টিন লুথার কিং এর খুনে কজন শেতাঙ্গ উল্লাস করেন নি? সুতরাং অভিজিত রায়ের মৃত্যুতে মুসলমানদের একটা বড় অংশ উল্লাস করবে-এটাই ইতিহাসের নিয়তি। যার হাত থেকে গান্ধী বা কিং-কেওই রেহাই পান নি। কিন্ত হিংসা ঘৃণা মিথ্যাচার ধর্মান্ধতা দিয়ে আপনারা ইতিহাস লিখতে পারবেন না । ইতিহাস লেখা হবে মহত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং বা অভিজিত রায়দের নামে।

Tuesday, March 3, 2015

গরুর গেরুয়া রাজনীতি বনাম বিজ্ঞান

আমি আগেও বলেছি হিন্দুত্ববাদের হিন্দু ধর্মটা আসলে "এন্টি-ইসলামিক" ইসলাম। এই হজপট কথাটার অর্থ  হিন্দুত্ববাদিরা চাইছে - 

মুসলমানদের ঠেকাতে হিন্দুরা মুসলিমদের মতন অসহিষ্ণু দাঙ্গাবাজ গোষ্টিবাজ হৌক -কিন্ত ধর্মের অবস্থানগুলো হবে ইসলাম বিরোধি।

 মহারাষ্ট্রে গোনিধন ব্যানিং এর উজ্জ্বল উদাহরণ। হিন্দু ধর্ম বলতে যদি বৈদিক ধর্ম বোঝায়, ভুরি ভুরি উদাহরন আছে আর্য্যরা গরুর 

মাংস খেত। মহাভারতে রাজা রন্তিদেবের কিচেনে প্রতিদিন দুহাজার গরু বধ হত।  সুতরাং এই গোবধ বন্ধে কোন ঐতিহাসিক হিন্দুত্ব

 নেই । যেটা আছে সেটা নব্য রাজনৈতিক হিন্দুত্ব-যার উদ্দেশ্য ইসলামের বিরোধিতা করা।


আরেকটা গুরুত্বপূর্ন দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছি। দ্বাবিংশ শতাব্দিতে লোকে যখন একবিংশ শতাব্দির ইতিহাসের দিকে তাকাবে -

তখন যেসব জিনিস গুলো নিষ্ঠুর , অমানবিক বলে মানা হবে, তার মধ্যে সবার ওপরে থাকবে খাদ্যের জন্য পশুহত্যা। যেমন ধরুন 

আজ থেকে ১০০০ বছর আগে দাশপ্রথা ছিল-মানুষকে পন্য করা হত-বেচাকেনা হত-এটা ভাবলেই আমাদের কেমন গা ঘিন ঘিন করে 

এখন। তাহলে কি দ্বাবিংশ শতাব্দিতে লোকে মাংস খাবে না ? অবশ্যই খাবে। তবে পশুহত্যা করে নয়। কৃত্রিম মাংস খাবে যা তৈরী হবে 

বায়োফ্যাক্টরিতে। পোষাকি নাম ইন-ভিট্রো মিট। ল্যাবে সেল কালচার করে তৈরী হয়। ২০১৩ সালে হল্যান্ডে তৈরী হয়েছে পৃথিবীর 

প্রথম কৃত্রিম হ্যামবার্গার। তবে স্বাদে, গুনে, দামে এখনো প্রথাগত গরুর মাংসের কাছে আসে নি। কিন্ত আস্তে আস্তে আসবে। ত্রিশটি 

ল্যাব এ ব্যাপারে কাজ করছে এই মুহুর্তে। পেটাও এই ব্যাপারে আগ্রহী।


  ১৯৩১ সালে চার্চিল লিখেছিলেন গরুর, চিকেনের মাংসের জন্য এই সব পশুদের বড় করা খুব নিষ্ঠুর প্রথা।
 
[We shall escape the absurdity of growing a whole chicken in order to eat the breast or wing, by growing

 these parts separately under a suitable medium.]


 আশা করব ইনভিট্রো মিট খুব দ্রুত সফল হবে এবং গরুর মাংস খাওয়ার রাজনীতি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সামনে ইস্যুলেস বলে প্রতিপন্ন হবে।

Monday, March 2, 2015

নাস্তিকদের প্রতি এত ঘৃণা কেন? নাস্তিকদের ধর্ম নেই ?

অভিজিতের মৃত্যু আমার জীবনের সব থেকে বড় আঘাত । আমি শুধুই কারন খোঁজার চেষ্টা করছি-ওরা কেন মারল এই নৃশংস ভাবে। ঘৃণা ? তাহলে কেন এত ঘৃণা ?  যে বাংলাদেশের মানুষকে ও এত ভালোবেসে গেল, তারা ওর মৃত্যুর পর কেন সর্বত্র লিখে যাচ্ছে নাস্তিকরা নরকের কীট-তাদের ওমন শাস্তি প্রাপ্য!  কেন এত ঘৃণা নাস্তিকদের প্রতি যে তাদের মেরে ফেলতে হবে ?

         নাস্তিকদের প্রতি ঘৃণা মুসলিমদের একার না । খৃষ্টানরাও মনে করে নাস্তিকরা শয়তান । তবে খ্রীষ্টানরা আধুনিক হয়েছে বলে সেই ঘৃণা খুনের রক্তে রাঙাবে না । হিন্দু ধর্মে নাস্তিক্য ট্রাডিশন ধর্মের অংশ বলে, এই ধর্মে নাস্তিক থাকা অত কঠিন না -তবে সামান্য সমস্যা আছে শ্রাদ্ধ শান্তি ইত্যাদি লৌকিকতা না করলে।  লৌকিকতাটুকু করলে, হিন্দু ধর্মে কে নাস্তিক কে আস্তিক তাই নিয়ে কেও মাথা ঘামায় না ।

             নাস্তিকদের বুঝতে মুসলমানদের বিরাট ভুল হচ্ছে । হয়ত এটা আমার, আমাদের , মুক্তমনাদের দোষ। আমরা বোঝাতে পারি নি।

 মুসলিম, হিন্দু, খ্রীষ্ঠান-সবার জানা উচিত নাস্তিকরাও ধার্মিক। তাদের ও সবার ধর্ম বিশ্বাস আছে।  ধর্ম বিশ্বাস নেই এমন লোক পৃথিবীতে থাকতে পারে না । শুধু আমাদের ধর্মে ঈশ্বর নেই -প্রফেট নেই । ধর্মগ্রন্থ নেই ।আছে যুক্তি, বিজ্ঞান, বাস্তবতা । আমরা জীবন , বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখি, তাই দিয়ে তৈরী হয় আমাদের ধর্ম।  আমাদের বিশ্বাস ।

  আমার  নিজের বিশ্বাস- বুদ্ধি, কঠোর পরিশ্রম, আর সততায়। এই তিন বিশ্বাসের পিলার আমার নিজের ধর্ম। আমি নিজের জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্ত এই তিনটে পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে নিই।  অভিজিতের বিশ্বাস ছিল না ? নিশ্চয় ছিল। ও বিশ্বাস রাখত যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসায়। সেটাই ওর ধর্ম আর ধর্ম বিশ্বাস। সেই ধর্ম বিশ্বাসেই ও প্রাণ দিয়েছে।

 কেন ধর্মগুরু, প্রথাগত ধর্ম ছেড়ে,  ধর্মগ্রন্থ ছেড়ে নিজের অধিত বিদ্যায়, অভিজ্ঞতায় বিশ্বাস রাখি?

অন্যের কারন জানি না । নিজেরটা বলার দরকার। ধর্মগ্রন্থ গুলি উইক টেক্সট। সেটা কি? সেটা নিয়ে মুক্তমনাতে আমার একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ আছে    ।  তার আগে বুঝুন স্ট্রং টেক্সট কি। যেমন ধরুন নিউটনের সূত্র। এটার দ্বিতীয় কোন ব্যাখ্যা হয় না । পৃথিবীর সবাই নিউটনের সূত্র মানে ওর তিন গতিসূত্র বুঝবে এবং তার গণিতিক রূপ সর্বত্র এক। কিন্ত কোরান বা গীতার ক্ষেত্রে প্রতিটা আয়াতের ব্যখ্যা আলাদা। আল কায়দা, সৌদি, আমেরিকান আর বাংলাদেশের মুসলিম -সবাই এক ইসলাম মানে না । সবাই ইসলামের কোন না কোন ব্যখ্যা মানে। আঠারোশো মিলিয়ান মুসলমানের জন্য মোটেও একটা ইসলাম না । কোন দুই মুসলমান পাবেন না -যাদের কাছে ইসলামের মানে এক।

 এতে যেটা হয় ধর্মগুরুরা নিজেদের মতন ব্যখ্যা দেয়। ভাল লোক হলে, তার ইসলাম ভাল হয়। খারাপ লোক হলে তার ইসলাম খারাপ হয়। হিন্দুদের এই ভাবে আছে অসংখ্য ধর্মগুরু। কিছু ভাল । অধিকাংশ খারাপ।

 তারমানে ধর্মগ্রন্থ মানেই তার সবটা খারাপ এটা মনে করি না । যেহেতু এগুলো উইক টেক্সট, কেও যদি উন্নত মানবিকতার হয়, সে ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে মানবিক দিকের সন্ধান পাবে, যে রাজনীতিবিদ, সে ধর্মগ্রন্থগুলিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করবে। আমি নিজেও দিনরাত উপনিষদ, গীতা, কোরান, ধর্মপাদ, জৈনসূত্র , মহাভারত পড়ি।  শুধু লেখালেখির কারনে এই পড়াশোনা তা না।  এসবের মধ্যে থেকে এমন কিছু পাব, যা জীবনের কাজে আসবে, সেই আশাতেই পড়ি। ঠিক একই ভাবে সান জুর আর্ট ওব ওয়ার ও পড়ি। এর মধ্যে যা কাজের মনে হয়, সেটা জীবনে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও ভাবি। উপনিষদের গল্পগুলো আমার জীবনের সব থেকে বড় স্ট্রেস রিলিভার। প্রচন্ড কাজের চাপে থাকলে, আমি কোটিকর্ন এবং অষ্টবক্রর গল্পে মুখ গুঁজি। কারন তা এই পার্থিব বাস্তবতা থেকে -এর বাইরেও যে একটা রিয়ালিটি আছে, সেই চেতনাকে সামনে এনে আমার অহংকার কমায়।

 কিন্ত এর জন্যে কেন আমাকে হিন্দু মুসলমান হতে হবে ? ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতে হবে?  এই ত বেশ ভাল আছি-সব ধর্ম বিজ্ঞান দর্শন থেকে, যা মনে হয় জীবন পাথেয় তা সংগ্রহ করি-যদি জীবনের কঠিন সময়ে কাজে লাগে!!

 নাস্তিকেরা কি অবাধ যৌন জীবনের পরকীয়ার লাইসেন্স খোঁজে ? তারা কি ছেলে মেয়ের যত্ন নেয় না ? আত্নসুখী? এরকম নাস্তিক দেখেছেন কখনো?  নাস্তিক বা আস্তিক। আমরা সবাই বায়োলজিক্যাল। ছেলে মেয়ে মানুষ করতে হবে-এটা কি ধর্ম শেখায়? এটা ত আমাদের ডিএন এতে আছে!! অভিজিত রায় বা আমি কি অন্য কোন মুসলমান বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা? তৃষার জন্য অভিজিতের যে চিন্তা, আমার মেয়ের জন্য আমার যে চিন্তা-সেটা কি কোন মুসলমান  বা হিন্দু বাবার থেকে আলাদা?  না আমরা নাস্তিক বলে আমাদের ছেলেমেয়েদের কম ভালোবাসি?  আরে বাবা এটা আমাদের সবার মধ্যের একটা জৈবিক দায়িত্ব। বাবা হিসাবে আমরা আস্তিক নাস্তিক সবাই এক । তাহলে আমরা কি করে নরকের কীট হলাম ??

অনেকেই বলবেন, মশাই আপনি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছেন, তাই আপনি নাস্তিক হলেও আচরনে আস্তিকদের মতন রক্ষণশীল। বাকী নাস্তিকরা না । সেই যুক্তিও হাস্যকর । পরকীয়া, অবাধ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার লোক আস্তিক নাস্তিক দুই ক্যাম্পেই আছে।  খুনী, অপরাধি দুই ক্যাম্পেই আছে।  আস্তিক নাস্তিক দিয়ে লোক বিচার করতে যাবেন না । একটা লোক ভাল অথবা খারাপ।  ভাল নাস্তিক, খারাপ নাস্তিক যেমন আছে-ভাল মুসলমান, খারাপ মুসলমান ও আছে।

তাই অভিজিত রায় নাস্তিক-তাই দিয়ে অভিজিতকে মাপলে আপনাদের সব থেকে বড় ভুল হবে। একজন মুসলমানকেও যদি আমি এইভাবে মাপি যে ও মুসলমান তাই ও ফারাবী বা ওসামা-তাহলেও সেই একভুল হবে। লোকটাকে দেখুন। দেখুন সে দেশ, সমাজ, পরিবারকে কত ভালবাসে??

 আমার বোনকে বলছিলাম- বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে এত বড় ভুল অভিজিত করলো -আমি ভাবতে পারছি না । আমার বোন বরং বললো,  যারা দেশকে মাতৃভূমিকে এত ভালবাসে তারা ভুল ঠিকের হিসাব করে না । করলে কোন দেশ নেতাকে আমরা পেতাম না যারা জেল খেটে প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছে।  অভিজিত রায় সেই পর্যায়ের একজন মহান ব্যক্তি। আস্তিকতা নাস্তিকতা দিয়ে এই মহান প্রানের হিসাব করা যায় না । তাজুউদ্দিন একজন ধর্মপ্রান মুসলিম ছিলেন।   আমি নাস্তিক- কিন্ত তাও আমি বলবো উনি আমার জানা সেরা বাঙালী রাজনীতিবিদ। লেনিন, স্তালিন নাস্তিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। নাস্তিকতার জন্য আমি তাদের তাজুউদ্দিনের থেকে বেশী পছন্দ করবো? মোটেও না ।  আস্তিকতা নাস্তিকতা না -আমি একজন ব্যক্তিকে মুল্যায়ন করবো-তার কাজের ভিত্তিতে। তার সততার ভিত্তিতে।

 আমি ব্যবসায়ী লোক । বুদ্ধিজীবিদের মতন পড়াশোনা, পান্ডিত্য, থিওরী-কোনটাই আমার নেই । আমি শুধু জানি ব্যবসা চালাতে প্রতিটা মুহুর্তে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত গুলি যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে না নিয়ে, আল্লা বা ঈশ্বরের ভরসায় নিলে ভরাডুবি অবসম্ভাবী। তাতেও অনেক ভুল হয়। কিন্ত তখন ঈশ্বরের কাছে নালিশের সুযোগ থাকে না । যেহেতু আমার ভুল, ওটার দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হয়। ঠিক এই জন্যে আমার নাস্তিক থাকা ছাড়া উপায় নেই ! ঠিক এই জন্যেই আমেরিকার টপ সি ই ও দের বা  এদেশে ব্যবসার নেতৃত্ব স্থানীয় লোকেদের ৯০% নাস্তিক বা নিধার্মিক। আমার কাছে এটা শখ বা ফ্যাশন না ।  প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকে থাকার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন একটা প্র্যাকটিস।

          এখন বলতেই পারেন টাকার জন্য তাহলে ঈশ্বর ত্যাগ??  তাহলে ত আপনি সেই নরকের কীটই হইলেন?

 নারে ভাই টাকার জন্য আমি ব্যবসায় আসি নি।  আমি স্বাধীনচেতা লোক, কারুর অধীনে কাজ করা, চাকরি বাকরির অধীনতা পোষায় না । স্বাধীন ভাবে, মুক্তচিন্তা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য, আমি নাস্তিকতার চেয়ে আর ভাল কোন পথ পাই নি। তাই আমি নাস্তিক। নরকের কীট নই। আমার দুই ছেলে মেয়ে-তারা যাতে ভাল নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে সেটাই আমার উদ্দেশ্য। সেখানে আমি, আপনি-কোন ধর্মের লোক, রাজনীতির লোক আলাদা হতে পারে না । তাহলে এত বিভেদের রাজনীতি কেন?

  আমি মোটেও বলছি না আপনি নাস্তিক হৌন। বলছি না ইসলাম ভুল না ঠিক। আমার কাছে বহুদিন থেকে ইসলাম, হিন্দু, নাস্তিকতা, কমিনিউস্ট সব ফালতু। ভাল মানুষ হওয়া অনেক বেশী  জরুরী।

 মুসলমান, হিন্দু, কমিনিউস্ট, নাস্তিক অনেক পাওয়া যায়রে ভাই। ভাল মানুষ পাওয়া যায় না -যার হৃদয় আছে, মনন আছে, মানুষকে ভালোবাসতে পারে।  অভিজিত রায় ছিল সেই বিরল মানুষ।