Wednesday, September 30, 2015

এক মহম্মদ আখলাক এবং হিটলারের গল্প

নয়দার ওই গ্রামে সাত হাজার ঘরের মধ্যে মাত্র দুটি ফ্যামিলি মুসলমান। আখলাক ফ্যামিলি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। আর পাঁচটা হিন্দু ফ্যামিলির মতন। ঈদে তাদের গৃহে মুসলমানদের থেকে হিন্দু অথিতিই থাকত বেশী।  মন্দিরে মাইকে জানানো হল, তার গৃহে গরুর মাংস আছে। ব্যাস শ-খানেক লোক চড়াও হয়ে, লোকটাকে মেরেই দিল বাড়ি ভাংচুর করে।

 ইতিহাস বড় নির্মম শিক্ষক। থার্ড রাইখ তখন ক্ষমতায়।  বিরোধি ধ্বংশ করে হিটলার একচ্ছত্র ক্ষমতায়।  সেই উল্কীয় উত্থানের পেছনে দুটি পিলার। প্রথমটা হচ্ছে হিটলারের হাত ধরে জার্মান অর্থনীতিতে উন্নয়নের জোয়ার আসে। হিটলারের মতন "বিকাশ পুরুষ" পৃথিবীর ইতিহাসেই জন্মায় নি। ১৯২০-৩০ সালে জার্মানরা তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে গেছে। অধিকাংশ জার্মান ছিল বেকার। এটা ত অস্বীকার করার উপায় নেই জার্মানরা তাকেই ভোট দিয়েছে । তার ওপরেই আস্থা রেখেছে। কারন হিটলার নামোর মতন আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতাই এসেছেন । জার্মানিতে সত্যিই আস্তে আস্তে "আচ্ছে দিন" আসছিল। তাই হিটলার ভোটে জিতলেন। একবার না, তিনবার।  তার নাৎসি বাহিনী  যে যেখানে সেখানে ইহুদিদের খুন করছে এটা কি সেই জার্মান ভোটাররা জানত না?  মহম্মদ আখলাককে যে ছুতোয় খুন করা হল-কুলবর্গীর মতন হিন্দুত্ব বিরোধি স্বরকে যেভাবে বুলেটে থামানো হল-এটা ত একদম নাৎসিদের চেনা প্যাটার্ন। সংখ্যালঘু- রাজনৈতিক বিরোধিদের যেকোন ছুতোয় হত্যা করা জনমানসে ভয় ঢুকিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করা, ন্যাৎসি পেটেন্ডেড ট্রেড মার্ক। তাও সাধারন ভোটারা হিটলারের বিকাশ পুরুষ অবতারে বিশ্বাস রেখেছিল। কি আর করা যাবে । বিশ্বাস মানেই যে অন্ধ বিশ্বাস।

যে প্রশ্নটা মোদি বিরোধিদের আজ করতে হবে-- কি করে হিটলার বা মোদির মতন লোকেরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ভোটে জিতে এসে ফ্যাসিজম চালান?  কেন লোকেরা তাদের ভোট দেয়? আমি সেখানেও জার্মানির ইতিহাসের সমান্তরাল ঘটনা পাচ্ছি।

 ১৯২৯-৩৩ নাৎসিদের সাথে কমিনিউস্টদের বিভৎস মারামারি হয়েছে জার্মানিতে। কিন্ত ১৯৩৪ সালের মধ্যেই সম্পূর্ন কমিনিউস্ট মুক্ত হয় জার্মানি। কেন হেরে গেল কমিনিউস্টরা? কেন হেরে গেল স্যোশাল ডেমোক্রাটরা ?

কোন সন্দেহই নেই জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ট লোকেরা ছিল "বিকাশপুরুষ" হিটলারের আচ্ছেদিনের আশাতে মোহিত। এবং সত্যিকারের আচ্ছে দিন আসছিল ও হিটলারের হাত ধরে। হিটলারকে দেদারসে সার্টিফিকেট দিয়েছেন আমেরিকার বৃহৎ শিল্পপতিরা। তাতে জার্মান মানসে হিটলার নিয়ে আরো আশার সঞ্চার হয়। ফলে সবাই ফ্যাসিজমকে ইগনর করা শুরু করে। সব থেকে বড় কথা জার্মানরা যেতই বা কোথায়? কমিনিউস্টরা ত কোন সমাধান নয়-আরো বেশী সমস্যা। তারাও রাজনৈতিক ফ্যাসিস্ট।  আর সেন্ট্রিস্টরা রাজনীতিতে বরাবর শামুকের খোলাতেই থাকে। ভারতেও সেই একই সমস্যা। লোকে ভোটটা দেবে কাকে? সুতরাং এই হতাশার রাজনীতিতে মোদির বিকাশবানী আরো তীব্রতর হবে। হিটলার এটা ভাল জানতেন বলেই, সেটাকেই খাইয়েছিলেন আচ্ছা করে। এখন মোদির ট্যাকটিস ও তাই। হয়ত সব ফ্যাসিজমের এক পলিসি।

গরুর মাংস খাওয়ার সাথে হিন্দু ধর্মের কোন সম্পর্কই নেই।  প্রাচীন ভারতে গরুর মাংসের উল্লেখ আছে কিন্ত ছাগল বা মুর্গীর মাংসের কোন উল্লেখ নেই।  গরুর মাংস বিরোধি আন্দোলন ফ্যাসিজমের সিম্বলিজম। একটা ছুতো চাই। যা কাজে লাগিয়ে জনগণের মনে ভয় ঢোকানো যাবে।


Monday, September 28, 2015

ডিজিটাল ইন্ডিয়া

ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে ভারতবাসীর উত্তেজনা বেশ উপভোগ্য। আমিও উৎসাহিত। কারন পৃথিবীর গত চল্লিশ হাজার বছরের ইতিহাস থেকে যদি কিছু শেখার থাকে, তাহলে সেটা এটাই যে-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই একমাত্র ইতিহাসের গতি বদলেছে।  কৃষিকাজ মানে কি? মানুষ কিভাবে শিখল বনের ফলাহার ছেড়ে বীজ তৈরী করতে হয় ? পশুপালন করতে হয়? পশু এবং উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন করে ফলন উন্নত করা যায়? এগুলো প্রযুক্তি না? এই প্রযুক্তি শেখার মাধ্যমেই ত মানুষ প্যালিওলিথিক যুগ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজে এল।  তখন নিশ্চয় কিছু কিছু বামপন্থী ছিল-যাদের কাজই হচ্ছে বাগড়া দেওয়া এবং তারা ভাবছিল-শালা পৃথিবীর সর্বত্রই ত বন জঙ্গল-কৃষিজমি বলেত কিছু নেই। জমিই নেই ত ভুট্টা বাজরার চাষ করে কি হবে মামা?

     আজও সেই  বামআবালদের যুক্তি শুনে যাচ্ছি- (১)  দেশের অধিকাংশ স্থলে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই (২) লোকের পেটে ভাত নেই (৩) লোকেদের চাকরি নেই--

 তাহলে কেন ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে লাফালাফি?
 
 (১) ইন্টারনেট সংযোগ ভারতের মতন দেশে একদিনে দেওয়া সম্ভব না। ২০০৪ সালে যখন করিমপুরে যেতাম, টুজি কানেকশনে ইমেইল চেক করতেও পারতাম না। ২০১২ সালে যখন শেষ গেছি-দিব্বি ভাল ভিসএনলের কানেকশন দেখেছি। যত ইউজার বাড়বে, তত পরিশেবা দেওয়ার কোম্পানী পাওয়া যাবে।

 (২) লোকের পেটে ভাত নেই। কেন নেই জানেন? কারন ভারতের পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন দুর্নীতিতে ভর্তি।  বিরাট পরিমান খাদ্য নষ্ট হয়। সরকার বন্টন করতে পারে না। এটা কমানোর একমাত্র উপায় লোড সেল বসিয়ে ফুড সাইলোগুলোর ওজন অনলাইনে মনিটর করা।  লোড সেল বা সনিক সেন্সরলাগিয়ে স্টকের একদম পাই টু পাই হিসাব রাখা। কেও যদি ভারতে এই কাজ করতে ইচ্ছুক হয়, তাদের কারিগরী সহোযোগিতা দিতে আমি রাজী। আমেরিকাতে ( এমন কি ভারতেও হয় )  বড় বড় কোম্পানীগুলি প্লাস্টিক প্যালেট, খাদ্য দ্রব্যের স্টক এই ভাবে ট্রাক করে। দুর্নীতি ক্ষিদের বিরুদ্ধে একমাত্র সমাধান আরো উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে দুর্নীতি মুক্ত ডিস্ট্রিবিউশন।

 (৩) লোকেদের চাকরি নেই!!! তা চাকরি কি এখন চট কলে তৈরী হবে?  সেই আশায় বসে থাকলে দেশটা দুর্ভিক্ষে ডুববে। গত দশ বছরে ডিজিটাল প্রযুক্তিই সব থেকে বেশী চাকরি তৈরী করেছে। বামেরা এত ভাম এরা জানেও না যে এখন ডজনে ডজনে ফ্রি ল্যান্সিং সাইট তৈরী হয়েছে, সেখানে ভারত ত ছেড়ে দিন বাংলাদেশের তিন লাখ তরুন কাজ করছে। হ্যা ওডেক্স এবং ইল্যান্স মিলিয়ে ( এখন আপ ওয়ার্ক বলে)  বাংলাদেশের তিন লাখ তরুন এই ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগে নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিয়েছে।

  মোদ্দা কথা, যদি দেশ এবং দশের ভালো চান জানবেন বামেরা  হচ্ছে একটা স্পেশাল স্পেসিস-যারা আদতে অশিক্ষিত মূর্খ । প্রাক্টিক্যাল জ্ঞান শুন্যের কোঠায়। এদের হাতে পশ্চিম বঙ্গ চৌত্রিশ বছর তুলে দিয়ে, বাঙালী কালিদাসের মতন নিজের মগডাল নিজেরা কেটেছে। আশি সালে যখন আই বি এম কম্পিউটার ভারতে এল- জ্যোতিবোস সেই কম্পুটার কোলকাতায় ঢুকতে দেন নি। কারন তাতে নাকি লোকের চাকরির ক্ষতি হবে। আমার স্পষ্ট মনে আছে জ্যোতি বোস বিগ্রেডে গর্ব করে বলছে-আমরা মেহনতি মানুষের পক্ষে-তাই কম্পুটারে বিরোধিতা করছি। সাথে সাথে উনি পশ্চিম বঙ্গের আই টি শিল্পের সম্ভাবনারো বারোটা বাজিয়েছিলেন। কারন তখন আই বি এম কম্পুটার চালাতে পারত আই এস আই  আর বার্কের লোকেরা। কোলকাতা ব্যাঙ্গালোর হতে পারত। কিন্ত হয় নি। কারন জ্যোতিবোসের মতন কিছু মূর্খ বাম ছিল বাঙালীর নেতা। এর পরে এটাও বলবো বুদ্ধদেবের মতন কিছু বুদ্ধিমান বাম, অবস্থা কিছুটা ঘুরিয়েছিলেন। ২০০৫-২০০৭ সালে আই টি শিল্পের সব থেকে বেশী গ্রোথ কোলকাতাতেই হচ্ছিল বুদ্ধের সদিচ্ছার কারনে। কিন্ত সেখানেও বাধ সাধল তার পার্টি, তৃনমূলের ভ্রান্ত বিরোধি রাজনীতি।

  তবে আশার কথা এই যে মমতা ব্যানার্জি কিন্ত ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বিরোধিতা করেন নি। উনি বলেছেন মোদির আগে ইউ পি এ সরকার এটা শুরু করেছিল। মোদি মাইলেজ খাচ্ছে। এই রাজনীতিটা গনতন্ত্রে চলাই উচিত। সুতরাং দিদিকে স্যালুট। এখানেই বোঝা যায় দিদির প্রাক্টিক্যাল বোধশক্তি কিছু আছে, ভামেদের সেটাও নেই।

এটা মনে রাখবেন, বোকা বন্ধুর চেয়ে চালাক শত্রু ভাল। বামেরা হচ্ছে সেই বোকা বন্ধু। আর ক্যাপিটালিস্টরা হচ্ছে চালাক শত্রু। বোকা বন্ধুর পাল্লায় পড়লে কি হয়-সেটা জানতে জ্যোতি বোসের রাজত্বের দিনগুলোর দিকে তাকান।

Sunday, September 27, 2015

সিলিকন মোদি

সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে মেয়েরা ৩৪-২৪-৩৪ পারফেক্ট বডিতে এত বিশ্বাসী- যেসব মেয়েদের পকেটে টাকা নেই-বুবস জব -মানে স্তনের সিলিকন সার্জারিতে অসমর্থ -তারা প্রায় গর্ব করে ফার্স্ট ডেটে বয়ফ্রেন্ডকে বলে বাট আম নো সিলিকন! সিলিকন বেব মানে যে মেয়েটি সিলিকন পুশ করে স্তনের সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে।

 মোদির সিলিকন ভ্যালী সফর ঘিরে উত্তেজনা, সাফল্য স্পট লাইট এবং তজ্জন্য বামেদের হতাশা দেখে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফ্ল্যাট বেব মানে যেসব মেয়েদের স্তন ছোট তাদের ফার্স্ট ডেটের কথা মনে পড়ল - হ্যাঁ, আমারটা ছোট-বাট হানি, আম নো সিলিকন!! আমারটা রিয়াল। ওদের, যাদের সুগোল স্তন দেখে তোমরা হুহা করে ওঠো-সেটা কিন্ত সিলিকন!! কৃত্রিম!

 মোদিকে খিস্তি মেরে কি লাভ আছে? এথেন্সের সময় থেকেই গণতন্ত্রে রাজনীতি হচ্ছে নাট্যমঞ্চ। অভিনয়ে স্টেজ, লাইট, ডায়ালোগ সবকিছুই গুরুত্ব পূর্ন। মোদিকে দেখুন। স্টেজ সিলিকন ভ্যালী, লাইম লাইট গুগল ফেসবুক আপল-ডায়ালোগ ডিজিটাল ইন্ডিয়া।

 এখন প্রশ্ন হচ্ছে এপল, গুগল, ফেসবুক ভারতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট বাড়াবে কি না। কিছু চাকরি আসলে ভালোই ত। গুগল বলছে তারা ভারতের ৫০০ স্টেশনে ফ্রি ওয়াই ফাই দেবে। ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে ফেসবুক সাহায্য করবে। আপল ফ্যাক্টরি গড়বে! ভালোই ত।

 বামেরা অন্ধ মোদি বিরোধিতার পথে রাজনৈতিক আত্মহত্যা করছে। মোদির সফরে যদি কিছু চাকরি ভারতে আসে, সেটাকে স্বাগতম জানানো উচিত। সাথে সাথে মোদির হনুরা ভারতে যেসব হিন্দুত্ববাদি অত্যাচার শুরু করেছে, তার বিরোধিতাও চলুক। ইস্যু ভিত্তিক বিরোধিতা না করলে, মোদি বিরোধি রাজনীতি ক্রেডিবিলিটি হারাবে।

  এই জন্যেই আমি লিখেছিলাম, মোদিকে টক্কর দিতে গেলে, আরভিন্দ কেজরিওয়াল ছাড়া আর কেউ নেই। মোদির মেইড ইন ইন্ডিয়ার স্লোগানের অন্তঃসার শুন্যতা বোঝাতে এ কে একটাই বাক্য ছেড়েছেন-" আগে ভারতে যেসব জিনিস আমরা ব্যবহার করি সেগুলো ভারতে বানান..." -ছোট বাক্য। মানেটা সহজ। ভারতের বাজারে উত্তোরোত্তর চীনা মালে ভরে যাচ্ছে। ভারতের ম্যানুফাকচারিং বেস নষ্ট হচ্ছে।  সেটা আটকানোর জন্যে মোদি কিছুই করেন নি! চটকল, তেলকল, উত্তর প্রদেশের পটারী, পাঞ্জাবের ইলেক্ত্রিকাল শিল্পের মাথায় হাত সস্তার চীনা মালের জন্য। সেসব আটকাতে মোদি কিছুই করেন নি-এদিকে ধুয়ো তুলেছেন, মেইড ইন ইন্ডিয়া। কেজরিওয়াল মাত্র একটা বাক্যে বিঁধেছেন।

কিন্ত মোদি যখন ডিজিটাল ইন্ডিয়া, সচ্ছ ভারতের কথা বলেন-আপনি কি ম্যানুয়াল ইন্ডিয়া, নোংরা ভারতের জন্য আন্দোলনে নামবেন? বামেদের মতিগতি দেখে তাই মনে হয়। সেইজন্যেই তারা আজ ন্যাশানাল খোরাক। বরং বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্বচ্ছ ভারতের স্লোগানকে আরো শক্ত করা।  এবং দেখা সত্যিই কৃষকের হাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি এল কি না। যদি না আসে মোদির সমালোচনা করুন। সেখানে মোদি বধ করুন। কিন্ত একটা ভালো প্রচেষ্টার বিরোধিতা হাস্যকর লাগবে। যেখানে পৃথিবীর বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যত খুব পরিস্কার। প্রযুক্তি বিপ্পবই একমাত্র সামাজিক বিপ্লব আনতে সক্ষম।  এই দুর্নীতি, এত অভাব, এত আত্মহত্যা, এত সাম্প্রদায়িকতা- এর বিরুদ্ধে একটাই সমাধান-প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান।  অবশ্য বৈদিক বিজ্ঞান এবং বৈদিক প্রযুক্তির মতন ধোঁকাবাজি মারাতে এলে, বাজে কথা বলতেই হবে। কিন্ত মোদি মিথ্যে ত কিছু বলে নি-সত্যিই প্রতি মুহুর্তে আমাকেও ভাবতে হয়, বর্তমানে আমাদের সিস্টেম এন্ড্রয়েডে চালাচ্ছি-ভবিষ্যতে কি আই ও এস বা উইন্ডোজে যেতে হবে?

সমাজে প্রগতি, আধুনিকতা আসবে বিজ্ঞান প্রযুক্তির জন্য। দর্শন শাস্ত্র বা রাজনীতির জন্যে না।  রাজনীতিবিদ মানে অভিনেতা। স্টেজ লাইট অভিনয় ডায়ালোগ-সব কিছুতেই মোদি অন্যদের অনেক পেছনে ফেলেছেন। একমাত্র একজন মোদিকে সব বিভাগেই হারাতে পারেন-তিনি আরভিন্দ কেজরিওয়াল। যদ্দিন না মোদি বিরোধিরা এই ব্যপারটা বুঝতে অসমর্থ হবেন-তারা হেরো পার্টি হয়েই ডিগবাজি খাবেন। পশ্চিম বঙ্গ বা তামিল নাডু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন মোদি বিরোধি থাকবে-কারন এখানে মমতা বা জয়ললিতা, অভিনয়ে মোদির থেকে খুব বেশী পিছিয়ে নেই।

 এতেব বামবৃন্দ। অভিনেতা খুঁজুন। বিজ্ঞাপন দিন।

 

   

Tuesday, September 22, 2015

লক্ষী বনাম স্বরস্বতী

বাঙালীর ব্যবসা বিমুখতা নিয়ে কাল লিখেছিলাম। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুটো প্রশ্ন উঠে এসেছে-

 ১) লক্ষী এবং স্বরস্বতীর সাধনা একসাথে করা সম্ভব কি না-অথবা-জ্ঞান না অর্থ ? কিসের সাধনাতে জীবন সার্থক ?

 ২)  সংস্কৃতিচর্চার সাথে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির বিরোধিতা আছে কি না। বাঙলার ব্যবসা বিমুখতার পেছনে বাঙালী সংস্কৃতির ভূমিকাটা ঠিক কি?

 প্রথম প্রশ্নের উত্তর সহজ। এই একবিংশ শতাব্দিতে, আমরা এখন নলেজ ইকোনমিকর যুগে। "জ্ঞান" ই এখন মূল "পুঁজি"। স্বরস্বতী ছাড়া লক্ষীর সাধনা এই যুগে আর সম্ভব না।  ট্রেডিং বলে যেটা ছিল, আস্তে আস্তে সব ইকমার্সে চলে আসছে।  যেকোন আধুনিক ব্যবসাতেই প্রচুর জ্ঞানের প্রয়োজন। আমেরিকাতে যত সফল ব্যবসায়ী দেখেছি-প্রত্যেকেই নানা বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন।  ভারতেও দিনকাল বদলাচ্ছে। আগেকার মতন বাঁহাতে টাকা গুনছে, ডানকানে ফোন ধরে বসে থাকা মারোওয়ারী, আস্তে আস্তে বিরল প্রজাতি হবে। সুতরাং জ্ঞানের সাথে ব্যবসার বিরোধ নেই।

 দ্বিতীয় প্রশ্নটা বিতর্কিত। সংস্কৃতির  চর্চার কারনে বাঙালী ব্যবসাবিমুখ কি না। আমি মনে করি, কিছুটা তাই। অনেক কারন আছে এমনটা ভাবার। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে ব্যবসায়ী হওয়া যায় না-এমন দাবী আমি করছি না। তবে নাটক গান নিয়ে মত্ত আবার একাধারে সফল ব্যবসায়ী এমনটা হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারন সব সাফল্যই ফোকাস দাবী করে। ব্যাবসা, নাটক বা সাহিত্য-কোন উৎকর্ষতাই ফোকাস ছাড়া আসে না। একটা লেভেলের পরে লোকে টাকার জন্য ব্যবসা করে না-নাটক বা সাহিত্যের মতন-ওটাও একটা প্যাশন হয়ে দাঁড়ায়।

 বাঙালী কেন ব্যবসা বিমুখ হল-এর অনেক কারন আছে। প্রথম ধাক্কা,  বৃটিশ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। অষ্টদশ শতকের শেষ ভাগে, বাঙালীর ক্রাফটসম্যানশিপ সম্পূর্ন ধ্বংস করে কোম্পানীর ট্যাক্সেশন ব্যবস্থা। জুট এবং টেক্সটাইল মিলের মালিকানা মূলত গুজরাতি এবং মারোয়ারীদের হাতে এল কেন-কেন বাঙালী জমিদাররা ওই ব্যবসাই গেলেন না-সেটা বিতর্কিত ইতিহাস।  বাঙালী জমিদাররা কেওই কৃষিজ পুঁজিকে শিল্পে ঢালেন নি। বরং তারা কোলকাতায় বাইজি, গান সাহিত্য চর্চাতেই নিমগ্ন ছিলেন। ব্যবসাকে তারা ঘৃণা করতেন।

 একটা উদাহরন দিই। রবীন্দ্রনাথে লেখা থেকেই। জগদীশ বোস, মাইক্রোওয়েভ নিয়ে তার কাজের যে প্রচুর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে, তা বৃটেনে গিয়েই টের পান।  বৃটেনের ব্যাবসায়ীরা জেসি বোসকে ইংল্যান্ডে এসে তার গবেষনার পেটেন্ট নিয়ে, বাণিজ্যিকরনের প্রস্তাব দেন। মূলত সলিড স্টেট রিসিভারের ক্ষেত্রে, তার কাজ ছিল যুগান্তকারী। জেসি বোস সেই প্রস্তাবের কথা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখেন। রবীন্দ্রনাথ উপদেশ দেন একজন স্বাধীন বিজ্ঞানীর গবেষনা বেনিয়াদের হাতের পুতুলে পরিনত হবে তাতে তিনি নারাজ।  বরং জেসি বোসের  গবেষনার টাকার জন্য তিনি ত্রিপুরা কোচবিহারের মহারাজাদের কাছে ভিক্ষা করবেন।

 অথচ নিকোলা টেসলার মতন পদার্থবিদ, একজন জগৎবিখ্যাত উদ্ভাবক -তিনিও কিন্ত জানতেন, তার গবেষনাকে সমাজের কাছে পৌছাতে গেলে বাণিজ্যকরন করতেই হবে। টেসলার সাথে ওয়েস্টিং হাউসের চুক্তি না হলে, আজকের বিদ্যুৎ প্রযুক্তি অনেক দিন পিছিয়ে যেত। ইনফ্যাক্ট বাণিজ্য করে কি হবে, নিরন্তর নিভৃত্বে জ্ঞানের সাধনা করেই মোক্ষ লাভ-এটা করতে গিয়ে জগদীশ চন্দ্র বোস এবং বিজ্ঞান-দুই জগতেরই ক্ষতি হয়েছে।  স্যার জেসি বোস যদি, তার মাইক্রোয়েভ ইনভেনশনগুলি পেটেন্ট করার কথা ভাবতেন বা ইংল্যান্ডের কোম্পানীটি-যারা তার গবেষনার বাণিজ্যকরনের প্রস্তাব দিয়েছিল তাদের প্রস্তাবে সারা দিতেন, মাইক্রোয়েভ  এবং সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি অন্তত পঞ্চাশ বছর আগে দিনের আলো দেখত। নোবেলজয়ী পদার্থবিদ স্যাল নেভিল মট লিখেছিলেন, জেসি বোস সেমিকন্ডার ডায়োড আবিস্কারের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। কিন্ত তারপরে তার গবেষনা আর সেই দিকে চালান নি। ফলে সেমিকন্ডাক্টএর জন্ম প্রায় পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যায়।

 আমি যেভাবে বাঙালীর ইতিহাস দেখি-বাঙালীর মধ্যে অত্যন্ত আধুনিক আন্তারপ্রেনার প্রিন্স দ্বারকানাথের জন্ম হল-কিন্ত ঠাকুর পরিবার টাটা বিড়লা ফ্যামিলি না হয়ে সাংস্কৃতিক রেঁনেসাসের অংশ হয়ে রইলো। স্যার জেসি বোসের মতন একটি বিরল  প্রতিভা-যিনি হতে পারতেন টেসলা বা এডিসনের সমোগোত্রিয় একজন ঐতিহাসিক আবিস্কারক, ব্যবসা বিমুখতার দরুন, বাঙালীর ঐতিহাসিক লেগাসী হয়েই রইলেন। টেসলা বা এডিসনদের মতন ইম্প্যাক্টফুল হতে পারলেন না।

Monday, September 21, 2015

ঠাকুর বাড়ি ও বাঙালীর ব্যবসা

আমি প্রতিষ্ঠিত বাঙালীদের মধ্যে দু সেট স্যাম্পল দেখি। একটা সেট নাটক, ব্যান্ডের গান, সিনেমা নিয়ে মত্ত। একদম ডিরেক্ট পার্টিসিপেশন। অন্য একটা সেট মাল খাবে, শেয়ার মার্কেটে একটু খুচরো খেলবে, লেটেস্ট হিন্দি কালচারে আপডেট রাখবে- পশ্চিম বঙ্গের কিছু হবে না বলে গাল দেবে। আমি তাদের কথাই লিখছি, বাঙালীদের মধ্যে যারা ভালো মাইনের চাকরি করে-দেশে বিদেশে কাজের সূত্রে যাতায়াত আছে।

 আমেরিকাতে বাঙালীদের ৬৫ টা নাটকের দল ( আমার কাছে ২০১২ সালের লিস্ট অনুযায়ী), ব্যান্ডের গানের দল আছে গোটা কুড়ি।

 মুশকিল হচ্ছে বাঙালীর অর্থনৈতিক পুনঃজীবন আজকে সব থেকে বেশী দরকার। সেই কাজটা খুব কষ্ট করে হলেও করছে মফঃশহরের কিছু বাঙালী যুবক। যাদের শিক্ষা খুব বেশী  নেই - চাকরির অভাবে পিঠ এখন দেওয়ালে। তারাই হয়ত কষ্ট করে একটা ব্যাটারী ফ্যাক্টরী- লোক্যাল আলমারী তৈরীর ছোট কারখানা করে দু একজন কর্মচারী রাখার সামর্থ্য হয়েছে । বা ছোট হোসিয়ারি ফ্যাক্টরী খুলে টি শার্ট বানাচ্ছে।

অথচ এরা আমাদের সমাজে ব্রাত্য। কবি, নাট্যকার, ব্যর্থ সিনেমাকাররা বাঙালীর ডেমিগড। বাঙালীর উচ্চ ইন্টেলিজেন্সিয়া কোনদিন বাঙালীর অর্থনৈতিক পুনঃজীবনে কোন ভূমিকা রাখে নি। ব্যাতিক্রম আচার্য্য প্রফুল্ল রায়-যিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল খুলে পথ দেখিয়েছিলেন। কিন্ত সেটাও বাঙালীরা রাখতে পারল না। বন্ধ হয়ে গেছে যদ্দুর জানি।

 দেখেশুনে মাঝে মাঝে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর যা পেছন মেরেছেন, তার স্বপ্নাবেশ থেকে বাঙালী  আর কোনদিন বেড়োতে পারল না। অথচ আবাহমান কাল থেকে বাঙালী ওমন ছিল না- বঙ্গেই জন্মে ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ।  ভারতের প্রথম আধুনিক আন্তারপ্রেনার।  অথচ তার প্রতিষ্ঠিত ঠাকুর বাড়ি থেকে বাংলা ব্যবসার কালচারটা পেলো না। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ চেষ্টা করেছিলেন-কিন্ত ঠাকুর্দার বুদ্ধি তার মাথায় ছিল না।  ঠাকুরেরা বাঙালীকে ভাসালেন কবিতা, গান, নাটকে। ব্যাবসার পথ প্রদর্শক হতে পারলেন না তারা। বাঙালীর ব্যবসা সূর্য্য ঠাকুর বাড়িতেই অস্তমিত হয় রবীন্দ্রনাথের উত্থানের সাথে সাথে।

Sunday, September 20, 2015

কোলকাতার ডাক্তার

ক্রিকেটকে কাব্যিক মেদুরতা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে, বাজারী বানানোর কৃতিত্বটা ডালমিয়ার। তবে কিনা সবকিছুর বাজারীকরন  সম্ভব না-যেমন প্রেম এবং সাহিত্য।  এইসবের বাণিজ্যকরন মানে- যে আম কাঁচা খেতেই ভাল, সেই আম পাকিয়ে শুধু রঙের জোরে বেচতে গিয়ে আমটাকে পচিয়ে ফেলা।

   আমার শঙ্কা অন্যত্র। ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে থেকেও হঠাৎ করে পটল তুললেন যেখানে চব্বিশ ঘন্টা আগেও ডাক্তার তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছিলেন? কোলকাতায় গিয়ে যদি এবার কিছু হয় নার্সিং হোমে ঢুকতেই ভয় লাগবে। শুধু ডালমিয়া না, আমার চেনাশোনা অনেক পৌঢ়ই কোলকাতার নার্সিংহোমে ঢুকে পটল তুলেছেন।

 
 একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবেই বুঝি ডাক্তারের কাজটা অনেক কঠিন। কারন মানুষের সিস্টেমতা মেশিনের থেকে অনেক বেশি জটিল। সেই জন্যেই ডাক্তারদের আরো বেশী পরাশোনা বা রুগী দেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশী ফোকাসের দরকার হয়। কোলকাতার কটা ডাক্তার নিজেদের আপডেট রাখেন বা রুগী দেখার ভীরে সেই ফোকাসটা দিতে পারেন?

 আমি নিজে কোলকাতার ডাক্তারদের ম্যালট্রিটমেন্টের জন্য ভুগেছি। সাধারন গ্যাসের সমস্যা না বুঝে একগাদা টেস্টিং এবং ভুল ওষুধ খাওয়ার জন্য আমার ওজন একদা পঞ্চাশের নীচে নেমে গিয়েছিল। একজন না প্রায় তিনজন এই মিসট্রিটমেন্ট করেছিল-যারা নিজেদের নামের পাশে লণ্ডনের ডিগ্রি ঝুলিয়ে রাখে। শেষ এক গ্রামের ডাক্তার আমাকে সারিয়েছিল কোন টেস্টিং না করে-শ্রেফ অভিজ্ঞতার জোরে।  প্রায় কুড়ি বছর আগেই বুঝেছিলাম, একটা রোগ দেখার জন্য যতটা সময় দেওয়া দরকার ততটা টাইম ডাক্তারদের নেই-ফলে ডাক্তার আর হাতুড়ে ডাক্তারদের মধ্যে পার্থক্য খুব বেশী নেই।

আমি আবার বলছি ডাক্তারদের কাজটা কিন্ত অনেক কঠিন। তবে বর্তমানে আই ওটির দৌলতে যে নতুন প্রযুক্তি আসছে, তাতে ডাক্তার ছাড়াই, মানুষে নিজের রোগভোগ রোজ মনিটর করতে পারবে। ডাক্তারদের কাজটাও অনেক সহজ হবে। প্রযুক্তিই ভরসা। ডাক্তার রা না। মানুষের ওপরে প্রযুক্তি আরেকবার জিততে চলেছে।

বাঙালীর নেতাজি ভাবাবেগ...

নেতাজিকে নিয়ে বাঙালীর এত আদিখ্যেতা কেন -সেটা বরং আরো বড় গবেষনার বিষয় হতে পারে। হতে পারে তিনি নাঁখখত দেওয়া, পতিত একটি জাতি-যারা ভীরু দুর্বল চাকর হিসাবে ইতিহাসে চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিয়েছে -তাদের একটু মাথা উঁচু করার সুযোগ দিয়েছেন। এক বাঙালী সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাজারে বৃটিশ আমেরিকান শক্তিকে চুনৌতি দিচ্ছে হিটলার, তেজোর সাথে মিটিং করে- এটা নিঃসন্দেহে বাঙালী হিসাবে গর্ব করার মতন বিষয়ই বটে।  সত্যিই ত বাঙালী তার দুহাজার বছরের ইতিহাসে নেতাজি ছাড়া আন্তর্জাতিক ত দূরের কথা- আর কোন জাতীয় মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৈরী করতে পারে নি। প্রণববাবুত গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক বিষ্ঠা পরিস্কার করতে করতে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট পদের কোন গরিমা নেই। ওটা ছিল বহুদিন ধরে গান্ধীপরিবারের খাস চাকরদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট। এন ডি এ এসে এপিজেকে বসিয়ে প্রথম সেই ট্রাডিশনে ব্রেক টানে। শেখ মুজিবর রহমান সম্পূর্ন মাখানো ব্যক্তিত্ব- দ্বায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সব সম্ভবনা ধ্বংস করেছেন কারন  তিনি কোন ভাল প্রশাসক ছিলেন না।


 সুতরাং এই নেতাজি নামক সবেধন নীলমনি কুমীর ছানাকে নিয়ে বাঙালীর আবেগ থাকবে-সেটাই বোধ হয় স্বাভাবিক।

 কিন্ত এটাও আমাকে ভাবায়,  যে বাঙালী সেই আবেগের তোড়েই ভাসতে ভালোবাসে-নিজেদের উন্নতির জন্য যুক্তি এবং ফ্যাক্টের ধার ধারবে না।

 নেতাজিকে নিয়ে যারা সামান্যতমও পড়েছেন, তারাও জানেন

   (১) নেতাজি অর্থনীতির দিক দিয়ে, নেহেরুর থেকে আলাদা কিছু ভাবতেন না। নেতাজি আসলেও ভারতে সেই নেহেরুর মতন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পেরই সূচনা হত। ভাল মন্দ যাইহোক, ফল একই হত।  ব্যর্থতার কারনে সেই মার্কেট ইকোনমীতে কোন না কোনদিন ঢুকতেই হত।

 (২) নেতাজি ভারতে সফল হলে, ভারতে একনায়ক তন্ত্র আসত-এগুলো স্পেকুলেশন। যদি উনি যুদ্ধে জিতে আসতেন, তাহলে ভারত যে জাপানী কলোনী হত, তাই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে গণতন্ত্র বা ডিক্টটরের বিতর্কটাই অর্থহীন।  আর যদি স্বাধীন ভারতে কোন রকমে ফিরতে পারতেন ,  বড়জোর মমতা ব্যানার্জির মতন আরেকটা বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস তৈরীতে সক্ষম হতেন। কারন ফরওয়ার্ড ব্লকের ফিউচার সেকালেও ছিল না-আজও নেই।


 মুখে আমরা যতই বড় বড় কথা বলি না কেন, বাস্তব হচ্ছে যেসব দেশগুলি বাজার অর্থনীতির সার্থক রূপায়ন করতে পেরেছে দ্রুত, তারাই একমাত্র সফল হয়েছে। যেমন চীন, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান। গণতন্ত্র না স্বৈরতন্ত্র-সেই প্রশ্নটা সেখানে অর্থহীন। আজ ভিয়েতনাম ও দ্রুত গতিতে সফল হচ্ছে-কারন সেই বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ উন্নতির প্রশ্নে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের বিতর্কটা কৃত্রিম -বাজার অর্থনীতি কোন রাষ্ট্র কত সফল ভাবে নামাতে পেরেছে, সেটাই মুখ্য। ইতিহাস আপাতত তাই বলছে।

 নেতাজীর রাজনীতিতে বাজার অর্থনীতির কোন উল্লেখ নেই। বরং নাৎসী, ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির জন্য আছে আকুন্ঠ প্রশংসা। তবে ক্ষমতায় থাকলে উনিও বুঝে যেতেন, বাজারই হচ্ছে একমাত্র মহারাজ। বাকী সবকিছুই কবির রোম্যান্টিক কল্পনা।

 ভারতে সমস্যা হচ্ছে ধণতন্ত্র বা বাজার সেই ভাবে এখনো আসেনি। ভারতের কোম্পানীগুলো সামন্ততন্ত্রের বাজারী রূপ।  মার্কেট রেগুলেশন বলতে কিস্যু নেই-ফলে ডাক্তার হয়েছে ডাকাত-শিক্ষক হয়েছে শোষক-  আর ভারতে ব্যবসা মানেই চোর ডাকাতদের  ভদ্রবেশে পুনঃবাসন। এমন সব আইন কানুন, বাবুদের টাকা না দিলে, কোন কিছু করা সম্ভব না।   তবে আস্তে আস্তে বাজার ভারতে আসছে -কিন্ত বাঙালীরা সেখানেও সেই আইটি কুলিগিরির বেশী সুযোগ নিচ্ছে কোথায়? বাজারের সুযোগ নিতে গেলে বাঙালীকে তার উর্বর মাথাটা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় নামতে হবে। নেতাজিকে নিয়ে আবেগে ভাসলে হবে না। এগুলো জাতি হিসাবে বাঙালীর সীমাহীন মনোবৈকল্যকেই ইঙ্গিত করে।

Wednesday, September 16, 2015

জাস্টিস কার্জু এবং নেতাজীর ভূত

জাস্টিস কার্জু নেতাজি এবং জাপান নিয়ে  যে ইতিহাস টুকু বলার চেষ্টা করেছেন, সেটা ফ্যাকচুয়ালি কারেক্ট। কিন্ত নেতাজী জাপানের চর ছিলেন-এটা নিঃসন্দেহে অপমানজনক কথা। উনি হাইপার না হয়ে যদি শ্রেফ এটুকু বলতেন, নেতাজী-জাপানের হাত ধরে ভারতের স্বাধীনতা আসত না-জাপান জিতলে, ভারতের মাস্টার বৃটিশরা না হয়ে জাপানীরা হত-তাহলে তার বক্তব্য বিরোধিতা করা কঠিনই হত।

  এবার কার্টজুর ইতিহাসে আসা যাক। আই এন এ জিতলে, ভারত কি স্বাধীন হত?

   উত্তর হচ্ছে একেবারেই না। ভারতের জাপানের অধীনে চলে যেত সরাসরি। জাপান যেসব জায়গা ১৯৩০ সাল থেকে দখল করে বসে ছিল যেমন মাঞ্চুরিয়া, কোরিয়া-সর্বত্রই এক পুতুল সরকার সামনে রেখে তারা অবাধ কলোনিয়ালাইজেশন আর নির্লজ্জ্ব লুঠ চালিয়েছে। নেতাজি তেমন এক পুতুল প্রধানমন্ত্রী হতেন বড়জোর সেই ক্ষেত্রে।

   এবং নেতাজি  যে জাপানের হাতের পুতুল হতেন তার অকাট্য প্রমান আছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে-যখন আন্দামান নিকোবর জাপানীদের হাতে চলে যায় 1942 সাল থেকে '৪৫ সাল পর্যন্ত।

  ২৬ শে মার্চ , ১৯৪২ পোর্ট ব্লেয়ারের পতন হয়। তখন ভারতীয়দের বলা হয় রাসবিহারী বসুর ইন্ডিপেনেডেন্স লীগে জয়েন করে বৃটিশ বিরোধি মিলিশিয়া তৈরী করতে।    ডঃ দিওয়ান সিং এর নেতা ছিলেন। আদতে এই মিলিশিয়াকে জোর করা হয়েছিল, স্থানীয় মেয়েদের জাপানী সেনাদের জন্য কম্ফোর্ট গার্ল হিসাবে তুলে দিতে।  আর মিলিটারির জন্য স্থানীয়দের শ্রমদান বাধ্যতা মূলক করতে।  ফলে লীগের কিছু মেম্বার বিদ্রোহ করে এবং তাদের জাপানী সেনারা মেরে ফেলে। তাদের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্সে লীগের নেতা  ড ঃ দিওয়ান সিং ও ছিলেন। যাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছিল জাপানী সেনারা। কারন তিনি স্থানীয় মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন।

 আনুষ্ঠানিক ভাবে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নেতাজীর হাতে তুলে দেওয়া হয় 1943 সালের ২৯ শে ডিশেম্বর। নেতাজি জানতেনই না আন্দামান নিকোবরে ভারতীয়দের কি ভাবে দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে এবং কিভাবে জাপানী সেনারা স্থানীয় মেয়েদের ধর্ষন করছে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে গিয়ে! উনি নাকি এটাও জানতেন না লীগের নেতা ( যে লীগের দ্বায়িত্ব তিনি রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে নিয়ে ছলেন ) দিওয়ান সিংকে জাপানী সেনারা পিটিয়ে মেরেছিল ! নেতাজি আসার আগে প্রায় ৬০০ জন ভারতীয়কে খুন করেছিল জাপানী সেনারা। যাদের অধিকাংশই আবার লীগের মেম্বার ছিল!

                 নেতাজি সেলুরাল জেলে তেরঙ্গা উত্তোরন করেন ৩০ শে ডিসেম্বর।   আন্দামান নিকোবরের নাম দিলেন শহীদ এবং স্বরাজ।  নেতাজি এ ডি লোগানাথনকে গর্ভনর করে দ্বীপ ছাড়েন। কিন্ত এডি লোগানাথনের সাক্ষ্যে  [১]এটা পরিস্কার যে নেতাজি দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া মাত্র দ্বীপের অধিকার আবার জাপানীদের হাতেই চলে যায়। লোগানাথনের হাতে না ছিল পুলিশ না ছিল অন্য কিছুর ক্ষমতা। নেতাজি দ্বীপ ছাড়ার একমাস বাদেই ঘটে হাম্ফ্রেগঞ্জ ম্যাসাকার। যেতে লীগের ৪৪ জন মেম্বারকে একদিনে হত্যা করে জাপানীরা-কারন তারা জাপানী অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে আন্দামান মুক্ত হয় জাপানী বাহিনীর। তদ্দিনে প্রায় ২০০০ ভারতীয় খুন করেছিল জাপানী সেনারা। এবং দ্বীপে এমন কোন সক্ষম মহিলা ছিল না যাকে তারা ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যায় নি।

   এবং নেতাজী কিছুই না কি টের পান নি!! সব কিছু তার নামেই চলেছে!

 সুভাস বোসের ইতিহাস মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখলে দেখা যাবে, উনার দেশপ্রেমের আবেগ ছিল বেশী-রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল কম-যার জন্য উদারভাবে মুসোলিনী এবং হিটলারের প্রসংশা করেছেন। জাপান বা জার্মানীর সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসান তার চোখেই পড়ে নি!

  আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ঘটনা খুব পরিস্কার ভাবেই প্রমান করে, ভারত দখল করলে জাপানীরা কি করত। নেতাজিকে পুতুলমন্ত্রী করে ভারত শোষন করত জাপানিরা-যা তারা করেছে কোরিয়া, মাঞ্চুরিয়া, ভিয়েতনাম আর চীনে।  আর প্রতিবাদ করলে নেতাজিকে পরপারে পাঠিয়ে দিত। তবে নেতাজি জাপানী শোষনের প্রতিবাদ করতেন, একথা বিশ্বাস করা শক্ত আন্দামান নিকোবরের ইতিহাস জানার পরে। শুধু আন্দামান না, আরো অনেক ইতিহাস ঘেঁটে আমি এটাই পেয়েছি-নেতাজির নেতৃত্বের লোভ ছিল প্রবল-সেটা দেখানোর ইচ্ছা ছিল আরো বেশী-এবং সেই জন্যে আন্দামানে কি হচ্ছে সব কিছু জেনে শুনেও উনি জাপানী সেনাদের বিরোধিতা করেন নি-পাছে জাপানীরা তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে আই এন এর নেতা বানায়।

সুতরাং জাস্টস কার্জু ভুলটা কি বলেছেন? শুধু দুর্ভাগ্য এই যে আন্দামানের ইতিহাসটাকে উনিও সামনে আনেন নি।

 নেতাজিকে অতিমানব বানিয়েছে বাঙালী।  আন্দামানের ইতিহাস প্রমান যে উনি সফল হলে, ভারতীয়দের কপালে, আরো বেশী দুঃখই লেখা ছিল!

যারা  জাস্টিস কার্জুর বিরোধিতা করছেন, তারা ইতিহাস পড়েন নি। অর্নব গোস্বামীর কথা ছেড়ে দিলাম। ওটা ভারতের টেলিভিশন ইতিহাসের সব থেকে বড় বলদ।

 ইতিহাস হচ্ছে সেই ম্যাগনিফ্যাইং গ্ল্যাস যেখানে নেতাজি, গান্ধী, লেনিন, নেহেরু-ইত্যাদি সব "বড়" "বড়" মহামানব ম্যানুফ্যাকচার করা হয় রূপকথা মিশিয়ে । আদতেই পৃথবীতে কোনদিন কোন মহামানব জন্মায় নি-জন্মেছে দোষগুন নিয়ে সাধারন মানুষ। রূপকথা মিশিয়ে কিছু কিছু মানুষকে মহামানব বানানো হয়েছে-কারন সকল জাতিই অনুপ্রেরণার জন্য "হিরো" খোঁজে। এই দিক থেকে সাউথ ইন্ডিয়ানরা খাঁটি- তারা রজনীকান্ত সিনেমা থেকেই তোলে- রাজনীতিবিদদের রজনীকান্ত বানায় না।


[১] Jayant Dasgupta Japanese in Andaman & Nicobar Islands. Red Sun over Black Water(Delhi: Manas Publications) 2002 pp42, 88-91

Monday, September 7, 2015

পারভাইল বাবা

মন যা চাই, তাই নিয়ে লেখা ভারী দায়। জীবনের সব আশা পূর্ন হওয়ার না -কিন্ত কে আর তা বোঝে, না আমিই ছাই বুঝি সব সময়।  কত কিছুইত চাইলেই হয় না । তার থেকেও যঘন্য এই যে গোটা পরিবার, সমাজ, বন্ধু, রাষ্ট্র বসে আছে সুযোগ পেলেই আপনাকে ভিলেন বানাবে।
  এই সব আশাহত বেদনা থেকে যাতে মনোবৈকল্য না হয়, তার জন্যে আজ শোনাই পারভাইল বাবার কথা।
  ইনি ছিলেন উত্তর ভারতের এক সাধু। সেকালে ভারতে সন্ন্যাসচর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ভারত্মার উপলদ্ধি -যার জন্য সব সন্ন্যাসীরাই ভারত ভ্রুমনে বেড়োতেন। এমন এক উত্তর ভারতের সাধু এলেন তামিল নাডুতে।  তামিল ভাষা কিছুই জানেন  না তিনি। জানেন শুধু একটাই শব্দ-পারভাইল। মানে কুছ বাত নেহি !
    তামিল নাডুর এক গ্রাম তার ভাল লেগে গেল। তিনি গ্রামের বাইরে এক বৃহৎ বৃক্ষে ঘাঁটি বাঁধলেন।  লোকে ভিক্ষা নিয়ে এসে নিজের ধান্দার কথা জিজ্ঞেস করে- বাবা, আমি মামলায় জিতব ত? ফসল এবার হবে ত !  সেই সাধু শুধুই উত্তর দেয় পারভাইল! পারভাইল!!
   গ্রামের মোড়লের মামলা চলছিল দীর্ঘদিন ধরে-লোকটা কাজির কাছে যাবার আগে সেই সাধুর কাছে এল। বাবা, আজ মামলায় জয় হবে ত? আবার সেই উত্তর পারভাইল!!
  মোড়ল মামলায় জেতে। তার ধারনা সে সাধুবাবার আশীর্বাদেই জিতেছে। ব্যাস, সে সাধুর নাম দিল পারভাইল স্বামী। তার নামে গড়া হল মন্দির। দিক দিগান্ত থেকে লোকে আশীর্বাদ চাইতে আসত তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য-সাধুজীর শুধু একটাই উত্তর-পারভাইল। জ্বর থেকে আমাশায় উপশম, বিয়ে থেকে বিচ্ছেদ-উপদেশ চাইলে-বাবা শুধু একটাই কথা বলতেন , পারভাইল! কুছ পরোয়া নেহি!!! যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থ্রি ইডিয়টেস নেমেছিল -আল ইজ ওয়েল!
  ত একদিন হল কি --মোড়লের মেয়ে অন্তঃসত্বা -তা প্রকাশ পায়। বাপ মা ত এই মারে ত সেইমারে-বাচ্চার বাপের নাম জানার জন্য। মেয়েটা ফস করে বলে দিল-পারভাইল বাবা!
  গ্রামের লোকসুদ্ধ ডান্ডা, লাঠি নিয়ে পারভাইল বাবার আশ্রমে এসে বাবাকে এইস্যা পেটানো শুরু করল। শালা ভন্ড! যাইহোক দুই বুদ্ধিমান লোক বললো একে মেরে কি হবে। তোমার মেয়েকে, পারভাইল বাবার সাথে অন্য দূর গ্রামে নির্বাসন দাও!
  পারভাইল বাবা-কিছুই বলেন না। এখানেও জিজ্ঞেস করলে বলেন পারভাইল!
  একদিন সেই মেয়ের প্রেমিক হাজির। বলে এবার বিয়ে করবে-আগে আসলে বাপের অত্যাচারে নাকি প্রমিকাকে স্বীকার করতে পারছিল না। সেই মেয়েত রেগে লাল-বললো আগে পারভাইল বাবার কাছে ক্ষমা চাও। ছেলেটি ক্ষমা চাইতে গেল- সেই সাধু বলে -পারভাইল!
 ছেলেটি এবার গ্রামে ফিরে সবার সামনে স্বীকার করে সেই বাচ্চার বাবা-পারভাইল স্বামীকে বিনা কারনে হেনস্থা করা হয়েছে। সবদোষ তার। 
  গ্রামের সবাই মিলে পারভাইল স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইতে গেল। সবাই বললো-স্বামীজি আপনি একরবার ও প্রতিবাদ করলেন না আপনার বিরুদ্ধে ওঠা এত বড় মিথ্যের?
  স্বামীজি এবার ও বললেন -পারভাইল!!!
  সত্যিই ত! আমাকে কে কি অপবাদ বা পুরস্কার দিল-তাতে আমার কিই বা যায় আসে? আমি আমার নিজের কাছে সৎ আর স্বচ্ছ থাকলেই যথেষ্ট!

Saturday, September 5, 2015

যেসব শিক্ষকদের ভুলি নাই

 আজ শিক্ষক দিবস।  ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে শিক্ষকদের ভূমিকাকে স্বরণ করার দিন।

  আমার বাবা মা দুজনেই হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দাদুওশিক্ষক। সেই হিসাবে, আমার ও শিক্ষক হওয়ার কথা। সেই দিকেই এগোচ্ছিলাম। কিন্ত হঠাৎ করে একাডেমিক্সে মোহভঙ্গ হওয়ায়, লাইফে সব ঘেঁটে যায়।  যাইহোক এই লেখা শুধুই ঋণ স্বীকার করার চেষ্টা মাত্র।

 ক্লাস টু থেকে সিক্স পর্যন্ত আমার গৃহশিক্ষক ছিলেন অশ্বিন বাবু। উনি প্রাইমারী স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক -কিন্ত উনার সব থেকে বড় পরিচয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী।  একঘন্টা পড়াতেন।  কখনোই প্রথাগত  পাঠ না-উনার মুখে শুনতাম স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের গল্প। উনাদের ছেলেবেলা, স্কুল বেলার গল্প।   কতশত বীরেদের গল্প। কোনদিন স্কুলের সিলেবাসে কি আছে পড়ান নি। উনি বলতেন তোমার জীবনে শিক্ষকের  দরকার নেই-দরকার অনুপ্রেরণার। এইভাবেই অজান্তে ইতিহাসের প্রতি এক  নিবিড় ভালোবাসা উনি গড়ে দিয়েছিলেন।

 আমি মাধ্যমিকে ছিলাম করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলে। আমাদের সময়ে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার মান বেশ উঁচুই ছিল। গ্রামের স্কুলে সব থেকে বড় সুবিধা এই যে, ওখানে জীবনে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এসবের চাপ ছিল না। সহপাঠিদের অধিকাংশের বাবারা ছিল করিমপুর শহরের ব্যবসায়ী। ছোট বড় মাঝারী। ফলে খেলার সময় ছিল অফুরন্ত- পড়াশোনা ভাল লাগলে কর। না করলে বাবার দোকানে বসবে। এই ছিল বন্ধুদের এটিচুড!   এই স্কুলের যেসব শিক্ষকের কথা না বলেই না-তাদের মধ্যে বাংলার শিক্ষক অরুন চ্যাটার্জি, ইতিহাসের পার্থ রুজ এবং বিজ্ঞানের শ্যামল বাবু। অরুনবাবু কোনদিন সিলেবাসে কি আছে দেখতেন ও না। উনি ক্লাস নিতে ঢুকলেই স্যার আজ শনিবারে চিঠি নিয়ে হয়ে যাক এই হত আমাদের আবদার। বা রবীন্দ্রনাথ কেন শেষের কবিতা লিখতে বসলেন। সাহিত্য যে নিছক বইএর বাঁধন না, অপার সম্ভাবনা, তা উনার কাছেই শেখা। পার্থ রুজ যখন যোগ দেন আমরা ক্লাস নাইনে পড়ি। ক্লাস নাইনে তখন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পড়তে হত-উনি বিশ্বভারতীতে পি এই চ ডি করছিলেন। সেই প্রথম আমরা বুঝি যে ইতিহাস যে গল্প বলে তার পেছনে কত নথি, কত গবেষনা থাকে। উনি উনার ভান্ডার উজার করে পড়াতেন। শ্যামল বাবুর স্পেশালিটি অঙ্ক ক্লাসে। উনি ভীষন জটিল অঙ্ককেও সহজ ভাবে দেখতেন। উনার কাছ থেকে লাইফে প্রথম শিক্ষা পাই যে কোন অঙ্ক জটিল লাগছে মানে, আসলেই অঙ্কটাই ঠিক ঠাক ভাবে বুঝি নি। আগে বোঝ, তারপরে সমাধানে হাত দেবে। এর ভিত্তিটা উনিই গড়ে দিয়েছিলেন।

 নরেন্দ্রপুরে দুবছরের উচ্চমাধ্যমিক আরেকটা অভিজ্ঞতা।  মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া ছেলেটি বাদ দিয়ে বাকী প্রায় সব র‍্যাঙ্কাররাই একসাথে ভর্তি হল। গ্রামের স্কুলে অত চাপ ছিল না। কিন্ত এন ডিপিতে সবাই আই আই টি জয়েন্টের জন্য দৌড়াচ্ছে। নরেন্দ্রপুরে আমাদের সময়ে কতগুলো দুর্দান্ত শিক্ষক ছিলেন। প্রথমেই ইনঅরগানিক কেমিস্ট্রিতে আরোগ্য সাহার [ এভিএস]  কথা আসবে। উনি আবার কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি পান। এটমিক স্টাকচার পড়াতেন। সম্পূর্ন বই ছাড়া- ইতিহাস থেকে একেকটা এক্সপেরিমেন্ট কি করে এটমিক স্টাকচারের দিক খুলে দিল-পূরোটা একদম ম্যাজিক রিয়ালিজম। স্টাটে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম পি গিরি। সংখ্যা যে কথা বলে, সেটা উনিই হাতে নাতে শিখিয়ে ছিলেন।  ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট ছিল বেশ খাজা। নরেন্দ্রপুরে সেরা শিক্ষক ছাত্ররাই। আমরা এ ওর কাছ থেকে শিখতাম। শেখানোর চেষ্টা থেকেই নিজে সব থেকে ভাল শেখা যায়, এটাই নরেন্দ্রপুরে শেখা। পাশাপাশি সত্যাদা বা স্বামী সূপর্নানন্দের কথা না বললে এই লেখা অসম্পূর্ন থাকবে। উনি ব্রহ্মানন্দে নিজের রুমে রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত ভারতীয় দর্শনের ক্লাস নিতেন। অপশনাল। মাত্র ছ সাত জনই থাকত। মাঝে মাঝে হত। হিন্দু দর্শনের প্রায় সবকিছুই উনার ওই ক্লাসগুলো থেকেই শেখা। এখন ত উনি গোলপার্কের অধিকর্তা। মাঝে সাঝে পেপারে উনার ছবি দেখি।

আই আই টি খরগপুরের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পাঁচ বছরে ভালো শিক্ষক হাতে গুনে ছিল চারটি।  অধ্যাপক জিপি শাস্ত্রী এবং ডি বসু অসাধরন। যেমন মাপের মানুষ, তেমন মেধা।   উনারা যেভাবে ছাত্রদের ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জ করতেন, সেটা আমাদের জীবনের সেরা ক্লাসরুম অভিজ্ঞতা।  ভাল শিক্ষক ছাত্রদের ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জ করবেন-এটা ছাত্রদের ডেভেলেপমেন্টের জন্যই দরকার। এছাড়া এইচ এন আচার্য্যর কথা লিখব। উনি ইলেকট্রনিক্স এর পেপারগুলো নিতেন। উনার একটা শিক্ষা ভোলার না-যে প্রথমেই তালগাছের মতন ন্যারো ডোমেনে নিজেকে টেনো না। পৃথিবীতে অনেক কিছুর বেসিক শেখার আছে। যেকোন ফিল্ডে ভাল কাজ করতে গেলে সব সাবজেক্টের বেসিক গুলো শেখা অনেক বেশী কাজের।

 আই আই টিতে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকম ডিপার্টমেন্টে পি এই চ ডির সময় দুজনের কথা না বলেই না। প্রথমজন এন বি সি বা এন বি চক্রবর্ত্তী। আমি যখন পি এই চ ডিতে ঢুকি উনার বয়স সত্তর।  উনি আমার গাইডের গাইড। পি এই চ ডির সময় আমাকে প্রচুর পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকোশেন সলভ করতে হত। উনাকে কোন কিছু প্রবলেম বল্লেই বলে দিতেন , ওই বেল সিস্টেম টেকনিক্যাল জার্নালে ওমুকের ১৯৩৪ সালের পেপারটা দেখ!! পুরো ফটোজেনিক মেমোরি। ভারতে ইলেকট্রনিক্স গবেষনার ইতিহাসে এন বি সি একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। উনার কাছে অনেক শিখেছি। আরেকজন প্রফেসর অজয় রায়। অজয়দা এখন শিবপুরে ভিসি।  কিন্ত উনি ছাত্রদের সাথে নানান টাইপের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। তাতে সিস্টেম থেকে পলিটিক্স সব কিছুই থাকত।

 নিউ জার্সিতে, জীবনের প্রথম চাকরীতে একজন অসাধরন লোককে মেন্টর এবং শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলাম। প্রফেসর এডেল সালে। অরিজিন্যালি ইজিপ্টের লোক।  এম আই টির ইলেক্ট্রিক্যালের অধ্যাপক ছিলেন-আমাদের কোম্পানীটা ছিল উনার দ্বিতীয় স্টার্টাপ। উনি বলতেন আর এন্ডিতে ভুল হবেই, তাই বুক চিতিয়ে গর্ব করে ভুল স্বীকার করবে। নইলে পুরো ডেভেলেপমেন্টটাই মাখাবে। এডেল লোক হিসাবেও অসাধারন ছিলেন। জীবনে এত খ্যাতি, টাকা-কিন্ত সম্পূর্ন নিরাহঙ্কার। উনার শর্ট ফ্রেজ ছিল-ক্যান বি ডান-ইউ হ্যাভ টু উইশ ফর ইট!

 জীবনে শিক্ষক কে? শিক্ষক সেই, যে অনুপ্রেরণা যোগায় নতুন কিছু শেখার জন্য। সবার কাছ থেকে সব পরিস্থিতি থেকেই শিখে যেতে হয় এই জীবনে। শেখাটা এক চলমান প্রবাহ। কাজের মাসি থেকে প্রফেসার সালে-আমার সারাজীবনই মনে হয়েছে সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে।



Tuesday, September 1, 2015

শ্রমিক ধর্মঘট-অচল নয়া পয়সা

                                                                                   (১)
আবার আরেক কর্মনাশা সর্বনাশা শ্রমিক ধর্মঘট আজকে।

 আসুন -ইতিহাস থেকে কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন করি। দুধ এবং জল আলাদা হোক। সত্য হচ্ছে ইতিহাসে কোন নজির নেই যে শ্রমিক ধর্মঘট থেকে শ্রমিকরা আদৌ কিছু পেয়েছে কোনদিন। পেলেও তা থেকেছে সাময়িক। আমেরিকাতে শ্রমিকরা মূলত লাভবান হয়েছে কড়া এন্টিট্রাস্ট আইন থেকে। অর্থাৎ যে আইনের বলে মার্কেটে মনোপলি বন্ধ করে অনেক প্রতিযোগী কোম্পানী তৈরী করার সুযোগ দেওয়া হয়।একজন শ্রমিকের কাছে অপশন যদি শুধু একটাই মাত্র ফ্যাক্টরীতে কাজ করা হয়, তার শোষন হাজার আইন করেও কেউ আটকাতে পারবে না। একজন শ্রমিকের অবস্থার তখনই উন্নত হয় যখন (১) তার কাছে একাধিক কোম্পানীতে কাজের সুযোগ থাকে (২) তার দক্ষতার একটা মার্কেট ভ্যালু থাকে।
(১) এর জন্য দরকার কড়া এন্টিট্রাস্ট রেগুলেশন-যা ভারতে নেই। (২) এর জন্য দরকার সরকারী স্কিল মিশন। সেটার আওতাই কজনকে ভারতে আনা গেছে জানি না। তবে আমেরিকাতে ওবামা সরকার প্রভুত কাজ করেছে ২ নাম্বার পয়েন্টের ওপরে।


 শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য ইতিহাস বলে ট্রেড ইউনিয়ান কোন ভূমিকা কোনদিনই রাখে নি।  সেই জন্য আমেরিকাতে ১৯৫৮ সালে ৪০% শ্রমিক ইউনিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আজ সেটা ৭% এ এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতে সমস্ত শ্রমিকদের ২% ও সংগঠিত ইউনিয়ানের অন্তর্ভুক্ত না।  ক্রমাগত অটোমেশন এবং ইনোভেশনের জন্য ফ্যাক্টরী শ্রমিকের সংখ্যা আমেরিকাকে গত তিন দশকে কমেছে ৭০%।  আরো কমবে।  ভারতে আরো দ্রুত কমবে।  যন্ত্রের সামনে শ্রমিক শ্রেনীর অস্তিত্বই যেখানে বিপন্ন, সেখানে ট্রেড ইউনিয়ান নামক অক্সিজেন কোমার রূগীকে দিলে,  কিছুই হবে না। রুগীর মৃত্যু যন্ত্রনা আরো বাড়বে।
                                                                     
                                                                                               
                                                                     (২)

আমেরিকাতে শ্রমিক আন্দোলন সব থেকে বেশী হয়েছে ১৮৮০-১৯০৫ সালের মধ্যে। এর মধ্যে ৩৪,০০০ শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত হয়। হে মার্কেটের ঘটনা এই পিরিয়ডেই। হে মার্কেটের চেয়েও আরো অনেক বড় ধর্মঘট এই সময়ে হয়েছে-রেলরোড ওয়ার্কারদের ধর্মঘট, কার্নেগী স্টীল ফ্যাক্টরী ধর্মঘট-হে মার্কেটের চেয়েও অনেক ভয়াবহ ছিল। এসব ক্ষেত্রে মিলিটারী মেশিনগান দিয়ে রীতিমত শ্রমিক মিলিটারী যুদ্ধ হয়। রেল ধর্মঘটে অন্তত ১৮ জন শ্রমিক মারা যান সেনাবাহিনীর গুলিতে। এই শ্রমিক অশান্তির মূল কারন ছিল, এই সময়টাতে তিনটে বিজনেস ফ্যামিলি আমেরিকাতে মনোপলি চালাচ্ছিল। এরা হচ্ছে তৈল শিল্পে রকফেলার, স্টিলে এন্ড্রু কার্নেগী এবং ফ্যাইনান্সে মর্গান ফ্যামিলি। ৬৫% শ্রমিক কোন না কোন ভাবে এই তিন ফ্যামিলির কারখানাতেই কাজ করতে বাধ্য হত। ফলে উনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে এসে আমেরিকান শ্রমিকদের উপার্জন হ্রাস পায়। ঐতিহাসিকরা দেখিয়েছেন যেখানে একটি ফ্যামিলির বাঁচতে সাপ্তাহিক ২৫ ডলার দরকার হত, মাইনে ছিল ১৭ ডলারের কম। ফলে বিক্ষোভ স্বাভাবিক।

 আমি এই প্রসঙ্গে আসছি -কারন আজ ভারতেও এই অবস্থা। আজকের ধর্মঘটের একটা দাবী এই যে শ্রমিকদের নুন্যতম মাসিক মাইনে ১৫,০০০ টাকা করতে হবে। এই দাবীটি ন্যায় সঙ্গত-কারনে এর নীচে মাইনে পেলে একজন শ্রমিকের বেঁচে থাকাই অসম্ভব। অথচ  আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ভারতে টাটা আম্বানীদের ফ্যাক্টরী গুলোতে ঠিকা শ্রমিকদের মাইনে ৮০০০-১০,০০০ টাকা বা তারো কম।  কিন্ত ধর্মঘট করে এটি শ্রমিকরা আদায় করতে পারবে না। আমি আমেরিকার লেবার হিস্ট্রি এই জন্য আনছি-যে বুঝতে কি করে আমেরিকান শ্রমিকরা তাদের অবস্থান বদলাতে সক্ষম হল।

 যাইহোক, ৩৪,০০০ ধর্মঘটের পরেও ওই শ্রমিক টার্বুলেন্স পিরিওডে, ত্রিশ বছরে শ্রমিকদের মাইনে বেড়েছিল সতেরো ডলার ষাট সেন্স থেকে বাইশ ডলার ( প্রতি সপ্তাহে )। যা স্বাভাবিক বৃদ্ধির সমান। কিন্ত আমেরিকান ইতিহাসে সব থেকে বেশী মাইনে বেড়েছে ১৯১৫-২৩ ( ডিপ্রেশনের আগে ) আর  ১৯৫০-৬০। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দুটোই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। এর মূল কারন এই যে ওই দুই সময়ে -বিশেষত ১৯১৫-২৩ এর মধ্যে প্রচুর এন্টিট্রাস্ট আইন এনে রকফেলার সহ অনেক বিজনেস মনোপলীর অবসান ঘটানো হয়। ফোর্ড প্রথম সপ্তাহে ৪০ ডলার দেওয়া চালু করেন ১৯১২ সালে। যা ছিল, প্রচলিত মাইনের দ্বিগুন। কারন অটোমোবাইল শিল্পে স্কিল্ড লেবার দরকার ছিল-আর কোন কোম্পানী স্কিলড লেবার হারাতে চাইত না। এর আগে হত উলটো। একদম বেসিক প্রডাকশন সিস্টেমের জন্য শ্রমিকের স্কিল বলতে কিছু লাগত না। ফলে কোন কারখানাতেই শ্রমিক ধরে রাখার কোন তাগিদ ছিল না।

 সুতরাং ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দুটো জিনিস পরিস্কার হওয়া উচিত। এক, ট্রেড ইউনিয়ান মুভমেন্টের জন্য শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হয় নি।  দুই শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির পেছনে মূলত কাজ করেছে মার্কেট রেগুলেশন-যার দৌলতে মনোপলি ভেঙ্গে প্রচুর কোম্পানীকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতার মার্কেটে দক্ষতার চাহিদা থাকবেই। সেই ভাবেই বেড়েছে মূলত শ্রমিকদের মাইনে। ভারতে সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের মাইনে বেশী কেন? কারন তাদের কাছে হাজারটা কোম্পানীর অপশন। এবং স্কিলের ভ্যারিয়েশন প্রচুর।  অন্যদিকে ভারতে ট্রাডিশনাল ইঞ্জিনিয়ারদের মাইনে কম। কারন তাদের হাতে অপশন ও কম। স্কিল ও লাগে কম।

প্রশ্ন হচ্ছে সাধারন শ্রমিকের কি স্কিল লাগে? আধুনিক ফ্যাক্টরীতে লাগে।

                                                         (৩)

 এবার ভারতের প্রসঙ্গে আসি। ভারতে এই মুহুর্তে মেজর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কি করে আইন করে শ্রমিকদের নুন্যতম মাইনে ১৫,০০০ টাকা করা যায়। যাতে তারা অন্তত নুন্যতম মাইনেটা পায়।

 নিজের ব্যবসা চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নুন্যতম মাইনে বৃদ্ধি কোম্পানী এবং শিল্পের জন্য ভাল। কারন মাইনে বাড়লে কোম্পানী লাভের জন্য মূলত ইনোভেশন, স্ট্রাটেজি, হাই ভ্যালু এডিশন, অটোমেশনের ওপরে জোর দেয়। এই জিনিসগুলো একটা কোম্পানীকে আরো সক্ষম করে তোলে-কারন তাকে আরো কম শ্রমিকে বেশী উৎপাদন দিতে হয়।

 সস্তায় শ্রমিক খাটিয়ে যে ব্যবসা , তা সাময়িক, চিরকালীন হতে পারে না। কারন তাতে কোম্পানী কোন কম্পিটিটিভ এডভ্যান্টেজ গেইন করে না এই প্রযুক্তির যুগে।

এটা করতে গেলে যেটা করতে হবে-তা হচ্ছে রিয়ালেন্স টাটা এদের মনোপলী ধ্বংস করতে হবে কড়া এন্টিট্রাস্ট আইন এনে। এগুলো না করে, শ্রেফ সাধারন লোকের পেটে পেটোয়া মারলে শ্রমিক শ্রেনী জনগণ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হবে।

 সে যাইহোক , ট্রেড ইউনিয়ান ঐতিহাসিক ভাবেই ব্যর্থ একটি প্রচেষ্ঠা। যার জন্য পশ্চিম বঙ্গে ১৯৪৮ সালে ভারতে শিল্পে এক নাম্বারে ছিল-আজ পেছনের দিক থেকে এক নাম্বারে।  দরকার শ্রমিক এবং সাধারন মানুষের মিলিত সিভিল রাইট মুভমেন্ট যাতে মার্কেটের সংস্কার এবং আইনগুলি মানবিক হয়। ঐতিহাসিক ব্যর্থতাকে নকল করলে, আরো কষ্টের দিন আসবে।