Sunday, November 30, 2014

মার্কেট দেবতা

চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য এড়াতে নাম পদবী পালটানো আমেরিকা সহ সবদেশেই চলে। আমেরিকাতে এর প্রাদুর্ভাব বেশী-যেহেতু ইহা বহু ভাষাভাষীর দেশ। এখানে আসার পর প্রতীক হয় পিটার, শান্তনু হবে স্যান।  আসলে কেওই চায় না শুধু পৈতৃক নামটার কারনে হায়ারিং ম্যানেজার সিভিটা ড্রপ করুক।

 তবে ভারতের ক্ষেত্রে এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমেরিকাতে মুসলিমরা আছে বড়জোর অর্ধশতাব্দি। কিন্ত ভারতের লোকেরাত মুসলিম নামের সাথে পরিচিত এক হাজার বছর ধরে!  কোলকাতার বাড়িগুলোতে যেসব মেয়েরা হিন্দু নামে কাজ করে, তাদের একটা বড় অংশই মুসলমান। তবে শিক্ষিত মুসলমান যুবকদের নাম ভাঁড়ানোর সুযোগ নেই -যেহেতু শিক্ষা সার্টিফিকেটটা লাগে। ভারত সহ সব দেশেই প্রাইভেট সেক্টরে শিক্ষিত মুসলমানেরা কিছুটা হলেও বৈষম্যের স্বীকার। আমি নিজেই দেখেছি অনেক ক্ষেত্রে আমি কোন মুসলমান ক্যান্ডিডেট  পছন্দ করলেও প্যানেলের বাকী কলীগরা বাতিল করে দিয়েছে। একটা বড় কারন, তাদের ধারনা মুসলমানরা ধর্মের কারনে, টিমের সাথে ভাল ভাবে "জেল" করতে পারে না । কারন এখানে টিম স্পিরিট বাড়াতে প্রায় গ্রুপ পার্টি হয়-যেখানে খানা পিনা চলে-সেখানে, ধর্মীয় কারনে, তাদেরকে পাওয়া নাও যেতে পারে। তাছারা প্রতিটা গ্রুপেই কিছু হোয়াইট সুপ্রিম্যাস্ট বা এক্সট্রিমিস্ট থাকে, তারা মুসলিম কর্মীটিকে উত্তক্ত করলে, কোম্পানীর লিগ্যাল লায়াবিলিটি বাড়ে। আমি নিজেই একটি ইহুদি বনাম মুসলীম কর্মীর বিবাদের সাক্ষী হয়েছি যে কেস কোর্টে গেছিল।  সুতরাং তাদের আশঙ্কা অমূলক তা নয়। দাড়ি ওয়ালা মুসলিম বা হিজাব পরিহিত মুসলিম মহিলা হোয়াইট কলার চাকরি খুঁজতে গেলে, আগেই আউট হয়ে যাবে।

 পরস্থিতি কিছুটা হলেও আমেরিকাতে বদলাচ্ছে।  দ্বিতীয় জেনারেশনের মুসলিম ছেলে মেয়েরা ধর্মীয় নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশেষত তারা যদি একটু লিব্যারাল ফ্যামিলি থেকে আসে। তাদের মধ্যে মদ্যপান বা পর্ক নিয়ে ছুঁচিবাই নেই । নামাজি মুসলমানও খুব কম। এরা স্মার্ট কিডস।  ইন্টারনেট ঘেঁটে কোরান কি বালের ছাল, তা জানার পর ওসব ধর্ম থেকে অনেক দূরে থাকে। ইংল্যান্ডে আবার উলটো। দ্বিতীয় জেনারেশন মুসলমানদের বড় অংশই জেহাদি মুসলিম। আমেরিকাতে সে সমস্যা নেই-যেহেতু মুসলিমরা ইংল্যান্ডের মতন অতটা বড় বৈষম্যের শিকার না ।

 ধর্মীয় কারনে চাকরি স্থলে বৈষম্য খারাপ এবং বেয়াইনি। তবে এক্ষেত্রে কোম্পানী এবং মুসলিম পদপার্থী দুজনেরই সমান দ্বায়িত্ব আছে।  মুসলমানরা যদি চাকরি স্থলে নামাজ তথা ধর্মীয় বিচার বেশী চালু রাখে, অবশ্যই তারা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আমি নিজেই দেখেছি এই ধরনের ধার্মিক মুসলমানদের নিয়ে কাজ করা সুখের হয় নি। কিন্ত উলটো দিকটাও আছে। এদের বাইরে একটা বড় অংশ মুসলিম আছে, যারা আমাদের মতন ধর্ম নির্লিপ্ত। তাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই ।  যারা সেকুলার মুসলিম, এসব থেকে দূরে, তারা যদি বৈষম্যের শিকার হয়, তাহলে, সেকুলার মুসলিম ও র‍্যাডিক্যাল মুসলিম হয়ে উঠতে পারে।

এক্ষেত্রে অবশ্য দক্ষিন ভারতীয়দের কথাও বলা দরকার। এরাও সেই দক্ষিনী কালচার, মসলার গন্ধোয়ালা টিশার্ট ওয়ার্ক প্লেসেও চাড়বে না । তারপরে লবি করবে। সিভি ফ্রড করবে।  এই জন্যে আজকাল আমেরিকাতে দক্ষিনীদের কেও হায়ার করতে চাইছে না ।

ব্যালান্সটা ডেলিকেট।  একটা মাল্টিকালচারাল ওয়ার্ক প্লেসে নিজের সংস্কৃতি বা ধর্মকে টানা অনেকটা অফিসে বসে পাদের গন্ধ ছাড়ার মতন । আমেরিকাতে এই ব্যপারে দক্ষিনীরা ধর্মীয় মুসলিমদের চেয়েও কুখ্যাত। তবে আশার কথা এই যে- সব আল্লার বড় আল্লা হচ্ছে মার্কেট। মার্কেট ঈশ্বরের চাপে কিন্ত সবাই বদলাচ্ছে। কারন পেটের টান বড় টান। পেটের টানেই একজন মুসলিম বধু সিঁদুর চাপিয়ে হিন্দু হয়ে কাজে আসে, একজন মুসলিম যুবক তার নামটা খ্রীষ্ঠান বানায় আর ডজন শব্দাঙ্কিত নামের সাউথ ইন্ডিয়ানগুলোও কোন না কোন আমেরিকান নাম নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে।

 সেই মার্কেট দেবতাকে শতকোটী প্রনাম।

Wednesday, November 26, 2014

বৌ এর চেঁচামেচি শুনলে হেভি দুঃখ হয় দাদা

                                        (১)
-দাদা একটা ফোন করবেন
-কেন ?
-দাদা একবার করুন না আমার রাতের দিকে

  ছেলেটা আমার জুনিয়ার এবং ভক্ত পাঠক। ভারতের টাইম রাত ১১টায় ধরলাম তাকে।

-দাদা, একটা পারসোনাল প্রবলেমে সাজেশন চাইছি...

- বলে ফেল। আমি কিন্ত কাট আন্ড ড্রাই সমাধান দিই

- দাদা একটা হেভি প্রবলেম। বৌ নিয়ে ফেঁসে আছি

- সে ত বৌমাত্রই  গলার ফাঁস-তুমি ব্যতিক্রম কে বললো?

- না দাদা। আমার মাত্রাটা আলাদা

-কেন

 -আমার বৌ হেভি শর্ট টেম্পারড দাদা। রাগলে মাথা ঠিক থাকে না

 - কোন হালার  বৌ কুল টেম্পারড বলে তোমার মনে হল ?

 - না দাদা। আমার কেসটা আলাদা। একদম আলাদা । বাড়িতে থাকলে মায়ের সাথে বৌএর চেঁচামেচি। হেভিটেনশন । অফিসে কাজ করতে পারি না । বাড়িতে ঘুম হয় না ।

-তাহলে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাক...

- থাকতাম ত। সেখানেও সমস্যা। সব সময় চেঁচামেচি। মায়ের কাছে পালিয়ে যেতাম। পালিয়েও নিস্তার নেই । পালালে আরো চেঁচামেচি।

- সেত সব বৌরাই চেঁচামেচি করে। কিচির মিচির করে। ওটা ওদের ডিপার্টমেন্ট। ওসব সিরিয়াসলি শুনে লাভ নেই -রিয়াক্ট করলে লোকসান বেশী

- ওভাবে কি থাকা যায়। সংসারে থাকলে বৌ উল্টোপালটা কথা বললে আপনি কি করে চুপ করে বসে থাকবেন

- যদি বৌ এর কথায় সিরিয়াসলি রিয়াক্ট কর তার পরিনতি ভাবলেই চুপ করে বসে হজম করাই ভাল । সংসারে টিকে থাকার জন্য বাঙালী পুরুষের একটাই স্ট্রাটেজি। কথামৃত।  সংসারে সন্নাসীর মতন থাকতে হয় পুরুষকে। বৌ হচ্ছে কামান। তুমি স্টিলের প্লেট। একের পর গোলাগুলি চললেও স্টীলের প্লেটের কিছু হয় না । ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাবে। সংসারে সেন্সিটিভ, সেন্টু হয়েছ কি, গেলে। সব যাবে। বৌ এর কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্যকান দিয়ে ড্রেনে ফেল। ওটাই সমাধান

-আমার দাদা অত নির্লিপ্ত  হয়ে থাকা সম্ভব না -বৌ এর চেঁচামেচি শুনলে হেভি দুঃখ হয় দাদা ।রাগে ব্রহ্মতালু জ্বলে।


- তাহলে দুঃখও পাও। আরো বেশী করে পাও।  কেও সাধ করে আগুনে হাত দিলে আগুনে হাত পুড়বেই

-তাহলে আপনি বলছেন বিয়ে করা মানে আগুনে হাত দেওয়া

-আজ্ঞে না ,  বিয়ে করাতে অসুবিধা নেই । তবে বিয়ে করার পর কোন পুরুষ যদি মনে করে বৌ তার আশানুরূপ ব্যবহার করবে আর না করলে সে বৌকে যৌত্বিক ব্যবহার করতে বলবে,এবং বৌ  সেটা  শুনবে , সেটা নিরেট গর্ভতুল্য প্রত্যাশা।

-তাহলে আমার আশা নেই ?

-নেই কে বললো? তোমাকে কে বলেছে তোমার মা আর বৌ এর মধ্যে মাথা গলাতে? মেয়েদের মনের তুমি কি বোঝ?

-কি করবো বলুন ত? দুজনেই ঝগড়া করে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অফিসে ফোন করে, একসাথে। হেভি চাপ মাইরী।

-সহজ সমাধান। তাদের বলতে দেবে। বলা হয়ে গেলে বলে দেবে -এটা তোমাদের ব্যপার-তোমাদের নিজেদের মেটাতে হবে।  নিজে ঢুকবে না । দুনিয়ায় কোন দুই নারী একসাথে থাকতে পারে না -তুমি শালা কে?  তাদের ঝগড়ার দ্বায়িত্ব নেওয়ার? যে পুরুষ মেয়েদের ঝামেলার মধ্যে ঢোকে, সংসার জীবনে তার ভবিষ্যত নেই ...।।

                                                         (২)

-সে দাদা বলা সহজ। কি করে মেনে নিই বলুনত? সব কিছুতেই কি আমি দোষ। সব দোষ আমার মেনে নিই কি করে বলুনত ?

-সেটা বিয়ের আগে ভাবো নি?

-মানে?
 -তোমার কি মনে হয় বিবাহিত জীবনটা ইন্ডিয়ান ডেমোক্রাসি?  বৌ একটা কিছু বললে, তুমি বিরোধি পার্টির মত বলবে আর পাড়ার জনগন মাই মিডিয়া তা শুনবে ?
   বিবাহিত জীবন হচ্ছে নাৎসি কন্সেট্রেশন ক্যাম্প। বৌ হিটলার, তুমি ইহুদি। তোমার মান ইজ্জত সব কিছু বাইরে। ভেতরে ওটা কন্সসেন্ট্রেশন ক্যাম্প-বাইরের লোকেদের কাছে দেখাবে সে কত বাধ্য !!

-ওসব মানা সম্ভব নই দাদা, তাই বৌকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। এবার উকিলের নোটিশ পাঠাব!!
শুধু মেয়েটার জন্য কি করব বুঝতে পারছি না ...

-বুঝতে পারছ না মানে?? তোমার কি মনে হয় ডিভোর্স করে আরেকটা বিয়ে করলে বাধ্য বৌ পাইবে???

-না দাদা। এই সব ঝামেলা আর সহ্য হয় না জানেন ত।

-তা বিয়ে করতে এসেছিলে কেন?

-দাদা কে জানত বলুন ত। বিয়ের পর এই হাল হয়। জানলে কি আর বিয়ে করতাম!!

-কিন্ত এখন ত বিয়ে মেয়ে সবই হয়ে গেছে। বৌ ছাড়া থাকতে পারলেও মেয়ে ছাড়াত থাকতে পারবে না

-সেটাই ত সমস্যা দাদা। মেয়েটাকে হেভি মিস করছি জানেন!!

-সেটাই স্বাভাবিক। বৌ কি ফিরতে চাইছে??

-সে দাদা এখন রাত বারোটা বাজে। ফোন করলে এখুনি ফিরবে!!

-তাহলে সেটাই কর

-কি বলেন দাদা-আবার, সেই ঝামেলা। অফিসে বৌর ধমক, মায়ের কান্না। খাওয়া নেই । ঘুম নেই । এই বেশ ভাল আছি কদিন জানেন

-সেত বৌ ছাড়া সবাই ভাল থাকে। মেয়ে ছারা কিন্ত থাকতে পারবে না । তাকে ফেরাতেই হবে। অলটারনেটিভ নাই।  ছেলে মেয়ে হয়ে গেলে অল্টারনেটিভ থাকে না

- বৌ আবার ফিরলে মারা যাব দাদা। জানেন আমার সুগার, ব্লাড প্রেসার---

-তার জন্যেত তুমি দায়ী হে-কে বলেছে তোমায় বৌ আর মায়ের ঝগড়ায় কান দিতে। কান দেবে না । যেদিন দুজনে ঝগড়া করবে হোটেলে থাকবে । নইলে বেলুড় মঠ। তাদের ঝগড়া না থামলে ফিরবে না । মেয়েরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে ভালবাসে। তাদেরকে তাদের মত ঝগড়া করতে দাও। সেটাই তাদের স্পেস। তুমি গিয়ে হোটেলে থাক যেদিন ঝগড়া করবে। তবে বৌকে ফেরানোর বদলে, উকিলের কাছে গেলে সমস্যা বাড়বে-কমবে না । দাম্পত্য জীবনে উকিল ঢুকলে, ফাল করে বেড়োবে।

-ঠিক আছে দাদা। আরেকবার দেখি।

Monday, November 24, 2014

বৃটিশ আমলের কেরানী তৈরীর কল

শুনলাম প্রেসিডেন্সিতে প্রায় অর্ধেক ছাত্র সেমিস্টার দিতে পারছে না কারন অর্ধেকের কম ক্লাসে উপস্থিতি। তারা আবার এই
 নিয়ে ‪#‎হোককলরব‬ ও করেছিল!

আমি অবশ্য আই আই টি জীবনে নিজেই ক্লাস করতে চাইতাম না -দুএকজন প্রফ ছাড়া বাকীদের ক্লাস বেকার সময় নষ্ট মনে হত।

সময়, প্রযুক্তি, পৃথিবী, জীবিকা বদলাচ্ছে। জানি না ক্লাসরুমের আর প্রয়োজন আছে কি না । পরীক্ষার প্রয়োজন আছে-তবে ক্লাসরুমের
 আর নেই । ইউটিউবে যে কোন সাবজেক্টের উপর এম আই টি, স্টানফোর্ডের বাঘা অধ্যাপকদের লেকচার ( ক্লাসরুম 
এনভাইরনমেন্টে) পাওয়া যায়। আহা আমাদের সময় যদি ইউটিউব থাকত!!

আমিত মনে করি ইউটিউবে এত ভাল লেকচার আছে ক্লাসের আর দরকার নেই । ছাত্রদের প্রতি সেমিস্টারে একটা করে শুধু পরীক্ষা
 নেওয়া উচিত-আর একটা করে "প্রজেক্ট এসাইনমেন্ট" করা উচিত যেখানে তারা কিছুটা হলেও মৌলিক বা রিভিউএর কাজ করতে
 পারবে।

অতীতকে আঁকরে ধরে বৃটিশ আমলের কেরানী তৈরীর কল আরো কদিন প্রহ্লাদ পাথর হয়ে থাকবে ছাএদের ওপরে কে জানে!

ব্রাত্য -থ্রিয়েট্রিক্সের দুর্দান্ত কমেডি!

সমালোচনা লেখার আগে প্রথমেই ডিরেক্টর  দিব্যেন্দু পালকে একটা হাজার ওয়াটের ধন্যবাদ। আমেরিকায় আছি চোদ্দবছর। গন্ডে পিন্ডে,  পূজোয় এবং গজায় দু চারটি নাটক প্রতিবছরই দেখি। কিন্ত কোন এক অজ্ঞাত কারনে, নস্টালজিয়া বা যেকারনেই হোক না কেন- সবাই ওই উৎপল দত্ত না হলে ম্যাক্সিমাম বাদল সরকারের টিপিক্যাল সত্তর বা আশির দশকেই লটকে থাকে। মাঝে সাজে প্লেইন ভ্যানিলা কমেডি। দেশের সেরা সন্তানেরাই আমেরিকাতে আসে। তাদের এই স্টিরিওটাইপে আমি ক্লান্ত। প্রবাসে নাটকের প্রতি এক তুচ্ছ অবজ্ঞা ছাড়া আমার কিছুই বাকী ছিল না ।



থ্রিয়েট্রিক্সের  "ব্রাত্য" এক বিশাল ব্যতিক্রম সেই এক ঘেঁয়েমি থেকে। পরীক্ষামূলক উচ্চমানের কমেডি। সিটে বসে মনে হচ্ছিল একাডেমিতে বা মধূসূদন  মঞ্চে নান্দীকার দেখছি। দিব্যেন্দু সাক্ষাত অজিতেশ।

থ্রিয়েট্রিক্সের "ব্রাত্য"  প্রবাসের নাট্য মরুভূমিতে মৌসুমি বৃষ্টি।

 নাটকটি নবনিতা দেবসেনের ছোট গল্পের নাট্যরূপ। ঘটনা, গল্প-সবটাই আশির দশকে বালিগঞ্জের এক বিয়েবাড়ি। এই গল্প বা নাটকের মূল থিমটা এন্টন চেকভের "ওয়েডিং" নাটকের ছায়ায়। নাটকের মূল চরিত্র মেশোমশাই বা কন্যার পিতার চরিত্রের অনুপ্রেরনা চেকভের জিগলভ।  যিনি, বিয়েতে হরেক রকমের খরচকে যৌত্বিক ভাবেই বাজে খরচ মনে করেন। তাই নিয়ে পরিবারের সকলের সাথে ঝগড়া।  অশান্তি। ফলে আক্কেল জ্ঞান নেই বলে, তিনি আউটকাস্ট বা ব্রাত্য। এই নাটকে মেশোমশাই একজন টিপিক্যাল বাঙাল। যিনি সাতপাঁচ না ভেবে হৃদয়ের নির্দেশে কাজ করেন। মনের কথা রাখঢাক না রেখেই বলে ফেলেন!  এটি একটি ক্ল্যাসিক চেকভ ঘরনার নাট্য চরিত্র-যেখানে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনার সংবেদনশীলতায় গল্প এগোয়।

 নাটকের ভিত্তি  আমাদের চেতনাকে কুঠারাঘাত করা একটা প্রশ্ন।  আমাদের এত প্রয়োজনের উৎস কি? সামাজিক চাপ না সত্য সত্যই এত কিছু আমাদের দরকার আছে?  মেশোমশাই এর সাথে বাকী চরিত্রদের ঘাত প্রতিঘাতে এই প্রশ্নটাই আসে ঘুরে ফিরে।

এই ভোগবাদি সমাজের জাঁতাকলে প্রয়োজনের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। অথচ আমরা প্রশ্ন করি না -এত কিছু কি আমাদের সত্যই দরকার? বা যেগুলো দরকার সেগুলোও  কি আমরা চাইছি না সমাজ যা চাইতে বলছে তাই চাইছি ? আমাদের চেতনার শ্রোতকেই কি আমরা ব্রাত্য করে রেখেছি ভোগবাদের, সামাজিকতার প্রবল চাপে?

এই গভীর ডায়েলেক্টিকটি একটি কমেডি নাটকে নামানো বেশ চাপের কাজ। কিন্ত মানতেই হবে দিব্যেন্দু এবং অরিন্দম একশো শতাংশ সফল এই কাজে। একবারের জন্যও একঘেঁয়ে হয় নি-সদা হাস্যরসে  থেকেছে দর্শক।

নাটকের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করছিল দিব্যেন্দুর অভিনয় দক্ষতার ওপরে।  তিনি সফল। উনার অভিনয় দেখে,  পাবনার পিশেমশাইকে মনে পড়ল।  একগুঁয়ে, একবল্গা, ঠোঁটকাটা বাঙাল-প্রতিটা মুর্হুর্তে ওপার বাংলায় শিকড়ের সন্ধানে।  সাত পাঁচ না ভেবে মন যা চায়, তাই কয়ে ফেলেন! আর তার এই আপাত নিরীহ প্রশ্ন গুলিই দর্শকের দিকে গুগলি - সত্যই কি আমরা ভাবি আমাদের জীবনে কি দরকার? কি চাইছি? নাকি  আমাদের চেতনা এক ভোগবাদি সামাজিকতার কাছে বন্ধক ?

রন্টুর রোলে অরিন্দম ঘোষ।  দর্শকাসনে এসে, প্রথমেই থার্ড ফর্মে দর্শকের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টাটাতে ও সফল। এমনিতেই এটা নাটকের মনোলগ, তা সব অবস্থাতেই কঠিন। অরিন্দম কিন্ত সেই কঠিন কাজটাই স্বভাবসুলভ দক্ষতার সাথে নামিয়েছে হাজারো মুন্সিয়ানা এবং ইম্পোভাইজেশনের মধ্যে দিয়ে।

বাকী সবার অভিনয় বেশ উচ্চমানের। নাটকের কুশীলবরা নাটকের সারবস্তু এবং চরিত্রের অন্দরমহলে হাঁটাচলা করেছেন-যেটা বিশাল পাওনা। মাসীমার রোলে স্বাতীকে ভালোই মানিয়েছে-বিশেষত দিব্যেন্দুর মতন পোড়খাওয়া সিজনড অভিনেতার পাশে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাতে স্বাতী উত্তীর্ন। তবে নাটক অনুযায়ী ও শান্তিপুরের মেয়ে। ওর ভাষাতে শান্তিপুরি পরিশীলতার ভাবটা একটু বাড়াত হবে চরিত্রটি আরো বিশ্বাসযোগ্য করে আঁকতে।  যশোমান ব্যানার্জি অল্প সময় ছিলেন স্টেজে রসুই এর রোলে-কিন্ত তার স্টেজ প্রেজেন্সে এবং বডি ল্যাঙ্গোয়েজে পাকা অভিনেতার সাক্ষর ।

 শালীর রোলে পরমা খুব দক্ষ অভিনেত্রী। ওর অভিনয় ক্ষমতা এবং সেট পিস ও উপভোগ্য। কিন্ত আরেকটু ইম্পোভাইজেশন দরকার । পিশীমার রোলে সুবর্না নিঁখুত এবং মসৃন।  রাইমা চরিত্রে শম্পা স্টেজের ওপর একটা হাল্কা মিষ্টি সৌর্ন্দয্য ছড়িয়ে দিতে পেরেছে-যেটা ওর অভিনয়ের সার্থকতা।

ঋতুপর্নার আবহসঙ্গীত গুলো একদম খাপে খাপ, অসাধারন। তবে সেখানে পরীক্ষার ছাপ নেই । টাইমস এন্ড টেস্টেড সেট পিস গুলিই নির্বাচন করা হয়েছে।

 স্টেজটা একটু বেখাপ্পা। এত ভালো কোয়ালিটির প্রযোজনার সাথে বেমানান। শ্রাদ্ধ বাড়ি না বিয়ে বাড়ি বোঝার উপায় ছিল না । কল্পনা করতে হচ্ছিল এটা বিয়ে বাড়ি।

 আরেকটা ছোট্ট অনুরোধ। নাটকে এত রাধাবল্লভী ফিসফ্রাই এর গপ্পো-বাইরে একটাও খাওয়ার স্টল ছিল না । অনেকেই লাঞ্চ না করে এসেছিলেন-বেচারাদের ক্লান্ত পেটে এত রাধাবল্লভীর গপ্পো সইল কিনা কে জানে!

Saturday, November 22, 2014

অনুকূল ঠাকুর উবাচ- এক হিন্দু শরিয়তবাদির উপাখ্যান

                                                               (১)
লেখাটা না লিখিলেও চলিত! একটা আস্ত খোরাকের পেছনে সময় দেওয়া আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ কি না এই সব নিয়ে যখন ভাবছি --দেখলাম, উনি এতসব মণিমাণিক্য ছড়িয়েছেন-এগুলি নিজের ভাষায় না লিখলে,  পাঠক এক বিশুদ্ধ হাস্যরস থেকে বঞ্চিত হবে!

 আমার দাদু ছিলেন অনুকুল ঠাকুরের শিষ্য!  তখনই প্রথম এই শব্দগুলির সাথে পরিচিত হই -

যজন,যাজন ও ইষ্টভৃতি 

তখন দেখতাম এক অদ্ভুত কেরামতি। দাদু হাগতে গেলেও এক পয়সা গুরুর নামে একটা ভাঁড়ে জমা দিয়ে হাগতে বসত!  এটি শ্রী শ্রী ঠাকুরে দীক্ষিত শিষ্যদের অবশ্য কর্তব্য-সর্বদা গুরুকে স্মরণ করিবে! হাগতে গেলেও করিবে! কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আমাশায় সর্বত্র গুরুকে স্বরণ করা এই কূলের ( যা সৎসঙ্গ) নিয়ম!  গুরুদেব ঠাকুরকে এক পয়সা ভাঁড়ে দিলে , উনি কোষ্টকাঠিন্যে পায়খানা তরল করিবেন, আমাশায় আঁটি বাঁধিবেন! অহ ! এমন জগৎগুরুর সন্ধান কভি কেও দেখিয়াছেন?


 উনার সর্বাধিক বিখ্যাত শিষ্য লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সারা বাংলায় মেরেকেটে কোটি খানেক সৎসঙ্গী আছে বলে উনারা দাবী করেন!

                                                               (২)

 তবে শ্রী শ্রী ঠাকুর বিখ্যাত অন্যকারনে। এই ডাইনামিক হিন্দুধর্মে ইউজেনিক্স নামে ডিনামাইট ঢোকানোর পেটেন্টটি উনার । যারা ইউজেনিক্স নিয়ে পরিচিত নন -তাদের জন্য দুই লাইন জানিয়ে রাখি। এটি একটি খরতরনাক অপবিজ্ঞান যা নিয়ে হিটলার অবসেসড ছিলেন বিশুদ্ধ জার্মান জাতির সৃষ্টিতে। বিবাহে নরনারীর নির্বাচনের বিশুদ্ধতা উৎকৃষ্টতর সন্তানের জন্ম দেয়-এই হচ্ছে উনাদের "বিজ্ঞান সম্মত " বিশ্বাস!!

অনুকুল চক্রবর্ত্তীর (14 September 1888 – 27 January 1969) অবশ্য হিটলারে ঠাঙারে বাহিনী ছিল না।  তাই হিন্দু ধর্মের বর্ণবাদকে আশ্রয় এবং সাশ্রয় করেই উনি, হিন্দু ধর্মে ইউজেনিক্স ঢোকাতে উৎসাহী হোন।

উনার দর্শনের মূল থিওরী এই রকম -

       হিন্দু ধর্মের বর্ণবাদ ভাল! কারন তা বংশ গৌরব এবং বংশ দক্ষতা ( স্কিল) রক্ষা করে!  রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে!

  এই ঠাকুর কোন এক কালে ডাক্তারী পাশ করেছিলেন। কোন বায়োলজি গ্রন্থে শুদ্র রক্তের সাথ ব্রাহ্মন রক্তের পার্থক্যর পরীক্ষালদ্ধ ফল পাওয়া যায়, তা আমাদের কারুর জানা নেই । তবে উনিত আবার ঈশ্বরের সাথে কথা বলতেন-হয়ত  কানে কানে ইশ্বর এসে এসব বৈজ্ঞানিক অমৃতবানী উনার কানে ঢেলেছিল!

  তবে এই বর্ণবাদ টেকাতে এবং উৎকৃষ্ট হিন্দু সন্তান প্রসব করিতে, উনার বিবাহের ফর্মুলা হচ্ছে এই রকম -


  •         প্রতিটা হিন্দু  পুরুষের দুইটি বিবাহ করা উচিত ! প্রথমটা সবর্ণ, পরেরটা অনুলোম অসবর্ণ । অনুলোম অসবর্ণ বিবাহ মানে উচ্চকাস্টের হিন্দু পুরুষের সাথে নিম্ন বর্ণের মহিলার বিবাহ। ব্রাহ্মন পুরুষের সাথে শুদ্রকন্যার বিবাহ। উচ্চবর্নের মহিলার সাথে নিম্ন বর্নের পুরুষের বিবাহে তিনি নারাজ। কারন তার বায়োলজি "গবেষণা" ।  নিম্নবর্নের স্পার্ম নাকি উচ্চবর্নের ডিম্বানুকে নষ্ট করে। প্রথমত উচ্চবর্নের আর নিম্ন বর্নের লোকেদের স্পার্ম আলাদা হয়-এই অতি মুল্যবান বৈজ্ঞানিক তথ্যর জন্য, উনাকে নোবেল বা নিদেন পক্ষে একটি গোবেল প্রাইজ দেওয়া উচিত ছিল! 
  •  সর্বর্নে বিবাহটা করার পর কিন্ত আপনি অসবর্ণ বিবাহটা করিবেন! কেন? কারন আপনার সবর্ন স্ত্রীর গর্ভে আসিবে বিশুদ্ধ সন্তান! আর অসবর্ন বিবাহে আসিবে অশুদ্ধ সন্তান! অশুদ্ধ সন্তান কেন? এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শ্রী শ্রী ঠাকুর বিজ্ঞানে একেবারে "নিরক্ষর " ছিলেন না । উনার মতে বায়োডাইভারসিটি বাড়াইতে দ্বিতীয় বিবাহটি অসবর্ণ করিতে হইবে! 


 মোদ্দা কথা উনার এই স্বরচিত " বৈজ্ঞানিক "  ইউজেনিক্স ভারতে খুব বেশী চলে নি-কারন নেহেরু। যিনি হিন্দুদের বহুবিবাহ আইন করে রদ করেন ।  তবে শ্রীঠাকুর,  থিওরী অনুয়ায়ী দুটি বিয়ে করেছিলেন। এতে সমাজে বিশুদ্ধ এবং ডাইভার্স সন্তান এসেছিল কিনা আমার জানা নেই - তবে সতীন ও সতীনপুত্রের ঝগড়ায়, তার সৎসঙ্গ আশ্রম উঠে যাবার উপায় হয় একসময়। শিষ্যরাও বিরক্ত হয়েছিল। আমার দাদু তার সন্তানদের ওপর খাপ্পা ছিলেন-এটুকু মনে আছে।

                                                                (৩)

কেও যদি জোকার নায়েকের বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে পুলকিত হৌন-তাহলে অনুকুল চক্রবর্ত্তীর  বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উদ্ভাবনী শক্তিতে তূরীয় অবস্থা পেতে পারেন! উনার পুনঃজন্মের তত্ত্বটি এখানে হুবহু দিলাম -

।। পুণর্জন্ম কিভাবে হয় ।।
"সম্বেগ জীবের বা মানুষের মধ্যে gene-এর (জনির) ভিতর-দিয়ে যে pitch-এ
(স্তরে) ওঠে, মরে যাওয়ার সময় psycho-plasm-এ (মানস দেহে) engraved (মুদ্রিত)
হ'য়ে থাকে সেই pitch-এ wave-এর (তরঙ্গের) আকারে । মিলনেচ্ছু sperm-এর
(শুক্রকীটের) ভিতর সেই জাতীয় সম্বেগ সৃষ্টি হ'লে tunining (সঙ্গতি) হয় এবং মৃত
ব্যক্তি পুনরায় শরীর গ্রহণ করার সুযোগ পায় । জন্ম ও মৃত্যুর এটাই revolving process
(ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি) ।"
আঃ প্রঃ ২১।১০৭ থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী ।



 শ্রী শ্রী ঠাকুরের মাথায় কতটা উর্বরা ফসফেট ছিল ভেবে দেখুন ত?  ব্যাপারটা জাস্ট ভাবুন

  আপনি মারা যাচ্ছেন-যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে  তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গে বিলীন হচ্ছেন! সেই তরঙ্গের একটা ফ্রিকোয়েন্সি আছে?  রাইট!
 
 এবার ধরুন আপনি যে সময় মৃত্যুর কারনে তরঙ্গে পরিনত, একজাক্টলি সেই সময়, অনেক পুরুষ, অনেক নারীর সাথে সঙ্গমে রত এবং তাদের যোনীদ্বারে কোটি কোটি স্পার্ম সবে ঢুকতে শুরু করেছে ! এই সব স্পার্মও তরঙ্গায়িত! নীলস বোর বা হাইজেনবার্গ স্পার্মের ওয়েভ পপার্টি বার করতে ব্যর্থ হলেও, শ্রী শ্রী ঠাকুর ঠিক জানেন, স্পার্মের ওয়েভ পার্টিকল ডুয়ালিটি!

 এবার আপনার মৃত আত্মার একটা ফ্রিকোয়েন্সি আছে এবং স্পার্মদেরও নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি আছে! এবার আপনার আত্মার ফ্রিয়োয়েন্সির সাথে স্পার্মের ফ্রিকোয়েন্সি মিলে গেলেই আপনি খাঁটি "রেজোনান্স" পদ্ধতিতে স্পার্মের মধ্যে ঢুকে গেলেন!!  তারপরে সেই মহিলার পেট হইতে সন্তান হিসাবে বাহির হইবেন।

  তবে  গুরুর তত্ত্বে অসম্পূর্নতা আছে যা তার শিষ্য বা পুত্ররা সম্পূর্ন করেন নি!  প্রথমত কন্ডোম থাকিলে কি হইবে? তাহলে ত সবই গেল!! আর ওই কোটি কোটি স্পার্মের মধ্যে মাত্র একটিই ডিম্বানুর প্রাচীর ভেদ করতে পারে! ভেবে দেখুন-আপনি একটি স্পার্মের মধ্যে ঢুকে গেলেন রেজোনান্সের মাধ্যমে কিন্ত সেটি প্রাচীর ভেদ করিতে পারিল না !
 তাহা হইলে কি হইবে?  আপনি আবার সেই জন্মাতে জন্মাতে মারা পড়িলেন! রাইট? সেক্ষেত্রে আপনি --সেই স্পার্ম হইতে বাহির হইয়া,  নতুন যোনির সন্ধান করিতে লাগিলেন না পুনজন্ম হইলনা বলিয়া, মহাবিশ্বে তরঙ্গায়িত হইয়া ভাসিতে লাগিলেন, এসবের সমাধান কিন্ত গুরুদেব দিয়ে যান নি!!

ভেবে দেখুন। মৃত্যর পর আবার জন্ম নেওয়ার চেষ্টাটা কিন্ত বেশ চাপের! ওই তরঙ্গের ফর্মে আপনি শুধুই যোনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন যেখানে লিঙ্গ সবে ঢুকেছে আর স্পার্ম ফেলার তালে আছে!  যোনিতে স্পার্ম পড়তেই আপনি ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যানার দিয়ে স্পার্ম খুঁজতে লাগলেন যদি ম্যাচিং ফ্রিকোয়েন্সি পেয়ে যান! তারপরেও যদিও নিস্তার নেই -কন্ডোম থেকে প্রতিযোগী স্পার্মদের কাছে হেরে যাওয়ার ট্রাবলটা এক্সট্রা! আমি বাপু মরে যাওয়ার পর এত ঝামেলার মধ্যে যেতাম না !

 তবে এই সুমহান তত্ত্বটার জন্য উনাকে গোবেল প্রাইজ অবশ্যই দেওয়া উচিত ছিল!

ভাবতে অবাক লাগে  জাকির নায়েক, অনুকুল ঠাকুর টাইপের লোকগুলো ধর্মীয় বাঙালী মধ্যবিত্তের মধ্যে জনপ্রিয় গুরুস্থানীয় চরিত্র। এই ব্যপারটা বোঝার জন্য যথেষ্ট আসলেই সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালী কতটা অশিক্ষিত এবং অজ্ঞানের অন্ধকারে ডুবে আছে!

                                       (৪)

 কেও যদি ভাবেন শরিয়া এবং ইসলাম ভয়ংকর নারী বিরোধি-তারা অনুকুল ঠাকুরের "নারী" জাতির প্রতি উপদেশ পড়ে দেখতে পারেন!  আমি দুয়েকটা মণিমানিক্য তুলে দিচ্ছি ---মন্তব্য নেই কারন আমি সত্যই বাকরুদ্ধ!

   "
এক মা জিজ্ঞাসা করলেন, স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা সত্ত্বেও
স্বামী যেখানে স্ত্রীর সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে, সেখানে স্ত্রীর কী করবে?

শ্রীশ্রীঠাকুর- ঐ কথাই তো বলছিলাম। প্রকৃতিগত সামঞ্জস্য
দেখে বিয়ে না দিলে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই জীবন বিধ্বস্ত হ’য়ে যায়।
তুমি তোমার ধারনা অনুযায়ী হয়তো ভাল ব্যবহার করছ, কিন্তু স্বামীর
হয়তো অনুযোগ- আমি যা চাই, আমি যা পছন্দ করি, আমার স্ত্রী কিছুতেই
তেমনভাবে চলে না, সে তার নিজের খেয়ালমত চলে,
আমি তাকে নিয়ে আর পারি না। বড়জোর হয়তো বলবে, আমার
স্ত্রী এমনি ভাল মানুষ, কিন্তু আমি কিসে খুশি হই, আমি কিসে ভাল থাকি,
তা সে বোঝে না। তার নিজের এক ধরণ আছে, সেই ধরনে চলে। আমি বহু
ক্ষেত্রে দেখেছি, স্ত্রীর মত স্ত্রীও খারাপ নয়, স্বামীর মত স্বামীও খারাপ
নয়। উভয়েই ভাল মানুষ বলে সুনাম আছে বাইরে। সবার সঙ্গেই তাদের ব্যবহার
ভাল, কিন্তু উভয়ের মধ্যেই আর কিছুতেই বনিবনা হয় না। বিয়ে থাওয়ার এমনতর
গরমিল যদি কোথাও ঘটে গিয়ে থাকে, সেখানে স্বামী-স্ত্রীর
প্রকৃতিটা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত এবং স্বামীর যাতে ভাল লাগে ও ভাল
হয় নিজের ব্যবহার সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করা উচিত। একটা জ্যান্ত
মানুষের সাথে ব্যবহার করার সব সময় স্মরণ রাখা উচিত, আমি ইট, কাঠ
বা পাথরের সঙ্গে ব্যবহার করছি না। যার সঙ্গে ব্যবহার করছি তার
একটি রুচি আছে, প্রকৃতি আছে , মেজাজ আছে, ধরণ আছে। বদ্যি যেমন
নারী টিপে ধাত বুঝে ওষুধ দেই, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের দাওয়াইও
তেমনি ধাত বুঝে প্রয়োগ করতে হয়। এক কথায় মানুষের মন-মেজাজ
বুঝে চলতে হয়। এমনটি যদি না চলতে পার তবে তোমার ভালর
ধারণা নিয়ে আবদ্ধ হ’য়ে থাকলে তুমি কিন্তু কখনও মানুষের মন পাবে না। শুধু
স্বামীর সঙ্গে ব্যবহারেই এমনতর নয়। প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যবহারেই চোখ, কান, মন
খোলা রেখে চলবে। নজর করবে, কে কখন কী অবস্থায় আছে। তাই বুঝে তখন
যা বলার বলবে, যা’ করার করবে। তুমি হয়তো মনে করে রেখেছ, স্বামীর
কাছে সংসারের একটা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য আবদার করবে। স্বামীর মন
কেমন তা লক্ষ্য না করে, তুমি তোমার চিন্তার সম্ভেগ অনুযায়ী এমন সময়ই
হয়তো কথাটা তাকে বললে যখন তার মন নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত। তখন
সে তো চটবেই। আবার, তুমিও বলবে, আমি তো নিজের জন্য কিছু
চাইতে যাইনি, সংসারের জন্য দরকার, সেই দরকারী জিনিসের
কথা বলতে গিয়ে কত কথা শুনলাম। যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।
আমার ভাল কথাটাও তোমার গায়ে সয় না। এই বেধে গেল আর
কি লাঠালাঠি। পরস্পর হিসাব করে না চলার দরুন অনেক গোলমালের সুত্রপাত
হয়। মেয়েদের বিশেষ বিশেষ শারীরিক অবস্থায় বিশেষ-বিশেষ মেজাজের
সৃষ্টি হয়, সেটা হলো সাময়িক ব্যাপার এবং শারীরিক অবস্থার সাথে জড়িত।
পুরুষ ছেলের এটা সম্পর্কে যদি কোন জ্ঞান না থাকে এবং তখনকার
স্বাভাবিক বৈলক্ষণ্যের দরুন যদি অযথা শাসন করতে যায়, তাহলে কিন্তু
হিতে বিপরীত ঘটে। আবার, স্বামী হয়তো ফিটফাট থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু
স্ত্রী হয়তো অগোছাল, অপরিচ্ছন্ন রকমে চলতে অভ্যস্ত। সেখানে স্ত্রীর ঐ
চলনে স্বামীর তো অসন্তুষ্ট হবার কথাই।
মা-টি অকপটে বললেন, আমার ঐ দোষটি আছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর: দোষ যদি বুঝে থাকিস, তবে সেরে ফ্যাল্। যা করলে শরীর-
মনের পক্ষে ভাল হয়, ছেলেপেলে ভাল থাকে, স্বামীরও মনোরঞ্জন হয়,
তা তো করাই লাগে। স্বামীর কাছে যত সময় নত থাকবি। যুক্তি তর্ক
দিয়ে কারো মন জয় করা যায় না। তোর যদি কখনও মনেও হয় যে, স্বামী তোর
সঙ্গে অকারণ দূর্ব্যবহার করছে, তাও বলবি, আমি কথাটা বলতে চেয়েছিলাম
ভাল, কিন্তু ভাল করে বুঝিয়ে বলতে না পারায় তোমার অশান্তির কারণ
হয়েছি। ত্র“টি আমারই। এইরকম যদি করতে পারিস তাহলে দেখতে পাবি,
স্বামীর সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে। একটা জায়গায় কেবল স্বামীর
বিরুদ্ধে দাড়াতে পারিস, অর্থাৎ যদি দেখিস, স্বামী তাঁর মা-
বাবা বা গুরুজনের সঙ্গে অসমীচিন ব্যবহার করছে, সেখানে কখনও কিন্তু
স্বামীর পক্ষ সমর্থন করতে যাবি না, শ্বশুর-শাশুড়ীর পক্ষ হয়ে সেখানে ন্যায্য
প্রতিবাদ করবি। স্বামীর মঙ্গলের জন্যই এটা করা দরকার। অনেক স্ত্রী তাদের
স্বামীকে তাদের গুরুজন ও আপনজন হতে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের
আঁচলধরা করে রাখতে চায়। ভাবে, আমরা স্বামী-স্ত্রী ছেলেপেলেদের
নিয়ে সুখে থাকতে পারলে হলো, আর চাই কী? কিন্তু এত যে স্বামীর প্রতি ও
নিজের প্রতি শত্র“তা করা হয়, এ-কথাটা বোঝে না। স্বামীর
প্রতি শত্র“তা এদিক দিয়ে যে, স্বামী যাদের নিয়ে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ,
প্রীতি, দায়িত্ব ও কর্ত্তব্যহীন করে তুললে সে ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে পড়ে,
তার জগৎটা হয়ে যায় সংকীর্ণ; কারণ, যে নিজের মা, বাপ,
ভাইবোনকে ভালবাসতে পারে না, তাদের প্রতি কর্ত্তব্য করতে পারে না,
সে দেশ ও দশকে ভালবাসবে, তাদের জন্য করবে, এ একটা মিছে কথা। অমনতর
যারা, তারা বড়জোর তথাকথিত politics (রাজনীতি)করতে পারে নাম-
চেতানর জন্য, স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য। অন্তরের আসল বিস্তার তাদের কিছুই হয় না।
আর, তাদের আত্মপ্রসাদ বলেও কিছু থাকে না। যাদের খুশি করে, যাদের
আশির্বাদ ও প্রসাদ লাভ করে মানুষ বড় হবার প্রেরণা পায়, তাদের প্রতি টানই
যদি ছিঁড়ে যায়, তবে তার সম্বল কি রইল জীবনে তা তো বুঝি না।
ওভাবে রিক্ত ও নিঃসম্বল হয়ে করে দিল যে তাকে মনোজগতে, তার
প্রতি একদিন তার আক্রোশ আসাও অসম্ভব না। তখন ঐ
স্ত্রীকে হয়তো সে দুচক্ষে দেখতে পারে না। ভাবে, ঐ ডাইনী আমার
সর্বনাশ করেছে। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সকলের
থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে আমাকে। আমার সাজানো বাগান
শুকিয়ে ফেলেছে। ও আমাকেও চায় না। ও চায় আমাকে দিয়ে ওর নিজের
খেয়াল পূরণ করতে। এটা প্রকারান্তে নিজের প্রতি শত্র“তা নয় কি? তাছাড়া,
যে ছেলেপেলেদের সুখসুবিধার দিকে চেয়ে অমন করে, তাদেরও কি ভাল
হয়? যে সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরতার দীক্ষা তাদের দেয়, তার ফলে তারাও
তো পরস্পরকে ভালবাসতে শেখে না। কালে-কালে তারাও তো মা-
বাবা ও ভাই-বোন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যেমনতর বীজ বোনা যায়,
তেমনতর ফলই তো ফলবে। তখন হয়তো দেখবে, তোমার একটি ছেলে চর্ব্য, চোষ্য,
লেহ্য, পেয় খাচ্ছে আর একটি ছেলে পথে-পথে না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,
কিন্তু সে তাকে এক মুটি ভাতও দিচ্ছে না। দিতে চাইলেও তার স্ত্রীর
ভয়ে পারছে না। এই অবস্থা দেখলে তোমার কি ভাল লাগে? কিন্তু এই
অবস্থাটার তো সৃষ্টি করলে তো তুমি।
মা-টি সঙ্কুচিত হয়ে বললেন, ঠাকুর! আপনি আর বলবেন না, শুনে বড় ভয় করে।
মেয়ে মানুষ বোকা জাত, তাদেরই কি যত দোষ? মেয়েমানুষ ভূল
করে যদি স্বামীকে তার বাপ-মার থেকে নিজের দিকে টানতে চায়,
তাহলেই স্বামীও কি সেই ভূলে সায় দেবে?
শ্রীশ্রীঠাকুর তা তো দেওয়া উচিতই নয়। পুরুষেরই তো দায়িত্ব বেশী। সেই
তো তার পিতৃভক্তি ও মাতৃভক্তির দৃষ্টান্তে স্ত্রীকে তাদের
প্রতি আরো শ্রদ্ধাপরায়ণ করে তুলবে। যেখানে স্বামীর অতখানি দৃঢ়তা ও
পৌরুষ নেই, সেখানে সতী স্ত্রীর অনেকখানি করণীয় আছে। সে যদি স্বামীর
ভালই চায়, তবে তাই করবে যাতে স্বামীর মঙ্গল হয়। স্বামী যদি তার মা-
বাবার প্রতি কর্ত্তব্যচ্যুত হতে চায়, সে বরং তখন
কলেকৌশলে চেষ্টা করবে যাতে বাপ-মার প্রতি তার টান
বাড়ে এবং আবেগভরে সে তাদের সেবাযতœ করে। মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধা,
ভক্তি, প্রীতি ইত্যাদি বাড়াবার জন্য অনেক সময় দূতীগিরি করতে হয়।
স্ত্রী হয়তো স্বামীকে বলল, বাবা-মা তোমাকে খুব ভালবাসেন। বলেন ও
রাগধাগ করলে কি হয়? মন ওর খুব ভাল। বাইরে আধিক্যেতা নেই। কিন্তু সকলের
প্রতি অনেক টান। আবার, শ্বশুর-শাশুড়ীর কাছে হয়তো বলতে হয়,
উনি আমাকে সবসময় বলেন, আমার কিছু করা লাগবে না তোমার। তুমি সব সময়
দেখবা, বাবা-মার যাতে কোন কষ্ট না হয়।
এইভাবে যদি কৌশলে দূতীগিরি করা যায়, তাহলে পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা,
প্রীতি, ভাব-সাব গজিয়ে দেওয়া যায়। এই তো সতী স্ত্রীর কাজ,
লক্ষ্মী বৌয়ের কাজ। গড়া সংসার ভাঙবে না সে, ভাঙা সংসার গড়বে সে,
জোড়া লাগাবে সে। মায়েদের তুই বোকা বলিস? বোকা হলে কখনও সন্তান
পেটে ধরে মানুষ করে তুলতে পারে? দে তো একটা ব্যাটাছাওয়ালের
কাছে একটা মা হারা শিশুকে মানুষ করার ভার। প্রায়ই হাগে-
মুতে একসা করে ফেলবেনে। কিন্তু মায়েরা কেমন অনায়াসেই করে তা। তাই
নিজেদের কখনও ভাববি না। তোরাইতো বুদ্ধিস্বরুপিণী, লক্ষ্মীস্বরুপিণী,
দূর্গতিনাশিনী, দুর্ম্মতিদলনী দূর্গা। তোরা আছিস, তাই তো আমাদের
আগলে রেখেছিস। নইলে আমাদের উপায় ছিল কী?
[তথ্যসূত্র: আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬ই কার্তিক, শুক্রবার, ১৩৪৯ (ইং ২৩/১০/১৯৪২)]



এবার উনার নারীবাদি তত্ত্বগুলি সাজিয়ে নিন


  •   নিজেদের ভালোর জন্য নারীর স্বীকার করা উচিত তারা হীনবুদ্ধির জীব
  •   স্বামী অত্যাচার করলে, বকলে, ভুল ব্যবহার করলেও তা মেনে নিতে হবে -কারন লং টার্মে তা সংসারের জন্য ভাল  "যুক্তি তর্ক
    দিয়ে কারো মন জয় করা যায় না। তোর যদি কখনও মনেও হয় যে, স্বামী তোর
    সঙ্গে অকারণ দূর্ব্যবহার করছে, তাও বলবি, আমি কথাটা বলতে চেয়েছিলাম
    ভাল, কিন্তু ভাল করে বুঝিয়ে বলতে না পারায় তোমার অশান্তির কারণ
    হয়েছি। ত্র“টি আমারই। এইরকম যদি করতে পারিস তাহলে দেখতে পাবি,
    স্বামীর সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে। '
  • নিজেদের  সংসার এবং সন্তান ছাড়া নারীর আর কোন কাজ নেই , জীবনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই
সব সময় স্বামীর মন ও মেজাজ বুঝে চলতে হবে-তবে সে সার্থকনামা স্ত্রী!

 মুশকিল হচ্ছে এত বড় একজন খোরাকের পেছনে, এতটা সময় দিয়ে লেখাটা ঠিক হল কি না ! কিন্ত যেভাবে রাজনৈতিক কারনে হিন্দুত্বের বিষ রক্ত আবার বাংলাতে ঢুকছে, পবিত্র হিন্দু গুরুরা ঠিক কি টাইপের  এবং কোন গোয়ালের গরু সেটা মনে করিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।



Sunday, November 16, 2014

নারী অধিকার বদলায় উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে

তসলিমাকে কেন্দ্র করে একটা বিতর্ক সামনে এল-ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্র বিরোধি আন্দোলনের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত? বেগম 

রোকেয়ার মতন পুরুষতন্ত্রের সাথে আপোস করে চলা নাকি তসলিমার মতন ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও নারীবাদি জিহাদ ? কিসে ভাল

 ফল হবে ? ইন্সিডেন্টালি আমি মনে করি না চেতনা উন্মেষের আন্দোলনে কিছু হয় বলে বা এগুলোর কোন প্রভাব আছে। সমাজ 

বদলায়, নারী অধিকার বদলায় উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে নারী এগোলে তার পেছনে ভূমিকা থাকবে গার্মেন্টস

 শ্রমিকদের যারা নিজেদের রুজি বাঁচাতে নিজেদের অধিকারের লড়াই লড়বে। পাশ্চাত্যে নারীবাদিদের লেখালেখি থেকে নারীর 

অধিকার আসে নি। অধিকার এসেছে যখন শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজন হয়েছে নারীকে ফ্যাক্টরী শ্রমিক বানাতে। আমেরিকাতেও নারী 

স্বাধীনতার সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ধাপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যখন যুদ্ধের প্রয়োজনে নারীকে ফ্যাক্টরীতে যেতে হল। পশ্চিম বাংলাতেও নারী 

ক্ষমতায়ন যেটুকু হয়েছে তার মূলে আছে উদবাস্ত সমস্যা। প্রতিটা বাঙাল ফ্যামিলিতে এতই অর্থাভাব ছিল, ফ্যামিলিতে পুরুষরা বাধ্য

 হলেন মেয়েদের চাকরী করা মেনে নিতে। মেঘে ঢাকা তারার নীরারা পর্দায় না -বাস্তবেই বাঙালী নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন 

অবস্থান নিয়েছেন। আমার দাদু ছিলেন খুব রক্ষণশীল লোক-কিন্ত সংসারে অর্থাভাবে বাধ্য হয়েছিলেন মেনে নিতে যাতে আমার মা বা 

মাসীরা চাকরি করে। সেই নিয়ে তার আফশোস ও ছিল। তার সব সময় মনে হত হয়ত মেয়েদের চাকরী ছেড়ে ছেলে মেয়ে মানুষ 

করাটাই উচিত ছিল আগে। আমি এই অবস্থা দেখেছি আরো অনেক বাঙাল ফ্যামিলিতে-যেখানে মেয়েটিই চাকরী করে সংসার 

বাঁচিয়েছেন। বাবা অনেক কষ্টে মেয়ের চাকরি করা মানতে বাধ্য হয়েছে। এরা কেও বোভায়া বা রোকেয়ার নাম জানে না । 

অর্থানৈতিক প্রগতি, উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন নারীবাদের আসল চাবিকাঠি। যেমন হাজার নারীবাদি ডায়ালোগ সত্ত্বেও বাস্তব হচ্ছে

 অধিকাংশ চাকরীজীবি মায়েরা ক্যারিয়ার ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে কি আমেরিকাতে, কি ভারতে। স্বেচ্ছায়। সুতরাং ছেলে মেয়ে মানুষ 

করার হিউমানয়েড বা কমিউনিটি সিস্টেম না আসা পর্যন্ত, মেয়েদের জন্য চাকরি করা এখনো সম্পূর্ন লেভেল ফিল্ড হবে না । কিন্ত 

প্রযুক্তির উন্নতিতে আস্তে আস্তে এমনিতেই নারীর অধিকার গুলি প্রতিষ্ঠিত হবে।

Friday, November 14, 2014

বাঙালীরা কি কোন কালে হিন্দু ছিল?

                                                                    (১)
হিন্দু শব্দটা গোলমেলে, বিতর্কিত এবং বিটকেলে। তাই বিতর্ক, ধন্দ এবং ধান্দা এড়াতে প্রথমেই একটা সহজ সংজ্ঞা দিই। আমি হিন্দু ধর্ম বলতে কোন তাত্ত্বিক কথকথা, শাস্ত্র, ইতিহাস-কিছুই টানছি না এখানে। বাংলায় হিন্দুধর্ম বলতে আমি তাদের কথা বলছি-যারা মূর্তিপূজো যেমন দূর্গাপূজো, কালীপূজো করে, ঘরে দু একটি দেব দেবীর ছবি রাখে। বাপ মায়ের মৃত্যু হলে শ্রাদ্ধশ্রান্তি। বিয়েতে বামুন ডেকে মন্ত্র মার্জনা।  কীর্ত্তনে, গাজন, জন্মাষ্ঠমীর বারো মাসে তেরো পার্বন। আমি সেই হিন্দু ধর্মের কথা বলছি এখানে, যা সবাই বোঝে। জানে।  এর একটা দিক বৈদিক হিন্দুধর্ম -অন্যটা লোকায়েত প্যাগানিজম। ধরুন দুই এর মিশেল। ককটেল ধর্ম।

প্রশ্ন হচ্ছে এই যে বাঙালীগুলো ইদানিং নিজেদের হিন্দু হিন্দু বলে হর হর মহাদেব গাইছে সকাল বিকেল আর বিদেশী বলে মুসলিমদের তাড়াতে চাইছে-তা জানতে ইচ্ছে হয়, তাদের এই হিন্দু ধর্মটা কতটা স্বদেশী?

 নিজেদের মধ্যে  এদেরএই প্রকট হিন্দুত্বের ভাবটা যদি ইসলামের হাত থেকে বাঁচতে, একটা সারভাইভাল স্ট্রাট্রেজি হয়-তাহলে আমার কিছু বলার নেই । কারন সেক্ষেত্রে সেটা এক্সজিস্টেন্টিয়াল-অস্তিত্ববাদি অবস্থান- যুক্তির থেকে বাঁচার দায় বেশী। গ্রান্টেড।

কিন্ত এই সব বাঙালীরা যদি সত্য সত্যই ভেবে থাকে এই হিন্দু ধর্মটা তাদের আদি পুরুষের ধর্ম-ইসলামের মতন ইম্পোটেড মাদক না-সেটা হবে সত্যের ছয়লাপ।  কারন এই "হিন্দু ধর্মের" প্রায় সবটাই বাঙালীর জীবনে বিদেশী আমদানী। একদম মুসলমানদের মতন ।

                                                   (২)
বাংলায় এই হিন্দু ধর্ম বুঝতে আমাদের একটু মহাভারত ঘাঁটতে হবে।

 আচ্ছা মহাভারত যারা পরেছেন-তারা কি দেখেছেন মহাভারতের কোন কেন্দ্রীয় চরিত্র মন্দিরে গিয়ে পূজো দিচ্ছে?  মূর্তিপূজো করছে? কালীপূজো বা দূর্গাপূজো বা কোন পূজো করছে?

 গোটা মহাভারতটাই ধর্ম বনাম অধর্মের যুদ্ধ। সেই যুগে ধর্ম বলতে কি বোঝাত, মহাভারতের ছত্রে ছত্রে পরিস্কার। তার জিস্ট হচ্ছে যক্ষপ্রশ্নের সংকলন । যক্ষ যখন যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেন ধর্ম কি?  যুদ্ধিষ্ঠির কোথাও কি বলেছিলেন ধর্মপালন মানে মন্দিরে গিয়ে যজ্ঞ করা? পূজো করা?

 যুধিষ্ঠির উত্তর দেন বুদ্ধিমান লোকের কর্মই ধর্ম।  এবং গোটা মহাভারত জুরে কোথাও মূর্তিপূজো পাওয়া যাবে না । অশ্বমেধ যজ্ঞের উল্লেখ আছে অনেকবার। কিন্ত যাগ যজ্ঞ পূজা অর্চনাকে কেও  ধর্মের সাথে গোলান নি। যুষ্ঠিষ্ঠির যক্ষরাজকে যে উত্তর দিয়েছিলেন -অর্থাৎ বুদ্ধিমান লোকের মতন কর্মপালনই ধর্ম-তাই আমরা দেখবো মহাভারত জুরে। ভীষ্ম তার প্রতিজ্ঞাপালনে সুবদ্ধ-কর্ন তার দানকর্মের মগ্ন। কেও বর্ণভেদ মানছেন-কেও বর্ণভেদের বিরোধিতা করছেন কারন তা অমানবিক। সেগুলোই ছিল তাদের ধর্ম। লক্ষ্যনীয় যে মহাভারতের কথাকার "ধর্ম পালনের" প্রসঙ্গে বর্নভেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহেও উস্কানি দিয়েছেন-আবার প্রধান চরিত্রদের বর্নভেদ মানিয়েওছেন।

কোথায় মূর্তিপূজো বা পূজো অর্চনা আছে মহাভারতে?  কোথাও নেই ।

আসল সত্য হল এই  মূর্তিতুলে পূজো অর্চনাটাও ভারতে ইম্পোর্টেড। বহিরাগত হুনদের কাছ থেকে শেখা (০০৭০-০০৮০) । সেটা মহাভারতের যুগের অনেক পরে এসেছে। মহেঞ্জোদারোতে যে যোগী মূর্তি পাওয়া গেছে, সেটা সম্ভবত জৈন যোগগুরুর। এবং আরেকটা ভুল ধারনা মন থেকে ভাঙা দরকার। জৈন ধর্ম ভারত কেন পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম। ঋকবেদের ও আগে এর অস্তিত্ব ছিল। এটি মোটেও হিন্দু ধর্মসংস্কার বা বৈদিক ব্রাহ্মন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না। উৎসাহী পাঠকরা জৈন ধর্ম নিয়ে আমার আগের লেখাটা দেখতে পারেন (  http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=28847   )। সুতরাং বৈদিক হিন্দু ধর্ম, ঋকবেদের ধর্ম আদি সনাতন ধর্ম -এসব ভুল ধারনা ভাঙা দরকার।

  বৈদিক হিন্দু ধর্মের মূল চারযোগে। অথচ এই যোগ এবং সাধনার কোন ধারনাই ঋকবেদে নেই। ঋকবেদে শুধুই আচার অনুষ্ঠান, স্তোত্র, মন্ত্র। যোগ সাধনা নিঃসন্দেহে জৈন ধর্ম থেকে বৈদিক ধর্মে ঢুকেছে। ঠিক যেমন বৌদ্ধ পন্ডিতদের চাপে বৈদিক ধর্মের সব থেকে সুন্দর সাহিত্য উপনিষদের জন্ম হয়।

  প্রায় দেখি বাংলাদেশের অনেক হিন্দু নিজেদের সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী বলে গর্ব করেন।  তা এই সনাতন ধর্ম বলতে তারা যা পালন করেন, তা কতটা দেশী আর কতটা বিদেশী মাল? যদি ধরে নিই সনাতম ধর্মের একটা রূপরেখা আমরা মহাভারতে পাই-তাহলে তারা যেসব মূর্তি তুলে পূজো অর্চনা করছেন, পালা পার্বনে অংশ নিচ্ছেন-তা কি আদৌ কোনদিন সনাতন ধর্মে ছিল?

একটু পড়াশোনা করলেই জানা যেত যে বাংলায় যেসব দেবদেবী পূজিত হয়-শিব, দূর্গা কালী ইত্যাদি-এদের অধিকাংশই শংকর প্রজাতির দেবতা। কিছুটা দেশী, কিছুটা বৈদিক পুরান-সব ঘেঁটে ঘ হয়ে এই সব দেবদেবীরা বিবর্তিত। এর সাথে মহাভারতের সনাতন ধর্মের সম্পর্ক নেই ।

                                                                      (৩)
বল্লাল সেনের (1160–1179) আগে বাংলায় বৈদিক ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না।  কোন ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় ছিল না বাংলায়। অনেকে বলবেন প্রথম গৌড়ীয় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন শৈব। এই ব্যপারটা গোলমেলে। এটা ঠিক শশাঙ্কের আমলের এবং তার আগের অনেক শৈব মূর্তি বাংলার মাটি খুঁড়লে এখনো ওঠে। আমি যেখানে থাকতাম সেখান থেকেও দেখতাম মাটির তলা থেকে প্রাচীন শৈব মূর্তি উদ্ধার হত। কিন্ত ইনি বৈদিক শিব নন। ঠিক যেমন মহেঞ্জোদারোর যোগী বৈদিক শিব নন। শিব আসলে উর্বরাশক্তির লিঙ্গ দেবতা এবং যোগী দেবতার শংকঢ়।   জায়গায় এর নানা ভ্যারিয়েশন। পরে ইনি বৈদিক দেবতাদের মধ্যে ঢুকে যান। লিঙ্গ দেবতার ধারনা পৃথিবীর সব দেশের প্যাগানদের মধ্যে ছিল । মেসোপটেমিয়া থেকে রোম সর্বত্র লিঙ্গ দেবতার ধারনা ছিল। সুতরাং কোন লিঙ্গ দেবতা কেও পূজো করতো মানেই সে বৈদিক ধর্মের অনুসারী তা কিন্ত নয়। লিঙ্গদেবতার ধারনা সর্বব্যাপী।

বল্লাল সেনের আগে পাল রাজাদের আমলে বাংলাতে বৌদ্ধ এবং লোকায়েত অনেক ধর্মই ছিল-যার মধ্যে তান্ত্রিক, কালীভক্ত এবং নানান স্থানীয় প্যাগান সংস্কৃতিই পাওয়া যাবে। বৌদ্ধ ছিল রাজধর্ম। কিন্ত কোন জাতিভেদ পাওয়া যাবে না ।

সেন রাজারা এসে প্রথমে বাংলার সব প্রজাদের শুদ্র বানাইলেন!  কনৌজ থেকে ব্রাহ্মন ধরে এনে তাদের গ্রাম দিয়ে বাংলায় ব্রাহ্মন্য ধর্ম, বৈদিক মতে পূজা অর্চনা চালু করলেন। ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি করতে এদেরকে অনেকগুলি গ্রাম দিলেন। কুলীন ব্রাহ্মনদের অসংখ্য বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হল যাতে ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি হয়। এরাই আজকের চট্টোপাধ্যায় ( যারা চিটাগঞ্জের কাছে গ্রাম পেয়েছিলেন ) বন্দ্যোপাধ্যায় ইত্যাদি উপাধ্যায়।

এক অদ্ভুত হিন্দু যুগের সুচনা হল বাংলায়। কিছু ব্রাহ্মন। বাকী সবাই শুদ্র। বাংলাতে আজো ক্ষত্রিয় বৈশ্য নেই । বাংলার ব্যবসায়ী শ্রেনী সাহারাও শুদ্র আবার বোসের মতন রাজকরনিক শ্রেনীও শুদ্র!!

পাল রাজাদের আমলে যারা ধর্মীয় সাম্য উপভোগ করছিলেন, তারা হঠাৎ করে বর্নহিন্দুর এই শুদ্র স্টাটাসটা মানবেন কেন ? না । বাংলা কখনোই সেন রাজাদের মেনে নেয় নি। বল্লাল সেনের আমলে তার এই জোর করে ব্রাহ্মন্য হিন্দুধর্ম চাপানোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় চারিদিকে। এর মধ্যে বিখ্যাত ছিল বর্ধমানের কৃষক-জেলে বিদ্রোহ। সুন্দরবন এলাকাতে বিদ্রোহ করেন কোম্মপাল (১১৯৬) । তিনি সুন্দরবন এলাকাতে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে লক্ষণ সেন, বাংলার শুদ্রদের মধ্যে ২৭ টি কাস্টকে উত্তমর্ন শুদ্র স্টাটাস দিলেন ! কিন্ত তাতে কি আর শেষ রক্ষা হয়?  বাংলার জনগন তখন এই বহিরাগত ব্রাহ্মন আর সেনদের প্রতি বেজায় বিক্ষুব্ধ।

ফলে মাত্র দুহাজার সৈন্য নিয়ে বখতিয়াল খিলজি যখন নবদ্বীপ আক্রমন করলেন (১২০২), লক্ষন সেনের পালানো ছাড়া আর কোন পথ ছিল না ।

এর পরবর্তীকালে বাংলায় লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে ব্রাহ্মন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণায়। হজরত শাহ জালালের (১৩০৬-) মতন সুফীদের প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে বাঙালী দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে থাকে চোদ্দশ শতক পর্যন্ত ( শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মের আগে পর্যন্ত)।

     তবে বাঙালীর ইসলাম ও এক অদ্ভুত ধর্ম। বাঙালী মুসলমান আরবিক জানত না কোনদিন ই -বাংলাতে লেখা কোরান ছিল না এই উনবিংশ শতকেও।  তারা মুসলমান হয়েছিল, নামে মাত্রই । অধিকাংশ বাংলা মুসলমান গৃহেই তাদের আদি ধর্ম এবং পার্বনের চল ছিল ষোল আনা। অনেক বাঙালী মুসলমান গৃহেই কালীপুজো হত এই সেদিন ও। আমি নিজেই দেখেছি এরূপ অদ্ভুত জিনিস গ্রামে।

না -বাঙালী মুসলমানদের কোরান হাদিসে উৎসাহ ছিল না কোনদিন ই। এর সব থেকে বড় উদাহরন আরাকানের রাজসভায় প্রথম বাঙালী মুসলমান কবি (১৫৯৭-১৬৭৩)  আলাউল। আলাউল বিখ্যাত পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থের জন্য। তার বাকী কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বদিউজ্জামাল কাব্যগ্রন্থটি বাদ দিলে বাকীগুলি ( সতী ময়না, সপ্ত পয়কর ) সবগুলিই হিন্দু কাব্য কাহিনী থেকে নেওয়া।

আর সেই জন্যেই উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত একজন ও বাঙালী মুসলমান পাওয়া গেল না যিনি কোরান বাংলায় অনুবাদ করতে উৎসাহী হবেন। বাংলায় কোরান অনুদিত হল। কিন্ত করলেন একজন ব্রাহ্ম। গিরীশ ভাই। কেশব চন্দ্র সেনের অনুরোধে। তাও তাকে যেতে হল লক্ষ্ণৌতে। কারন বাংলাতে তিনি একজন ও কোরান বিশারদ পন্ডিত পেলেন না !

অর্থাৎ বাঙালী মুসলমানরা নামেই মুসলমান ছিল-কোরানে কি আছে না আছে-এদের কেওই কোনদিন জানার চেষ্টাও করে নি।  ফলে ইসলামটা অধিকাংশ বাঙালী মুসলমানদের কাছে একটা ধর্মীয় আইডেন্টির বেশী কিছু ছিল না দীর্ঘদিন।

  যাইহোক চৈতন্যের জন্মের আগেই অধিকাংশ বাঙালী নমঃ নমঃ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে-যদিও তারা আদৌ জানত না কোরান হাদিস কি বা মহম্মদ কে ছিলেন! সবটাই যেটুকু সুফী ইসলামের ভাল ভাল গল্প উপদেশ তারা শুনতো-সেই টুকু ইসলামি লোকগাথাই ছিল তাদের ইসলাম।

                                                            (৪)
চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৪) গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মই প্রথম বাঙালী হিন্দুত্বের একটা প্রথম আইডেন্টিটি। তিনি জাতিভেদ তুলে দিলেন। শুদ্রদের ডেকে নিলেন। সব হিন্দু আচার বর্জনের ডাক দিলেন। ফলে ইসলামের রথ ও আটকে গেল। যদি কেও মাটির ধর্মে সাম্য পায়, যে নিশ্চয় আরবের ধর্মে সাম্য খুঁজতে যাবে না ! সেই সময় আসলেই অনেকেই  ইসলাম নিয়েছিলেন নামে মাত্রে। সেই অর্থে আরবের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না । ফলে এক বিপুল সংখ্যক মুসলিম আবার চৈতন্যের হরি-সংকীর্তনে হিন্দু ধর্মে ফিরে এল। চৈতন্য ভাগবতে এর উল্লেখ আছে।

গ্রামে গঞ্জে বাঙালীর হিন্দু ধর্মের ভিত্তি সেই বৈষ্ণব ধর্ম। এই সব পূজো অর্চনা চিরকালই জমিদারি শ্রেনীর অনুষ্ঠান। জমিদারদের এই পূজাপার্বনে নিম্ন বর্নের হিন্দুরা অংশ নিত ঠিকই-কিন্ত তাদের প্রানের ধর্ম ছিল  হরি সংকীর্তন । এই ট্রাডিশন আজো চলছে।  গ্রাম বাংলাতে অধিকাংশ লোক এখনো শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মেই আপ্লুত। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ বা রবীন্দ্রনাথ এরা ভীষন আরবান। এতটাই শহুরে, যে শহরের বাইরে এদের খুঁজতে আজও কষ্ট হবে।

                                                                (৫)

আমি শুধু এটুকুই লিখতে চেয়েছিলাম, বাঙালীর মধ্যে হিন্দুত্ব বা ইসলামিয়তের আইডেন্টিটি খুব গভীরে না । বরং বাঙালীর প্রাণের অনেক গভীরে তার বাউল গান, তার ভাটিয়ালি গান। কিন্ত গত ত্রিশ বছরে পেট্রোডলারে অসংখ্য মাদ্রাসা গজানোয় এবং মসজিদ তৈরী করে বাঙালী মুসলমানের মনে এবং রক্তে আরবের বর্বর ইসলামের বিশাক্ত বীজ বপন করা হয়েছে। ফলে পাশাপাশি থাকা হিন্দুদের জীবন হয়েছে বিপন্ন। পরিত্রানের আশায় তারাও এখন হিন্দু ধর্মে তাদের আইডেন্টি, পরিচয় খুঁজছে। বিজেপি, হিন্দু সংহতি ইত্যাদি সংগঠনের তলায় নিজেদের সংঘবদ্ধ করছে।

 সমস্যা হচ্ছে,  হিন্দু ধর্মে তারা যে আইডেন্টি খুঁজছে, তা কিন্ত তাদের নয়!

  শ্রী চৈতন্য কি মুসলমানদের ঘৃণা করতে শিখিয়েছিলেন ? হরিদাস ঠাকুর (যবন হরিদাস) প্রথম জীবনে মুসলিম ছিলেন যিনি পরে বৈষ্ণব আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা হবেন। চৈতন্য ভাগবতে দেখা যাচ্ছে হরিদাস ঠাকুরকে যখন ইসলাম ছাড়ার জন্য মৃত্যদন্ড দিল কাজী-উনি মোটেও ইসলামকে অসন্মান করেন নি। সেই কাজীকে একটা মুল্যবান কথা বলেছিন হরিদাস ঠাকুর। প্রকৃত ভক্তের শুধু একটাই ভগবান থাকে-আর সেই ভগবানকে ধর্মের নামে আলাদা করা যায় না ।

সুতরাং বৈষ্ণব ধর্মকে যদি বাংলার মূল হিন্দুধর্ম ধরি-তা মোটেও মুসলিমদের ঘৃণা করতে শেখায় না ! বরং চৈতন্য চরিত্রামৃত এবং চৈতন্য ভাগবতে অনেক উদাহরন পাওয়া যাবে যেখানে শ্রী চৈতন্য মুসলিমদেরও ভাই হিসাবে ডেকে নিয়ে একসাথে নামসংকীর্তন করেছেন-তারাও ক্রমে বৈষ্ণব ধর্মের কোলে ফিরে এসেছে!

আজকে যারা হিন্দু হিন্দু বলে আকাশ বাতাস মুখরিত করছেন, তারা পারবেন শ্রীচৈতন্যের মতন মুসলিমদের বুকে টেনে নিতে? তারাত শুধু ম্লেচ্ছ বলে বিষ ছড়াতেই ব্যস্ত। পারলে তাদেরকে ভারত থেকে বিদেয় করতে পারলে বাঁচে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ঘৃণাকে তারা হিন্দু ধর্ম বলে চালাতে চান। সেই ঘৃণা দেখলেও আঁতকে উঠতে হয়। এটা কোন ভবিষ্যতের পথ না । ওয়াহাবী ইসলামের কবল থেকে বাঙালী মুসলমানদের বাঁচাতে হলে, তাদেরকে চৈতন্যের প্রেমের পথই দেখাতে হবে। নইলে তারা তাদের ইসলামিক পরিচিতিটা আঁকরে ধরে আরো বেশী ওয়াহাবী মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করবে-যার পরিনাম আরো বেশী জঙ্গী, জেহাদি ও বোমা।



Monday, November 10, 2014

বিধান রায়ের মুল্যায়ন

বিধান রায়ের মুল্যায়ন নিয়ে বামেদের সাথে আমজনতার মিলবে না -এটা সাদা কথা। এবার দেখা যাক বিধান রায়কে নিয়ে বামেদের মুল্যায়ন আদৌ ঠিক কিনা। কারন আমাদের মতন আম বাঙ্গালির চোখে উনিই বাংলার সেরা মুখ্যমন্ত্রী। সুতরাং বিধান রায়কে নিয়ে সুস্থ বিতর্ক হৌক। বামেরা তাদের যুক্তি দেখাক। আমি আমার বক্তব্য জানাচ্ছি কেন বিধান রায় বাংলার সেরা মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদ
(১) উনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভে আসেন ১৯২৫ সালে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যান্ডিডেট হিসাবে। ব্যারাকপুরে সুরেন ব্যানার্জিকে পরাস্থ করেছিলেন প্রথম নির্বাচনে একজন আনকোরা নির্দলীয় পার্থী হিসাবে!! কারন তদ্দিনে বাংলার মানুষ সমাজসেবী নিঃস্বার্থ বিধান রায়কে চিনে গেছে-তাই পোড় খাওয়া সুরেন ব্যানার্জি তার কাছে হেরে যান!
(২) উনি কংগ্রেসের গোষ্ঠিবাজি, দলাদলিতে কোন কালে ছিলেন না । পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হতেও চান নি। কঠিন সময়ে পশ্চিম বঙ্গের হাল ধরে ছিলেন শুধু গান্ধীজির অনুরোধে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দেখলে দেখা যাবে তিনি গঠনমুলক কাজে জড়িয়ে ছিলেন সারা জীবন ।
শুধুত কল্যানী, হলদিয়া, দুর্গাপূর না -যাদবপুরের টিবি হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে আরো একডজন স্পেলাসিস্ট সরকারি হাসপাতাল তার হাতে তৈরী। তার জ্যোতিবসুর অবদান কি? তার আমলে রক্তচোষা প্রাইভেট আমরি, রুবি ছাড়া বলার মতন কি তৈরী হয়েছে??
(৩) সেই ১৯২৭ সালেও, বিধান রায় হুগলী নদীর দূষনের বিরুদ্ধে সরকারি স্টেপ নিতে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে বিল আনার চেষ্টা করেন, দূষনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। আর তার ৭০ বছর বাদে জ্যোতি, বুদ্ধ বা মমতার কাছে এসব দূষন মাথায় ঢোকার বস্তু না । বিধান রায়ের রাজনৈতিক চেতনার মূলে ছিল সবার জন্য সুস্বাস্থ্য, সুচেতনা । মমতা, জ্যোতি বুদ্ধ এদের রাজনীতি ভোট গোনা। সুতরাং আমের সাথে আমড়ার তুলনা করে লাভ কি?
(৪) উনি একজন সফল সমাজতন্ত্রী। কোলকাতা কর্পরেশনে ১৯৩১-৩৩ সালে তিনিই প্রথম বিনা পয়সায় চিকিৎসা এবং শিক্ষার জন্য ছোট ছোট কেন্দ্র খোলেন। তার মুখ্যমন্ত্রিত্বে পশ্চিম বঙ্গে সরকারি শিক্ষা এবং সরকারি চিকিৎসার প্রসার হয়েছে। আর জ্যোতি বুদ্ধ মুখে সমাজতন্ত্রের বুলি কপচিয়ে প্রাইভেট নার্সিং হোম আর প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পেদে বেড়িয়েছে। সরকারি পরিশেবা ধ্বংস হয়েছে। সরকারি পরিশেবা ধ্বংস করে শিক্ষা এবং চিকিৎসার বেসরকারিকরন সিপিএম করেছে। সুতরাং প্রকৃত সমাজতন্ত্রী, সফল সমাজতন্ত্রীকে আপনারাই জেনে নিন।
আমি কি দিয়ে মাপবো বিধান রায় বনাম জ্যোতি বুদ্ধ মমতাকে?
মেধা? সেক্ষেত্রে এদের কেও বিধান রায়ের নোখের যোগ্যও না !! একজন এফ আর সি এস ডাক্তারের সাথে বাপের পয়সায় পড়াশোনা করা ফেইলড ব্যারিস্টারের তুলনা কি সম্ভব?
সরকারি পরিশেবা ? বিধান রায় যেটা তৈরী করেছিলেন, জ্যোতি সেটা ধ্বংস করেছিলেন। এনিয়ে আশাকরি বিতর্কে যাবেন না । কল্যানী, দূর্গাপূর আজকে শশ্বান শহর । অথচ এগুলোর প্রান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বিধান রায়ের হাতে। সি এম সি, এন আর এস বিধান রায়ের আমলে কি ছিল, আর সিপিমের আমলে কি ছিল-সেটা যেকোন বয়স্ক লোককে জিজ্ঞেস করুন-তর্কে যেতে হবে না ।
উন্নয়ন, শিল্পায়ন নিয়ে কথা বললে বিধান রায়ের সাথে বাকীদের তুলনা করতে, মাইক্রোস্কোপ লাগবে!
ভিশন ?
১৯২৭ সালে যে লোকটা পরিবেশ দূষনের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার দূরদর্শিতা দেখায় আর তারপরে কোনদিন কোন বাঙালী রাজনীতিবিদ দূষনের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার দূরদর্শিতা দেখাতে পারে নি-তাহলে জ্যোতিবোসের মতন অতি সাধারন মধ্যমমেধার মানুষ যিনি পশ্চিম বঙ্গকে ধ্বংস করার রাজনীতি ছাড়া কিছু দেখাতে পারেন নি, তিনি কোন যোগ্যতায় বিধান রায়ের ত্রিসীমানাতে আসেন?
আমি বিধান রায়ের পক্ষে আরো অনেক কিছুই লিখতে পারতাম। এবার বামেরা তাদের বক্তব্য বলুক যুক্তি তথ্য দিয়ে।

অন্যেদের যুক্তি না শোনা মানে সেই জগতটাকে আরো ছোট করা

পৃথিবীতে সর্বত্র লিব্যারালদের এক সমস্যা। সবাই বিদ্রোহী। কারন ব্যক্তিগত ক্ষোভ, অভাব, অনুযোগ, অভিজ্ঞতা। কেও কমিনিউস্ট কেন? সমাজে অসাম্য, দারিদ্র, বঞ্চনার প্রতি ক্ষোভ। লিব্যারাল কেন? বাবা মা সমাজ হয়ত তাকে প্রহ্লাদ পাথরে বেঁধে বড় করতে চেয়েছিল! তাই মনে পুষে রাখে প্রবল বিক্ষোভ। হিন্দুত্ববাদি কেন? নিউজ, মিডিয়া ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তার মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ।
মুশকিল হচ্ছে একটা নির্মোহ যুক্তিপূর্ন অবস্থান থেকে কেও আদর্শবাদের সাথে জড়াচ্ছে না । ফলে এদের সবার মধ্যে একটা এক্সট্রিমিস্ট র‍্যাডিক্যাল অবস্থান। বিরুদ্ধ মত, ভিন্নমত সহ্য করতে পারছে না । অথচ ভিন্নমতটার মধ্যে না ঢুকলে কোন যুক্তিপূর্ন অবস্থানই সম্ভব না ।

কাল দেখলাম সমীক ময়ুখকে ব্যান করার জন্য একটা পোষ্ট দিয়েছে। ময়ূখ ছেলেটিকে গ্রুপের লিব্যারালরা অপচ্ছন্দ করে। কিন্ত সে তার নিজের মতন করে বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করছে। আলটিমেটলি সেটা কুয়োর ব্যাঙের মতন পরিত্যক্ত কুয়োয় লাফানোর চেষ্টা। কিন্ত কুয়োর ব্যাঙ আমরা কে নই ? কারুর কুয়ো বড়, কারুর ছোট। কারুর জল পচা, কারুর পরিস্কার। কিন্ত আমরা যেটুকু জানি, দেখি, সেটুকুই আমাদের জগত।
অন্যেদের যুক্তি না শোনা মানে সেই জগতটাকে আরো ছোট করা।

Sunday, November 9, 2014

এমন কোন বাঙালী বুদ্ধিজীবি জন্মেছেন, যার রাজনৈতিক চিন্তা পাতে দেবার যোগ্য?

জিহাদিনী রাজিয়া বিবিকে বিপ্লবী আখ্যা দেওয়াতে বাঙালী দেখলাম সুমনের পেছনে লেগেছে। সুমনের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে সত্যিই কি কিছু পাওয়ার আছে?

সুমন কেন, আর এমন কোন বাঙালী বুদ্ধিজীবি জন্মেছেন, যার রাজনৈতিক চিন্তা পাতে দেবার যোগ্য?

বিদ্যাসাগর, চৈতন্যদেব, তাজুউদ্দিন এবং বিধান রায় ছাড়া আর কোন  বাঙালীকে মনে পড়ছে না যাদের মধ্যে সত্যিকারের কিছু পরিপক্ক রাজনৈতিক চিন্তা ছিল।

বিবেকানন্দ এবং নেতাজির চিন্তাধারা বেশ ফ্যাসিস্ট। দুজনেই জাপানী ফ্যাসিজমে মুগ্ধ ছিলেন। এদের রাজনৈতিক বক্তব্যকে কখনোই পরিণত বলে মনে হয় নি-অধিকাংশটাই জাতীয়তাবাদি আবেগ বা ন্যাশালিস্টিক স্যোশালিজম ছাড়া কিছু না । গভীর কোন রাজনৈতিক চিন্তার পথ ইনারা দেখান নি।

আর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ? মুক্তধারা এবং গোরাকে যদি তার অন্যতম মূল রাজনৈতিক থিসিস ধরি-তাহলে উহাদের মধ্যে সাহিত্য আছে-কিন্ত রাজনৈতিক চিন্তার গভীরতা নেই । মুক্তধারাতে তিনি আন্তর্জাতিক, আবার গোরাতে জাতীয়তাবাদের গোঁড়ামি।  বেসিক্যালি দশঘোঁটলা কবিত্ব। খেতে উত্তম, কিন্ত রাজনৈতিক প্রোটিন নাই।

শেখ মুজিবর রহমানের কথা ছেড়ে দিলাম। উনি দাদাগিরির সাথে রাষ্ট্রচালনাকে প্রায় গোলাতেন। বাকশালের সময়ে ওর কিছু বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছিল উনি স্টালিনকে ফলো করতে চাইছেন-কিন্ত সেটা আবার প্রকাশ্যে বলতেও পারছেন না । ইসলাম, রাশিয়া মিলিয়ে সাপের ব্যাঙ গেলার রাজনীতি-যা বাংলাদেশের ভিত্তিকেই দুর্বল করেছে।

জ্যোতিবসু, বুদ্ধদেব বা মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে কিছুই বলার নেই । এদের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই । সব মগ ডাল কাটা কালিদাস-আর এদের রাজনীতির সবটাই দিল্লীর বিরুদ্ধে বেদনাবিলাস!

 বরং সফল ছিলেন চৈতন্য। জাতিভেদ প্রথা তুলে বাঙালীর ইসলামীকরন আটকানোতে তিনি ১০০% সফল । হিন্দু ধর্মের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে তার প্রচারিত হিন্দু ধর্ম ( গৌড়িয় বৈষ্ণব-বা ইস্কন ) সব থেকে বেশী জনপ্রিয়। আমি ধর্ম মানি বা না মানি, তার রাজনৈতিক সাফল্যকে না মেনে উপায় নেই।

বিদ্যাসাগর সর্বকালের সেরা বাঙালী। হিন্দু জাতি, বাংলা ভাষা যেখানে সংস্কারে হাত লাগিয়েছেন-সফল। কারন তার সততা, কর্মনিষ্ঠতা ছিল প্রশ্নাতীত। উদ্দেশ্য সৎ, মানুষটা সৎ, যে সংস্কার কাজে হাত লাগিয়েছেন, সফলতা এসেছে।

তাজুউদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের ট্রাজিক চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে উনার সফল রাজনৈতিক চালনাতেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে  উনিই ছিলেন আসল নেতা-শেখ মুজিবর তখন জেলে। আমি মনে করি সেটা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে শাপে বর।
তাজউদ্দিন যেভাবে দক্ষহাতে মুজিবনগর সরকার চালিয়েছেন, শেখ সাহেব পারতেন না । শেখ সাহেবকে যদি পাকিস্তানিরা মেরে ফেলত, সেটা বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য এবং শেখ সাহেবের জন্যও ভাল হত। বাংলাদেশ একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক পেত যিনি শেখ সাহেবের তাবেদার হতে পারেন নি বলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে  প্রথমে উপেক্ষিত নায়ক, তারপরে শহিদ হলেন।  শেখ সাহেবও নিজের হাতের লোকেদের হাতে খুন হওয়ার অসন্মান থেকে বেঁচে শহীদ হতেন। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তাকে ইতিহাসের পাতায় ঘুরতে হত না ।

বিধান রায় সম্ভবত বাংলার একমাত্র সফল রাজনীতিবিদ। যিনি রাজনীতি বলতে উন্নয়নের রাজনীতি বুঝতেন -হলদিয়া, কল্যানী থেকে দুর্গাপূর-বাংলার সফল উন্নয়নের রাজনীতি তার তৈরী। যা পরবর্তীকালে বামেরা সম্পূর্ন ধ্বংস করে।

বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে রাজনৈতিক চিন্তার পরিপক্কতা আশা করা আর কেন্নোর সোজা পথে চলা-একই রকমের ভ্রান্ত প্রত্যাশা। সুস্থ চিন্তার রাজনীতিবিদ বাংলায় ইউনিকর্ন। 

লেখক

লেখক পরিচিতিঃ
 বিপ্লব পাল পেশায় আমেরিকা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার। আই আই টি খরগপুরের প্রাত্তন ছাত্র, টেলিকমিউনিকেশনে পি এই চ ডি করে দীর্ঘদীন ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষনা করার পর বর্তমানে জ্রেয়াস টেকনোলজি কোম্পানীটির প্রতিষ্ঠাতা ।


 নেশায় লেখক। লিখছেন দীর্ঘদীন ধরে। উনার প্রবন্ধ ও ব্লগের বিরাট সংখ্যক পাঠক পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান। মূলত সমাজ বিজ্ঞান, ধর্ম এবং রাজনীতির অন্তরঙ্গ রসরহস্য নিয়েই লিখে থাকেন এবং তার অনেকগুলি প্রবন্ধ বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গের তরুন প্রজন্মকে নতুন ভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

  বর্তমানের সংকলনের গল্পগুলি ২০০৫-২০০৬ সালের মধ্যে লেখা যখন লেখক ভিন্নবাসর নামে একটি ইন্টারনেট পত্রিকাতে সম্পাদক ছিলেন। মূলত এই পত্রিকাতেই বেড়িয়েছিল এই গল্পগুলি। অধিকাংশ গল্প আমেরিকাতে প্রবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অথবা
সায়েন্স ফিকশন ঘরানা। 

বার্লিন ওয়ালের মৃত্যুদিন

আজ বার্লিন ওয়ালের মৃত্যুদিন। দুই জার্মান জাতিকে বিভক্ত করেছিল যে কৃত্রিম বিভেদ তার ধ্বংসের দিন। 

এই দিনটাই আমি আরেকটা যন্ত্রনায় ভুগি। যখনি বাংলাদেশের লোকেদের সাথে কথা, আলাপ হয়, তখন যন্ত্রনাটা আরো বাড়ে। একমন, একদেহ-কেও যেন করাত চালিয়ে দ্বিখন্ডিত করেছে!

ইসলাম বা বৈদিক হিন্দু ধর্ম কোনটাই বাঙালীর ধর্ম নয়। ইসলাম আরবের অপসংস্কৃতি, হিন্দু ধর্ম হচ্ছে উত্তর ভারতের। আমাদের সংস্কৃতির শিকড় সেই আউল বাউলে। রবীন্দ্র নজরুলে।

অথচ বাঙালী মননশীলতায় এতই গরীব, এই দুই বিদেশী সংস্কৃতি আঁকড়ে, আমরা নিজেদের নিজেদের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর তুলে দিলাম। দুটো আলাদা দেশের বাসিন্দা হলাম। আমাদের কোন নেতা মহানেতার বলার সাধ্য নেই -আমরা বাঙালী-আমরা হিন্দু মুসলমান নই। আমাদের নিজস্ব জীবন দর্শন আছে। আমাদের দরকার নেই বেদ কোরান।

বাঙালী যখন নিজেকে হিন্দু মুসলমান ভেবে ঝগড়া করে দাঙ্গা লাগায়-লজ্জিত হয় এই সব মানুষদের অজ্ঞতায়। এদের পূর্বপুরুষদের কেও হিন্দু মুসলমান ছিল না । তারা ছিল গর্বিত বাঘ বাঙালী। আর আজকের বাঙালী ইসলাম আর হিন্দু ধর্ম নামে দুই বিদেশী সংস্কৃতির নামাবলী চাপিয়ে ইঁদুরের মতন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে।

একটা জাতি যখন তার অতীতকে ভুলে যায়, তাদের এই দূরাবস্থাই হয়।

Friday, November 7, 2014

কোলকাতার চুমু খাওয়া আন্দোলন -পুরুষতন্ত্রকে থাপ্পর

চুমাচুমি আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট হিন্দুত্ববাদিদের  ( সঙ্গে দোষর বাংলাদেশের জামাতি)  গঙ্গাজল পূত গালাগালি দেখে বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ, রামমোহনের সতীদাহ উচ্ছেদ -সব ইতিহাসই চোখের সামনে ভেসে এল!  সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের দুশ বছর , হতে চলল-হিন্দুত্ববাদিদের গালাগালের ভাষা বদলাইল না !বিধবাদের পুনঃবিবাহ দেওয়ার অপরাধে বিদ্যাসাগরের মতন শ্রেষ্ঠ বাঙালীকেও অকথ্য গালাগাল এবং শারীরিক আক্রমনের শিকার হতে হয়েছে। বিরোধিতার নোংরা ভাষা এবং ভাব দুশো বছর বাদেও এক! দেশ, সমাজ রসাতলে যাবে! পাশ্চাত্যে যা শোভন, ভারতে তা হবে কেন? তখন বিদ্যাসাগরকেও আক্রমন করা হয়েছিল-আপনি কি আপনার মায়ের বিধবা বিবাহ করাবেন?? আজকে এদের ভাষাটা-আপনার মা-বাবা যদি প্রকাশ্যে চুমু খায় আপনি কি সমর্থন করবেন??

         হিন্দুবাদিদের হনুমানুত্ব দুশো বছরেরও বদলাইল না । ইতিহাস যেমন বিদ্যাসাগরের বিরোধি শোভাবাজার রাজাবাড়ির রাধাকান্ত দেবকে আস্তাকুঁড়ে ফেলেছে-আজ যেসব উগ্র বা ছুপা হিন্দুত্ববাদি ছেলে মেয়েদের প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার বিরুদ্ধে গর্জাচ্ছেন-তাদের জন্য ইতিহাসের অন্ধকার কূপই বরাদ্দ।

 তবে  ভারতে হিন্দু ধর্ম এবং সমাজের সংস্কারের ইতিহাস বেশ কিছু দুর্ভাগ্যেরও। বিংশ শতাব্দির শুরুতে মহামান্য গোখলে এবং রানাডে  মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স বারো
করতে আইন সভাতে বিল আনার চেষ্টা করতেই উগ্র হিন্দুত্ববাদি বাল গঙ্গাধর তিলকের দলবল দাঁত নখ খুলে বেড়িয়ে আসে। কংগ্রেসে সেই সময় বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে যে ভ্রান্ত হিন্দু জাতিয়তাবাদির আন্দোলনের শুরু হয়, তার বর্তমান ধারা হচ্ছে বিজেপির হিন্দুত্ববাদ। এসব জাতিয়তাবাদ, দেশ গৌরব, সংস্কারের পেছনের গল্প একটাই-মেয়েদের পুরুষতন্ত্রে আটকে রাখা।

চুমু খাওয়ার এই আন্দোলনটাকেও পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে একধাপ প্রগতি হিসাবে না দেখার কোন কারন নেই ।

ঋত্বিকের মেঘে ঢাকা তারার নীতাকে মনে পড়ে?  সেই নীতা-সেই বাঙালী মেয়েটা যে সংসারে দিতে দিতেই, তার জীবন, তার নিজের জীবন যৌবন সব শেষ। হিন্দুত্ববাদিদের মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, তারা চাইছে মেয়েরা সবাই নীতা হোক-তারা নিজেদের মানবী না দেবী হিসাবে ভাবুক! নীতারা একই সাথে সংসার ইঞ্জিনের কয়লা এবং বাস্প-পুরুষ শুধুই সওয়ারী। সেই দেবী নীতারা প্রকাশ্যে চুমু খেলে, ইঞ্জিনের কয়লা এবং বাস্প কোথা হইতে আসিবে?

পূর্ব বাংলা থেকে উঠে আসা উদ্বাস্তু মেয়েরা সবাই এককালে মেঘে ঢাকা তারার মতন সংসারের ঘানি টেনে গেছে-গেছে বলেই হয়ত আমাদের মতন একটি প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত নব্য সমাজ উঠে এসেছে দেশ বিভাগের শত অভিশাপের পরেও। কিন্ত তাদের মেয়েরাও নীতার মতন নিবেদিতা হবে, মানবীর মতন তাদের কামনা বাসনার পেছনে ছুটবে না - এসব আহাম্মকি, পশ্চাৎপর চিন্তা।

  আমি নিজে খুব বেশী লিব্যারাল নই -চাইল্ডলেস বাই চয়েস এসব লিব্যারাল দৃষ্টিভংগীকে সমর্থন করি না। কারন লিব্যালার বা রক্ষনশীল যাইহোক না কেন, সমাজের প্রতি সবার একটি নুন্যতম দায়বদ্ধতা থাকতেই হয়। জন স্টুয়ার্ট মিলের লিবার্টি বা ব্যাক্তি স্বাধীনতার সীমানা সেখানেই শেষ হয়। লিব্যারালিজম যদি সমাজের নুন্যতম দায়বদ্ধতার বিরুদ্ধে যায়-(সন্তান ধারনটাকে আমি নুন্যতম দায়বদ্ধতার মধ্যেই ফেলি) -আমি তার বিরুদ্ধেই থাকব। তবে এসব জোর করে চাপানোরো আমি বিরুদ্ধে। একজন নারীর শরীর তার একান্ত। সে কি সিদ্ধান্ত নেবে তার ব্যাপার। আমি শুধু আমার মত প্রকাশ করতে পারি, বিরক্তি প্রকাশ করতে পারি-কিন্ত জোর করে কোন মেয়ের ওপর সেই সিদ্ধান্ত চাপাতে পারি না ।

কিন্ত চুমুর বিরুদ্ধে কেন? চুমু ভালোবাসার একটি পবিত্র প্রকাশ। আমেরিকাতে রাস্তাঘাটে পার্কে তরুন তরুনীদের চুমু খেতে দেখলে মন বেশ ভাল লাগে। এতে সমাজের কোন ক্ষতি হচ্ছে না - বরং আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে যে জোর করে নীতা বানানোর চেষ্টা করা হয়- চেষ্টা করা হয় মেয়েটির প্রতি মা, বোন ইত্যাদি স্টিকার এঁটে-তাকে দেবী বানিয়ে-ফাইনালি সেই ইঞ্জিনের কয়লা আর বাস্প বানানোর গল্পের হারিকাঠে মাথা দিতে-তার থেকে এটা মুক্তির একটা ধাপ।

আমি জানি পশ্চিম বঙ্গের অর্থনৈতিক এবং শিল্পের উন্নতি না হলে প্রগতির কথাবার্তা না বলাই ভাল। কিন্ত চুমু খেলে শিল্প স্থাপনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতিই তৈরী হবে। কারন শিল্পোন্নত সমাজের জন্য ব্যক্তি স্বতন্ত্র্যবাদের দরকার। সরকার বা সরকারী দলগুলির গুন্ডাগর্দি শিল্প স্থাপনের অন্তরায় নয় কি?

 এই ধরনের চুমু আন্দোলন অবশ্যই সরকারি উর্দি এবং বেউর্দি ধারি গুন্ডাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। যা ব্যক্তি স্বাধীনতাকেই সুরক্ষিত করবে। আর ব্যাক্তিস্বাধীনতা শিল্পোন্নত সমাজের প্রাথমিক শর্ত।

Thursday, November 6, 2014

চুমু খাওয়া নিয়ে লিব্যারাল বনাম রক্ষণশীলদের ফেসবুক যুদ্ধ

চুমু খাওয়া নিয়ে লিব্যারাল বনাম রক্ষণশীলদের ফেসবুক যুদ্ধ বেশ চিত্তাকর্ষক। আমি নিশ্চিত যেসব রক্ষণশীলরা প্রকাশ্যে চুমুর বিরুদ্ধে কটাক্ষ করছেন, তাদের জীবনে কোন প্রেমিকা জোটে নি। বাবা-মা পেপার দেখেশুনে যাকে ফুলশয্যার রাতে মশারীর মধ্যে ঢুকিয়েছে, সেটাই সম্ভবত তাদের প্রথম চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা। ফলে প্রেমিকার সাথে লেকের ধারে বা নদীর ধারে ঘুরে পুলিশের চোখ রাঙানি খাওয়ার দুঃসহ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এদের নেই। 

ুমু খাওয়ার আন্দোলনের সাথে প্রগতিশীলতার সম্পর্ক নেই -কিন্ত এটা নরনারীর বেসিক রাইট বা হিউমান রাইটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ভারতে এমনিতেই ছেলে মেয়েদের মেলামেশার ব্যাপারে প্রচুর রক্ষণশীলতা-যা ছেলেদের যৌন বিকৃতির মূল কারন। প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার অধিকার না দিলে, সেই বিকৃতি আরো বাড়বে।

আর এত ভাবার কিছু নেই । সব সভ্য দেশে নারীপুরুষ প্রকাশ্যেই চুমু খায়। অসভ্যদেশে দরজাবন্ধ করে খেতে হয়! এখন ভারত সভ্যতা না অসভ্যতার দিকে এগোবে এটা আপনারাই ঠিক করুন। তবে বলবেন না যে প্যাশ্চাত্যের অন্ধ হনুকরন আমরা কেন করবো? কারন সুযোগ পেলে আমেরিকা বা ইংল্যান্ডে ভিসার লাইনে এই সব আমেরিকা বিরোধি রক্ষনশীল এবং লিব্যারালরা সবার আগে দাঁড়াবে।

দুই নারীপুরুষ প্রেম করছে -এদেখতেও ভাল লাগে। ভারতে কাফে কফিডে গুলোতে এই জন্যেই বসে আড্ডাদিতে ভাল লাগে যে চারিদিকে কত দম্পত্তি প্রেম করে। এসব দেখলেই মনটা বেশ ভাল লাগে। কারন ভালোবাসা আর প্রেম থেকেই সৃষ্টির শুরু।

Sunday, November 2, 2014

প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা," চুমু" খাওয়া আন্দোলন

প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা নির্নয় কঠিন। জীবনের যেহেতু কোন পরম উদ্দেশ্য নেই, কে কার সাথে শুচ্ছে, উঠছে, কি পড়ছে এই নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন যদ্দিন না তা "নতুন" নাগরিক গড়ার কাজে অন্তরায় হয়।  এমনিতে পরকীয়া নৈতিক ভাবে দোষের না-কিন্ত তা করতে গিয়ে যদি পিতা মাতার সন্তান সন্ততির দেখভালের কাজের ক্ষতি হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই কাম্য না । এখন পরকীয়া করার অধিকার প্রগতিশীলতা না অধোগতি?  পরকীয় সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই আছে। তাহলে নতুন কি হইল? কিন্ত এর উত্তর পোষ্ট মর্ডান ফিলোসফি-স্থান, কাল পাত্র বুঝে তাহা ভাল বা খারাপ কর্ম। ওই ভাবে কোন সহজ উত্তর নেই ।

 ইদানিং চাড্ডিগিরির বিরুদ্ধে যে " চুমু" খাওয়া আন্দোলন ভারতে শুরু হয়েছে-সেটা তাহলে কি? এটা ঠিক, প্রকাশ্যে চুমু খেলে সমাজ পরিবর্তন হয় না । একমাত্র নতুন প্রযুক্তিই সমাজ পরিবর্তন করে উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই জন্য স্টিম ইঞ্জিন এবং ফরাসী বিপ্লবের জন্ম প্রায় একই সাথে হলেও , স্টিম ইঞ্জিনের মাধ্যমে যে শিল্প বিপ্লব এবং তার থেকে সমাজ পরিবর্তন সাধিত  হয়েছিল, তা ফরাসী বিপ্লবের সাম্যের স্লোগানে কনামাত্রও কিছু হয় নি। স্যোশাল মিডিয়া বা  ইন্টারনেট যে সমাজ বিপ্লবের জন্ম দিচ্ছে, তার ভগ্নাংশও বলশেভিক বিপ্লবের দ্বারা সাধিত হয় নি। বলশেভিক বিপ্লব ঘড়ির কাঁটা বরং উল্টোদিকে ঘুরিয়েছে।

সুতরাং ভারতে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াটা একটি "জন বিপ্লব"।  এর দ্বারা সমাজ পরিবর্তন কিছু হবে না তা নিশ্চিত। কিন্ত সেভাবে এটিকে ভাবলে ভুল হবে।

 বরং এটিকে দেখতে হবে ভারতের চাড্ডিগিরি মার্কা যেসব আইন আছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এটিকে প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে দেখলে তবেই এর মধ্যে কিছু সারাংশ পাওয়া যাবে।  Unjust laws are not laws. সুতরাং আইনের উন্নতির জন্যই সর্বদা আইন অমান্য আন্দোলনের দরকার আছে এবং হবে।

সুতরাং ভারতের চুমু খাওয়া আন্দোলনের প্রতি আমার সমর্থন রইল যাতে ভারতের প্রাগৈতিহাসিক আইনগুলির পরিবর্তন হয়।