Saturday, March 28, 2009

দক্ষিন এশিয়া থেকে কৃষক আনা হৌক

প্রিয় দর্শক মন্ডলী,

প্রথমেই আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই এই সদার্থক আলোচনা চক্রের জন্যে। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আমেরিকাতে বহু আলোচিতও বটে।

এই মুহূর্তে কি আমেরিকাতে কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন আছে? এই নিয়ে অসংখ্য খবর প্রায় প্রতিদিনই আসছে এবং তার থেকে আমরা কতগুলি প্রারম্ভিক তথ্য ঝালিয়ে নিতে পারিঃ



  • সরকারি মতে আমেরিকাতে কৃষি শ্রমিকদের সংখ্যা ৮৫০,০০০। অন্যদিকে ডিপার্টমেন্ট অব লেবার বলছে প্রায় ৭০০,০০০ শ্রমিক এইচ টু ভিসা বা কৃষি শ্রমিক ভিসাতে কাজ করে। বেসরকারী মতে নূন্যতম ১ মিলিয়ান অবৈধ কৃষক আমেরিকাতে আছে। অর্থাৎ সরকারী হিসাবের সাথে বাস্তবের বিরাট ফারাক।
  • সরকার কৃষি শ্রমিক ভিসার আইন আগের থেকে অনেক বেশী কঠিন করে দিয়েছে। আগে মাত্র ৪৫ দিন আমেরিকান শ্রমিক নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এখন সেটা ৭৫ দিন করা হয়েছে। সেই কোটা পূরন করলে তবেই বাকি দিনের জন্যে বিদেশী কৃষক নেওয়া যায়।
  • কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব কৃষি ইমিগ্রেশন নীতি। আমি একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। নিউ ইয়ার্কে এলবা শহরকে আমেরিকার পেঁয়াজ রাজধানী বলে। মাত্র ৯০০০ লোকের বাস-এত ঠান্ডাতে কেও থাকতেই চাই না। সেখানে মৌরিন টরী বলে ১১ জেনারশনের এক কৃষকের ১১,০০০ একর জমি চাষ করার জন্যে গ্রীষ্ণে ৩৫০ জন লেবার লাগে। তিনি সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, এই ৩৫০জনের স্থলে তিনি ২০০ জনকে নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হৌন। তাও এই ২০০ জনের মধ্যে অধিকাংশই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তারা রেইডের কারনে কাজে আসতেই ভয় পায়। এইসব কারনে তার পেঁয়াজের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ৯০০০ জনসংখ্যার একটি শহরে-একটি ফার্মেরই যদি ৩৫০জন শ্রমিক লাগে, তাহলে একথা অনায়াসেই অনুমান করা যায়, আমেরিকার কৃষি শহরগুলিতে পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই।
  • কিন্তু তবুও আমেরিকার কৃষি শ্রমিকদের ভোটের কারনে সরকার, তাদের সন্তষ্ট করতে একের পর এক এমন ইমিগ্রেশন পলিশি নিচ্ছে যাতে মালিকরা আর বিদেশ থেকে কৃষক আনতে না পারেন। ফলে অবৈধ মেক্সিকান অনুপ্রবেশকারীরাই একমাত্র ভরসা-বলতে গেলে কেও কেও বলছে আমেরিকান কৃষিতে ৮০% শ্রমিকই অবৈধ শ্রমিক। এতে আমেরিকা এবং কৃষিউৎপাদন-এই দুই এরই ক্ষতি হচ্ছে।

অথচ ভারত এবং বাংলাদেশে কৃষি শ্রমিক সাংঘাতিক ভাবে উদবৃত্ত। কারন কৃষকদের অধিক সংখ্যায় বাচ্চা হওয়ার কারনে এবং সেই অনুপাতে কৃষি জমি হ্রাস পাওয়ায়, আজ কৃষক প্রতি বাংলাদেশে গড় জমির পরিমান এখন ১/২ হেক্টর। ৭০% কৃষক ভূমিহীন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ছিল ৫৭%- এখন ৭০%। সরকার ভুমি সংস্কার করে নি। এই সামান্য জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আনলে বড়জোর তারা নিজেরা দুবেলা খাবার জোটাতে পারবে। এখন প্রযুক্তির অভাবে সেটাও পারে না। আর এত ছোট জমি হলে প্রযুক্তি আনবেই বা কোথা থেকে? তাছারা অজৈব কৃষির কারনে, কৃষিকাজের খরচ এখন আকাশ ছোঁয়া। ফলে আমাদের দক্ষিন এশিয়াতে অর্ধেকের বেশী কৃষক অভুক্ত। তারা আমেরিকার এই কৃষি শ্রমিকের অভাব অনায়াসেই মেটাতে পারে যদি আমেরিকান সরকার একটি বাস্তবমুখী ইমিগ্রেশন পলিশি নিয়ে দক্ষিন এশিয়া থেকে কৃষক আনার পদক্ষেপ নেন। এতে আমেরিকা এবং দক্ষিন এশিয়ার মঙ্গল। কারন এতে আমেরিকার কৃষিজ উৎপাদন হ্রাস পাবে না। আবার দক্ষিন এশিয়ার কৃষকরাও নিজদের অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হবে।

সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এই অনুষ্ঠানে আসার জন্যে। আমাকে জরুরী পারিপারিক প্রয়োজনে আজকে সকালেই লস এঞ্জেলেস থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে উড়ে যেতে হচ্ছে-নাহলে আমি আপনাদের সাথে আজকে এই ব্যাপারে মত বিনিময় করতে খুবই আগ্রহী ছিলাম।

Tuesday, March 10, 2009

টিসিএসে ছাঁটাই-আই টি তে ইউনিয়ান দরকার


এতদিন যা গুজব শোনা যাচ্ছিল-আজকে প্রেস কনফারেন্স ডেকে পরিষ্কার করলেন টাটা কনসালটং কতৃপক্ষ। ‘মাত্র’ ১% -অর্থাৎ টিসিএসের ১৩০০ কর্মী ছাঁটাই ‘হতে’ পারে-‘খারাপ’ কর্ম দক্ষতার জন্যে!

‘সামাজিক ভাবে দায়বদ্ধ’ টাটাগোষ্ঠির মিথ্যাচারিতা একটু দেখা যাক ওই একটা বাক্যের মধ্যে।

১। প্রথমত কোলকাতা, মাদ্রাস সর্বত্র ছাঁটাই চলছে গত দুমাস ধরে। অসমর্থিত সুত্রে খবর শুধু মাদ্রাসেই ২০০ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে গত একমাসে। কোলকাতায় প্রতি সপ্তাহে দশ কুড়িজন করে ছাঁটাই চলছে-এটাও বন্ধুদের মুখে শোনা খবর।

২ অর্থাৎ শ্রম আইনকে এড়ানোর জন্যে মাস লেঅফ হচ্ছে না। নিয়মিত ছাঁটাই করে, আইনকে এড়ানো হচ্ছে।

৩ অসমর্থিত সূত্রের খবর বেঞ্চে-মানে কাজ নেই এমন কর্মীর সংখ্যা ২০-৪০%। বিশ্বজোড়া এই মন্দার ধাক্কায় সংখ্যাটা শিঘ্রই ২-৪% হবে না-বরং এবছরের শেষের দিকে ৬০% ও ছাড়াতে পারে। সুতরাং ১% না-তারা আরো অনেক বেশী কর্মীই ছাঁটাই করবেন। ১০% এর অনেক বেশী হলেও আশ্চর্য্য হব না। কিন্ত সৎ কথা বলার সাহস নেই। কারন তাহলে টাটাকে বিনে পয়সায় জমি দিয়ে যেসব রাজ্যে ডাকা হচ্ছে-শুধু রাজনৈতিক মাইলেজ নেওয়ার জন্যে- সেই খেলা রুদ্ধ হবে। তাই তারা গোপনে কত পার্সেন্ট ছাঁটাই করবেন, তারাই জানেন-কিন্ত বলবেন না। কর্মীদেরই যখন দায় নেই-তাদের কি দায় পড়েছে?

৪) বলা হচ্ছে এরা দক্ষতার অভাবে ছাঁটাই হচ্ছে। সম্পূর্ন মিথ্যে কথা। এদের সবাই গড়ে ৩-৫ বছরের কর্মী। এদের দিয়ে কাজ করিয়েই কোম্পানী মুনাফা তুলেছে। দক্ষতা আছে কি না প্রথম তিন মাসেই বোঝা যায়। সবথেকে বড় কথা টিসিএস এমন কিছু করে না, যে সাংঘাতিক বুদ্ধির লোক দরকার হয়। ওরা যা কাজ করে, সেই দক্ষতা একটা পাঁচ বছর টিসিএসে কাজ করা ছেলের নেই-এসব অবিশাস্য রকমের ঢপবাজি। ইনফোসিসেও নাকি ৫০০০ কর্মীকে নোটীশ ধরানো হয়েছে পুওর পাফর্মেন্সের জন্যে। অর্থাত ছাঁটাই এর পথ পরিস্কার করা হচ্ছে।

কিন্তু টি সিএস কতৃপক্ষের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে না রুখে দাঁড়াচ্ছে টিসিএসের কর্মীরা না কোন রাজনৈতিক দল।


কর্মীদের অধিকাংশই নিও লিব্যারালিজমের জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠা নন্দদুলাল-নিজেরটাই হিসাব করেছে এতদিন। মন্দা দেখে নি। মনে করেছে টাটা গেল ত কি হল-আই বি এম আছে। সব থেকে বেশী আছে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস। তাই ১৩০,০০০ কর্মীর কোন ইউনিয়ান নেই। কারন ওদের সবাই ভাবে-ওরা সমাজের ওপরে। ওরা কি পাটকলের কর্মী যে ওদের ইউনিয়ান লাগবে?

রাজনীতির কথা ছেড়ে দিলাম। তারা আরো অধপতিত। টাটার বিরুদ্ধে কথা বললে যদি টাটা মটোরস বা টিসিএস সেই রাজ্যে না আসে? কে আগ বাড়িয়ে রিস্ক নেবে এই শিল্পপতি ভজনার ইঁদুর দৌড়ে?

ফল এই-টাটা, ইনফোসিস, ঊইপ্রো-এদের সবার এক লাখের ওপর কর্মী। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ইন্ডাষ্ট্রী। অথচ কোন ইউনিয়ান নেই এদের বাঁচানোর জন্যে। এরা উচ্চশিক্ষিত কুশলী-সবার ধারনা, নিজেরা ঠিক ম্যানেজ করে নেবে।

না ওরা নিজেদের ম্যানেজ করতে পারবে না। আমি আমেরিকায় দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে এখানকারকার ইঞ্জিনিয়াররা কি করে লে অফ ম্যানেজ করে অনেক দেখছি ত। হ্যাঁ টিসিএস ছাড়লে এই মন্দার বাজারে কিছু হয়ত জোটাবে কম মাইনায়। সেই পদ ও পদমর্যাদাও পাবে না নতুন কোম্পানীতে। তারপরে সেখানেও খারাপ দিন আসবে। সেখানেও ছাঁটাই হবে। এই অনিশ্চয়তা এবং ছাঁটাই নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে বাকী জীবন। ট্যালেন্ট কর্মদক্ষতা যতই থাকুক না কেন। আমি ট্যালেন্টেড আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার কম দেখিনি জীবনে। তাদর অধি্কংশই জীবনে ব্যার্থ। ফুটবলের মতন ছাঁটাই এর লাথি খেয়ে গোটা আমেরিকা ঘু্রছে এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে।

এই ছাঁটাই ঠেকাতে অতি দ্রুত আই টির ছেলেদের ইউনিয়ান করা উচিত। আজকের দিনে স্যোশাল নেটওয়ার্কিং এর জন্যে অনেক দ্রুত ওরা এই কাজ করতে পারবে। এখনো সময় আছে ভারতের হায়ার এন্ড ফায়ার পলিসি আমেরিকার মতন নিষ্ঠুর হতে না দেওয়া। আমি আমার ছাঁটাই প্রবন্ধে এই নিয়ে লিখেছিলাম (
এখানে দেখুন)।

টিসিএস ইনফোসিস ঊইপ্রো-গত চার পাঁচ বছর ধরে বছরে বিলিয়ান ডলার লাভ করেছে। এখনো যে লোকসানে চলছে তা নয়। যদিও লোকসান হয় সেটা সামান্যই হবে- আগের বছরগুলিতে যে বিলিয়ান ডলার লাভ করেছে তার তুলনায় যথসামান্য। তাহলে শুধু শেয়ার হোল্ডারদের খুশি করতে কেন হাজার হাজার শ্রমিকদের পরিবার গুলোকে ভাসিয়ে দেওয়া হবে? কোন যুক্তিতে? জীবনের উদ্ধেশ্য কি লাভ করা না জীবন ধারন করা?

যারা ভাবছেন ইউনিয়ান ছাড়া, শুধু নিজের যোগ্যতা দিয়ে বেঁচে থাকবেন-মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। ইতিহাসে অজ্ঞ। ১৮০০-১৮৫০ সাল অব্দি ইউরোপেও কোন শ্রমিক ইউনিয়ান ছিল না-কারন শিল্প বাড়ছিল দ্রুতগতিতে। যেমনটা আই টি বেড়েছে গত এক দশকে। ফলে সেদিনও শ্রমিক ভেবেছে ছাঁটাই ত কি হল-আরেকটা চাকরি-আরেকটা কোম্পানী আছে। ইউরোপে শিল্পায়নের প্রথম পঞ্চাশ বছর ভারতের গত দশ বছরের আই টির মতনই ফেয়ারী ল্যান্ড ছিল। কিন্ত শিল্পে একটা সময় ডিমিনিশিং রিটার্ন আসেই-মন্দা সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের আই টি কর্মীরা যদি নিজেদের দাবি নিয়ে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে না ঘুরে দাঁড়াতে পারে, আজকের আমেরিকান আই টির লোকেদের মতন ভবঘুরে অবস্থায় বাকী জীবন কাটাবে।

আসলে আমাদের আইটির ছেলে মেয়েরা প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। যা মাইনে পাচ্ছে তা ছিল ওদের কাছে কল্পনাতীত। তাই ওদের ধারনা ওরা শ্রমিক না-অন্য কিছু। এবং এই ফ্রি লেবার মার্কেটই ভাল। সেটা ততক্ষনই ঠিক-যতদিন লেবারের চাহিদা থাকে। না থাকলে এই ধরনের ভুল চিন্তার চেয়ে সাংঘাতিক কিছু হয় না। যদি এরা এই মন্দার বাজারে না শেখে-লে অফের অভিজ্ঞতা থেকেই শিখবে। শুধু একটাই ভয়-তখন হয়ত অনেক দেরী হয়ে যাবে।

Friday, March 6, 2009

ছাঁটাই


(১)
গত বুধবার দুপুর তিনটে। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কিছু সিমুলেশন চালাচ্ছি-হঠাৎ আমার রুমমেট ক্রিস মুখ লাল করে ত্রস্ত্র অবস্থায় ঘরে ঢুকে হাঁপাতে লাগল। কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করার আগেই ওই বলে দিল-লে-অফ গোইং অন ম্যান! আই ডন্ট নো! আমি আছি-না নেই! আমার বুকটাও ধরাস করে উঠল। চেয়ারটাই আরেকটু চেপে বসলাম-ওটা আছে- কি নেই বোঝার জন্যে।

ব্যাস ওই টুকুই। আমি লে-অফের ব্যাপারে এখন যথেষ্ঠ ভেটেরান। ২০০১ সালের অক্টবর মাসে প্রথম ছোট্ট অভিজ্ঞতা। নিউজার্সিতে একটা স্টার্ট-আপে কাজ করতাম। হঠাৎ একদিন এসে শুনলাম কাল সাতজনকে লে অফ করেছে। তখন কোম্পানিতে সাকুল্যে ৬০জন। পরের দিন আর তাদের দেখা নেই। সেটা মাইল্ড শক। তবুও যাদের তাড়ানো হয়েছিল-এখানে ভদ্র ভাষায় বলে লেট গো-মানে তাদের যাওয়ার অনুমতি দিলাম (!)-তাদের কর্মদক্ষতা প্রশ্নাতীত ছিল না। তাই ভাবলাম আমেরিকাতে এরকম হয়ে থাকে।

জীবনের প্রথম শকিং অভিজ্ঞতা ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে। তখন টেলিকম মন্দা গভীরে গভীরতম। প্রতিদিন দুচারটে করে কোম্পানী বন্ধ হচ্ছে। হঠাৎ দুপুরে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট থেকে মেইল। সি ই ও ক্যাফেটেরিয়াতে মিটিং ডেকেছেন। জানানো হল ৪০% লোক ছাঁটাই হচ্ছে-১০% মাইনে কমছে। কারন দ্বিতীয় রাউণ্ড ফান্ডিং পাওয়া যায় নি। তোমরা ম্যানেজারের কাছে গিয়ে জেনে নাও কে আছ-কে গেছ!

হঠাৎ মনে হল পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। মিটিং ভাঙার সময় অবশ্য আমার ম্যানেজার চাইনিজ মহিলা স্যু জাং জানিয়ে গেল তুমি আছ। তুমি ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দাও। আমার পাশের ঘরটা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজ্যারের। তার ঘরে লোকে আসছে -যাচ্ছে। তারপর নিজের ডেস্ক পরিস্কার করে এক ঘন্টাতেই সেই কোম্পানীর ক্যারিয়ার শেষ। আমাদের গ্রুপের ছজন এর মধ্যে পাঁচজনকেই ফায়ার করা হয়েছিল। আমি কেন বেঁচেছিলাম জানি না। তবে সেইদিন রাত্রে এসে খেতে পারি নি। ঘুমাতে পারি নি। দেহটা বারবার কেঁপে উঠেছে বিছানায়। এতদিন যাদের সাথে কাজ করলাম তাদের কেও নেই। এর পরেও সেই কোম্পানীতে ৩-৪ রাউন্ড লেঅফ হয়েছে-তখন আমি সিজনড। আর গায়ে লাগত না!

২০০৪-২০০৭ পর্যন্ত আমেরিকার ধার-করা অর্থনীতি ভালোই চলেছে। ফলে মাস লে অফ দেখতে হয় নি। আবার সেই দিনগুলো ঘুরে এল প্রথমে গত বছর অক্টবরে। বহুজাতিক কোম্পানীতে যেমন হয়। টেলিকনফরান্সে মিটিং চলছে। রাও বলে একটি ম্যানেজার ছিল। সেই মিটিংটা ডেকেছিল। হঠাৎ বললো সরি ম্যান- আম লেইড অফ! আই ক্যান্ট কন্টিনিউ! তাকি নাকি তার ম্যানেজার এই মাত্র টেক্সট ম্যাসেজ করে জানিয়েছে।

কি বিচিত্র এই আমেরিকান জীবন। আগে প্রোডাকশনে যখন কাজ করতাম-নীচু তলার লোকগুলোর সাথে মেশার অবাধ সুযোগ ছিল। রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে সবাই পি এইচ ডি বলে-সেই সুযোগ মেলে না। এক মেকানিক মুখ গোমরা করে লাঞ্চে বসে থাকত। জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার? না চাকরীর সাথে সাথে সুন্দরী বৌটিও পালিয়েছে। এটাই আমেরিকান জীবন। অনিত্য চাকরী-অনিত্য বৌ! সবই ধণতন্ত্রের মায়া বা মমতা।

গতকালই রুপেশকে ফোন করলাম। পরশু যাদের ঘারে কোপ পড়েছে ও তাদের একজন। আমার সাথেই কাজ করত। বস ঘরে ডাকল। সাথে হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি। তাকে জানানো হল, অর্থনৈতিক কারনে আর তাকে রাখা যাচ্ছে না! আর একঘন্টার মধ্যে ডেস্ক পরিস্কার করে, নোটবুক পরিস্কার করে, সিকিউরিটি ব্যাচ জমা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে চিরতরে। কর্মদক্ষতার প্রশ্ন এখানে নেই-ও আমেরিকার অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালটেকের পি এইচ ডি। তাতে কি? ওর প্রজেক্টটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় আর! কি অবাক ব্যাপার! এই ছেলেটাই গত শনি-রবিবারে অহরাত্র পরিশ্রম করে সিস্টেম থেকে একটা বাগ তাড়িয়েছে-ডেডলাইনের তাড়া! কোম্পানীর জন্যে ডেডিকেশন আর কোনদিন দেখাবে বলে মনে হয় না। আমি আমেরিকাতে দেখেছি-এখানে সবাই পেশাদারি ভাবে কাজ করে। কাজের সাথে এটাচমেন্ট খুব কম থাকে। এখন বুঝি কেন। কেনই বা করবে!

আমি আর ক্রিস আলোচনা করছিলাম। ও বার বার বলতে লাগল এই রুদলেস কর্পরেট জীবন অর্থহীন। এইভাবে জীবনে বাঁচা যায় না। বেশ রাগের স্বরেই বলছিল। আমি অবশ্য শান্ত। কারন আমি জানি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই শ্রমিক শ্রেনী ক্রিসের কথাটাই বলেছে। শ্রমিক শ্রেনীর সেই দুর্দশার কথা মার্ক্স এবং এঙ্গেলেসের রচনায় বারবার এসেছে। হিটলারের মেইন ক্যাম্পেও এসেছে। মুশোলিনীর ফ্যাসিবাদ বা ন্যাশানাল স্যোশালিজমেও এই একই কথার প্রতিধ্বনি। কারন রিশেসন এবং তার জন্যে শ্রমিক শ্রেনীর কাজ হারানো নতুন কিছু নয়-এই রকম সাইকেল বারে বারে এসেছে। শ্রমিকরা বারে বারে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে-এবং মার্কেট ফিরলে-আবার কাজে ফিরেও গেছে। দুদিন বাদে ক্রীসও শান্ত-যেন এমন হয়েই থাকে। শ্রমিকদের ক্ষোভ এই ভাবেই হারিয়ে গেছে।

(২)
উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিক। ইউরোপে ধনতন্ত্রের স্বর্ণযুগ। শিল্প বিপ্লব এবং স্টিম ইঞ্জিনের চাকায় অভাবনীয় গতিতে বাড়তে থাকে উৎপাদন এবং জনগনের জীবন যাত্রার মান। কিন্ত এর সাথে সাথেই যৌথ পরিবার ও প্রাচীন কমিউনিটি ভেঙে গেল। ভেঙে গেল চিরচারিত সামাজিক ভাবে বেঁচে থাকার স্বাশ্বত মুল্যবোধ এবং পদ্ধতিগুলো। ধনতন্ত্রে মানুষ পেল আরো বেশী ব্যাক্তি স্বাধীনতা। রক্ষনশীল সমাজ থেকে মুক্তি। কিন্ত উলটো দিকটা হচ্ছে-মানুষ সমাজ এবং বৃহত্তর পরিবার থেকে আরো বেশী বিচ্ছিন্ন । এর মধ্যেই মালিক শ্রেনীর হাতে বিপুল অর্থ জমা হওয়া শুরু হয় এবং শ্রমিক শ্রেনীর দুর্দশার সীমা থাকে না।

এই পরিস্থিতিতেই মার্ক্স এবং এঙ্গেলেস আশার আলো শোনালেন। পুজিবাদ যে সিস্টেম তৈরী করছে-তা টিকবে না। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দের কারনেই ভেঙে পড়বে। সমাজতন্ত্র আসবে। আপনা-আপনিই আসবে-সমাজ বিবর্তনের ইতিহাস মেনে। শোষিত নিপীড়িত মানুষের কাছে দৈববাণীর মর্যাদা পেল তার অমৃত বচন।

১৮৮০ সাল পর্যন্ত সবাই অগাধ আস্থা রেখেছে মার্ক্সের তত্ত্বে। নিদারুন প্রতীক্ষার প্রহর গোনা- কবে শ্রমিক শ্রেনীর বিদ্রোহ এবং ধণতান্ত্রিক সমাজের আভ্যন্তরীন দ্বন্দের জন্যে সমাজতন্ত্র এসে সবাইকে মুক্তি দেবে!

সেরকম কিছু যখন হল না। পুজিবাদ প্রতিটা রিশেসন সাইকেল কেটে বেড়িয়ে আসছিল নতুন কোন কোন আবিস্কার বা যুদ্ধের মাধ্যমে। কিছু কিছু সমাজতন্ত্রী মার্ক্সীয় তত্ত্বের ভিত্তিকেই প্রশ্ন করতে লাগলেন। মার্ক্সীয় তত্ত্ব অনুযায়ী সমাজ পরিবর্ত্তনের চালিকা শক্তি-উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্ত্তন। উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্ত্তনের মধ্যে দিয়েই সমাজের পরিবর্ত্তন সুচিত হওয়ার কথা। সেটা হচ্ছিল। তবে পুজিবাদ আরো উন্নততর পুজিবাদের পথে এগিয়ছে প্রযুক্তি এবং শ্রমিকদের সুবিধা বাড়িয়ে। ফলে ক্রাইসিস থেকে বিপ্লব আসে নি-উন্নততর পুঁজিবাদ এসেছে মাত্র। এডুয়ার্ড বার্নস্টেইনের মতন কিছু সমাজতন্ত্রী বললেন বিপ্লব টিপ্লব হবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই শ্রমিক শ্রেনী সরকারকে চাপ দিয়ে শ্রমিক সুরক্ষা আইনগুলি রাষ্ট্রে আনবে। বিপ্লব না সংস্কার এই নিয়ে ১৮৮১ সাল থেকেই সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। ১৯০০ সালে রোজা লুক্সেমবার্গ বার্নস্টেইনের তত্ত্বকে খারিজ করার অভিপ্রায়ে লিখলেন-স্বতস্কুর্ত বিপ্লবের তত্ত্ব। ১৮৮৯ সালের দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশানাল থেকেই অবশ্য এই বিবাদ সামনে চলে এসেছে।

এর পরেও অনেক গল্প আছে। রাশিয়াতে স্যোশ্যাল ডেমোক্রাট বনাম বলশেভিকদের গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। লেনিন ভোটে হেরে গিয়ে কনস্টিটুয়েন্সি এসেম্বলী ধ্বংস করলেন এবং রাশিয়াতে লাল সন্ত্রাস নেমে এল। রাশিয়ান সিক্রেট পুলিশ ১৯১৮ সালে ৬০০ জন বিখ্যাত স্যোশাল ডেমোক্রাটকে হত্যা করে 'রাশিয়ান বিপ্লব' ঘটাইল। বিপ্লবী ফ্যাকশন রাশিয়াতে জয়লাভ করিল!

অন্যদেশে এর ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। ১৯১৭ সালের আগে জার্মানী, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে বিপ্লবী তত্ত্বের সাপোর্টার ছিল অনেক বেশী। ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত, লাল সন্ত্রাসে যেভাবে কৃষকহত্যা এবং জোর করে ফসল দখল করার অত্যাচার চলে-তার সংবাদ গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তেই বিপ্লবী গোষ্ঠি ইউরোপের অন্যত্র দুর্বল হয়। ভারতের কমিনিউস্ট আন্দোলন ও এই ভাবেই দুর্বল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কমিনিউস্টরা ক্ষমতায় আসতে, ভারতের অন্য রাজ্যে কমিনিউস্ট পার্টির যে বিশাল ডেডিকেটেড বেস ছিল-তা দ্রুত লুপ্ত হতে থাকে। কারন কমিনিউস্টদের হাতে পশ্চিম বঙ্গের দুর্দশা দেখে সেই সব কমিনিউস্ট কর্মীদের মোহভঙ্গ হয়। ইউরোপে এই সময়টা ছিল ১৯১৭ থেকে ১৯২০ সাল। বলশেভিক বিপ্লবের নামে যেভাবে শ্রমিক এবং কৃষকরা অত্যাচারিত হয় এবং লেনিন যেভাবে গণহত্যা চালান, ফ্রান্স, জার্মানী এবং ইংল্যান্ডে বিপ্লবে বিশ্বাসী গোষ্ঠির পালে হাওয়া ঊবে যায়। রোজা লুক্সেমবার্গ স্পার্টকাস লীগ নামে বিপ্লবী পার্টি তৈরী করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ্বত্তোর
জার্মানীতে বিপ্লব সংগঠিত করতে গিয়ে বেঘোরে মারা পড়লেন। পেছনে জন সমর্থন ছিল না। কর্মহীন শ্রমিক শ্রেনী ক্রুদ্ধ ছিল সন্দেহ নেই-কিন্ত রাশিয়াতে কমিনিউস্টদের অত্যাচার নিয়েও তারা অবহিত ছিল। এতেব কমিনিউস্ট পার্টি সেখানে জনপ্রিয়তা পেল না।

সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে এই বিভেদ এবং রাশিয়ান বিপ্লবের মোহভঙ্গের জন্যে উত্থান হয় জাতীয়তাবাদি শক্তির। আসল কারনটা সেই ধণতন্ত্রে শ্রমিক শ্রেনীর দুরাবস্থা। এবং তা দূর করতে সমাজতন্ত্রের ব্যার্থতা। কমিনিউস্টদের ব্যার্থতাকে কাজে লাগিয়ে ১৯২১ সালে হিটলারের উত্থান। জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রের মিশ্রনে, আমেরিকা, ফ্রান্সকে জার্মানীর শত্রু বানিয়ে-শ্রমিক শ্রেনীকে আশা দেখাতে লাগলেন। শ্রমিক শ্রেনীর দাবি মেটাতে হিটলার সম্পূর্ণ সফল। ১৯৩৩ সালে জার্মানীতে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ৩৩%। ১৯৩৬ সালে বেকারত্ব থাকলই না। মুসোলীনিও একই ম্যাজিক দেখালেন। ইতিহাসের এই সময়টাতে পৃথিবীর সবদেশে জাতিয়তাবাদি শক্তির উত্থান হয়েছে। ধনতন্ত্রে মানুষকে যেভাবে সমাজ থেকে, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়-তার প্রতিবাদি ধারনা থেকেই জাতিয়তাবাদের জন্ম। জাতিয়তাবাদ ধনতন্ত্রের জন্যে ক্ষতিকারক। কারন পুঁজির দেশ থাকতে পারে না-তাহলে পুঁজির বৃদ্ধি আটকে যাবে। ঠিক এই সময়েই হিন্দু মহাসভাও ভারতে সক্রিয় হয়। রাষ্ট্রীয় সমাজ সেবক সংঘের প্রতিষ্ঠার পেছনে সেই হিটলারি সাফল্য।

হিটলার এবং মুসোলিনীর বিভৎস মুখোস খসে পড়তে জাতিয়তাবাদী চিন্তাও মুখ থুবরে পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্ত্তী সময়ে। ফলে ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কেইনসিয়ান অর্থনীতির মাধ্যমে গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র সব দেশেই গ্রহীত হয়। ভারতে নেহেরু তথা কংগ্রেসও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের পথেই দেশকে চালনা করে। কিন্ত ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক নির্ভর অর্থনীতি সমস্যার সম্মুখীন না হলেও-বৃদ্ধি হচ্ছিল শম্বুক গতিতে। ফলে একটু একটু করে উদার নীতি চালু করা হল বৃটেনে এবং আমেরিকায়। যেটাকে এখন থ্যাচারিজম বা রেগনিজম বলে। প্রথম প্রথম ফল হল দুর্দান্ত। অর্থনীতি বাড়তে লাগল দ্রুতগতিতে। কারন প্রযুক্তির ডিরেগুলেশনের ফলে ইলেকট্রনিক চীপ, কম্পুটার, লেজার, ইন্টারনেট, অপটিক্যাল ফাইবার-সব কিছুর রুদ্ধশ্বাস উত্থান হল এই উদার বাজারনীতির ফলস্বরূপ।

কিন্ত ফাটকাবাজরা কি আর বসে থাকে? শেয়ার মার্কেটের উর্ধগতিকে কাজে লাগিয়ে তারাও বাড়ি থেকে শুরু করে সমস্ত বাজারের দাম নিয়ন্ত্রন করা শুরু করে। ব্যপারটা হল এই রকম । আমেরিকাতে ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে-ইনফ্লেশন এডজ়াস্টেড ইনকাম কমেছে-অথচ বাড়ির দাম বেড়েছে তিনগুন। সম্পুর্ন ফাটকাবাজি। ডিরেগুলেটেড মার্কেট-এতেব এক্সপার্টদের অবজ্ঞা করে বাজারকে মুক্তই রাখা হল। বোনাসের লোভে ব্যাঙ্কের সি ই ও থেকে ম্যানেজমেন্টের সবাই-ব্যাঙ্কটাকেই ল্যাম্পপোস্টে ঝুলিয়ে দিলেন স্পেকুলেশন টাকা খাওয়ার লোভে।

আসলে ব্যাপারটা এই রকম। উৎপাদন না বাড়লে ত বাড়তি টাকার মূল্য নেই। এবার উৎপাদনে কি যায় আস? আসল ব্যাপারত লাভ। ফলে একই উৎপাদনে লোককে টাকা ধার দিয়ে , উৎপাদিত দ্রব্য-যেমন ধরুন বাড়ির দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়ানো হল।

না আমেরিকার জনগনের কিছু লাভ হয় নি এতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি খাদ্যেও আমেরিকা পৃথিবীর কাছে পিছু হটেছে।

আসলে হয়েছে কি-১৯৮০ সাল থেকেই পৃথিবীতে জাতিয়তাবাদ এবং ধর্মের ককটেলের আবার উত্থান হতে থাকে নানান রক্ষনশীল পার্টিগুলির মাধ্যমে। একই সাথে রেগন, থ্যাচার এবং ভারতে বিজেপির উত্থান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গণতন্ত্রে কোন পার্টি ধণতান্ত্রিক হতে পারে না। কারন ভোটার সবাই শ্রমিক শ্রেনীর। ফলে জনগন সব সময় এই ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র ঠিক ঠাক চললে মালিক শ্রেনীর অস্তিত্ব থাকারই কথা না।

তাহলে ধনতান্ত্রিক শোষন কি করে বজায় রাখা যায়? এই ক্ষেত্রে মানুষের কিছু আদিম প্রবৃত্তি-যেমন দেশ এবং ধর্মের প্রতি টান-যা আদতেই সামাজিক পরিচয়বোধের সংকট-সেই আইডেন্টি-আমি আমেরিকান এবং খ্রীষ্ঠান-আমি ভারতীয় এবং হিন্দু-এই সব পরিচয়বোধ কাজে লাগিয়ে এবার জাতিয়তাবাদ ফিরে এলো ধনতন্ত্রের বিরোধিতা করে নয়-হাত ধরে। উল্লেখ্য হিটলার এবং মুসোলীনিকে মালিক শ্রেনী সহায়তা করলেও হিটলারের মেইন ক্যাম্পে শোষিত শ্রমিকের দুঃখের কথা ছত্রে ছত্রে । তার জন্যে হিটলার ধণতন্ত্রকেই দায়ী করেন। নাজি জার্মানীতে উৎপাদিত দ্রব্যের দাম, শ্রমিকদের মাইনা-সবকিছুই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন করত। এবার ১৯৮০ সালের জাতিয়তাবাদের উত্থান হয়েছে সম্পূর্ণ অন্য পটভূমিকায়। সেটা হচ্ছে সব দেশে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র দ্রুত উন্নতি করতে বা অর্থনীতিকে সচল করতে ব্যার্থ হয়ে এক সমাজতন্ত্র বিরোধি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে। ধণতন্ত্র নিজেত কোনদিন একাকী গণতন্ত্রে ঢুকতে পারে না। মালিক শ্রেণীকে ভোটাররা পছন্দ করে? ফলে ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের সুড়সুরি দিয়ে ঢুকে গেল উদার বাজার অর্থনীতি। সেটাই রেগনিজম বা থ্যাচারিজম।

১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনে কমিনিউজমের বিভৎস ঘৃণিত ইতিহাস আমরা জানতে পারি। এর সাথে পৃথিবীর নানান দেশে স্যোশাল ডেমোক্রাটদের নতুন চিন্তাভাবনার অভাব এবং দুর্নীতি, মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যার্থ হয়। ফলে সমাজতন্ত্র বিরোধি ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মের ঘৃণ্য সুড়সুরির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে, উদার অর্থনীতিকে বল্গাহীন গতিতে চালিয়ে দিলেন রেগান এবং থ্যাচার। স্যোশাল ডেমোক্রাটদের এই রথ থামানো সম্ভব ছিল না। ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মুক্তবাজার অর্থনীতি নতুন প্রযুক্তির ঘারে চেপে দ্রুত গতিতে বাজার এবং অর্থনীতির বৃদ্ধি করতে থাকে। সেই শ্রোতের বিপরীতে হাঁটা ডান, বাম, মধ্যম -সবার পক্ষেই ছিল অসম্ভব। নিও লিব্যারালিজম আইস ল্যান্ডের মতন একটা ইউরোপের গরীবদেশকে সবথেকে উন্নত দেশে পরিণত করে। আজকে অবশ্য তাদের ব্যাঙ্ক ফেইলড। তারা যে তিমিরে ছিল-মানে মাছ ধরছিল-আবার মাছ ধরাতেই ফিরে গেছে!

অর্থাৎ কমিনিউজম এবং গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ব্যার্থতা যে শুন্যতা সৃষ্টি করে-তার ফাঁক দিয়েই এই উদার অর্থনীতি বা মুক্তবাজার অর্থনীতির উত্থান এবং প্রথমের দিকে চমকপ্রদ সাফল্য। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সাফল্য অভাবনীয়। কিন্ত এর মধ্যেই ফাটকাবাজরা মার্কেট এবং রাজনীতির সম্পুর্ন দখল নিয়েছে জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মের সুরসুরি দিয়ে-অথবা স্যোসাল ডেমোক্রাটদের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে। ফলে আজকের এই মন্দা।

প্রতি মাসে একমিলিয়ান আমেরিকান চাকরি হারাচ্ছেন।

(৪)
তাহলে সামনের পথ কি?

কমিনিউজমে গণতন্ত্রের অভাব মানুষকে পশুতের স্তরে নামিয়ে নিয়ে যায়। ওটা ফ্যাসিজমের আরেকটা সুগারকোট ।

জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় জাতিয়তাবাদ --ধণতান্ত্রিক মালিক শ্রেনীর প্রক্সি।

গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং চাকরী সৃষ্টিতে অক্ষম। নতুন প্রযুক্তির আমদানীতে ব্যার্থ।

সবই দেখা যাচ্ছে পরীক্ষিত ভাবে ব্যার্থ। তবুও এর মধ্যে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে অর্থনীতিতে ধীরগতিতে উন্নয়ন হলেও-মানুষের জীবন সব থেকে বেশী সুরক্ষিত থেকেছে। মানুষ উদার অর্থনীতিতে যত বড়লোক হয়েছে-সেরকম কিছু হয় নি-কিন্ত চাকরী, জীবনযাত্রা ও বাকস্বাধীনতা অক্ষত থেকেছে।

অর্থাৎ আমরা যদি এখন নতুন পথের সন্ধান করতে চাই-তাহলে আমাদের চাহিদা গুলোকে সামনে রেখেই এগোতে হবে। তত্ত্ব ধরে এগোলে কিছুই হবে না।
সেটা মোটামুটি এই



  • চাকরী এবং জীবিকার সুরক্ষা। পেনশনের সুরক্ষা।

  • বাজারমুখী নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে চালু রাখা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে সোভিয়েত কি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে ছিল? হ্যাঁ মানুষ মারার প্রযুক্তিতে সোভিয়েত এগিয়ে ছিল বটে-কিন্ত ঔষধ, ইলেকট্রনিক্স, কম্পুঊটার-যা মানুষের কাজে আসে-তাতে সোভিয়েত ইউনিয়ান ডাঁহা ফেল করেছে।

অর্থাৎ দুটো জিনিস খুবী গুরুত্বপূর্ন। প্রথমটা হচ্ছে বাজারের বৃদ্ধি হয়-এমন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন। এবং দ্বিতীয়টা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা। এর মেলবন্ধনেই কেবল নতুন পথের সন্ধান মিলবে।


এটাকেই তৃতীয় পথ বলা হচ্ছে। বিল ক্লিনটন, টনি ব্লেয়ার এই পথের শুরু করেন। ওবামা এখন বাধ্য হচ্ছেন এই পথে হাঁটতে। একদিকে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ করে শক্তি, খাদ্য ইত্যাদির সমস্যা মেটানো। উৎপাদন বৃদ্ধি করা। চাকরী বাড়ানো নতুন প্রযুক্তি ক্ষেত্র খুলে দিয়ে। অন্যদিকে বাজারের ওপরে বিশেষত ফাইন্যান্স এবং ব্যাঙ্কিংকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে আনা। কারন এদের মুক্তবাজারের নামে ছেরে দিলে-এরা দেশের অর্থনীতিতে আবার লাল-বাতি জ্বালাবে। ভুগবে সাধারন লোক। তাই ফাইনান্সিয়াল মার্কেট রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে থাকা দরকার। অবশ্য রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কোন ক্ষতি নেই। যদিও এটা এখনো আছে। কিন্ত আইনগুলো মানা হয় না। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আবার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন শিথিল করতে হবে। কারন সেখানে লাল ফিতের বাঁধনে, নতুন প্রযুক্তি আসা ব্যাহত হবে। এখানে সরকারের কাজ শুধু টাকা জোগানোর। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প সংস্থাগুলি যৌথভাবে এই কাজ করবে।


অর্থাৎ এখানে প্রকারন্তারে মার্ক্সকে মেনে নেওয়া হল। উৎপাদনের পদ্ধতিই যে সমাজের চালিকা শক্তি-সেটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই তৃতীয় পথে। বার্নস্টাইন বা রোজা লুক্সেমবার্গ-কারুর কথাকেই মানা হল না-স্বতস্ফুর্ত বিপ্লব বা শুধু রাজনৈতিক সংস্কার-এর কোনটাই মানুষকে উন্নততর সমাজ দিতে পারে না। এগুলো পরীক্ষিত সত্য। কিন্তু এখানে মানা হচ্ছে প্রযুক্তি, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা এবং সাধারন মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক ব্যাবহার আসল সমাজবিপ্লব আনে।


আমি ওবামার সেই তৃতীয় পথের দিকেই তাকিয়ে আছি।

(৫)
এবার বিবেক কুন্দ্রার কথা বলি। ৩৪ বছর বয়স্ক এই ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকানটি এখম ওবামা সরকারে সি আই ও। কেন তাকে নিলেন ওবামা?
বিবেক ওয়াশিংটন ডিসির সি আই ও ছিলেন। সরকারী কর্মীদের বাধ্য করেছেন, সমস্ত সরকারী মিটিং, কনট্রাক্ট ইউটিউবে তুলে দিতে। অর্থাৎ প্রযুক্তি কে কাজে লাগিয়ে সরকারী দুর্নীতি এবং দ্বায়িত্বজ্ঞানহীনতার আমূল উচ্ছেদ চাইছেন বিবেক। যা ওবামারও মূলমন্ত্র।
একটা কথা ভেবে দেখুন। গত দুই দশকে যে সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে-তার ড্রাইভারটা কি?
কোন সন্দেহই নেই-তা হচ্ছে কম্পুটার, ইন্টারনেট, কেবল টিভি এবং মোবাইল ফোন। কোন রাজনৈতিক দর্শন কি সমাজকে কোন দিন পরিবর্ত্তন করতে পেরেছে? না সমাজ প্রযুক্তির সাথেই একমাত্র বদলেছে? দ্বিতীয়টিই কিন্ত মার্ক্সবাদ সমর্থিত-প্রথমটি নয়। প্রযুক্তিই একমাত্র সমাজকে বদলায়-এটাই প্রকৃত মার্ক্সবাদ। লেনিনিজম, মাওজিম, স্ট্যালিনিজম মার্ক্সবাদের একধরনের অগণতান্ত্রিক ভ্রান্ত সুবিধাবাদি রাজনৈতিক রূপ-যা আদতে ফ্যাসিজম ছাড়া কিছু নয়।
প্রযুক্তি বিপ্লব এলে তবেই আসল সমাজ বিপ্লব আসে। এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা। এটাই মার্ক্সবাদের মূল সুট্র ধরে আসে। কিন্ত মার্ক্সের ডিক্টেটর অব প্রোলেটারিয়েতের সম্পূর্ন ভুল অগণতান্ত্রিক ব্যাখ্যা করে লেনিন মার্ক্সিজমকে এক অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট দর্শনের দিকে টানেন-যা স্ট্যালিনিজমে পূর্ণতা পায়। সেই ভূল স্বীকার করতেও কমিনিউস্টরা চান না। তারা এখনো বিশ্বাস করেন মানুষের রাজনৈতিক আন্দোলনে-রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পথে, গণতন্ত্রকে ধ্বংশ করে সমাজতন্ত্র আসবে। লাশ হওয়া আর লাশ ফেলার এই রোম্যান্টিক চিন্তা অর্থহীন। তাদের বুঝতে হবে গণতন্ত্রে শ্রমিক এবং শোষিতদের সংখ্যা বেশী। তারা কেও ধণতন্ত্র চাই না। কিন্তু গণতন্ত্রে ধণতন্ত্র আসে-কারন
সাধারন মানুষ সরকার এবং গণতন্ত্রের সাথ যুক্ত নয়। ওবামা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের এই ত্রুটিকেই দূর করার চেষ্ঠা করছেন।
দ্বিতীয় সমস্যাটা উৎপাদনের। উৎপাদনের বৃদ্ধি-পরিবেশের সুরক্ষা-এগুলো না থাকলে লোকেই বা সমাজতন্ত্রের দিকে আসবে কেন? কোন তন্ত্র ত তাদের জীবনের উদ্দেশ্য নয়। তারা চাই তাদের জিনের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস। অর্থাৎ ছেলে মেয়েদের জন্যে ভবিষ্যতের সুরক্ষা। ভাল চিকিৎসা, খাদ্য এবং শিক্ষা। প্রযুক্তি এবং নতুন আবিস্কার ছাড়া- উন্নততর সমাজ আসবে না। সমাজতন্ত্রও আসবে না।
অর্থাৎ আজকে কমিনিউস্টদের বোঝার সময় এসেছে-গণতান্ত্রিক পথেই সমাজের সঠিক উন্নয়ন সম্ভব। তবে এর জন্যে প্রযুক্তি দিয়ে গনতন্ত্রের দুর্বলতা দূর করতে হবে। সাধারন মানুষকে গণতন্ত্রের সাথে যুক্ত করতে হবে। প্রযুক্তির পথেই উৎপাদনকে বাড়াতে হবে। এসব না হলে সমাজতন্ত্র অর্থহীন।
সুতরাং এই তৃতীয় পথে ওবামা গোটা বিশ্বকে কি উপহার দিতে পারেন-তার প্রহর গুনছি সবাই।





Tuesday, March 3, 2009

শ্রীলঙ্কার ক্রীকেটারদের প্রতি সমবেদনা জানাই


খুব সম্ভবত শেষ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার ছয় ক্রিকেটারের খেলোয়ার জীবন। তবে প্রানে বেঁচেছেন ড্রাইভারের জন্যে-হয়ত এইটুকু ভাগ্য নিয়েই কমেন্ট্রি বক্সে বাকী জীবন কাটাবেন মেন্ডিস, সঙ্গকারা বা জয়বর্ধনের মতন বিশ্বসেরা ক্রীকেটাররা। তবুও বেঁচে থাকবেন-এটাই বোধ হয় একমাত্র ভরসাস্থল।

হুজি না হরকত না এল ই টি- কে করেছে সেই তত্ত্বের মধ্যে না গিয়ে-পাকিস্থান রাষ্ট্রটা আজ কোথায় দাঁড়িয়েছে সেটা একটু দেখা যাক।

(১) লাহোরের লিবার্টি চক ঝাঁ চকচকে পরিস্কার যায়গা। সেখানে ১২ জন লোক রকেট লঞ্চার, একে-৪৭ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল-কেও লক্ষ্য করল না! যেন হয়ে থাকে!

(২) টীমের ওপর আক্রমন হতে পারে সেই গোয়েন্দা সংবাদ ছিল। সেই মত বাসের পথও ঘোরানো হল। কিন্তু যেটা প্রশ্ন

বুলেট প্রুফ বাস দেওয়া হল না কেন?
মাত্র একটা পুলিশের এসকর্ট ভ্যান?
কে খবর ফাঁস করল রাস্তার? তাহলে ত সর্ষের মধ্যে ভুত আছে।

(৩) শর্ষের মধ্যে ভুত আরো পরিস্কার করা যাক। এই এল ই টি থেকে হুজি-এদের জন্ম পাকিস্থানের মিলিটারি ইন্টালিজেন্স আই এস আই এর হাতে। ৯/১১ এর আগে পর্যন্ত পাকিস্থানের মিলিটারি এবং জঙ্গীরা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে সহবাস করেছে। ৯/১১ এর পরে জঙ্গীদের স্ট্যাটাসটা রক্ষিতার স্তরে নামানো হয়েছে আন্তর্জাতিক চক্ষুলজ্জার জন্যে।

(৪) ভারতের বিরুদ্ধে এদের জিহাদ আসলেই মিলিটারির ব্যাবসা করার জন্যে কভার। আই এস আইএর লোকেরা সরাসরি আফিং এবং হিরোইন ট্রেডের সাথে যুক্ত। ভারত বেশ কয়েকটি হিরোইন এসাইনমেন্ট ধরেছে-যেখানে আই এস আই এর লোকেরা হুজিদের হাত দিয়ে হিরোইন পাঠাচ্ছিল থাইল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায়। জিহাদের নাম করে আফিং ব্যাবসা-এটাই পাকিস্থানের আই এস আই এর মূল চরিত্র।

(৫) পাকিস্থান দেশটার অবস্থা বুঝুন। খবর ছিল আক্রমন হবে। অথচ আটকানো গেল না। দেশটা কে চালাচ্ছে-কি ভাবে চলছে কেও জানে না। সরকার না মিলিটারী না জঙ্গী-দেশের নেতা কে-সেই নিয়ে গোটা বিশ্বই বিভ্রান্ত। সোয়াত উপত্যকায় জঙ্গীদের শাসন মেনে নিতে হয়েছে। মুম্বাই ঘটনার পরিপেক্ষিতে আমরা দেখেছি-জারদারি কিয়ানির কথায় উঠবোস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখনত পাঞ্জাবে স্বয়ং নওয়াজ বলছেন তাকে ডোবানোর জন্যে জারদারি এই কাজ করেছেন! কারন পাঞ্জাবে জার্দারির নবনিযুক্ত গর্ভর্নর তাসিরের বিরুদ্ধে নওয়াজের বিক্ষোভ বেড়েই চলছিল।

এসব যাক -মোদ্দা কথা পাকিস্থানে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট বন্ধ। অর্থনীতি রুদ্ধ। শেষ দুবছরে অর্ধভুক্ত লোকের সংখ্যা বেড়েছে ২০%! পাকিস্থানের এখন একমাত্র তুলনা সোমালিয়া বা সুদান।

১৯৪৭ সালে-একটা ভুলের ভিত্তিতে যে রাষ্ট্রের জন্ম-তার মৃত্যু এগিয়ে আসছে। শুধু ধর্মের ভিত্তিতে একটা রাষ্ট্রের জন্ম-বা ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যার্থ হতে বাধ্য। কারন মানুষ বা সেই দেশের নাগরিকই একটা দেশের চালিকা শক্তি-আর সেই চালিকা শক্তির ভিত্তি যদি ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস হয়-মৃত্যু সমাগত। অনেকে বলতেই পারেন ধর্মকের ব্যাবহার করা হয়েছে-ইসলামের অপব্যাবহার ইত্যাদি।

কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা কি দেখি? ধর্মের উৎপত্তি এবং বেঁচে থাকার একমাত্র কারন হচ্ছে একে রাষ্ট্র শক্তি এবং রাজনীতিবিদরা নিজেদের ক্ষমতায়ানের জন্যে ব্যাবহার করে। ধর্মের মধ্যে প্রতিবাদি এবং প্রতিক্রিয়াশীল উভয় চরিত্রই বিদ্যমান। কিন্তু ধর্মের ইতিহাসে-সব ধর্মেই আমরা দেখবো-শ্রেনীদ্বন্দকে চাপাদেওয়ার জন্যে প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র দিয়ে প্রতিবাদকে আনা হচ্ছে। আনছে ক্ষমতালোভী কিছু গোষ্টি-পাকিস্থানে এরা মিলিটারি শাসক।

যাইহোক পাকিস্থানের বর্তমান অবস্থা থেকে বাংলাদেশে যারা ইসলামিক রাষ্ট্র চান-বা ভারতে যারা হিন্দু রাষ্ট্র চান-তারাও শিক্ষা নিন। ধর্মীয় রাষ্ট্রে কি পরিমান ধর্মীয় জঙ্গীর চাষাবাদ হতে পারে। ধর্মে হিংসা, ঘৃণা অনুমোদন করে না-এসব বাজে কথা। সব ধর্মই শর্ত সাপেক্ষে হিংসাকে মদত দেয়। বিধর্মীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। আবার মানবতা নিয়ে বড় বড় কথাও বলে। এই খিচুরী খেলে পেট খারাপ হওয়া ছাড়া আর ভাল কিছু হতে পারে না।

চাই বিজ্ঞান চিন্তার উন্মেষ। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার রাজনৈতিক ডাকে কিছু হবে না-যতদিন পর্যন্ত আমরা বিজ্ঞান চিন্তার আলোকে বুঝতে পারবো আমরা কেও হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ নই। আমরা সবাই মানুষ। কেন না আমি পাকিস্থানি, আমি বাংলাদেশী-আমি হিন্দু-আমি মুসলমান-এই বিভেদ যতদিন থাকবে-সন্ত্রাসবাদিদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন ও তত দিন থাকবে। জনসাধারনের সমর্থন ছারা সন্ত্রাসবাদ বাঁচে না।

সুতরাং গোটা দক্ষিন এশিয়া ছড়ানো হৌক বিজ্ঞান শিক্ষার আলো-যে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে প্রতিটা মানুষ তার নিজের এবং অন্যের মনুষত্বকে অনুভব করতে পারে। মানবতার এই মহান অনুভূতি ছাড়া-ছারা-হিংসাবিভক্ত পৃথিবীতে সন্ত্রাসবন্ধের আর কোন সহজ পথ নেই।