Saturday, February 27, 2016

তিনো -সিপিএম-ক্লারিফিকেশন

কাল পশ্চিম বঙ্গের শিল্প এবং মমতা ব্যনার্জি সংক্রান্ত লেখায় অনেক প্রশ্ন উঠেছে।  সবাইকে আলাদা করে উত্তর দেওয়া সম্ভব না। আমি একটা পোষ্টেই দিচ্ছি--

  (১) মমতা বিরোধি থাকার সময় বন্ধ সমর্থক ছিলেন-তাহলে উনি কি করে বন্ধ বিরোধি হলেন?

     >> এখানেই আমি প্রাগম্যাটীক--বাস্তব হচ্ছে, উনি ক্ষমতায় আসার পরে তৃনমূল একটাও বন্ধ ডাকে নি। সিপিএম অনেকগুলো বন্ধ ডেকেছে। পশ্চিম বঙ্গে শিল্প আনতে গেলে প্রথম শর্ত বন্ধের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এই ব্যপারে সিপিএম দায়বদ্ধতা দেখায় নি-আদর্শগত কারনে। উনারা আদর্শ নিয়েই থাকুন। কিন্ত তাদের নারায়ণশীলায় মোড়া আদর্শ পশ্চিম বঙ্গের শিল্পের জন্য ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার। পশ্চিম বঙ্গকে গড়তে গেলে চলছে না চলবে নার রাজনীতি আগে বন্ধ করতে হবে। মমতা এক সময় তাই করেছেন বিরোধি থাকা কালীন-কিন্ত ক্ষমতা দখলের পরে কিন্ত পশ্চিম বঙ্গকে আস্তে আস্তে চলছে না চলবে না থেকে মুক্ত করছেন।

  (২) তৃণমূলের নেতাদের তোলাবাজি, গুন্ডামো-

 >>>> আমি জানি আনন্দবাজার পড়ে সবার ধারনা হয়েছে তৃনমূলের নেতাদের তোলাবাজিতে পশ্চিম বঙ্গের ব্যবসায়ীদের জীবন অতিষ্ট।  আমার নিজের সেই অভিজ্ঞতা হয় নি। এই চার বছরে কোন তৃনমূলী আমাদের ডিসটার্ব করে নি। সেক্টর ফাইভে আমার অন্তত জনা দশেক বন্ধু আছে-যারা আমার থেকেও বড় সেট আপ চালাচ্ছে-তারাও কোন দিন তোলা দিয়েছে বলে জানা নেই। বাঁকুড়ার একজন বড় শিল্পপতিকে চিনি-তারাও মমতার আমলে তোলা দিয়েছেন বলে জানা নেই।  আনন্দবাজার যা লিখছে, তার সাথে গ্রাউন্ডের অভিজ্ঞতা মিলছে না। আনন্দ বাজার ঠিক হতেই পারে-কিন্ত আমি সেগুলোকে ব্যতিক্রম বলেই মনে করব।

 (৩) মমতার সেইজ,  জমি অধিগ্রহণ বিরোধি নীতি

>>> হ্যা, মমতা ব্যানার্জি সস্তায় জমি দিতে পারলে, বড় ব্রান্ড আসত। এস ই জি করলেও ভাল হত। ইনফোসিস আসত।  কিন্ত সেটা প্রফিট ওভার পিপল হত। লাভ কখনোই মানুষের থেকে বড় হতে পারে না। সেক্টর ফাইভের ৬০% ফ্লোর ফাঁকা।  আগে সেগুলো ভর্ত্তি হৌক।

 (৪)  চা, পাট শিল্পে শ্রমিকদের আত্মহত্যা

 >> চা এবং পাট শিল্পের মূল সমস্যা এগুলো লসে চলা বিজনেস। ফলে অধিগ্রহন করেছে কিছু ফরেদাররা।  মূল উদ্দেশ্য ব্যাঙ্কের লোন মেরে বড়লোক হওয়া। এই ধরনের ফ্রড আটকাতে গেলে জাতীয় আইন দরকার-যার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজম বলেছেন। এখানে তৃণমূল -এই ব্যাপারটা নিয়ে দিল্লীতে ইস্যুটা তুলতে পারত। কিন্ত এখানে কিছু করতে গেলে বিজেপিকেই করতে হবে- ইস্যুটা ফেডেরাল। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপালে হবে?

 
(৫) কামদুনী, পার্কস্ট্রীট-একনায়কতন্ত্র -টেট-সারদা
 
 >> সবাই ভুল থেকে শেখেন। মমতাও শিখছেন। দুবছর আগের থেকে উনি এখন ভুলটা অনেক কম করেন।

  তৃনমূলের আমলে সারদা হয়েছে। ছোটবেলায় সিপিএমের জমানায় সঞ্চয়নীও দেখছি । চিটফান্ডের সাথে সব পার্টির নেতাদেরই সম্পর্ক ছিল। তৃনমূলের ক্ষেত্রে একটু বেশী হয়েছে, কারন সিপিএম তাড়াতে তাদের টাকার দরকার ছিল। এখন সিপিএম মুক্ত জমানার স্বাধীনতাভোগ করব, কিন্ত সারদার পাপের ফল শুধু তিনোরাই ভোগ করবে-সেটাও হোলিয়ার দ্যান দাও এটিচুড হবে।

  আর সিপিএম নিজেদের ক্যাডারদের প্রাইমারী শিক্ষকতায় ঢোকায় নি? কাম ওন। আমার জন্ম ১৯৭৩ সালে!!


(৬)  সংখ্যালঘু তোষন-ইমাম ভাতা-জামাতি যোগ

  >> মুসলমানদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে ভারতের কোন পার্টি কাজে লাগায় না? এমন পার্টি আছে নাকি ভারতে? ইমরানার কেসে, শাহবানু মামলায় সিপিএম পজিশন কি শরিয়া বিরোধি ছিল???? ঠক বাছতে গাঁ উজার হবে স্যার!!

(৭) পশ্চিম বঙ্গে ফাইল নড়ে না-সরকারী কর্মচারীরা কাজ করে না

 >> এগুলো সব ভুল ভাল ধারনা। ভারতে সর্বত্র চ্যানেলে কাজ হয়।  সামনা সামনি কোথাও কাজ হয় না-ঠিকঠাক কনসাল্টান্ট ধরুন-সব কাজ ঠিক হবে। গোটা ভারতেই কোরাপ্ট সিস্টেম।  মমতা কি করবেন এই লাল ফিতের বিরুদ্ধে?

 (৮) পশ্চিম বঙ্গের কর্ম সংস্কৃতি নেই

  >> এই একটা ব্যপারে একমত, কারন ঘরে বসে আনন্দবাজার পড়ে যে জাতি এত কিছু জেনে যায়-পা চালানোর, ইনভেস্টিগেট করার দরকার মনে করে না-সে জাতিযে কতটা কুঁড়ে-সেটা বলে দিতে হবে না।

   আমি মনে করি কাজের পরিবেশ এবং উপযুক্ত রিওয়ার্ড দিলে, বাঙালী ও ভালই পরিশ্রম করে। ভাট বাঙালী হচ্ছে যারা আনন্দবাজার পড়ে পশ্চিম বঙ্গের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে এত কিছু জেনে যায়।


 কালকের মতন ,আজকেও লিখি-পরিস্থিতি জানতে নিজেরা ছোট একটা ইউনিট খুলে দেখুন না। ব্যবসায় সফল হতে আজকের দিনে "নো হাওটাই" আসল। গুজবে কান দেবেন না। আমার কথাকেও বিশ্বাস করতে বলছি না।  নিজেরা মাঠে নেমে দেখুন। মাঠে কাদা, না ঘাস-না জল।

Friday, February 26, 2016

তৃন না সিপিএম ?

 - মমতাকে আমরা এই জন্যে এনেছিলাম?

      আমার এই প্রবাসী দাদাটিও আই আই টি খরগপুরের প্রাত্তনী-সিপিএম পরিবারের সন্তান এবং এখন কমিনিউস্ট বিরোধি- বিজেপি পন্থী-তবে গোমাতা গোমূত্র মাইনাস।

  আমি বললাম, দেখ, তুমিও ওদেশের নাগরিক না-আমিও না-যারা মমতাকে সমর্থন করে এনেছিল তাদেরকেই ভাবতে দাও।

 শুধু এটুকু বলতে পারি। গত দুবছরে বন্ধের জন্য একটা ও  কাজের নষ্ট হয় নি যেটা আমার ব্যবসার জন্য দরকার ভীষন। কারন, স্ট্রাইকের জন্য, কাজ হচ্ছে না-এটা ক্লায়েন্টকে বলা যায় না। যদি আমার ভোটাধিকার থাকত-তাহলে মমতাকেই এবার ভোট দিতাম-কারন ব্যবসায়িক স্বার্থ। সিপিএমের সূর্য্যকান্ত এবং বুদ্ধবাবু-দুজনেই আমার পছন্দের লোক। কিন্ত তাদের মাথার ওপরে আছেন ইয়েচুরী। দিল্লীর পলিটবুরো কখনোই পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ ভাবে নি-ফলে বুদ্ধবাবু চাইলেও বন্ধ কালচার বন্ধ করতে পারেন নি। পারেন নি ইউএস-ইন্ডিয়া নিউক্লিয়ার ডিলের বিরুদ্ধে প্রকাশ কারাতের ছায়াযুদ্ধ আটকাতে-যাতে পশ্চিম বঙ্গ এবং সিপিএম পার্টি দুটোর স্বার্থেরই ক্ষতি হয়েছে অসীম। যারা নিজেদের ভাল বোঝে না, তারা জনগণের ভাল বুঝবে-এটা মানা যায় না। বন্ধ এবং কর্মহীনতার সংস্কৃতি কাটিয়ে একটু একটু করে কোলকাতা  উঠছে- সিপিএম এলে আবার সব যাবে।

 দাদাটি অট্টহাস্য করে  উঠলেন ।
 -বলো কি মমতা এবং শিল্প? আনন্দবাজার পড় না? দেখছ না পশ্চিম বঙ্গে কোন শিল্পই আসে নি মমতার আমলে

  আমি বললাম -আনন্দবাজারের মাধ্যমে মমতা এবং পশ্চিম বঙ্গ বুঝলে মুশকিল আছে।

 চৌত্রিশ বছরে সিপিএম যে শিল্প এবং শিল্পপতি বিরোধি পরিবেশ গড়ে তুলেছে, তা মমতার পক্ষে চার বছরে রিপেয়ার করা সম্ভব-আমি বিশ্বাস করি না। কেন আসবে শিল্প কোলকাতায়? কোন আধুনিক মেশিন শপ নেই, মোল্ডার নেই, ভাল পিসিবি ম্যানুফ্যাকচার নেই-এখানে ম্যানুফ্যাকচারিং করা খুব কঠিন। সবাই অন্যত্র চলে গেছে। স্কিলড, ট্যালেন্ডেড বাঙালীরা অন্যরাজ্যে । আনন্দবাজার পড়ে তারা বঙ্গাতঙ্কে ভোগে। কেউ ফিরতে চাইছে না। কি ভাবে হবে শিল্প? টাকা ঢাললেই ত শিল্প হয় না-ইকোসিস্টেম লাগে। সেটাইত লাল আমলে ধ্বংশ সম্পূর্ন। কে আসবে এখন?

 আমি প্রতিটা দিন এইসব সমস্যা ফেস করি। এর কোনটার জন্য মমতা দায়ী? আমাদের ভীষন অসুবিধা হয়-প্রতিটা পার্টস এবং পিসিবি অন্যরাজ্য থেকে বানাতে হয়। ফলে এই রাজ্যে শুরু করে অন্যরাজ্যে চলে গেছে অনেক ছোট ছোট কোম্পানী। কিন্ত এর জন্যে কি মমতা দায়ী?

 মমতা  কি করতে পারতেন? কোলকাতাকে বসবাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করতে পারতেন। করছেন ও।  শিল্পের ইকোসিস্টেম বানানোর চেষ্টা করতে পারতেন। সে চেষ্টা করেছেন। কিন্ত শিল্পই নেই-ত হবে টা কি?

  আমি প্রবাসী বাঙালীদের বলবো শিল্প হচ্ছে না-সব দোষ মমতার- এমন বলে লাভ নেই কারো।  প্রবাসে আপনারা অনেকেই ভাল কামিয়েছেন। পশ্চিম বঙ্গে অন্তত দশ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে ছোট একটা আউটসোর্সিং ইউনিট করুন। আপনার নিজের ডিসিপ্লিনে। কোলকাতার লেবার এখনো সস্তা। ছোট করেই শুরু করে বাংলার দুটো লোককে চাকরি দিন নিজের লাইনে। সব কিছু মমতা ব্যানার্জি করে দেবে-এমন আবদার করলে কি করে হবে? আপনার দ্বায়িত্ব পালন করুন। আমি এটা বলতে পারি, আর যাইহোক মমতা জমানায় স্ট্রাইকের  কারনে আপনার ইউনিট বন্ধ হবে না। তবে সিপিএম ক্ষমতায় এলে অবশ্য সে গ্যারান্টি নেই।







Thursday, February 25, 2016

যতটুকু বর্তমান, তারেই কি বল' প্রাণ?

                                                                         (১)
"We have but faith: we cannot know;
For knowledge is of things we see
And yet we trust it comes from thee,
A beam in darkness: let it grow.


Let knowledge grow from more to more,
But more of reverence in us dwell;
That mind and soul, according well,
May make one music as before," - In Memoriam, by  Alfred Tennyson 

    আর্থার হেলামের মৃত্যুকে মানতে চাননি টেনিসন-বন্ধু জীবনে অনেক আসে। কিন্ত যার চিন্তাধারা নিয়ে অহরহ নিজের সাথে, সমাজের সাথে এমনকি তার সাথেও বিতর্ক- সেই মানুষটি হঠাৎ করে জীবন থেকে হারিয়ে গেলে, অপূর্নতার বোঝাটা কিছুতেই হাল্কা হয় না জীবন থেকে।

   মৃত্যু জীবনে খুব বেশী দেখেছি -তা না। দাদু দিদা, ঠাকুমা, ঠাকুর্দা-সবাই পরিণত বয়সেই মারা গেছেন।

   মৃত্যুকে প্রথম খুব কাছ থেকে দেখা-আই আইটির সেকন্ড ইয়ারে। ইন্দ্রজিত ব্যানার্জি ওরফে ঝিকুর অকাল মৃত্যু। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে আড্ডার একটা ছোট গ্রুপ ছিল-সৌগত ওরফে বুম্বা (  লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), অনুপম ( ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক), ঝিকু আর আমি। সবারই তখন প্রথম ভালোবাসা ফিজিক্স-আমরা নতুন কিছু শিখলে চায়ের টেবিলে গ্রুপ আড্ডা হত। প্রকৃতির অপার রহস্যে মুগ্ধ প্রাণ সব-হঠাৎ  ঝিকু তিনতলা থেকে পড়ে মারা গেল। খবর পেয়ে যখন হাঁসপাতালে ছুটলাম-ওর নিথর দেহ দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আগের রাতেই ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিক্সের একটা প্রবলেম নিয়ে ওর সাথে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। আজ ওর নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে। এর পরের কয়েকটা মাস- ক্যান্টিন, লাইব্রেরী-আড্ডা -সবই চলছে-কোন পূর্নচ্ছেদ নেই-কিন্ত তবুও কিছু একটা মিসিং। 

 ঠিক একবছর আগে-২৬ শে ফেব্রুয়ারী-অফিসে যাচ্ছি- জামান ফোন করে জানাল অভিজিতকে মেরে দিয়েছে। বন্যা বাঁচবে কি না ঠিক নেই। 

 না অভিজিতেদের সেই নিথর দেহকে শুধু ফটোতেই দেখেছি-কিন্ত বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল- অভিজিত নেই। প্রায় একদশকের ওপরে মুক্তমনাতে ওর সাথেই বিতর্ক হয়েছে সব থেকে বেশী-বিতর্কের চেয়ে ভাবের আদান প্রদানটাই ছিল মুখ্য। কিছু বিতর্ক তিক্ততাতেও পরিণত হয়েছিল-কিন্ত আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল মধূর। কারন আমরা দুজনেই জানতাম-আমাদের বেস ন্যাচারিলিজম। অর্থাৎ বিজ্ঞানের দর্শনকেই জীবন দর্শন হিসাবে মানা। তবে জীবনে কি করিতে হইবে, তার সমাধান বিজ্ঞানে নেই-সেখানে পার্থক্য আসবেই-এবং ছিলও। এবং তাই নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।

 গত এক বছরে যখনই লিখতে বসি-হঠাৎ হঠাৎ করে মনে হয় কিছু একটা জীবনে মিসিং। কিছু নেই। কিছু একটা বাদ যাচ্ছে। কোথাও কোন একটা অপূর্ণতা।

                                                                  (২)

 অভিজিত রায়কে বিজ্ঞান লেখক বলে ছোট করতে চাই না।  বাংলা ভাষায় আরো অনেকেই বিজ্ঞানের বই লিখেছে-তাদের সাথে এক কাতারে ফেলে অভিজিতকে বিজ্ঞান লেখক বললে, অভিজিতের প্রতিভা এবং অবদান, দুইএর প্রতিই অসন্মান করা হবে। আবার অভিজিত রায়কে শুধু  সেকুলার লেখক, ইসলাম ব্যাশার-ইত্যাদি এঙ্গলে দেখলেও ছোট করা হয়।

 অভিজিতের সব থেকে বড় অবদান-বাংলায় ক্রিটিক্যাল রাইটিং এর প্রচলন। যা আমেরিকাতে স্বাভাবিক-কিন্ত বাংলায় এবং ভারতে বিরল। ক্রিটিক্যাল রাইটিং এর অর্থ-একটি বিষয়কে সম্পূর্ন "ফ্যাক্ট" ভিত্তিক ভাবে দেখে-ভাল খারাপ দুটোদিকই দেখতে হবে। অভিজিত রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ , হজরত মহম্মদ, কার্ল মার্ক্স-সবাইকে সমালোচনা করে অনর্গল লিখে গেছে। কমিনিউজম, বিবেকানন্দ বা হজরত মহম্মদের বিরোধিতায় আমি আর অভিজিত এক পক্ষেই লিখেছি। কিন্ত রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে আমি ওর লেখার তীব্র বিরোধিতা করেছি।  কিন্ত সাহিত্য সমালোচনায়, এগুলো খুব উপভোগ্য বিতর্ক ছিল। বিশেষত রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর পত্র এবং ল্যাবেরাটরি নিয়ে অভি আর আমার ব্যপক মতান্তর হয়েছে- ও আমাকে রবীন্দ্র পুজারী বলে গালাগাল দিয়েছে-আমি ওকে সাহিত্যে নাবালক ইত্যাদি নানান বিভূষনে বিঁধেছি। কিন্ত এগুলো মোটেও আমাদের সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব নষ্ট করে নি। হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট বা কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে আমরা একসাথেই লড়েছি। 

 এটাই ওর আর আমার বিশ্বাস ছিল-সৎ ভাবে তর্ক করি শেখার জন্য। মুক্তমনা প্ল্যাটফর্ম আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।  ও বিশ্বাস করেছে-তর্ক করি অন্যের কাছ থেকে শেখার জন্য-শেখা এবং জ্ঞানার্জন -নিজেকে সমৃদ্ধ করাটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তর্ক করে নিজের জ্ঞান প্রদর্শন না-শ্রেফ শিখতে চাই, নিজেকে তর্কের মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ করতে চাই- এই তীব্র বিশ্বাস ছিল ওর প্রতিটা নিঃশ্বাসে।

 ধর্ম বিরোধি লেখক -শুধু এই তকমাতে অভিকে আবদ্ধ রাখাটাও ওকে অপমান করা। ও কি নিয়ে লেখেনি? ভিক্টরিয়া ওকাম্পোর সাথে রবি ঠাকুরের প্রেম থেকে , মহাজাগতীয় ইনফ্লেশন-সেখান থেকে বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, মহম্মদ,  তিতুমীর -জৈব বিবর্তন-সব কিছু নিয়েই লিখে গেছে। 

 অভিজিতকে যখন কেউ শুধু মাত্র ধর্ম বিরোধি, বিজ্ঞান লেখক ইত্যাদি তকমায় বাঁধতে চায়-তারা ভীষন ভুল করে। অভি একজন নাস্তিক-যে জানত তার জীবন একটাই। তাই পরিপূর্ন ভাবে এই একটা জীবনেই সব মহাজাগতিক রহস্যকে জানতে চেয়েছে-নিজেকে প্রতিটা মুহুর্তে সমৃদ্ধ করতে নিয়োজিত করেছে- সমভাবাপন্ন লোকেদের সংগঠিত করেছে। 

    জ্ঞানার্জনের অপার আনন্দই ছিল অভিজিতের মোক্ষ-আর ও সেই জ্ঞানকে দুহাতে বিলিয়ে দিয়েছে বাঙালীদের মধ্যে। ওর প্রতিটা লেখাতেই কঠিন পরিশ্রমের ছাপ-প্রায় প্রতিটা লেখাই বাংলা ভাষায় মাইলস্টোন। 


                           (৩)

অভিজিতের সমালোচনা না করলে, ওর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য সম্পূর্ন হবে না। কারন ও সারা জীবন একটা জিনিসই চেয়েছে-বাঙালী মন আরো বেশী ক্রিটিক্যাল হৌক-সব দৃষ্টিকোন থেকে দেখা শিখুক বাঙালী। কোন ব্যক্তিই সমালোচনার উর্দ্ধে না-এটাই অভি রায়ের মূল বক্তব্য।

 অভিজিতের দুর্বল জায়গা ছিল রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দর্শন। ও ধর্মগ্রন্থ এবং তাদের সমালোচনাতে যতটা দক্ষতা অর্জন করেছে-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ওর লেখাগুলি ততটা পরিণতি পায় নি।

 আর সমালোচনার ক্ষেত্রে ও ছিল কনটেক্সচুয়াল-ফলে ব্রড পিকচারটা অনেক ক্ষেত্রেই মিস করেছে।

 এবং অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মে বিশ্বাসী লোকেদের হৃদয় ব্যপারটা বোধ হয় অভিজিতের রাডারে ছিল না। লিব্যারেশন থিওলজি ও একধরনের ভাববাদ-তাই পরিতজ্য- সুতরাং ধর্মের সবটাই ফেলে দিতে হবে-এই লাইন নেওয়াতে অভিজিতের বিচ্ছিন্নতা আরো বেড়েছে। ওর ধর্ম বিরোধিতাতে লিব্যারেশন থিওলজির ব্যাপারটা আসে নি-ফলে অভি রায়ের ধর্ম বিরোধি লেখাগুলোতেও ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভংগীর কিছুটা অভাব আছে। 

 ধর্মের সাথে রাজনীতি এবং আর্থসামাজিক অবস্থানের গভীর যোগের ব্যপারটাও অভিজিতের লেখাতে অনেক ক্ষেত্রেই মিসিং।

  কিন্ত সব থেকে বড় কথা হচ্ছে- ও নিজের লেখার এই দুর্বলতা গুলো ভালোই জানত। ওকে জানালে বলত এর জন্য তোমরা আছে। আমি একাই সব লিখব না কি?  আমি আমার লাইনে থাকব!

                                                    (৪)

 মৃত্যু অভির মতন মানুষের পূর্নচ্ছেদ না। ওর মুক্তমনার জন্যই আজ বাংলাদেশের চূড়ান্ত রক্ষনশীল মুসলমান সমাজ থেকে দুনিয়া কাঁপানো নাস্তিকদের আমরা পাচ্ছি। ওর সাংগঠনিক প্রচেষ্টার জন্যই, আমাদের বাঙালীদের যে নিজস্ব একটা ধর্ম আছে- আমরা এক মহান লিব্যারাল ট্রাডিশনের উত্তরাসূরী -ইসলাম এবং হিন্দুত্বের আগ্রাসনের মধ্যেও আমাদের লিব্যারাল চিন্তাধারাকে ধরে রাখতে পেরেছি।  শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর থেকে আহমেদ ছফা- বাঙালীর বুদ্ধিচর্চার যোগ্য উত্তরাসূরী অভিজিত রায়।  

  গুরুদেবকে স্বরণ করেই লিখি ঃ

 এই মৃত্যু? এ তো মৃত্যু নয়।
       কিন্তু রে পবিত্র শোক যায় না যে দিন
পিরিতির স্মিরিতিমন্দিরে,
       উপেক্ষিত অতীতের সমাধির 'পরে
তৃণরাজি দোলে ধীরে ধীরে,
       মরণ-অতীত চির-নূতন পরান
স্মরণে করে না বিচরণ--
       সেই বটে সেই তো মরণ!

  














   

Wednesday, February 24, 2016

কমরেড রোবট

                                                                                (১)
কালকে পেনসিলভেনিয়াতে একটা আধুনিক প্লাস্টিক প্ল্যান্টে ছিলাম গোটা দিন । এই প্ল্যান্টে আমেরিকার নামীদামী কসমেটিক ব্রান্ডের প্যাকেজ তৈরী হয়।  কোম্পানীর মোট রেভিনিউ ২০০ মিলিয়ান ডলারের ওপরে ।
 
   প্রায় ১০০ হাজার স্কোয়ারফিটের ক্লিন রুমে শখানেকের বেশী মেশিন। কোন ওপারেটর নেই। ফ্লোরের একটা রুটিনে দেখলাম তিনটে শিফটে সব মিলিয়ে মোটে ৬৫ জন শ্রমিক কাজ করে ।  এই যে শখানে মেশিন কাজ করছে-সব অটোমেটিক কন্ট্রোলে- মানুষ শ্রমিক শুধু প্রোডাক্টটা বেড়িয়ে এসে বক্সড হবার পরে, বাক্সটাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে রাখছে। কুলিগিরির কাজ। সস্তার রোবট এলে সেই কাজটাও থাকবে না।

  আর খুব বেশী হলে আছে দশজন মতন ইঞ্জিনিয়ার। তারা কন্ত্রোলরুম বা আর এন্ডি রুমে থাকে।

   ১৯৯০ সাল আমেরিকাতে যত শিল্প শ্রমিক ছিল-এখন আছে তার মাত্র ১০%।  কিন্ত উৎপাদন বেড়েছে তিনগুন। মালিকের লাভ বেড়েছে অনেক। শ্রমিকের বেতন যা বেড়েছে, ইনফ্লেশন আডজাস্ট করলে-তা প্রায় একই আছে। বাই দ্য ওয়ে-এটি পাবলিক কোম্পানী। সুতরাং মালিক বলতে এই ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার সাধারন পাব্লিকই ধরা যাক।

  আজকে ইনফোসিসের সি ই ও বিশাল সিক্কার ইন্টারভিউ দেখছিলাম। ডঃসিক্কা-পরিস্কার বলছেন অটোমেশনের জন্য ভারতের আই টিতে এই বিশাল ফোর্স আর থাকবে ন। সবার লাভ বাড়বে, ব্যবসা বাড়বে-কিন্ত লোক কমবে। আই টির ক্ষেত্রে অবশ্য মাইনেও অনেকই বাড়বে-কারন আরো বেশী ভাল স্কিলের লোক দরকার হবে।

                                                                 (২)


আমি আসলে যে পয়েন্টে আসতে চাইছি- খুব পরিস্কার ভাবে আমেরিকাতে ( এবং ভবিষ্যতে ভারতেও)  পাঁচটি শ্রেনী দেখতে পাচ্ছি।

     (১) মালিক-যারা ব্যবসা বা প্রোডাকশনটার প্রিন্সিপাল শেয়ারহোল্ডার।

   (২)  অটোমেশনের সাথে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং আই টির লোকজন

    (৩) তথাকথিত বুর্জোয়া শ্রেনী-ডাক্তার, উকিল, হরেক টাইপের কনসাল্টান্ট
   
     (৪) সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কর্মচারী-শিক্ষক, আধাসরকারি ওয়ার্কার -এরাও বুর্জোয়া-কিন্ত এদেরকে আমি আলাদা করছি।

      (৫)  একটা বিশাল সেকশনের উদয় হচ্ছে-যারা আন্ডারপেইড লেবার, পার্ট টাইম কাজ করে-কারন শ্রমিক কৃষকের কাজটাই অটোমেশনের সামনে  উবে গেছে। এরা প্রায় সবাই বাবা মায়ের সাথেই থাকেন-কারন বিয়ে করে আলাদা থাকার পয়সা নেই। ফুড স্টাম্প, সোশাল সিকিউরিটির টাকায় দিন আনে দিন খাচ্ছে,


  রাজনৈতিক মেরুকরনও এই পাঁচটি শ্রেনীর শ্রেনীস্বার্থ অনুযায়ী হচ্ছে। এর মধ্যে (১) এবং (২) শ্রেনীটি নিজেদের স্বার্থেই প্রোমার্কেট লিব্যারাল ইকোনমির সমর্থক।  কারন (২) শ্রেনীটি ভারত বা আমেরিকাতে যে মাইনে পায় বা পাবে, তার স্বচ্ছল ব্যবসায়ীদের থেকেও ভাল।  (১) এর ব্যবসার জন্য শুধু  (২) কে দরকার।  আগে যে মালিক শ্রমিক দ্বন্দ ছিল-অটোমেশন তা প্রায় হাওয়া করে দিয়েছে। ১ এর সাথে (২) এর দ্বন্দ হচ্ছে না। ভারতে কোন ভায়াবল আই টী ইউনিয়ান নেই। কোন আই টী ওয়ার্কার তা পাত্তা দেয় না। কারন আই টিতে ভাল চাকরি এবং মাইনে পাওয়ার শর্ত স্কিল-যার স্কিল আছে, তার সব আছে।

  সমস্যা হচ্ছে আমেরিকাতে চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি যা ব্যাঙ্কের টেলর বা শ্রমিকের কাজ করে ভদ্র মাইনে পেত, তা আস্তে (৫) নাম্বারে তলিয়ে যাচ্ছে।  কারন তাদের চাকরি অটোমেশনে খেয়ে নিয়েছে। এটা ভারতেও হয়েছে। অনেকের বাবা মা সরকারি চাকরি করত-কিন্ত ছেলে মেয়েরা যেহেতু (২)-(৪) ক্লাসে উঠতে পারে নি-বসে গেছে।

 ফলে ৪ নাম্বার এবং ৫ নাম্বারদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক জোটবন্ধন হচ্ছে-যাকে আমরা আমেরিকার নয়া বামপন্থা বলতে পারি। মনে রাখতে হবে, ৫ নাম্বার শ্রেনীটি আর কারখানার সাথে যুক্ত না-ফলে আমেরিকার পুঁজিপতিদের সরাসরি স্ট্রাইকের মাধ্যমে চাপ দেওয়ার ক্ষমতা আর এদের নেই। সেটা ভারতেও প্রায় এখন তাই।

  ৪ নাম্বার শ্রেনীটির দরকার বেশী মাইনে।  কারন এরা সরকারি চাকুরে। তা একমাত্র সম্ভব ট্যাক্স বেশী করে।  ফলে সিরিয়াস এবং এক্টিভ বামপন্থীদের অধিকাংশই শিক্ষক এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শ্রেনী থেকে আগত। কিন্ত নিজেদের মাইনে বাড়াও আন্দোলন করলে, এরা সমাজ বিচ্ছিন্ন হবে। ফলে (৫) নাম্বার শ্রেনীটির সাথে মেল বন্ধন করে এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে ট্যাক্স বাড়াতে চাইছে।

 এখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা ডেভেলেপমেন্ট হচ্ছে এই ৫ নাম্বার শ্রেনীটির মধ্যে বাম এবং ডানপন্থী উগ্রপন্থার প্রভাব বেশী। বার্নি স্যান্ডার্স এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাপোর্টার এদের মধ্যেই। অনেকেই ভাবছে তাদের বাজে দিনের জন্য দায়ী আমাদের মতন ইমিগ্রান্টরা যারা তাদের চাকরি খেয়েছে। কিন্ত আসলে ত তা না। চাকরি গেছে অটোমেশনে।

                                       (৩)

প্রশ্ন উঠবে,  ভারতেও কি এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির প্রাধান্য চলে এল?

 আমার আন্সার -ইয়েস। এদের ভোটেই মূলত জিতেছেন মোদি। কারন এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির আশু দরকার চাকরি। যার চাকরিই নেই-তারা মোটেও শোষন ইত্যাদির শ্লোগানে ভুলবে না। তারা ভাববে মোদির মতন বিকাশ পুরুষই ভাল-তাতে তাদের চাকরির সম্ভাবনা আছে। আর বামেরা আসলে চাকরি বাকরির কি দশা হবে-তা সবাই পশ্চিম বঙ্গ দেখেই বুঝেছে।

 বামেরা যদি জমি ফিরে পেতে চান-বস্তাপচা লেনিনবাদ বাদ দিয়ে- এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির দিকে তাকান। এটি নব্য উদয়-যারা শিক্ষিত-কিন্ত চাকরি খুঁজছে।

  ভারতের কৃষিতে অটোমেশন এবং সমবায় জরুরী দরকার। কারন ভারতের কৃষি এত পেছনে-এত বেশী লোক লাগে-খরচ সাংঘাতিক বেশী। অপচয় ও বেশী। ভারতের কৃষি বাণিজ্যে সমবায় আন্দোলন খুব দ্রুত দরকার- নইলে কৃষকের আত্মহত্যা এবং খাদ্যের দামের উচ্চরেখা কেউ আটকাতে পারবে না। ভারতে নতুন ধারার বাম আন্দোলন সমবায়কে ঘিরেই হতে পারত। তাতে অন্তত (৫) নাম্বার শ্রেনীটি দেখতে পেত বামেরা জীবিকা তৈরীর ব্যপারে সিরিয়াস।

ভারতের কমিরা মনে করতেই পারেন বিজেপি বা তিনুদের মধ্যে ইন্টেলেকচুয়াল নেই। ভারত বিরোধি স্লোগান-আন্তর্জাতিকতার শ্লোগান বুদ্ধিজীবির ব্যারোমিটার।  কিন্ত তাতে এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির কিছু যায় আসে না-কারন তারা ডেসপারেট একটা চাকরির জন্য। যাদের ভোট দিলে চাকরি বাকরি হয়, তাদেরকেই এরা ভোট দেবে।  শ্রমিক-মালিকের গল্প অনেকদিন শেষ।  ভারতের বামেরা যদ্দিন জেন এইন ইউ কেন্দ্রিক হোক কলরব করে যাবে,  তারা ততই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।







   







Monday, February 22, 2016

বিজেপি কি কোনদিন ভারতের নাজি পার্টি হয়ে উঠতে পারে ?

বিজেপির লোকজন যেভাবে রাস্তা ঘাটে অফিস আদালতে ইউনিভার্সিটিতে "কমি" দেখলেই পেটাচ্ছে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই ১৯৩২-৩৩ সালে জার্মানির পুনারাবৃত্তি বলেই মনে হচ্ছে। ১৯২৪ সাল থেকেই নাজি বাহিনীর স্টর্ম ট্রুপার, যাদের কাজ ছিল কমি ধরের পেটানো বনাম জার্মান কমিনিউস্টদের রটকম্প বাহিনী-যারা গোপনে নাজি এস এস ক্যাডারদের পেটাত বা হিটলারের মিটিং ভঙ্গ করত-তাদের স্ট্রীট ফাইট জার্মানির রাজনীতির নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। তবে হিটলারের ওয়ার্কার পার্টি বা জার্মান কমিনিউস্ট পার্টি-কেওই খুব কল্কে পায় নি ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। এরা ভোটে ২-৫% পেত । কিন্ত ১৯২৯ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দায়, জার্মানিতে দলে দলে বেকারি বাড়ে এবং জনগণ গনতান্ত্রিক পার্টী গুলির ওপর আস্থা হারায়। জার্মানিতে নাজি এবং কমিদের ঘোষিত পজিশন ছিল, ক্ষমতায় এলে তারা এক দলীয় পার্টির শাসন চালু করবে। তবুও রাইট উইং কনসার্ভেটিভ পার্টি এবং সোশ্যাল ডেমোক্রাটিকগুলি এদের ব্যান না করে, এদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে ক্ষমতা দখলে ব্যস্ত ছিল বেশী।

১৯৩২ সালে কমিদের সাথে নাজিদের মারামারি সাংঘাতিক রূপ নেয়- ৯৭ জন কমিকে খুন করে নাজিদের এস এস। অন্যদিকে কমিদের রটকম্প ৪২জন এস এস নেতাকে খুন করে বদলা নেয়। বেসিক্যালি জার্মানিতে তখন গণতন্ত্র চুলোয় যাক- খুন খারাপি করেই ক্ষমতা দখল করতে হবে এই ভাবটা জাঁকিয়ে বসে। এবং গণতান্ত্রিক পার্টিগুলি এর বিরুদ্ধে আইন করেও তুলে নিতে বাধ্য হয় কোয়ালিশন রাজনীতির বাধ্যবাধকতায়।

হিন্দুত্ববাদিদের যেমন পলিটিক্যাল পার্টি বিজেপি, মগজধোলাই এর আঁতুরঘর এবিভিপি, আর ক্যালানো বাহিনীর নাম বজরং দল-তেমন হিটলারের পলিটিক্যাল পার্টির নাম ছিল ন্যাশানাল স্যোশালিস্ট ওয়ার্কারস পার্টি, মগজধোলাই হত হিটলার ইয়ুথ বাহিনীতে, আর ক্যালানোর জন্য ছিল স্টমট্রুপার। সুতরাং এইসব দেখে থার্ড রাইখের পদধ্বনি শোনা বিচিত্র কিছু না। যেভাবে ছাত্র, সাংবাদিক শিক্ষক, আইনজীবিদের ওপরে হামলা হচ্ছে, এবং রাষ্ট্রের পুলিশ এগুলো প্রশয় দিচ্ছে, তাতে থার্ড রাইখের স্মৃতি ফিরে আসতেই পারে।

তবে সব বিবেচনা করে,আমি মনে করি, ভারতে থার্ড রাইখ ফেরার সম্ভাবনা নেই।

(১) হিটলারের নাজি পার্টি এবং জার্মান কমিনিউস্ট পার্টির মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য কমই ছিল-কারন দুটো পার্টিই ছিল ওয়ার্কারস পার্টি। আমেরিকার বিরুদ্ধে। পুঁজির বিরুদ্ধে। স্টেট ক্যাপিটালিজমের পক্ষে। জাতীয়করনের পক্ষে। ইনফ্যাক্ট ইহুদিদের ঘৃণা করার ব্যপারটা বাদ দিলে, দুটো পার্টীর ইকনোমিক এজেন্ডা আলাদা কিছু ছিল না। গোয়েবেলস এর ডায়ারী পড়লেই জানা যাবে হিটলার এবং নাজি পার্টি কমিদের গালাগাল করলেও, স্তালিনের "কাজের" ভক্ত ছিল-বিশেষত যে নিঁখুত ভাবে তিনি একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সব কিছুর জাতীয়করন করেছিলেন। ইনফ্যাক্ট স্টালিন ও হিটলারকে ১৯৩০-৩২ সাল পর্যন্ত মিসগাইডেড কমি বলেই মনে করতেন। জার্মান কমিনিউস্ট পার্টি চলত স্টালিনের নির্দেশে। ১৯৩০ সালেই স্যোশাল ডেমোক্রাটদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারত জার্মানীর কমিনিউস্ট পার্টি। হিটলারে ভবলীলা তখনই সাঙ্গ করে দেওয়া যেত । কিন্তু স্টালিনের মনে হল হিটলার আসলেই অনেক বেশী " কমিদের কাছে" -কিন্ত স্যোশাল ডেমোক্রাটরাই আসল শত্রু! আর জানেনই ত- বং কমিদের ব্রেইন যেমন দিল্লীর কেশব ভবনে বাঁধা থাকে-তখন জার্মান কমিদের ব্রেইন, গান এবং টাকা বাঁধা স্টালিনের কাছে। স্টালিন নির্দেশ দিলেন দরকার হলে নাজিরা ক্ষমতা দখল করে করুক-কিন্ত স্যোশাল ডেমোক্রাট একদম না।

কমিনিউস্টরা কোনদিনই প্রাক্টিক্যালের ভাল ছাত্র না-তারা থিওরিটিক্যাল হস্তমৈথুনে বিশ্বাসী চিরকাল। কারন নাজিরা এসেই প্রথমে সব ব্যবসার জাতীয়করনের ঘোষনা দেবে বলেছিল-যার সাথে কমিদের ঘোষিত পজিশনের কোন পার্থক্য ছিল না। তারপরে নাজি এবং জার্মান কমি-দুই পার্টীই ছিল আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের বাপান্ত করা পার্টি। মেইন ক্যাম্প যারা পড়েছেন-তারা দেখবেন হিটলার আমেরিকান ক্যাপিটালিজমকে ফ্রান্সের থেকে কম বাপান্ত করেন নি। সেই ১৯৩০ সালে স্টালিন মনে করতেন, তিনি কোন না কোনদিন নাজি এবং কমিদের মিশিয়ে দিয়ে জার্মানীতে বলশেভিক বিপ্লব ঘটাবেন-হাও নেইভ!

ভারতের অবস্থা মোটেও এক না। বিজেপি ও নাজি পার্টি হতে পারবে না-মোদির হিটলার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই জন্যে নেই যে বিজেপি মোটেও ওয়ার্কারস পার্টি না-তারা ধণতান্ত্রিক পার্টি-পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে তারা না। হিটলার তার স্টিম সংগ্রহ করেছিলেন জার্মানির খেটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে-কারন তিনি সবার জন্য চাকরি, বিনে পয়সায় চিকিৎসা ও শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতা এসেছেন। এবং সেগুলো করেও ছিলেন। তিনি বামেদের থেকেও বড় সোশ্যালিস্ট ছিলেন! তার পার্টির নাম কিন্ত ন্যাশানালিস্টিক স্যোশালিস্ট পার্টি। তার পলিশি ছিল প্রোপিপল-এন্টিক্যাপিটালিস্ট। জার্মানির খেটে খাওয়া জনগণই ছিল, তার ক্ষমতার উৎস।

বিজেপি কিন্ত জনবিচ্ছিন্ন-খেটে খাওয়া লোকেদের কাছ থেকে। হিন্দুত্বের ঢপ দিয়ে নাজি বা হিটলার হওয়া যায় না। সেটা হতে গেলে আডানি আম্বানীদের পদসেবা না করে জনগণের জন্য সরকারি চিকিৎসা , শিক্ষা, চাকরীর সরকারিকরন করতে হয়। সেটা যেহেতু নেই, ফান্ডামেন্টালি বিজেপি আসলেই কিছু ঢপের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। তাসের ঘরের মতন ভেঙে যাবে বিজেপি। হিটলারের পলিসি বেস কিন্ত ছিল সলিড- প্রোপিপল।

(২) দ্বিতীয় ব্যপারটা হচ্ছে ১৯৩০-৩৩ সালের জার্মানিতে মন্দা ছিল প্রবল। চারিদিকে বেকার। ফলে গণতান্ত্রিক পার্টিগুলি এবং গণতন্ত্রের প্রতি সাধারন জনগণ আস্থা হারায়। ভারতের সেই অবস্থা নেই। এখানে গণতন্ত্রের প্রতি লোকের আস্থা হারায় নি তা দিল্লী এবং বিহারের ভোটেই প্রমাণিত। ফলে অগনতান্ত্রিকতাকে জনগণই প্রশয় দেবে না। এবং দিলে বিজেপি যেভাবে দিল্লীতে জামানত খুইয়েছে সেই ভাবে হারবে।
সুতরাং হিটলার যেভাবে স্টর্মত্রুপার দিয়ে কমি পেটাতেন, সেইভাবে চলতে গেলে ভারতে জনপ্রিয়তা হারাবে বিজেপি।

Friday, February 19, 2016

বিজেপি কি আদৌ কোন জাতিয়তাবাদি দল ?

জেন এন ইউ কেন্দ্রিক,  জাতীয়তাবাদ বিতর্ক বড়ই বিরক্তিকর এবং সময়ের অপচয়। পৃথিবীতে প্রথম দেশ তৈরী হয় প্রায় সাড়ে  পাঁচ হাজার বছর আগে-মেসোপটেমিয়ায়। সেই প্রাক আক্কাডিয়ান সভ্যতায় ছিল অনেক সিটিস্টেট বা শহর রাজ্য। শহরের শাসক শ্রেনী সম্পদ এবং নারীর জন্য একে অন্যের সাথে লড়ত। কিন্ত মজার ব্যপার হল ঐতিহাসিকরা বলছেন-সিটিজেন গেভ এ ড্যাম।  জনগন মনে করত, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে-তাতে আমার কি। কারন যেই আসুক- কর বসাবে-লুঠ করবে-ঘর থেকে মেয়ে তুলে নিয়ে যাবে! দেশ আমার মাতা বা পিতা-এই জাতিবাদি ধারনার বয়স  দেড়শো বছর ও না! তার আগে পর্যন্ত রাজা ধণে প্রানে বাঁচিয়ে রাখলেই বর্তে যেত লোকজন।

   জাতীয়তাবাদের শুরু উনবিংশ শতকে। যেহেতু আলোচনা ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে-এশিয়ান দেশগুলি -যেমন চীন বা জাপানের সাথে ভারতে জাতিয়তাবাদের তুলনা করাটাই ঠিক ঠাক হবে। চীন এবং জাপান-দুটো ক্ষেত্রেই জাতীয়তাবাদের উত্থানের মূল কারন কলোনিয়াল শক্তিগুলি-বিশেষত আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের কাছ থেকে স্বাধীন থাকার জন্য উন্নত মিলিটারী শক্তির প্রয়োজনিয়তা। প্রথম আফিং যুদ্ধে বৃটেনের কাছে হেরে, ন্যাংকিঙের চুক্তি সম্পাদন করা মাত্র চীনের কুইং রাজবংশ পরিস্কার বুঝতে পারে মিলিটারী উন্নত না হলে সব গেল। সুতরাং যুদ্ধাস্ত্র কিনে মিলিটারী ঊন্নত করার চেষ্টা চললো। তাতে কিস্যুই হল না- জাপান থেকে সব ইউরোপিয়ান শক্তির কাছে গোহারা হারা বন্ধ হল না।
   
 এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্রাট গুয়াংজু বুঝতে পারেন শুধু অস্ত্র দিয়ে একটা দেশ উন্নত হয় না-তার জন্যে চাই শিক্ষা, শিল্প, রাজনীতিতে আমূল আধুনিক সংস্কার-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যপক প্রয়োগ। উনি বিখ্যাত ১০০ দিনের সংস্কার শুরু করলেন চীনে-যদিও তা রাজমাতার জন্য বন্ধ হবে। কিন্ত ওই ১০০ দিনের সংস্কার চীনের আধুনিক জাতিয়তাবাদের মূল সূচক-যা সান ইয়েৎ সানের কুয়োমিংটাং পার্টির ভিত্তি। ১৯২০-৩০ সালে চতুর্থ মের জাতীয়তাবাদি আন্দোলন নামে খ্যাত এই বিদ্রোহ, চীনের জাতিয়তাবাদি আন্দোলনকে সংজ্ঞায়িত করে এই ভাবে

 ""Nationalism, patriotism, progress, science, democracy, and freedom were the goals; imperialism, feudalism, warlordism, autocracy, patriarchy, and blind adherence to tradition where the enemies. Intellectuals struggled with how to be strong and modern and yet Chinese, how to preserve China as a political entity in the world of competing nations."

  জাপান কিন্তু এই ভুল করে নি। আমেরিকান নৌসেনাপতি ম্যাথ্যু পেরির গানবোটের ধাক্কায় (১৮৫৩),  সম্রাট মেইজি বুঝেছিলেন জাপানের অতীতে মৌজে থাকলে জাপানও চীনের মতন বিদেশীদের গর্ভে চলে যাবে। ফলে মেইজি সংস্কারে (১৮৬৮-১৯১২)মিলিটারী সংস্কারের সাথে সাথে প্রথমেই চললো শিক্ষার সংস্কার। সবার জন্য বিনা পয়সায় আধুনিক শিক্ষা। তার জন্য ইউরোপ থেকে শিক্ষক আনো। প্রচুর প্রোপার্টি ট্যাক্স বসানো হল স্কুলের ফান্ডিং এর জন্য । জাপানের স্থানীয় জনগণ রেগে গিয়ে ২০০০ স্কুল পুড়িয়েছিল সেকালে। পরে বোঝে শিক্ষা হচ্ছে একটা জাতির আসল শক্তির উৎস।

 আমি চীন এবং জাপানের জাতিয়তাবাদের ইতিহাস এই জন্য আনলাম, এটা বোঝাতে ভারতে যারা নিজেদের জাতিয়তাবাদি বলছেন- যেসব বিজেপি বা আর এস এসের লোকেরা নিজেদের জাতিয়তাবাদি বলে দাবি করেন-আমি  তাদের জাতিয়তাবাদি শক্তি বলে মানতে নারাজ।  বিজেপি আদৌ কোন জাতিয়তাবাদি পার্টিই না-শ্রেফ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা দিয়ে কোন জাতিয়তাবাদি পার্টি হয় না। কারন পৃথিবীতে চীন, জাপান বা জার্মানির জাতিয়তাবাদের ইতিহাসে দেখা যাবে জাতিয়তাবাদের পাঁচটি স্তম্ভ

             (১) প্রথম স্তম্ভ- শিক্ষা । জাপান, চীন সর্বত্র প্রথমে বিনা পয়সায় সার্বজনীন শিক্ষার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি পুরো উলটো রথে। শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন করতেই ব্যস্ত। সার্বজনীন শিক্ষার পেছনে টাকা খরচ করবে না। শিক্ষা খাতে বাজেট কমাচ্ছে। অথচ মেইজি সংস্কারে শিক্ষার পেছনে টাকা ঢালার জন্য এত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছিল জনগণ রেগে গিয়ে স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। সার্বজনীন সরকারি শিক্ষার প্রতি বিজেপির নেতিবাচক মনোভাব- প্রথম প্রমান-এরা জাতিয়তাবাদ কিস্যুই বোঝে না।

            (২) দ্বিতীয় হচ্ছে-ম্যানুফ্যাকচারিং এবং শিল্পে স্বয়ং সম্পূর্নতা। এই ব্যপারে মোদির ঘোষিত নীতি হচ্ছে মেইড ইন ইন্ডিয়া। এটা পাতি স্লোগান। ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য যা ইনফ্রাস্টাকচর এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্রেইন্ডলি আইন দরকার-তা এখনো ভারতে নেই-চারি দিকে লাল ফিঁতের ফাঁস। কংগ্রেস আমল থেকে কোন পরিবর্তন হয় নি। হবেও না । কারন লাল ফিতেই দিল্লীর দালালদের ইনকামের উৎস। বিজেপি এই মৌতাত ভাংবে না। কারন ইহাই সকল রাজনৈতিক নেতাদের ইনকামের ইৎস।

          (৩) মহিলা শক্তির উত্থান - মেইজি সংস্কার এবং চীন-সবর্ত্রই জাতিয়তাবাদের একটা গুরুত্বপূর্ন দিক ছিল -নারীশিক্ষা। কারন মা শিক্ষিত না হলে, ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হবে না।  পৃথিবীতে সব থেকে বেশী নিরক্ষর ভারতে। নিরক্ষরতা দুরীকরন অভিযানে বিজেপিকে কখনোত দেখিনি। মেয়েদের বাইরের কাজে, আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উৎসাহিত করতেও দেখিনি-বরং এই ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদির পার্টিগুলোর ভূমিকা মেয়েদের ঘরে ঢোকানোতেই উৎসাহিত করেছে বেশী।

       (৪) নিজেদের সংস্কারের ভাল জিনিসগুলি রেখে বাজে জিনিসগুলি বর্জন-পাশ্চাত্য সভ্যতার ভালগুনগুলি অর্জন। এইব্যপারে ল্যান্ডমার্ক কাজ করেছিলেন জাপানী বুদ্ধিজীবি ইকুচি ফুকুজুয়া (১৮৮৮)।  উনি ঘোষনা করলে, জাপানকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমেরিকা আর ইউরোপের দিকে তাকাতে হবে-চীন আর কোরিয়ারদিকে তাকিয়ে থাকলে জাপান ও তাদের মতন স্বাধীনতা হারাবে। কোন জাতিয়তাবাদ বলে না নিজের সংস্কার বা নিজের অতীতে আঁকড়ে থেকে আরো পিছিয়ে যাও।  ভারতে জাতীয়তাবাদের নামে যা চলছে-তা হচ্ছে ভারতের অতীতের সব কিছু মহান এবং ভাল ছিল। পাশ্চাত্যের সব কিছু খারাপ। চীন বা জাপানের জাতিয়তাবাদি ইতিহাস পুরো উলটো। চীন এবং জাপানের জাতিয়তাবাদি নেতারা স্বীকার করে নিয়েছিলেন-তাদের অতীত তাদের বাঁচাবে না।  জাতির স্বার্থে হাজার হাজার বছরের পুরাতন সংস্কার ছাড়তে হবে। এইভাবেই মেইজি সংস্কারে সামুরাই প্রথার মতন ঐতিহ্যকে বাতিল করা হয়।

    এর মূল কারন চীন এবং জাপানের তাগিদ ছিল ইউরোপের হাত থেকে বাঁচার। ভারত বৃটেনের কল্যানে একটা আধুনিক ইউরোপিয়ান ইনফ্রাস্ত্রাকচার পেয়েছে-ফলে রক্ষনশীলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জাতিয়তাবাদের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান এনলাইট্মেন্ট ভারতে আসে নি-এসেছে কলোনিয়ালিজমের মাধ্যমে।

  ইতিহাসের এই টুইস্টটা ভারতের জাতীয়তাবাদের সব থেকে বেশী ক্ষতি করেছে-ভারতের জাতিয়তাবাদ মানে পাশ্চাত্যের এনলাইট্মেন্ট বর্জন। সব এনলাইট্মেন্টের অধিকারি ভারতীয় দর্শন! এই ধরনের মনোভাব রক্ষনশীল চিন্তা-এবং তা কোন ভাবেই জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায়িত হতে পারে না।

   (৫) বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং যুক্তিবাদের দিকে অগ্রসর- ইউরোপ, চীন এবং জাপানের জাতিয়তাবাদে ধর্ম কোন ভূমিকা রাখে নি- বরং সব রাষ্ট্রই নিজেদের শক্তিশালি করার জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির পেছনে প্রচুর টাক্স মানি ঢেলেছে। ভারতে বিজেপি বিজ্ঞান বলতে বোঝে সব ব্যাদে আছে-সব প্রাচীন ভারতে ছিল। বিজেপির আমলে ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেস তামাসাতে পরিনত -এটা নোবেল বিজয়ী ভারতীয় বিজ্ঞানী ভেঙ্কটরামন রামাকৃষ্ণানের কথা। হিন্দু কুসংস্কার নিয়ে মাতামাতি করে জাতিয়তাবাদ হয় না। সম্ভব না।

    সুতরাং আমি যদি পৃথিবীর জাতিয়তাবাদের ইতিহাস ঠিক ঠাক পড়ে থাকি, বিজেপি বা আর এস এসকে জাতিয়তাবাদি শক্তি মানতে নারাজ।

  পাশাপাশি জেন এন ইউ ইস্যুতে বামেরা যে ভাষায় জাতিয়তাবাদের গালাগাল করেছে, সেটাও তাদের এস ইউজ্যুয়াল অজ্ঞানতার পরিচয়।  ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদি শক্তি বোমা ফাটানো শুরু করলে-যেটা সবার প্রথমে হবে- বিদেশী কোম্পানীগুলো তাদের ব্যাক ওফিস ভারত থেকে তুলে নেবে।  সুতরাং এখন যেমন ফেবুকের বাম পুঙ্গবরা আমেরিকান কোম্পানীর পা চেটে  গরম গরম লিখে চলেছেন-তখন মারোয়াড়ি কোম্পানীর হয়ে কাজ করলে-লেখার সময় পাবেন ত?

 জাতিয়তাবাদ অর্থনৈতিক যুক্তির বিচারে থাকার কথা না। কারন দেশের বর্ডার মার্কেট ছোট করে। কিন্ত তবুও বিজ্ঞানীরা বলছেন জাতীয়তাবাদের জনপ্রিয়তার  মূল কারন- সিকিউরিটি এবং স্ট্যাবিলিটি। নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল সমাজের দরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই।

 বিজেপি জাতিয়তাবাদি শক্তি না-এটি একটি সামন্ততান্ত্রিক ঘোঁটেল-যার উৎস ভারতের অন্য পার্টিগুলির ইসলামিক মৌলবাদের তোষন। ইসলামিক মৌলবাদ ভারতের জন্য, হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য খুব ভয়ঙ্কর-এটা ঐতিহাসিক ভাবেই প্রমানিত। চীন এবং জাপানের জাতিয়তাবাদের উৎস ছিল বৃটেন এবং আমেরিকার কাছে স্বাধীনতা হারানোর ভয়। হিন্দু জাতিয়তাবাদের  উৎস মুসলমানদের হাতে মার খেয়ে জমি সম্পতি হারানোর ভয়।  জাপান পাশ্চাত্য শক্তির হাতে জমি হারানোর ভয়ে, পাশ্চাত্যের পূজারি হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদিরাও মুসলমানদের হাতে জমি হারানোর ভয়ে মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদি আন্দোলনে কোন পাশ্চাত্য এনলাইট্মেন্ট নেই-আছে ইসলামের বর্বরতার ধর্মীয় অন্ধ অনুকরন। কিন্ত এর জন্যেও ভারতের সোকল্ড সেকুলার রাজনীতিই দায়ী। যা ইসলামিক মৌলবাদকে আস্কারা দিয়েছে প্রথম থেকেই।

 ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে, হিন্দু মৌলবাদিদের আটকানো যাবে না।

Wednesday, February 17, 2016

ছত্তিশগড়, একোটা, বাসমাচি

ছত্তিশগড় সরকার সুরগূজা জেলার ঘাটবারা গ্রাম, আদিবাসিদের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেবে বলে ডিক্রি জারি করেছে। আদিবাসিদের পঞ্চায়েত খুব পরিস্কার ভাবেই ওই এলাকাতে কোন কোলমাইনিং চায় নি। তবুও মোদি পেয়ারী আদানী মাইনিং এর বলপূর্বক অধিগ্রহণ সম্পূর্ন করতে জারি হল আদিবাসী উচ্ছেদ নামা। ফরেস্ট রাইট এক্ট মানা হলো না-যাতে আদিবাসিবাসিদের সম্পূর্ন সহমতি ছাড়া মাইনিং এর জন্য বন অধিগ্রহণ করা যায় না।

মে ২৮, ১৮৩০ সাল। প্রেসিডেন্ট এন্ড ু জ্যাকসন জারি করলেন রেড ইন্ডিয়ান রিম্যুভাল এক্ট। সেনেটে ২৮-১৯, কংগ্রেসে ১০২-৯৭ ভোটে পাস হয় ইন্ডিয়ান রিম্যুভাল বিল। মিসিসিপি নদীর পূর্বদিকে বসবাস করা সব আদিবাসিদের নদীর পশ্চিম দিকে চলে যেতে হবে। কারন আমেরিকাতে সাদা ইউরোপিয়ান পপুলেশন আর কটনের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এর আগে পর্যন্ত আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা-জর্জ ওয়াশিংটন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিং এবং থমাস জেফারসন চাইছিলেন আদিবাসীরা আমেরিকানদের সাথে মিশে যাক-কৃষিকাজ শুরু করুক। জোর করে আদিবাসিদের জমি দখলের বিরুদ্ধে ছিলেন এরা। কিন্ত তুলো চাষ দক্ষিনে লাভহজনক হওয়া শুরু হতেই, শুরু হল শেতাঙ্গদের জমির খিদে। এতেব আদিবাসি উচ্ছেদ।

চেরোকি, মুসকোগি, সেমিনল, চিকস, চোটকাও-এই পাঁচটি আদিবাসিদের তাড়িয়ে দেওয়া হল তাদের ভূমি থেকে-যেখানে তারা বসবাস করেছে হাজার হাজার বছর। দশ হাজার চেরোকি মারা যায় এই রিলোকেশনে-যা মাস মার্ডার ছাড়া কিছু না। মিলিটারি এসে রাউন্ড আপ করে গাড়িতে শুয়োরের মতন গাদা করে ফেলে বন্দুকের নলের সামনে, তাদের অজানা অববাসযোগ্য জমিতে ফেলে দেওয়া হত। না খেতে পেয়ে রোগেই মারা যায় আদিবাসিদের অধিকাংশ লোক।

এই যদি সভ্য আমেরিকানদের ইতিহাস হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ানে আদিবাসিরা কেমনছিল সেটাও জানুন। স্টালিন বিদ্রোহের ভয়ে অসংখ্য আদিবাসী গোষ্ঠিবাসিকে একদেশ থেকে অন্যদেশে পাঠিয়েছিলেন-যাদের অধিকাংশই রাস্তায় অক্কাপেত। তবে সোভিয়েত ইতিহাসের সব থেকে কুখ্যাত আদিবাসি নিধন মধ্য এশিয়াতে বাসমাসি বিদ্রোহ দমন। ফারগানা উপত্যকা এবং টুর্কেমিনিস্থানের মুসলমান আদিবাসীরা বহুদিন থেকেই জারের আধিপত্য মানতে চায়নি। ১৯১৭ সালে যখন বলশেভিক বিপ্লব হয়, এইসব আদিবাসিদের মনে আশার সঞ্চার হয়, যে তারা এবার রাশিয়ান আধিপত্য থেকে মুক্তি পাবে। ফলে ওক্টবর বিপ্লবের সময়, এরা রেড আর্মিকে সমর্থন করেছিল লেনিনের স্বয়ত্বশাসনের ঢপে বিশ্বাস করে। রেড আর্মি ক্ষমতা পেতেই এই আদিবাসিরা বুঝে যায়, বেসিক্যালি বলশেভিকরা জারের থেকেও বড় দানব। তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার কোন ইচ্ছা লেনিনের নেই। ফলে ইসমাইল বে এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে আদিবাসিরা। ১৯১৮ সালে কোকান্ড শহরে রেড আর্মি ২৫,০০০ কৃষক, আদিবাসি হত্যার মাধ্যমে তাদের ঋন পরিশোধ করেন। হত্যালীলা এখানেই শেষ হয় না। ১৯২৩ শাল পর্যন্ত রেড আর্মি মধ্য এশিয়ার এই উপজাতি অঞ্চলে রক্তবন্যা বইয়ে দখলে আনবে। এসব হত্যালীলার সব কিছুই হয়েছে লেনিনের নির্দেশে। শুধু তাই না। গর্ভাচেভের দিন পর্যন্তও এদের বিশ্বাস করত না রাশিয়ানরা। এদের স্থানীয় কমিনিউস্ট পার্টির মাথায় সব সময় একজন রাশিয়ানকে বসানো হত। কোথায় লাগে কাশ্মীর! মধ্য এশিয়ার মুসলিম উপজাতিগুলিকে যেভাবে গণহত্যার মাধ্যমে কমিনিউস্টরা সোভিয়েতের দখলে এনেছিল-তার তুলনায় কাষ্মীর ত নস্যি! তবে ঘাবরাবেন না। লেনিন এমনি এমনি এমন করেন নি। এটা ছিল কটন বেল্ট। সুতরাং এই অঞ্চলের দখল না পেলে "সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি মহান নেতা লেনিনের" চলছিল না। শুধু তাই না-তেলের দখল পেতে আজারবাইজান এবং বাকুর নির্বাচিত সরকারকে মিলিটারি দিয়ে ধ্বংস করে সোভিয়েতের দখলে আনেন লেনিন-হ! সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি লেনিন!! যারা লেনিনকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি নেতা বলে পূজো করে তারা ১৯১৭-১৯২২ সাল পর্যন্ত লেনিনের ইতিহাস কিছুই জানে না। তারা জানে না কিভাবে মধ্য এশিয়ার আদিবাসীদের ওপর রক্তের হোলি খেলে, এইসব এলাকাকে সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা জানে না এই মধ্য এশিয়ার কত স্বাধিনতা আন্দোলনকে গণহত্যা আর গণ ধর্ষনের মাধ্যমে বাগে এনেছিলেন মহান লেনিন।

আমি যেটা লিখতে চাইছি-ক্যাপিটালিস্ট, কমিনিউস্ট, গণতান্ত্রিক-সোকল্ড শিক্ষিত, সভ্য সমাজ কোনদিনই আদিবাসিদের সমকক্ষ ভাবে নি-সব সময় ভেবেছে, ওইসব বনবাসীরা ইনফেরিয়র-তাদের জোর করে তাড়িয়ে দাও-না হলে বন্দুকের নলের সামনে সভ্য কর।

আদিবাসিদের সাথে আমার প্রত্যক্ষ মোলাকাত আই আই টি খরগপুরের শেষ বছরগুলিতে। রুরাল টেকনোলজিতে প্রফেসার পি কে ভৌমিক আদিবাসিদের ওপর গবেষনা করতেন। উনি সারা জীবন আদিবাসিদের মধ্যেই কাটিয়েছেন-উনার বাবা আদিবাসি ছেলেমেয়েদের জন্য একটা হোস্টেল ও চালাতেন। উনিই আমাকে নিয়ে গিয়েছেন অনেক আদিবাসি গ্রামে। ইনফাক্ট আই আই টির আশেপাশের গ্রামগুলো আগে আদিবাসিদেরই ছিল-আস্তে আস্তে তাদের সরিয়ে শিল্প এসেছে। আমি আস্তে আস্তে বুঝেছিলাম এরা বন জঙ্গলকে প্রকৃতিকে যত ভালবাসে সভ্য মানুষদের মধ্যে তার ছিঁটেফোঁটাও নেই।

আমাদের মতন সভ্য মানুষদের চালিকা শক্তি হচ্ছে লোভ-অর্থ, ক্ষমতা, যশের জন্য আমরা লালায়িত। নিমপুরাতে রবিবার সকালে আদিবাসিদের হাটে যেতাম নিয়মিত। হাজারে হাজারে লোক-শয়ে শয়ে হাড়িয়ার ঠেক। আদিবাসী রমনীরা হাড়িয়া নিয়ে বসে -তাদের ঘিরে পুরুষদের জটলা। প্রাণের ওমন স্বাধীন উচ্ছাস আমি কোথাও দেখিনি। ওরা খুব টক একধরনের লেবু আনত হাটে-দারুন সস্তা। টাকায় তিনটে করে । একদিন একটা লোক ওমন ডজন দুই লেবু নিয়ে বসে আছে। আমি দুটাকা ধরিয়ে দিলাম-ছটা নেব। ও দেখি আমাকে দুডজন লেবুই তুলে দিল! অবাক কান্ড!! আমি বোঝাচ্ছি, আমার মোটে ছটা দরকার-বাকীগুলো ফেরত দিলাম। ও আবার আমার হাতে বাকীগুলো তুলে দিল। বলে দুটাকার বেশী দিতে হবে না! বাকী সব নিয়ে যাও! এমন আজব বিক্রেতা সভ্য সমাজে কোনদিন দেখি নি! শেষ লজ্জায়, আমি ওকে দশটাকা ধরাতেই ও আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে কাছের এক হাড়িয়ার ঠেকে দে ছুট। আমি এবার বুঝলাম। আসলে এসবের বেচাকেনার কোন ইচ্ছা ওর নেই-হাটে এসেছে-কোন রকমে একটা টাকা পেলেও, সব তুলে দিয়ে হাড়িয়ার আড্ডায় বসবে। ওটাই ওর জীবনের মোক্ষ। এদের জীবনের চাওয়া পাওয়া আকাঙ্খা -কোন কিছুতেই লোভ চোখে পড়ে নি।

আমি জানি না কেন আমরা নিজেদের সভ্য বলে মনে করি। এমন সভ্যতা যেখানে চাইলেও জীবনের সরলতা নেই- চাইলেও সৎ থাকা যায় না। চাইলেও নির্লোভ থাকা যায় না। সাধে বিদ্যাসাগর শেষ জীবন আদিবাসীদের মধ্যে কাটিয়েছিলেন!

Sunday, February 14, 2016

ছাত্র রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের অনুপ্রবেশ বন্ধ হৌক

জেনইউকে কেন্দ্রকরে যে সমস্যাটা আবার উঠে আসছে-  এই ভাবে ছাত্র রাজনীতি চালিয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কি লাভ হচ্ছে?  সবথেকে বড় কথা ছাত্ররা শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি না করে, হঠাৎ অতিবাম ইস্যুগুলি নিয়েই ক্ষেপে  উঠল কেন?

   ভারতের রাজনীতিতে আমি দুজনকে বেশ শ্রদ্ধা করি-এবং মনে করি-এরা ভারতকে অনেক কিছু দিতে পারেন। প্রথম জন কেজরিওয়াল, দ্বিতীয় জন মনোহর পারিকর। মনোহর পারিকরের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে ( উনি আর এস এস প্রচারক ছিলেন) আমি সহমত নই-কিন্ত এই ভদ্রলোক যথেষ্ট ভদ্র এবং নম্র-এবং মোটামুটি বোঝা যায় মাটিতে পা রেখে কাজের চেষ্টা চালান-অন্যন্য সঙঘীদের মতন হাম্বা করার অভ্যেস নেই। কাজের লোক এই জন্য বলছি-ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারিং এর অনেক কিছুই ভারতে বানানোর একটা রোডমাপ উনি দিতে পেরেছেন। যা কংগ্রেসের আমলে দিল্লীর রাশিয়ান দালালদের চক্করে কিছুই এগোয় নি।

     কেজরিওয়ালকে নিয়ে কিছু বলার নেই- আমি মনে করি ভারতে এই মুহুর্তে কেজরিওয়ালই ভরসা। কারন একমাত্র উনারই কোন হিন্দুত্ব বা কমিনিউজমের এজেন্ডা নেই-নিখাদ ভারতের প্রতি ভালোবাসা আছে। জনগনের দুঃখ লাঘব করার সৎ আকাঙ্খা আছে। এবং সব থেকে বড় কথা -মাথায় বুদ্ধি আছে।  ভুল উনি অনেক করেছেন-কিন্ত মাথায় বুদ্ধি থাকার জন্য শুধরেও নিয়েছেন দ্রুত। আমি অবশ্যই আশা রাখি, কেজরিওয়াল কোনদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন।

  এদের মধ্যে কেজরিওয়াল আই আই টি খরগপুরের, পানিকার আই আই টি মুম্বাই এর। আই আই টিতে ছাত্র রাজনীতি আছে-কিন্ত সেখানে ভারতের পার্টিগুলির প্রবেশ নেই।  এত ছাত্র রাজনীতি করে তাহলে জেন এন ইউ ভারতকে কোন ধরনের নেতা উপহার দিল ? যদি ধরেই নিই ছাত্রদের রাজনীতি করার দরকার আছে- দেশের রাজনৈতিক নেতা তুলে আনতে -তাহলে ভারতের রাজনীতিতে জেন এন ইউ এর অবদান, সিতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত। প্রথম জন চেসেস্কু এবং কিম জং কত বড় কমিনিউস্ট ছিলেন তা প্রমান করতে পিপলস ডেমোক্রেসির পাতায় দস্তার পর দিস্তা লিখেছেন। দ্বিতীয় জন দ্বায়িত্ব নিয়ে ভারতের বাম রাজনীতিকে কবরে পাঠিয়েছেন। যেখানে কেজরি-মাত্র একবছরের মধ্যে একটা পার্টি তৈরী করে দিল্লীতে বিজেপি এবং কংগ্রেসকে সাইনবোর্ড বানিয়েছে।
 এইত হচ্ছে জেনিইউ বনাম আই আই টি থেকে তৈরী রাজনীতিবিদদের পার্থক্য!!! সিতারাম ইয়েচুরী এবং প্রকাশ কারাত যদি জেন এন  ইউ এর রাজনৈতিক নেতা তৈরীর  উদাহরন হয়-আমি এটাই বলব, জেন ইউ কে যে সাবসিডি দেওয়া হয়, তা যোগমায়া কলেজকে দেওয়া হৌক। তারা তাও একপিস মমতা দেখাতে পারবে।

 ইনফ্যাক্ট ভারতের বামরাজনীতির এই দুর্দশার জন্য জেন এন ইউ সর্বাধিক দায়ী। কারন ওখানে গিয়ে বাম মনোভাবা সম্পন্ন ছেলে মেয়েরা রেজিমেন্টেড বাম হয়ে যাচ্ছে- মুক্তমনের , ক্রিটিক্যাল মাইন্ডের অধিকারি হতে পারছে না। ফলে সেই বাতিল লেনিন নিয়ে লুলুবাবু হয়ে বাকী জীবন কাটাচ্ছে। এতে দেশের বা দেশের বামপন্থার কোনটারই কিছু লাভ হচ্ছে না। বামপন্থায় যে আলটারনেটিভ চিন্তা দরকার -দেশের মাটির সাথে সম্পৃক্ত একটি বাম ধারার দরকার-তার কোন কিছুইত জেন এন ইউ দিতে পারে নি। তাহলে তারা কিসের বাম ইন্টেলেকচুয়াল ? আমি মনে করি তারা ইউজলেস জাঙ্ক। পাতি মেয়ে পটানোর জন্য, একটু মিডিয়া লাইট খাওয়ার জন্য ক্যাম্পাস রাজনীতি করে।

  বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টির রাজনীতি ঢুকিয়ে রাজনৈতিক নেতা তৈরী করা যায় না। কেজরিওয়াল, নীতিশ কেউই সেই অর্থে ছাত্রনেতা ছিলেন না। এবং এই দুজনই বর্তমানে ভারতের সেরা দুই মুখ্যমন্ত্রী।

 পাশাপাশি জেন এন ইউএর বাম নেতাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। বিজেপি যদি এইসব খাঁচার তোতাপাখিদের ও ভয় পায়, বুঝতে হবে, বিজেপির ভিত বলে কিছু নেই-শুধু কাদার ওপরে মাচা বাঁধা। বিশেষত এইসব বামতোতারা যখন দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং দেশ বিরোধি শ্লোগানের বিরোধিতা করেছেন, তাদের জেলে আটকে রাখা গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক। এবং যেখানে বাক স্বাধীনতা নেই, সেখানে গণতন্ত্র নেই। ইনফ্যাক্ট তারা দেশ বিরোধি শ্লোগান দিলেও-তাদের ওইভাবে জেলে আটকানো যায় না। কারন আইডিয়াকে আইডিয়া দিয়েই আটকাতে হয়-পুলিশ দিয়ে আইডিওলজি আটকানো যায় না। আমি জানি ভারতের রেজিমেন্টেড বামেরাও বিজেপির মতনই রাজনৈতিক দিক দিয়ে অসহিষ্ণু-কিন্ত কান্টিয়ান লজিক মেনে-এটাই বলা যাক, গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতার শর্ত আনকন্ডিশনাল। বামছাত্র নেতারা লেনিনের মতন ঘৃন্য একজন বাক স্বাধীনতা বিরোধি, খুনী নেতার পূজারী-এসব ঠিক ই । কিন্ত তারা বাক স্বাধীনতার বিরোধি রাজনীতির ধারক বাহক বলে, তাদের বাক স্বাধীনতার অধিকার নেই-এটাও লজিক হতে পারে না।