Friday, May 27, 2016

বঙ্গের বিধি বাম ? বাম ঐক্য না মরিচীকা?

                                                 (১)
বঙ্গের বামেরা স্বভাবতই এখন গভীর মনোকষ্টে, কেউ কেউ কোমায়। মধু কবির ভাষায় --

  "কি পাপ দেখিয়া মোর, রে দারুন বিধি,
  হরিলি এ ধন তুই? হায়রে কেমনে
   সহি এ যাতনা আমি ? কে আর রাখিবে
  এবিপুল কুলমান, একাল সমরে ! "

 বামেদের মূল যন্ত্রনা, অপূর্ন অভিলাশের শুরু এই "বাম" শব্দটির ন্যারেটিভ থেকে। এটা অনেকটা মদ্যপানের মতন- কিছু কিছু মানুষ নিজেকে বাম, হিন্দু, মুসলমান, বাঙালী এলিট এইসব পরিচিতির মাদকে  "হাই" ফিল করে !  এই ধরনের আইডেন্টিটি-তাদের নিজেদের কাছে গর্বের বিষয়। কারন এরা মনে করে  তারা এক মহান চিন্তাধারা, মহান আদর্শের ধারক এবং বাহক। যদিও এই মনে করার পেছেন আছে অজস্র মিথ বা রূপকথার গল্প-যা ঐতিহাসিক সত্য না।  তাতে সমস্যা নেই। সমস্যার শুরু যখন তারা বিশ্বপৃথিবী এবং তার চলমান ঘটনাগুলিকে কেবল মাত্র-তাদের দৃষ্টিকোন দিয়েই দেখবে। অন্য ন্যারেটিভ, কাউন্টার ন্যারেটিভ এবং ফ্যাক্টস-রামধেনু রঙে পৃথিবীটাকে দেখতে ব্যর্থ হওয়াটাই আদর্শবাদিদের পতনের মূল কারন।

 এই নির্বাচনে শুধু সিপিএম না । সুসি, সিপিয়াইএম এল সহ সব বামপন্থীরাই শুয়ে গেছে।

 প্রশ্ন হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যত কি?  গোটা বিশ্বেই বা বামপন্থার কি ভবিষ্যত?

   সিপিএমের কোন ভবিষ্যত নেই-এটা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই। সিপিএমকে আদৌ বামপন্থী পার্টি বলা যায় না বলেই আমার বিশ্বাস এবং বিচার।

    কিন্ত তার মানে কি সামগ্রিক ভাবে পশ্চিম বঙ্গে বা ভারতে বা বিশ্বে বামপন্থার ভবিষ্যত নেই?


                                                (২)

  তার আগে "বামপন্থা" ন্যারেটিভটি আসলে কি ধরনের কাঁঠালের আমসত্ত্ব, তা নির্ধারন করা দরকার।  আমি আমেরিকা এবং পশ্চিম বঙ্গ-দুদিক দিয়েই উদাহরণ টানছি।

  এবার আমেরিকান নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বার্নি স্যান্ডার্সের উত্থান বিরাট বড় ঘটনা। বার্নির পজিশন, সিপিএমের থেকেও অনেক বামে। প্রায় সিপিয়াই এম এলের কাছাকাছি।   আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারীতে ডেমোক্রাটিক পার্টির নমিনেশন না পেলেও ( বা পাওয়ার চান্স প্রায় নেই), নিরেপেক্ষ ভোটারদের মধ্যে বার্নি, তার প্রতিদ্বন্দী হিলারীর থেকেও বেশী জনপ্রিয়। কিন্ত ডেমোক্রাটিক পার্টি সাপোর্টারদের কাছে, তার গ্রহণযোগ্যতা খুব কম-ফলে তিনি হারছেন।

  এই তথাকথিত বামপন্থি বার্নির জনপ্রিয়তা সাধারন নিরেপেক্ষ ভোটারদের কাছে-তা কি এই "ডান" "বাম" ন্যারেটিভে ব্যখ্যা করা সম্ভব??

 একদমই না।

  কারন দুটোঃ

      ক)  নিরেপেক্ষ ভোটারদের পলিটিক্যাল এফিলিয়েশন নেই। এরা ডান বাম নিয়ে ভাবেন না। যেমন বার্নির সমর্থকদের ৪০% প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেবে বলছে ( যেহেতু বার্নি নমিনেশন পাচ্ছেন না ) -ট্রাম্প সাংঘাতিক ভাবে নরেন্দ্রমোদির থেকেও অনেক বেশী দক্ষিনপন্থী। তাহলে বার্নির বেস ডান না বাম?

    খ) আরেকটা ঘটনা বলি। মেরীল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়া পাশাপাশি দুটো রাজ্য। এর মধ্যে মেরীল্যান্ডে  লেফট-সেন্টার পার্টি ডেমোক্রাটদের বেস প্রায় ৭০% ( ওবামা এখান থেকে ৭৮% লিড নিয়েছিলেন)। কিন্ত গত বছর  মেরিল্যান্ডের লোকেরা কিন্ত দক্ষিনপন্থী  রিপাবলিকান গর্ভনর হোগানকে জিতিয়েছে। যদিও  মেরীল্যান্ডের দুটী আইন সভা এখনো ডেমোক্রাটদেরই দখলে। ভার্জিনিয়াতে হয়েছে উলটো। ওখানে আইন সভা রিপাবলিকানদের। কিন্ত গর্ভনর নির্বাচনে জিতেছে ডেমোক্রাটরা।

 বাম-ডান ন্যারেটিভ দিয়ে বার্নির উত্থান ব্যখ্যা করা যায় না। ব্যাখ্যা করা যায় না মমতার উত্থান ও। মমতা সিপিএমের থেকেও অনেক বেশী প্রমানিত বামপন্থী-যদি বামপন্থী ন্যারেটিভটার কোন ভ্যালু থাকে।

 সোজা কথা পৃথিবী যেদিকে এগোচ্ছে-তাতে এইসব ন্যারেটিভের কোন মূল্য থাকছে না। মোদ্দা কথা জনগনের দুর্দশা বাড়ছে নানান কারনে-যারা এইসব দুর্দশার কিছুটা লাঘব করার প্রতিশ্রুতি দেবেন বা সেগুলো নিয়ে কাজ করবেন-জনগণ তাকেই ভোট দেবে।

                                                     (৩)

 আমি আমেরিকা, ভারত বা পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে খুব বেশী পার্থক্য দেখছি না।  সব জায়গাতেই মূল সমস্যাগুলো একধরনের -

    ক)  লোকজনের আয়ের বিভেদ- মাত্র ১% লোকের হাতে ৯০% সম্পদের মালিকানা চলে যাচ্ছে। গরীব, মধ্যবিত্ত আরো গরীব হচ্ছে। ধনী এবং উচ্চবিত্ত-তাদের সম্পদ আরো বাড়াচ্ছে।

   খ)  অটোমেশনের জন্য যন্ত্র বনাম মানুষের প্রশ্ন বারে বারে আসছে। অটোমেশনের দৌলতে অসংখ্য লোক কাজ হারাচ্ছে-তাদের পুনঃবাসন হচ্ছে না ঠিক ঠাক।  ১% লোকেরা হাতে অধিক সম্পদ জমা হওয়ার কারন ও এই অটোমেশন।

   গ)  পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। কোলকাতায় লোকজন অসম্ভব রকমের অসুস্থ। কারন বাতাস আর জলে এত দূষন । জল সম্পদ সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংস হচ্ছে। ফলে লোকজনের জীবিকা, বেঁচে থাকাটাই আজ প্রশ্নের সম্মুখীন

 ঘ) চিকিৎসা ব্যবস্থা সাংঘাতি ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারের পর পরিবার দেউলিয়া হচ্ছে-কি আমেরিকা-কি ভারতে । আজকের দিনে ডাকাত এবং ডাক্তার শব্দদুটীর মধ্যে লক্ষনরেখা প্রায় বিলুপ্ত।

 ঙ) শিক্ষাও সাংঘাতিক ব্যায়বহুল। আমেরিকাতে শিক্ষা ঋন মেটাতে একজনের লাগে  প্রায় কুড়ি বছর । ফলে তাদের বিয়ে সন্তানগ্রহণ সব পিছিয়ে যাচ্ছে-অধিকাংশ ছেলেমেরা চল্লিশের আগে সন্তান নিতে পারছে না। এটা রাষ্ট্রের জন্য ও ভাল না।


মুশকিল হচ্ছে বামেরা যে ভুল করেন-বার্নিও সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। অর্থাৎ সব কিছুর জন্য-ক্যাপিটালিম এবং মার্কেট দায়ী!! ক্যাপিটালিজম ধ্বংস করার রাজনৈতিক বিপ্লবের স্লোগান প্রথমে কিছুদিন চললেও আস্তে আস্তে বার্নির আপিলের অসারতা প্রায় প্রমানিত।

 এই সমস্যাগুলোর জন্য ক্যাপিটালিজম দায়ী-সেটা নিয়ে বিতর্ক নেই।

 মূল  বিতর্ক এখানেই -- এর সমাধান তাহলে  কি?

   ক্যাপিটালিজমের ধ্বংস  না উন্নততর মানবিক ক্যাপিটালিজম?

 বামেরা প্রায় সবাই মনে করেন ক্যাপিটালিজমের ধ্বংসই একমাত্র পথ। সেখানেই সব থেকে বড় ভুল।  এই গ্লোবালাইজড অর্থনীতিতে "সমাজতান্ত্রিক দ্বীপ" তৈরী করে কেউ বাঁচতে পারবে না।  এস ই জেড যদি আমি পশ্চিম বংগের জন্য আটকে দিলাম-অথচ হরিয়ানা, উত্তরাখন্ড, মহারাষ্ট্র রেখে দিল-তাহলে এস ই জেড বিরোধি বঙ্গবিপ্লবের ফল কি হইবে? সব কারখানা,চাকরি হরিয়ানা, উত্তরাখন্ডে চলে যাবে। গেছেও।  গ্রীসের বামপার্টি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের বিরুদ্ধে এত হুমকি দিয়ে কি করল? পর্বতের মূষিক প্রসব। কারন গ্রীসের ক্ষমতা নেই একা একা একটা সমাজতান্ত্রিক দ্বীপ হয়ে বাঁচার।

  মুশকিল হচ্ছে বামেদের এইভুলগুলো করা উচিত না। মার্ক্স এগুলো অনেক দিন আগেই লিখে গেছেন। স্যোশালিজিম ইন ওয়ান কান্ট্রি-সম্ভব না।  সমাজতন্ত্র আসার প্রাথমিক শর্ত আন্তর্জাতিকতা-এবং দেশের সার্বভৌম আইনের বিলুপ্তি। কারনটা সহজ। ভারতকে আমি সমাজতান্ত্রিক আইন দিয়ে সাজালাম। অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনামে ধনতান্ত্রিক আইন চালু রইল। ভারতের ব্যবসায়ীরাই বাংলাদেশে গিয়ে ফাক্টরী খুলবে সেক্ষেত্রে।

           তবে এসব বলে কোন লাভ নেই। কোন বাঙালী বামপন্থীই মার্ক্স ভাল করে পড়ে নি। বাঙালী বামপন্থা-স্যোশাল প্রগ্রেসিভ আন্দোলনের ককটেল। বাঙালি বামপন্থা-কোন মতেই মার্ক্সবাদি না। ইন ফ্যাক্ট যারা মার্ক্স ভাল করে পড়েছেন, তারা বিলক্ষন অবগত থাকবেন, মার্ক্সকে সারাজীবন এই স্যোশাল প্রগ্রেসিভ সেকশনের বিরুদ্ধেই লিখে যেতে হয়েছিল।

                                                                  (৪)

 বামেরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাইলে-প্রথমে তাদের নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে হবে। স্বীকার করতে হবে।

  এবং তারপরে বুঝতে হবে, মানুষ বামপন্থী বা ডানপন্থী হতে নারাজ। তারা বাঁচতে চাইছে। ন্যারেটিভে তাদের উৎসাহ নেই।  সুতরাং ন্যারেটিভ বর্জন করে - ইস্যুর ভিত্তিকে একজোট হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমি যে ইস্যুগুলো লিখলাম- চিকিৎসা, চাকরি, শিক্ষা-এগুলোতে দ্বিমত করার কিছু আছে কি?

  কিন্ত দ্বিমত হবে-যখন লোকে সমাধানের পথ খুঁজবে।  এখন ধনের বৈষম্য আছে বলে যদি আমি হুটহাট করে কর্পরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলাম ।  জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ান চালালাম। কি  হবে? ব্যবসা বানিজ্য-এবং তার সাথে সক্ষম জনগন রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। যা পশ্চিম বঙ্গে হয়েছে। ফেসবুকের বামেরা প্রায় কর্পরেট ট্যাক্স বা ছাড়ের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়েন-যেগুলো তাদের অজ্ঞানপ্রসূত বালখিল্যতার পরিচয়।

 সুতরাং বামেদের বিকল্প খুঁজতে হবে।  কোয়াপরেটিভ একটি ভাল বিকল্প।  ধরুন চা বাগান বন্ধ হচ্ছে। এখানে শ্রমিক আন্দোলন, রাজনীতি বৃথা। বাগানগুলো শ্রমিক কোয়াপরেটিভের হাতে তুলে দেওয়া হৌক। মাইনিং এর ক্ষেত্রেও আমি একই কথা লিখব। যেখানেই শ্রমিক শোষন বেশী-সেখানেই তা শ্রমিকদের কোয়াপরেটিভের হাতে দেওয়াই ভাল। ্ট্রেড ইউনিয়ান শ্রমিক সমস্যার কোন সমাধান না। তা হচ্ছে ঘাঁতে খুঁচিয়ে পুঁজ বার করা।  এটাই ঐতিহাসিক সত্য।

সোভিয়েতের পতনের ঠিক আগে, খনিগুলির উৎপাদন এত কমে যায়-রাষ্ট্র বাধ্য হয় শ্রমিকদের কোয়াপরেটিভ করে-সেগুলো শ্রমিকদের হাতে দিয়ে দিতে। কারন এক্ষেত্রে উৎপাদন কমলে শ্রমিকদের নিজেদের মাইনে কমবে। এই উদ্যোগের ফলে সোভিয়েত মাইনিং এর আবার উৎপাদন ফিরে আসে।

 মোদ্দা কথা ব্যক্তিমালিকানা অস্বীকার করা যেতে পারে-কিন্ত মার্কেটকে অস্বীকার করলে, মার্কেট মহাদেব ভষ্ম করবেন। এটাই রূঢ় বাস্তব।  সুতরাং কোয়াপরেটিভ আন্দোলনের মাধ্যমে বামেরা আবার জমি ফিরে পেতে পারে। কিন্ত তাদের একদম প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।

 হাসপাতাল এবং শিক্ষাকেও কমিউনিটির ভিত্তিতে ভাবতে হবে। প্রাইভেট স্কুল, প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে খোদ আমেরিকাতেই কমিনিউটি স্কুল এবং হাসপাতাল অনেক ভাল চলে। এগুলোই আসল আন্দোলন। সেসব বাদ দিয়ে হাঁসপাতালে কোয়ার্ডিনেশন কমিটি আর স্কুলে এবিটিয়ে করাটা আসলেই একটা অতিক্ষুদ্র শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষা করা। সেগুলো যদি বামপন্থা হয়, বা বামপন্থার মূল উদ্দেশ্য হয়, পশ্চিম বঙ্গ বামমুক্ত হওয়াটাই শ্রেয়।

 মোদ্দা কথা আদ্দিকালে চিন্তাধারা থেকে না বেড়োতে পারলে, বঙ্গের বিধি "নো ভাম"।

 












 

 
 
 

      

Tuesday, May 24, 2016

সিপিএম জমানার গপ্পো

সিপিএম জমানার গপ্পো
*********************
                           (১)
 সেটা ১৯৮৩ কি ৮৪। দ্বিতীয় বামফ্রন্ট জমানা। ব্যান্ডেল থেকে ট্রেনে হাওড়া যাচ্ছি। তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে।

   জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ানের দাপটে ব্যান্ডেল হাওড়া লাইনে তখন প্রায় সব কারখানায় লক আউট।  তাদের অনেকেই ট্রেনের হকারি করে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্ত সেটাও বেশ টাফ লাইফ।  যারা একটু আধটু হিন্দি বা চটুল গান করতে পারত, তাদের অনেকেই ট্রেনে গান বাজনা করে ভিক্ষা করতে লাগল।  শ্রমিক থেকে ভিখিরিতে  অধঃপতন ইতিহাসে মোটেও বিরল না-বরং পৃথিবীর সর্বত্রই হয়। বাম জমানার জঙ্গী ইউনিউয়ানবাজিতে পশ্চিম বঙ্গে ১৯৭৭ থেকে ৮৭ এর মধ্যে প্রায় ৮০% মেজর প্রোডাকশন ইউনিট হয় বন্ধ হয়, নইলে তালা ঝোলে। ছাঁটাই, লক আউট শ্রমিকদের যে কি হাল হয়েছিল-সেগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমি খুব অবাক হই -যখন দেখি বাংলার সাহিত্য, রাজনীতি কোন কিছুইতেই এই সব ছাঁটাই বাতিল শ্রমিকদের কোন স্থান নেই।

  এই ঘটনা তাদের একজনকে নিয়েই।

   শ্রমিক থেকে ভিখিরি-ট্রেনে গান গাচ্ছে-ভিক্ষে করছে-এসব তখন বিরল দৃশ্য না। সব ট্রেনেই দেখতাম। এই ঘটনাটা উল্লেখ করছি-কারন  এখনো ভুলি নি।

    সেদিন ও এক বছর ত্রিশের যুবক তখনকার হিট হিন্দি গানগুলো গাইছিল। সামনে গামছা -যে এক দুটাকা দিতে চায় দিক।

   এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা-খানিকটা স্বগতোক্তির ঢংএ বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন-জোয়ান মরদ, এইভাবে কখনো ভিক্ষে করে? গতর লাগালে পারে ত!!

  ছেলেটা ভালোই গাইছিল-হয়ত গান করে, কারখানার শ্রমিকদের থেকে আনন্দ অনেক বেশীই পায়।  কথাটা কানে যেতেই -গানফান থামিয়ে চিৎকার করে উঠল ,

  ---আরে মাসীমা-এমন করছেন যেন আপনার ঘরে কোন বেকার নেই!!!  আপনার ছেলে, ভাইপো , বোনপোর যে আমার হাল হবে না, গ্যারান্টি আছে মাসীমা?????

 গোটা ট্রেনে পিন-ড্রপ সাইলেন্স।   বোধ হয় মুহুর্তের জন্য হলেও গোটা কামরার লোকজন অনুভব করল-সব ঘরেই সক্ষম শিক্ষিত যুবক-অথচ পশ্চিম বঙ্গে তখন চাকরি নেই! চারিদিকে শুধু বেকারি।

 পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে এত শকিং- এখনো ভুলি নি।

                                   (২)

ছোটবেলায়  সিপিএম জমানার স্মৃতিচারন করতে গেলে প্রদীপকাকুর কথা সবার আগে মনে আসে। উনি আগে বাবার স্কুলের শিক্ষক সহকর্মী ছিলেন, পরে ট্রান্সফার নিয়ে মুর্শিদাবাদের লালবাগে যান। বাবা এবং প্রদীপ কাকু-দুজনেই খুব আদি কমরেড, সিপিএমের জন্মলগ্ন থেকেই একসাথে ছিলেন সিপিএমে।

        যদ্দুর মনে আছে উনি জেলাকমিটিতে তখন-পার্টি কাজে করিমপুরে আসতেন।  আসলে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন ।

  প্রদীপ কাকু আসলেই ছোটবেলায় বিশাল আনন্দ হত। কারন অন্য কিছু না-উনি প্রচুর গল্প শোনাতেন আমাকে। ব্যাটল অব স্টালিনগ্রাড, বলশেভিক রিভ্যলুউশন,  লং মার্চের সব গল্প উনার কাছ থেকে ক্লাস ফাইভ সিক্সেই শুনেছিলাম। সেসব একেকজন শ্রমিক কৃষকের আত্মবলিদানের গল্প-কিভাবে তারা আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজের দেশকে রক্ষা করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।

  সিপিএম ফ্যামিলিতে যেসব ছেলেমেয়েরা বেড়ে ওঠে এই সব রূপকথার গল্প শুনত শুনতে তাদের মনে কমিনিউজম, লেনিন, স্টালিন নিয়ে খুব উচ্চ ধারনার জন্ম হয়। স্বভাবতই তারা কমিউনিজমে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এটা না জেনে বা বুঝেই যে, এই সব আসলেই  আষাঢ়ে গল্প- ঐতিহাসিক স্ক্রুটিনি করলে অন্য সত্য সামনে আসে।

 যেমন হিটলারের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য স্টালিনকে হিরো বানানো। ইনফ্যাক্ট প্রদীপকাকু যে গল্পগুলো আমাকে ছোট বেলায় বলতেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও -- এই ফেসবুকের জমানাতেও দেখি লাখে লাখে কমিরা ওইসব রূপকথায় বিশ্বাস করে। কেউ ইতিহাসটা একটুও ঘাঁটতে রাজী না।  আজ ইন্টারনেটের জমানায় একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই যেকেউ জানতে পারবে

        (ক) ১৯৩১ সালের জার্মান নির্বাচনে স্যোশাল ডেমোক্রাট এবং কমিনিউস্টরা একসাথে হলেই, হিটলারের নাজি পার্টির উত্থান আটকে দিতে পারত। কিন্ত স্টালিনের মনে হয়েছিল স্যোশাল ডেমোক্রাটরা হিটলারের থেকেও বেশী খতরনাক!! ফলে তখন জার্মানিতে , হিটলারের বিরুদ্ধে বামেদের জোট হয় নি। এর মূল কারন স্টালিনের ভূল রাজনীতি। কেন না তখন জার্মানির কমিনিউস্ট পার্টিও স্টালিনের অঙ্গুলিহেলনেই চলত।

     (খ) ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত মিলিটারি এবং মিলিটারি টেকনোলজি দুটোই জার্মানির থেকে অনেক এগিয়ে। এর প্রমান স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পাওয়া যায় যেখানে সোভিয়েত বিমান বাহিনী, জার্মান বিমান বাহিনীকে প্রায় ৭ ঃ ১ রেশিওতে হারিয়েছিল। কিন্ত ১৯৪২ সালে হিটলার যখন সোভিয়েত আক্রমন করে, তখন সোভিয়েত মিলিটারী খরখুটোর মতন উড়ে যায়। কি করে মাত্র পাঁচ বছরে জার্মান মিলিটারি সোভিয়েতের চেয়ে এত এগিয়ে গেল?? এর মূল কারন স্টালিন নিজে। উনি সেনাবাহিনীর বিশুদ্ধিকরন করতে গিতে ৯০% সক্ষম জেনারেলদের খুন করেছিলেন, যা ইতিহাসে গ্রেট পার্জ নামে খ্যাত। শুধু তাই না-সোভিয়েতের সক্ষম বিজ্ঞানীদের ও সাইবেরিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। স্টালিনের হঠকারি কমিনিউস্ট কাজে শক্তিশালী সোভিয়েত বাহিনী অনেক দুর্বল হয়ে ওঠে-যার নমুনা হিটলার পেলেন যখন সোভিয়েত ফিনল্যান্ড আক্রমন করে নাকানি চোবানি খেল। ফিনল্যান্ডের যুদ্ধে সোভিয়েত সেনাদের বাজে পারফর্মেন্সের ফলে হিটলার বুঝতে পারেন, গেট পার্জের ফলে সোভিয়েত মিলিটারীর ভগ্নদশা। ফলে উনি আক্রমনে উৎসাহি হলেন।  যদি স্টালিন গ্রেটপার্জের মতন কমিনিউস্ট কালিদাসি বুলডোজার না চালাতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ান ১৯৪২ সালে জার্মানীর থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবেই থাকত-হিটলার কোন মতেই সোভিয়েত আক্রমনের সাহস পেতেন না।

 অর্থাৎ হিটলারের উত্থান এবং সোভিয়েত আক্রমনের পেছনে স্টালিনের অবদান সর্বাধিক।  স্টালিন সেই অর্থে আরেক ভিলেন-হিরো নন। অথচ গল্পগাছা রূপ কথা আধাসত্য চালিয়ে, তাকে হিরো বানিয়ে দিল কমিনিউস্টরা।

 আমি শুধু কমিনিউস্টদের দোষ দিই না। হিন্দু ফ্যামিলিতেও এই ভাবে হিন্দুবীরদের নিয়ে মিথ ছড়ানো হয়। মুসলমান ফ্যামিলিগুলোতেই তাই। বাংলাদেশে বখতিয়ার খিলজীর মতন লুঠেরা ডাকাত হচ্ছে জাতীয় বীর!!  এই ভাবে আস্তে আস্তে বাল্যমনে গেঁথে দেওয়া হয় "সুপিরিওরিটির" মিথ-কল্পকাহিনী। এইভাবেই ফ্যামিলি কালচারে তৈরী হয় কমিনিউস্ট হিন্দুত্ববাদি এবং ইসলামিস্টরা।  কারন পরবর্তীকালে কেউই আর ধৈর্য্য ধরে ইতিহাসটা ঘেঁটে পড়ার চেষ্টা করে না।

   তবে আশার কথা জমানা পালটাচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে জ্ঞানের সোর্স গুগল, ইউটিউব এবং উইকিপেডিয়া-যা অনেক বেশী নিরেপেক্ষ এবং যেখান থেকে তারা সব ধরনেই পারস্পেক্টিভ পাবে।

 ফলে আগামী প্রজন্মে এইসব কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট -ইত্যাদি ইস্ট দেবতায় তুষ্ট বালকের দল থাকবেন না বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কারন এদের অস্তিত্ব মিথের -রূপকথার গল্পের ওপর দাঁড়িয়ে।






   

Sunday, May 22, 2016

সিপিএম এবং মাস্টারমশাই ক্লাস!

সিপিএমের পতনে যাদের দুঃখে পেট এবং হৃদপিন্ড ফেটে যাচ্ছে, তাদের জন্য দুচার লাইন !
************
    আমি মনে করিনা, ১৯৭৭ সালে যে পার্টিটাকে চিনতাম এটা সেই পার্টি। ১৯৭৭ সালে সিপিএম যখন ক্ষমতায় আসে আমার বয়স চার। তখনো পার্টিতে শিক্ষকদেরই প্রাধান্য। কিন্ত এইসব শিক্ষকরা চরম দারিদ্রের মধ্যে লড়াই করতে করতে উঠে এসেছেন। আমার বাবা মাও ছিলেন সেই কাতারের শিক্ষক যারা জীবন সংগ্রামের শিক্ষা বই এর পাতা থেকে না-জীবন থেকেই নিয়েছেন । তখন কংগ্রেসের আমলে শিক্ষকদের বেতন ছিল খুব কম এবং তাও চার থেকে ছমাস বাদে পেত শিক্ষকরা।

     যেহেতু শিক্ষক শ্রেনী ছিল সিপিএমের ভিত্তি,বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে প্রথমেই শিক্ষকদের বেতনক্রম এবং নিয়মিত বেতনের ওপর জোর দেয়। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কারন প্রতিটা পার্টীই তার বেসকে দেখে ( আমেরিকাতেও )। তাছারা শিক্ষকরা জাতির মেরুদন্ড।  এগুলো সিপিএমের ভাল কাজ।

     কিন্ত সিপিএম যেটা ভুল করে বসল-সেটা হচ্ছে পার্টির কোটেরি বা ভরকেন্দ্র-সেখানে না থাকল ব্যবসায়ী, না শিল্পপতি, না শ্রমিক, না কৃষক। এজ ইফ শিক্ষকরা সব জানেন। ভাল ভাল সব পরিকল্পনা হয়েছে-কিন্ত কোনটাতেই লিডারশিপ বা প্ল্যানিং ছিল না। কারন শিক্ষক নেতৃত্বের পক্ষে ওসব লিড করা সম্ভব ছিল না।

  আরেকটা মারাত্মক ভুল,  হাসপাতালের মতন সার্ভিস সেক্টরে তাদের পেটোয়া কোয়ার্ডিনেশন কমিটিগুলির হাতে পরিচালনার ভার সম্পূর্ন তুলে দেওয়া। অবস্থা এতটাই বাজে ছিল-আমার যারা ডাক্তার আত্মীয় ছিলেন, তারা ক্লাস ফোর স্টাফ বা নার্সদের বকতে ভয় পেতেন। সরকারি হাসপাতালগুলো মাত্র পাঁচ বছরের মধেই নরকে পরিণত হয়-কারন সরকারি স্টাফেরা বুঝে গেছে পার্টিতে মিটিং এ মিছিলে মুখ দেখাতে হবে। কাজের কোন দাম নেই। আর এর পরিনতি হল, মহান কমিনিউস্ট নেতা জ্যোতিমোষ সহ পার্টির উচ্চনেতাদের কেওই সরকারি হাসপাতালে নিজেরাই ভর্তি হতে সাহস পেলেন না!  ফলে সিপিএমের ওই আইডিওলজিক্যাল গ্রাউন্ড যে সম্পূর্ন পাতলা পায়খানা সেটা কিন্ত বামফ্রন্ট শাসনের প্রথম দশ বছরেই পরিস্কার হয়। মুখে বলব সমাজতন্ত্রের কথা, আর এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও নিজেরা যাব প্রাইভেট হাসপাতালে-আর ছেলে মেয়েদের পড়াবো প্রাইভেট স্কুল কলেজে-এই ধরনের কাজ করলে, একজন সমাজতন্ত্রী আর ক্লাউনের মধ্যে কি পার্থক্য থাকে? আপনি আচরি ধর্ম না হলে সবটাই জোকারগিরি।

 প্রথম দুই বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় দুবৃত্তায়ন হয় নি। কিন্ত বাজারে চাকরি ত নেই। সব অফিস কোলকাতা ছেড়ে মুম্বাই এ চলে গেছে প্রথম পাঁচ বছরেই। এদিকে স্কুলের চাকরি লোভনীয়। ফলে স্কুল কলেজের চাকরিতে স্বজন পোষন শুরু হল । এইখান থেকেই পার্টির পচনের ১০০% শুরু। এইখান থেকেই পার্টির সম্পূর্ন ফোকাস হয়ে দাঁড়াল কিভাবে নিজেদের লোকেদের চাকরি দিয়ে ভবিষ্যত নিশ্চিত করা যায়। শিল্পায়ন নিয়ে কোন চিন্তাই নেই! প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে ছড়ানোর অনেকগুলো মঞ্চ প্রথম এবং দ্বিতীয় বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় কাজ করেছে । যেমন যুবকল্যান মঞ্চ। এরা বহুদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রগতিশীল আদর্শগুলোকে ছড়ানোর চেষ্টা করেছে এক সময়। কিন্ত ওই যে-আস্তে আস্তে পচন শুরু হওয়ার পরে-সব কিছুই ধ্বংস হয়। আলটিমেটলি পার্টিটা ছিল-কিভাবে রিগিং করে জিততে হবে-আর নিজেদের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরি পাওয়াতে হবে। শিক্ষা, কৃষি, প্রগতিশীল চিন্তা-এই সব নিয়ে একটু আধটু হোলদোল প্রথম দশ বছরে দেখতাম। আস্তে আস্তে সব কিছু হারিয়ে সিপিএম মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের স্কুল আর সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার পার্টিতে পরিণত হয়।

 একেতে অশোক মিত্রর মতন মহান পন্ডিতরা তাত্ত্বিক ভাবে পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত প্রজন্মের পেছন মেরে গেছেন- তবে পার্টির লোকগুলো তখনো ভদ্রলোক। কিন্ত ১৯৮৮-৯০ এর পরে যেসব ক্যাডার ঢুকল বেনোজলের মতন-সব হার্মাদ। ১৯৯৬ সালে এস এফ আই এর জাতীয় সম্মেলনে গিয়ে উঠতি ছাত্রনেতাদের সাথে তিনদিন থাকার অভিজ্ঞতা হয়।  সব থেকে নিকৃষ্ট মানের ছাত্রপ্রতিনিধি ছিল পশ্চিম বঙ্গের। যেগুলো পাতি পাড়ার মস্তান। কিন্ত পাঞ্জাব, কেরল, অন্ধ্রের কমরেড ছাত্ররা ছিলেন বেশ আদর্শবাদি এবং শিক্ষিত।  আমি সেদিনই বুঝেছিলাম, পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম একদিন না একদিন শেষ হবেই। তবে ভারতে শেষ হবে না। এমন  গরীব দেশে কমিনিউজমের একটা প্রয়োজনীয়তা এবং এপিল থেকে যাবেই।

 যে সিপিএম এখন টিকে আছে তা ১৯৭৭ এর ছায়া ছাড়া কিছু না। সেই ১৯৭৭ সালেও সিপিএম যে খুব কর্মদক্ষ পার্টি ছিল তা না। কারন পার্টির র‍্যঙ্ক আন্ড ফাইলে ব্যবসা, শিল্প এবং কৃষি বোঝার মতন নেতা তখনো ছিল না।  কিন্ত তখন  লোকগুলো সৎ ছিল-জেনুইন দারিদ্রের সাথে যোগ ছিল তাদের।

  যাইহোক, সিপিএমের পক্ষে আর ফেরা সম্ভব না এই রাজ্যে। কারন তাদের বাম স্পেসটা মমতা ব্যানার্জি সম্পূর্ন ভাবেই নিয়ে নিয়েছেন। সিপিএমের বেসটাই চলেগেছে তৃনমূলে এবং রিভার্স সিফটের সম্ভাবনা নেই-কারন সিপিএম তার বেসটাকে ইগনোর করেছে প্রায় কুড়ি বছর।

 সব পার্টিরই মৃত্যু হয়। সিপিএম তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। ডেভিল হ্যাজ প্লেইডস ইটস রোল।  পার্টি অফিস গুলো, যার অধিকাংশ বেয়াইনি, সেগুলো পার্টির তরফ থেকেই কোচিং সেন্টার বা বিজনেস সেন্টারে পরিনত করার অনুমতি দিক পার্টি। জনগণের বিরুদ্ধে যে পাপ তারা করেছেন, পার্টিঅফিস গুলো জনগনের ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়ে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুন তারা।

Friday, May 20, 2016

পতন যখন আসে নিঃশব্দে

সিপিএম -আত্মঘাতি বাঙালীর ইতিহাস
                                      (১)
 ২১ ই আগস্ট, ১৯৯১। মস্কোতে ট্যাঙ্ক ঘিরে ফেলেছে ক্রেমলিনের প্রাসাদ। হার্ডলাইন কমিনিউস্ট নেতারা গর্বাচেভকে তার ক্রিমিয়ার সামার রিসর্টে গৃহবন্দি করে বিশুদ্ধ কমিনিউজম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মিলিটারী ক্যু ঘটিয়েছেন। জনগণ পালা করে পাহারা দিচ্ছে বরিস ইয়েটসলিনের গণতন্ত্রপ্রেমী রাজনৈতিক নেতাদের। কেজিবির ওপর নির্দেশ এল, মেশিনগান নিয়ে ঢুকে বিদ্রোহি গণতন্ত্রকামী নেতাদের ১০০% ডাইল্যুউশনের।  ফিনিশ দেম। সেভ কমিউনিজম!

   এই অধ্যায়ে কেজিবির হেড তাদের কমরেডদের জিজ্ঞেস করলেন-তোমরা কি চাও? সেই কমিনিউস্ট জমানায় ফিরে যেতে যেখানে পার্টির অঙ্গুলি হেলনে কারনে অকারনে খুন করতে হয়, বন্দি করতে হয়-নাকি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাশিয়া? কজন বরিস ইয়েসলিনের ( তখন বরিস ইয়েসলিন রাশিয়ান ফেডারেশনের হেড) দলবলকে খুন করতে রাজী আছ?

     একজন কেজিবি এজেন্ট ও এগিয়ে এল না।

 কি করে আসবে? তারা দেখেছে রাশিয়া দুরাবস্থা। কোথাও খাবার নেই। সর্বত্র স্ট্রাইক। গত কুড়ি বছর ধরে একটা দেশের অর্থনৈতিক প্রগতি নেগেটিভ।

  সেই মুহুর্তটাই কমিনিউস্ট নামক দানবটির মৃত্যুক্ষন।  এরপর যা ঘটেছে সোভিয়েতের পতন, ইস্টার্ন ব্লকের পতন,পশ্চিম বঙ্গের কমিনিউস্টদের পতন-সবটাই সেই মৃত্যুর পরে, দানবটার আস্তে আস্তে একেকটা অর্গান শুকিয়ে আসা। নতুন করে মৃত্যু না। মৃত্যু অনেক আগেই ঘটেছে। সেই ২১শে আগস্ট, ১৯৯১।

  এর আগে পর্যন্ত, মিথ্যে প্রচারে আমরা বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম সোভিয়েত ইউনিয়ান হচ্ছে স্বর্গরাজ্য। কেন কমিউনিজম? ছোটবেলায় আমাদেরকে দেখানো হত -সোভিয়েত ইউনিয়ান। এক স্বপ্নরাজ্য। সেই প্রপাগান্ডার জন্য মির পাবলিকেশন থেকে আসত বাংলায় অনুদিত প্ত্রিকা সোভিয়েত ইউনিউয়ান। বিনা পয়সায় মাসে একদিন। অবিশ্বাস্য পেপার এবং প্রিন্টিং কোয়ালিটি। ওই প্রিন্টিং কোয়ালিটি দেখেই কমিনিউজমের প্রতি বিশ্বাসে মাথা নীচু হয়ে আসত! তার ওপরে আছে অবিশ্বাস্য সব ছবি সোভিয়েতের লাইফ-স্টাইলের। সুইমিং পুল, টেনিস , ডিস্কো-রেস্টুরেন্ট। কে জানত তখন ওই লোকগুলো মাত্র দুশো গ্রাম বাটারের জন্য রেশনের লাইনে মারামারি করে মাথা ফাটাচ্ছে?

      অথচ কোনদিনই তখন জানতাম না, যাসের অবিশ্বাস্য পরিশ্রমে বেড়োচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ান, তাদের পেটে রুটি নেই।  খাদ্য সংকট এত তীব্র হয় রাশিয়ায়, ১৯৮৯ সাল থেকে রেশন চালু করতে বাধ্য হয়েছিল সরকার ।

 ১৯৯১ সালের  ডিসেম্বর মাসে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ান ধ্বংস হয়,  পৃথিবীর সমস্ত দেশের কমিনিউস্ট পার্টিগুলির মৃত্যুদিন সেদিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল। ওই ১৯৯১ সালের পরেও যে পশ্চিম বঙ্গে একটা কমিনিউস্ট পার্টি এখনো ২৫ বছর টিকে আসে-এই বিশ্লেষনটা করা দরকার আছে। কমিনিউজমের মৃত্যু মানে অবশ্যই বামপন্থার মৃত্যু না। কিন্ত ওই লেনিনবাদি পার্টি স্বর্গ, পার্টি মর্ত্য টাইপের আবাল আদর্শবাদ পয়দা  করে একটা জাতিকে সম্পূর্ন ধ্বংশ করার আত্মঘাতি রাজনীতি ১৯৯১ সালের পরেও কিভাবে ২৫ বছর বাংলায় টিকে গেল-তার সম্পূর্ন কৃতিত্ব প্রাপ্য ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের।

                                                                       (২)
১৯৯১ সালের মধ্যেই, জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ানের দৌড়াত্মে পশ্চিম বঙ্গের শিল্প সম্পূর্ন মৃত্যুমুখে পতিত। ব্যান্ডেল থেকে হাওড়া যেতে গঙ্গার দুইধারে সারি সারি কারখানার কংকাল। ট্রেনে ভর্তি ভিখিরী-হকার। যারা এককালে ছিল কারখানার শ্রমিক। কিন্ত ১৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনে পুলিশ, এডমিনিস্ট্রেশনে সর্বত্র সিপিএম। কেন্দ্রের কংগ্রেসের কোন দায় নেই সিপিএমকে বাংলা থেকে সরানোর। কারন লোকসভায় কংগ্রেসের দিল্লী হাইকমান্ডের কাছে জ্যোতিবাবু যতটা প্রিয়ছিল- প্রিয়রঞ্জনরা ছিলেন না।  বাংলার লোকেরাও যে তরমুজ কংগ্রেস নেতাদের ওপর ভরসা করতে পারছে -এমন না। ব্যাপক ছাপ্পা আর পঙ্গু কংগ্রেস নেতৃত্বের ফলে জ্যোতি বসুর মতন একজন মধ্যম মেধার মাথামোটা লোক, পশ্চিম বঙ্গে রাজত্ব করে গেল কুড়ি বছর। জ্যোতি মোষ ( ওটাই আমাদের চালু নাম) রাজত্ব করেছে বললে ভুল হবে। জংগী ট্রেড ইউনিয়ানের বুলডোজার চালিয়ে পশ্চিম বঙ্গকে ধ্বংস করছে।  ওই লোকটাই পশ্চিম বঙ্গের শিল্পের কালাপাহাড়।

  আমরা বড় হচ্ছি-ক্লাস সিক্স থেকে ইংরেজি। তার থেকেও মারাত্মক, সব কারখানাতেই লক আউট। নতুন কোন শিল্প আসছে না।  যেগুলো ছিল, সব আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।  এইঅবস্থায় কিছুটা আশার সঞ্চার হয় কম্পিউটার এবং সফটোয়ার আউটসোর্সিং এ। কিন্ত বাধ সাধলেন জ্যোতিবসু। পশ্চিম বঙ্গে কম্পিউটার ব্যবহারে অলিখিত নিশেধাজ্ঞা আসে ট্রেড ইউনিয়ানের মাধ্যমে। উনি জানালেন কম্পিউটারের ব্যবহারের ফলে প্রচুর কেরানী চাকরি হারাবে।

     এই সময়ের একটা ঘটনা বলি। আমি তখন আই আই টিতে দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র। আমার এক বন্ধু কোলকাতার একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ইন্টার্নশিপ করছে সামারে। আমি ইন্টার্নশিপ করতাম সাহা ইন্সিটিউটে।  ওর কারখানাতে গেছি একদিন। দেখি ও ফার্মের কম্পিউটারে চুটিয়ে ভিডিও গেম খেলছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম -কিরে এই কোম্পানীতে লোকে কম্পিউটার ব্যবহার করছে না?

  ও বললো, না। ট্রেড ইউনিয়ানের নির্দেশ আছে-কেউ যেন কম্পিউটার ব্যবহার না করে। তাই কর্মীরা এতে ভিডিও গেম খেলে। ফলে যা হওয়ার তাই হল। আই টি শিল্পে এগিয়ে গেল ব্যাঙ্গালোর, নয়দা, হায়দ্রাবাদ। কোলকাতা পেল শুন্যে শুন্য।

  আশা করি বুঝতে পারছেন জ্যোতি বসু এবং অশোক মিত্রের মতন  বামপন্থী নেতারা সেকালে কি লেভেলের গাধা ছিল এবং কিভাবে তাদের একের পর এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়েছে আমাদের প্রজন্ম। বামপন্থী তাত্ত্বিক গাধামো এতটাই ক্ষতিকর, এবং আমাদের প্রজন্ম সেই গাধামোর জন্য এতটাই সাফার করেছে, পশ্চিম বঙ্গের শাসন ক্ষমতা থেকে এই "ভদ্রলোক" বামপন্থী বুদ্ধিজীবি ক্লাসটাকে ছুঁড়ে না ফেলে দিলে, এই রাজ্যের কোন ভবিষ্যত থাকা সম্ভব না।

  ভাববেন না আমি বামপন্থী বিরোধি কেউ। কিন্ত পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের মাধ্যমে যে বামপন্থী ক্লাসের সৃষ্টি হয়েছে, সেটি আদ্যপান্ত একটি  পরজীবি বুর্জোয়া ক্লাস । যাদের পেটে না আছে বিদ্যা । মাথায় না আছে বুদ্ধি। না আছে চাষের জমিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা। না কারখানায় কাজ করার শিক্ষা। না কিভাবে ব্যবসা করতে হয়, তার নো-হাও।  এদের মোক্ষ স্কুল কলেজের একটি সিকিউরড চাকরি! সেটা বাগিয়ে সর্বত্র সাংস্কৃতিক বালামো করা-এই হচ্ছে তখনকার এবং  বর্তমানের সিপিএমের পেডিগ্রি।

  এই নয় যে গ্রাম খুব এগোচ্ছে তখন ।  ওপারেশন বর্গার ফলে একটা স্বচ্ছল কৃষি সমাজ তৈরী হয়েছে। কিন্ত সবার ছোট ছোট জমি।  কারুর হাতে পুঁজি নেই যে গ্রামে ছোট ছোট কৃষি ভিত্তিক কারখানা করবে।  কৃষি থেকে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের উত্তোরনের জন্য দরকার ছিল কোয়াপরেটিভের। সেসব হল না । ফলে গ্রামে যাদের তিনটে চারটে করে ছেলে মেয়ে-অনেকেই বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অন্য রাজ্যবাসী হতে বাধ্য হয়েছে বহুকাল আগেই।

 এর পরেও সিপিএম টিকেছে বেশ কিছুদিন। বুদ্ধ এসে অবস্থা আঁচ করেছিলেন। ভদ্রলোক ভালোই চেষ্টা করেছিলেন। জনগণ তাকে দুহাত তুলে ভোট ও দিয়েছিল। কিন্ত যারা ব্যবসা বোঝেনা, তারা যদি রাতারাতি শিল্প তৈরী করতে যায়, দালালদের খপ্পরে যাবেই। বুদ্ধর ও সেই হাল হল। কোলকাতার শহর তলিতে গজিয়ে ওঠে জমি হাঙর। যারা পার্টির সিলমোহরে, চাষীদের ভয় দেখিয়ে জমি কারতে শুরু করে। তবে সব থেকে বড় ক্ষতিটা তদ্দিনে করে দিয়েছেন প্রকাশ কারাত। ইউএস ভারত নিউক্লিয়ার ডিলে জন্য ইউ পি এ থেকে বেড়িয়ে এসে।

   প্রকাশ কারাতের মতন সিপিএমের নেতারা কতটা নির্বোধ-সেটা যদি জানতে চান-শুধু এই তথ্যটা জানুন। আমেরিকা-ভারত নিউক্লিয়ার ডিল সাইনের  ১০ বছরের পরেও কোন আমেরিকান বহুজাতিক ভারতে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট খোলে নি। অথচ এই আমেরিকান বহুজাতিকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, প্রকাশ কারাত। সাথে সাথে সিপিএম। এদিকে ডিল সাইনের দশ বছর বাদেও কোন আমেরিকান বহুজাতিকদের দেখা নেই নিউক্লিয়ার সেক্টরে!!


   অর্থাৎ ভুতের সাথে যুদ্ধ করে আত্মঘাতি হয়েছিলেন প্রকাশ কারাত।  ডুবিয়েছিলেন বুদ্ধকে। সিপিএম পার্টিটাকে।

  এই সব বাম নির্বোধরা, তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য ডুবলে আনন্দই পাই। কিন্ত মুশকিল হয় যখন এই নির্বোধরা ক্ষমতায় বসে সফটোয়ার শিল্পকে শুরুতেই ধ্বংস করে।

  আমি এই জন্যেই লিখেছিলাম-পশ্চিম বঙ্গের উন্নতির প্রথম শর্ত সিপিএম  "ভদ্রলোক" মুক্ত পশ্চিম বঙ্গ।  সেটা এই নির্বাচনে ঘটেছে। এবার এগোবে পশ্চিম বঙ্গ।



 










Thursday, May 19, 2016

ভূত এবং বাংলার রাজনীতির ভবিষ্যত


                      (১) বিরোধি রাজনীতির ভবিষ্যতরেখা ঃ 

জোট ঘোঁটে সিপিএমের লাভ-ক্ষতি নিয়ে চারিদিকে প্রচুর জটলা। কিন্ত কঠিন বাস্তবটা সিপিএমের কেউ মেনে নিতে চাইছে না।

  একজন নির্বোধ ও বোঝে,  পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতি এখন বাই-পোলার। হয় মমতার পক্ষে নইলে বিপক্ষে। আগে যেমন ছিল হয় সিপিএম না হলে এন্টিসিপিএম। এর মাঝখানে হিন্দুত্ববাদি,  দিল্লীর কংগ্রেস, বিশুদ্ধ বিপ্লবী কমি-কেউ হুল ফোটাতে পারে নি। কারনটাও স্বাভাবিক। বাইপোলার রাজনৈতিক বিন্যাসে ভোটের ময়দানে টিকতে গেলে, দুই পোলের মধ্যেই থাকতে হবে। নইলে আউট।

       সুতরাং বৃন্দাকারাত, বিমান বোস চান বা না চান-সিপিএমকে মমতা বিরোধি জোটে থাকতেই হবে। আর যদি সেই জোটে সিপিএম না যায়, তাদের ভবিষ্যত সুসি। ২০২১ এ একটাও সিট পাবে না। ওইসব বালছালের কমি আদর্শ দেখে এই রাজ্যে ভোট হবে না-হবে আপনি মমতার পক্ষে না বিপক্ষে। সিম্পল-ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট। মমতার পক্ষে-বিপক্ষের বাইরের কোন স্পেক্ট্রাম পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে আর নেই-আগে যেমন সিপিএমের পক্ষে-বিপক্ষের বাইরে কিছু ছিল না। এটাই পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতির আজ শেষ কথা।

  একই কথা বিজেপির জন্যও সত্য।  অমিত শাহ পরিস্কার ভাবেই তিনো বিরোধিতায় যেতে চান না। ফলে এই রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যত শুন্য।  আবার যদি ধরা হয় বিজেপি আলাদা ভাবে তিনো বিরোধিতায় নামল। তাহলে যদ্দিন না পর্যন্ত, তারাই ক্রেডিবল মমতা বিরোধি পার্টি-তদ্দিন পর্যন্ত কিস্যু হবে না। কারন মমতা বিরোধিরা চাইবে, বিরোধি ভোট একটা বাক্সে জমা হোক।

  সিপিএম এন্টি-সিপিএমের দিনেও বিজেপির হাল ছিল একই। ওই বাই-পোলার রাজনীতির দুনিয়ায়, দুটোপোলের মধ্যে একটাতে না থাকলে ১০% ভোট আর ৫ টা সিটই অনেক বেশী। এর বেশী এগোবে না পার্টি।

 মমতা এবং মমতা বিরোধি এই বাইপোলার জগতে মমতার কিছু আনফেয়ার এডভ্যান্টেজ আছে।  যেমন তৃণমূল আঞ্চলিক দল-এবং মমতার সিদ্ধান্তই ফাইনাল। ফলে তৃনমূল কখনোই দিল্লী, সেন্ট্রাল কমিটি এইসব নিয়ে টাইম নষ্ট করে না। বাকী অধীর, সূর্য্যকান্ত এবং দিলীপের অনেক দিল্লী ট্রাকশন।

 সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-কেওই আলাদা ভাবে মমতাকে হারাতে সক্ষম না।  অন্যদিকে বিজেপির ১০% ভোট ব্যাঙ্কটা দরকার মমতা বিরোধি শিবিরের।

 তাহলে ভবিষ্যতে মমতা বিরোধি পোলের বিবর্তন কি ভাবে হবে?

  ইনফ্যাক্ট -একটাই সমাধান আছে। সেটা হচ্ছে অধীর বা অশোকের নেতৃত্বে বাংলা বাঁচাও মঞ্চ টাইপের মমতা বিরোধি "পার্টী" ।

              জোটের ঘোঁটে কিছু হবে না। নতুন আঞ্চলিক পার্টি না হলে মমতাকে রোখা অসম্ভব।  কংগ্রেস বা বিজেপির কেও কোনদিন সিপিএমকে ভোট দেবে না। সেটা এই জোটেই পরিস্কার।  নিজেদের পার্টিতে থাকলে অধীর এবং অশোকের কোন রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই। এই ধরনের বাংলা বাঁচাও পার্টি হলে, সেই পার্টিটা মমতা বিরোধি ভোটের সবটা পাবে। ঠিক যেমন ভাবে মমতা সিপিএম বিরোধি ভোট নতুন পার্টির তলায় একত্র করেছিলেন-তাতে বাম, ডান, বুর্জোয়া সবাই সামিল হতে পেরেছিল। জোটে বিরোধি ভোট একত্র করা মুশকিল আছে। কিন্ত নতুন একটা পার্টি তৈরী হলে-যার একমাত্র বুলস আই মমতা বিরোধিতা-সেই পার্টি কিন্ত হিন্দুভোট, বামভোট , বুর্জোয়া ভোট একত্র করতে পারে।

    মমতাকে হারাতে চান ২০২১ সালে? ওয়েল মমতাকেই অনুসরন করুন।  মার্ক্স, গান্ধী, শ্যামাপ্রসাদের ভূতেদের সাহায্যে বিরোধিরা জিতবে না।

                      (২)

বিজেপির ভবিষ্যত ঃ
   নেই। আগেই লিখেছি-বাংলা এখন মমতা বনাম মমতা বিরোধিদের বাইপোলার ওয়ার্ল্ড। আপনি হয় এর ভেতরে নইলে বাইরে। কালিয়াচকের দাঙ্গার কারনে একটা সিট তুলেছে মুসলিম ভোটের বিভাজনের কারনে। ওই একটা সিটেই হিন্দুভোট কনসলিডেশনের আভাস আছে। সেটা ভবিষ্যতের মডেল হতে পারে ? মনে হয় না।

আরএসপি, সিপিয়াই, ব্লক-সরকারি বামেরা ?

  মমতা বিরোধি বাংলা বাঁচাও পার্টি তৈরী না হলে , এদের বিধায়কদের প্রায় সবাই মমতা ক্যাম্পেই জয়েন করবে। যেখানে রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই সেখানে কেউ থাকে না।

 বিপ্লবী বামেরা ? 
    কিস্যু যায় আসে না। তারা তাদের <১% ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্কুল কলেজে নতুন মুর্গীর সন্ধানেই বাকী জীবন কাটাবেন।
    

কংগ্রেস ?
  গোটা দেশে কংগ্রেস এবং গান্ধী ফ্যামিলি ভিত্তিক রাজনীতি এখন অপ্রাসঙ্গিক। বাংলা বাঁচাও টাইপের নতুন পার্টি ছাড়া কংগ্রেসের নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত শুন্য।


 সিপিএম ?
  এ রাজ্যে সিপিএমের এখনো ১৫-২০% কমিটেড ভোটবেস আছে। সেটা কম না। কিন্ত এই বেসটা মমতা বিরোধি রাজনৈতিক পোলের অংশ না হতে পারলে, টিকবে না। এবং জোট তার সমাধান না। পার্টিটা খোল নলচে বদলাতে হবে। সম্পূর্ন ভাবে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে এদের। যার ভিত্তি হোক কোয়াপরেটিভ মুভমেন্ট, লোকাল গভর্ন্যান্স, সরকারি চিকিৎসা এবং সরকারি শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন। এই মহুর্তে সিপিএমের নেতৃত্ব এবং বেসটি একটি সুবিধাবাদি ভদ্রলোক ক্লাসের লোকজন-যারা স্কুলের চাকরি চান। এই অবস্থা চলতে থাকলে পার্টিটা তুলে দেওয়া ভাল। গৌতম দেব, অশোক বাবুরা যদি এটা বোঝেন-পার্টির ভবিষ্যত নেই-সুতরাং তাদের নিজেদের ভবিষ্যত হচ্ছে একটা মমতা বিরোধি পার্টি তৈরী করা সমভাবাপন্ন কংগ্রেসীদের নিয়ে-তবেই সিপিএমের সমর্থকদের কিছু আশা ভরসার স্থল তৈরী হতে পারে।  আদারওয়াইজ সিপিএম ইজ ডেড।


                           (৩)

  শিল্প এবং চাকরির ভবিষ্যত ঃ
 অবশ্যই ভাল হবে। আমি চাইনা কোলকাতায় সবুজ ধ্বংস করে ব্যাঙ্গালোর গুরগাঁও এর মতন গুচ্ছ গুচ্ছ কোম্পানী এবং ভাল চাকরি আসুক। এবং তারপরে মাত্র দশ বছরে জলের লেভেল নেমে গিয়ে শহরটাই ধ্বংশ হৌক।

 গত ৩৪ বছরে সিপিএম রাজ্যটাকে ছিবড়ে করে দিয়েছিল শ্রমিক আন্দোলনে। সবাই এই রাজ্যকে ভয় পেত শ্রমিক আন্দোলনের কারনে। স্ট্রাইকের পর স্ট্রাইক ডেকে রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। কে আসবে এই রাজ্যে শিল্প গড়তে?

 মমতা ব্যানার্জি শ্রমিক আন্দোলন এবং নির্বোধের বন্ধ সংস্কৃতি আটকেছেন সফল ভাবে। শিল্প স্থাপনের এটা ছিল প্রথম শর্ত।  সেই শর্ত এখন পশ্চিম বঙ্গে বিদ্যমান। পশ্চিম বঙ্গে বামেরা ধ্বংশ না হওয়া পর্যন্ত কিস্যু হত না। সেটা হয়েছে। এখন ইনভেস্টমেন্ট আসবে।

  এবার দরকার দ্বিতীয় শর্তে। আইন শৃঙ্খলা এবং সিন্ডিকেটের হাত থেকে শিল্পকে বাঁচানোর। শেষের দিকে এই কাজটিও ভাল ভাবেই করেছেন মমতা।  একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। শিল্প না আসলে সিন্ডিকেটের ও ইনকাম নেই। কোলকাতার রিয়াল এস্টেট মার্কেট ধ্বংস। ৪০ থেকে ৬০% দাম কমেছে বাড়ির। স্পেকুলেশনের জন্য কেউ আর ফ্ল্যাট বানাচ্ছে না। সিন্ডিকেটই বা টাকা পাবে কোথাথেকে?

 সুতরাং এস এই জেড মানা ছাড়া মমতার হাতে দ্বিতীয় কোন গতি নেই।  পার্টির্ব আভ্যন্তরীন চাপেই উনি সিলেক্টিভলি মেনে নেবেন।

  যেটা বেশী দরকার-সেটা হচ্ছে বাঙালীদের মধ্যে থেকে আন্তারপ্রেনার তুলে আনা-উদ্যোগপতি তৈরী করা। প্রান্তিক শহর গুলিতে ছোট ছোট কারখানা খুলুক। ৩৪ বছর ধরে লাল ঝান্ডার ভয়ে সেসব হয় নি। অনেকে ভয়ে তাদের ছোট কারখানা সম্প্রসারন করতেন না। তারা আশাকরি এবার সাহস পাবেন যে সিপিএম এখন শেষ-শ্রমিক আন্দোলনের ভয় নেই।


 এই রেজাল্ট পশ্চিম বঙ্গের জন্য পজিটিভ। ভীষন ভাবেই পজিটিভ। বাম শক্তির সম্পূর্ন ধ্বংস ছাড়া  রাজ্যের প্রগতি ছিল অসম্ভব। সেটা এখন ১০০% এচিভড। সুতরাং এবার শুধু গড়ার পালা।




   



















       

Tuesday, May 17, 2016

পশ্চিম বঙ্গে আধুনিক শিল্প স্থাপনের সমস্যা

কাল পশ্চিম বঙ্গের মসনদে যিনিই বসুক না কেন, আগামী পাঁচ বছরে পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের হাল না ফেরালে, ২০২১ সালে সেই পার্টি ক্ষমতায় ফিরবে না। আমি নিশ্চিত মমতা ব্যানার্জি এবং সূর্য্যকান্ত মিশ্র দুজনেই যথেষ্ট অবগত যে এই রাজ্যের জনগণ চাইছে-খুব বাজে ভাবেই চাইছে নতুন চাকরীর সৃষ্টি । কিন্ত শিল্প বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পশ্চিম বঙ্গের বেহাল অবস্থা এখনো কাটে নি।  ধার করে স্কুল আর আফিসের চাকরি দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।

               মূল সমস্যা ইনফ্রাস্টাকচার খুব দুর্বল। আই টির জন্য ভাল অফিস স্পেসের আকাশছোঁয়া ভাড়া। সেক্টর ফাইভের প্রাইম স্পটগুলো এখন ফিনিশড অফিসের জন্য পার স্কোয়ারফিট সব কিছু মিলিয়ে ৬০-৮০ টাকা পার স্কোয়ারফুট। যেখানে সমমানের অফিসের খরচ ব্যাঙ্গালোরে ৩০-৪০ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফুট। 

   সেক্টর ফাইভে অধিকাংশ স্ট্রাকচার আনফিনিশড। আনফিনিশড স্ট্রাকচার ফিনিশ করার খরচ ১৫০০-২০০০ টাকা প্রতি স্কোয়ারফিটে।  ২০০০ স্কোয়ার ফুট অফিস তৈরীর খরচ পরবে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এবার কেউ যদি সেই অফিসটা ভাড়া নেওয়ার জন্য খোঁজে, তাহলে কেন এত টাকা খরচ করবে?

   তবে অফিস কিনতে চাইলে, সেক্টর ফাইভে, ডিল ভাল। কেউ যদি অফিস এখানে কিনতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে সেটা অনেক বেশী ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য।

  ইন্টারনেটের অবস্থা সেক্টর ফাইভে খুব বাজে। এখানে সব নেট ইনফ্রাস্টাকচারের প্রায় সবটাই ওয়েবেলের হাতে। ব্যাঙ্গালোরে যেখানে ৫০ এম বিপিএস লাইন মাসে ৫০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, সেক্টর ফাইভে ৮ এম বিপিএস পেতে গেলে মাসে ১৫০০০ টাকার বেশী লাগছে। তাও সেই লাইন সপ্তাহে দুবার খারাপ হয়। ফলে আমাদের প্রায় তিনটে লাইন রাখতে হয়।

  প্রোডাক্ট কোম্পানীগুলোর জন্য কোলকাতা দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে। ভারতে সব কাস্টমসের মধ্যে কোলকাতা কাস্টমসের ক্লিয়ারেন্স সব থেকে বাজে এবং স্লো।  কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ঠিক ঠাক না হলে প্রোডাক্ট কোম্পানী চালানো দায়ের।  মমতা ব্যানার্জি এস ই এজ বন্ধ করার জন্য পশ্চিম বঙ্গে প্রোডাক্ট কোম্পানী করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এস এই জেড স্টাটাস থাকলে কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের বাওয়ালগুলো থাকত না। কিন্ত সেক্ষেত্রে সিপিএমই কি এস এই জেডের পক্ষে?

মানব সম্পদের ক্ষেত্রে কি অবস্থা ?  খুব হাইএন্ডের ম্যানপাওয়ার কলকাতায় পাওয়া  দুস্কর।  কারন ব্রেইন ড্রেইন যা হওয়ার তা গত দুদশকে ব্যপক ভাবে হয়েছে। ব্যাঙ্গালোর বা পুনে থেকে কেউ কোলকাতায় ফিরবে না বা ফিরতে চায় না।  তবে যদি ট্রেনিং দিয়ে ইনটার্ন তুলে জুনিয়ার ম্যানপাওয়ারে কাজ চলে, তাহলে কোলকাতা বেশ ভাল চয়েস।

এবার আসা যাক এসোসিয়েটেড ইনফ্রাস্টচারে। সফটোয়ারে কিছু লাগে না-কিন্ত হার্ডওয়ার কোম্পানীর ক্ষেত্রে লাগে। কোলকাতায় মাল্টিলেয়ার পিসিবি বানাতে পারে এমন কোম্পানী নেই। হাউসিং/প্যাকেজিং  বানানোর ছোটখাট কোম্পানী আছে কিন্ত তাদের দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ফিনিশিং হয় না।  এদিক দিয়ে পুনে গুঁড়্গাও এবং ব্যাঙ্গালোর অনেক এগিয়ে। এই সব কারনে কোলকাতায় প্রোডাক্ট ডেভেলেপমেন্ট প্রায় খুব কঠিন।

 ক্ষমতায় যেই আসুক, আমি পশ্চিম বঙ্গের ব্যাপারে আশাবাদি।  কেউ অন্তত মমতা ব্যানার্জির কানে তুলুক যে এস এই জেডে ব্যপারে গোঁ ধরে উনি এই রাজ্যের প্রোডাক্ট শিল্পের বারোটা বাজাচ্ছেন। শুধু দিদিকে দোষ দিলে ত হবে না-তার কোটেরিরা তাকে কি বোঝাচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন। আশাকরি সারদা, নারদায় ঠেকে দিদি বুঝবেন তার আশেপাশের লোকেরা নির্ভরযোগ্য না হলে, তার সমস্ত কঠিন পরিশ্রম জলে যাবে।


Monday, May 9, 2016

একাডেমিকি এলিটপনা

 ফেসবুক জুরে যাদবপুর এবং জেন এন ইউ এর প্রাত্তনীদের এলিটপণাতে আমি খুবই বিরক্ত।  একই ধরনের স্নব এটিচুড আই আই আনদের মধ্যেও আরো বাজে ভাবে দেখি। ভাবটা এমন যারা এইসব জায়গায় পায় নি- তারাসবাই বালছাল-আর আমরাই হলাম একমাত্র হনু। এটা পরিস্কার ভাবে কেউ কেউ বলেই ফেলে। আর যারা বলতে পারে না আকারে ইঙ্গিতে বলেই বুঝিয়ে দেয়।

    আমার প্রশ্ন হল, হ্যা যাদবপুর, আই আই টি, জেন এন ইউ থেকে বেড়িয়ে সবাই বেশ মোটা মাইনের চাকরি করছে-ফেসবুকে তাদের বৈভবের ফটো পোষ্ট করছে-সবাই নিশ্চয় নিজের জন্য ভালোই করেছে-কিন্ত তাতে জুটমিল বা চাবাগানের যে শ্রমিকরা আত্মহত্যা করছে তাদের কি যায় আসে?

  এই দুটোর মধ্যে যোগ কোথায়? যোগটা এখানেই যে জুট এবং চা শিল্প পশ্চিম বঙ্গের সব থেকে বড় দুই এক্সপোর্ট ছিল একসময়।  অথচ এই দুই শিল্পে কোন গবেষনা হল না এদের আধুনিক করার জন্য। আধুনিকরন না হলে কোন শিল্পই টেকে না। আজ লাখে লাখে শ্রমিকরা মৃত্যুমুখে।

  আপনি বলবেন দোষ ফরেদার শিল্পপতিদের। তারা কিছুই করতে চায় না। শুধু শ্রমিক শোষন করে লাভ করতে চায়। তাতে যাদবপুর বা আই আই টির দোষ কোথায়?

 এটা ভ্যালিড প্রশ্ন। কিন্ত আরেকটু ভেবে দেখুন। আই আই টি খরগপুর বা যাদবপুর এমন কিছু করেছে-যা পশ্চিম বঙ্গের কাজে এসেছে? এরা ত রিসার্চে নাম্বার দুই আর আট পজিশন নিয়ে বসে আছে। তাতে রাজ্যের কি লাভ? লাখো জনতার কি লাভ?

 খরগপুরে অধ্যাপকরা কিছু করার চেষ্টা করে না তা না। মুড়ি বানানোর মেশিন থেকে হৃদকম্পনের জন্য মোবাইল এপ- অনেক কিছুই নিউজে দেখি। কিন্ত সব কিছু আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। কিছুই দাঁড়ায় না। নিউজ ফ্ল্যাশ করে নিজেদের একটু দাম বাড়িয়ে নিয়েই সবাই খালাস।

 এই রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের  অবস্থা এখন এতটাই বাজে, টিম টিম করে চলছে দু একটি পিসিবি বানানোর কোম্পানী। তাও মাল্টিলেয়ার বোর্ড পারে না। হাওড়ার ওয়ার্কশপগুলিতে আধুনিক সিএনসি মেশিন আছে-এমন প্রায় নেই।  ভাল মোল্ডিং শপ নেই। কারন ম্যানুফ্যাকচারিং কিস্যু নেই এই রাজ্যে। তাহলে খরগপুর আর যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষনায় দুই আর আট নাম্বারে  এসে কি লাভ হল? তবে আই আই টি খরগপুরে ইসরোর কিছু ভাল কাজ হয়। কিন্ত তাতে রাজ্যের বাকী লোকের কি?

  আমেরিকাতে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সব থেকে বড় ম্যান্ডেট থাকে সেই রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উন্নতির জন্য কাজ করা। এগুলো রিভিউ হয় ইউনিভার্সিটির বোর্ডে। নইলে রাজ্যসরকার ফান্ড বন্ধ করে দেবে যদি দেখে তার রাজ্যের কাজে এরা আসছে না।

অবশ্য ইনফ্রাস্টাকচার দরকার। আমেরিকাতে টপ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলগুলির স্টার্টাপ এবং ভিসি মেকানিজম আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি মার্কেটে আনার।  ভারতে একমাত্র আই আই টি মুম্বাইতে সেই ইকোসিস্টেম আছে যেহেতু মহারাষ্ট্র ইঞ্জিনিয়ারিং এ উন্নত ।

 শুধু যদি ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়েও দিই, স্যোশাল সায়েন্সেই বা কি বড় বাল ছিঁড়েছে যাদবপুর?  পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক হত্যা সব থেকে বেশী হয়। সেটা নিয়ে খুঁজতে গেলে দেখি সব কাজ হয়েছে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে!

  পশ্চিম বঙ্গের যা অবস্থা তাতে একাডেমিক্স এলিটপণা আসলেই গাম্বাটপণার চূরান্ত।  যাদবপুর বা আই আই টি খরগপু্র এই রাজ্যে ভিখিরীর বাড়ান্দায় ঝাড়লন্ঠন!!

      যদ্দিন না এই রাজ্যে ইঞ্জিনুয়ারিং এর বেসিক, একদম নুন্যতম যা কিছু লাগে-যথা আধুনিক মেশিন শপ, পিসিবি তৈরী, মোল্ডিং এর নুন্যতম ক্যাপাবিলিটি তৈরী হবে, এই সব নাম্বার টু, এইট-আল্টিটেম লজ্জা ।  ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেসিক ইনফ্রাস্টাকচার পর্যন্ত নেই-আর লোকে ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষনায় দুই আর আট নাম্বার স্থান পেয়ে লাফাচ্ছে-এমনটা তারাই পারে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং কিছু বোঝে না।

 তামিললাডুর কোয়েম্বাটুর ভারতের পাম্প তৈরীর রাজধানী। ওই একটা ছোট শহরের যে ইঞ্জিনিয়ারিং কেপেবিলিটি আছে, গোটা পশ্চিম বঙ্গের তা নেই। পশ্চিম বঙ্গের ইঞ্জিনিয়ারিং এর হাল এতটাই বাজে।

     গর্ব করা ছেরে এবার মাটিতে পা দিন।








  

Sunday, May 8, 2016

আদর্শবাদ এবং গণতান্ত্রিক প্রসেস

আজকাল কিছু হলেই সিপিএম এবং বামপন্থীরা গেরুয়া জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। আরে বাবা গেরুয়া জুজুটা কি?  তারা ফ্যাসিস্ট? দাঙ্গা বাধাবে? সাধারন জনগণের মুশকিল এই যে-যারা এই জুজুর ভয় দেখাচ্ছে তাদের আমলে লোকের গণতান্ত্রিক অধিকার কতটা সুরক্ষিত ছিল?  আর তাদের আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কম হলেও পার্টি দাঙ্গা কি কম হয়েছে? পরিসংখ্যান বলছে রাজনৈতিক দাঙ্গায় পশ্চিম বঙ্গে যত লোক মরেছে গত দুই দশকে, কাশ্মীরে তার থেকে অনেক কম লোক মরেছে জঙ্গীবাদের উত্থানে। যদি ধণপ্রানের গণিতিক হিসাবই  চরম মুল্যায়ন বলে ধরা হয়, সাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গীদের থেকে অনেক বেশী ভয়াবহ এই রাজনৈতিক দাঙ্গা। 


যেদলগুলির উৎস কট্টর কোন আদর্শবাদি পজিশন (ভারতে যেমন বিজেপি বা সিপিএম) তারা গোটা পৃথিবীর গণতন্ত্রের ইতিহাসে কোনদিনই ভাল কিছু করতে সমর্থ হয় নি। ফেয়ার ইলেকশন হলে ক্ষমতার কাছাকাছিও থাকতে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ সময়।  সেই অর্থে গণতন্ত্রের ইতিহাসে সিপিএমের ৩৪ বছর এবং গোটা ভারতে বিজেপির ক্লীন সুইপ খুব ব্যতিক্রান্ত ঘটনা।

   ইউরোপ এবং আমেরিকার গণতন্ত্রের ইতিহাসে কমিনিউস্ট এবং কট্টর জাতিয়তাবাদি দক্ষিনপন্থী দলগুলি কখনোই খুব ভাল পজিশনে ছিল না। ইদানিং ইসলামিক  জঙ্গীবাদের উত্থানে এবং অর্থনীতির বিপর্য্যয়ে তারা একটু হালে পানি পেয়েছে।

    গণতন্ত্রের ইতিহাসের সেই ইঙ্গিতে বরং মমতার মতন পেটি বুর্জোয়া দলগুলির ক্ষমতা দখলই স্বাভাবিক ঘটনা। সিপিএম বা বিজেপির শাসন আসলেই  উল্টোরথ। 

   এর কারন কি?

একটু চোখ খোলা রাখলেই পরিস্কার হবে বিজেপি এবং সিপিএমের তোলা ইস্যুগুলি তাদের বেসের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও সাধারন জনগণ মোটেও সেইসব নিয়ে উৎসাহিত নয়।  তাদের মূল লক্ষ্য রোটি রোজগার, রাস্তা, নিরাপত্তা। মমতা সাধারন জনগণের জন্য রুটি এবং রাস্তার ব্যপারে ভাল কাজ করেছেন। কিন্ত রোজগার এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ। ফলে এবারের ভোটে মমতার ভাগ্য নির্ধারিত হবে সেই ভিত্তিতেই। আইন শৃঙ্খলার অবস্থা আরেকটু ভাল হলে এবং পশ্চিম বঙ্গে শিল্প এলে, মমতাকে ভাবতেই হত না সেকন্ড টার্মে জন্য। এসব সারদা, নারদ, ব্রিজ কেলেঙ্কারী-কোনটাই আটকাত না।

  যেসব সুশীলরা মমতারাজকে লুম্পেনরাজ, সিন্ডিকেটরাজ বলছেন তাদের সাথে একমত নই।  শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে স্কুলের পরীক্ষায় কম মার্কস বা ডাক্তারদের কমিশন খেয়ে রুগীকে ফতুর করার ধান্দা-এগুলোও কি সিন্ডিকেটবাজি না? শুধু বেকার ছেলেরা মাল মশলা সাপ্লাইএর সিন্ডিকেট খুললেই দোষ?  শিক্ষক, অফিসার, ডাক্তার কে নিজেদের ডোমেনে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে না?    সুশীল অধ্যাপকদের কাছে না পড়লে মাস্টার ডিগ্রিতেও মার্কস পায় না ছাত্র ছাত্রীরা। এসব সুশীল সিন্ডিকেটদের কথা লেখা হয় না কেন?    ঘুন যখন একটা গাছে ধরে তখন গোড়ায় ঘুন লাগবে, অথচ শাখা প্রশাখা ভাল থাকবে এমনটা হয় নাকি? সিন্ডিকেট পশ্চিম বঙ্গের সকল শাখা প্রশাখায়।


   যদি এবার মমতা হারেন ও, তার আশাহত হবার কারন দেখি না। হারলে তিনি হারবেন রোজগার এবং নিরাপত্তা জনিত ব্যর্থতায়। সেটা কংগ্রেস এবং সিপিএম এসে ভাল কি করতে পারবে, তাই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারন পশ্চিম বঙ্গের ইনফ্রাস্টকারচার এত বাজে এবং পিছিয়ে আছে, এখানে শিল্প আসাটা খুব কঠিন বর্তমানে।  সরকারি চাকরি দিতে গেলে সরকার দেওলিয়া হবে।  প্রচুর ধার করে সিপিএম আমলে কিছু কিছু চাকরি দেওয়া হচ্ছিল-কিন্ত সেটাও ত একটা আনসাসটেনেবল প্রসেস। সুতরাং যেখানে মমতা ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে জোট সফল হবে, এমনটা ভাবার কারন এখনো হয় নি। ফলে মমতা হারলেও, আবার ভাল ভাবেই ব্যাক করবেন।