Thursday, March 12, 2015

নাস্তিকতা মানে ধর্মকে ঘৃণা করা ?

এমনিতেই লোকে যখন নিজের হিন্দু মুসলমান কমিনিউস্ট ভারতীয় এমনকি নাস্তিক পরিচিতি জোর করে জাহির করার চেষ্টা করে, আমি সেটাকে শিক্ষা এবং বোধের অভাব বলে মনে  করি। হিন্দু ধর্মে জন্মেছেন, আপনি না চাইলেও মুসলমান বা খ্রীষ্ঠানরা আপনাকে সেই পরিচিতিই দেবে। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্ত সেই পরিচিতিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, লোকে যখন নিজের ধর্মের সমালোচনা শুনতে পছন্দ করে না -সেটা কিন্ত একধরনের মানসিক রোগ। হ্যাঁ অসহিষ্ণুতা একধরনের মানসিক রোগ। আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আমরা, নাস্তিকরা যখন লড়ছি-সেটা লিখে বা যুক্তি দিয়ে সম্ভব না । আপনি আচরি ধর্ম।  আমরা যদি নিজেরাই অন্যদের আদর্শ বা ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু হই , তাহলে কি করে তাদের কাছ থেকে সহিষ্ণুতা আশা  করি?  অন্যকে উদার হতে বলছি-অথচ আমি নিজে আদর্শের ব্যপারে কট্টরপন্থী-এটাত বিশাল দ্বিচারিতা।

 অভিজিতের মৃত্যুর পর দেখলাম, তার লেগ্যাসি নিয়ে নাস্তিকদের মধ্যে বিবাদ বেধেছে। একদল উগ্রনাস্তিক প্রচার করছে, ধর্মকে যে ঘৃণা করে না -সে কি করে নাস্তিক হয়!!! নাস্তিক হতে গেলে নাকি ধর্মকে ঘৃণা করতেই হবে!!  এই ধরনের ধারনাও একধরনের শিক্ষার অভাব ঃ

              (১)  নাস্তিক মানে যে আস্তিক না -বা যার ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই । পৃথিবীতে অনেক ধর্মেই ঈশ্বর নেই । যেমন বৌদ্ধ, জৈন।  তাহলে নাস্তিকরা বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মকে ঘৃণা করবে কোন যুক্তিতে ?
               (২) নাস্তিক এবং নিধার্মিক একশব্দ না । ধরা যাক, তারা নিধার্মিক  শব্দটা ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্ত সেক্ষেত্রেও সমস্যা। ধর্ম মানে শুধু হিন্দু ইসলাম না । পৃথিবীতে দেড়শো কোটি মুসলমান থাকলে, তাদের প্রত্যেকের ইসলাম আলাদা। কারন ধর্ম মানে ধৃ+অনট -যা আমাদের ধারন করে  । পদার্থের যেমন ধর্ম আছে, প্রতিটা মানুষের ও আছে। সেটা বিবর্তন মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা যেখান থেকেই আসুক না কেন। সুতরাং ধর্মকে ঘৃণা করতে হবে-সেই কথাটা সেম্যানটিকের দৃষ্টিতে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন।

              (২) ধরা যাক তারা বলতে চাইছেন সংগঠিন ধর্মগুলিকে যারা সমাজ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে-তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। সমালোচনা করতে অবশ্যই হবে-কিন্ত ঘৃণা কেন করতে হবে? দিওয়ালির রাতে আমরা পূর্বপুরুষদয়ের স্বরণ করে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালি। এটা কুসংস্কার, অযৌত্বিক সন্দেহ নেই । কারন আত্মার অস্তিত্ব নেই । কিন্ত এই উৎসবের মধ্যে যে মাধুর্য্য আছে, মানবিকতা আছে সেটা অস্বীকার করে, এই সুন্দর প্রথাকে শুধুই কুসংস্কার বললে, নিসন্দেহে তা আরেক ধরনের নাস্তিক অসহিষ্ণুতা হবে।

   আবার এটাও ঠিক-পাঁঠাবলি বা বকরি ইদের দিনে পশুবলি-এই ধরনের অমানবিক প্রথাগুলির বিরুদ্ধে প্রচার চালানো দরকার।

  অনেক ফেমিনিস্ট বাঙালী বিয়ের রীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিজয়ার দিন সিঁদুর খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারন এইসব লোকাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে পুরুষতন্ত্র। সেটা অবশ্যই ঠিক।  কিন্ত পাশাপাশি এটাই বা ভুলে যাওয়া হয় কি করে, যে এই সব বৈবাহিক লোকাচার মেয়েরাই পছন্দ করে বেশী। ফেমিনিস্ট রীতিতে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করলে সেই মজা কি আর থাকবে ?  বরযাত্রীরা অসভ্যতা করে এটা যেমন সত্য, মজাও হয় অনেক। পৃথিবীতে অবিমিশ্রিত "ভালো" র অস্তিত্ব নেই । সব ভালোর সাথে কিছু খারাপ থাকেই।  ফাইনাল মাপকাঠি মানবিকতা ।

 অভিজিতকে মিলিট্যান্ট নাস্তিক আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সেটা ত ও ছিল। ধর্মকে সজোরে আক্রমণ করত।  কিন্ত অন্যকে ও মিলিট্যান্ট নাস্তিক বা ঘোর নাস্তিক হতে বলেছে কি? বরং আমি উলটো উদাহরন দেখাতে পারি মুক্তমনা ফোরাম থেকে। ও আমাকে লিখেছিল, তোমার উদার নাস্তিক থাকাই ভাল । কারন ফোরামে কট্টর নাস্তিকদের সংখ্যা অনেক বেশী।  এটাই প্রকৃত মুক্তমনের পরিচয়। যে অন্যের সাথে মতের পার্থক্যটাকে উপভোগ করে, শ্রদ্ধা করে।

No comments: