Saturday, May 27, 2023

কোন জীবিকা/চাকরি/লাইনে নিরাপত্তা আছে? কিভাবে ঠিক করবেন কোন লাইন ভাল ? জীবন ও জীবিকা-১৭

 কোন জীবিকা/চাকরি/লাইনে নিরাপত্তা আছে? কিভাবে ঠিক করবেন কোন লাইন ভাল ? জীবন ও জীবিকা-১৭

বিপ্লব পাল, ২৬শে মে, ২০২৩
(১)
এর উত্তর সহজ-ভারতবর্ষের সরকারি চাকরি।
কিন্ত মুশকিল হচ্ছে দুটো।
১) কেন্দ্রীয় এবং সরকারি চাকরির সংখ্যা কমছে। কিন্ত জনসংখ্যা বাড়ছে। এই ট্রেন্ড চলতেই থাকবে। কেন্দ্রে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন।
বর্তমানে, কেন্দ্রে মোট কর্মীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। এর মধ্যে মিলিটারি ১৫ লাখ। রেলে ১০ লাখ। রেলে বেসরকারিকরন চলছে। অটোমেশন হচ্ছে। সেখানে চাকরির সংখ্যা আগামী ১০ বছরে কমে ৩-৪ লাখে চলে আসবে। মিলিটারির ক্ষেত্রেও তাই হবে। আগামী দিনে সৈন্য দিয়ে যুদ্ধ হবে না। ইঞ্জিনিয়ার লাগবে। গেমার লাগবে। রোবট ড্রোন এরা যুদ্ধ করবে। সুতরাং সেই ১৫ লাখ কমে গিয়ে ৫-৬ লাখে চলে আসতে পারে।
অর্থাৎ ভারতের জন সংখ্যার ৩০০০ জনের ১ জন হয়ত কেন্দ্রীয় চাকরি পেতে পারে আগামী দিনে। বর্তমানে তা ৫০০ জনে ১ জন।
২) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টোটাল পদের সংখ্যা ৭ লাখ। বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ। এর বড় অংশ স্কুল শিক্ষক, পুলিশ এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা। যদি বেস্ট কেস ধরে নিই- যে এই সংখ্যা আর কমবে না- তাহলে ও দাঁড়াচ্ছে প্রতি ২০০০ জনে ১ জন এই চাকরি পেতে পারে।
বাস্তব এটাই যে রাজ্য সরকারি চাকরি দ্রুত হারেই কমবে। কারন সরকারকে ভোটে জিততে দান খয়রাতি , ইউ বি আই মডেলে জনগনকে সরাসরি টাকা দিতে হবে [ যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার ইত্যাদি] । এসব করতে গিয়ে রাজকোষে যে চাপ আসবে সেটা খুব বেশী দিন ধার করে চালাতে পারবে না। ফলে সহজতম উপায় সরকারি চাকরি কমানো। যেটা সব সরকারই করছে। যে পার্টিই জিতে আসুক, এই ট্রেন্ডই থাকবে।
অর্থাৎ রাজ্য সরকারি চাকরি ২০০০ এ ১ জন পেতে পারে। এরপর স্ক্যাম, হাইকোর্ট মামলা সব আছে। ভরসা করবেন?
তাহলে সামনে নিরাপদ চাকরির বিকল্প কি? সেটাই এই পর্বের আলোচনা।
(২)
আমি প্রতিদিন ১০০০- থেকে ২০০০ প্রশ্ন পাচ্ছি। মোস্টলি কোন লাইন নিয়ে পড়াশোনা করব! এর ৯০% উত্তর আমার আগের পর্বগুলিতেই আছে। ফেসবুকের ওয়ালে গিয়ে পড়তে অসুবিধে হলে, আমার ব্লগ থেকে পড়ে নিলেই হল। ব্লগ লিংক আমার প্রোফাইলেই আছে।
আপনার ছেলে বা মেয়ে কোন লাইনে পড়বে, এর উত্তর আপনার ছেলে বা মেয়েকেই খুঁজে নিতে হবে। জীবন একটা জার্নি, ডেস্টিনেশন না। আপনি কি জানতেন আপনার জীবনের ভবিষ্যত? জীবনের প্রশ্নগুলির কোন সহজ উত্তর, মেইড ইজি নেই। যারা তা দেওয়ার চেষ্টা করে তারা হয় ব্যবসায়ী নইলে মূর্খ। জীবনের উত্তর অভিজ্ঞতা, ভুল থেকে শিখে খুঁজে নিতে হয়।
আমি শুধু একটা ব্যাকগ্রাউন্ড দিচ্ছি, যাতে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। আপনারা আমার এই সিরিজটা ১-১৬ পড়ুন। পড়ে আপনার ভিত্তি তৈরী করুন। আরো গুগুল করে জানুন। সমৃধ হয়ে, নিজে সিদ্ধান্ত নিন। নিয়ে আমাকে লিখুন যে আমি এই কারনে এই সিদ্ধান্ত নিতে চাই। তবেই আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আপনি এই জীবন এবং জীবিকা সিরিজ না পড়লে, ছেলে কোন লাইন নিয়ে পড়বে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্ঞান বা ভিত্তি আপনার তৈরী হবে না। আপনি শিক্ষা ব্যবসায়ী স্ক্যামারদের ক্ষপ্পরে পরে ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট করবেন। হাঙরেরা আপনাকে গেলার জন্য ওৎ পেতে বসে আছে।
আমার প্রোফাইল ফলো করতে থাকুন। আস্তে আস্তে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আমি এখন শুধু আপনাদের ভিত্তি তৈরী করছি। ইনফর্মেশন গুগুল করলেও পাবেন। আগে নিজের জ্ঞানের ভিত শক্ত করুন। আমি সাহায্য করব, গাইডিং ম্যাটেলিয়াল দেব। কিন্ত শিখতে আপনাকেই হবে। সেলফ লার্নিং ছাড়া এযুগে আরো কোন লার্নিং নেই। আপনারা নিজে শিখুন আগে। তবেই বাচ্চাদের গাইড করতে পারবেন।
(৩)
আপনার ছেলে বা মেয়েকে কোন লাইনে দেবেন?
আপনাকে এই ৭ টা দিক নিয়ে ভাবতে হবে।
>> চাকরির নিরাপত্তা। অনেক লাইনে হয়ত চাকরির নিরাপত্তা নেই কিন্ত জীবিকার নিরাপত্তা আছে। যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং। এখানে কোম্পানী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোন স্কিল্ড বা অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির অভাব হয় না। সেলসেও এক কথা সত্য। চাকরির নিরাপত্তা নেই। কিন্ত স্কিলের আছে। অনেকেই আমাকে এনিমেশন বা গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। খুব ভাল লাইন। নতুন চাকরির সংখ্যা বাড়ছে। এখানেও তাই। চাকরির নিরাপত্তা নেই। স্কিলের আছে।
>> ইনকাম বা স্যালারি -এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। যেমন সেদিন লিখলাম যারা কলকাতায় থাকতে ইচ্ছুক, মাসে ৫০,০০০ টাকার কম ইনকামকে আমি জীবিকার মধ্যেই ধরব না। কারন আপনার বাবা একবার হাসপাতালে গেলেই পকেট থেকে ২-৩ লাখ বেড়িয়ে যাবে। শহরতলিতে তা ৪০,০০০ হতে পারে। যারা প্রাইভেট স্কুল বা কলেজের শিক্ষক-তাদের নিরাপত্তা বা জব সিকিউরিটি আছে-কিন্ত স্যালারি নেই [ যারা সরকারি স্কেল পান না] ।
অনেকেই আমাকে মাস কমিউনিকেশন বা জার্নালিজম নিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন। এই পেশাতে নিরাপত্তাও নেই। স্যালারিও নেই। সেই জন্যেই যারা জিজ্ঞেস করেছেন, আমি "না" বলে দিয়েছি।
>> স্যালারি গ্রোথ, বা কেরিয়ার গ্রোথ -যেমন ধরুন সফটওয়ারের চাকরি। প্রথম বছরে বিনা পয়সার ইন্টার্ন , দ্বিতীয় বছরে ১০ হাজার করে, দশম বর্ষে একটি ছেলের মাসিক স্যালারি ১ লাখ টাকায় অনায়াসের পৌছে যায়। সেখানে প্রাইভেট স্কুল কলেজে যারা শিক্ষকতা করছে তাদের মাইনে সেই মাসিক ২০,০০০ টাকাতেই পড়ে থাকবে। স্কুল চেঞ্জ করলে ৩০,০০০ হবে বড়জোর।
আবার মেডিক্যাল লাইনের চাকরি গুলিতে মাইনে এবং নিরাপত্তা দুটোই আছে। কিন্ত গ্রোথ স্লো।
এই তিনটেই মুখ্য। এর সাথে আরো চারটে জিনিস দেখা উচিত
> চাকরিটি যে শহরে হবে, সেখানে শিক্ষার হাল, থাকার অবস্থা। কারন সেখানেই আপনার নাতি নাতনিরা বড় হবে।
> চাকরিটিতে নিরন্তর শেখার স্কোপ আছে কি না- অর্থাৎ নতুন নতুন স্কিল শিখতে পারছেন কি না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। সাধারনত যে চাকরিতে গ্রোথ আছে, সেখানে শেখার স্কোপ ও বেশী। আমি এই ক্রাইটেরিয়ার ওপর সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করব।
> চাকরিটি ভাল লাগছে কি না।
> চাকরিটি শরীর এবং মনের দিক দিয়ে নিরাপদ কি না। যেমন সেলসের চাকরি অনেকের স্যুট করে না। প্রচুর চাপ না নিতে পারলে অনেকেই মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়ে।
(৩)
মোটা মুটিভাবে ভদ্রস্থ চাকরির লাইনগুলো আমি, এই ভাবে ভেঙেছি--
> স্কিলের নিরাপত্তা, ভাল মাইনে, এবং ভাল গ্রোথ
ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স, কর্মাস, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এনিমেশন, বিজনেস গ্রাজুয়েট এই পর্যায়ে।
এই কেরিয়ারের সমস্যা হোল, ভাল কলেজের অভাব। আপনাকে বল্লাম ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ঢোকাতে- আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে দিয়ে দিলেন। টাকা দিলেন। ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাবে। কিন্ত চাকরি পাবে না। কারন কিছুই শেখেনি। পর্ব ২ থেকে ৬ পড়ুন,।
ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির অভাব নেই। ভাল ইঞ্জিনিয়ারের খুব অভাব। কারন ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু চাকরিতেই শেখা যায়। কলেজে শেখা যায় না। আমি এই নিয়ে আমার পর্ব ২-৬ এ আলোচনা করেছি।
আর এসব মোটেও উচ্চমেধার ছেলেমেয়েদের জন্য না। আজকাল অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে ডিপ্লোমা করার পর তিন বছরের বিটেক করে। এসব লাইনে যারা আসে প্রায় সবাই মাধ্যমিকে ৫০%, উচ্চমাধ্যমিকে ৪০% পাওয়া পোলাপান। আমি এসব নিয়ে পর্ব ২-৬ লিখেছি। অথচ অজস্র কমেন্ট পাচ্ছি- সাধারন ছেলেদের জন্য কিছু বলুন! মাধ্যমিকে ৫০% এর নীচে কেও পায় নাকি?
>> চাকরির নিরাপত্তা, স্লো গ্রোথ, মধ্যম/ভাল মাইনে
মেডিক্যাল লাইনের সব চাকরিগুলি এর মধ্যে যাবে। সরকারি চাকরিও তাই। মেডিক্যাল লাইন নিয়ে পরে লিখব।
> স্কিলের নিরাপত্তা, স্লো গ্রোথ, মধ্যম মাইনে
আই টি আই পাশ করা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। ডিপ্লোমা প্লাম্বার, ফিটার, ওয়েল্ডার, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। এখান থেকে পাশ করে সেলসে কাজ করতে পারে। চাকরির অভাব নেই। কনটেন্ট রাইটিং ও আমি এই পর্যায়ে ফেলব। মাইনে ভদ্র। স্কিলের নিরাপত্তা আছে। গ্রোথ স্লো, কিন্ত আছে।
>> চাকরি বলে দাবী করা হয়, কিন্ত যা আদৌ চাকরি বা জীবিকার পর্যায়ে ফেলা যায় না -
মাস কমিউনিকেশন [ জার্নালিজম], প্রাইভেট স্কুল কলেজের শিক্ষকতা [ যারা সরকারি স্কেল পান না ] । কারন মাইনে খুব কম। আর জার্নালিজমে নিরাপত্তাও নেই।
আমার একটা গল্প মনে এল। আমার অনেক বন্ধুরই প্রাইভেট স্কুল কলেজ আছে। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম-আচ্ছা কারা মোটে ১০-২০ হাজার টাকার স্যালারিতে স্কুলে শিক্ষকতা করছে? ওই টাকায় যারা চাকরি করে তারা আদৌ কি কিছু পড়াতে সক্ষম? ও হাসতে হাসতে বল্ল, এদের অধিকাংশই বিবাহিত মহিলা। স্বামী ভাল চাকরিতে আছেন। চাকরি এদের কাছে একটা স্টাটাস-কারন আজকাল কেওই গৃহবধূ থাকতে চায় না। ওই স্টাটাসটা ভাল দেখায় না। কারন চাকরিত শুধু মাইনে না, ইনভল্ভমেন্টও বটে। তবে কাউকে যদি সংসার টানতে হয়, তাহলে অবশ্যই ওই মাইনেতে কেও শিক্ষকতার চাকরি করবে না। আমি মানছি প্রাইভেট স্কুলেও হয়ত ভাল শিক্ষিকা আছেন। যাদের স্বামীরা ভাল চাকরি করে বলে, তাদের মাইনে নিয়ে ভাবতে হয় না। ফলে তাদের অসুবিধে নেই।
আজ বিকেল ভারতীয় সময় ৫-৩০ এ ভিডিও চ্যাটে কথা হবে। কনফারেন্স ডিটেলেস আমার টাইম লাইনেই আছে।
আগামী পর্বগুলোর জন্য প্রোফাইল ফলো করতে থাকুন। বন্ধুদের, ছাত্রছাত্রীদের লেখাগুলো পড়ান। একজনের চেতনার উন্মেশ হলে হবে না। সবার চোখ খুললে-তবেই আমরা সবাই নিরাপদ। সেইজন্যে লেখাগুলো শেয়ার করতে থাকুন। যাতে সবার চোখকান খোলে। সবার চোখকান খুললে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা আপনাদের স্ক্যাম করতে পারবে না। আপনি "একা"" শুধু শ্রোতের বিরুদ্ধে গেলে, উড়ে যাবেন। সেইজন্যে সবার মধ্যে এই নতুন আধুনিক চেতনার উন্মেশ হোক যে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রাজনীতির জন্য পৃথিবী বদলাচ্ছে-নতুন পৃথিবীতে আসলে সুযোগ আরো অনেক অনেক বেশী। কিন্ত এখানে সেলফ লার্নিং ই শেষ কথা। আর সেটা করতে গেলে স্কুল লাইফে ৮ টা টিউশনি পড়ে লাভ নেই। উল্টে ক্ষতি আছে। পেশাদার সাবজেক্ট ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শিখতে হয়।
সবার চোখ তখুনি খুলবে, যখন এই লেখাগুলো শেয়ার করবেন। নিজে এসব নিয়ে লিখবেন বা আলোচনা করবেন।
আর আমি কোন সদ্গুরু, পীরবাবা বা বাবা রামদেব নই যে আমার কাছে সব সমস্যার ঐশ্বরিক সমাধান আছে। আমি এক্সপার্ট নই, জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে একজন শিক্ষার্থী। প্রতিটা ক্ষনেই শিখে চলেছি। দীর্ঘ পেশাদার জীবনে অনেক দেখেছি, অনেক শিখেছি। আবার আপনাদের সমস্যা শুনেও শিখছি। আমি যা লিখছি, তা আমার জানার ভিত্তিতে লিখছি। তা ভুল হতেই পারে। আপনারা চ্যালেঞ্জ করুন। তর্ক বিতর্কের ভিত্তিতেই সত্য সামনে আসে।
প্রোফাইল ফলো করতে থাকুন।

No comments: