সায়েন্স না আর্টস? কর্মাস নিয়ে পড়ে কি অপার্চুনিটি? মেডিক্যাল লাইনে গেলে কি হবে? জীবন ও জীবিকা -১৪
বিপ্লব পাল, ২৩ শে মে, ২০২৩
(১)
-ছেলে বা মেয়ে এই স্ট্রিম নিয়ে ঢুকেছে-ফিউচার কি? [ পর্ব -১ দেখুন]
- মনে রাখতে পারছে না, ভুলে যাচ্ছে [ পর্ব ৮]
- পড়াশোনাতে মন নেই [ পর্ব ৯ ]
- সায়েন্স এবং কোর ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যত [ পর্ব ৫]
- আই টি, সফটোয়ারের ভবিষ্যত ( ২,৩,৪,৬)
[ সব লেখা প্রোফাইলে ক্লিক করলেই ওয়ালে পাবেন]
হিউম্যনিটিস বা আর্টসে কি ভবিষ্যত, কমার্সে কি ভবিষ্যত তা নিয়ে এখনো আলোচনা করি নি। সেটা এই পর্বে করব। মেডিক্যাল লাইন বিশাল। তাই নিয়ে আলোচনা হবে একটা পুরো পর্বে। কর্মাস বা বিজনেস লাইন ও সুবিশাল, তাই সেই আলোচনাও হবে আরেক পর্বে। অনেক ক্ষেত্রেই এই সব ফিল্ডে ভবিষ্যত কি তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমি যোগ্যব্যক্তি না। সুতরাং আমার চিন্তা এবং লেখায় ভুল হতে পারে। ধরিয়ে দেবেন। আমি শুধু যা দেখছি, যা বুঝছি, সেটাই লিখছি। নিজের অভিজ্ঞতা এবং রিসার্চ ডেটা যা বলছে, তাই নিয়েই লিখব।
যারা আগামী পর্বগুলি পড়তে চান, প্রোফাইল ফলো করুন। কারন নইলে আপনার ফিডে আগামী পর্বগুলি পৌছাবে না।
আরেকটি বিশেষ অনুরোধ। আপনারা অনেকেই জানিয়েছেন, আমার এই সিরিজ থেকে নতুন করে ভাবা এবং নতুন করে শুরু করার অনপ্রেরণা পাচ্ছেন। সেটা ভাল। আপনি ভাবছেন নতুন ভাবে, নতুন পৃথিবীর জন্য। কিন্ত আপনার আশেপাশে শিক্ষক, অভিভাবক সমাজ আগের পৃথিবীতেই রয়ে গেছে। কমেন্টেই বুঝতে পারছেন শিক্ষকরা বদলাবেন না। আপনি যতই আমার লেখায় প্রভাবিত হয়ে আধুনিক চিন্তাভাবনা করুন- আপনাকে, আপনার সন্তানকে কার্যক্ষেত্রে সেই আদি অচল সিস্টেমের মধ্যে দিয়েই চলতে হবে। সেই জন্য আমার অনুরোধ, শুধু আপনি উচ্চচিন্তা করলে হবে না- আপনাকে অন্যদের ও বোঝাতে হবে। আমার লেখাগুলি নিয়ে অন্যদের হোয়াটসাপে পড়ান। ফেসবুকে শেয়ার করুন। পারিবারিক পরিসরে আলোচনা করুন। তর্ক বিতর্ক আলোচনা চলুক। ফেসবুক দেখাচ্ছে আমার ব্লগ গুলি খুব বেশী হলে ২-৩ লাখ লোকে পড়ছে। তা বঙ্গের অভিভাবক এবং ছাত্র সমাজের ১% ও না। আপনারা যারা ভুলগুলো বুঝতে পারছেন, আপনাদের সন্তানদের ভাল চান- তারা এইগুলি নিয়ে আলোচনা করুন। বিতর্ক হোক। কিন্ত লেখাগুলি নিজেদের পরিসরে ছড়িয়ে দিন-যাতে সার্বিক ভাবে চেতনার বিকাশ হয়। তাতে সবার কাজটা সহজ হবে। )
(২)
হিউম্যানিটি নিয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যত কি-সেই আলোচনা শুরুর আগে এটা অন্তত জানা যাক-যারা ইঞ্জিনিয়ারিং , বিজ্ঞান , মেডিক্যাল লাইনে যাচ্ছেন, বা কর্মাস/বিজনেস লাইনে যাচ্ছেন- যে লাইনেই যান-হিউম্যানিটি সাবজেক্ট গুলো কলেজে/ইউনিভার্সিটিতে ইলেক্টিভ হিসাবে নিন। আগে ভারতে সেই সুযোগ ছিল না। আমেরিকাতে ছিল। এখন কিন্ত নতুন শিক্ষা পলিসিতে সেটা আলাও করছে। যত বেশী করে সম্ভব হিউন্যানিটি সাবজেক্ট গুলো ইলেক্টিভ রাখুন।
অধিকাংশ অভিভাবক মনে করে হিউম্যানিটি সাবজেক্ট নিয়ে কোর্স নেওয়া পয়সা নষ্ট। মারাত্মক ভুল ধারনা।
আপনি যে স্ট্রিমেই যান না কেন-বিজ্ঞান/ইঞ্জিনিয়ারিং/ কর্পরেট/বিজনেস/ কর্মাস - সেখানে উন্নতি করতে গেলে, সর্বোচ্চ স্তরে পৌছাতে গেলে হিউম্যানিটিজের তিনটে স্কিল মাস্ট --
# ১ কম্যুনিকেশন-বিশেষত ইংলিশ লেখা এবং বলা। শুধু পার্ফেক্ট বললেই বা লিখলেই হবে না- বাক্যের গঠন, শব্দের নির্বাচন এমন সুন্দর হতে হবে, যাতে লোকে পড়তে বাধ্য হয়। ভাল ইংরেজি কমিনিউকেশনে জোর দিতেই হবে। তবে হ্যা, তার জন্য ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে কোন লাভ নেই। ওটা করতে গেলে - আবার বলছি-ইউটিউবে ইংরেজির প্রচুর কোর্স আছে -সেগুলো নিজে নিজেই করতে পারেন। ইংরেজি নিউজ চ্যানেল, ইংরেজি লাইফস্টাই চ্যানেল, এগুলো শুনতে থাকুন। যখন ঘুমাতে যাবেন, এই চ্যানেলগুলি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যান। হাঁটা, চলার সময় শুনুন। ইংরেজি শুনে আগে কানকে তৈরী করুন। কান তৈরী হলে, হাত এবং মুখ ও তৈরী হবে। আপনি ইংরেজি বাংলা সিনেমা সিরিয়াল দেখবেন, আর ইংরেজিতে অভ্যস্থ হবেন-তা হবে না। ইতিহাস দর্শন সাহিত্য রাজনীতি নিয়ে ইউটিয়বে অসংখ্য ভাল ইংরেজি চ্যানেল আছে। বিশেষ করে উইল ডুরান্টের ইতিহাস এবং দর্শনের অডিও সিরিজ আছে।অসম্ভব ভাল ইংরেজি। দ্যা বেস্ট। এগুলি অবসর সময়ে, বিশেষত শোয়ার আগে শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যান। কান তৈরী হবে। আজকাল ইংরেজিতে লেখাও সহজ। ভাল ইংরেজিতে লিখতে চ্যাট জিপিটি বা জিমেলেরা অটো এসিস্টের সাহায্য নিন। এরা আপনার দুর্বল ইংরেজি লিখন, সবল করে দেবে। কি করে ? সেসব ভিডিও ইউটিউবেই পেয়ে যাবেন।
#২ ফিলজফি বা দর্শন- যদি আপনার কলেজে ফিলোজফির একটা কোর্স নেওয়ার সুযোগ থাকে নিয়ে নিন। নইলে ইউটিউবে ফিলোজফির ওপর অসংখ্য সিরিজ আছে-সব থেকে সহজটা হচ্ছে ক্রাশ কোর্স অন ফিলোজফি। কেন দর্শন গুরত্বপূর্ন? স্টাকচার অব থিঙ্কিং। আপনাকে চিন্তা করতে শেখাবে- চিন্তার গঠন শেখাবে। কেন তা গুরুত্বপূর্ন? এই যে অভিভাবক হিসাবে আমাকে প্রশ্ন করছে ছেলে কোন স্ট্রিমে পড়বে- আমার উত্তর হবে আমি জানি না। কারন আপনি কি চাইছেন সেটাই আমি জানি না। আপনি কি চান ছেলে প্রচুর টাকা রোজগার করুক? নাকি শান্তির জীবন পাক? না কি সুস্থ থাকুক? নাকি আপনাকে শেষ বয়সে দেখুক? না কি সব কিছু একসাথে চাইছেন? এই যে আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো- তা প্রেমই হোক বা পড়াশোনা বা জীবিকা- এগুলো অধিকাংশ লোকের কাছেই পরিস্কার না। আর এটা পেশাদারি ক্ষেত্রে আরো প্রভাব ফেলে। অধিকাংশ কর্মীই দেখেছি পরিস্কার চিন্তা করতে পারে না। কারন দর্শনে ট্রেনিং নেই। ফলে তারা উপরে উঠতে পারে না।
#৩ সাইকোলজি- মানুষের মনকে জানা। কেন পড়বেন ? কেন না- আপনার, আপনার ছেলেমেয়ের উন্নতি নির্ভর করছে, তাকে তার পিয়ারস-অর্থাৎ তার বস, তার কাস্টমার/ছাত্র, কলীগ এরা কতটা ভালোবাসে-কতটা লিডার হিসাবে মেনে নেয়। এটা তারাই সফল ভাবে পারে, যারা অন্যদের বুঝতে পারে। এই ব্যাপারে মেয়েদের বিশাল জন্মগত এডভ্যান্টেজ। এইজন্যে মেয়েরা ম্যানেজার হিসাবে বেশী সফল। কিন্ত আমরা মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে আসতে দিতেই চাই না। দিলেও ওই হিউম্যানিটি সাবজেক্ট পড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইহা মেয়েদের ট্যালেন্টের সম্পূর্ন অপচয়।
মেয়েদের কর্মাস/বিজনেস, সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান। তারা ম্যানেজমেন্টে ছেলেদের থেকে আরো ভাল করার ক্ষমতা রাখে। কারন মেয়েদের তিনটে স্কিল ছেলেদের থেকে ভাল ( ব্রেনের গঠনের জন্য) -যার সবকটাই ম্যানেজমেন্টে লাগে--
>অন্যদের মন বোঝার ক্ষমতা
>মাল্টিটাস্কিং-অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলি কাজ করার দক্ষতা
> কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগের দক্ষতা, প্রেজেন্টেশনের দক্ষতা
অন্যদিকে ম্যানেজমেন্টে মেয়েদের অসুবিধা হয় -অবজেক্টিভ চিন্তা বা খুব পরিস্কার করে "চাওয়ার" ক্ষেত্রে। সেগুলি কিন্ত কোর্স নিয়ে কাটিয়ে ওঠা যায়-কারন সব কিছুই ফ্রেমওয়ার্কে বা সিস্টেমে ফেলে এই দুর্বলতা কাটানো যায়।
কিন্ত এর বদলে যেটা বাঙালী সমাজে প্রবাহমান- মেয়ে অঙ্কে কাঁচা তাই ইংরেজি অর্নাসে দিয়ে দিলাম। যার বিরুদ্ধে আমি পর্ব-১২তে লিখেছি।
ইংরেজি অর্নাস নিয়ে পড়লে ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল না। আমি এই অপ্রিয় সত্য কথাটা না লিখলে, মেয়েদের জন্মগত প্রতিভার অপচয় চলতেই থাকবে। যেখানে একজন মেয়ে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা রোজগার করতে পারত ম্যানেজমেন্টে সেখানে সে কনটেন্ট রাইটার বা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে ১০-২০ হাজার রোজগার করতে হিমসিম খাবে। সরকারি স্কুলের চাকরি এখন বিশ বাঁও জলে। হাইকোর্ট বনাম সুপ্রীম কোর্টের পিংপং খেলা কখন বন্ধ হবে কেউ জানে না। তার ওপর নিশ্চয় ভবিষ্যত ছাড়বেন না।
ইংরেজি অর্নাস বা এম এ নিয়ে পড়ে মোটামুটি এই সব সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট আছে--
-শিক্ষকতার চাকরি- সরকারি হলে ভাল। না হলে বেসরকারি স্কুল মাইনে খুব কম। কোন মানে হয় না সেই কেরিয়ারে যাওয়ার
-কনটেন্ট রাইটিং। এস ই ও বা ওয়েবসাইটের জন্য এই ফিল্ডে চাহিদা বাড়ছিল- কিন্ত চ্যাট জিপিটি আসার পর-এখন সবাই চ্যাট জিপিটিকে দিয়েই লেখাচ্ছে। স্কোপ কমে গেছে। মাইনে আগে থেকেই কম ছিল।
- আই এ এস বা অন্য সরকারি চাকরি। তার জন্য ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে লাভ কি?
- আইন বা ল। এখানে যারা সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে আসবে, তাদের সুবিধা আছে। ক্রিমিনাল বা আই পি আইনের ক্ষেত্রে। সুতরাং এক্ষেত্রেও ইংরেজি অনার্স সুবিধা দেবে তা না। তবে অন্য ফিল্ডে যাওয়ার থেকে ইংরেজি থেকে ল তে যাওয়া ভাল । কারন এখানে এটলিস্ট ঠিক ঠাক উপায় করার স্কোপ আছে।
- মাস কমিউনিকেশন বা জার্নালিজম। একদম যাবেন না। চাকরির
নিশ্চয়তা নেই। টিভি চ্যানেল আজ চলে, কাল বন্ধ। মাইনে খুব খারাপ এবং অনিশ্চিত। কয়েকজন হাইপেইড জার্নালিস্ট আছেন। তারা ব্যতিক্রম। নিয়ম না। ওর থেকে আইন নিয়ে পড়া ভাল।
- মার্কেটিং কমিউনিকেশন। ব্রান্ডিং। এখানে মাইনে বেশ ভাল। ওঠার সুযোগ বেশী। কিন্ত এখানে ইংরেজি পড়ার এডভ্যান্টেজ নেই। যারা গল্প লেখে, বা ক্রিয়েটিভ, এডভ্যান্টেজ তাদের।
-বিদেশে গবেষনার সুযোগ। আছে। কিন্ত খুব কম ফেলোশিপ। তারপরে বিদেশে চাকরি প্রায় অসম্ভব। যেখানে আমেরিকাতে ইংরেজি নিয়ে পড়ে এত বেকার, তারা নিশ্চয় ভারতে ইংরেজি নিয়ে পড়া গ্রাজুয়েটকে চাকরি দেবে না।
এই হচ্ছে মোটামুটি ইংরেজি অনার্সের গল্প।
যাইহোক আমার জীবন এবং জীবিকা সিরিজের সব কটা পর্ব পড়ে, তবেই প্রশ্ন করুন ( সব পর্ব আমার প্রোফাইলেই আছে)। সেটা কেউ করছে না। মানে দেখছি অভিভাবকরাও সেই শর্টকাটে বিশ্বাসী। তারা নিজেরাই শিখতে চাইছেন না-ত তাদের সন্তান কেন শিখতে চাইবে?
যাইহোক, এই রবিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টায় আমি ফেসবুকে লাইভ থাকব-সন্তান নিয়ে আপনাদের প্রশ্ন থাকলে সেখানে সরাসরি ভিডিও চ্যাটে দেব। সেই সংক্রান্ত ডিটেলস আমি পরে পোষ্ট করছি। আগামী পর্ব এবং ফেসবুক লাইভের ডিটেলস পাওয়ার জন্য, প্রোফাইল ফলো করুন।
No comments:
Post a Comment