Wednesday, May 24, 2023

জীবন এবং জীবিকা- ৯ ঃ উদ্বেগ/এঙজাইটি কমিয়ে টেনশনমুক্ত জীবনের সন্ধানে

 জীবন এবং জীবিকা- ৯ ঃ উদ্বেগ/এঙজাইটি কমিয়ে টেনশনমুক্ত জীবনের সন্ধানে

অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা যা পরীক্ষায় ফল করতে পারত, তার থেকে বাজে করে কারন অকারন এঙজাইটিতে/উদ্বেগে ভোগে। আর তাদেরকেই বা কি বলব। তারা পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের বাবা-মার পাতলা পায়খানা হচ্ছে। এত প্রায় সব বাঙালী ফ্যামিলিতেই দেখি।
গোটা জীবনটাই খেলার স্টেডিয়াম। এখানে সবাইকে ধোনির মতন মিঃকুল থাকতে হবে। নইলে সেঞ্চুরী করার পোটেন্সিয়াল থাকলেও, শুন্য হাতে প্যাভেলিয়ানে ফিরতে হবে। সেক্ষেত্রে নামের পাশে স্কোর শুন্যই লেখা থাকবে।
তাই একাডেমিক সাফল্যের জন্য, বা চাকরি জীবনেও সফল হতে গেলে- এই উদ্বেগ/এঙজাইটি/টেনশন ম্যানেজমেন্ট শিখতেই হবে।
জীবনে সফল হওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন- এবং এটিকে ইগনর করলে, পরবর্তী জীবনে আরো গর্তে ঢুকে যাবে। তখন ডেট করা থেকে কাস্টমার মিট করা- সব ক্ষেত্রেই বাজে টাইপের টেনশনে ভুগে, লাইফ হেল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এঙজাইটি, টেনশন সম্পূর্ন কনট্রোল করা যায়।
#১ গভীর ঘুম এবং প্রচুর শরীরচর্চা/ঘাম ঝড়ানো- ঘুম এবং শরীরচর্চা বেসিক। এগুলি বন্ধ রাখলে, কম করলে, টেনশন এঙজাইটি হবেই। ব্রেইনের amygdala আমাদের ইমোশন কন্ট্রোল করে। স্লিপ ডিপ্রিভেশন হলে, ব্রেইনের ওই অংশটির, নেগেটিভ ইমোশন কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ যত কম ঘুমোবেন, তত এঙজাইটির মতন নেগেটিভ ইমোশন কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হারাবেন। এছারা কর্টিসল বলে একটা স্ট্রেস হর্মন ও আছে-যা আমাদের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রনে সহায়ক। ঘুম কম হলে, কর্টিসল রেগুলেশনে সমস্যা হয়।
শরীরচর্চা করলে এন্ডোরফিন নিসৃত হয়। যা স্ট্রেস রিলিভার বা মানসিক চাপ কমায়। এছাড়া এতে কর্টিসলের মাত্রাও কমে। যা স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমায়।
মোদ্দা কথা গভীর ঘুম এবং এক্সসারসাইজ- এক্কেবারেই মাস্ট। আপনি যত খুশী রামদেব, বাবা রবিশঙ্কর, ব্রিদিং এক্সসারসাইজ করুন- কিন্ত গভীর ঘুম এবং দৈনন্দিন প্রচুর এক্সসারসাইজ না করলে এঙজাইটি/উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাবেন না। এটা হচ্ছে বেসিক।
#২ মাসল এবং মাইন্ড রিল্যাক্সেশন- মাইন্ড রিলাক্সেশন বললে সবাই ভাবে একটা সিনেমা দেখে ফ্রেশ হয়ে নিই! যদিও স্ক্রীন টাইম বাড়ালে উল্টোটাই হয়। যাইহোক, ভারতের গুরুরা এটা বহুদিন থেকে করাচ্ছেন। যাকে বলে প্রানায়ম। নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন করে ব্রেইন এবং মাসলকে নিয়ন্ত্রনে আনা। এছারা আছে মাইন্ডফুল মেডিটেশন। অর্থাৎ মনকে সব চিন্তা থেকে মুক্ত করে, বর্তমানে যেমনটা দেখছেন বা অনুভব করছেন, শুধু সেটির প্রতিই ফোকাস করা। এর একটা সহজ উপায় আছে, যা আমি করি। সোজা কথা হচ্ছে যখন ভাল মুডে বসে আছি-কোন ভাবেই দুঃশ্চিন্তা , অন্যকোন চিন্তা মাথায় ঢোকানো যাবে না। মাথায় তালাচাবি দিয়ে কিছুক্ষন বসে যান। রিজেকশন অব অল থট। নানান দিক থেকে চিন্তা আপনার মাথায় ধেয়ে আসবে- আপনি ওগুলো মাথায় ঢোকাবেনই না। মাইন্ডফুল মেডিটেশন নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে এবং টেনশন মুক্ত হতে এবড়ই কাজের জিনিস। যদিও আমাদের ঋষিরা বহুদিন আগে থেকেই এটি করে আসছেন।
# ৩ আরেকটা টেকনিক আছে। দার্শনিক চিন্তা। বিশেষত স্টয়িক চিন্তা। এঙজাইটির একটা বড় কারন, ফেয়ার অব ফেলিওর। আগে থেকেই ভাবা- যে আমি ব্যর্থ হব।বা হতে চলেছি। প্রচুর ছাত্র ছাত্রী আত্নহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে এর জন্য। স্টয়িক দর্শনের জন্ম গ্রীসে, পূর্নতা পেয়েছিল রোমে। সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের মেডিটেশন গ্রন্থে এর সন্ধান পাই আমরা। এখন পাশ্চাত্যে প্রচুর লোকজন স্টয়িস্ট। আমি নিজেও দেখেছি এদের চিন্তাধারা বেশ কাজের।
একটু ব্যখ্যা করি। আপনি পরীক্ষাতে না হয় ফেইলই করলেন। কি হবে? মারা ত যাবেন না? টুকটাক স্বাধীন ব্যবসা করেই খাবেন। ব্যবসা ঠিক করে করতে পারলের চাকরি থেকে বেশী টাকা। আর বাচ্চা বয়স থেকে শিখতে পারলে, সফল হবেনই। এবার একজন রাজার কথা ভাবুন। তার ছেলে, তার বৌ, তার সেনাপতি, তার মন্ত্রী, অন্যদেশের রাজা-সবাই তাকে মারার তালে আছে। বিষ মেশাতে পারে। ঘাতক ছুরি মারতে পারে। অন্য রাজা সেনা নিয়ে আক্রমন করতে পারে। সেনা বিদ্রোহ হতে পারে। ছেলে বন্দী করতে পারে। যেকোন মুহুর্তে লোকটা মারা যেতে পারে। তার এঙজাইটির লেভেল কি হতে পারে?? আপনি ত বেঁচে থাকবেন। সে যেকোন মুহুর্তে মারা যেতে পারে!
সেই জন্য স্টয়িস্টরা বলে মেক পিস উইথ ওয়ার্স্ট সিচুয়েশন। আমি পড়াশোনা করছি চাকরির জন্য। সেটা হলে ভাল। নাহলে দোকান দেব। ব্যবসা করব। তাতেই শান্তিতে থাকব।
একটা মেয়ের সাথে ডেটে গেলাম। সব থেকে বাজে কি হতে পারে? মেয়েটা রিজেক্ট করবে!! মেয়েটা এক্সেপ্ট করলেই বা কি আপনি কি ভাল থাকতেন? এটা চাকরির জন্যও সত্য।
ধরুন চার বছর পিএইচডি করার পর গাইডের সাথে ঝামেলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে পুরো সময়টায় নষ্ট হল। একদম না। যদি সত্যিই কিছু শিখে থাকেন, তা অনেক অনেক কাজে লাগবে। এক্সাম্পল পৃথিবীর এক এবং দুইনাম্বার ধনকুবের - ইলন মাস্ক এবং জেফ বেজোস। দুজনেই পিএইচডি ড্রপ আউট। অধিকাংশ আন্তারপ্রেনারই কলেজ ড্রপ আউট- জাকারবার্গ, বিল গেটস, স্টিভ জবস, মুকেশ আম্বানী, গৌতম আদানী- লিস্ট বেসিক্যালি হুজ হু। অর্থাৎ যেটা আপনি ভাবছেন-আপনার জীবনের আর কিছু হবে না। কেরিয়ার আটকে গেল। ভুল ভাবছেন। কোন কিছুতেই কিছু আটকায় না।
এই জীবন লম্বা ম্যারাথন। এক দুবার পড়ে গেলে পিছিয়ে যাবে না কেউ। বরং সুস্থ থেকে লম্বা দৌড়ের ক্ষমতা অর্জনটাই আসল।
( অনেকেই আমাকে ইনবক্স করেছেন, কি করে আমার আগের লেখা, বা আগামী লেখাগুলো পাওয়া যাবে। ইজি ওয়ে- আমার প্রোফাইলে Follow বাটনে ক্লিক করলেই হবে )
(

No comments: