মধ্যম মেধা, নিম্ন মেধার ছেলেমেয়েরা কি করবে? তাদের নিয়ে কিছু বলুন? জীবন ও জীবিকা- পর্ব -১৬
বিপ্লব পাল, ২৬ শে মে, ২০২৩
ফেসবুক, আনন্দবাজার খুললেই মেধাতালিকা। মুদির দোকানের ফর্দর মতন। নিজে নরেন্দ্রপুর, আই আই টি খরগপুরে পড়েছি। ওই তালিকায় যারা থাকত, সেই ধরনের ছেলেদের মেধার সাথে আমি বিলক্ষন পরিচিত। দীর্ঘদিন। তাই কিছু লিখি নি। শুধু হাঁসছি। কারন মেধা দিয়ে খুব বেশী কিছু হয় না জীবনে!
অন্যদিকে আমার ফেসবুকে ভরে যাচ্ছে রিকোয়েস্টে-দাদা আমার ছেলে বা মেয়েটা অতটা মেধাবী না! আপনি সাধারন ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু বলুন! একজন লিখেই দিলেন-আমি উত্তরবঙ্গের গ্রামে থাকি। আপনি শুধু কোলকাতার মেধাবী ছেলেমেয়েদের জন্যেই লিখছেন। আমাদের গ্রামের সাধারন ছেলেমেয়েরা কি করতে পারে তাই নিয়ে বলুন। কি বিপদ! আমি নিজেও কলকাতার অনেক দূরে বাংলার গ্রামেই বড় হয়েছি। তখন ত ইন্টারনেট ও ছিল না।
মেধার হিন্যমন্যতা, অর্থের হিন্যমন্যতার এই মহামারী, কোভিড-১৯ এর মহামারীর থেকেও বিপজ্জ্বনক। নিম্নমেধা, মধ্যমমেধা- ছেলেটার মাথা নেই- ওর পড়াশোনা হবে না- এত ভুল চিন্তা আসে কোত্থেকে?
এগুলি তৈরী করে যারা শিক্ষা ব্যবসায় আছে-তারা। যাতে ছেলেটিকে আপনি টিউশনিতে পাঠান। যাতে ছেলেটিকে আপনি প্রাইভেট স্কুল বা কলেজে পাঠান। তারা আসলে আপনাকে ভয় দেখাচ্ছে-আপনার ছেলে বা মেয়ে সফল হবে না- তাদের কাছে না পাঠালে। যেন সে নিজে নিজে শেখার ক্ষমতা রাখে না! আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনার ছেলে বা মেয়ে নিজে পড়াশোনা করলে সব থেকে ভাল শিখবে-আপনি কি শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠাবেন? আমি ১১ পর্বেই লিখেছিলাম , সেলফ লার্নিং ছাড়া এযুগে শেখা অচল। অথচ আপনি আপনার ছেলেমেয়েকে ৭-৯ টা টিউশনি দিচ্ছেন। তারপর লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রাইভেট কলেজে পড়ালেন। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করল। তারপরে কি? হয় এখনো প্লেসমেন্ট পায় নি। না হলে প্লেসমেন্ট হয়েছে, কিন্ত তিন বছর ধরে সেই ২০ হাজার টাকার মাইনেতে বসে আছে! তখন সেখান থেকে ছাড়িয়ে আবার ১ লাখ টাকা খরচ করে তাকে এম বি এ পড়াচ্ছেন। তারপরে? সেখানে দেখা গেল-এম বি এ করে সেলসে গেল। সেখানে সপ্তাহে ৮০ ঘন্টা খেটে -ছমাস বাদে মানসিক অবসাদে ভুগে ছেলে ঘরে বসে আছে!
আমি কোন গল্প বলছি না। আমি চোখের সামনে এসব কেস দেখছি। সেইজন্যেই কলম তুলে নিয়েছি। ভুক্তভোগী ছেলেমেয়েগুলো, তাদের বাবা-মায়েরা এসব কথা কাউকে বলতে পারে না! জানে তাতে তাদের দুর্ভাগ্যে, অন্যরা মজা লুটবে! প্রতিবেশী বলবে ও ছেলেটা ত খুব মিডিওকার ছিল- আগেই বলেছিলাম ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং না দিতে!! তা বাবামায়ের চাঁদ ধরার শখ! এখন বোঝ! কি সমাজ আমাদের।
যে মাছ বা সব্জির ব্যবসা করে, সেও আজকাল মাসে ৫০ হাজার টাকা আনে! আপনি কি এতটাকা খরচ করে, এত টিচার দিয়ে এই চেয়েছিলেন? কিন্ত আপনি মেনে নিয়েছেন। কারন আপনাকে বোঝানো হয়েছে- আপনার ছেলেত মিডিওকার! তার মেধা নেই! ত কি করবে! এইভাবেই জীবনেই ঘষ্টাবে! আর আপনিও তাদের কথা বিশ্বাস করে, আরো টাকা খরচ করে, আরো শিক্ষক দিয়ে, ভুল্ভাল কলেজের পকেট ভরে ছেলের আরো সর্বনাশ করবেন! আপনি "স্ক্যামের" শিকার। একজন মাছ ব্যবসায়ী আপনাকে পচা মাছ বেচতে পারে? পারে না। কারন আপনি জানেন ভাল মাছ কি। কিন্ত ছেলেটার ভাল কিসে হবে সেটা জানেন না বলে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন কেনাবেচার সিদ্ধান্তে ভুল করলেন!
[ প্রফাইল ফলো করতে থাকুন-আমি আরো ডিটেলেসে লিখব কিভাবে শিক্ষা ব্যবসার খপ্পরে এসে আপনার ছেলেমেয়েদের সর্বনাশ হচ্ছে... ]
মেধা সম্মন্ধে ৬ টি সত্য কথা আগে জানুন। মেধা বা আই কিউ অবশ্যই সবার আলাদা। কিন্ত-------
#১ কেউ বেশী বা কম মেধা নিয়ে জন্মায় না। ডি এন এর গঠনের সামান্য তারতম্যে মাথার গঠন বা শরীরের গঠনে কেউ কেউ সামান্য এডভান্টেজ নিয়ে জন্মায়। কিন্ত সেটা খেলোয়ারদের জন্য সত্য। মাথা বা মনের ক্ষেত্রে পুরোটাই একোয়ার্ড-বা অর্জিত। ধরুন, অমর্ত সেন, আশুতোষ সেনের গৃহে না জন্মে, এক রিক্সোওয়ালার গৃহে জন্মালেন। কি হত? খুব বেশী-খুবই বেশী লিপ ফরোয়ার্ড হলে, এদ্দিন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকতা করে অবসর নিতেন ! একটা ছেলেমেয়েকে ২ বছর বয়স থেকে কিভাবে বড় করছেন-তার ওপর নির্ভর করবে ছেলে বা মেয়েটি কেমন মেধাবী হবে। এর মধ্যে অনেক কিছু আছে-শরীরচর্চা এবং মনের চর্চা-আঁকা, কবিতা, কঠিন অঙ্ককে সহজ করার ক্ষমতা-মোদ্দা কথা নিউরনের কন্ডিশনিং [ এই নিয়ে ৯ নবম পর্বে লিখেছি ]। যা একটা শিশুর ক্ষেত্রে দুবছর বয়স থেকে শুরু হয়। সুতরাং কেউ জন্ম থেকে মেধাগত ভাবে পঙ্গু না।
#২ সাফল্যের সাথে মেধার সম্পর্ক আছে-কিন্ত ক্ষীন। সফল হতে সবার থেকে যেটা বেশী লাগে-সেটা হচ্ছে সফল হওয়ার জন্য খিদে। আপনার ছেলে বা মেয়ে যদি অসফল হয় তার কারন মেধা না। তার কারন নিচের এই ছটি হ্যাবিট না গড়ে ওঠা। আপনি যদি আজ গরীব বা নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনের জন্য অখুশী-জানবেন আপনার ব্যর্থতার পেছনেও এই ছটি হ্যাবিটের অভাব ---মেধার অভাব বা আপনি কোন গৃহে জন্মেছেন -তারজন্য আপনি গরীব নন--
> নিজের সাফল্য, ব্যর্থতার দায় নিজে নেওয়া--অজুহাত না দেওয়া। নিজেকেই দোষ দেওয়া শিখতে হবে- ভুল, ব্যর্থতা কেন এল চিন্তা করতে হবে- তার মধ্যে থেকে নিজের ভুলটা ঠিক করতে হবে। অন্যর দোষ, স্কুলের দোষ, মাস্টারের দোষ , কঠিন পেপারের দোষ দিলে হবে না
>অর্গানাইজ > প্রতিদিন সে কি করবে- সেটা সকালে মাথায় যেন থাকে- এবং সেই লিস্টটা সেই দিনের মধ্যেই শেষ করা, নিজের কর্মকান্ড, পড়াশোনা, টাইমলি প্ল্যান করা। প্রতিদিন।
> একশন >> সারাদিনের যা প্ল্যানিং, সেটাকে এক্সিকিউট করা নিখুঁত ভাবে। এফর্ট দিয়ে। পরিশ্রম করতে হবে, প্ল্যানিং অনুযায়ী। ভুলভাল পরিশ্রম করে লাভ নেই।
> এক্সসিলেন্স বা উৎকর্ষতার জন্য সর্বদা চেষ্টা-এইটা সবার আগে দরকার। যারা অলিম্পিকের গোল্ডমেডালিস্ট বা বিখ্যাত ক্রীড়াবিদদের ওপর গবেষনা করেছেন- তারা দেখেছেন একই জিনিস পৃথিবীর সব থেকে বড় কৃতবিদ্যদের জন্যও সত্য। যদি ভূগোল পড়া উদ্দেশ্য হয়- তাহলে, এক্সিলেন্সের মানে হল, সে সব বই, সব রিসোর্স, সব ইউটিউব খুলে- নিজের সামারী বানিয়েছে। তার নিজের মধ্যে চেষ্টা থাকবে, ওই চাপ্টারটা সবার থেকে ভাল শিখব। মোটেও চেষ্টা থাকবে না, মাস্টার মশাই এর নোট মুখস্থ করে , উত্তর মুখস্থ করে বমি করে, নাম্বার পেলেই হল! ওই এটিচুড তৈরী হলে, তার ভবিষ্যত ঘষ্টাবে।
> পারসুয়েশন-বা ক্রমাগত লেগে থাকা। একটা কঠিন অঙ্ক হচ্ছে না। অনেক ভাবে চেষ্টা করতে হবে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। লেগে থাক। অনেক রিসোর্স, অনেক ভিডিও অনেক বই দেখ। যতক্ষন না শেখা সম্পূর্ন না হচ্ছে। যতক্ষন তা না হচ্ছে। এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ট্রেইট সাফল্যের জন্য। হাল ছাড়লে হবে না।
> ক্রমাগত জ্ঞান অর্জন- শুধু পড়াশোনার জন্য না। স্কুলের বইতে কিছু নেই। তার বাইরে যে বিরাট জগত, ইতিহাস, দর্শন, মনোবিদ্যা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, আন্তজাতিক এবং জাতীয় রাজনীতি। তা অবশ্যই পড়তে হবে। নইলে বুঝতেই পারবে না এই জগতটা কিভাবে চলছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সেখান থেকেই আসবে। এই যে আমি এত গুলো পেশার মাইনে থেকে ভবিষ্যত এত কিছু জানি। কেন? আমার ত এটা কেরিয়ার না! আমার ছেলের ও না! কিন্ত কোলকাতায় আমার চারটে কোম্পানী আছে। সেখানে লোক নিতে হয়। সব ডিসিপ্লিনের ছেলেমেয়েরা কাজে ঢোকে। মানব সম্পদই সেখানে আসল। একাডেমিক্সের খুব ভাল রেজাল্ট করা ছেলেমেয়েদের ও দেখছি সেখানে হাল খারাপ। কেন এমন হচ্ছে-সেটা অনুসন্ধান করতে গিয়েই আমি এত কিছু জেনেছি।
# ৩ আপনার ছেলেমেয়ে যে কাজেই যান না কেন- তা ফিটার, ওয়েল্ডার, ইলেক্ট্রিশিয়ান-ডাক্তার অধ্যাপক-সব কাজেই মেধা লাগে। একজন যাদবপুরে ডেটা সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছে-তাই তার মেধা লাগবে, আরেকজন আই টি আই থেকে ডিপ্লোমা করছে ওয়েল্ডার হওয়ার জন্য- তাই তার মেধা লাগবে না-এসব ধারনা ছাড়তে হবে। ওয়েল্ডিং এরকাজ খুব শক্ত। আমেরিকাতে ভাল ওয়েল্ডারদের বিরাট ডিমান্ড। তারা কিন্ত টেকনিশিয়ান। ইঞ্জিনিয়ার না। ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বিগুন ইনকাম করে। ভারতেও ভাল ওয়েল্ডারদের মাইনে ৫০-৮০ হাজার টাকা। কারন সে কাজেও উৎকর্ষতা লাগে। আমার কোলকাতার বাড়িয়ে যে প্লাম্বিং বা জলের লাইনের কাজ করে- সেই মিস্ত্রিও মাস গেলে ৪০ হাজার রোজগার করে। সেও তার কাজ খুব ভাল জানে।
ধরুন, এই পর্বের শুরুটা আমি এইভাবে করতে পারতাম। যারা মেধাবী না-তাদের জন্য কত লাইন। হোটেল ম্যানেজমেন্ট, আই টি আই ডিপ্লোমা, ফিটার, কলের মিস্ত্রি, জলের মিস্ত্রি, প্যারা মেডিক্যাল, নার্সিং --ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত এসব বোগাস কথাবার্ত্তা। সাফল্য পেতে গেলে প্রত্যেককেই তার নিজের লাইনে উৎকর্ষতা অর্জন করতে হবে। আর সেটা করতে গেলে, ওই যে ছটা হ্যাবিট বল্লাম, ওই ছটি ফলো করতেই হবে।
মেধা না - জীবনে সাফল্য পেতে গেলে ওই ছটি হ্যাবিটই আসল। এগুলি আমার আবিস্কার না। সমাজ বিজ্ঞানীরা সফল মানুষদের ওপর গবেষনা করে এইসব সিদ্ধান্তে এসেছেন।
একটা গল্প বলি। করিমপুরে আমার বাড়িতে একজন ছুতোর মিস্ত্রি ছিল। নাম সত্য মিস্ত্রি। ওই অঞ্চলে তখন তার কাজের খুব খ্যাতি। ওই আশির দশকে বাড়ির ফার্নিচার কাঠ কিনে, মিস্ত্রিকে দিয়ে বানানো হত। উনি আমার বাড়ির জন্য এমন সব কাঁঠাল কাঠের চেয়ার খাট বানিয়েছেন, আমার ধারনা দুশো বছর চলে যাবে। এত নিখুঁত ছিল তার কাজ। ভদ্রলোক ক্লাস ফোরের বেশী পড়েন নি। কিন্ত জ্যমিতির হিসাব করতেন নিঁখুত ভাবে-নইলে এত সুঠাম কাঠামোর নির্ভুল ফার্নিচার বানানো সম্ভব হত না। অথচ অন্য মিস্ত্রিদের করা চেয়ার টেবিল, পাঁচ বছর বয়স থেকেই নড়বর করা শুরু করত। সত্য মিস্ত্রি সেই যুগে অন্যদের থেকে তিনগুন বেশী চার্জ করতেন। সময় নিতেন ও দ্বিগুন। আমার মনে আছে, সেই সময় তিনি হাইস্কুলের মাস্টারমশাইদের থেকে বেশী ইনকাম করতেন!
তিনি ক্লাস ফোর অব্দি পড়েছেন, তাই তার মেধা নেই? সব মেধা যারা মেধাতালিকার ফর্দে নাম তুলেছে?
আমেরিকাতে আমাদের এক অন্যতম ইনভেস্টর- হাইস্কুল পাশ। যারা ৮০টি পেটেন্ট এবং ৭ টি ইন্ডাস্ট্রি। তিনি আমেরিকার ম্যানুফাকচারিং এর হল অব ফেমে আছেন। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা আবিস্কারক থমাস আলফা এডিশন দারিদ্রের জন্য স্কুলেই পড়েন নি- কেমিস্ট্রি ল্যাবের ঝাড়ুদার হিসাবে কাজ শিখেছেন-ঝাড়ুদার থেকে এসিস্টান্ট। আমেরিকাতে স্টিল ইন্ডাস্ট্রির জনক এন্ড্র কার্নেগী ক্লাস এইটে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন-কারন পারিবারিক দারিদ্র। পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির জনক রকাফেলার, ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন। কারন তার বাবা, মাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সাথে পালিয়েছিল!
হ্যা, এদের মধ্যে কমন ফ্যাক্টর কি জানেন? ওই ছটি হ্যাবিট ছিল। বিশেষত পড়াশোনা করার। কার্নেগীর বয়স তখন ১৪। রাত আটটার সময় কাজ শেষে ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। সমবয়সীরা স্কুলে যাচ্ছে। উনি ওই খিদে পেটেই পাড়ার লাইব্রেরীতে ছুটতেন। বই তুলতেন। পড়তেন। শিখতেন নিজে নিজেই।
মাইক্রোসফটের সি ই ও, সত্য নাদেলা আই আই টিতে চান্স পান নি। রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়েছেন। তাহলে উনি সবার থেকে এগোলেন কি করে? তার থেকে ত অনেক বেশী মেধাবীরা আই আই টি থেকে পাশ করেছে। কারন তারা শেখার উদোম ইচ্ছা। উনি কখনোই ভাবেন না সব শিখে বসে আছি। সব সময় বলছেন, আমি শিখছি। তোমরা আমাকে শেখাও।
গুগুলের সিইও সুন্দর পিচাই আমাদের এক বছরের সিনিয়ার। হোষ্টেলে আমার পাশের রুমে, তার সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকত। সেই সূত্রে পিচাইকে অনেক কাছ দেখার সুযোগ হয়েছে ছাত্রজীবনে। পিচাইএর র্যাঙ্ক ছিল ১২০০-১৩০০ এর কাছাকাছি। আই আই টিতেও তাকে কেউ চিনত না। কারন তা ব্যাচে তার থেকে অনেক অনেক বেশী মেধাবী ছেলেরা ছিল। কিন্ত পিচাই এর অসম্ভব এক ভালগুন । সব সময় গভীর চিন্তা করে । অত্যন্ত বিনয়ী। সব জেনে বসে আছি, সেই দাম্ভিকতা-যে ভাইরাল রোগ আপনি বাংলার ডাক্তার, শিক্ষক, মুখ্যমন্ত্রী থেকে সবার মধ্যে দেখবেন-তা ছিল না।
আপনি আপনার দুরবস্থা, আপনার ছেলের দুরাবস্থার জন্য যত খুশী রাজনীতি, বাঙালী, বাবা-মায়ের দোষ দিতেই পারেন। কিন্ত আপনার ভাগ্য বদলাবে না। আপনি বা আপনার সন্তানের ভাগ্য সেদিনই বদলাবে, যেদিন ওই ছটি হ্যাবিট শিখবে। আর ওই ছটি হ্যাবিটে থাকলে, আপনার ছেলে ফিটারই হোক বা কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট- সে সবার সেরাই হবে।
আমি আবার লিখছি। অধিকাংশ অভিভাবক আমাকে পর্ব ১- থেকে ১৪না পড়েই প্রশ্ন করছেন। যার উত্তর আমি আগেই দিয়েছি লেখাতে। এর মানে কি? অভিভাবকরা নিজেরাই পরিশ্রমী না। নিজেদেরই শেখার ইচ্ছা নেই। অথচ এদের ইচ্ছে, তাদের সন্তানেরা শিখবে? লাইফে সাইন করবে। তাই কখনো হয়??? আগে অভিভাবক হিসাবে আপনি ওই ছটি হ্যাবিট রপ্ত করুন। আপনার ছেলেও করবে। তাতে আপনার ও ভাল। ছেলের ও ভাল। আপনি টিভি সিরিয়াল দেখবেন, আপনার নিজের পড়াশোনার অভ্যেস নেই- আর আপনার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে সেটা মুশকিল। আপনি আপনার ছেলেমেয়ের সাথে একসাথে নিউজপেপার পড়ুন। একসাথে আন্তর্জাতিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করুন। সে এমনিতেই পড়বে।
আগামী পর্বগুলোর জন্য প্রোফাইল ফলো করুন। আমি সব সাবজেক্টের প্রসপেক্ট নিয়েই লিখব। আমি এগুলো লিখতে পারছি-কারন ব্যবসার জন্য আমি ভারতে বছরে ৫-৬ বার আসি। কোলকাতায় আমার কোম্পানি, ফ্যাক্টরি আছে। প্রচুর পেশাদার লোকেদের সাথে দেখা হয়। তাদের কাছ থেকে শিখি। আপনাদের কাছ থেকেও শিখছি। প্রশ্ন করতে থাকুন। কিন্ত দরিদ্র, গ্রামে থাকি, মিডিওকার এসব অজুহাত দেবেন না। আমার কাছে এসব যারা বলছে, আসলে তাদের ওই ছটি হ্যাবিট নেই।
ছেলেমেয়েকে তোর দ্বারা হবে না, তোর মাথা নেই, তুই ওর মত মেধাবী না-এসব না বলে- তাকে ওই ছটি হ্যাবিটের রুটিনে আনুন। আর স্বপ্ন দেখান-ওই ছটি হ্যাবিট অভ্যেস করতে পারলে, সেও একদিন নিজের ফিল্ডে বিশ্বজয় করবে। যদি সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ যায়, সে নিজেই বিরাট স্টার্টাপ খুলবে। সে যদি ফিটার বা কলের মিস্ত্রি হয়- যেন বাংলার সেরা কলের মিস্ত্রি হয়!
কিন্ত ওই প্রাইভেট স্কুলের ১০ হাজার টাকার মাস্টারমশাইএর চাকরির জন্য ১০ জনের সাথে কুস্তি করতে হলে- জানবেন শিক্ষাব্যবসায়ীদের স্ক্যামে বিশ্বাস করে আপনি ঠকেছেন!
শনিবার সন্ধ্যা ৫-৩০ শে গুগুল মিট এবং ফেসবুক লাইভে দেখা হবে। প্রোফাইল ফলো না করলে, লাইভ পাবেন না।
No comments:
Post a Comment