Wednesday, September 30, 2015

এক মহম্মদ আখলাক এবং হিটলারের গল্প

নয়দার ওই গ্রামে সাত হাজার ঘরের মধ্যে মাত্র দুটি ফ্যামিলি মুসলমান। আখলাক ফ্যামিলি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। আর পাঁচটা হিন্দু ফ্যামিলির মতন। ঈদে তাদের গৃহে মুসলমানদের থেকে হিন্দু অথিতিই থাকত বেশী।  মন্দিরে মাইকে জানানো হল, তার গৃহে গরুর মাংস আছে। ব্যাস শ-খানেক লোক চড়াও হয়ে, লোকটাকে মেরেই দিল বাড়ি ভাংচুর করে।

 ইতিহাস বড় নির্মম শিক্ষক। থার্ড রাইখ তখন ক্ষমতায়।  বিরোধি ধ্বংশ করে হিটলার একচ্ছত্র ক্ষমতায়।  সেই উল্কীয় উত্থানের পেছনে দুটি পিলার। প্রথমটা হচ্ছে হিটলারের হাত ধরে জার্মান অর্থনীতিতে উন্নয়নের জোয়ার আসে। হিটলারের মতন "বিকাশ পুরুষ" পৃথিবীর ইতিহাসেই জন্মায় নি। ১৯২০-৩০ সালে জার্মানরা তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে গেছে। অধিকাংশ জার্মান ছিল বেকার। এটা ত অস্বীকার করার উপায় নেই জার্মানরা তাকেই ভোট দিয়েছে । তার ওপরেই আস্থা রেখেছে। কারন হিটলার নামোর মতন আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতাই এসেছেন । জার্মানিতে সত্যিই আস্তে আস্তে "আচ্ছে দিন" আসছিল। তাই হিটলার ভোটে জিতলেন। একবার না, তিনবার।  তার নাৎসি বাহিনী  যে যেখানে সেখানে ইহুদিদের খুন করছে এটা কি সেই জার্মান ভোটাররা জানত না?  মহম্মদ আখলাককে যে ছুতোয় খুন করা হল-কুলবর্গীর মতন হিন্দুত্ব বিরোধি স্বরকে যেভাবে বুলেটে থামানো হল-এটা ত একদম নাৎসিদের চেনা প্যাটার্ন। সংখ্যালঘু- রাজনৈতিক বিরোধিদের যেকোন ছুতোয় হত্যা করা জনমানসে ভয় ঢুকিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করা, ন্যাৎসি পেটেন্ডেড ট্রেড মার্ক। তাও সাধারন ভোটারা হিটলারের বিকাশ পুরুষ অবতারে বিশ্বাস রেখেছিল। কি আর করা যাবে । বিশ্বাস মানেই যে অন্ধ বিশ্বাস।

যে প্রশ্নটা মোদি বিরোধিদের আজ করতে হবে-- কি করে হিটলার বা মোদির মতন লোকেরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ভোটে জিতে এসে ফ্যাসিজম চালান?  কেন লোকেরা তাদের ভোট দেয়? আমি সেখানেও জার্মানির ইতিহাসের সমান্তরাল ঘটনা পাচ্ছি।

 ১৯২৯-৩৩ নাৎসিদের সাথে কমিনিউস্টদের বিভৎস মারামারি হয়েছে জার্মানিতে। কিন্ত ১৯৩৪ সালের মধ্যেই সম্পূর্ন কমিনিউস্ট মুক্ত হয় জার্মানি। কেন হেরে গেল কমিনিউস্টরা? কেন হেরে গেল স্যোশাল ডেমোক্রাটরা ?

কোন সন্দেহই নেই জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ট লোকেরা ছিল "বিকাশপুরুষ" হিটলারের আচ্ছেদিনের আশাতে মোহিত। এবং সত্যিকারের আচ্ছে দিন আসছিল ও হিটলারের হাত ধরে। হিটলারকে দেদারসে সার্টিফিকেট দিয়েছেন আমেরিকার বৃহৎ শিল্পপতিরা। তাতে জার্মান মানসে হিটলার নিয়ে আরো আশার সঞ্চার হয়। ফলে সবাই ফ্যাসিজমকে ইগনর করা শুরু করে। সব থেকে বড় কথা জার্মানরা যেতই বা কোথায়? কমিনিউস্টরা ত কোন সমাধান নয়-আরো বেশী সমস্যা। তারাও রাজনৈতিক ফ্যাসিস্ট।  আর সেন্ট্রিস্টরা রাজনীতিতে বরাবর শামুকের খোলাতেই থাকে। ভারতেও সেই একই সমস্যা। লোকে ভোটটা দেবে কাকে? সুতরাং এই হতাশার রাজনীতিতে মোদির বিকাশবানী আরো তীব্রতর হবে। হিটলার এটা ভাল জানতেন বলেই, সেটাকেই খাইয়েছিলেন আচ্ছা করে। এখন মোদির ট্যাকটিস ও তাই। হয়ত সব ফ্যাসিজমের এক পলিসি।

গরুর মাংস খাওয়ার সাথে হিন্দু ধর্মের কোন সম্পর্কই নেই।  প্রাচীন ভারতে গরুর মাংসের উল্লেখ আছে কিন্ত ছাগল বা মুর্গীর মাংসের কোন উল্লেখ নেই।  গরুর মাংস বিরোধি আন্দোলন ফ্যাসিজমের সিম্বলিজম। একটা ছুতো চাই। যা কাজে লাগিয়ে জনগণের মনে ভয় ঢোকানো যাবে।


No comments: