জাস্টিস কার্জু নেতাজি এবং জাপান নিয়ে যে ইতিহাস টুকু বলার চেষ্টা করেছেন, সেটা ফ্যাকচুয়ালি কারেক্ট। কিন্ত নেতাজী জাপানের চর ছিলেন-এটা নিঃসন্দেহে অপমানজনক কথা। উনি হাইপার না হয়ে যদি শ্রেফ এটুকু বলতেন, নেতাজী-জাপানের হাত ধরে ভারতের স্বাধীনতা আসত না-জাপান জিতলে, ভারতের মাস্টার বৃটিশরা না হয়ে জাপানীরা হত-তাহলে তার বক্তব্য বিরোধিতা করা কঠিনই হত।
এবার কার্টজুর ইতিহাসে আসা যাক। আই এন এ জিতলে, ভারত কি স্বাধীন হত?
উত্তর হচ্ছে একেবারেই না। ভারতের জাপানের অধীনে চলে যেত সরাসরি। জাপান যেসব জায়গা ১৯৩০ সাল থেকে দখল করে বসে ছিল যেমন মাঞ্চুরিয়া, কোরিয়া-সর্বত্রই এক পুতুল সরকার সামনে রেখে তারা অবাধ কলোনিয়ালাইজেশন আর নির্লজ্জ্ব লুঠ চালিয়েছে। নেতাজি তেমন এক পুতুল প্রধানমন্ত্রী হতেন বড়জোর সেই ক্ষেত্রে।
এবং নেতাজি যে জাপানের হাতের পুতুল হতেন তার অকাট্য প্রমান আছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে-যখন আন্দামান নিকোবর জাপানীদের হাতে চলে যায় 1942 সাল থেকে '৪৫ সাল পর্যন্ত।
২৬ শে মার্চ , ১৯৪২ পোর্ট ব্লেয়ারের পতন হয়। তখন ভারতীয়দের বলা হয় রাসবিহারী বসুর ইন্ডিপেনেডেন্স লীগে জয়েন করে বৃটিশ বিরোধি মিলিশিয়া তৈরী করতে। ডঃ দিওয়ান সিং এর নেতা ছিলেন। আদতে এই মিলিশিয়াকে জোর করা হয়েছিল, স্থানীয় মেয়েদের জাপানী সেনাদের জন্য কম্ফোর্ট গার্ল হিসাবে তুলে দিতে। আর মিলিটারির জন্য স্থানীয়দের শ্রমদান বাধ্যতা মূলক করতে। ফলে লীগের কিছু মেম্বার বিদ্রোহ করে এবং তাদের জাপানী সেনারা মেরে ফেলে। তাদের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্সে লীগের নেতা ড ঃ দিওয়ান সিং ও ছিলেন। যাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছিল জাপানী সেনারা। কারন তিনি স্থানীয় মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন।
আনুষ্ঠানিক ভাবে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নেতাজীর হাতে তুলে দেওয়া হয় 1943 সালের ২৯ শে ডিশেম্বর। নেতাজি জানতেনই না আন্দামান নিকোবরে ভারতীয়দের কি ভাবে দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে এবং কিভাবে জাপানী সেনারা স্থানীয় মেয়েদের ধর্ষন করছে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে গিয়ে! উনি নাকি এটাও জানতেন না লীগের নেতা ( যে লীগের দ্বায়িত্ব তিনি রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে নিয়ে ছলেন ) দিওয়ান সিংকে জাপানী সেনারা পিটিয়ে মেরেছিল ! নেতাজি আসার আগে প্রায় ৬০০ জন ভারতীয়কে খুন করেছিল জাপানী সেনারা। যাদের অধিকাংশই আবার লীগের মেম্বার ছিল!
নেতাজি সেলুরাল জেলে তেরঙ্গা উত্তোরন করেন ৩০ শে ডিসেম্বর। আন্দামান নিকোবরের নাম দিলেন শহীদ এবং স্বরাজ। নেতাজি এ ডি লোগানাথনকে গর্ভনর করে দ্বীপ ছাড়েন। কিন্ত এডি লোগানাথনের সাক্ষ্যে [১]এটা পরিস্কার যে নেতাজি দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া মাত্র দ্বীপের অধিকার আবার জাপানীদের হাতেই চলে যায়। লোগানাথনের হাতে না ছিল পুলিশ না ছিল অন্য কিছুর ক্ষমতা। নেতাজি দ্বীপ ছাড়ার একমাস বাদেই ঘটে হাম্ফ্রেগঞ্জ ম্যাসাকার। যেতে লীগের ৪৪ জন মেম্বারকে একদিনে হত্যা করে জাপানীরা-কারন তারা জাপানী অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে আন্দামান মুক্ত হয় জাপানী বাহিনীর। তদ্দিনে প্রায় ২০০০ ভারতীয় খুন করেছিল জাপানী সেনারা। এবং দ্বীপে এমন কোন সক্ষম মহিলা ছিল না যাকে তারা ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যায় নি।
এবং নেতাজী কিছুই না কি টের পান নি!! সব কিছু তার নামেই চলেছে!
সুভাস বোসের ইতিহাস মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখলে দেখা যাবে, উনার দেশপ্রেমের আবেগ ছিল বেশী-রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল কম-যার জন্য উদারভাবে মুসোলিনী এবং হিটলারের প্রসংশা করেছেন। জাপান বা জার্মানীর সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসান তার চোখেই পড়ে নি!
আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ঘটনা খুব পরিস্কার ভাবেই প্রমান করে, ভারত দখল করলে জাপানীরা কি করত। নেতাজিকে পুতুলমন্ত্রী করে ভারত শোষন করত জাপানিরা-যা তারা করেছে কোরিয়া, মাঞ্চুরিয়া, ভিয়েতনাম আর চীনে। আর প্রতিবাদ করলে নেতাজিকে পরপারে পাঠিয়ে দিত। তবে নেতাজি জাপানী শোষনের প্রতিবাদ করতেন, একথা বিশ্বাস করা শক্ত আন্দামান নিকোবরের ইতিহাস জানার পরে। শুধু আন্দামান না, আরো অনেক ইতিহাস ঘেঁটে আমি এটাই পেয়েছি-নেতাজির নেতৃত্বের লোভ ছিল প্রবল-সেটা দেখানোর ইচ্ছা ছিল আরো বেশী-এবং সেই জন্যে আন্দামানে কি হচ্ছে সব কিছু জেনে শুনেও উনি জাপানী সেনাদের বিরোধিতা করেন নি-পাছে জাপানীরা তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে আই এন এর নেতা বানায়।
সুতরাং জাস্টস কার্জু ভুলটা কি বলেছেন? শুধু দুর্ভাগ্য এই যে আন্দামানের ইতিহাসটাকে উনিও সামনে আনেন নি।
নেতাজিকে অতিমানব বানিয়েছে বাঙালী। আন্দামানের ইতিহাস প্রমান যে উনি সফল হলে, ভারতীয়দের কপালে, আরো বেশী দুঃখই লেখা ছিল!
যারা জাস্টিস কার্জুর বিরোধিতা করছেন, তারা ইতিহাস পড়েন নি। অর্নব গোস্বামীর কথা ছেড়ে দিলাম। ওটা ভারতের টেলিভিশন ইতিহাসের সব থেকে বড় বলদ।
ইতিহাস হচ্ছে সেই ম্যাগনিফ্যাইং গ্ল্যাস যেখানে নেতাজি, গান্ধী, লেনিন, নেহেরু-ইত্যাদি সব "বড়" "বড়" মহামানব ম্যানুফ্যাকচার করা হয় রূপকথা মিশিয়ে । আদতেই পৃথবীতে কোনদিন কোন মহামানব জন্মায় নি-জন্মেছে দোষগুন নিয়ে সাধারন মানুষ। রূপকথা মিশিয়ে কিছু কিছু মানুষকে মহামানব বানানো হয়েছে-কারন সকল জাতিই অনুপ্রেরণার জন্য "হিরো" খোঁজে। এই দিক থেকে সাউথ ইন্ডিয়ানরা খাঁটি- তারা রজনীকান্ত সিনেমা থেকেই তোলে- রাজনীতিবিদদের রজনীকান্ত বানায় না।
[১] Jayant Dasgupta Japanese in Andaman & Nicobar Islands. Red Sun over Black Water(Delhi: Manas Publications) 2002 pp42, 88-91
এবার কার্টজুর ইতিহাসে আসা যাক। আই এন এ জিতলে, ভারত কি স্বাধীন হত?
উত্তর হচ্ছে একেবারেই না। ভারতের জাপানের অধীনে চলে যেত সরাসরি। জাপান যেসব জায়গা ১৯৩০ সাল থেকে দখল করে বসে ছিল যেমন মাঞ্চুরিয়া, কোরিয়া-সর্বত্রই এক পুতুল সরকার সামনে রেখে তারা অবাধ কলোনিয়ালাইজেশন আর নির্লজ্জ্ব লুঠ চালিয়েছে। নেতাজি তেমন এক পুতুল প্রধানমন্ত্রী হতেন বড়জোর সেই ক্ষেত্রে।
এবং নেতাজি যে জাপানের হাতের পুতুল হতেন তার অকাট্য প্রমান আছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে-যখন আন্দামান নিকোবর জাপানীদের হাতে চলে যায় 1942 সাল থেকে '৪৫ সাল পর্যন্ত।
২৬ শে মার্চ , ১৯৪২ পোর্ট ব্লেয়ারের পতন হয়। তখন ভারতীয়দের বলা হয় রাসবিহারী বসুর ইন্ডিপেনেডেন্স লীগে জয়েন করে বৃটিশ বিরোধি মিলিশিয়া তৈরী করতে। ডঃ দিওয়ান সিং এর নেতা ছিলেন। আদতে এই মিলিশিয়াকে জোর করা হয়েছিল, স্থানীয় মেয়েদের জাপানী সেনাদের জন্য কম্ফোর্ট গার্ল হিসাবে তুলে দিতে। আর মিলিটারির জন্য স্থানীয়দের শ্রমদান বাধ্যতা মূলক করতে। ফলে লীগের কিছু মেম্বার বিদ্রোহ করে এবং তাদের জাপানী সেনারা মেরে ফেলে। তাদের মধ্যে ইন্ডিপেন্ডেন্সে লীগের নেতা ড ঃ দিওয়ান সিং ও ছিলেন। যাকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরেছিল জাপানী সেনারা। কারন তিনি স্থানীয় মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন।
আনুষ্ঠানিক ভাবে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নেতাজীর হাতে তুলে দেওয়া হয় 1943 সালের ২৯ শে ডিশেম্বর। নেতাজি জানতেনই না আন্দামান নিকোবরে ভারতীয়দের কি ভাবে দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে এবং কিভাবে জাপানী সেনারা স্থানীয় মেয়েদের ধর্ষন করছে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে গিয়ে! উনি নাকি এটাও জানতেন না লীগের নেতা ( যে লীগের দ্বায়িত্ব তিনি রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে নিয়ে ছলেন ) দিওয়ান সিংকে জাপানী সেনারা পিটিয়ে মেরেছিল ! নেতাজি আসার আগে প্রায় ৬০০ জন ভারতীয়কে খুন করেছিল জাপানী সেনারা। যাদের অধিকাংশই আবার লীগের মেম্বার ছিল!
নেতাজি সেলুরাল জেলে তেরঙ্গা উত্তোরন করেন ৩০ শে ডিসেম্বর। আন্দামান নিকোবরের নাম দিলেন শহীদ এবং স্বরাজ। নেতাজি এ ডি লোগানাথনকে গর্ভনর করে দ্বীপ ছাড়েন। কিন্ত এডি লোগানাথনের সাক্ষ্যে [১]এটা পরিস্কার যে নেতাজি দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া মাত্র দ্বীপের অধিকার আবার জাপানীদের হাতেই চলে যায়। লোগানাথনের হাতে না ছিল পুলিশ না ছিল অন্য কিছুর ক্ষমতা। নেতাজি দ্বীপ ছাড়ার একমাস বাদেই ঘটে হাম্ফ্রেগঞ্জ ম্যাসাকার। যেতে লীগের ৪৪ জন মেম্বারকে একদিনে হত্যা করে জাপানীরা-কারন তারা জাপানী অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে আন্দামান মুক্ত হয় জাপানী বাহিনীর। তদ্দিনে প্রায় ২০০০ ভারতীয় খুন করেছিল জাপানী সেনারা। এবং দ্বীপে এমন কোন সক্ষম মহিলা ছিল না যাকে তারা ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যায় নি।
এবং নেতাজী কিছুই না কি টের পান নি!! সব কিছু তার নামেই চলেছে!
সুভাস বোসের ইতিহাস মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখলে দেখা যাবে, উনার দেশপ্রেমের আবেগ ছিল বেশী-রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল কম-যার জন্য উদারভাবে মুসোলিনী এবং হিটলারের প্রসংশা করেছেন। জাপান বা জার্মানীর সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসান তার চোখেই পড়ে নি!
আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ঘটনা খুব পরিস্কার ভাবেই প্রমান করে, ভারত দখল করলে জাপানীরা কি করত। নেতাজিকে পুতুলমন্ত্রী করে ভারত শোষন করত জাপানিরা-যা তারা করেছে কোরিয়া, মাঞ্চুরিয়া, ভিয়েতনাম আর চীনে। আর প্রতিবাদ করলে নেতাজিকে পরপারে পাঠিয়ে দিত। তবে নেতাজি জাপানী শোষনের প্রতিবাদ করতেন, একথা বিশ্বাস করা শক্ত আন্দামান নিকোবরের ইতিহাস জানার পরে। শুধু আন্দামান না, আরো অনেক ইতিহাস ঘেঁটে আমি এটাই পেয়েছি-নেতাজির নেতৃত্বের লোভ ছিল প্রবল-সেটা দেখানোর ইচ্ছা ছিল আরো বেশী-এবং সেই জন্যে আন্দামানে কি হচ্ছে সব কিছু জেনে শুনেও উনি জাপানী সেনাদের বিরোধিতা করেন নি-পাছে জাপানীরা তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে আই এন এর নেতা বানায়।
সুতরাং জাস্টস কার্জু ভুলটা কি বলেছেন? শুধু দুর্ভাগ্য এই যে আন্দামানের ইতিহাসটাকে উনিও সামনে আনেন নি।
নেতাজিকে অতিমানব বানিয়েছে বাঙালী। আন্দামানের ইতিহাস প্রমান যে উনি সফল হলে, ভারতীয়দের কপালে, আরো বেশী দুঃখই লেখা ছিল!
যারা জাস্টিস কার্জুর বিরোধিতা করছেন, তারা ইতিহাস পড়েন নি। অর্নব গোস্বামীর কথা ছেড়ে দিলাম। ওটা ভারতের টেলিভিশন ইতিহাসের সব থেকে বড় বলদ।
ইতিহাস হচ্ছে সেই ম্যাগনিফ্যাইং গ্ল্যাস যেখানে নেতাজি, গান্ধী, লেনিন, নেহেরু-ইত্যাদি সব "বড়" "বড়" মহামানব ম্যানুফ্যাকচার করা হয় রূপকথা মিশিয়ে । আদতেই পৃথবীতে কোনদিন কোন মহামানব জন্মায় নি-জন্মেছে দোষগুন নিয়ে সাধারন মানুষ। রূপকথা মিশিয়ে কিছু কিছু মানুষকে মহামানব বানানো হয়েছে-কারন সকল জাতিই অনুপ্রেরণার জন্য "হিরো" খোঁজে। এই দিক থেকে সাউথ ইন্ডিয়ানরা খাঁটি- তারা রজনীকান্ত সিনেমা থেকেই তোলে- রাজনীতিবিদদের রজনীকান্ত বানায় না।
[১] Jayant Dasgupta Japanese in Andaman & Nicobar Islands. Red Sun over Black Water(Delhi: Manas Publications) 2002 pp42, 88-91
No comments:
Post a Comment