Monday, September 28, 2015

ডিজিটাল ইন্ডিয়া

ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে ভারতবাসীর উত্তেজনা বেশ উপভোগ্য। আমিও উৎসাহিত। কারন পৃথিবীর গত চল্লিশ হাজার বছরের ইতিহাস থেকে যদি কিছু শেখার থাকে, তাহলে সেটা এটাই যে-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই একমাত্র ইতিহাসের গতি বদলেছে।  কৃষিকাজ মানে কি? মানুষ কিভাবে শিখল বনের ফলাহার ছেড়ে বীজ তৈরী করতে হয় ? পশুপালন করতে হয়? পশু এবং উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন করে ফলন উন্নত করা যায়? এগুলো প্রযুক্তি না? এই প্রযুক্তি শেখার মাধ্যমেই ত মানুষ প্যালিওলিথিক যুগ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজে এল।  তখন নিশ্চয় কিছু কিছু বামপন্থী ছিল-যাদের কাজই হচ্ছে বাগড়া দেওয়া এবং তারা ভাবছিল-শালা পৃথিবীর সর্বত্রই ত বন জঙ্গল-কৃষিজমি বলেত কিছু নেই। জমিই নেই ত ভুট্টা বাজরার চাষ করে কি হবে মামা?

     আজও সেই  বামআবালদের যুক্তি শুনে যাচ্ছি- (১)  দেশের অধিকাংশ স্থলে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই (২) লোকের পেটে ভাত নেই (৩) লোকেদের চাকরি নেই--

 তাহলে কেন ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে লাফালাফি?
 
 (১) ইন্টারনেট সংযোগ ভারতের মতন দেশে একদিনে দেওয়া সম্ভব না। ২০০৪ সালে যখন করিমপুরে যেতাম, টুজি কানেকশনে ইমেইল চেক করতেও পারতাম না। ২০১২ সালে যখন শেষ গেছি-দিব্বি ভাল ভিসএনলের কানেকশন দেখেছি। যত ইউজার বাড়বে, তত পরিশেবা দেওয়ার কোম্পানী পাওয়া যাবে।

 (২) লোকের পেটে ভাত নেই। কেন নেই জানেন? কারন ভারতের পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন দুর্নীতিতে ভর্তি।  বিরাট পরিমান খাদ্য নষ্ট হয়। সরকার বন্টন করতে পারে না। এটা কমানোর একমাত্র উপায় লোড সেল বসিয়ে ফুড সাইলোগুলোর ওজন অনলাইনে মনিটর করা।  লোড সেল বা সনিক সেন্সরলাগিয়ে স্টকের একদম পাই টু পাই হিসাব রাখা। কেও যদি ভারতে এই কাজ করতে ইচ্ছুক হয়, তাদের কারিগরী সহোযোগিতা দিতে আমি রাজী। আমেরিকাতে ( এমন কি ভারতেও হয় )  বড় বড় কোম্পানীগুলি প্লাস্টিক প্যালেট, খাদ্য দ্রব্যের স্টক এই ভাবে ট্রাক করে। দুর্নীতি ক্ষিদের বিরুদ্ধে একমাত্র সমাধান আরো উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে দুর্নীতি মুক্ত ডিস্ট্রিবিউশন।

 (৩) লোকেদের চাকরি নেই!!! তা চাকরি কি এখন চট কলে তৈরী হবে?  সেই আশায় বসে থাকলে দেশটা দুর্ভিক্ষে ডুববে। গত দশ বছরে ডিজিটাল প্রযুক্তিই সব থেকে বেশী চাকরি তৈরী করেছে। বামেরা এত ভাম এরা জানেও না যে এখন ডজনে ডজনে ফ্রি ল্যান্সিং সাইট তৈরী হয়েছে, সেখানে ভারত ত ছেড়ে দিন বাংলাদেশের তিন লাখ তরুন কাজ করছে। হ্যা ওডেক্স এবং ইল্যান্স মিলিয়ে ( এখন আপ ওয়ার্ক বলে)  বাংলাদেশের তিন লাখ তরুন এই ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগে নিজেদের কর্মসংস্থান করে নিয়েছে।

  মোদ্দা কথা, যদি দেশ এবং দশের ভালো চান জানবেন বামেরা  হচ্ছে একটা স্পেশাল স্পেসিস-যারা আদতে অশিক্ষিত মূর্খ । প্রাক্টিক্যাল জ্ঞান শুন্যের কোঠায়। এদের হাতে পশ্চিম বঙ্গ চৌত্রিশ বছর তুলে দিয়ে, বাঙালী কালিদাসের মতন নিজের মগডাল নিজেরা কেটেছে। আশি সালে যখন আই বি এম কম্পিউটার ভারতে এল- জ্যোতিবোস সেই কম্পুটার কোলকাতায় ঢুকতে দেন নি। কারন তাতে নাকি লোকের চাকরির ক্ষতি হবে। আমার স্পষ্ট মনে আছে জ্যোতি বোস বিগ্রেডে গর্ব করে বলছে-আমরা মেহনতি মানুষের পক্ষে-তাই কম্পুটারে বিরোধিতা করছি। সাথে সাথে উনি পশ্চিম বঙ্গের আই টি শিল্পের সম্ভাবনারো বারোটা বাজিয়েছিলেন। কারন তখন আই বি এম কম্পুটার চালাতে পারত আই এস আই  আর বার্কের লোকেরা। কোলকাতা ব্যাঙ্গালোর হতে পারত। কিন্ত হয় নি। কারন জ্যোতিবোসের মতন কিছু মূর্খ বাম ছিল বাঙালীর নেতা। এর পরে এটাও বলবো বুদ্ধদেবের মতন কিছু বুদ্ধিমান বাম, অবস্থা কিছুটা ঘুরিয়েছিলেন। ২০০৫-২০০৭ সালে আই টি শিল্পের সব থেকে বেশী গ্রোথ কোলকাতাতেই হচ্ছিল বুদ্ধের সদিচ্ছার কারনে। কিন্ত সেখানেও বাধ সাধল তার পার্টি, তৃনমূলের ভ্রান্ত বিরোধি রাজনীতি।

  তবে আশার কথা এই যে মমতা ব্যানার্জি কিন্ত ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বিরোধিতা করেন নি। উনি বলেছেন মোদির আগে ইউ পি এ সরকার এটা শুরু করেছিল। মোদি মাইলেজ খাচ্ছে। এই রাজনীতিটা গনতন্ত্রে চলাই উচিত। সুতরাং দিদিকে স্যালুট। এখানেই বোঝা যায় দিদির প্রাক্টিক্যাল বোধশক্তি কিছু আছে, ভামেদের সেটাও নেই।

এটা মনে রাখবেন, বোকা বন্ধুর চেয়ে চালাক শত্রু ভাল। বামেরা হচ্ছে সেই বোকা বন্ধু। আর ক্যাপিটালিস্টরা হচ্ছে চালাক শত্রু। বোকা বন্ধুর পাল্লায় পড়লে কি হয়-সেটা জানতে জ্যোতি বোসের রাজত্বের দিনগুলোর দিকে তাকান।

No comments: