Sunday, September 20, 2015

বাঙালীর নেতাজি ভাবাবেগ...

নেতাজিকে নিয়ে বাঙালীর এত আদিখ্যেতা কেন -সেটা বরং আরো বড় গবেষনার বিষয় হতে পারে। হতে পারে তিনি নাঁখখত দেওয়া, পতিত একটি জাতি-যারা ভীরু দুর্বল চাকর হিসাবে ইতিহাসে চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিয়েছে -তাদের একটু মাথা উঁচু করার সুযোগ দিয়েছেন। এক বাঙালী সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাজারে বৃটিশ আমেরিকান শক্তিকে চুনৌতি দিচ্ছে হিটলার, তেজোর সাথে মিটিং করে- এটা নিঃসন্দেহে বাঙালী হিসাবে গর্ব করার মতন বিষয়ই বটে।  সত্যিই ত বাঙালী তার দুহাজার বছরের ইতিহাসে নেতাজি ছাড়া আন্তর্জাতিক ত দূরের কথা- আর কোন জাতীয় মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৈরী করতে পারে নি। প্রণববাবুত গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক বিষ্ঠা পরিস্কার করতে করতে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট পদের কোন গরিমা নেই। ওটা ছিল বহুদিন ধরে গান্ধীপরিবারের খাস চাকরদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট। এন ডি এ এসে এপিজেকে বসিয়ে প্রথম সেই ট্রাডিশনে ব্রেক টানে। শেখ মুজিবর রহমান সম্পূর্ন মাখানো ব্যক্তিত্ব- দ্বায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সব সম্ভবনা ধ্বংস করেছেন কারন  তিনি কোন ভাল প্রশাসক ছিলেন না।


 সুতরাং এই নেতাজি নামক সবেধন নীলমনি কুমীর ছানাকে নিয়ে বাঙালীর আবেগ থাকবে-সেটাই বোধ হয় স্বাভাবিক।

 কিন্ত এটাও আমাকে ভাবায়,  যে বাঙালী সেই আবেগের তোড়েই ভাসতে ভালোবাসে-নিজেদের উন্নতির জন্য যুক্তি এবং ফ্যাক্টের ধার ধারবে না।

 নেতাজিকে নিয়ে যারা সামান্যতমও পড়েছেন, তারাও জানেন

   (১) নেতাজি অর্থনীতির দিক দিয়ে, নেহেরুর থেকে আলাদা কিছু ভাবতেন না। নেতাজি আসলেও ভারতে সেই নেহেরুর মতন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পেরই সূচনা হত। ভাল মন্দ যাইহোক, ফল একই হত।  ব্যর্থতার কারনে সেই মার্কেট ইকোনমীতে কোন না কোনদিন ঢুকতেই হত।

 (২) নেতাজি ভারতে সফল হলে, ভারতে একনায়ক তন্ত্র আসত-এগুলো স্পেকুলেশন। যদি উনি যুদ্ধে জিতে আসতেন, তাহলে ভারত যে জাপানী কলোনী হত, তাই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে গণতন্ত্র বা ডিক্টটরের বিতর্কটাই অর্থহীন।  আর যদি স্বাধীন ভারতে কোন রকমে ফিরতে পারতেন ,  বড়জোর মমতা ব্যানার্জির মতন আরেকটা বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস তৈরীতে সক্ষম হতেন। কারন ফরওয়ার্ড ব্লকের ফিউচার সেকালেও ছিল না-আজও নেই।


 মুখে আমরা যতই বড় বড় কথা বলি না কেন, বাস্তব হচ্ছে যেসব দেশগুলি বাজার অর্থনীতির সার্থক রূপায়ন করতে পেরেছে দ্রুত, তারাই একমাত্র সফল হয়েছে। যেমন চীন, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান। গণতন্ত্র না স্বৈরতন্ত্র-সেই প্রশ্নটা সেখানে অর্থহীন। আজ ভিয়েতনাম ও দ্রুত গতিতে সফল হচ্ছে-কারন সেই বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ উন্নতির প্রশ্নে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রের বিতর্কটা কৃত্রিম -বাজার অর্থনীতি কোন রাষ্ট্র কত সফল ভাবে নামাতে পেরেছে, সেটাই মুখ্য। ইতিহাস আপাতত তাই বলছে।

 নেতাজীর রাজনীতিতে বাজার অর্থনীতির কোন উল্লেখ নেই। বরং নাৎসী, ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির জন্য আছে আকুন্ঠ প্রশংসা। তবে ক্ষমতায় থাকলে উনিও বুঝে যেতেন, বাজারই হচ্ছে একমাত্র মহারাজ। বাকী সবকিছুই কবির রোম্যান্টিক কল্পনা।

 ভারতে সমস্যা হচ্ছে ধণতন্ত্র বা বাজার সেই ভাবে এখনো আসেনি। ভারতের কোম্পানীগুলো সামন্ততন্ত্রের বাজারী রূপ।  মার্কেট রেগুলেশন বলতে কিস্যু নেই-ফলে ডাক্তার হয়েছে ডাকাত-শিক্ষক হয়েছে শোষক-  আর ভারতে ব্যবসা মানেই চোর ডাকাতদের  ভদ্রবেশে পুনঃবাসন। এমন সব আইন কানুন, বাবুদের টাকা না দিলে, কোন কিছু করা সম্ভব না।   তবে আস্তে আস্তে বাজার ভারতে আসছে -কিন্ত বাঙালীরা সেখানেও সেই আইটি কুলিগিরির বেশী সুযোগ নিচ্ছে কোথায়? বাজারের সুযোগ নিতে গেলে বাঙালীকে তার উর্বর মাথাটা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় নামতে হবে। নেতাজিকে নিয়ে আবেগে ভাসলে হবে না। এগুলো জাতি হিসাবে বাঙালীর সীমাহীন মনোবৈকল্যকেই ইঙ্গিত করে।

No comments: