Sunday, March 17, 2019

জর্জ এইচ ডাব্লু বুশ প্রয়াত

প্রাত্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লু বুশ প্রয়াত। আমেরিকাতে তিনি "ড্যাডি বুশ" নামেই বেশী পরিচিত।

 পৃথিবী তাকে চেনে সাদ্দাম বিরোধি প্রথম গলফ ওয়ারের জন্য। বাঙালীকে জর্জ বুশের সাথে পরিচয় করিয়েছিল সিপিএম- যুদ্ধবাজ বুশ হিসাবে যিনি নাকি "ঋষিতুল্য" সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন!!!! ১৯৯০ সালে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামে শহরে পোষ্টারে ছয়লাপ করেদিয়েছিল সিপিএম- যুদ্ধবাজ বুশ!

 আমেরিকা তাকে চেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দেশপ্রেমিক বীর সেনানী হিসাবে। ১৯৪৩ সালে তিনি নেভি পাইলট হিসাবে যোগ দেন। প্রাশান্ত মহাসাগরে তখন জাপানের সাথে ঘোর যুদ্ধ। ৪৩-৪৫, মোট ৫৩ বার  উড়েছেন জাপানের বিরুদ্ধে। ১৯৪৪ সালে ইচো জিমা দ্বীপে আক্রমন চালাতে গিয়ে, তার বিমান এন্টি এয়ারক্রাফট গানের গুলিতে ধ্বংস হয়। তার দুজন সাগরেদ প্লেনেই মারা যায়। উনি কোন রকমে আহত অবস্থায় প্যারাড্রপিং এ সক্ষম হৌন। প্রায় তিনদিন অবচেতন অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরে ভেসে থাকার পরে আমেরিকান সাবমেরিন তাকে উদ্ধার করে। ভাগ্য যে হাঙরের পেটে তিনি যান নি।  কিন্ত তাতেও তাকে দমানো যায় নি।  একটু সুস্থ হয়েই আবার জাপানের বিরুদ্ধে বিমান হানায় নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। সেনেটর বাপ, প্রেমিকা বারবারা কেউই তাকে দ্বিতীয়বার আটকাতে পারেন নি। তার কাছে দেশপ্রেম ছিল ব্যক্তিগত প্রেমের ওপরে ।

  যুদ্ধে যোগ দেওয়ার তার কোন দরকার ছিল না। বাবা এবং শশুর দুজনেই ধণকুবের। বাবা প্রেসকট বুশ আবার রিপাবলিকান সেনেটর ও বটে। কিন্ত আমেরিকার জন্য তিনি প্রাণ হাতে নিয়েই  লড়েছেন। মৃত্যু অভিজ্ঞতাও তাকে থামাতে পারে নি।  তার দেশপ্রেম ছিল নিখাদ এবং অটুট।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি উনাইটেড নেশনে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সিয়ার দ্বায়িত্ব ও সামলেছেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ও ছিলেন। রেগান জমানায় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ছিলেন।  সব লেভেলের আমেরিকান রাজনীতিই তিনি সামলেছেন। তাকে বলা হয় বিংশ শতাব্দির  আমেরিকান রক্ষনশীল রাজনীতির পোষ্টার চাইল্ড। রিপাবলিকান পার্টিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। 

তার সব থেকে বড় কৃতিত্ব সাদ্দামকে দমানো না। কমিনিউমের পতনকে সুদৃঢ় করেছেন ম্যাজিক্যাল মেথডে। বার্লিন ওয়াল ভাংল, সোভিয়েতের পতন হল, কিন্ত বাবা বুশ আবেগহীন -কোন উল্লাস নেই। কেন নেই? কারন ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, লোকে দুদিন কমিউনিজমের পতনে উচ্ছাস করবে। কিন্ত যদিন পেটে টান পড়বে, আবার কোন না কোন চতুর নেতা কমিউনিজমের নামে একনায়কতন্ত্র জাহির করবে। ১৯৮৯ সালে বার্লিন ওয়ালের পতনের পর ইস্টার্ন ইউরোপে সিয়া ছিল ভীষন সতর্ক। তাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ ছিল, কমিউনিস্ট নেতারা যাতে আর ক্ষমতায় ফিরতে না পারে। এবং সেই জন্য খাদ্য ঔষধ সহ নানান সাহায্যে দিয়ে প্রাক গণতান্ত্রিক সরকার গুলোকে টিকিয়ে রাখছিল আমেরিকা। ১৯৯০ সালে সাদ্দামকে দুদিনে হারিয়ে অনায়াসেই ইরাক দখল করতে পারত আমেরিকা। কিন্ত  সেই দিকে যান নি বুশ। কারন সেটা করলে, "প্রোকমিউস্ট" রাশিয়ান ন্যাশানালিস্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হত। তখন তার প্রধান চিন্তা কি ভাবে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের রিএন্ট্রি আটকানো যায়।

উনি উনার রাজনৈতিক লাইনের কাছে সৎ ছিলেন।  রাজনীতিতে লোকের বিভিন্ন চিন্তাধারা থাকবে। বিরুদ্ধ চিন্তার কেউ হলেই, তিনি খুব বাজে লোক- এই ধরনের চিন্তা বালখিল্যতা।  তিনি তার রাজনৈতিক লাইনের প্রতি কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন, সেটাই মুখ্য বিবেচ্য।

আমেরিকানরা অবশ্যই তাকে মনে রাখবে বীর দেশপ্রেমিক যোদ্ধা হিসাবেই।

হাসিনা এবং মমতার এডমিনিস্ট্রেটিভ পারফর্মেন্স

শেখ হাসিনা জিতেছেন। কিন্ত বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের তা নাপসন্দ। অভিযোগ রিগিং, বুথ ক্যাপচার। পশ্চিম বঙ্গবাসীরা এর থেকে দশগুন বৈজ্ঞানিক রিগিং দেখতে অভ্যস্ত।

 সিপিএমের বৈজ্ঞানিক রিগিং এর তুলনায় আওয়ামী লীগ এখনো শিশু। কিন্ত তা সত্ত্বেও সিপিএম জমানা ৩৪ বছর টেকার মূল কারন গ্রহনযোগ্য বিরোধি পার্টির অভাব।  হাসিনার জন্যও একই কথা সত্য। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য বিরোধি পার্টি নেই।  ভাল বিরোধি পার্টি থাকলে, সায়েন্টিফিক রিগিং জনগনই আটকে দেবে। যেমন পশ্চিম বঙ্গে লোকে দেখেছে পরিবর্তনের দিনগুলিতে।

 ভারত, পশ্চিম বঙ্গ , বাংলাদেশ সর্বত্রই গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারীতা বা একনায়কতন্ত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি।  এর মূল কারন ভারত এবং বাংলাদেশের দুর্বল সংবিধান। যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের হাতে ক্ষমতা কম। বাংলাদেশে আবার  শুধু লোয়ার হাউস আছে, আপার হাউস নেই। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা একছত্র।

 সুতরাং হাসিনা, মমতা, মোদি - একনায়কতন্ত্রের জন্য এদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সংবিধানই এদের একনায়ক বানিয়েছে। সংবিধান বদলের প্রযোজন। বরং ইনারা দেশ এবং জাতির প্রতি যথেষ্টই দ্বায়বদ্ধ।

 হাসিনা এবং মমতার এডমিনিস্ট্রেটিভ পারফর্মেন্স মোদির থেকে ভাল। মোদি পলিটিক্যালি রোম্যান্টিক লোক, অনেক কিছু উচ্চ চিন্তা ভাবনা করেন। কিন্ত এক্সিকিউশনে এসে লেজে গোবরে হৌন। সেই তুলনায় মমতা ব্যানার্জি এবং শেখ হাসিনা অনেক বেশী বাস্তববাদি ( সম্ভবত নারী বলেই ) এবং সংসার চালানোর ব্যপারটা ভাল বোঝেন। সুতরাং এদের বিকল্প এখনো দেখা যাচ্ছে না।  যদ্দিন না হয়, এরা বিপুল ভোটে জিততেই থাকবেন।  মোদির জন্যও তা সত্য। রাহুল গান্ধীকে বিকল্প হিসাবে বিরোধিরা স্বীকার না করলে, মোদি আবার জিতবেন। কিন্ত রাহুলকে বিকল্প হিসাবে স্বীকার করলে, এযাত্রায় মোদির আর চান্স নেই।

 শেখ হাসিনা এবং মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বাঙালী আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ৩৪ বছরের স্যোশালিস্ট শাসনে পশ্চিম বঙ্গে প্রায় সব কিছু ধ্বংস হয়েছে।  বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি আগে হয়েছে।শেখ হাসিনা পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি দেওয়ার পরে, বাংলাদেশে এখন টাইগার ইকনমি। পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতিও দ্রুত গতিতে হালে ফিরছে। কারন সিম্পল-মমতা ব্যানার্জির স্ট্রাইক বন্ধ করতে পেরেছেন। ওইযে বল্লাম, রাজনৈতিক ট্রাবল সরিয়ে নাও, ইনফ্রাস্ট্রাচার দাও- বাকীটা বাঙালীরা বুঝে নিতে জানে।

 বাংলাদেশের লোক বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী। এমন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ঠেকে ছিল শুধু রাজনৈতিক স্থিরতার অভাবে। শেখ হাসিনা শুধু সেই টুকুই করেছেন। বাকীটা করেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিমান পরিশ্রমী জনগণ।  এবং এই ভোটে জনগণ শুধু সেটাই চেয়েছে। রাজনৈতিক স্থিরতা-বাকীটা তারা বুঝে নেবে।

 পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণের কাছে,  একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ বাতুলতা-কারন তারা চাইছে শুধু একটু রাজনৈতিক স্থিরতা।  ভোটের প্যাটার্ন ও সেই অভিমুখেই।

দুদিনের বন্ধ

এই দুদিনের বন্ধ সিপিএমের ডুবে যাওয়া জাহাজের আর্তনাদ ছাড়া কিছুই না। বাঙালীর পাওয়না উদবৃত্ত হয়রানি।

এই বন্ধের একটি দাবী নুন্যতম বেতন ১৮ হাজার টাকা করা। এটি ভাল দাবী। কারন শ্রমিকের নুন্যতম বেতন ক্রম থাকলে সেখানে কোয়ালিটি ভাল কাজ হয়। এটি সারা বিশ্বে প্রমানিত। কিন্ত ভারত সহ পশ্চিম বঙ্গের স্কুল কলেজ গুলিতে সরকারি সার্কুলারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাইভেট চিচারদের মোটে ৫-১০ হাজার টাকা মাইনে দেওয়া হয়। এবং তা সিপিএম জমানা থেকেই চলছে। যার ফলে পশ্চিম বঙ্গ সহ গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ন ধ্বংসের মুখে। ১০হাজার টাকার শিক্ষক কারা হয় সবাই জানে। তাদের কাছে ছাত্রছাত্রীরা কি শিখছে সেটাও অভিভাবকরা জানে।

সিপিএম তথা বামফ্রন্টের নেতাদের কাছে প্রশ্ন

 (১)  যদি নুন্যতম বেতন নিয়ে তারা সত্যিই চিন্তিত, তাহলে যেখানে অন্তত সরকারি নিয়ম আছে যেমন প্রাইভেট স্কুল কলেজে, সেখানে শিক্ষিক শিক্ষিকাদের নুন্যতম বেতন গ্যারান্টি দেওয়ার কাজে তাদের আগ্রহ কোনদিন দেখা যায় নি কেন ? অন্তত এমন একটা কাজ যেখানে তারা জনগণকে সাথে পেতেন! 

সব থেকে বড় সত্য, এই সব প্রাইভেট স্কুল কলেজের মালিক পক্ষের অনেকেই সিপিএমের নেতাদের নিকট আত্মীয়। এখন রাজনীতি বদলেছে। তারাও রঙ বদলেছেন।

 (২)  যেখানে সরকারি আইন থাকা সত্ত্বেও নুন্যতম বেতন গ্যারান্টি নেই ( যা স্কুল কলেজের ক্ষেত্রে প্রমানিত), সেখানে ১৮,০০০ টাকা নুন্যতম বেতন আইন করে কি লাভ হবে?

চটকলে ধর্মঘট করে কি হবে? আরো দুটো চটকল বন্ধ হবে। যেখানে দরকার পাটের তন্তুর নতুন ব্যবহার, আরো নতুন ধরনের প্রোডাক্ট, সেখানে স্ট্রাইক সুইসাইড ছাড়া কিছুই না।

অর্থাৎ ব্যপারটা কি দাঁড়াল। বামপন্থীরা নতুন ভাবে কিছুই ভাবছেন না। পৃথিবী বদলাচ্ছে , তারা বদলাচ্ছেন না।  তারা জাদুঘরে ডাইনোসর হতে চান।

 মানুষ এবং শ্রমিকের বঞ্চনা চলছে। কিন্ত সেদিকে তাদের নজর কই। সেটা থাকলে প্রাইভেট স্কুল কলেজগুলিতে শিক্ষকদের যে শোষন করা হয়, সেটা নিয়ে আন্দোলন চোখে আসত। সেসব কিছুতে তাদের মন নেই। বরং যেটুকু পেশীবল বেঁচে আছে সেটা দেখিয়ে স্কুল বাস ভাঙচুর করছেন বাচ্চাদের ভয় দেখাতে।

বাঙালী বামেদের শিশুতুল্য ব্রেইন বলতাম আগে। এখন দেখছি, তারা বাচ্চা বুদ্ধির ও অধম।

গর্ভনমেন্ট শাটডাউন

আমেরিকাতে এখন গর্ভনমেন্ট শাটডাউন। সরকার চালানোর জন্য বরাদ্দ টাকা পাশ না হওয়ার জন্য, সরকারই বন্ধ! সরকারি কর্মচারীদের ও কাজ মাইনা বন্ধ। তবে সরকার খুললে তারা বকেয়া মাইনা পাবেন। কিন্ত গর্ভমেন্ট কনট্রাক্টররা টাকা পাবেন না। তারাই আবার এদেশে সংখ্যাধিক। আর আমাদের এই ওয়াশিংটন ডিসি এরিয়াতে ৯০% চাকরি সরকারি নইলে সরকারি কনট্রাক্টর। বলাই বাহুল্য এই গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে, এখানে রাস্তা ঘাট রেস্টুরেন্ট সব ফাঁকা থাকে।

আমেরিকাতে আসার পরে এটা চতুর্থ শাটডাউন। এর আগে একটা তিনমাসের শাট ডাউন দেখেছি ২০১১ সালে।

এবার শাট ডাউনের হেতু ট্রাম্প ওয়াল। ট্রাম্প বলছেন মেক্সিকান বর্ডারে প্রাচীর তোলার জন্য ৬ বিলিয়ান ডলারের বাজেট কংগ্রেসকে দিতে হবে। নইলে তিনি নতুন বাজেট পাশ করবেন না। ডেমোক্রাটরা তাকে মেক্সিকান ওয়াল বানানোর পয়সা দেবে না। এই নিত্য ন্যাস্টি ঝগড়া চলছে।

 স্বৈরাচার ঠেকাতে আমেরিকাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা তিনটি বিভাগে বিভক্ত- প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং সেনেট।  যদ্দিন এই তিনটি একই পার্টির হাতে থাকে, শাট ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা কম ( ট্রাম্পের জমানায় তাও হয়েছে একদিনের জন্য)। কিন্ত এর একটি, বিশেষত কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট দুই হাতে গেলে, শাট ডাউন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হতে পারে।

শাটডাউন মানে কিন্ত এই না, যে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি। তাদের কাজে আসতে হবে, কিন্ত বেতন পাবেন সরকার খুললে। কিন্ত কিছু কিছু কর্মচারি যাদের বেতন খুব কম ( আমেরিকান সরকারি চাকরি, ভারতের মতন জামাই আদরের না ) , তাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। তারা ছুটি নিয়ে অন্য কাজে ইনকাম করছেন। এর মধ্যে আছে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির লোকজন।  ফলে সিকিউরিটি চেকিং এ এখন লম্বা লাইন।

 আমাদের রাজধানী এরিয়াতে অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। রেস্টুরেন্ট গুলো মাছি তাড়াচ্ছে।  মলে, দোকানে লোক নেই। রাজধানী এরিয়াতে অধিকাংশ লোকই সরকারি চাকরি নির্ভরশীল।

ট্রাম্প বিজনেসম্যান হওয়ার জন্য আর্ট অব নেজোশিয়েন ভাল করেই জানেন। ট্রাম্প সাপোর্টারদের একটা বড় অংশ সরকার সর্বদা বন্ধ রাখতে পারলেই খুশি। ফলে এই বন্ধে ট্রাম্পের পোয়াবারো। চাপ ডেমোক্রাটদের ওপর। তারা ট্রাম্পের দাবি না মেনে বেশী দিন টিকবে না-কারন ডেমোক্রাটদের বেস গরীবরা। যাদের অনেকেই সরকারি সাহায্যে খাবার পায়। সরকারন  বন্ধে  সেসব এখন বন্ধ।  সরকারি চিকিৎসা সাহায্য ও বন্ধ। বয়স্ক লোকেদের যা অপরিহার্য্য।

আমেরিকার জন্মই হয়েছিল বৃটিশ ট্যাক্সের বিরোধিতা করে। এই জন্যে এই দেশটা বড় গর্ভমেন্ট, ট্যাক্স এসব পছন্দ করে না। গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে খুশি হওয়ার লোক এদেশে অনেক।

 আমেরিকান রাজনীতি পুরো ডামাডোলে। এর মূল কারন, গত দশ বছরে ডেমোক্রাট পার্টি চলে গেছে উগ্র বামেদের দখলে, আর রিপাবলিকান পার্টি গেছে উগ্র দক্ষিনপ ন্থীদের হাতে।  এরা সবাই মাই ওয়ে অর হাইওয়ে, নীতিতে বিশ্বাসী।  কোন আপসে এরা রাজী না।
 আগে বাইপার্টিসান এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ দুই দলই অধিকাংশ নীতির ক্ষেত্রে এক হত।  এখন নতুনরা সংঘর্ষে বিশ্বাসী বেশী। সেটাই নাকি পলিটিক্যাল রাডিক্যালিজম।

 আমেরিকাতে মধ্যপন্থী কোন নতুন দলের উত্থান না হলে , আর দুদিন বাদে এদেশে বছরের অধিকাংশ সময় সরকার বন্ধ থাকবে।

শিশুতোষ বামপন্থী বন্ধ

ফেসবুকে মমতা ব্যানার্জির সমর্থনে আমার লেখার এটাই সর্ব বৃহৎ কারন। কারন উনি সর্বনাশা বাংলা বন্ধ থামাতে সক্ষম হয়েছেন। বঙ্গের শিল্প বিকাশে এটাই ছিল প্রাইমারী কন্ডিশন। উন্মাদ শিশুতোষ বামপন্থী বন্ধ বন্ধ করা।

আমি ফেসবুকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি আমার বামপন্থী বন্ধুদের। তারা যদি দেখাতে পারেন কোন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে যে বন্ধ এবং শ্রমিক আন্দোলনের ফলে, শ্রমিক শ্রেনীর কোন উন্নতি বা লাভ হয়েছে।  উনারা যদি একটা দৃষ্টান্তও দেখান, আমি দশটা দেখাব, কিভাবে বন্ধ আসলে শ্রমিক শ্রেনীর সর্বনাশই ডেকে আনে।  পশ্চিম বঙ্গের মানুষ এটা ভাল ভাবে জেনেছেন বলেই, পশ্চিম বঙ্গে বামপন্থীরা কি লোকসভা কি বিধানসভাতে একটি আসন ও জেতার অবস্থায় নেই।

  একটা প্রচলিত মিথ, হে মার্কেটের পয়লা মের আন্দোলনের ফলে ৮ ঘন্টা শ্রমদিবস চালু হয়েছে।  সম্পূর্ন রূপকথা এটি। ১৮৮০-১৯১০ সাল পর্যন্ত আমেরিকাতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছে ৩০,০০০ এর ওপরে। শ্রমিক আন্দোলন ভাংতে মেশিন গানের গুলি পর্যন্ত চলেছে। কিন্ত তথ্য বলছে এই ত্রিশ বছরে শ্রমিকদের কাজের ঘন্টা বেড়েছে। মাইনেও ছিল দাঁড়িয়ে।

তাহলে কিভাবে এল ৮ ঘন্টার শ্রমদিবস। বা পাশ্চাত্যে শ্রমিকদের অবস্থা আস্তে আস্তে কিছুটা ভাল হল কি করে ?

  এর মূল কারন মার্কেট রেগুলেশন।  যে কারনে ১৯১৪-১৯৪০ সালের মধ্যে  আমেরিকাতে মনোপলিস্টিক কর্পরেশনগুলিকে ভেঙে দেওয়া হয়।  মার্কেটে  অনেক প্রতিযোগী কোম্পানী থাকলে, তারা ভাল শ্রমিকের জন্য প্রতিযোগিতায় নামবে। যে কারনে আই টি শিল্পে  দক্ষ  সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়াদের বেতন অনেক বেশী। ইউ এস ওয়েল, ইউ এস স্টীল ইত্যাদি মনোপলিস্টিক সংস্থাগুলিকে সরকার ভেঙে ফেলার পরেই একমাত্র আমেরিকার শ্রমিকদের সুদিন আসে। 

 এটাই কারন এদ্দিন ধর্মঘট শ্রমিক আন্দোলন মার্ক্স এঞ্জেলেস লেনিন করে কলকাতার বাঙালী যারা ডেইলি লেবার, তারা মাসে ৫০০০ টাকা উপায় করে কোন ক্রমে। কিন্ত ব্যাঙ্গালোরে ডেইলি লেবার, কাজের মাসীরা মাসে ২৫,০০০ টাকার উপর ইনকাম করে অনায়াসে।  যেহেতু প্রচুর ব্যবসা এবং প্রচুর কাজের সুযোগ।

 সুতরাং শ্রমিক শ্রেনীর সুদিন সেদিন আসবে যেদিন বাংলায় বিজনেস ভাল ভাবে হবে। স্ট্রাইক হতে থাকলে তা সম্ভব না।  বন্ধ আসলেই শ্রমিক আত্মহত্যার পথ। এই সত্য দিনের মতন সবাই জানে। কিন্ত বামপন্থীরা মানেন না। তারা  হে মার্কেটের ঐতিহাসিক রূপকথায় মগ্ন।

 ভুল বামপন্থী ধারনাগুলি বাঙালীর মাথায় আফিং হয়ে ঢুকে অনেক ক্ষতি করেছ। সৌভাগ্য এই যে মমতা ব্যানার্জি আস্তে আস্তে কাজের কালচার ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন।

গণতন্ত্র নিয়ে ফ্রাস্ট্রেশন

গণতন্ত্র নিয়ে ফ্রাস্ট্রেশন,  এথেন্সে গণতন্ত্রের শুরু থেকেই। গুরু সক্রেটিস গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সেই আড়াই হাজার বছর আগে, যা প্রশ্ন করেছেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক।

   প্লেটোর রিপাবলিক, যা কিনা আজও রাজনীতির বাইবেল, তার ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমরা পাই সক্রেটিস এবং তার ছাত্র এডিমেন্টাসের ডায়ালোগ।  সক্রেটিস এডিমেন্টাসকে বলছেন ধর আমরা  জাহাজে করে যাচ্ছি। জাহাজের দায়িত্ব,   সমুদ্রের অভিজ্ঞ ক্যাপটেনের হাতে দেবে, নাকি জাহাজের যাত্রীরা ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে?

  সক্রেটিস বলছেন, এই রাষ্ট্র ত জাহাজের মতনই। পদে পদে তার বিপদ। বহিঃশত্রুর আক্রমন, দেশে অনাহার বেকারি অনুৎপদন - সব সময় উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে দিয়েই চলে একটা রাষ্ট্র।  তাহলে জাহাজের দ্বায়িত্বে যদি আমরা অভিজ্ঞ ক্যাপটেনকে চাই, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কেন আমরা ভোট ভিত্তিক সিদ্ধান্তে যাচ্ছি? বিশেষত এটা যখন সবারই জানা, অধিকাংশ রাজনীতিবিদই নেতা কম, অভিনেতা বেশী?

  আরো ভাবুন। আপনার হার্টের সার্জারির জন্য হার্ট সার্জেন খুঁজছেন।  ট্যাক্সে গন্ডগোল হলে, অভিজ্ঞ একাউন্টান্ট।  সব কিছুতেই আপনার স্পেশালিস্ট দরকার। অথচ কি আশ্চর্য্য, যা কিনা আপনাকে সব থেকে প্রভাবিত করে - সেই রাজনীতির ক্ষেত্রে, আপনি কিন্ত স্পেশালিস্টদের স্থলে দক্ষ অভিনেতার হাতে আপনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ন দ্বায়িত্বটি দিচ্ছেন। কারন রাষ্ট্র এবং সমাজের সাপোর্ট ছাড়া আপনি নাথিং।  সে ব্যবসাই করুন, বা অধ্যাপনা করুন। মসনদে গাম্বাট গেলে, আপনার কপালে দুঃখ আছে প্রচুর।

  আমেরিকার গণতন্ত্রের হাল দেখুন।  মেক্সিকান বর্ডারে ওয়াল বানানোর ঝগড়ায়, গর্ভমেন্টই বন্ধ। সরকারি কাজকর্ম সব বন্ধ।  একদিকে অতিডান গাম্বাট প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে গাম্বাট বামপন্থী মেজরিটি কংগ্রেস। মধ্যে খানে জনগণ তেলেভাজা। একটা রিয়ালিটি শোয়ের অভিনেতাকে পৃথিবীর সব থেকে শক্তিধর দেশের মাথায় বসালে,  কি হতে পারে, সেই সাক্ষাৎ ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখন।

 ভারতের হাল দেখুন। মোদি চৌকিদারি, সব কা সাথ সব কা বিকাশ ইত্যাদি বিশাল বপু অভিনয় করে, অনেক আশা জাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিছু সৎ ইচ্ছা হয়ত ছিল- কিন্ত ডিমনেটাইজেশন থেকে জিসটি-সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তার এক্সিকিউশন সাংঘাতিক বাজে ছিল।  রাফাল ঘোটালা প্রমান করছে, দিল্লীতে যে অস্ত্র লবি কংগ্রেসের আমলে এক্টিভ, ছিল, বিজেপি আমলে তারাই প্রভু- বরং তারা আরো বেশী সাহসী হয়ে দুনাম্বারী করেছে। এখন ব্যর্থতা  থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তিনি " গরীব" উচ্চবর্নের সংরক্ষনের রাজনীতিতে নেমেছেন।

  সংরক্ষনের রাজনীতি, সে গরীবদের জন্যই হৌক বা কাস্ট ভিত্তিকই হৌক- রাষ্ট্রের জন্য সর্বনাশ ছাড়া কিছুই না।

  সংরক্ষন রাজনীতিকে মেনে নেওয়া মানে, এটাও মেনে নেওয়া  সেই রাষ্ট্রে গরীব বা নীচু কাস্টের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা বা সামাজিক ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায় না। বা ডিসক্রিমিনেশনের শিকার।

 সুতরাং সেই ক্ষেত্রে সরকারের প্রথম কাজ, এটা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের প্রতিটি সন্তান, সে যে কাস্টেই জন্মাক, যে গরীব ঘরেই জন্মাক- শিক্ষার ক্ষেত্রে যেন সমান সুযোগ পায়। সেটা না করে যখন , রিজার্ভেশনের রাজনীতি তৈরী করা হয়, যেখানে মেধার জায়গায়, আইডেন্টিটিকেই টানা হয়,  তার কনসিকোয়েন্স মারত্মক খারাপ।  কারন তা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে বিভাজনের বিভেদের সৃষ্টি করে।

 রিজার্ভেশনের রাজনীতি মানে এটা মেনে নেওয়া রাষ্ট্রে অসাম্য আছে, এবং সেই অসাম্যের দরুন, রাষ্ট্রের কিছু কিছু সন্তান " দুর্বল" হবে শিক্ষাগত যোগ্যতায় - কিন্ত যেহেতু তারা শিক্ষাগত ভাবে দুর্বলতর "রাষ্ট্রের অপদার্থতার" কারনে- তাদেরকেই দেশের গুরুত্বপূর্ন পদে দিতে হবে!

 অর্থাৎ এই সংরক্ষনের রাজনীতির বেসিকটা একটু ঘাঁটলে এটাই দাঁড়াচ্ছে - রাষ্ট্র বলছে, রাষ্ট্র অসাম্য  দূর করতে অপদার্থ, তাই অপদার্থ দেশে তৈরী হচ্ছে, এবং সেই অপদার্থদেরই চাকরি দিতে হবে- যাতে এই অপদার্থ সিস্টেম চলতে থাকে!!  এই কারনেই সক্রেটিস সেই আড়াই হাজার বছর আগেই লিখে দিয়েছিলেন কেন গণতন্ত্রে এই ধরনের অপদার্থতা চলতে থাকবে।

 তাহলে উপায় কি। ডিক্টেটরশিপ বা স্বৈরাচারিতা আরো বাজে। কিন্ত উপায় আছে।

  আজকে বিজনেসের ক্ষেত্রে আমরা বিগ ডেটা আনালাইটিক,  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ নিচ্ছি। যাতে বিজনেস ডিসিশনে ভুল কম থাকে।  সরকারি ক্ষেত্রেও বিগ ডেটা আনালাইটিক, বিগ ডেটা সিম্যুলেশন ভিত্তিক সিদ্ধান্তের দিন সমাগত। যে কোন দেশের রাজনীতিবিদদের চেয়ে মেশিন অনেক অনেক বেশী ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ।

 রাজনীতির যা অবস্থা, প্রযুক্তিই একমাত্র ভরসা। অটোমেশনের ফলে শুধু শ্রমিকদেরই কেন চাকরি যাবে? রাজনীতিবিদ, যাদের পারফর্মান্স সব থেকে খারাপ, তাদেরকে অটোমেশন দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হৌক সবার আগে।

বিগ্রেডে মহাজোটের নেতাদের বক্তব্য

বিগ্রেডে মহাজোটের নেতাদের বক্তব্য শুনলাম।  ফাইটটা ঠিক বিজেপি বনাম অন্যান্য পার্টি নয়। ভারতীয় গণতন্ত্রকে মোদি-শাহ রাজ থেকে বাঁচানোর জন্য জোটবন্ধন। যার জন্য এই মঞ্চে ছিলেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারাও।  শত্রুঘ্ন সিংহা, যশোবন্ত সিনহা। বাইশজনের বক্তব্যে "কমন" থিম একটাই- এই বর্তমান সরকার সিবি আই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইত্যাদি স্বয়ত্বশাসিত সংস্থাগুলিতে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে উদ্যত।

  মোদি চৌকিদার না চোর, চাষীদের আত্মহত্যা -এগুলো গৌণ। কারন কেউ সুস্থ মাথায় বলবে না বিজেপি গেলে মহাগোটবন্ধন, দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেবে।  বাস্তব এটাই বিজেপি সরকার এবং ভারতের অন্যন্য দলগুলি সবাই দিল্লীর দুর্নীতি সিন্ডিকেটের হাতের পুতুল। কিন্তু যা বুঝলাম, সবাই ভীত এই কারনে যে এই মোদি সরকার সিবি আই কে নিজেদের লেঠেল বাহিনী বানিয়েছে। বিরোধি নেতানেত্রীদের ধ্বংস করতে। পশ্চিম বঙ্গের চিটফান্ড কেলেঙ্কারির কথা ভাবুন। এত তৃণমূলের নেতা নেত্রীদের ডাকা হল,  তাদের কিছুদিন জেলে ভরা হল। কিন্ত তাদের চার্জশীটের প্রমান করতে পারল কই আদালতে?

 তাহলে দুটোই পসিবিলিটি- সিবি আই এর হাতে যথেষ্ট প্রমান নেই, বা প্রমান থাকলেও তারা আসলেই এটিকে বিজেপির লিভার পুলি হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন রাজ্যসভায় বিল পাস করানোর জন্য ?

গণতন্ত্র থেকে ফ্যাসিবাদের উত্থান নতুন কিছু ত না। হিটলার,মুসোলিনি গণতান্ত্রিক উপায়েই ক্ষমতা দখল করে স্বৈরতন্ত্র তৈরী করেন।  কংগ্রেস,বিজেপি, তৃনমূল, সিপিএম -কোন দল ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে? প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরা তাদের পুলিশ ফোর্সকে কাজ লাগিয়ে বরাবরই রাজনৈতিক ফয়দা তুলেছেন।

 সুতরাং এই মহাজোটের কাছ থেকে আমার আশা ছিল, কেউ অন্তত বলবেন সংবিধানের সমস্যা আছে। পুলিশ যদ্দিন প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকবে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে  শাসক দলের স্বৈরাচার হবেই। ১৯৭৮ সালে জনতা সরকার পুলিশ কমিশন বসিয়ে এটা প্রমান করেছিল এবং তারা প্রস্তাব দেয়, পুলিশের স্বয়ত্বশাসন।  সেই প্রস্তাব কোন মুখ্যমন্ত্রী, এমন কি জ্যোতি বসুও মানেন নি।

 ফ্যাসিজমের যে সমস্যাটা স্ট্রাকচারাল, সেই মূল সমস্যার দিকে না ফোকাস করে যদি সব লাইট মোদির দিকে দেওয়া হয়, তাহলে মোদি গেলে হয়ত সাময়িক সুরাহা হবে-কিন্ত নতুন কোন স্বৈরাচারী শাসক আসতেই পারে।

 বিগ্রেডে কতলোক টেনেছে তৃনমূল- ঐতিহাসিক সমাবেশ ইত্যাদি বিশাল বপু বাতে কিছু হবে না। কারন বিগ্রেডে লোক টানত সিপিএম ও।  আজ জনগণ যখন তাদের ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, বিগ্রেডে পঞ্চাশ হাজার লোক টানার ক্ষমতাও তাদের নেই। তাদের বিগ্রেড সমাবেশগুলিযে চোখ রাঙিয়ে কোলকাতায় লোক টেনে এনে দেখানোর খেলা ছিল, সেটা সবাই জানে। আজ তারা অপ্রাসঙ্গিক, কারন তাদের বিগ্রেড ভরারটা ছিল রাজনৈতিক নাটক। তাদের রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতাই ছিল না। 

 আজকে মোদিকে তাড়ানোর প্রাসঙ্গিকতা আছে, তাই বিগ্রেডের এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ন।  কিন্ত মোদির পর কি? সেই উত্তর কিন্ত পাওয়া গেল না। কোন সাজেশন এল না।  এটা চিন্তার।

 কারন ইতিহাসের শিক্ষা। কেন্দ্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক শক্তিগুলির গোটবন্ধন নতুন না। জয়প্রকাশ নারায়ন -১৯৭৭। জ্যোতি বসু, ভিপি সিং, বাজপেয়ী - ১৯৮৮। ইতিহাসে আরো পেছনে গেলে প্রতিটি সাম্রাজ্যবাদি শক্তিই আঞ্চলিক শক্তিগুলি জোটবন্ধনের ভয়ে থাকত। রোমান সম্রাজের বিরুদ্ধে সমস্ত নর্দান ট্রাইব রা বিদ্রোহ করেছে একত্রিত হয়ে একাধিবার। রোমান, অটোমান, মঙ্গোলিয়ান, মুঘল,  বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় শক্তিগুলির একত্রিত লড়াই এর উদহরণ প্রচুর। 

গোটা ভারতের আঞ্চলিক শক্তিগুলি বৃটিশদের রুখতে পারে নি-কারন তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। কিন্ত আফগানরা রুখে দিয়েছিল।  কারন  তাদের ট্রাইবরা একত্রিত হয়ে বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছে।  ১৮৯৭ সালে যে আফগান অভ্যুত্থান হয়, তার নেতা ছিলেন অরচিক ট্রাইবের প্রধান গুল বাদশা।  সমস্ত আফগান ট্রাইবগুলিকে একত্রিত করা কঠিন কাজ ছিল-কিন্ত আফগানিস্থানকে বৃটিশদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সমস্ত ট্রাইবরা গুলবাদশার নেতৃত্বে এক হয়। তার নেতৃত্বকে স্বীকার করে। যার ফলে আফগানিস্থান নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে সমর্থ হয়।

 এখানে সমস্যা হচ্ছে আঞ্চলিক শক্তিগুলি একত্রিত হলে মোদি-শাহ রাজীকে থামাতে পারে খুব সহজেই। কিন্ত এই একত্রিত হতে গেলে নেতৃত্ব চাই।  সবাই কি মমতার নেতৃত্ব মেনে নেবেন ?  সিপিএম মানবে না। কংগ্রেস মানবে না। পশ্চিম বঙ্গের সঙ্কট। বহেনজী মায়াবতী, নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খোয়াবে।  গুলবাদশা সমগ্র আফগান ট্রাইবদের একত্রিত করতে পেরেছিলেন, কারন বাকীরা তার নেতৃত্বকে মেনে নিয়েছিল। 

 এই মহাজোটবন্ধনে সবাই নেতৃত্বের প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন। মহাভুল করলেন। এই মহাজোটের কোন নেতৃত্ব তৈরী না হলে বা মমতা ব্যানার্জিকে বাকী দলগুলি সর্বসম্মত  নেত্রী হিসাবে না মেনে নিলে, বিগ্রেডের এই মহাসমাবেশ কার্যকারী হবে না।  বাইশটা ঘোড়া দিয়ে রথ টানতে গেলে, তার সারথি লাগে।

ভেনেজুয়েলায় মাদুরো

ছোটবেলায় মনে আছে সারা বিশ্বে কোন কিছু ঘটলেই "মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক" বলে মিছিলে ভাসত বাংলার পথঘাট। ৯৯% বাঙালী গ্লোবে আমেরিকাটা কোন দিকে দেখাতে পারবে না-কিন্ত লাল মিছিলে নেমে যেত লাল চোখ রাঙানির ভয়ে।

 বহুদিন বাদে ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর বিরুদ্ধে গুইডোকে সাপোর্ট করছে আমেরিকা। তাতেই সঙ্গে সঙ্গে কৌটো এবং পতাকা নিয়ে নেমেছেন কমরেডরা। শুধু উনারা ব্যখ্যা করতে পারছেন না কেন ল্যাটিন আমেরিকার সমস্ত দেশই এক্ষেত্রে আমেরিকার অনেক আগেই গুইডোকে বৈধ প্রেসিডেন্ট মেনেছেন। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি-যাদের নাকি বিরাট আমেরিকা বিরোধি বাম ঐতিহ্য-তারাও দেখা যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে আমেরিকার দলে!  মাদুরো তাদের কাছে এতই অসহ্য তারা আমেরিকার সাথে মিলিটারি ইন্টারভেনশনেও রাজী!

 বিশ্ব বিপ্লব রক্ষার করার গুরু দ্বায়িত্ব "শুধুই" বাঙালী বামছাগলদের (!)

ল্যাটিন আমেরিকার প্রতিটা দেশে যে ভাবে ভেনেজুয়েলা স্বরনার্থীদের ঢল নেমেছে-এবং তার জন্য ড্রাগ ট্রাফিকিং ও গণিকাবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে-ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলির অন্য কোন অপশন নেই। তারা ট্রাম্পের অনেকদিন আগে থেকেই চাইছেন মাদুরো সরকারের অপসারন।

ল্যাটিন আমেরিকার বৈপ্লবিক ঐতিহ্য প্রায় দুশো বছরের। সাইমন বলিভারের নেতৃত্বে যে ইউরোপিয়ান কলোনি বিরোধি, সামন্ত প্রভু বিরোধি আন্দোলনের বীজ ল্যাটিন আমেরিকাতে দুশো বছর আগে পোঁতা হয়েছিল-তা থেকে আজও ছাড়া গাছ দেয়। যার জন্য ল্যাটিন আমেরিকার সব বাম নেতাই মার্ক্স লেনিনের থেকেও সাইমন বলিভারের ঐতিহ্যের প্রতি বেশী যত্নবান।
শুধু তাই না ভেনেজুয়েলার সেকন্ড রিপাবলিকের শুরুও ১৮৩০ সাল থেকে। এবং তার পর থেকেই ভেনেজুয়েলাতে গণতন্ত্র এবং মিলিটারিতন্ত্র একের পর এসেছে।  বলিভারের সুযোগ্য উত্তরাসূরী দাবী করে শাভেজ ১৯৯৯ সালে তার সরকারকে পঞ্চম রিপাবলিক বলে ঘোষনা দিয়ে ছিলেন।

২০১৫ সালের ন্যাশানাল কাউন্সিলের ইলেকশনে শাভেজের /মাদুরোর পার্টি পি এস ইউ ভির ভরাডুবি হয়। সেই রেজাল্ট অবৈধ করার জন্য মাদুরো সুপ্রীম কোর্টে যান- যেখান কার জাজেরা অধিকাংশই মাদুরো লইয়ালিস্ট। ২০১৭ সালের মধ্যে ডিমোক্রাটি আলায়ান্সের অনেক নেতাকেই কোরাপশনের অভিযোগে জেলে পোরেন মাদুরো। তার লক্ষ্য ছিল বাকী জীবনের জন্য ডিক্টেটর শিপ। যা বর্তমান সংবিধান সমর্থন করে না। কিন্ত সংবিধান পরিবর্তন করে সেটা করার তালে ছিলেন মাদুরো।  ২০১৫ সাল থেকে যে সংবিধানিক ক্রাইসিস চলছে- আজকে তারই বিস্ফোরন। এবং পুরো ঘটনা বিশ্লেষন করলে দেখা যাচ্ছে

  (১) মাদুরো অবৈধ প্রেসিডেন্ট- ২০১৫ সালের ইলেকশনে তার পার্টির ভরাডুবি হয়
  (২) ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সুপ্রীম কোর্টকে হাতে নিয়ে বিরোধি নেতাদের জেলে পাঠিয়েছেন ( ভারতে এটা কি ভাবে হয় নিশ্চয় বলে দিতে হবে না)
  (৩) তার অতিবাম বিপ্লব- যার জন্য সরকার ছোট খাট মুদির দোকান, পোল্ট্রি ইত্যাদি নিজেরা দখল করেছে- আজকের দুর্দশার জন্য দায়ী। নানান ব্যবসার ওপর এত "বৈপ্লবিক" ট্যাক্স বসিয়েছেন শাভেজ থেকে মাদুরোরা- ভেনেজুয়েলার মার্কেট ইকনমি সম্পূর্ন ভেঙে গেছে। ফলে উৎপাদন নেই। আর উৎপাদন না থাকলে বিরাট ইনফ্লেশন হবেই।

এই অবস্থায়, ল্যাটিন আমেরিকার সব দেশ, আমেরিকা, এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান মাদুরোকে সরেযেতে বলবেই। কারন তা নাহলে ভেনেজুয়েলার এই ক্রাইসিস আটকানো সম্ভব না।

যেটা কমিনিউস্ট বাম হিন্দুত্ববাদি ইসলামিস্টরা অহরহ ভুল করেন- তারা তাদের রাজনৈতিক আদর্শকে মানুষের ওপর চাপান। আদর্শ মানুষের জন্য। মানুষ আদর্শের জন্য না। অথচ এই ভুলটাই অহরহ করেন বামেরা, হিন্দুত্ববাদিরা, ইসলামিস্টরা।

মানুষের বিরুদ্ধে যেতে নেই। সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।
 আমেরিকা ইরান, ভিয়েতনাম থেকে অনেক দেশেই মানুষের বিরুদ্ধে গেছে-তার ফল তারা পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ান মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা সরকার তৈরী করেছিল।  সেটাও মায়ের ভোগে গেছে।
পশ্চিম বঙ্গে বামফ্রন্ট ৩৪ বছরে গণতান্ত্রিক থেকে গণশত্রু সরকার তৈরি করছিল।  তাদের মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছে জনগন। বিজেপি , তৃনমূল- এরাও যদি জনবিরোধি অপ্রিয় সরকার বেশী দিন টানতে চায় ছলে বলে- তার ফল হবে আরো খারাপ।

 পৃথিবীর সব জনগন বিরোধি সরকারই ধ্বংস হবে। এটাই ইতিহাস। মানুষের বিরুদ্ধে যেতে নেই। এই সামান্য সত্যটা বাঙালী বামেরা বোঝে না বলেই তারা আজ প্রাগৈতিহাসিক মিউজিয়ামে।

পার্টিটার ভবিষ্যত

চারিদিকে  ফেসবুক ওয়ালে লেখা, সিপিএমের আজকের বিগ্রেড সমাবেশের ওপর নাকি পার্টিটার ভবিষ্যত অনেক কিছু নির্ভর করছে!

ভোট আদায়, আর মার্কেটে প্রোডাক্ট বেচা একই ব্যপার। এবং মার্কেটে প্রোডাক্ট যখন চলে না, তখন কোম্পানীগুলো দুটো কাজ করে - মার্কেট সার্ভে করে রিস্কোপিং করা এবং নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে  ছাড়া। এসব না করে যেসব কোম্পানী আগের মার্কেট আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং পুরাতন প্রোডাক্ট জোর করে বেচার চেষ্টা করে - তাদের দ্রুত পতন অবিশম্ভাবী।  মার্কেটিং, রোড শো বাড়িয়ে সেই পতন আটকায় না।

 সিপিএমের মতন অবস্থায় এলে- যেখানে এখনো ১০% ভোট ব্যাঙ্ক অটুট কিন্ত সাধারন জনগণ নিচ্ছে না- যে কোন  কোম্পানী কি করত?

  ভাল করে মার্কেট সার্ভে করে দেখে নিত মার্কেটে গ্যাপ কি। এক্ষেত্রে কনটেক্সটা হবে জনগনের কোন কোন অসন্তোষ, রাগ-অন্য কোন পার্টি এড্রেস করছে না।  বা করলেও সেখানে অন্যকে সরিয়ে নিজের প্রোডাক্ট ব্যান্ডটা ঢোকানোর স্কোপ আছে কি না।

 সিপিএমের একটা লয়াল ১০% ভোট ব্যাঙ্ক আছে। বিজেপির আছে ১৪% মতন। কং গ্রেসের ৮%। তৃনমূলের ১৬% ।  ৪৮% পশ্চিম বঙ্গের কমিটেড ভোট ব্যাঙ্ক। বাকী ৫২% , যারা সাধারনত নিরেপেক্ষ, আম জনতা- তাদের ৩০-৪০% তৃনমূল পেয়ে থাকে।

 এই ৫২% নিরেপেক্ষ ভোটারবেস যা আজ তৃনমূলের দখলে মূলত, তার স্কোপিং করতে না পারলে, সিপিএম ১০০ টা বিগ্রেড করার পরেও  হারতে হারতে সুসির থেকে ছোট পার্টিতে পরিনত হবে।

 এই ৫২% বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে চিন্তিত না। যারা বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে চিন্তিত তারা হয় মুসলমান। না হলে  হার্ড বাম। তারা আলরেডি কংগ্রেস, বাম এবং তৃনমূলের লয়াল বেসের অন্তভুক্ত।

 এই ৫২% নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছেলে মেয়ের কাজের সুবিধা-আইন, নিরাপত্তা, ভাল শিক্ষা, ভাল স্বাস্থ্য, ভাল রাস্তা ইত্যাদি দেখে ভোট দেয়। আমেরিকা ভেনেজুয়েলা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই।  তৃনমূলকে নিয়ে এদের অভিযোগ অনেক- যেমন সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, আই টি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ডাকাতি।

 কিন্ত এরা এই সবের জন্য তৃনমূল ছেড়ে সিপিএমকে বিশ্বাস করবে কেন? সিপিমে এখনো সর্বনাশা বন্ধের রাজনীতিতে অন্ধবিশ্বাস রাখে। সুতরাং এখন যাও বা আস্তে আস্তে শিল্প আসছে, সিপিএম আসলে সব বন্ধ হবে। এটা কিন্ত এই ৫২% এর বিশ্বাস।  এবং তা সত্য।  স্বাস্থ্যর ক্ষেত্রেও মমতা ব্যনার্জি সিপিএম আমলের থেকেও অনেক ভাল কাজ করেছেন।  সুতরাং এই ৫২% এর মধ্যে যারা তৃনমূলকে অবিশ্বাস করে, তারা বিজেপিকে ভোট দেয়।  বাকীটা কিন্ত তৃনমূলকেই ভোট দিচ্ছেন-কারন তারা মনে করেন দিদি চিকিৎসা জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করেছেন তাদের জন্য।

 অর্থাৎ সিপিএম যদি নিজেদের নতুন সিপিএম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে- তাহলেই চান্স আছে। না হলে লোকসভা বা বিধান সভাতে ওদের একটা সিট পাওয়ারো চান্স নেই।-যে নতুন সিপিএম বন্ধে বিশ্বাস করে না, কাজে বিশ্বাস করে। শ্রমিকদের রিস্কিলিং এর কথা বলে। শ্রমিক কোয়াপরেটিভ তৈরী করে ডিম দুধ তৈরীর ব্যবসা আনে ( হাসবেন না। কেরলে সিপিএমের বেস হচ্ছে কোয়াপরেটিভ। তাই ওখানে সিপিমকে হঠানো কঠিন। )  শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মাইনের চেয়ে সরকারি শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে-যা আপ করে দেখিয়েছে। পার্টির এই নতুন রিমডেলিং না হলে, ওই লয়াল ১০% এর বাইরে ওদের কেউ বিশ্বাস করবে না।

 এই ৫২% এর কাছে সিপিএম মানে কতগুলো অপদার্থ কিন্ত সৎ ভালো লোকের পার্টি- কিন্ত  ভ্রান্ত লাল আদর্শের কারনে তাদের ব্যবসার ক্ষতি, চাকরির প্রসপেক্টের ক্ষতি হবে এটা সবাই জানে। এই খানটাই আটকে আছে সিপিএম। এবং এর পরেও এরা যখন বন্ধ ডাকে, তখন এই ৫২% এর কাছে এরা  বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় সম্পূর্নভাবে।

 আজ বিগ্রেডে এক লাখ এল না দশ লাখ এল তাই দিয়ে কিস্যু হবে না। কারন বিগ্রেডে যারা আসবে তারা ওই লয়াল ১০%। ৫২% কে টানার কোন কর্মসূচী বা দিশা সিপিএমের নেই।  আসলে পার্টিটাতে কোন নেতা আজ নেই। যারা  ৫২%  আম সাধারনকে বোঝে। এখানেই তৃনমূলের সাফল্য।

সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধের ভিন্ন রূপ

সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধের ভিন্ন রূপ।

  একপক্ষ যখন অন্যপক্ষের সাথে সম্মুখ সমরে অসমর্থ, তখন দুর্বল পক্ষ সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার করে। যবে থেকে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে ইতিহাসে, তবে থেকেই কেন্দ্রীয় রাজশক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সন্ত্রাসবাদ আছে। হ্যা বিংশ শতাব্দি থেকে, সন্ত্রাসবাদ অন্যরূপে। কারন তলোয়ার বর্শার যুগে, সেনাদের হাতে অস্ত্র থাকলে, মানুষের হাতেও অস্ত্র থাকত। তাই তখন হত "বিদ্রোহ"। বারো ভুঁইয়ারা বিদ্রোহ করেছিলেন। প্রবল মুঘল শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা তাদের ছিল। চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসবাদের দরকার হত না তখন।

 উনবিংশ শতাব্দির মধ্যে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র হয়ে উঠল মারাত্মক।  বিংশ শতাব্দির শুরু থেকে,  বিধ্বংসী কামান আর মেশিনগানের যুগে সম্মুখ সমরে যুদ্ধে জেতা সম্ভব ছিল না রাষ্ট্রের বিদ্রোহি অংশের। ফলে আমরা দেখব কি ভারত, কি ইউরোপে, যেসব জাতিসত্ত্বারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন একশো বছর আগে বিদ্রোহ করে, তারা সন্ত্রাসবাদের সাহায্যে স্বাধীনতার যুদ্ধে নামলেন।

  আমি গত তিন দিনে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রচুর পোষ্টদেখলাম।  মুশকিল হচ্ছে সবাই তিনটে ক্যাম্পে বিভক্ত- হিন্দুত্ববাদি ( বিজেপি), সেকুলার জাতিয়তাবাদি ( কংগ্রেস, তৃনমূল) এবং বাম লিব্যারাল। এরা সবাই নিজেদের আদর্শবাদের ভিত্তিতে ঘটনার বিশ্লেষন করছেন। কেও অভিজ্ঞতাবাদ বা এম্পিরিসিজমের ভিত্তিতে পুরো জিনিসটা দেখছেন না। 

হিন্দুত্ববাদি বিশ্লেষন বলে "ইসলাম", মুসলমান দায়ী। এগুলো বিপজ্জ্বনক চিন্তা। জৈইশই মহম্মদ মানে মহম্মদের অনুগত।  যেহেতু সকল মুসলমান সন্ত্রাসীই "ইসলামের শিক্ষায়" জিহাদি, সেহেতু, এটা ২+২=৪ করে দেওয়া হয়, ইসলামই সন্ত্রাসের জন্য দায়ী।  এই অতিসরলীকরন চিন্তার সমস্যা দুটো - এক, হিন্দু এবং খ্রীষ্টান ধর্মে উদবুদ্ধ সন্ত্রাসীও ত পৃথিবী দেখেছে।  ধর্ম, একটা মানুষকে "সন্ত্রাসীতে"  পরিণত করতে পারে। এটা ১০০% সত্য । কিন্ত সেই ধর্মটা হিন্দু, ইসলাম, খ্রীষ্ঠান হতে পারে।  কমিউনিস্ট আইডিওজিও হতে পারে। "অস্তিত্ববাদি" যেকোন চিন্তা ( যা মানুষকে তার নশ্বর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা না করতে বলে, বৃহত্তর "উদ্দেশ্যে" জন্য প্রান উৎসর্গ করতে শেখায় ) সন্ত্রাসবাদের "অনুঘটক"। কিন্ত মূল মিথক্রিয়া বা রিয়াকশন এর কারন কিন্ত "ক্ষমতার" খেলা।  দ্বিতীয় কারনটা এই যে, আমি বা আপনি খুব ভাল ভদ্র মুসলমান ও দেখেছেন। আবার খারাপ মুসলমান ও দেখেছেন।  এটা হিন্দুদের নিয়েও সত্য। কে কিভাবে ধর্মকে দেখছেন সেটা ব্যক্তিগত হওয়া উচিত। কিন্ত কাশ্মীর ভ্যালি, বা ইংল্যান্ডের মুসলিমদের মধ্যে জিহাদি বেশী। কেন? কারন ওখানে মুসলমান কমিউনিটি নিজেদের "ভিক্টিম" ভাবে। সুতরাং ধর্ম দায়ী না। ধর্মকে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারা কি ভাবে ক্ষমতার খেলায়, ধর্মকে দাবার বোর্ড বানিয়েছে- সেই  গভীরে  না গেলে, হিতে বিপরীত হবে।

সেকুলার জাতিয়তাবাদিরা কনফিউজড। একদিকে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচানোর দায়, অন্যদিক ফুটন্ত হিন্দু আবেগ।  ভোট বড় বালাই।  ইনারা সেফ সাইডে খেলেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। পাকিস্তানকে মেপে গালাগাল দেন ( পাছে মুসলমান ভোট ব্যাঙ্ক রুষ্ট হয়)।  অনেকটাই জালানিবদ্ধ রুহিত- জালে আটকানো রুইমাছ।  কিভাবে সন্ত্রাসবাদ আটকানো যাবে, সেই ব্যপারে কোন "কনস্ট্রাক্টিভ" কিছু শুনছি না। মোদি দোভালকে ফেলে দিলেই কাশ্মিরে শান্তি আসবে না। তবে হ্যা মমতা ব্যানার্জি দোভালকে যে দুহাত নিয়েছেন, তাতে আমি একমত। এই দোভাল লোকটা বকে বেশী, কাজে কম। যারা নিরাপত্তার আসল লোক হয়, তারা বকে কম, কাজ করে বেশী।

এবার থাকল বামপন্থীরা- "আমাদের মুল্যবান কথা কেউ বুঝতে চায় না"। ইনারা ব্রহ্ম ( পড়ুন ইনাদের বাম আদর্শ ) সত্য, জগৎ মিথ্যা তত্ত্বে বিশ্বাসী। ইনাদের কাছে জাতিয়তাবাদ, সেনাবাহিনী-সব কিছুই "চক্রান্ত" এর ফসল।  ভারতীয় রাজনীতিতে বামের অবস্থা অনেকটা হাওড়ার ব্রীজের তলায় বসা কেসিপালের মতন - সবাইকে ডেক ডেকে শোনাচ্ছে সূর্য্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।

 মুশকিল হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ থামাতে গেলে অভিজ্ঞতাবাদের ভিত্তিতেই একমাত্র সাফল্য আসবে। অর্থাৎ দেখতে হবে কোথায় কোথায় "কিভাবে" "কি দাবার চালে"   রাষ্ট্র শক্তি সন্ত্রাসবাদকে শুইয়ে দিতে পেরেছে।

 জাস্ট একটু ভাবুন। মাত্র এক লাখ বৃটিশ ভারতে সেই কালে কুড়িকোটি লোকের ওপর শাসন চালিয়েছে।  এবং এখনো ভারতীয়রা বৃটিশ বলতে গদগদ! আর একশো দশ কোটি ভারতীয়, দশকোটি কাশ্মিরীকে বাগে আনতে পারছে না ! যদ্দিন তারা আদর্শের ভিত্তিতে ভাববে, পারবেও না।

 রোমান সম্রাটেরা কি ভাবে উত্তরের জার্মানিক, গল উপজাতিতেদের অনুগত করেছিল? জানেন সেই ইতিহাস?

 কি জাদুতে পুতিন চেচেনে  সন্ত্রাসবাদ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে হাপিস করে দিলেন? কেন প্রথমে  মিলিটারি নামিয়ে হল না ( প্রথম এবং দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ) - এবং এই চল্লিশ জনের মৃত্যুত কিছু না। চেচেন সন্ত্রাসবাদে প্রায় ২২ হাজার রাশিয়ান সেনা প্রান হারিয়েছিল। কিন্ত কিভাবে চেচেনে শান্তি ফেরালেন পুতিন?

  এই তিনটে অভিজ্ঞতাকে এক করলে যেসব জিনিস পরিস্কার হয় -

 (১) কাশ্মীরে ভারতের অনুগত "কাশ্মীরি" ডিক্টেটর দরকার। গণতন্ত্র এলে সেখানে ফারুকি, ওমর বা মেহেবুবা-এরা সবাই ভারত বিরোধি শক্তিকেই শক্ত করবে।  বিসমিল্লায় গলদ।  গণতন্ত্র কাশ্মীরে আসুক। কিন্ত আগে সন্ত্রাসবাদের দমন দরকার। তদ্দিন সেখানে ভারত অনুগত কাশ্মীরি স্বৈরতন্ত্র দরকার।

(২) কাশ্মীরে ডিক্টেটরশিপের সাহায্যে (১) এর ন্যায়,  পুলিশ এবং প্রাশাসনে, শিক্ষাক্ষেত্রে শুধু তাদেরই নেওয়া হবে, যারা ভারতের অনুগত এবং এই ভাবে একটা "প্রো ইন্ডিয়া" এলিট কাশ্মীরি শ্রেনী তৈরী করা দরকার। গণতন্ত্র থাকলে এটা হবে না। হাসিনার মতন স্ট্রং ম্যান দরকার।

(৩)  এই ডিক্টেটরের হাতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল  ভারত অনুগত কাশ্মীরি প্যারামিলিটারি দিতে হবে । যারা সন্ত্রাসবাদি দমনের আনঅফিশিয়াল ফোর্স হবে। ভারতের মিলিটারী  দিয়ে কাশ্মীরি দমন করলে, সেটা ঘোষিত যুদ্ধ কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে।  ভারত অনুগত কাশ্মীরী প্যারামিলিটারি না থাকলে, সন্ত্রাস চলতেই থাকবে।

প্রথম এবং দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে রাশিয়ান সৈন্যদের দিয়ে চেচেন দমন করতে গিয়ে বাইশ হাজার সৈন্য হারিয়েছিলেন পুতিন।   এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, আর রাশিয়ান দিয়ে চেচেন দমনের কথা ভাবেন নি। চেচেন দিয়েই চেচেনদের দমন করেছেন।  নিজের অনুগত রামজান কাদিরভকে বসিয়েছিলেন। তাকে তৈরী করে দিয়েছিলেন এক চেচেন প্যারামিলিটারি যারা শায়মিল বাসায়েভের সন্ত্রাসবাদি শক্তিকে তিন বছরে খতম করে।

 যেমন করেছিল বৃটিশরা। বা রোমানরা।  এটাই অভিজ্ঞতাবাদের শিক্ষা।

 ফলো দ্যা সাক্সেস!  আমি গণতন্ত্র প্রেমী লোক। যা নিদান দিলাম, তা আমার নিজের আদর্শের বিরোধি। কিন্ত অভিজ্ঞতাবাদ মানতে গেলে-ফলো দ্যা সাক্সেস।  ডাউন ইউথ ইয়োর আইডিওলজি।

কেসি নাগের ম্যাথের বই

কেসি নাগের ম্যাথের বই পড়েনি, এমন বাঙালী বিরল।

 কিন্ত কেসি নাগের গণিত শেখানোর পদ্ধতি কি সঠিক ?

  উত্তর অবশ্যই না। ওতে অঙ্কে ১০০/১০০ পাওয়া যেতে পারে, গণিত যেভাবে শিখলে " এপ্লাই" করা সম্ভব, তাতে খামতি থাকে।

 এই কম্পউটার এলগোরিদমের যুগে গোটা বিশ্বে গণিতের শিক্ষা পদ্ধতি বদলাচ্ছে। অঙ্কের সল্যুউশনটা একটা এলগোরিদম হিসাবে ভাবতে হবে। ফলে স্টেপ, প্রসেস এবং প্যাটার্ন - একটা গণিতিক সমস্যার মধ্যে যাতে ছাত্ররা খুঁজে পেতে পারে- সেটাই হওয়া উচিত আধুনিক গণিত শিক্ষা। আমেরিকাতে এই ভাবেই শেখাচ্ছে এখন। ২০ বছর আগে আমেরিকা গণিত অলিম্পিয়াডে ৮-১২ এর মধ্যে থাকত। লাস্ট পাঁচটা অলিম্পিয়াডে প্রায় প্রতিটাতেই আমেরিকান টিম প্রথম হয়েছে। ভারত ছিটকে গেছে অনেক দূরে। আমাদের সময় ভার‍তের টিমটা ১০-২০ এর মধ্যে আসত। বর্তমানে ম্যথ অলিম্পিয়াডে ভারতের র‍্যাঙ্কিং ২০-৬০ এর মধ্যে আসে।

 এখন অনেকেই ভাববেন হয়ত, এই ম্যথ অলিম্পিয়াডের পারফর্মান্স আউটলায়ার। সেটা ঠিক না। এটা গসিয়ান কার্ভের টেইল। ভারতের মতন একটা বৃহৎদেশের টপ সিক্স নাইন পার্সেন্টাইল ছেলে মেয়েরা যদি অলিম্পইয়াডে প্রথম দশের মধ্যে না আসে, ফিফটি পারসেন্টাইলে কি কোয়ালিটি পাওয়া যাবে বলাই বাহুল্য।

 এর একটা মূল কারন, ভারতে গণিত শিক্ষা এখনো কেসি নাগের "টেকনিক" স্কিল নির্ভর। ওটা আদ্যিকালের। বর্তমানে  এলগোরিদিম ভিত্তিক টিচিং  চালু না হলে, ভারতের ছেলে মেয়েরা গণিতে আরো পেছবে।

ভাষাদ্রোহী

মাতৃভাষা প্রবাসীদের কাছে চৈত্রের দিনের দু-এক পশলা শিলাবৃষ্টি। সারাদিন ইংরেজিতে বাতচিতের শেষে, দিনের শেষে চাইলেও বাংলা কথা বলার লিস্ট লিমিটেড। এখানে ছেলে মেয়ের সাথেও ইংরেজিতে কথা বলতে হয়। এমনিতে খুব বেশী স্যোশালাইজ করার অভ্যেস নেই। ফলে বাংলা কথা না বলতে পারার খেদটা ফেসবুকে বাংলা লিখেই মেটাতে হয়। ওই লেখার সময় মনে মনে কথা বলা।  বা পাঠকের সামনে মনোলোগ। ডায়ালোগ নাই বা হলো, মনোরুগী হওয়ার চেয়ে ফেসবুকে মনোলোগ ই সই!

অনেকেই ভাষায় বিশুদ্ধতা শোঁকেন। কেউ বা হিন্দুয়ানী, কেউবা মুসলমানীর সন্ধানে।  আমি দেখি ইনোভেশন। প্রচলিত, অপ্রচলিত শব্দের নতুন ব্যবহার। আমি নিজেও ইচ্ছা করে প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। আমি চাই বাংলা ভাষায় আরো ইংরেজি, হিন্দি, স্পানিশ শব্দ আসুক। বাংলা ভাষার ভান্ডার উপচে পড়ুক।

তবে বাংলা সাহিত্য নিয়ে আশাবাদি নই। পাঠকই নেই। নেই কারন শিশু সাহিত্য নেই।

 ফেসবুকে বাংলা পোষ্ট, কবিতা, গান। যা কিছু এর মধ্যেই হচ্ছে। উপন্যাস, গল্প মৃত।

 ভাষা আজ আছে,  কাল নেই। বাংলা ভাষার বর্তমান রূপ দুশো বছর আগের।  কত ভাষা হারিয়ে যায়। বাংলা ভাষায় ত্রিশ কোটি লোক কথা বলে। ফলে সহজে হারাবে না। কিন্ত আগামী দিনে অনেক ইংরেজি হিন্দি শব্দ এবং একপ্রেশন ঢুকবে।  অনেক গুরু ঠাকুর তা পছন্দ করেন না। আমি করি। কারন তাতে ভাষার বন্ধন ভাঙে।

 ভাষাই একমাত্র চিজ, যা ভাংলে শক্ত হয়। তাই আমি ভাষাদ্রোহী।

খেলার মাঠে রাজনীতি

সেটা ১৯১৪। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বৃটিশ তরুনরা লাখে লাখে প্রাণ হারাচ্ছে জার্মান দের হাতে। গোটা বৃটেন জুরে জার্মানীর বিরুদ্ধে ঘৃণা।

     এই ঘৃণার জোয়ারে সামিল হতে নারাজ দুই বরেণ্য বিজ্ঞানী। স্যার থমাস হার্ডি। যিনি জহুরীর মতন রামানুজনকে খুঁজে বের করেছিলেন। অন্য জন স্যার আর্থার এডিংটন। প্রবাদ প্রতিম জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী। যিনি আইনস্টাইনের জি টি আর তত্ত্বের প্রথম পরীক্ষামূলক প্রমান দেবেন সূর্য্গ্রহনে আলফা সেঞ্চুরীর অপরসরন থেকে। আইনস্টাইন তখন ইংল্যান্ডে ভিলেন। কারন তিনি "জার্মানীর"। হার্ডি এবং এডিংটনকে প্রচুর গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। উনারা ইউনিভার্সিটির অনেক পদ, অনেক সরকারি পজিশন হারিয়েছিলেন। হারান নি নিজের বিবেক।

 এডিংটন দৃঢ়কল্প। পরিস্কার বল্লেন, বিজ্ঞানীদের কাজ বিজ্ঞানকে এগোনো- সেখানে "শুধু জার্মানীর ট্যাগ" আছে বলে আইনস্টাইন অপাংত্বেয় হতে পারেন না। কারন বিজ্ঞানের জ্ঞান গোটা পৃথিবীর সম্পদ।

 তেন্ডুলকার, গাভাসকার, কপিলদেব এরা গোটা পৃথিবীর সন্তান। সব ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলি এদের খেলা দেখে। ইমরান খান বা ওয়াসিম আক্রাম ও ক্রিকেটের বিজ্ঞানী।  ইনারা গোটা পৃথিবীর সম্পদ।

ভারত পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট খেলতে চাইছে না!

 খেলার মাঠে রাজনীতি ঢোকানো মারাত্মক ভুল। এথেন্সে পৃথিবীর প্রথম অলিম্পিক এই জন্যে চালু হয়েছিল যে যুদ্ধের বদলে খেলার মাঠে হৌক প্রতিদন্দ্বিতা।  রাজনীতির বৈরীতা দূর করার জন্যই যেখানে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা -সেখানে যদি ভারত বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলব না- তাহলে প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যই ধ্বংস।

পাকিস্তানের সাধারন লোক ভারত বিরোধি না। আমন সবাই চাইছে। সাধারন মানুষ কেউ সন্ত্রাসবাদ চায় না।  ভারতে সন্ত্রাস চালাচ্ছে পাকিস্তানের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স আই এস আই। কেন চালাচ্ছে? 

 কারন পাকিস্তান একটি অবৈধ দেশ। ওই নামে কোন দেশ কোন কালে ছিল না।  এমন একটা দেশে, যাদের জাতীয় ভাষা উর্দু, তাদের কোন রাজ্যের মাতৃভাষাই না।  পাঁচটা প্রদেশ, যাদের ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, তাদেরকে মিলিটারী আর দ্বিজাতিতত্ত্ব দিয়ে বলা হল, যাও এটা তোমাদের দেশ!  ফলে পুশতুন, বালুচ, সিন্দ্রি- সবাই আলাদা আলাদা দেশ চাইছে। বাংলাদেশ আগেই গেছে। এখন ওদেশের মিলিটারি যদি ভারতে বোমা না ফাটায়, এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ভারত যদি ফোঁস ফোঁস করে তাহলে পাকিস্তানের মিলিটারির লাভ। কারন যুদ্ধের আবহে বালুচ, সিন্ধ্রি, পুশতুনদের স্বাধীনতার দাবী চাপা যাবে।

 ভারত পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট না খেললে পাকিস্তানের মিলিটারী এস্টাব্লিশমেন্ট দুর্বল হবে? যত্তোসব পাগোলের চিন্তা।

 আসলে ভারতের বর্তমান সরকার বকে বেশী, কাজে কম। ডিমনেটাইজেশন, জি এস টি , কাশ্মীর- সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাট। কোন কিছুর মধ্যেই কোন গভীর চিন্তা বা প্ল্যানিং নেই।

যুদ্ধ যুদ্ধ কাবাডি

এটা যুদ্ধ না, যুদ্ধ যুদ্ধ কাবাডি!

 সন্ত্রাসী এক্সপোর্টার হিসাবে বিশ্বের কোন সভ্যদেশই পাকিস্তানকে পছন্দ করে না। কিন্ত গত দুদিনের  ভারতীয় ন্যারেটিভগুলি - যথা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ৩০০ জন সন্ত্রাসীকে নিহত করেছে, ইত্যাদি কিন্ত আন্তর্জাতিক মিডিয়া খাচ্ছে না। কারন ভারত, ৩০০ মৃত জঙ্গীর কোন প্রমান দিতে পারে নি। বরং আপাতত যা গ্রাউন্ড লেভেলে আসছে, খুব সম্ভবত জঙ্গী ঘাঁটির এক কিলোমিটার দূরে বোমটা পড়েছে। সন্ত্রাসীরা বহাল তবিয়তেই আছে। মধ্যে খান থেকে পাকিস্তান ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দনকে যুদ্ধবন্দী বানাতে সক্ষম হয়েছে।

বরং এত কিছুর মধ্যে যেটা পরিস্কার, ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। পাকিস্তান ইস্যু না। ওদের দুদিন যুদ্ধ করার ও টাকা নেই। মিলিটারী প্রযুক্তিতে ভারত এই মুহুর্তে চীনের থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে গেছে। যেটা চিন্তার আসল কারন হওয়া উচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মাত্র দু বছরের পুরাতন প্রযুক্তি বাতিল করতে হত। তার উদাহরন অসংখ্য।  সেখানে ভারতের বিমান বাহিনীর বর্তমান অবস্থা -

   মিগ-২১ বাইসন ( পঞ্চাশ বছরের পুরাতন প্রযুক্তি)
   মিরাজ ( ২৫ বছর )
   মিগ -২৯ ( ৩০ বছর)
   সুখোই - ২০ বছর

 এই যে এত রাফাল রাফাল করে সবাই চিল্লাচ্ছে, সেই রাফাল ও এখন ১০ বছরের পুরাতন প্রযুক্তি।

 যুদ্ধ বিমান কিনে ভারত প্রযুক্তিগত ভাবে কোন দিনই এগিয়ে থাকতে পারবে না। সম্ভব না। নিজেদের তৈরী করতে হবে।

 তেজাস যুদ্ধ বিমান তৈরী করতে পারে নি ঠিক ঠাক। প্রচুর  ডিলে!

 অর্জুন ট্যাঙ্ক, প্রায় ৩০ বছরের হতে চললো- এখনো ঠিক ঠাক না।

 এসাল্ট রাইফেল ও এখনো ঠিক ঠাক তৈরী করতে পারে না।

 এত ব্রহ্ম মিসাইল মিসাইল করে চিল্লাচ্ছে, কিন্ত তাহলে টেরোরিস্ট ক্যাম্পে আঘাত হানতে ব্রহ্ম মিশাইল কেন ছাড়া হল না?  টার্গেট ত ভারতের সীমানা থেকে মোটে পাঁচ মাইল দূরে।  ব্রহ্মের রেঞ্জ নাকি তিনশো ?   ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোবে?

 অর্থাৎ যেকোন ধরনের  সামরিক প্রযুক্তি তৈরী করতে ভারত অক্ষম। কারন সরকারি আর এন্ডি ডি আর ডি ও শুধুই সাদা হাতি। শুধু মিডিয়া প্রচার করে লাভ নেই। সত্যিকারের যুদ্ধে গেলে ভারতীয় সামরিক প্রযুক্তির  হার কঙ্কাল বেড়িয়ে যাবে।

 মিলিটারি আর এন্ডির খুব দ্রুত প্রাইভেটাইজেশন করা উচিত। না হলে ভারত আরো পেছবে। সোভিয়েত ইউনিয়ানে একমাত্র সরকারি আরন্ডিতে ভাল অস্ত্র তৈরি হত। কারন সেখানে বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ হলে, তাদের কঠোর শাস্তি হত।  গণতান্ত্রিক দেশে সেসব সম্ভব না। ফলে ভারতের মিলিটারি আএন্ডি, ডি আর ডি ও নামক সাদা হাতিটি পুষে লাভ নেই। ভারত মিলিটারি প্রযুক্তিতে আরো পিছিয়ে যাবে।

চিন্তা করবেন না। যুদ্ধ হবে না। কারন ভারতের সেনানায়করাও ভালো করেই জানেন, যুদ্ধে গেলে যুদ্ধাস্ত্রের কঙ্কালসার অবস্থা, প্রযুক্তিতে কয়েক দশক পিছিয়ে থাকা, সব কিছুই সামনে চলে আসবে। আর পাকিস্তান ও যাবে না। কারন এক সপ্তাহ মতন যুদ্ধ চালানোর খরচ ও তাদের নেই।  বরং একটু কাবাডি খেলা হবে সীমান্তে। যদি তাতে মোদির ভোটব্যঙ্কে লাভ হয়। তবে, ব্যকফায়ারের সম্ভাবনাই বেশী দেখছি।

আমি যুদ্ধবাদিও নই, শান্তিবাদি ও নই

আমি যুদ্ধবাদিও নই, শান্তিবাদি ও নই। শুধু ইতিহাস থেকে এটুকু জানি- যুদ্ধের জন্য ভাল প্রস্তুতি থাকলে, কোন দেশ আক্রমন করতে সাহস পায় না। কিন্ত শুধু মাত্র রাজনৈতিক বা ব্যবসার কারনে যুদ্ধবাজনীতি অনুসরন করলে,  সেই দেশের লোকেরই বিপুল ক্ষতি। যেটা আমরা আমেরিকাতে নিত্যদিন ফেস করি।  বিলিয়ান বিলিয়ান ডলার খরচ হচ্ছে ফাইটার জেট বানাতে অথচ, স্কুলে টিচার নেওয়ার পয়সা নেই।

যুদ্ধ যুদ্ধ করে যে কেও লাফাতেই পারে, তা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্ত তার বাবা যখন অসুস্থ হবে, তখন তার চিকিৎসার গারান্টি কিন্ত রাষ্ট্র নিতে পারছে না।  প্রাইভেট হাসপাতালরা ডাকাত হয়ে উঠেছে।  ছেলে মেয়ের শিক্ষার খরচ সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে। আবার বহু টাকার প্রাইভেট স্কুলেও শিক্ষার মান খুবই খারাপ।  সাথে সাথে মাত্রারিক্ত দূষন।  ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ।  পাকিস্তান সন্ত্রাসের ফলে কত লোক মারতে পারে? ২০,০০০? না কি দু লাখ? কিন্ত ভারতে দূষনের যা অবস্থা প্রতি বছর কোটি কোটি লোক অসুস্থ হয়ে মারা যাবে দূষিত বাতাস আর কীটনাশক দেওয়া খাবার  থেকে।

 এই দূষনের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কবে হবে?

 ব্যক্তিগত ভাবে, আমার ফেবারিট পাস টাইম, মিলিটারি টেকনোলজির ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারি দেখা।  যতটুকু বুঝেছি, ভারতের মূল স্ট্রাটেজিক সমস্যা চীন। পাকিস্তান খেতে পায় না, ত যুদ্ধ করবে কি।  সেই চীন কিন্ত প্রযুক্তিতে দ্রুত এগোচ্ছে। ভারতের লক্ষ্য হওয়া উচিত চিন। পাকিস্তান ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চার। তার সাথে টেক্কা নিয়ে কিস্যু হবে না।

 চীনের সাথে পাল্লা দিতে হলে, ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। ডি আর ডিও তুলে দিয়ে আরো অনেক বেশী স্টার্টাপকে ইনভলভ করতে হবে মিলিটারি প্রযুক্তির সাথে। আমেরিকার প্রায় ১০০০ এর বেশী স্টার্টাপ বছরের তিন বিলিয়ান ডলার ( ২০,০০০ কোটি টাকা) পায় মিলিটারি এস বি আই আর গ্রান্টের মাধ্যমে। আমেরিকান মিলিটারির যুগান্তকারি ইনোভেশন এরাই করে ।  এই মহুর্তে ভারত পাকিস্তানের সাথে যতটা এগিয়ে, চীনের থেকে তার থেকেও বেশী পিছিয়ে। এবং চীন আরো দ্রুত এগোচ্ছে।

 মাঠে যে যুদ্ধ হয় কয়েক দিনের, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধের প্রস্তুতি। আজকের যুদ্ধে যার টেকনোলজি উন্নত সেই জিতবে। ইস্রায়েলের মতন একটা পুচকে দেশ আমেরিকা চীন ছাড়া বিশ্বের সব দেশকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। ইস্রায়েলের ৫০০ এর বেশী মিলিটারি স্টার্টাপ।

 ইস্রায়েলের সিস্টেম থেকে ভারত শিখুক। চীনের মডেল, আমেরিকান মডেল থেকে শিখুক। ডি আর ডি ও সোভিয়েত মডেল। রাশিয়াও ওই মডেলে আজ আর নেই।

অভিনন্দনকে ঘিরে ভারতের গণআবেগ

অভিনন্দনকে ঘিরে ভারতের গণআবেগ দেখে গণতন্ত্রের প্রতি গভীর বিশ্বাস ফিরে আসছে। একমাত্র গণতন্ত্রেই একজন সাধারন সৈনিক দেশের  হিরো হওয়ার সুযোগ পান। স্বৈরতন্ত্রে সৈনিকেরা শুধুই বোরে,
 দেশের মিডিয়া, প্রচার মেশিন গৌরব গাথা প্রচার করে শুধুই  ডিক্টেটরের।  ইতিহাসে এটাই দেখি বারংবার।

 পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র এথেন্স যুদ্ধে গেছে বারো বার।  এর মধ্যে ম্যারাথন এবং থ্যালামিসের যুদ্ধ ছিল পারশিয়ান সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ।  এই যুদ্ধের ফলেই উঠে আসেন এথেনিয়ান হিরো থেমিস্টকলস। কোন অভিজাত সন্তান না-সাধারন ঘর থেকে উঠে আসা এক এথেনিয়ান সেনানায়ক হৌন এথেন্সের হিরো।  সমসাময়িক কোন রাজতন্ত্রেই কোন সেনা বা সেনা নায়ক হিরো হতে পারতেন না- কারন তাহলে রাজার বিরুদ্ধে পাওয়ার সেন্টার তৈরীর সুযোগ ছিল!

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়ান বিজয়ী। আমেরিকান হিরো আইজেনআওয়ার, জেনারেল প্যাটন।  রেড আর্মির নেতা জর্জি জুকভ।  এই সেই জুকভ- যার হাতে স্টালিন যুদ্ধভার ছেড়েছিলেন সম্পূর্ন যখন জার্মান সেনা মস্কো থেকে কুড়ি মেইল দূরে।
যুদ্ধ নেতৃত্ব নিয়ে সম্পূর্ন ছড়িয়েছিলেন স্টালিন।  সেখান থেকেই যুদ্ধটাকে ঘুরিয়েছিলেন জেনারাল জুকভ। ফলে জার্মানীর আত্মসমর্পন যখন সম্পূর্ন, জুকভ একজন সোভিয়েত হিরো। 

 স্টালিন রাজা, আর একজন সৈনিক জুকভ যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব পাবেন তাই কখনো হয়? ফলে  মাত্র কয়েক মাস বাদেই সেনাবাহিনীর মাথা থেকে জুকভকে ছেঁটে ফেললেন স্টালিন। জার্মানীর হারানোর কৃতিত্বটাও পকেট ঢোকালেন ভাল ভাবে। এখনো অশিক্ষিত কমিনিউস্টরা জানে জার্মানীর বিরুদ্ধে স্টালিনই ছিলেন হিরো। আসল সত্য হচ্ছে ১৯৪২ সালে জার্মানীর হাতে মার খেতে খেতে ( কারন ভুল যুদ্ধ স্ট্রাটেজি) স্টালিন যখন নিজের ওপর বিশ্বাস হারান, তখনই যুদ্ধের দ্বায়িত্ব তুলে দেন জুকভের হাতে। এরপরে কি হয়েছিল সবাই জানেন। অথচ জুকভ যখন যুদ্ধ জিতে গেলেন, ইতিহাসকে অন্য ভাবে লিখলেন স্টালিন- তিনি নিজেকে প্রজেক্ট করলেন আসল হিরো হিসাবে। জুকভকে কিছু পুরস্কার দিলেন। ব্যস।

অন্যদিকে আমেরিকান হিরো আইজেনআওয়ার, যিনি নিজেও ছিলেন কমরেড জুকভের গুনমুগ্ধ ফ্যান,  তিনি তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ৩৪ তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।

গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রে এটাই পার্থক্য।

 কার্গিল যুদ্ধেও আমরা দেখেছি ভারতীয় গণতন্ত্রে শহীদ জওয়ানরা হিরো। আর পাকিস্থান তাদের গোপন সৈনিকদের দেহ পর্যন্ত তাদের ফ্যামিলির হাতে তুলে দিতে পারে নি। কারন পরিচয় অস্বীকার করতে হয়েছে।

 ফ্যালকনের পাইলট শাহনাওয়াজ, অভিনন্দন এর মতন ভাগ্যবান নন। দুজনা দুজনের প্লেট হিট করেছেন- কিন্ত শাহনাওয়াজের মৃত্যু হয়েছে কাশ্মীরি জনতার হাতে। ভারতীয় পাইলট ভেবে জনগণ তাকে পিটিয়ে মেরেছে।  পাকিস্তানের তাকে অস্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। কারন এফ-১৬ বিমান ভারতের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে না পাকিস্তান।

 একই যাত্রা, একই বীরত্বে দুই পরিনতি। একজন গণতন্ত্রের জন্য লড়ছিলেন, তাই জনগণ তাকে নিয়ে উদ্বেলিত। অন্যজন  পাকিস্তানের অবৈধ মিলিটারি এস্টাব্লিশমেন্টের সন্তান - পাকিস্তানে সেই সন্মান পেলেন না।

পন্ডিতরা বলছেন এই জন্যেই এথসেন্সের গণতন্ত্র সেকালের সেরা মিলিটারি শক্তিও হয়ে ওঠে। কারন সাধারন ঘরের ছেলেদের দেশের হিরো হওয়ার সুযোগ ছিল। যা রাজতন্ত্রে হয় না- সেখানে সেনা মানে শুধুই মরার জন্য বেতন পাওয়া।

 ভারত, আমেরিকাতেও সেটাই দেখি।

" গণতন্ত্র" ই দিনের শেষে সেরা মিলিটারি শক্তির জন্ম দেবে।  হ্যা ভারতের অস্ত্র গবেষনা দুর্বল -কিন্ত গণতন্ত্রের চাপেই তা বদলাবে।

হেমবতী নন্দন বহুগুনা

সেটা ১৯৮৫। হেমবতী নন্দন বহুগুনা খুব দুঃখ করছেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে। সদ্য হেরেছেন অমিতাভ বচ্চনের কাছে এলাহাবাদ সিটে। শুধু হারা? যাকে বলে গোহারা- এক লাখ, সত্তর হাজার ভোটে!

 বহুগুনা স্বাধীনতা সংগ্রামী, কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টে চার বছর জেল খেটেছিলেন। উত্তর প্রদেশের প্রাত্তন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রেও অনেক দিন মন্ত্রী ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর এমার্জেন্সির বিরুদ্ধেও লড়েছেন। সব মিলিয়ে, ভারতের রাজনীতিতে বিরাট মুখ।

 তিনি শুধু হারলেন না, গোহারা হারলেন, রাজনীতিতে নবাগত অমিতাভ বচ্চনের বিরুদ্ধে!

 উনি বাজপেয়ীকে বলেচলেছেন- দেখ অটল। জনগণকে দেখ। এরা আমার রাজনৈতিক কেরিয়ার কিছুই মনে রাখল না! শুধু গ্ল্যামার দেখে ভোট দিল! ছি ছি এদের জন্যেই আমি বৃটিশ আর ইন্দিরা গান্ধীর জেল খাটলাম?  তাহলে আমরা এদ্দিন করছিটা কি? আমাদের গ্রহনযোগ্যতা এতই নীচে যে লোকে রং সং মাখা কাউকে পেলে আমাদের ছেড়ে পালাবে?

বাজপেয়ী রসিক মানুষ। বল্লেন বহুগুনাজী- নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন!

- কেন?

  -কারন এই যে আপনাকে জিনাত আমনের বিরুদ্ধে লড়তে হয় নি। জিনাত আমন বিকিনি পড়ে ভোট চাইলে, আপনার জামানত জব্দ হত। আপনি অন্তত সেই লজ্জা থেকে বেঁচেছেন!

মিমি আর নুরসতের তৃনমূল পার্থী হওয়া নিয়ে, অনেক কথাই ঘুরছে। কিন্ত কংগ্রেস এবং তৃনমূল যে কেন্দ্রীকতার রাজনীতি করে , তাতে দাবার চালে ঠিকই আছে। কারন পশ্চিম বঙ্গের ৪২ টা কেন্দ্রে মমতাই পার্থী। এটা তৃনমূলের রাজনৈতিক পথ। কারন শুধু মাত্র এই ভাবেই তৃনমূল দলের মধ্যে ফ্যাকশনালিজম আটকাতে পারে।  তৃনমূলের রাজনীতির প্রধান বাধা বিজেপি বা সিপিএম না। তাদের দলের নেতাদের কলহ। সেটা রুখতে বাইরের গ্ল্যামারাস পার্থী, তৃনমূলের জন্য ভাল। কারন জনগণ জানে সব নেতাই অভিনেতা। শুধু মমতা ব্যানার্জিকে দেখেই লোকে তৃনমূলকে ভোট দেয়। স্থানীয় তৃনমূলের নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে তৃনমূলের রাজনীতি চলে না।  এটাই তৃনমূলের রাজনীতি। কারুর সেটা ভাল না লাগলে, তারা তৃনমূলকে ভোট দেবে না। মিটে গেল।

 ঠিক সেই জন্যে ডিরেক্ট অভিনেতা তৃনমূলে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য যা অটলজী বহুগুনাকে শুনিয়েছিলেন। কারন এরা মমতা বিরোধি পাওয়ার সেন্টার তৈরী করে তৃনমূলের ক্ষতি করবে না ভবিষ্যতে। যা মুকুল রায় সহ অনেকেই করে দেখিয়েছেন।  সুতরাং মমতা ব্যানার্জির চালে কোন ভুল নেই।

কে জিতবে তা ঠিক করার মালিক জনগণ।  প্রতিটা পার্টি তাদের নিজের মতন করে গুটি সাজাক।  ভারতের রাজনীতি জটিল। যে যার মতন ঠিক বুঝে ভোট দিলেই হল।

ব্রেন্টন হ্যারিসন

ব্রেন্টন হ্যারিসন টেরান্ট। ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে হামলা চালান এই হোয়াইট উগ্র শেতাঙ্গ জাতিয়তাবাদি।

 এর উগ্র শেতাঙ্গ রাজনৈতিক দর্শনের সাথে অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানই একমত পোশন করেন। নইলে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসত না।

শেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদ বা হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বা  ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রেও ব্যপারটা এক। হাতে বন্দুক তুলে নিচ্ছে গুটিকয়েক ব্যক্তি। কিন্ত পেছনে জন সমর্থন ? বিশাল। সেখানে আছে আপনার আমার ক্লাস থেকে উঠে আসা অসংখ্য মধ্যবিত্ত। যারা অহরাত্র পার্টিতে দুইদিকে চোখ রেখে, " সেফ মোমেন্ট" পেলেই বলে দেবে, মুসলমানদের জন্যেই ভারতের আজ এত সব্বোনাশ। ইসলামিক সমাজে আবার অত ঢাকারাখা নেই। বাংলাদেশের উলেমা মৌলনারা প্রকাশ্য সভাতেই হিন্দুদের মুন্ডপাত করেন। পাকিস্তান আরো অনেক এগিয়ে। জিউউর রহমানের সময়, পাকিস্তানের পাসপোর্টের লাস্ট পাতায় পরিস্কার ডিক্লেরেশন দিতে হত, আপনি আহমেদিয়া নন! সার্ভে বলছে, অধিকাংশ মুসলমান সন্ত্রাসবাদি নন এটা ঠিক-কিন্ত ভয়ের দিক হচ্ছে বাংলাদেশ পাকিস্তান তুর্কি, আরবের প্রায় সব কটা দেশেই প্রায় ৭০% লোক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একমত।  ব্রেন্টন ব্যতিক্রম না। ভোট নিলে, আমেরিকার শেতাঙ্গদের অনেকেই তার রাজনৈতিক দর্শনের সমর্থক।

 ইসলামিক দেশগুলোর মতন এত প্রকাশ্যে না হলেও, ভারতে বহুদিন মুসলিম বিদ্বেশ ছিল চোরা গোপ্তা। চার দেওয়ালে বন্দি।  ইউরোপ আমেরিকাতেও অভিবাসি বিদ্বেশ বা এশিয়ানদের প্রতি বিদ্বেশ ছিল ঘোরোয়া। কিন্ত ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে ভারতে মুসলমান বিদ্বেশ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ট্রাম্পের ক্ষমতালাভের পরে আমেরিকাতেও প্রায় তাই। এদ্দিন আমেরিকাতে আছি- রেসিজমের ঘটনা আঙুলে গুনতে পারি। কিন্ত গত দুবছরে , স্পেশালি যেবার ট্রাম্প নির্বাচিত হল, বর্ণবাদি ঘটনা মেরীল্যান্ডের মতন প্রগ্রেসিভ রাজ্যেও বহুগুন বৃদ্ধিপায়।

 মুশকিল এখানেই।  কিছু উগ্র মুসলমান যখন ইসলামি দেশগুলিতে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়-সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা চুপ থাকে।
 ভারতে  আজকে বিজেপির " মুসলিম ঘৃণার" রাজনীতির বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা চুপ।  আমেরিকাতে বরং ট্রাম্পের বর্নবাদি রাজনীতির বিরুদ্ধে তাও অনেক শেতাঙ্গই সরব।

মনে রাখবেন , মৌনতা সম্মতির লক্ষন। হিন্দু এবং মুসলমানদের দ্বিচারিতা এখানেই যে আমেরিকাতে তারা শেতাঙ্গদের বর্ণবাদের বিরোধিতা করবেন। নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলে কিছু বলবেন না।

যাইহোক আবার ব্রেন্টনে ফিরে আসি। লোকটিকে ভাল করে স্টাডি করা দরকার। প্রথম জীবনে ছিল কমিনিউস্ট। সেখানে সঙ্গত কারনে মোহভঙ্গ হওয়াতে,হয়ে গেল শেতাঙ্গ দক্ষিনপন্থী?
 
 খুব পরিচিত শোনাচ্ছে ?  তাই না? আজকে পশ্চিম বঙ্গের বিজেপির হিন্দুত্ববাদি নেতাদের অধিকাংশই এস এফ আই এ শিকড়! 

 কেন এমন হয়? এমন যে হবে বলে গিয়েছিলেন নিৎসে। কেন হয় এমন? নিৎসের শিক্ষাকেই স্বরনে আনি-

  আসলে আজ দুশো বছর আগে, ব্যক্তি আইডেন্টি খুব স্ট্রং ছিল না। লোকে খ্রীষ্ঠান, হিন্দু, মুসলমান হয়ে জন্মাত। তাকে সমাজ চেপে ধরত - যে না তুমি হিন্দু মানে, সমস্ত হিন্দু লোকাচার পালন করবে। মুসলমান মানে  তাকে সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জাকাত, হজ-ইত্যাদি একটা ধার্মিক প্যাটার্নেই থাকতে হবে।  সমাজ তাকে চেপে ধরে একটা আইডেন্টি দিত। মোদ্দা কথা- সমাজ তাকে বলত এটাই তোমার জীবনের লক্ষ্য-লোকে সেটাই মানতে বাধ্য হত।

 ধণতন্ত্রের প্রসারের সাথে সাথে এই ধার্মিক আইডেন্টিটা আস্তে আস্তে ফিকে হচ্ছে, বা হয়ে গেছে।  কারন ধণতন্ত্রের দরকার "ক্রেতা"। ক্রেতা আর বিক্রেতার আইডেন্টি ধার্মিক হলে অনেক মুশকিল। ফলে এই মার্কেটের চাপেই নিউক্লিয়াল ফ্যামিলি তৈরী হল- সাথে মানুষের আর দায় রইল না তাকে ভাল হিন্দু বা ভাল মুসলমান হতে হবে। বা ভাল খ্রিষ্ঠান হতে হবে।

  মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশী  মুক্ত-  ইচ্ছা করলে, কমিনিউস্ট , এথিস্ট, সোশালিস্ট, হিউমানিস্ট, মাতাল , বোতল, ভোগবাদি যা খুশী হতে পারে।  মুশকিল হচ্ছে এই যে-  যখন কেউ কমিউস্ট হয়ে দেখল ----যেকারনে সে হিন্দু বা মুসলমান পরিচিতি থেক নতুন আর্শের টানে কমিনিউস্ট হতে গেছে, তার পুরোটাই ধাপ্পা, সে আবার নিজের রুটে সাংঘাতিক ভাবে ফিরে আসবে। এই রিবাউন্ড ফোর্স বেশ সাংঘাতিক। আগে হয়ত সে ছিল রুটিন হিন্দু। যখনই সে দেখে  " কমিউনিস্ট বা লিব্যারাল" ওই ধরনের  আইডিন্টি পেতে সে ব্যর্থ- কারন সেই আইডেন্টিটাই ধাপ্পাবাজি, বাপ ঠাকুদ্দার দেওয়া আইডিন্টিতে সে আরো প্রবল ভাবে ঢোকে ।

 এই আইডেন্টি ভ্যাকুয়াম এবং সেটা ভরাট করার ভাল কিছু না থাকায়, অনেকেই প্রথম যৌবনে বাম থেকে একটু বাদেই রামে ফেরে।  আগে এটা ছিল স্লো প্রসেস। এখন ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাতে দক্ষিন পন্থা অনেক বেশী শক্তিশালী। ফলে এই বাম টু ডান মেটামরফসিস -ভল্যুউম এবং ভেলোসিটি দুটোই দুর্বার।   বাংলাদেশের গুলশানের সেই সন্ত্রাসবাদি কিশোর ছেলেটিরো এই সমস্যাই ছিল। সে কিছুদিনের জন্য লিব্যারাল হতে গিয়ে দেখে যে কারনে, নতুন পরিচিতির টানে সে মুসলমান থেকে লিব্যারাল হতে গেছে, তার পুরোটাই তার কাছে ধাপ্পাবাজি । ফলে সে দ্রুত ইসলামে ফিরে মুসলমান আইডেন্টিটিটাই আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে।

 এর মূল কারন অবশ্যই দর্শনে দুর্বলতা। এদের সবাইকে বুঝতে হবে জীবন মানেই দুঃখ সমস্যা কঠিন সময় থাকবেই।  জীবনকে উপভোগ করা মানে এই কঠিন সময়, সমস্যাকে নিয়েই করতে হবে।  সমস্যা আছে বলেই বেঁচে থেকে সেই সমস্যার সমাধান করার ইচ্ছাটা থাকে! চ্যালেঞ্জ সামনে না থাকলে অনেকেই বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলে।

সমস্যা আছে বলে তেড়ে গিয়ে নিহিলিস্ট সুইসাইড বোম্বার হওয়া- এর মানে "সমস্যা"টা জীবনের অবিচ্ছেদ্দ পার্ট হিসাবে এরা ভাবতে পারে না। তখনই বন্দুক হাতে সন্ত্রাসবাদির জন্ম হয়।