সকালে উঠেই দেখি ফেসবুক ফিড ফেস্টুনে ছয়লাপ -প্রাথমিকে পাশফেল ফিরিয়া আনিতে হইবে! নাহইলে ধর্মঘট, সহ আরো অনেক কিছুর ঘনঘটা!
আচ্ছা পশ্চিম বঙ্গের অভিভাবকরা কি ট্রায়াসিক যুগের ডাইনোসর?
ছাত্রছাত্রীরা শিখছে কি না, তার মুল্যায়ন সবসময় দরকার। কিন্ত পাশফেল নিয়ে মাথাব্যথা কেন?
আমাদের সময় প্রাথমিকে পাশফেল ছিল এবং কোন সন্দেহ নেই পাশফেল প্রাথমিকে রাখা শুধু অবৈজ্ঞানিকই না-শিশু মনের জন্য অত্যন্ত খারাপ। আমি দেখতাম ফেল করে মূলত খুব প্রান্তিক ফ্যামিলি থেকে শিশুরা-যাদের প্রথম প্রজন্ম স্কুলে আসছে। দুই একবার ফেল করার পরে, তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হত, তোর দ্বারা কিছু হবে না- তোর বাবা মুনিশ, তুই স্কুলে সময় নষ্ট না করে মুনিশ খাটতে যা!! কোথায় এই প্রথম প্রজন্মের ছেলেমেয়েগুলোকে উৎসাহ দেওয়া দরকার যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে, তার বদলে প্রথমেই তাদের বলে দেওয়া হচ্ছে পড়াশোনা তোদের জন্য না! এই সব কান্ডজ্ঞান আউলা অভিভাবক দেখে গুরুদেবের কথাই প্রথমে মনে আসে -
যারে তুমি নিচে ফেল সে তোমারে বাধিবে ষে নিচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে ।
অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান ।
আমেরিকা সহ সব উন্নত দেশই পাশফেল বহুদিন তুলে দিয়েছে। এখানে কোন ছেলে মেয়ে অঙ্কে পিছিয়ে থাকলে, তাদেরকে আলাদা ক্লাস দেওয়া হয়-যাতে মেক আপ করতে পারে। আবার কেউ অঙ্কে এগিয়ে থাকলে, তাদের গিফটেড এবং ট্যালেন্টেড বলে আলাদা ক্লাস দেওয়া হয়।
যাইহোক ধরেই নিচ্ছি অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় চৌচির। তারা কি এটা ভেবেছেন, ভবিষ্যতে অটোমেশনের যুগে পুঁথিবিদ্যা শিক্ষার জন্য কোন চাকরি নেই? ভবিষ্যতে দরকার সৃজনশীল মস্তিস্ক এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। স্কুলে এর কোন শিক্ষাটা এখন দেওয়া হয়?
সৃজনশীলতা নিয়ে আগে লিখেছি, আজ লিখছি নেতৃত্ব প্রসঙ্গে।
নেতা ত আকাশ থেকে পড়ে না- জিনেও থাকে না। অন্যান্য আরো অনেক স্কিলের মতন, নেতৃত্বও ছোটবেলা থেকেই একটা " সামাজিক স্কিল"- যা পরিচর্চার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
তো বাচ্চারা নেতৃত্বের শিক্ষাটা পাবে কি করে?
উত্তর সোজা। হয় খেলার মাঠে, নইলে নাটকের ঠেকে। আমরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছি কত! ক্রিকেটের একজন ক্যাপ্টেনকে যেভাবে ব্যাটিং অর্ডার , বোলিং , ফিল্ডিং চেঞ্চ করতে হয়- প্লেয়ারদের গোঁসা ভঞ্জন করতে হয়- কর্পরেটে একজন ম্যানেজার ও ঠিক সেই ভাবে, তার রিসোর্স প্ল্যানিং করে। রিসোর্স ম্যানেজ করে! নো স্যার, এম বি এ করে ম্যানেজমেন্ট শেখা যায় না-ছোটবেলা থেকে যাদের মাথায় প্ল্যানিং, স্ট্রাটেজি ইত্যাদির চর্চা নেই -হঠাৎ করে এম বি এতে দুটো পাওয়ার পয়েন্ট শিখে কেউ ম্যানেজার হয়ে উঠবে-এ আশা শুধুই ধোঁয়াশা!
কংক্রিটের জঙ্গলে বড় হওয়া, সাত আটটা করে টিউশনি করা আজকের ছেলেমেয়েরা মাঠ কি সেটাই জানে না। খেলা অনেক দূরের কথা। এরা কি করে ভবিষ্যতে কাজে নেতৃত্ব দেবে?
শুধু তাই না, নেতাকে অভিনেতাও হতে হয়। টীমকে ইন্সপায়ার করে লিডার। তার জন্য অভিনয়ের প্রাথমিক স্কিলটাও দরকার। আমারদের সময়ে ছোটবেলায় কত নাটকের চর্চা ছিল পাড়ায় পাড়ায়। এখন শুধু টিউশুনি। বাচ্চারা তাহলে কি করে শিখবে কমিউনিকেশন স্কিল?
শুধু তাই না। সত্যিকথা বলতে কি কংক্রিটের জঙ্গলে বড় হওয়া অধিকাংশ ছেলেমেয়েরাই মানসিক অবসাদ এবং চাপের শিকার। কারন খেলাধূলা করে না-ফলে শরীর এবং মন দুটোই দুর্বল। এরা ত পেশাদারি জগতে কাজে চাপ সামলাতেই পারবে না। সাংসারিক কলহের মোকাবিলা অনেক দূরের রহস্য
বরং বাংলায় গ্রামের দিকে ছেলেমেয়েরা এখনো অনেকটা ফ্রি টাইম পায়। খেলা ধূলা করে-পুকুরে সাঁতার কাটে। তাদের দ্বারা যদিও কিছু হবে, কংক্রীটের জঙ্গলে বড় হওয়া এই সব কীটপতঙ্গের কারখানার প্রোডাক্টদের দ্বারা কিস্যু হবে না।
বাস্তবে শিশু শিক্ষার বদলে শিশুদের পঙ্গুত্বের সাধনায় মগ্ন অভিভাবক সমাজ। সর্বনাশের সব থেকে বড় কান্ডারী তারাই।
No comments:
Post a Comment