( আমি আগের লেখা গুলোতে দেখিয়েছি কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তির গতি আসাম্যের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে। আজকে লিখছি আরেকটা যুগান্তকারী প্রযুক্তি- ব্লকচেন নিয়ে-যা এই মানব অসাম্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং টানেলের শেষে কিছু আলো এখনো অবশিষ্ট আছে )
(১)
ধনের ধর্মই অসাম্য। প্রযুক্তি যেহেতু বর্তমানে ধনের সৃষ্টিকর্ত্তা, খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নত প্রযুক্তির আগমনের সাথে সাথে ধনী দরিদ্রের পার্থক্যও ক্রমবর্ধমান। বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতার সেটাই মূলকারন। ১% লোকের হাতে বিশ্বের ৫৬% সম্পত্তি।
ইসলামিক বা মাওবাদি সন্ত্রাসবাদও উপোরক্ত ন্যারেটিভের বাইরে নেই। ইসলাম সহ প্রায় সব ধর্মের উত্থান সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে। বর্তমান রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারন মানুষ সর্বত্র এতই অসন্তুষ্ট-সে বাস্তবতার থেকে রূপকথার কল্পরাজ্যে বাস করতে চাইছে! কখনো ইসলামি খিলাফত, কখনো বিংশ শতাব্দির লুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ান-কখনো বা বৈদিক সমাজের ফেরিয়াওয়ালাদের কথায় সে আজ আকৃষ্ট! যুবসমাজের মধ্যে অসাম্য এবং তজ্জনিত রাজনৈতিক হতাশাই জন্ম দিচ্ছে চরমপন্থী রাজনীতির । সন্ত্রাসবাদি বোমার আঘাতে আপনার বা আমার ভবলীলা ফুটে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আমরা বারুদের ওপর বসে-শুধু অন্ধ হয়ে কালবৈশাখীর ঝড়ের আগমন বার্তাকে উপেক্ষা করছি মূর্খের মতন।
আমি বহুদিন থেকে দেখেছি, নিধার্মিক লোকেরা একটা প্যারাডক্সের উত্তর দিতে ব্যর্থ। সেটা এই যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে দ্রুত। সুতরাং আরো দ্রুত এবং ব্যপকভাবে লোকেদের বোঝা উচিত ধর্ম এবং তাদের অবতাররা রূপকথার চরিত্র। আমেরিকা এবং ইউরোপে এমনটা হলেও-বাকী বিশ্বে ফল উলটো। লোকজনের ধর্মচর্চা বেড়েই চলেছে। এই প্যারাডক্সের সমাধান কি? আমার মনে হয় এর মূল কারন - জীবনে নিরাপত্তার অভাব! আর এটা বেড়েই চলেছে। হটাৎ দেখি চারিদিকে বাবা লোকনাথের রমরমা।
কারন? এই লোকনাথ বাবা একদম বুলস আইতে হিট করেছেন-নিরাপত্তা, নিরাপত্তা, নিরাপত্তা। মানুষ যখন বাস্তবে রাজনৈতিক সিস্টেমের কাছে নিরাপদ আশ্রয় পেতে ব্যার্থ-অগত্যা ভরসা সেই অলীক ধর্মীয় আশা-সরকারের পুলিশ না বাঁচালেও বাবা লোকনাথ বাঁচাইবেন!
ভাবছেন ব্লকচেন প্রযুক্তির আলোচনায়, কেন বাবা লোকনাথকে নিয়ে টানছি?
ব্লক চেইন প্রযুক্তির কার্যকারিতা বুঝতে প্রথমে জীবনে নিরাপত্তার ভূমিকা নিয়ে একটা গ্রাউন্ড রিয়ালাইজেশন দরকার- "নিরাপত্তা" এবং "বিশ্বাস"-এই দুটি আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি সবকিছুর ভিত্তিভূমি।
রাষ্ট্রের উদ্ভব, রাজার উদ্ভব-সব কিছুর পেছনে বাণিজ্যের নিরাপত্তা। পৃথিবীর প্রথম রাষ্ট্র এবং রাজার জন্ম মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। তামার খনি থেকে তামার কারিগরদের কাছে কাঁচামাল আসত ২০০ মাইলের পাহাড়ি রাস্তা ধরে। তার নিরাপত্তা দিতে প্রথম রাষ্ট্রের সূচনা হয় পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার বছর আগে।
উলটো দিক দিয়ে ভাবুন। ধরুন পৃথিবীর সব লোক সৎ। আপনি যার সাথে যা চুক্তি করছেন, ঠকে যাওয়ার কোন ভয় নেই! চুরি ডাকাতি রাহাজানির ভয় নেই। সেই পৃথিবীতে কি গর্ভমেন্টের দরকার হত ? দরকার হত ব্যঙ্কের? পুলিশ বা মিলিটারির? উকিল আদালতের? ভারত পাকিস্তানের? ধর্মের?
এই ব্যপারটা বোঝা দরকার। আমাদের জীবনে নিরাপত্তার অভাব-কারন মানুষ সম্পূর্ন ভাবে সৎ না। ফলে সরকার, ব্যঙ্ক, আদালত -ইত্যাদি থার্ড পার্টি বা ইন্সটিটিউশনাল মিডলম্যান ( সংগঠিত দালাল) দরকার । সরকার এক অর্থে বৃহত্তম দালাল-যে একটা বিরাট ট্যাক্স নেওয়ার বিনিময়ে আইন, ইনফ্রাস্টাকচারের নিরাপত্তা দেয়। বাবা লোকনাথ এবং সরকারের টিকি -একজায়গায় বাঁধা।
নিরাপত্তার সন্ধানে উদ্ভ্রান্ত মানব।
(২)
এবার ধরুন আমদের ট্রান্সজাকশনগুলো যখন ডিজিট্যাল হচ্ছে-তখন এমন কিছু করা সম্ভব যে থার্ড পার্টি-ওই সে সরকার বা পেটিএমকে হঠিয়ে আপনার এবং আমার মধ্যে যা ডিল হচ্ছে তাতে দালাল থাকবে না? আমি আপনাকে যখন পেটিএম দিয়ে ১০০০ টাকা পে করছি-সেখানেও কিন্ত থার্ড পার্টি দালাল আছে। সে হচ্ছে পেটিএম। প্রতিটা ট্রান্সাকশনে একটা টাকা খাচ্ছে। সে কমিশন খাক। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে এই যে আপনার আমার মধ্যে ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সজাকশনের জন্য একটি থার্ড পার্টি লাগছে-এর মানে গর্ভমেন্ট ও ইনভল্ভড।
অথচ দেখুন ডিমনেটাইজেশনের যুগে গ্রামে আদিম বিনিময় অর্থনীতি ফিরে এসেছিল । অনেক গ্রামেই টাকার অভাবে চালের বদলে তেল বিনিময় হয়েছে। সেই বিনিময়ে কিন্ত কোন "থার্ড পার্টি" সরকার বাহাদুর নেই। এই বিনিময় অর্থনীতি বদলে যখন টাকা দিয়ে আপনারা দুজন জিনিস কিনছেন তখন কিন্ত সরকার বাহাদুর হাজির! কারন টাকা ছাপায় সরকার বাহাদুর! আপনারা দুজনেই বিশ্বাস করছেন "টাকার ভ্যালুকে"-টাকার নিরাপত্তাকে। কারন টাকার মালিক সরকার!
সুতরাং সরকার, ব্যাঙ্ক, পেটিএম, আদালত ইত্যাদি থার্ড পার্টি বিলুপ্ত করতে প্রথমেই যে প্রশ্নটা করা দরকার-এমন কিছু প্রযুক্তি সম্ভব-যা শুধু মাত্র নিজেদের মধ্যে বিনিময় অথচ--১০০% নিরাপদ?
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় পৃথিবীর সব বড় বড় ব্যাঙ্কগুলিও প্রায় ফেইল করতে বসেছিল। অর্থাৎ থার্ড পার্টির নিরাপত্তাও খুব কাজে আসছিল না। থার্ড পার্টিকেও যখন বিশ্বাস করা কঠিন-এমন অবস্থায় জাপানের এক কম্পুউটার বিজ্ঞানী সাকাসি নাকামোতো একটি পেপারে দেখালেন-ডিজিটাল কারেন্সি সম্ভব "ব্লক চেইন" বলে একধরনের ক্রিপ্টগ্রাফিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। ২০০৯ সালে কিছু সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়াররা তৈরী করে ফেললেন পৃথিবীর প্রথম ক্রিপ্টোগ্রাফিক কারেন্সি বিটকয়েন। যা কোন সরকারের না। দেশের বাউন্ডারী মানে না। এর ভ্যালুয়েশন যারা ব্যবহার করছে এই কারেন্সি-তাদের কাছেই।
বিটকয়েনের থেকেও গুরুত্বপূর্ন এর প্রযুক্তি ব্লকচেইন। যা শুধু কারেন্সি না-আইডেন্টি, রিয়াল এস্টেট রেজিস্ট্রেশন, গান, পেটেন্ট, সিনেমার কপিরাইট-মোদ্দা কথা "ওনারশিপ" বা মালিকানা বলতে যা বোঝায়, তাতে কাজে লাগানো যায়।
আমি ব্লক চেইন কিভাবে কাজ করে সেই প্রযুক্তিগত জটিলতায় ঢুকলাম না, শুধু এর স্যোশাল ইম্প্যাক্ট নিয়েই লিখছি।
প্রশ্ন হচ্ছে এতে নতুন কি? আগে রাষ্ট্র নিশ্চিত করত ধনী লোকেদের মালিকানা-এখন তা নিশ্চিত হচ্ছে ব্লক-চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে! এতে সাম্যের গন্ধ লাগালেই ত হল না?
এই খানে আরেকটু গভীরে ভাবতে হবে। আমি তত্ত্বে না গিয়ে বাস্তবের একটা উদাহরন দিই। আমি যে শ্রম দিই-তার মালিক এবং বিক্রেতা যদি আমি হই, তাহলেই ধনী দরিদ্রের পার্থক্যের অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুচে যাবে। যেমন ধরুন যে গায়ক। হেমন্ত, জর্জবিশ্বাসের যুগে এরা একেকটা এলবামের জন্য তখনকার দিনেও দশ বিশ হাজার টাকা পেতেন। রেকর্ড কোম্পানী রয়াল্টি বাবদ দিত। বর্তমানে কোন রেকর্ড কোম্পানী তাদের কত দিত? এক টাকাও না। কারন গান বেড়োলেই পাইরেটেড হয়ে ইউটিউবে চলে আসবে। ব্লকচেইন সিস্টেমে গান রিলিজ করলে এটি হবে না-গান বেচা থেকে গানটি যাতে কেউ কপি করে ইউটিউবে না তুলে দিতে পারে, তার সব সুরক্ষা ব্লক চেইনে হাজির।
এতে লাভ সেই গায়কের ( যে আসলেই নিজেই নিজের প্রডিউসার)। সে নিজেই নিজের প্রডাকশন কোম্পানী চালাতে সক্ষম-কারন বিক্রি, থেকে বেচার নিরাপত্তা-সবটাই ব্লক চেইনে সে পাবে। এই ব্যপারটা যে কোম্পানীর একজন সাধারন কর্মী-তার জন্যেও সম্ভব। এখন একজন সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার মাইনে পাচ্ছে। ব্লক চেইনের যুগে যে যতটুকু সফটোয়ার লিখবে তা এক বা একাধিক কোম্পানিকে বিক্রি করতে সক্ষম হবে ব্লক চেইন সিস্টেমে-কেউ ঠকাতে পারবে না।
তবে হ্যা-মধ্যে খানে যে ব্যপারটা অব্যক্ত থাকল-তা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এই সিস্টেমে যারা দক্ষ, উচ্চশিক্ষিত-তারা সবাই নিজেদের ব্যবসা খুলে ফেলবে। কিন্ত বাকিদের কি হবে? এই জন্যে আমি বারবার করে বলছি নিজের ছেলে মেয়েদের টিউটরের কাছে না পাঠিয়ে মোবাইল এপ, আর্ট ডিজাইন, কোডিং, কবিতা, গান ইত্যাদি শিখতে পাঠান।
কমিনিউস্ট বিপ্লব নামক গণহত্যা, রক্তপাত ছাড়াই, একজন শ্রমিক তার শ্রমের মালিক হবে। ব্লক চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে তা ভাল ভাবেই সম্ভব। সেই দিন ও সমাগত।
(১)
ধনের ধর্মই অসাম্য। প্রযুক্তি যেহেতু বর্তমানে ধনের সৃষ্টিকর্ত্তা, খুব স্বাভাবিকভাবেই উন্নত প্রযুক্তির আগমনের সাথে সাথে ধনী দরিদ্রের পার্থক্যও ক্রমবর্ধমান। বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতার সেটাই মূলকারন। ১% লোকের হাতে বিশ্বের ৫৬% সম্পত্তি।
ইসলামিক বা মাওবাদি সন্ত্রাসবাদও উপোরক্ত ন্যারেটিভের বাইরে নেই। ইসলাম সহ প্রায় সব ধর্মের উত্থান সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে। বর্তমান রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারন মানুষ সর্বত্র এতই অসন্তুষ্ট-সে বাস্তবতার থেকে রূপকথার কল্পরাজ্যে বাস করতে চাইছে! কখনো ইসলামি খিলাফত, কখনো বিংশ শতাব্দির লুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ান-কখনো বা বৈদিক সমাজের ফেরিয়াওয়ালাদের কথায় সে আজ আকৃষ্ট! যুবসমাজের মধ্যে অসাম্য এবং তজ্জনিত রাজনৈতিক হতাশাই জন্ম দিচ্ছে চরমপন্থী রাজনীতির । সন্ত্রাসবাদি বোমার আঘাতে আপনার বা আমার ভবলীলা ফুটে যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আমরা বারুদের ওপর বসে-শুধু অন্ধ হয়ে কালবৈশাখীর ঝড়ের আগমন বার্তাকে উপেক্ষা করছি মূর্খের মতন।
আমি বহুদিন থেকে দেখেছি, নিধার্মিক লোকেরা একটা প্যারাডক্সের উত্তর দিতে ব্যর্থ। সেটা এই যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে দ্রুত। সুতরাং আরো দ্রুত এবং ব্যপকভাবে লোকেদের বোঝা উচিত ধর্ম এবং তাদের অবতাররা রূপকথার চরিত্র। আমেরিকা এবং ইউরোপে এমনটা হলেও-বাকী বিশ্বে ফল উলটো। লোকজনের ধর্মচর্চা বেড়েই চলেছে। এই প্যারাডক্সের সমাধান কি? আমার মনে হয় এর মূল কারন - জীবনে নিরাপত্তার অভাব! আর এটা বেড়েই চলেছে। হটাৎ দেখি চারিদিকে বাবা লোকনাথের রমরমা।
কারন? এই লোকনাথ বাবা একদম বুলস আইতে হিট করেছেন-নিরাপত্তা, নিরাপত্তা, নিরাপত্তা। মানুষ যখন বাস্তবে রাজনৈতিক সিস্টেমের কাছে নিরাপদ আশ্রয় পেতে ব্যার্থ-অগত্যা ভরসা সেই অলীক ধর্মীয় আশা-সরকারের পুলিশ না বাঁচালেও বাবা লোকনাথ বাঁচাইবেন!
ভাবছেন ব্লকচেন প্রযুক্তির আলোচনায়, কেন বাবা লোকনাথকে নিয়ে টানছি?
ব্লক চেইন প্রযুক্তির কার্যকারিতা বুঝতে প্রথমে জীবনে নিরাপত্তার ভূমিকা নিয়ে একটা গ্রাউন্ড রিয়ালাইজেশন দরকার- "নিরাপত্তা" এবং "বিশ্বাস"-এই দুটি আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি সবকিছুর ভিত্তিভূমি।
রাষ্ট্রের উদ্ভব, রাজার উদ্ভব-সব কিছুর পেছনে বাণিজ্যের নিরাপত্তা। পৃথিবীর প্রথম রাষ্ট্র এবং রাজার জন্ম মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। তামার খনি থেকে তামার কারিগরদের কাছে কাঁচামাল আসত ২০০ মাইলের পাহাড়ি রাস্তা ধরে। তার নিরাপত্তা দিতে প্রথম রাষ্ট্রের সূচনা হয় পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার বছর আগে।
উলটো দিক দিয়ে ভাবুন। ধরুন পৃথিবীর সব লোক সৎ। আপনি যার সাথে যা চুক্তি করছেন, ঠকে যাওয়ার কোন ভয় নেই! চুরি ডাকাতি রাহাজানির ভয় নেই। সেই পৃথিবীতে কি গর্ভমেন্টের দরকার হত ? দরকার হত ব্যঙ্কের? পুলিশ বা মিলিটারির? উকিল আদালতের? ভারত পাকিস্তানের? ধর্মের?
এই ব্যপারটা বোঝা দরকার। আমাদের জীবনে নিরাপত্তার অভাব-কারন মানুষ সম্পূর্ন ভাবে সৎ না। ফলে সরকার, ব্যঙ্ক, আদালত -ইত্যাদি থার্ড পার্টি বা ইন্সটিটিউশনাল মিডলম্যান ( সংগঠিত দালাল) দরকার । সরকার এক অর্থে বৃহত্তম দালাল-যে একটা বিরাট ট্যাক্স নেওয়ার বিনিময়ে আইন, ইনফ্রাস্টাকচারের নিরাপত্তা দেয়। বাবা লোকনাথ এবং সরকারের টিকি -একজায়গায় বাঁধা।
নিরাপত্তার সন্ধানে উদ্ভ্রান্ত মানব।
(২)
এবার ধরুন আমদের ট্রান্সজাকশনগুলো যখন ডিজিট্যাল হচ্ছে-তখন এমন কিছু করা সম্ভব যে থার্ড পার্টি-ওই সে সরকার বা পেটিএমকে হঠিয়ে আপনার এবং আমার মধ্যে যা ডিল হচ্ছে তাতে দালাল থাকবে না? আমি আপনাকে যখন পেটিএম দিয়ে ১০০০ টাকা পে করছি-সেখানেও কিন্ত থার্ড পার্টি দালাল আছে। সে হচ্ছে পেটিএম। প্রতিটা ট্রান্সাকশনে একটা টাকা খাচ্ছে। সে কমিশন খাক। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে এই যে আপনার আমার মধ্যে ফাইন্যান্সিয়াল ট্রান্সজাকশনের জন্য একটি থার্ড পার্টি লাগছে-এর মানে গর্ভমেন্ট ও ইনভল্ভড।
অথচ দেখুন ডিমনেটাইজেশনের যুগে গ্রামে আদিম বিনিময় অর্থনীতি ফিরে এসেছিল । অনেক গ্রামেই টাকার অভাবে চালের বদলে তেল বিনিময় হয়েছে। সেই বিনিময়ে কিন্ত কোন "থার্ড পার্টি" সরকার বাহাদুর নেই। এই বিনিময় অর্থনীতি বদলে যখন টাকা দিয়ে আপনারা দুজন জিনিস কিনছেন তখন কিন্ত সরকার বাহাদুর হাজির! কারন টাকা ছাপায় সরকার বাহাদুর! আপনারা দুজনেই বিশ্বাস করছেন "টাকার ভ্যালুকে"-টাকার নিরাপত্তাকে। কারন টাকার মালিক সরকার!
সুতরাং সরকার, ব্যাঙ্ক, পেটিএম, আদালত ইত্যাদি থার্ড পার্টি বিলুপ্ত করতে প্রথমেই যে প্রশ্নটা করা দরকার-এমন কিছু প্রযুক্তি সম্ভব-যা শুধু মাত্র নিজেদের মধ্যে বিনিময় অথচ--১০০% নিরাপদ?
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় পৃথিবীর সব বড় বড় ব্যাঙ্কগুলিও প্রায় ফেইল করতে বসেছিল। অর্থাৎ থার্ড পার্টির নিরাপত্তাও খুব কাজে আসছিল না। থার্ড পার্টিকেও যখন বিশ্বাস করা কঠিন-এমন অবস্থায় জাপানের এক কম্পুউটার বিজ্ঞানী সাকাসি নাকামোতো একটি পেপারে দেখালেন-ডিজিটাল কারেন্সি সম্ভব "ব্লক চেইন" বলে একধরনের ক্রিপ্টগ্রাফিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। ২০০৯ সালে কিছু সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়াররা তৈরী করে ফেললেন পৃথিবীর প্রথম ক্রিপ্টোগ্রাফিক কারেন্সি বিটকয়েন। যা কোন সরকারের না। দেশের বাউন্ডারী মানে না। এর ভ্যালুয়েশন যারা ব্যবহার করছে এই কারেন্সি-তাদের কাছেই।
বিটকয়েনের থেকেও গুরুত্বপূর্ন এর প্রযুক্তি ব্লকচেইন। যা শুধু কারেন্সি না-আইডেন্টি, রিয়াল এস্টেট রেজিস্ট্রেশন, গান, পেটেন্ট, সিনেমার কপিরাইট-মোদ্দা কথা "ওনারশিপ" বা মালিকানা বলতে যা বোঝায়, তাতে কাজে লাগানো যায়।
আমি ব্লক চেইন কিভাবে কাজ করে সেই প্রযুক্তিগত জটিলতায় ঢুকলাম না, শুধু এর স্যোশাল ইম্প্যাক্ট নিয়েই লিখছি।
প্রশ্ন হচ্ছে এতে নতুন কি? আগে রাষ্ট্র নিশ্চিত করত ধনী লোকেদের মালিকানা-এখন তা নিশ্চিত হচ্ছে ব্লক-চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে! এতে সাম্যের গন্ধ লাগালেই ত হল না?
এই খানে আরেকটু গভীরে ভাবতে হবে। আমি তত্ত্বে না গিয়ে বাস্তবের একটা উদাহরন দিই। আমি যে শ্রম দিই-তার মালিক এবং বিক্রেতা যদি আমি হই, তাহলেই ধনী দরিদ্রের পার্থক্যের অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মেই ঘুচে যাবে। যেমন ধরুন যে গায়ক। হেমন্ত, জর্জবিশ্বাসের যুগে এরা একেকটা এলবামের জন্য তখনকার দিনেও দশ বিশ হাজার টাকা পেতেন। রেকর্ড কোম্পানী রয়াল্টি বাবদ দিত। বর্তমানে কোন রেকর্ড কোম্পানী তাদের কত দিত? এক টাকাও না। কারন গান বেড়োলেই পাইরেটেড হয়ে ইউটিউবে চলে আসবে। ব্লকচেইন সিস্টেমে গান রিলিজ করলে এটি হবে না-গান বেচা থেকে গানটি যাতে কেউ কপি করে ইউটিউবে না তুলে দিতে পারে, তার সব সুরক্ষা ব্লক চেইনে হাজির।
এতে লাভ সেই গায়কের ( যে আসলেই নিজেই নিজের প্রডিউসার)। সে নিজেই নিজের প্রডাকশন কোম্পানী চালাতে সক্ষম-কারন বিক্রি, থেকে বেচার নিরাপত্তা-সবটাই ব্লক চেইনে সে পাবে। এই ব্যপারটা যে কোম্পানীর একজন সাধারন কর্মী-তার জন্যেও সম্ভব। এখন একজন সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার মাইনে পাচ্ছে। ব্লক চেইনের যুগে যে যতটুকু সফটোয়ার লিখবে তা এক বা একাধিক কোম্পানিকে বিক্রি করতে সক্ষম হবে ব্লক চেইন সিস্টেমে-কেউ ঠকাতে পারবে না।
তবে হ্যা-মধ্যে খানে যে ব্যপারটা অব্যক্ত থাকল-তা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এই সিস্টেমে যারা দক্ষ, উচ্চশিক্ষিত-তারা সবাই নিজেদের ব্যবসা খুলে ফেলবে। কিন্ত বাকিদের কি হবে? এই জন্যে আমি বারবার করে বলছি নিজের ছেলে মেয়েদের টিউটরের কাছে না পাঠিয়ে মোবাইল এপ, আর্ট ডিজাইন, কোডিং, কবিতা, গান ইত্যাদি শিখতে পাঠান।
কমিনিউস্ট বিপ্লব নামক গণহত্যা, রক্তপাত ছাড়াই, একজন শ্রমিক তার শ্রমের মালিক হবে। ব্লক চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে তা ভাল ভাবেই সম্ভব। সেই দিন ও সমাগত।
No comments:
Post a Comment