যে জাতি যত পিছিয়ে, সে তত তার অতীতের গৌরবের মন্থনে মগ্ন। বাঙালী যেভাবে নেতাজি, বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ , গান্ধীজি-ইত্যাদি নিয়ে মারামারি, হানাহানি করে- তার থেকে একটা সত্যই প্রমানিত। এরা সামনে দিকে তাকাতে শেখেনি, ফলে আজকে সব থেকে পিছিয়ে পড়া একটা জাতিগোষ্ঠিতে পরিনত।
আমেরিকাতে কখনোই দেখিনি, জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, এন্ড্রি জ্যাকসন বা আব্রাহাম লিঙ্কনদের নিয়ে তাদের জনগন " এত" চিন্তিত। থমাস জেফারসন, এন্ডি জ্যাকসনকে নিয়ে প্রচুর একাডেমিক বিতর্ক আছে-কিন্ত সাধারন জনসাধারনের শ্রদ্ধাবিলাস নেই।
অতীত খুব সাংঘাতিক জিনিস। আমাদের যখন ইতিহাস পড়ানো হত, কেউ বলে নি, কেউ শেখায় নি-ইতিহাস হচ্ছে উপন্যাস। এক থেকে পাঁচ পার্সেন্ট সত্য তাতে থাকলে থাকতে পারে-বাকী্টা সত্যমিশ্রিত উপন্যাস। এটা বুঝতে আমার অনেকদিন সময় লেগেছে। উইল ডুরান্টের "সভ্যতার ইতিহাস" বলে একটা এপিক গ্রন্থ আছে-তার মুখবন্ধে উনি পরিস্কার লিখেছিলেন-ইতিহাস হচ্ছে উপন্যাস। তবে পার্থক্য এবং সমস্যাএই যে উপন্যাসিককে শাসক শ্রেনীর মন যুগিয়ে লিখতে হয়। নিরেপেক্ষ ইতিহাস বলে কিছু হয় না। মোদ্দা কথা ইতিহাস হচ্ছে সেই রূপকথা যা স্কুলে বাচ্চাদের পড়িয়ে একটা জাতির ব্রেইন ওয়াশ করা হয় ছোটবেলা থেকে।
ফলত সব দেশের অতীতই কল্পনাআশ্রিত উপন্যাস-যার নির্মান হয়েছে শাসক শ্রেনীর সুবিধার্থে। অধিকাংশ হিন্দুরা বিশ্বাস করে বৈদিক যুগ ছিল স্বর্গরাজ্য। গুপ্ত রাজ বংশের সময় ভারতের স্বর্ণযুগ চলেছে! মুসলমানরাও বিশ্বাস করে হজরত মহম্মদের সময়ে যে শাসন ব্যবস্থা ছিল-সেটাই পার্ফেক্ট। কারন ইতিহাস ওইভাবেই লেখা হয়েছে। শুধু অদ্দুর কেন। নভেম্বর বিপ্লব বলে আরেকটি আষাঢ়ে গল্পকেও ইতিহাস বলে চালানো হয়েছে-দুনিয়া কাঁপানো দশদিন টাইপের গল্পের বই ইতিহাস হয়ে গেছে। সোভিয়েত বলতে যে স্বর্গরাজ্যের কথা ভেবে কত ছেলেমেয়ে কমিউনিজমের আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল বিপ্লবের আশায়-সেসব যে সবই গল্প-এটা সোভিয়েত ভাঙার পরে আমরা সবাই জেনেছি, আসলেই সেটাছিল এক নরকবাস!
এর কুফল দুটো। প্রতমত এই ধরনের রূপকথায় বিশ্বাস করে উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দল তৈরী হচ্ছে। যাদের থেকে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসবাদের জন্ম ।
দ্বিতীয়টা এই যে প্রযুক্তি মানুষের সামনে যে সুযোগ এনে দিচ্ছে সেটা এরা নিতে পারছে না। ভুল রাজনীতির পাঁকে নিজেদের আটকে ফেলেছে।
উদাহরন চান ? ভারতে গত দুই বছরে স্টার্টাপে বিনিয়োগ হয়েছে দুই বিলিয়ান ডলার ( বারো হাজার কোটি টাকা) । এই ম্যাপে কলকাতা নেই। যা হয়েছে সবটাই ব্যাঙ্গালোর, দিল্লী এবং পুনেতে। কোলকাতায় বাঙালীদের মধ্যে সেই চেতনাটাই এখন আসে নি-যে প্রযুক্তি এক বিপুল ব্যবসার সম্ভাবনা এনে দিয়েছে শিক্ষিত যুবক যুবকীদের মধ্যে। ব্যাঙ্গালোর বা পুনেতে এক বিপুল সংখক ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার কিছু না কিছু ন তুন ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন- প্রযুক্তির এই দান, লুফে নিয়ে অনেক মধ্যবিত্তের সন্তান সেখানে কোটি কোটি টাকার নতুন আই টি ব্যবসা শুরু করেছে। সেখানে কলকাতার ছেলেমেয়েদের এইসব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট নেই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। বাকীরা জুতোর সুখতলা খুইয়ে চাকরির সন্ধানে।
আবার এরাই নিজেদের বুদ্ধিচর্চা নিয়ে গর্ব করে।
ভৃত্যের বুদ্ধিচর্চায় কেউ গুরুত্ব দেয় না-এদের কে বোঝাবে?
অর্থনৈতিক উন্নতি এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না এলে-এই ধরনের বুদ্ধিচর্চার কোন দাম নেই।
No comments:
Post a Comment