Friday, June 2, 2017

অটোমেশন এবং চাকরিতে ছাঁটাই ঃ সত্যিই কি চিন্তার কোন কারন আছে?

(১)
অটোমেশন ১৯৬১ সাল থেকেই উন্নতবিশ্বে "লো ওয়েজ" চাকরি রিপ্লেস করে চলেছে। ইনফ্যাক্ট ১৯৯০ সালে আমেরিকাতে ফ্যাক্টরিতে যত লোক কাজ কর‍ত এখন তার ১০% ও নেই। অথচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটিপুট এই ত্রিশ বছরে বেড়েছে প্রায় আড়াইগুন।  তাহলে এই ৯০% লোক গেল কোথায়?  ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অটোমেশনের দৌলতে বহুদিন থেকেই আস্তে আস্তে এখন শিল্প শ্রমিক বলতে যা বোঝায়, সেই ওহেনরীর হাতুড়ি ধরা টাইপ-আজকে আর নেই আমেরিকাতে।  আমি পেশার প্রয়োজনেই  প্রচুর ফ্যাক্টরি ভিজিট করি আমেরিকাতে।  অনেক ফ্যাক্টরীই এত অটোমেটেটড সেখানে কোন শ্রমিকই থাকে না-সেখানে ভারতে সমমাপের ফ্যাক্টরীতে ফ্লোরে শ্রমিক গিজগিজ করছে!!

    অটোমেশনের জন্য চাকরি ছাঁটাইএর সাথে আমেরিকানরা অভ্যস্থ থাকলেও ভারতীয়দের অভিজ্ঞতা হচ্ছে সম্ভবত এই প্রথম। কারন এই বছর খুব সম্ভবত দুই লাখ সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছাঁটাই হবে ভারতের সেরা আইটি কোম্পানীগুলো থেকেই। আগামী পাঁচ বছরে সেই ট্রেইন্ড আরো দ্রুত বাড়বে। আমি অবাক হব না যদি শুনি ২০১৮ সালে ছাঁটাই এর সংখ্যা ২ লাখ থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ হয়েছে।  আগামী পাঁচ বছরে সম্ভবত ভারতের অর্ধেক সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরিই যাবে-অর্থাৎ কুড়ি লাখের মতন। তবে নতুনদের ভয় নেই।  তাদের জন্য নতুন চাকরিও তৈরী হবে!

এটা শুধু সফটোয়ার না-সব ক্ষেত্রেই আসবে। সরকারি চাকরি, শিক্ষকতা, উকিল, ডাক্তার, গবেষনা-ইনফ্যাক্ট সবকিছুই সফটোয়ার মানুষের থেকে অনেক ভাল পারবে।  সারা জীবনে আপনি কজন ভাল শিক্ষক দেখেছেন? সারা জীবন কটা ভাল ডাক্তার দেখেছেন? একটা ছোট তথ্য দিই। আমেরিকাতে শুধু ভুল চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর মারা যায় চার লাখ লোক। সেখানে আই বি এমের ওয়াটসন এখনই দেখাচ্ছে, তাদের ডায়াগোনিসের ভুল মানব ডাক্তাদের ১%!   ল ক্লার্কদের একটা বড় কাজ কনট্রাক্ট রিভিউ করা- এটা এখন প্রমানিত সফটোয়ার ওই কাজ অনেক ভাল পারে এবং আমেরিকার বড় বড় কোম্পানীগুলো এখন আর আগের মতন উকিল নিচ্ছে না।  সফটোয়ার দিয়েই রিভিউ করাচ্ছে। সরকারি চাকরি অটোমেট করা সব থেকে সহজ-তাতে দুর্নীতি অনেক কমে। কিন্ত রাজনৈতিক কারনে সেটা করা হয় না।

 আপনি হয়ত ভাবছেন তাহলে এই যে এত এত প্রোগ্রামিং করতে হবে, কম্পিউটার সায়েন্টিস্টদের চাকরি অন্তত থাকবে? সেগুড়ে বালি সেখানেও। গুগলের ডীপ ব্ল  বা আধুনিক ডিপ লার্নিং সিস্টেম নিজেই নিজের কোড লিখে নেবে!!



(২)
 মোদ্দা কথা আপনার পেশা যাইহোক না কেন, ৫০ বছরের মধ্যে "চাকরি" বস্তুটির অস্তিত্ব থাকবে না। আপনি যতই বকুন না কেন, যখন দেখবেন আপনার প্রতিবেশীর ছেলে একটি আধুনিক ই-লার্নিং সিস্টেমে অঙ্ক শিখে, অঙ্কে তুখোর হচ্ছে, আপনি টিউটরের কাছে না পাঠিয়ে, তার থেকেও কম খরচে, ছেলেকে ইলার্নিং সিস্টেমেই দেবেন। মার্কেটই ঠিক করে দেবে, "ভুলে ভর্তি মানুষের" চাকরি নেই!! যেমন আমেরিকাতে উকিলরা চাকরি পাচ্ছে না কর্পরেট-কারন আইবিএম ওয়াটসন অনেক কম খরচে তাদের কাজ করে দিচ্ছে-এবং তা নির্ভুল ও বটে।

তাহলে মানুষ কি করবে? চাকরি না করলে খাবে কি?

কোন সন্দেহ নেই আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেম বদলাবে। আলরেডি উন্নত দেশগুলিতে উনিভার্সাল বেসিক ইনকামের দাবী তীব্র হচ্ছে। অর্থাৎ রাষ্ট্র সবাইকে প্রতিমাসে একটা মাসোহারা দেবে যাতে সবাই খেতে পড়তে পারে।  থমাস পাইন বহুদিন আগে এমন হবে ভেবেছিলেন। গত ত্রিশ বছরে, এই নিয়ে সোশ্যাল সায়েন্সে অনেক গবেষনা এবং নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রেজাল্ট পজিটিভ।  তবে এটাকে কমিউনিজম ভাবার কোন কারন নেই-যদিও আল্টিমেটলি সুপার অটোমেটেড সোসাইটিতে কমিনিউজমের ধারনা গুলো এমনিতেই আসবে। কোন আন্দোলন লাগবে না। কারন এই মুহুর্তে ফ্রীডম্যানের মতন ক্যাপিটালিস্ট ইকনমিস্টরাই উনিভার্সাল সোশ্যাল ইনকামের কথা বলছেন।

 ব্যপারটা সিম্পল। মানুষকে চাকরি করতে হবে কেন?  চাকরি করা ত দাসত্ব! ড্রাজারি। মানুষ কবিতা লিখবে, গান বাঁধবে, ছবি আঁকবে, প্রেম করবে। এসব বাদ দিয়ে দাসত্ব করবে কেন মানুষ? চাকরি করা ত সিস্টেমের দ্বাসত্ব।  চাকরি করবে মেশিন-রোবট।  পৃথিবীর অধিকাংশ লোকই চাকরি করে পেটের দায়ে। সংসার চালানোর দায়ে।

 তবে আগামী পঞ্চাশ বছরে সবার চাকরি যাচ্ছে না। যারা অঙ্ক বিজ্ঞান ভাল করে শিখেছেন তারা আরো কিছুদিন টিকবেন-কারন পৃথিবীতে প্রচুর সমস্যা-সুতরাং গবেষনার কাজে এখনো অনেক অনেক লোক লাগবে।

 চাকরি টিকবে শুধু এন্টারটেইনারদের। কবি, গায়ক, নায়ক, খেলোয়াড়রা টিকে গেলেন। কারন মানুষের হাতে প্রচুর সময় থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে সিনেমা, খেলা গানের চর্চা আরো বাড়বে, কমবে না।  সাহিত্যর ব্যপারে সিউর না। কারন আস্তে আস্তে  সব কিছুই অডিওভিস্যুয়ার হয়ে যাচ্ছে। পাঠ ভিত্তিক ফিকশনের পাঠক থাকবে কি না সন্দেহ আছে-কিন্ত  কালজয়ী সাহিত্য ছাড়া, কালজয়ী সিনেমা হয় না। ফলে ভাল সিনেমার জন্য ভাল সাহিত্য টিকে যাবে হয়ত। অসম্ভব না। আজকাল নিউয়ার্ক বা লস এঞ্জেলেসের ভবঘুরে লেখক সঙ্ঘের প্রায় সবাই দেখি নিজের পান্ডুলিপিএর জন্য প্রযোজক খোঁজে-বেস্ট সেলার হতে চাইছে না কেউ। সবাই জানে টাকা সিনেমাটিক  এডোপশনেই।



 সুতরাং চাকরি চলে যাবে বলে আতঙ্কিত হওয়ার কারন নেই। বরং আনন্দ করুন। মানব দাসত্বের দিন শেষ হতে চলেছে।  এবার প্রান খুলে কবিতা লিখুন, গান শুনুন-খেলাধূলো করুন। মানবমুক্তির সেই সুদিন খুব শীঘ্রই আসিতেছে।



























1 comment:

Sarthak said...

বিপ্লবদা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিন্তু কবিতা লেখা শুরু করে দিয়েছে। আমি জানি না আপনি কেমন করে এত নিশ্চিন্ত হচ্ছেন যে AI আর্টিস্টদের কাজ খেয়ে ফেলতে পারবে না।
https://www.theguardian.com/technology/2016/may/17/googles-ai-write-poetry-stark-dramatic-vogons
AI অদূর ভবিষ্যতে কবিতা, গান, ছবি আঁকা, বা সিনেমা বানানো সবেতেই পটু হয়ে যেতে পারে। (হয়তোবা যে অঙ্ক শিখতে পারে সে সব পারে। ai যদি অঙ্ক শিখতে পারে তাহলে সে বৌদ্ধিক সবকিছুই পারে)। আমি নিশ্চিত ai এর বেপারে আপনি আমার চেয়ে অনেক ভালো জানেন। কিন্তু কেন জানি মনে মনে হচ্ছে আপনি একটা ডিভিশন করছেন আর্টস, সাইন্স, আর রিপিটেটিভ কাজের। আপনি মনে করেন সবার আগে যাবে রিপিটেটিভ ক্লারিকাল জবস, তারপর অঙ্ক, বিজ্ঞান ভিত্তিক কাজ। কিন্তু আর্টিস্ট-এর ভয় পাবার কিছু নেই। আমার মনে হয় এমন কোনো watertight ভেদ নেই এই সব কাজের মধ্যে। যা কিছু quantify করা যায় সবই vulnerable AI এর শক্তির কাছে।

আমি যা বলছি তা যদি ঠিক হয় তাহলে বোঝা যাচ্ছে কাজের কাজ মানুষের আর কিছু থাকবে না, বা দিনে দিনে কমে যাবে। অবশ্য মিছে-মিছে কাজ মানুষ করে যেতে পারে নিজেকে ভোলানোর জন্য যে সে অপদার্থ নয়।