Sunday, November 9, 2014

এমন কোন বাঙালী বুদ্ধিজীবি জন্মেছেন, যার রাজনৈতিক চিন্তা পাতে দেবার যোগ্য?

জিহাদিনী রাজিয়া বিবিকে বিপ্লবী আখ্যা দেওয়াতে বাঙালী দেখলাম সুমনের পেছনে লেগেছে। সুমনের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে সত্যিই কি কিছু পাওয়ার আছে?

সুমন কেন, আর এমন কোন বাঙালী বুদ্ধিজীবি জন্মেছেন, যার রাজনৈতিক চিন্তা পাতে দেবার যোগ্য?

বিদ্যাসাগর, চৈতন্যদেব, তাজুউদ্দিন এবং বিধান রায় ছাড়া আর কোন  বাঙালীকে মনে পড়ছে না যাদের মধ্যে সত্যিকারের কিছু পরিপক্ক রাজনৈতিক চিন্তা ছিল।

বিবেকানন্দ এবং নেতাজির চিন্তাধারা বেশ ফ্যাসিস্ট। দুজনেই জাপানী ফ্যাসিজমে মুগ্ধ ছিলেন। এদের রাজনৈতিক বক্তব্যকে কখনোই পরিণত বলে মনে হয় নি-অধিকাংশটাই জাতীয়তাবাদি আবেগ বা ন্যাশালিস্টিক স্যোশালিজম ছাড়া কিছু না । গভীর কোন রাজনৈতিক চিন্তার পথ ইনারা দেখান নি।

আর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ? মুক্তধারা এবং গোরাকে যদি তার অন্যতম মূল রাজনৈতিক থিসিস ধরি-তাহলে উহাদের মধ্যে সাহিত্য আছে-কিন্ত রাজনৈতিক চিন্তার গভীরতা নেই । মুক্তধারাতে তিনি আন্তর্জাতিক, আবার গোরাতে জাতীয়তাবাদের গোঁড়ামি।  বেসিক্যালি দশঘোঁটলা কবিত্ব। খেতে উত্তম, কিন্ত রাজনৈতিক প্রোটিন নাই।

শেখ মুজিবর রহমানের কথা ছেড়ে দিলাম। উনি দাদাগিরির সাথে রাষ্ট্রচালনাকে প্রায় গোলাতেন। বাকশালের সময়ে ওর কিছু বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছিল উনি স্টালিনকে ফলো করতে চাইছেন-কিন্ত সেটা আবার প্রকাশ্যে বলতেও পারছেন না । ইসলাম, রাশিয়া মিলিয়ে সাপের ব্যাঙ গেলার রাজনীতি-যা বাংলাদেশের ভিত্তিকেই দুর্বল করেছে।

জ্যোতিবসু, বুদ্ধদেব বা মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে কিছুই বলার নেই । এদের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই । সব মগ ডাল কাটা কালিদাস-আর এদের রাজনীতির সবটাই দিল্লীর বিরুদ্ধে বেদনাবিলাস!

 বরং সফল ছিলেন চৈতন্য। জাতিভেদ প্রথা তুলে বাঙালীর ইসলামীকরন আটকানোতে তিনি ১০০% সফল । হিন্দু ধর্মের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে তার প্রচারিত হিন্দু ধর্ম ( গৌড়িয় বৈষ্ণব-বা ইস্কন ) সব থেকে বেশী জনপ্রিয়। আমি ধর্ম মানি বা না মানি, তার রাজনৈতিক সাফল্যকে না মেনে উপায় নেই।

বিদ্যাসাগর সর্বকালের সেরা বাঙালী। হিন্দু জাতি, বাংলা ভাষা যেখানে সংস্কারে হাত লাগিয়েছেন-সফল। কারন তার সততা, কর্মনিষ্ঠতা ছিল প্রশ্নাতীত। উদ্দেশ্য সৎ, মানুষটা সৎ, যে সংস্কার কাজে হাত লাগিয়েছেন, সফলতা এসেছে।

তাজুউদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের ট্রাজিক চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে উনার সফল রাজনৈতিক চালনাতেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে  উনিই ছিলেন আসল নেতা-শেখ মুজিবর তখন জেলে। আমি মনে করি সেটা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে শাপে বর।
তাজউদ্দিন যেভাবে দক্ষহাতে মুজিবনগর সরকার চালিয়েছেন, শেখ সাহেব পারতেন না । শেখ সাহেবকে যদি পাকিস্তানিরা মেরে ফেলত, সেটা বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য এবং শেখ সাহেবের জন্যও ভাল হত। বাংলাদেশ একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক পেত যিনি শেখ সাহেবের তাবেদার হতে পারেন নি বলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে  প্রথমে উপেক্ষিত নায়ক, তারপরে শহিদ হলেন।  শেখ সাহেবও নিজের হাতের লোকেদের হাতে খুন হওয়ার অসন্মান থেকে বেঁচে শহীদ হতেন। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তাকে ইতিহাসের পাতায় ঘুরতে হত না ।

বিধান রায় সম্ভবত বাংলার একমাত্র সফল রাজনীতিবিদ। যিনি রাজনীতি বলতে উন্নয়নের রাজনীতি বুঝতেন -হলদিয়া, কল্যানী থেকে দুর্গাপূর-বাংলার সফল উন্নয়নের রাজনীতি তার তৈরী। যা পরবর্তীকালে বামেরা সম্পূর্ন ধ্বংস করে।

বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে রাজনৈতিক চিন্তার পরিপক্কতা আশা করা আর কেন্নোর সোজা পথে চলা-একই রকমের ভ্রান্ত প্রত্যাশা। সুস্থ চিন্তার রাজনীতিবিদ বাংলায় ইউনিকর্ন। 

No comments: