Monday, April 13, 2015

গাছপাঁঠা

প্রবাস জীবনে যেকটি খাদ্যাভ্যেস হারিয়েছি, তার মধ্যে সবার ওপরে থাকবে এঁচোড়। কচিঘন সবুজ এঁচোড় কষা, চিংড়ি এঁচোড়-আরো কত কি ! বলা হত গোঁশাইদের কাঁচা পাঁঠা। মুর্শিদাবাদে আমার ঠাকুর্দার ছিল এক ছোট কাঁঠাল বাগান । খান চল্লিশেক ছোট বড় কাঁঠাল গাছ ছিল তাতে।  এই মার্চ-এপ্রিল মাস আসতেই নিশ্চিন্দপুরের গ্রাম থেকে আমাদের করিমপুরের বাড়িতে নিয়মিত আসত এঁচোড় আর সজনের ডাঁটা। ইনফ্যাক্ট বাজারের এঁচোড় একটু পেকে যেত বলে বাজার থেকে কেনা এঁচোড় বাবার বা আমার কারোই পছন্দ হত না । একদম গাছ থেকে নামানো টাটকা কচি এঁচোড়ের স্বাদই আলাদা। এঁচোড়া রান্নাতেও স্পেশালিস্ট হাতের টাচ থাকা চায়- আমার জেঠিমা খুব ভাল এঁচোড় রান্না করতেন। এটাও বাঙালদের হাতেই জমত ভাল । এপ্রিল মে মাসের গরমে লাঞ্চে সজনে ডাঁটার চচ্চরি, এঁচোড়ের ডালনা , কাঁচা আমের ডাল-এগুলোর স্বাদ ভোলার নয়।

 আজ দেখলাম, আমেরিকাতে জাতে উঠেছে এঁচোড়। নিউয়ার্ক, লস এঞ্জেলেস, স্যান ফ্রান্সিসকো ইত্যাদি শহরের এলিট রেস্টুরেন্টগুলোতে এঁচোড় এখন ডেলিকেসি ভেগান ডিশ। এখনো চেখে দেখা হয় নি-তবে দেখব শীঘ্রই । এদেশে বাংলাদেশী স্টোরে একমাত্র এঁচোড় পাওয়া যায় ব্রাইন সল্যুশনের কোটোতে। সেটা এতটাই অখ্যাদ্য, ওটা খেলে এঁচোড় নিয়ে যে রোম্যান্টিসিজম আছে কেটে যাবে। এশিয়ান দোকানে মাঝে সাঝে এঁচোড় আসে-কিন্ত গাছ টাটকা না -কিছুটা পেকে যায়।  বাড়িতে কাঁঠাল গাছ লাগানোর অনেক জায়গা আছে-কিন্ত ট্রপিকাল ওয়েদার ছাড়া ওটি হবে না । আমেরিকাতে ফ্লোরিডা ছাড়া আর কোথাও কাঁঠাল বাগান করা সম্ভব না । ইনফ্যাক্ট ফ্লোরিডাতে এবার গ্রামের দিকে কাঁঠাল বাগান দেখলাম ও। 

একটা বাঙালী খাবার বিশ্বজয় করছে-এটাই খারাপ কি? 

No comments: