Sunday, April 12, 2015

হিলারী ফর প্রেসিডেন্ট

 হিলারী ক্লিনটন প্রেসিডেন্টিয়াল ক্যাম্পেইন শুরু করলেন। দুবছর আগে থেকেই জানা ছিল। তার ঘনিষ্ঠরা সংগঠিতও হচ্ছিলেন-মানে যাকে বলে বেস সলিডিফিকেশন ।  প্রস্তুতি  ভালোই এগিয়ে নিয়ে গিয়ে হিলারী সম্পূর্ন নতুন কায়দায় অভিযান শুরু করলেন। স্যোশাল মিডিয়াতে ভিডিও ছেড়ে। না কোন অনুষ্ঠান, মঞ্চ না -শ্রেফ একটা ভিডিও, টুইট। পরের একঘন্টায় সেই টুইট শেয়ার হল প্রায় তিন মিলিয়ান ( ত্রিশ লাখ)।

 আমেরিকাতে আমার রাজনৈতিক হাতেখড়ি ২০০৭ সালে হিলারীর প্রাইমারীতে। যদিও সেখানে হিলারী হেরেছিলেন, গ্রাসরুট লেভেলে কাজ করতে গিয়ে, আমেরিকান রাজনীতির বেশকিছু অপ্রীতিকর দিকের সম্মুখীন হই । প্রথমত হিলারী কোটেরীতে যারা কাছের লোক বলে পরিচিত, সেই অনাবাসী ভারতীয়রা বেশ হীরক খচিত! সন্ট চাটোয়াল, বিনোদ গুপ্ত, রমেশ শাহ-সব একশে বারকে এক খিলাড়ি-কত যে ফ্রড এবং রেগুলেশন ভায়োলেশন কেস এদের বিরুদ্ধে বলে শেষ করা যাবে না । হিলারী ক্যাম্পেইন ম্যানেজার যিনি ছিলেন, সেই টেরী ম্যাকলীফ-যিনি এখন ভার্জিনিয়ার গর্ভনর মোটেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা নন -অনেক ডুবিয়াস ডিলের সাথে জড়িত। শুধু শ্লোগান সর্বস্বতা, লোককে তাতাতে হবে-এই সব নির্দেশ আসত। ক্যাম্পেইন স্ট্রাটেজি ম্যানেজার হিসাবে টেরী অদ্ভুত রকমের সুপারফিশিয়াল। আমার বেশ মনে আছে ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে সাউথ ক্যারোলিনা যখন ওবামার সাথে ডিসিসিভ ব্যাটল গ্রাউন্ড হয়ে দাঁড়ায়, টেরী ন্যাপকিন ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা করেন। সমস্ত পাবলিক টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে ক্লিনটন স্বেচ্ছাসেবীদের বলা হল-হিলারী ক্যাম্পেনের প্রিন্টেড ন্যাপকিন বিলি করতে! অন্যদিকে ওবামা স্যোশাল মিডিয়াতেই তার ক্যাম্পেইন সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। মূলত ছোট ছোট গ্রুপ ও ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে ওবামা সাপোর্টাররা সংগঠিত হচ্ছিল। অন্যদিকে টেরির নেতৃত্বে হিলারী ক্যাম্পেইন ছিল সেকেলে এবং ট্রাডিশনাল। সেটাই কাল হয় হিলারীর। তিনি ইয়াং জেনারেশনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যার্থ হোন। তার ফল সবার জানা।

 এবার প্রাইমারীতে তার ধারে কাছে কেও নেই । সেটা বিশাল সুবিধা। রিপাবলিকান প্রাইমারী কে জেতে দেখা যাক। র‍্যান্ড পলের মতন  লিব্যার্টিয়ান তরুন সেনেটের বিরোধি হিসাবে নমিনেশন  পেলে, হিলারীর জেতাতে যথেষ্ট ব্যথা আছে। আর যেহেতু কংগ্রেস এবং সেনেট দুটোই রিপাবলিকানদের দখলে, ডেমোক্রাট হিসাবে প্রেসিডেন্ট হওয়াটাও কাঁটার মুকুট । প্রাক্টিক্যালি রিপাবলিকানদের বিল ভেটো দিয়ে আটকানো ছাড়া, তার হাতে কার্যকরী ক্ষমতা খুব বেশী থাকবে না ।

আমেরিকান গরীব এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা অবশ্য রাজনীতিতে আস্থা হারিয়েছেন। তাদের ধারনা কেওই তাদের জন্য কিছু করবে না । মধ্যে খান থেকে অনেক রাজ্যেই ট্রেড ইউনিয়ান বিরোধি বিল পাশ হয়েছে। আমেরিকাতে লেবার ক্লাস এবং লেবার ইন্টারেস্ট দুটোই ক্রমাগত পিছু হটেছে। এতে আমেরিকা ব্যবসা করার জন্য অনেক বেশি লুক্রেটিভ হয়েছে -কিন্ত আমেরিকাতে মধ্যবিত্ত শ্রেনী আরো বেশী দারিদ্রের পথে। অধিকাংশ মধ্যবিত্তের সেভিংসের যা অবস্থা চাকরি গেলে তিনমাস টানার ক্ষমতা নেই । এডুকেশন লোন পে অফ করতে গিয়ে অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত তরুন আমেরিকান বাড়ি কেনা ত দূরের কথা বিয়ে করতে পর্যন্ত পারছে না । সেভিংস, ইক্যুইটি এসব দেখলে একজন মধ্যবিত্ত আমেরিকানের অবস্থা একজন সম পর্যায়ের মধ্যবিত্ত ভারতীয় এবং চৈনিকদের থেকে একটু না- অনেক খারাপ।  আমেরিকা এখনো পর্যন্ত ভাল তাদের জন্য যারা প্রযুক্তির ব্যবসা করতে চান-নতুন ইনোভেশন আনতে চান ।  দেখা যাক হিলারী মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের স্বস্তি দিতে পারেন কি না। আমার ধারনা পারবেন না -মার্কেটের অমোঘ নিয়মেই তা সম্ভব না । কারুর পক্ষেই তা সম্ভব না । মন্দের ভাল -এই হিসাবেই তাকে ভোট দেবে আমেরিকানরা। 

No comments: