Wednesday, October 1, 2014

অথ তত্ত্বান্ধ কথা!

গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদুজনের বিরুদ্ধে মন্তব্যের বহর দেখে, আবার লিখতে বাধ্য হচ্ছি, মানুষের স্থান তত্ত্ব, আদর্শ, রাজনীতির ওপরে। রাজনীতির জন্য মানুষকে বলি না দিয়ে, মানুষের জন্য রাজনীতিকে বলি দিতে শিখুন। নইলে মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি-সবই ব্যর্থ হবে। 

অনেকেই অনেক যুক্তি দিয়েছেন আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধে। আলাদা করে সবাইকে উত্তর দেওয়ার সময় নেই। তাই একটা প্রবন্ধেই সব যুক্তি সাজাচ্ছি

  (১) মেয়েটির অভিযোগ বিশ্বাস করা যায় কি না? 

          সব প্রশ্নের শুরু এখান থেকেই হওয়া উচিত।  হ্যা, মেয়েটিকে নিশ্চয় হেনস্থা করা হয়েছে। কিন্ত সেটা যৌন হেনস্থা কিনা-সেটা বলা যাচ্ছে না। যাদবপুরের পড়ুয়াদের কাছ থেকে যেটা জানা যাচ্ছে মেয়েটি ফেস্টের দিন অন্ধকারে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে যৌনক্রীয়ারত কালে কিছু হোস্টেলবাসী মরাল পুলিশ হিসাবে উপস্থিত হয়ে-ওদেরকে হেকল করে।  তারপরে টেনে হিঁচরে হোস্টেলের একটা ঘরে বন্ধ করে রাখে। মোরাল পুলিশিং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কিন্ত সেটা যৌন হেনস্থা না।

  মেয়েটি ওই হোস্টেলের কাউকেই চিনত না। তারপরে ছিল অন্ধকার।  এই অবস্থায় সে ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করে। কে এই কাজ করেছে, ওই মেয়েটির পক্ষে বলা অসম্ভব-কারন কিছু অচেনা ছেলে রাতের অন্ধকারে এই গর্হিত কাজটা করেছে। সে ১৫ টা ছেলের বিরুদ্ধে র‍্যান্ডম ফায়ার করেছে। 

 পুলিশ ওই ১৫ টি ছেলের মধ্যে পিঠ বাঁচাতে দুটিকে গ্রেফতার করেছে। সেই দুটি যারা সব থেকে বেশী গরীব-যাদের বাবা-কাকারা ইনফ্লুয়েন্স খাটাবে না। হ্যাসল ফ্রি মাল। 
 
 ওই  হোস্টেলের ছেলেরাই একমাত্র জানে কারা জড়িত। কিন্ত মেয়েটি যা করেছে তা র‍্যান্ডম ফায়ার। পুলিশ পিঠ বাঁচাতে দুজন গরীব ছাত্রকে বেছে বেছে কুমীর ছানার মতন দেখাচ্ছে। কোন প্রমান নেই মেয়েটির জবাবনন্দী ছাড়া। এই অবস্থায় পৃথিবীর কোন  ভদ্র আইনে ছেলে দুটি দোষী হতে পারে?

 সুতরাং ওই ছেলেদুটি দশচক্রে ভগবান ভূত। ওদেরকে দোষী সাব্যাস্ত করে দুটি হত দরিদ্র ফ্যামিলিকে এ ভাবে ভাসিয়ে দেওয়া মেয়েটিকে হেনস্থা করার চেয়ে শতগুন বড় অপরাধ।

 (২)  কোন মেয়েকে যৌন হেনস্থা করতে বড়লোক বা গরীব হতে হয় না। পুরুষ হওয়াই যথেষ্ট। আমি যুক্তি দিয়েছিলাম- গ্রামের গরীব ঘরের "মেধাবী ছাত্র" এই ধরনের কার্যে লিপ্ত হতে পারে কি না?

  মেধাবী কথা উহ্য রেখে সবাই বেমালুম নির্ভয়া কেসে গ্রামের গরীবদেরকে টেনে আনল। নির্ভয়ার রেপিস্টরা  কেও কি যাদবপুরে পড়ার মতন মেধাবী ছাত্র ছিল?

 গ্রামের  " মেধাবী ছাত্র" কথাটা কেন গুরুত্বপূর্ন? 

 গ্রামের স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা আমার- এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা। ছেলেগুলি নিশ্চয় গ্রামের স্কুলের সেরা ছাত্র ছিল। আমাদের গ্রাম বা গ্রামশহর গুলি এতই রক্ষণশীল-ভাল ছাত্ররা ছাত্র অবস্থায় কোন মেয়ের সাথে প্রেম করবে-সেটা পর্যন্ত হতে বাগড়া দেয়। আমার নিজেরই কত মেয়ে দেখে বুক দুড়দূর করেছে-কিন্ত একটা মডেল কোড ভুতের মতন বসে থাকত ঘারের ওপর। মেয়েদের সাথে কথা বলতেই ভয় পেতাম। না, মেয়েদের নিয়ে ভয় ছিল না-ভয় ছিল সমাজ নিয়ে। পাছে ভালো ছেলের তকমাটা খসে যায়-এটা একটা স্যোশাল ইউটিলিটি প্রেসার।

 ওই মডেল কোডের চাপ নিয়ে যারা উঠে এসেছে, তাদের পক্ষে এই কাজ করা প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ রেপের ঘটনায় জরিত থাকে- হয় বড়লোক বাপের বখাটে যে জানে বাপের ক্ষমতায় উদ্ধার পাবে বা অশিক্ষিত সর্বহারা গরীব যাদের হারানোর কিছুই নেই। আপনারা দেখেছেন কখনো এর মাঝামাঝি স্পেক্ট্রামে মধ্যবিত্ত বা গরীব ঘরের কোন মেধাবী ছাত্র কোথাও কোন রেপ কেসের সাথে জড়িত? যাদের হারানোর অনেক কিছু থাকে, তারা এই ধরনের রিস্ক কেন নেবে?

 (৩) রীনিতা এর মধ্যে মার্ক্সিজম, লেনিনিজম, ফেমিনিজম -ইত্যাদির সাপলুডো নিয়ে হাজির। আরে বাবা এটাকে পুরুষতন্ত্রের নারী নির্যাতন হিসাবে মানতে আমি নারাজ। এটা কিছু ছাত্রের ভ্রান্ত মরাল পুলিশিং।  এখানে পিতৃতন্ত্রের ঝাঁট দেখতে পেলে মুশকিল আছে। কিছু ছাত্রর ভুল, যা মোটেও সবদিন হয় না-একটা স্পেশাল ঘটনা ঘটে গেছে-তার মধ্যে পিতৃতন্ত্রের ভূত দেখলে হয় সৃষ্টিকর্তা নইলে ডারউইন সাহেবের কাছে গিয়ে অভিযোগ যানান।  প্রথম অভিযোগে লিখবেন -মেয়েদের দেখলে ছেলেদের উঠে যায়-এই ধরনের ন্যাক্কারজনক পিতৃতন্ত্রের অবসান দরকার হে সৃষ্টিকর্ত্তা!! এই ফেমিনিস্ট ভদ্রমহিলা সর্বত্র পিতৃতন্ত্রের ভূতের সন্ধানে নিজেই অদ্ভুত চরিত্র!  উনি ঝারফুক করতে থাকুন!!

 (৪) আমি কোন মার্ক্সিস্ট বিশ্লেষন করি নি।  উৎপাদনের ব্যবস্থার সাথে, ফেস্টের দিন রাতে মেয়েটি কেন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ইস্টিমিস্টি করছিল বা ছেলেগুলো মরাল পুলিশিং করল তার সম্পর্ক আছে? পাগল না মাথা খারাপ?

আমি পেশাগত ভাবে একজন প্রযুক্তিবিদ। আমাদের ডোমেনে কোন নিউটনিস্ট বা আইনস্টানিস্ট নেই। কারন আমরা শিখি তথ্য এবং প্রমানই একমাত্র গ্রাহ্য।  কোন ইস্ট বা ইস্টদেবতার সাহায্য ছাড়া, শুধু তথ্য এবং প্রমানের ভিত্তিতেই কোন ইস্যুতে পজিশন নিতে হয়।

(৫) এবার আসি সায়ন্তনীর কথায়। ও ছিপ ফেলে বসে থাকে। কে কখন সেক্সিস্ট একটা কথা ড্রপ করলো। কালিদাস বা কবিগুরু ভাগ্যবান। তাদের সায়ন্তনীর কথা ভেবে লিখতে হয় নি। নইলে কালিদাস মেয়েদের স্তন এবং নিতম্বের সুউচ্চ প্রশংসা করার আগে দশবার ভাবতেন যদি তার বিরুদ্ধে সেক্সিস্ট ট্যাগ লাগে! তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে অধিকাংশ মেয়েই সায়ন্তনী না। তারা পুরুষের কাছ থেকে হট সেক্সী-ইত্যাদি বিশেষণ পেলে খুশীই হয়। কারন নারী-পুরুষ সবার নির্মানের মূলেই আছে যৌনতা। যেসব মেয়ে বলে, তারা এই সব বিশেষনে খুশী না-তারা শ্রেফ হিপোক্রিট। 

 (৬) অভিজিতের থ্রেডে আসা যাক। ছেলেদের হোস্টেলের ছেলেরা নাকি খুব খারাপ হয়!!! মেয়েদের দেখলেই রেপ করে ফেলবে। আরে ভাই আমাদের হলেও ফেস্ট হত-অনেক রাত অব্দি মেয়েরা থাকত। কোনদিন বাজে কিছু হয়েছে বলে জানি না। ব্যাতিক্রম নিয়ম না।  সব হোস্টেলেই কিছু বাজে ছেলে থাকে। হ্যা তারা এই ধরনের বাজে কাজ করতে পারে। সেই সংখ্যাটা ৫% এর বেশী হবে না। 

আর সেক্সিস্ট কথা, মেয়েদের লক্ষ্য করে বাজে গালি? 

  এর কারন আমাদের সমাজের সেক্সুয়াল ওপ্রেশন। একটা উনিশ কুড়ির ছেলের যদি বান্ধবী না থাকে, সেক্সের জন্য রেগুলার আউটলেট না থাকে,  এই ধরনের সেক্সুয়াল পার্ভাসান, আসাই স্বাভাবিক।  ফ্রাস্ট্রেশন থেকে। আই আই টী লিঙ্গো ফ্রাস্টু। আমাদের ছাত্র জীবনে দেখেছি। যাদের বান্ধবী আছে, সুন্দর লাভ লাইফ আছে, তারা সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনে ভোগে না।  এটা আমাদের সমাজের দোষ যে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য সুন্দর যৌন জীবনের ব্যবস্থা করে দিই না। এটা মানুষের জীবনের একটা বেসিক চাহিদা। তার সাপ্লাই না দিলে-মেয়েটি মাঠে গিয়ে অন্ধকারে ওইসব করবে-আর ছেলেগুলো ফ্রাস্টু খেয়ে তার ওপর হাত চালাবে। সবটারই কারন সেক্সুয়াল ফ্রাস্টেশন -তার জন্য দায়ী সমাজ। রাষ্ট্র। সব হৌককলরব করছে-আসল সত্য বলার সাহস কারুর নেই ।

 এই যে নির্ভয়া নিয়ে এত আন্দোলন হল-কেও আসল ইস্যুটাই তুললো না। বিহার উত্তর প্রদেশ থেকে আসা, দিল্লীতে থাকা ওইসব লেবার ক্লাসের ছেলেরা মেয়ে কোথায় পাবে? নারী সব পুরুষের জীবনের বেসিক চাহিদা। খাবার না পেলে বাঘ ও জঙ্গল ছেড়ে মানুষ শিকার করতে আসে লোকালয়ে-গুলি খাওয়ার ভয় সত্ত্বেও। এটা ভুললে চলবে না। মেট্রো শহর গুলিতে গ্রাম থেকে উঠে আসা লেবারক্লাসের জন্য মেয়ে সাপ্লাই না থাকলে ( সেটা গনিকালয় হলেও চলবে), ভারতের কোন রাজধানী শহরে কোন মেয়ে নিরাপদ নয়। ওই যে বল্লাম বাঘ খেতে না পেলে, গুলি খাওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও লোকালয়ে আসে মানুষ ধরতে।  আমাদের শিক্ষিত মানুষরা আবার এসব নিয়ে আলোচনা করতেই নজ্জা পান!


মানুষ অমৃতের পুত্র।সে খারাপ নয়, খারাপ তার প্রবৃত্তি।  প্রবৃত্তি একটা সামাজিক কন্ডিশনিং। ইতিহাসে বারবার প্রমান আছে কিভাবে দস্যু রত্নাকর মহর্ষী বাল্মিকী হয়েছেন। চন্ডাশোক ধর্মাশোক হয়েছেন। 

1 comment:

ardhendu.ju said...

thik jayga te aalo fele6en.....