Friday, October 3, 2014

নীরব কম্প্রোমাইজ

যাদবপুর কান্ডে আমদের সমাজের আরেকটা দুর্ভাগ্যজনক অন্ধকার সামনে এল-এটা নিয়ে আগে গভীরে আলোচোনা হলে ভাল হত।
 কিন্ত এখনই হৌক।
প্রশ্ন হচ্ছে, আসল অপরাধী কারা-তা একমাত্র হোস্টেলের ছেলেরাই জানে। তারা কেন অপরাধীদের আড়াল করছে? তারমানে ত 
হোস্টেলসুদ্ধ ছেলেরা এই অপরাধে অপরাধী?
হোস্টেলের ছেলেদের এই অপরাধ লুকানোর জায়গা নেই । সেট যেমন ঠিক-ঠিক তেমনই বাস্তবতা হচ্ছে, হোস্টেলের ছেলেরা 

একক্কাট্টা হবেই বন্ধুদের অপরাধ ঢাকতে। কারন হোস্টেলে ত বাবা-মা থাকে না। বন্ধুরাই দেখাশোনা করে কিছু হলে। ফলে
 এটাই হোস্টেল জীবনের অলিখিত নিয়ম-বন্ধুর পাশে সময়ে অসময়ে দাঁড়াও। গান্ধী বোধ হয় এই জন্যেই বলেছিলেন বেশী বন্ধুত্ব খারাপ-কারন তা বন্ধুদের খারাপ কাজের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে নিরুৎসাহিত করে।
মুশকিল হচ্ছে আই আই টির হোস্টেলে দীর্ঘ দশবছর কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলতে পারি- আমি নিজে যাদবপুরের হোস্টেলে 
থাকলে ছাত্ররা যেভাবে বন্ধুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে-আমিও তাই করতাম। কারন অতীতে এই কাজ অনেকবার ইচ্ছাকৃত বা 
অনিচ্ছাকৃত ভাবেই করতে হয়েছে। '৯১ সালে আমি যখন আই আইটিতে ঢুকি-ঠিক ১২ দিনের মাথায় আর কে হলে, আমার মতন
 আরেক নবাগত সন্দীপ সিনহা রায়কে তিনতলা থেকে ঠেলে ফেলা হয় র‍্যাগিং এর সময়। সন্দীপ আমার সাথেই নরেন্দ্রপুর থেকে
 এসেছিল। পরেরদিন পুলিশ আটজন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। এবং তারপরের দিন, গোটা আই আই টি জুরে পুলিশ একশনের বিরুদ্ধে
 অনশন ধর্মঘট বিক্ষোভ হয়। ছাত্রদের বক্তব্য ছিল-গোটা ঘটনা ঘটেছে অন্ধকারে-পুলিশ র‍্যান্ডম ফায়ার করে নিরাপরাধ ছাত্রদের
 ক্যারিয়ার ধ্বংস করছে। ঠিক আজকে আমি যেটা লিখছি। সেই দিন, ভীষন অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও আমাকে মিছিলে হাঁটতে হয়েছিল। 
কারন সন্দীপকে আমি ভালোই চিনতাম। মনথেকে মেনে নিতে পারি নি যে বন্ধুদের অপরাধিদের বাঁচাতে আমাকে মিছিলে হাঁটতে হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠবে, এবং ওঠা উচিত ও-তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রদের কারুর মেরুদন্ড নেই ?

শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কেন, সর্বত্রই বাঁচার জন্য আমাদের কম্প্রোমাইজ করতে হয়। যত ওপরে ওঠা-তত বেশি কম্প্রোমাইজ। এই
 যেসব মেয়েরা, পুরুষতন্ত্র, জেহাদি ফেমিনিজম দেখাচ্ছে তারা কম্প্রোমাইজ করে নি তাদের ক্যারিয়ারে? কত মেয়ের জীবন 
ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে, তারা গাইডের সাথে শুতে রাজী হয় নি বলে। আবার অনেকে শুয়ে নিজেরটা বাগিয়েও নিয়েছে। তারা
 হয়ত এই টাইপের নয়-কিন্ত তাদের সামনে ত এই সব ঘটনা ঘটেছে আখছার-তারা কেও কোনদিন প্রতিবাদ করেছে? নীরবে
 কম্প্রোমাইজ করেছে। এই নীরব কম্প্রোমাইজটা ভীষন আনফরচুনেট পার্ট অফ লাইফ। যারা টিসিএস, ইনফি, সিটিসে কাজ করছে, 
তাদের জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত এই নীরব কম্প্রোমাইজ এর মধ্যেই কাটে।
সুতরাং কাঁচের ঘরে বসে যাদবপুরের ওই হোস্টেলের ছাত্রদের বিরুদ্ধে ঢিল ছোঁড়া উচিত না। আমরা যেটা দেখছি-সেটা আমাদের
 জীবন এবং সমাজের অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটা দিক। আমরা কেওই গান্ধী নই-বাপুজিক বইতেই ধরতে পারি না-ত নিজের 
জীবনে!!

No comments: