Tuesday, May 26, 2020

বাঙালীর ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করে কলকাতার অলস বামবুদ্ধিজীবিরা

বাঙালী সব কিছুতেই অলস। আমরা বলি বটে বাঙালী তার অতীত, রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিতে এতটাই আত্মমগ্ন, যে সেই ঐতিহাসিক অন্ধকূপ থেকে এই জাতিকে টেনে তোলা বেশ কষ্টের। আমরা বলি যে বাঙালী ব্যবসা বিমুখ, কারন সে অতীতের গৌরবে মগ্ন।
কিন্ত সত্যিই কি তাই? বাঙালীকি তার অতীতের চর্চাটাই ঠিক ভাবে করে? নাকি সেখানেও পাহাড় প্রমান আলস্য? কারন অতীতের চর্চা ঠিক ভাবে করতে গেলে দেখা যেত, যাদেরকে দিয়ে বাঙালী শ্রদ্ধাবাসর সাজাচ্ছে, তারা ব্যবসা এবং উদ্যোগেও সফল ছিলেন। সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না।
বাঙালীর অতীতচর্চার ক্ষেত্রেও আলস্যটাই চোখে আসে।
তারানাথ তর্ক বাচস্পতির কথা কজন জানেন? কালনার তারানাথ পন্ডিত ছিলেন উনবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত। তার লেখা সংস্কৃত ব্যকরন এবং অভিধান, পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রামান্য। কিন্ত সেটাই সবাই জানে। কেউ জানে না, তারানাথ একজন বিশাল সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁত, ঘি, কাঠের ব্যবসা করতেন গোটা ভারত জুরে। এবং সেই সময়ে তার ব্যবসায় হাজার হাজার লোক নিযুক্ত ছিল। যারা ভাবেন লক্ষী সবং সরস্বতীর সাধনা একসাথে হয় না, তারা বিরাট ভুল জানেন।
বিদ্যাসাগরের ব্যবসায়িক প্রতিভা নিয়ে কজন আলোচনা করেন? সংস্কৃত কলেজের চাকরি ছেড়ে ছাপাখানার ব্যবসায় নামেন বিদ্যাসাগর। স্কুল কলেজের পাঠ্যবই লিখবেন এবং ছাপাবেন। বস্তুত বাংলার বই এর ব্যবসা তার হাতেই তৈরী। দুবছরের মধ্যেই তার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
জমিদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের ওপর ভরসা করতেন বেশী। তবে রবীন্দ্রনাথ বা জ্যোরিরিন্দ্রনাথ কেউই তাদের ঠাকুর্দা দ্বারকানাথের ব্যবসায়িক প্রতিভা পান নি। সামান্য পাটের ব্যবসা করতে গিয়েও লোকসান খেয়েছেন। কিন্ত জমিদারিটা ভালো চালাতেন।
প্রিন্স দ্বারকানাথ বহুভাষায় পন্ডিত ছিলেন। তিনি আরবী ফার্সি ইংরেজি বাংলা সংস্কৃত-তখনকার দিনের সব ভাষাতেই কাজ চালাতে পারতেন। অনেকেই জানেন না দ্বারকানাথের উত্থানের পেছনে সব থেকে বেশী বড় ভূমিকা ছিল তার ভাষা এবং আইনের জ্ঞানের। নবাবদের আরবী ফার্সিভাষার দলিল, ইংরেজিতে তিনিই অনুবাদ করে ছিলেন। এই কারনে তিনি ইংরেজ এবং দেশী রাজন্যবর্গ-দুই দলের কাছেই এক্সেস পান, যা তার ব্যবসা প্রসারনে কাজে আসে।
সুতরাং যেসব বাঙালী, বাঙালীর গৌরবজ্জ্বল অতীতের কথা বলেন, তাদের এটাও জানা দরকার রেনেসাসের বাঙালী পুরুষরা লক্ষী এবং সরস্বতীর সাধনা একই সাথে করেছেন। কারন দেশ লক্ষীছাড়া হলে, সরস্বতী সেখানে থাকে না। আর আধুনিক ব্যবসার জন্য- জ্ঞান বিজ্ঞানের দক্ষতা বিশেষ ভাল ভাবেই দরকার। জাকারবার্গ, বিলগেটস, ইলন মাস্ক-এরা সর্বোচ্চ মানের ইঞ্জিনিয়ার ও ।
স্বাধীনতার পর, বাঙালীর ইন্টেলেকচুয়াল সার্কল কতগুলো অলস পরজীবি ( পড়ুন বামপন্থী) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরে, ভারতে বিরাট বিরাট ব্যবসায়ী ফ্যামিলি এবং কোম্পানীর জন্ম হয়ছে। এর একটাও বাংলার না। বাঙালীর না। মনমোহনের উদারনীতির পর, অন্তত ১৫০ টি আই টি এবং অন্যান্য ব্যবসা তৈরী হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য বিলিয়ান ডলারের বেশী (যাদের আমরা ইউনিকর্ন বলি)। এর মধ্যে টিসিএস, ইনফোসিস এর মতন আইটি কোম্পানী বা অরবিন্দ ফার্মা বাঁ সান ফার্মাও আছে। এর একটিও কোলকাতা বা বাঙালীর না।
স্বাধীনতাউত্তর কালে ভারতবাসীকে বাঙালীর শ্রেষ্ঠদান, "নক্সাল" শব্দটি। যা উপদ্রবের আরেকটি নাম। বাট, অধিকাংশ বাম বাঙালীর কাছে চারু মজুমদার এবং তাদের ভ্রান্ত সঙ্গীরা রোম্যান্টিক হিরো।
বাঙালী অর্থনীতিতে দুটো নোবেল দিয়েছে, সেটা গৌরবের ব্যাপার বুঝলাম। কিন্ত সেই গৌরব বেচে কি, বাঙালার বেকার ছেলেরা চাকরি পাবে? নোবেল বেচে কি বাংলার গ্রাম গঞ্জ থেকে যে লাখে লাখে বেকার শ্রমিকরা কেরালা, মহারাষ্ট্র গুজরাটে কাজের সন্ধানে যায়, তারা ঘরে ফিরতে পারবে?
বাঙালীর ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করে কলকাতার অলস বামবুদ্ধিজীবিরা। যাদের আমি আল্টিমেট লেভেলের ইডিয়ট বলে মনে করি। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই বামমুর্খামো একটা জাতির মধ্যে বদ্ধমূল ধারনা হিসাবে ঢুকে গেছে। এই ক্ষতি হাজারটা আমপানের ও বেশী।

Monday, May 11, 2020

করোনাতে পাশ ফেইল!

ছোটবেলায় অঙ্ক বা গ্রামার ভুল করলে, ভারতের সব ছেলেমেয়েরাই কানমলা, ডান্ডা, চোখ রাঙানি,শেমিং, গালাগাল-সব কিছুর সাথেই পরিচিত। এর ফলে, ভারতীয় মনোবৃত্তিতে একটা ধারনা -ভুল করা মানেই লজ্জার। ডাঁহা ফেইল ইত্যাদি। অধিকাংশ ভারতীয়দের এটা পার্মানেট ব্রেইন ড্যামেজ যে জীবনের সব কিছুই পাশ-ফেলের খেলা! সে ডিগ্রি, বিয়ে চাকরি যাইহোক না কেন!
এখন জীবনটা যদি বই এবং অঙ্কের ফর্মুলার মতন কপিবুক হত, ভারতীয়দের কোন অসুবিধা হত না। ফর্মুলা লাগিয়ে ডিগ্রি, এরেঞ্জড ম্যারেজ পর্যন্ত চলে। তারপর সাংসারিক বা পেশাদার জীবনে কিন্ত ফর্মুলা খুব বেশী চলে না।
এই কারনে ভারতের সফটীয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের দুর্নাম যে তারা ভুল স্বীকার করে না। ভাবে ভুল স্বীকার করা ডিসক্রেডিট। ফলে ক্ষতি হয় প্রোজেক্টের।
কারন রিসার্চ ডেভেলেপমেন্ট ওভাবে কপিবুক হয় না। ভুলের বিশ্লেষন থেকেই ঠিক পথের সন্ধান পায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি। ভুল থেকে শেখাটাই প্রগতির একটা অংশ। যে ভুল করে নি, সে কিছুই শেখে নি।
আমি এদ্দিন শুধু ভারতের সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারদেরই গালি দিতাম। যে ছোটবেলার ভীতির কারনে, এরা ভুল স্বীকার করতে চায় না। এখন দেখছি এই ভীতি রাজনীতিবিদদের মধ্যেও! এই পাশফেল মানসিকতার পার্মানেন্ট ব্রেইন ড্যামেজ তাদের ও!
যেন পশ্চিম বঙ্গে বেশী কোভিড-১৯ পেশেন্ট হলে, সেটা মমতা ব্যানার্জির ডিসক্রেডিট। কেরলে কোভিড নির্মূল বলে চেঁচাচ্ছে। মোদি সরকার শুধু নাম্বার নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে ভারতে টেস্টিং এর হার সব থেকে কম। পশ্চিম বঙ্গে আরো কম। যত বেশী পেশেন্ট ধরা পড়বে, তত যে দেশের আর দশের লাভ-কে বোঝাবে? এত সেই সফটীয়ার বাগের মতন হল। যত বেশী বাগ ধরা যাবে আগে, প্রডাক্ট তত মজবুত হয়।
আমেরিকাতে কিন্ত রিপোর্টিং এ জল নেই। এপ্রিলে প্রতিদিন ৪০,০০০ নতুন রুগী, আর ৩০০০+ প্রতিদিন মারা যাচ্ছিল। এখন ২০,০০০ ইনফেকশন ৫০০-৬০০ ডেইলি ডেথ। আস্তে আস্তে ঠিকই নিয়ন্ত্রনে আসছে।
ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে এখন ৫০০০ ইনফেকশন রিপোর্টেড। মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর মধ্যে। বাস্তবে সংখ্যাটা কি ঠিক? আমার ত মনে হয় সর্বাত্নক টেস্টিং করলে এখন ডেইলি ৫০,০০০ সংক্রমন আর ৫০০+ মৃত্যু রিপোর্টেড হবে। অনেকেই অজানা জ্বরে বাড়িতে মরছে। আত্মীয় স্বজনেরা রিপোর্ট করছে না ভয়ে। কারন তাহলে টেস্টিং করবে, আর টেস্টিং পজিটিভ হলে, কোভিড হাসপাতালে পাঠাবে। যেখানে সত্যিকারের কোভিডে মৃত শবদেহের সাথে একসাথে থাকতে হবে। সব থেকে মজার ব্যাপার হল , কোভিড টেস্টিং এর ভুলের সংখ্যা ২০-৩০%। অর্থাৎ কোভিডে না ধরলেও আপনাকে জোর করে কোভিড রুগীদের সাথে পাঠাবে। এবং এমনিতে কোভিডে আপনার মৃত্যু হত না-কিন্ত একবার টেস্টিং করে পজিটিভ এলে ( যেখানে ভুলের সম্ভাবনা ২০-৩০%- এর বেশী একুরেসি সোয়াব টেস্টে সম্ভব না), কেলেঙ্কারি ব্যপার। কারন এমনিতে হয়ত আপনার কোভিড হয় নি। টেস্টে ভুল করেছে। যার সম্ভাবনা ১০ এ দুই বা তিন। কিন্ত কোভিড পেশেন্টদের সাথে একসাথে থাকলে সেটা হবেই!!
বুঝুন অবস্থা। তাহলে দাঁড়াচ্ছে জনগন, রাজনীতিবিদ সবাই কেস চাপতে চাইছে!
এর ফল হবে মারাত্মক। এমনিতে ভারতে লোকেদের বিসিজি টিকা নেওয়া আছে। গরম আদ্র ওয়েদার। ভারতে কোভিড স্ট্রেইন দুর্বল। এসব কারনে ভারতে কিন্ত কোভিডের আক্রমন তীব্র হওয়া উচিত না।
ফলে প্রচুর টেস্টিং করে, যদি সব আসল কোভিড পেশেন্টদের চিহ্নিত করা যেত, তাতে প্রথমে দুদিন নাম্বার বেশী আসত। কিন্ত আস্তে আস্তে কমত। যেমন আমেরিকাতে এখন অর্ধেকে নেমেছে। আরো নামবে। ভারতে কিন্ত বেড়েই চলেছে।

Tuesday, April 21, 2020

আমেরিকান কর্মাত্মা



আমেরিকার জন্ম হয়েছিল পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যে যুদ্ধে জাতির পিতারা চেয়েছিলেন এমন রাষ্ট্র যেখানে মানুষের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা যাবে না। ফলে আমেরিকার সংবিধানে ক্ষমতার অসংখ্য স্তর। প্রেসিডেন্ট গর্ভনর এটর্নিজেনারেল কংগ্রেস সেনেট-সবার নিজস্ব ক্ষমতার বৃত্ত আছে।
এখন আমেরিকা লক ডাউন বিরোধি আন্দোলনে উত্তাল। মিশিগান উটা ভার্জিনিয়া সহ ১২ টি রাজ্যে লোকজন বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নেমেছে গর্ভনরের আদেশের বিরুদ্ধে। ভারতে আন্দোলনকারিদের জল কামান আর লাঠিপেটা দিয়ে সরানো যায়। আমেরিকাতে আন্দোলনকারিদের হাতে মেশিনগান। পুলিশে কিছু করতে গেলেই রক্তবন্যা বইবে। আরো অদ্ভুত ট্রাম্প টুইট করে লকডাউন বিরোধি বন্দুকধারিদের সমর্থন জানাচ্ছেন!!!!!
অনেকেই জানতে চান, আমেরিকাতে প্রতি বছর প্রাত ৫০০০ গান ভায়োলেন্স হয় । প্রচুর লোক মারা যায়। তা সত্ত্বেও কেন আমেরিকাতে গান কন্ট্রোল আইন আনা যায় না। লোকজন মেশিনগান ও কিনে বাড়িতে রাখতে পারে। কিন্ত কেন?
ঠিক এই কারনে। যাতে মানুষের গণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারে। এইভাবে যদি লোকে মেশিনগান নিয়ে মাঠে নামে, রাষ্ট্র কিভাবে স্বৈরাচার চালাবে? ভারত এদিক দিয়ে ভাল। বিরোধি পার্টি আন্দোলনে লোক রাস্তায় নামায়। সাথে কিছু আলতার বেলুন থাকে। পুলিশ ও লাঠিপেটার খেলা করে। ফটোগ্রাফারের সামনে বিরোধি নেতারা গ্রেফতার হন। পুলিশের গাড়ি থেকে হাত নাড়ান। দিনের নাটক শেষ হয়। আমেরিকাতে গণবিক্ষোভ মানে সাজানো নাটক না। ছবিতে যেমন দেখছেন, লোকে ওইভাবে সাব মেশিনগান নিয়ে রাস্তায় নামবে। এবার নে পুলিশ আয়!
মেরীল্যান্ডে লক ডাউন ভাঙার জরিমানা ৫০০০ ডলার। কাউকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা নেই। রাস্তায় ভালোই গাড়ি আছে। যেদিন গর্ভনর লকডাউন ঘোষনা করেছিলেন, সেদিন দেখেছিলাম এখানকার আইনজীবীরা পালটা টুইট করেছিল, একজনকেও যদি ৫০০০ ডলার ফাইন করে, রাজ্যের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ান ডলার তুলবে সংবিধান বিরোধি লকডাউনের জন্য।
ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এমনিতেই আমেরিকানদের বেসিক ইমিউনিটি লেভেল দুর্বল। তারপরে লক ডাউন মানাতে অনীহা। ফলে মৃত্যু মিছিল থামার নাম নেই। শুধু স্টেডি এই যা।
আসলে আমেরিকানদের কাছে "কাজ" করাটা শুধুযে পয়সা রোজগারের জন্য তা না। কাজ তাদের আইডেন্টিটি। ওই কাজের মধ্যে দিয়েই তারা নিজেদের খোঁজে। যেখানে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে একজন পরিচয় খোঁজে তার ফ্যামিলি এবং ফ্রেইন্ডের মধ্যে। ভারতে যারা দিনমজুর, তাদের যদি প্রতিদিন খাবার এবং টাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়, তারা কিন্ত লকডাউন মানবে। আমেরিকাতে সবাইকেই মাসে টাকা দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া, বাড়ির ইম আই মুলতুবি রাখার বিল ও আসছে। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে সরকার শুধু টাকার বন্দোবস্তই করতে পারে-কিন্ত যে মানুষ শুধু কাজের মধ্যেই নিজেকে আবিস্কার করে, তার মধ্যেই বেঁচে থাকে, তার কাছ থেকে কাজ কেরে নিলে, সেটা তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রনা। বন্দুক নিয়ে মাঠে নামবেই!
কাজ বন্ধ হলে, আমেরিকানদের যন্ত্রনা পেটে না। আত্মায়। সেটা আরো মারাত্মক।

কোভিড নিয়ন্ত্রনে জার্মানীর সাফল্য এবং বিজ্ঞানী এঞ্জেলা মর্কেল -

কোভিড নিয়ন্ত্রনে জার্মানীর সাফল্য এবং বিজ্ঞানী এঞ্জেলা মর্কেল -
****
(১)
ইউরোপের স্কোর এই রকম [ আজ অব্দি]
আক্রান্ত ('০০০) মৃতস্পেন ২০৪ ২১,২৮৪
ইটালি ১৮৩ ২৪, ৬৪৮
ইংল্যান্ড ১২৯ ১৭, ৩৩৭
ফ্রান্স ১৫৮ ২০,৭৯৬
জার্মানী ১৪৮ ৫,০৩৩

আমেরিকার কথা বাদ দিলাম। আউট অব কন্ট্রোল। ৮১৭,০০০ আক্রান্ত, ৪৫,২২২ মৃত।
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ইউরোপের হার্টল্যান্ডে স্পেইন, ইটালি, ফ্রান্সের আশেপাশে থেকেও, জার্মানীতে কিন্ত করোনাতে মৃত অনেক কম। যদিও আক্রান্তের সংখ্যা সমান।
জার্মানীর এই সাফল্যের কারন কি?
(২)
ঘুরেফিরে, চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মর্কেলের নেতৃত্বর স্টাইল সামনে আসছে। কেন সেটা ব্যখ্যা করি। তার আগে এঞ্জেলা মর্কেল সম্মন্ধে জানা যাক।
উনার জন্ম পূর্ব জার্মানীতে, কমিনিউস্ট শাসনের জমানায় ১৯৫৬ সালে। বাবা ছিলেন পাদ্রী। ফলে কমিনিউস্টরা কখনোই ভাল চোখে দেখে নি এই ফ্যামিলিকে। এঞ্জেলা, বার্লিন ওয়ালের পতন পর্যন্ত রাজনীতির ধারে কাছে যান নি। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে পি এই চ ডি করে, গবেষক ছিলেন।
বার্লিন ওয়ালের পতনের সাথে সাথে,পূর্ব জামানীর লোকেরা গণতন্ত্রের স্বাদ পেল। পূর্ব জামানি তখন কমিনিউস্ট অপশাসনে তৃতীয় বিশ্বের সমতুল্য ( যদিও কমিনিউস্ট ব্লকের মধ্যে এদের অবস্থায় সর্বাধিক ভাল(!) ছিল । এঞ্জেলা মর্কেল তখনই রাজনীতিতে যোগ দেন এবং তার উত্থান ঈর্ষানীয়।
এঞ্জেলা মর্কেলে চরিত্রে অদ্ভুত গুন আছে। বহুদিন বিজ্ঞানী ছিলেন বলে, তথ্য প্রমান নাম্বার ছাড়া সিদ্ধান্ত নেন না আবেগের বশে। আবার কমিনিউস্ট নিপীড়নের মধ্যে বড় হয়েছেন বলে, রাষ্ট্র যাতে জোর করে নাগরিকদের ওপর না সিদ্ধান্ত চাপায়-সেই ব্যাপারেও সজাগ।
এবার দেখুন জার্মানী কি করেছে যা আমেরিকা বা প্রথম বিশ্বের লোকেরা করতে ব্যর্থ
- প্রচুর টেস্টিং। জার্মানী দুই মিলিয়ানের বেশী টেস্টিং করেছে। গণহারে। কোভিড-১৯ এর টেস্ট কিট ও প্রথম তৈরী হয়েছে জার্মানীতে। সরকারি খরচে গণহারে টেস্টিং করানো হয়েছে
- অন্যান্য দেশের মতন করোনা হাসপাতাল করে ফটো শেসন বা সেনসেশনের দিকে যায় নি জার্মানি। এরা যেহেতু তথ্য এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিরোধ সিস্টেম গড়তে চেয়েছে, সেহেতু দ্বিস্তরীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরী করেছে। করোনা আক্রান্ত রুগীদের প্রথমে দেখছে প্রথম স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা- ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানে আই সি ইউ বা ভেন্টিলেশন নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা করে বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকাতে বিশাল মৃত্যুর বড় কারন এই যে যখন হাসপাতালে রুগী আসছে, তখন তার মরার চান্স বিশাল। দ্বিস্তরীয় ব্যবস্থা থাকায়, জার্মানীতে ক্রিটিক্যাল পেশেন্টদের আরো আগে হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। সেখানেই প্রচুর প্রান বেঁচেছে। ভারতের দিকে তাকান। এক সমস্যা। অনেক রুগীর মারা যাওয়ার পর জানছে ( স্বর্গে বসে অবশ্যই), তারা করোনা আক্রান্ত।
- লক ডাউন করাতেও জার্মানীর সাফল্য বেশী।
তবে প্রচুর টেস্টিং এবং দ্বিস্তরীয় রেসপন্স জার্মানীকে সব থেকে বেশী সাফল্য দিয়েছে।
(৩)
এবার ট্রাম্প, মোদি মমতায় আসি। এই বিপুল জনপ্রিয় নেতারা এখনো হেডলেস চিকেনের মতন নাচানাচি করছেন। জার্মানী যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ট্রাম্প কিস্যুই করে নি। মোদিও আগে থেকে ইন্টান্যাশানাল ফ্লাইট রধ করে নি। ভারতে ডাক্তারদের জন্য পি পি এই পর্যন্ত নেই। কিন্ত এখনো পর্যন্ত ভারতে সেই ভাবে টেস্টিং ই শুরু করা যায় নি। মমতাদির কথা ছেড়েই দিলাম। পাবলিক হেলথ সিস্টেম ছাড়া করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব। ডিসেম্বর মাস থেকেই ভারতের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু ভারত এবং পশ্চিম বঙ্গে পাবলিক হেলথের অবস্থা খুব খারাপ। ভারতে শুনি এত এত আবিস্কার হচ্ছে, কিন্ত শেষে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ফল্টি টেস্ট কিট!
পশ্চিম বঙ্গে করোনায় মৃত্যু ছেড়ে দিলাম। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যা অবস্থা, কোন বয়স্ক লোকের হার্ট এটাক বা স্ট্রোক বা অন্য কোন কঠিন রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত। যেসব মহিলাদের ডেলিভারী হবে, তাদের কথা, তাদের সন্তানদের কথা ভেবে ভয় হচ্ছে।
প্লেটোর রিপাবলিকে গুরু সক্রেটিস গনতন্ত্রের বেহাল দশাকে জাহাজের সাথে তুলনা করেছিলেন ( বুক-৬) । করোনা প্যানডেমিকে আমেরিকা ভারত পশ্চিম বঙ্গে যা নাটক দেখছি-গনতন্ত্রে যে এমনটাই হয়, সক্রেটিস আড়াই হাজার বছর আগেই লিখেছেন।
যেমন সক্রেটিস বলছেন-গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে সেই জাহাজের মতন-যেখানে জাহাজের ক্যাপ্টেনের ( বুরোক্রাট) ভাল জ্ঞান থাকলেও তাকে সেলরদের ( রাজনীতিবিদ) কথা শুনে চলতে হয়। যারা নিজেদের সব জান্তা বলে দাবী করে -কারন সেলররা মদ এবং গাঁজা খাইয়ে জাহাজের মালিকদের (জনগন ) হাত করেছে এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন ( বুরোক্রাটরা, এডমিনিস্ট্রেটররা ) যতই দক্ষ হোন না কেন, তাকে সেলরদের ভুলভাল নির্দেশেই জাহাজ চালাতে হবে।
গণতন্ত্রের সমস্যা এটাই যে এখানে ভোট পেতে গেলে, মানে যে নেতা হতে চাইবে- তাকে জনগনের নেতা হওয়ার জন্য -জনতাকে ঘুঁশ দেওয়া, ধর্ম জাতির আফিং খাওয়ানো এইসবই করতে হয়।
ফলে ট্রাম্প, মোদি, মমতা যারা ওই জনমোহনের কাজটি ভাল পারেন, তারাই নেতা। বিজ্ঞানীরা কি করে নেতা হবেন?
কিন্ত কোভিড-১৯ এর মতন অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়তে গেলে বিজ্ঞান ছাড়া গতি নেই। তখন দেশের লাগে একজন বিজ্ঞানী কম্যান্ডার ইন চিফ। যিনি জানবেন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দেশ বাঁচাতে হয়। এঞ্জেলা মর্কেল সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। রাজনীতিবিদের সাথে একজন বিজ্ঞানীর পার্থক্য কি।
মোদি ট্রাম্প মমতা? এখনো চিত্রনাট্য উপহার দিচ্ছেন। উনারা ওটাই ভাল পারেন। জনগন সেই জন্যে এদেরই ভোট দেয়। কিন্ত দুর্ভাগ্য নাটক সাজানো গল্পই। বাস্তব না। আপনে বিশ্বাস করলেও না।
( বিপ্লব পাল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২০)

Thursday, April 16, 2020

মিথ বনাম বাস্তব-করোনার প্রকোপ

(1) হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কি করোনার সংক্রমন নিরসনে কাজ করবে?
এই কোটি টাকার প্রশ্নে, চীনের এক গবেষনাদল, প্রথম একটা প্রপার ক্লিনিকাল রিলিজ করেছে [১] । তাতে দেখা যাচ্ছে ওভারল কোন লাভ নেই। বরং সাইড এফেক্টে ক্ষতি হতে পারে [ আমি রেফারেন্স দিচ্ছি]। কিন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেখানে ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমন ও ছড়ায়, সেখানে ক্লোরোকুইন ভাল কাজ করেছে।
অর্থাৎ এটি মুড়িমুরকির মতন খেলে ক্ষতি হবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া একদম নেওয়া উচিত না।
(২) করোনা টেস্ট রেজাল্ট কতটা বিশ্বাসযোগ্য? একদমই না। দেখা যাচ্ছে ২০-৩০% ভুল। বয়স্কদের জন্য আরো ভুল। সুতরাং টেস্ট করলেই করোনা সমস্যা সমাধানের দিকে এগোবে, এটাও রাজনৈতিক মিথ [২]। আমি তথ্যসূত্র দিলাম। বিজ্ঞান এখানেও খুব বেশী সুরাহা করতে ব্যর্থ। এক্ষেত্রে এফেক্টিভ সেই একটাই স্ট্রাটেজি-ধরে নিতে হবে আমাদের সবার করোনা ভাইরাসে ধরেছে। সেই ভাবেই স্যোশাল ডিসটান্স মেইন্টেইন করতে হবে।

টেস্ট হচ্ছে না বলে রাজনীতি করে লাভ নেই। টেস্ট হলেই যে সুরাহা হবে, তথ্য কিন্ত তা বলছে না। তবুও বেশী টেস্ট করা উচিত। কারন নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল। কিন্ত টেস্ট করলেই সব মুশকিল আসান-তা কিন্ত না।

(৩) কতটা স্যোশাল ডিসটান্স মেইন্টেইন করবেন অন্যজন্যের কাছ থেকে?
অন্যকেউ ভাইরাস এফেক্টেড হলে তার মুখ থেকে নির্গত হাঁচি এবং নিশ্বাসে থাকা ভাইরাস ২২ ফুট অব্দি যেতে পারে [৩]। তাও পরিস্কার বাতাসে। কোলকাতার দূষিত বাতাসে যেখানে পার্টিকুলেট অনেক কনসেন্ট্রেশন বেশী-এটা আরো দূর যেতে পারে। সুতরাং স্যোশাল ডিস্টান্সিং এর সাথে মাস্কও দরকার। ২২ ফুট দূরত্ব মেইন্টেইন করা অবান্তর। মাস্ক, ভাল এন-৯৫ মাস্ক দরকার। না হলে গামছা। কয়েকটা লেয়ারে।

Monday, April 13, 2020

একটি আষাঢ়ে গল্পের খসড়া

একটি আষাঢ়ে গল্পের খসড়া
-বিপ্লব পাল, ১৪ই এপ্রিল
*****
-নিমতলা? বস লম্বা লাইন আছে। অনেকে ডেডবডি নিয়ে তিনদিন বসে। বরফ দিয়ে রাখতে হচ্ছে। পাক্কা খবর। মিঠুর বাবা মারা গেল বেস্পত্তিবার। এখন রবিবার রাত। এখনো নাম্বার আসে নি মনে হচ্ছে
-তাহলে কাশীপুর, গার্ডেনরিচ, ওখানে কত দিন ?
-কি বলবো মলয়দা। সব এক। তিনশো চারশো বডি। তিন চার দিনের লাইন। তবে একটা ফোন দিতে পারি। কিছু বেকার ছেলে পিলে মিলে খুলেছে। আগে সুইগির হয়ে খাবার দিত। এখন ডেডবডি চুল্লীতে পৌছে দিচ্ছে। তবে হ্যা, তিনদিন বডি আগলে থাকতে পারবে না। প্রচুর ডিমান্ড বুঝতেই পারছ। পার বডি এখন পঞ্চাশ হাজার চাইছে। পাঁচে শুরু করেছিল। পাঁচমিনিট ও দাঁড়াবে না। গাড়ি নিয়ে আসবে। হেভি প্রোটেক্টিভ গিয়ার ওদের। চুল্লীর লাইনে ফেলে দেবে। বরফের জোগার ওরাই করবে। তিন চারদিনের আগে নাম্বার আসবে না। বুঝতেই পারছ। আর হ্যা, তোমাকে ত আবার মুখাগ্নি করতে হবে- তোমার প্রোটেক্টিভ গিয়ার আছে ত? করোনার টেস্ট করিয়েছ? চিন্তা করোনা। আরো দশ হাজার ফেললে ওরাই তোমাকে হেবি প্রোটেক্টিভ গিয়ার দিয়ে দেবে। মানে বুঝতেই পারছ, ক্রিমেটোরিয়ামের মানে দুশো তিনশো করোনার লাশ। চারিদিকে ভাইরাস। হেবি গিয়ার চায়। দেখছ না এখন ডাক্তারদেরও পাত্তা পাওয়া যচ্ছে না। সবাই করোনাতে টসে গিয়ে নিজেরাই বাড়িতে কোরান্টাইন।
দুলাল যাকে বলে পাড়ার সব থেকে ডাকাবুকো ছেলে। সিপিএম, তৃনমূল বদলেছে। কিন্ত পাড়ার মুশকিল আসান বদলায় নি। এ তল্লাটে সব কাজে কাউন্সিলার থেকে এম এল এ দুলালকেই চেনে।
প্রথম প্রথম পাড়ায় সপ্তাহে দু তিনজন বৃদ্ধ বৃদ্ধা টসকাচ্ছিল। অজানা জ্বর। করোনা টেস্টিং নেই। আজকাল জ্বরে টসকালে লোকে ধরে নেয় করোনা। শ্বশান বন্ধু পাওয়া যায় না। ভাই, বোন কেউই যাচ্ছে না। পাড়ার বন্ধুবান্ধবরা কেউ আসবে না। টাকা দিয়ে বডি পাঠাতে হচ্ছে। ওই ভাড়াটে ছেলেছোকরারা ফেসবুক লাইভে আত্মীয় স্বজনদের শেষ যাত্রা দেখিয়ে দিচ্ছে। অনেকের ছেলেমেয়েই কোলকাতার বাইরে। ফলে শেষ যাত্রায় ফেসবুক লাইভই এখন দ্যা ট্রেন্ড। সেটা আবার ঘন্টায় হাজার টাকার আলাদা কনট্রাক্ট। এটাই এখন নিয়ম।
পাড়াতে ডেইলি ছ থেকে দশজন মারা যাচ্ছে। এহাত ওহাত ঘুরে দুলালের নাম্বারেই কল আসে। সবাই দুলালকেই ডাকে। আগে দুলাল কমিশন নিত না। এখন ওই নিমতলা পেশাদার শ্বশানবন্ধু কোম্পানী থেকে কাট নিচ্ছে। শালা এত হেবী ব্যবসা। বছরে এ পাড়াতে খুব বেশী হলে তিন চারটে বাড়ি বিক্রি হয়। একটা ফ্ল্যাট ওঠে। একে ওকে দিয়ে আর কত থাকে? আজকাল দুটো পার্টি শশ্বানবন্ধু কোম্পানীকে পাইয়ে দিতে পারলেই দিনে কুড়ি হাজার! পুরো ক্যাশ!
অবশ্য ক্যাশ দেখলেই যে মন ভাল হচ্ছে তা না। বাড়িতে সত্তর বছরের বাবা মা। কালকেই বাবার কাশি উঠেছিল। ভাবছিল টেস্টিংটা করিয়ে নিয়ে আসে। হাসপাতালে যাওয়ার উপায় নেই। করোনাতে ডাক্তার নার্সরাই বোল্ড হয়ে বাড়িতে বসে গেছে! তাছারা হাসপাতাল থেকে করোনা ছড়াচ্ছে আরো বেশী। ডাক্তাররা রুগী দেখা বহুদিন বন্ধ করেছেন। বাবার হাইপ্রেসার। এখন কিছু হলে ডাক্তারবাবুকে ফোন করে ওষুধ নিয়ে আসা। ব্যবস্থা এইটুকুই। আজ মলয়ের বাবা দেহ রেখেছেন। কাল কার বাবাকে নিতে পেশাদার শ্বশান বন্ধুরা এ পাড়ায় আসবে কেউ জানে না। টাকা, দাদা সবকিছু থেকেও লাভ নেই। অজানা ভয় গ্রাস করছে দুলালকে।
ও প্রান্তে মলয় নির্বাক। দুলালই বলে চলল
-মলয়দা তাহলে ওই শ্বশানবন্ধু পার্টিকে বলে দিই। ওদের সিইইও আমার খুব চেনা। আমি একটা ফোন করে দিলেই হবে।
-ইয়ে দুলাল, ওরা কি পুরো পঞ্চাশই নিচ্ছে? মানে বুঝতেই পারছ। লকডাউনের বাজারে গত তিনমাসে আমার ওই দোকান থেকে কোন ইনকাম নেই। এদিকে ছেলের টিউশুনি অনলাইনে নিতে হচ্ছে। তুমি ত বলছিলে ওদের মালিককে চেন...
-কি বলব মলয়দা। দুসপ্তাহ আগেও পাঁচ ছিল। কিন্ত ওরাইবা কি করবে বল। ডেইলি সত্তর আশিটা বডি। তিনটে মাত্র গাড়ি। মেরেকেটে দশটা ছেলে। কে আসবে বলত এই কাজ করতে? প্রানের ভয়ত আছে। তবে বুঝলে সুইগি, ফুড পান্ডার ছেলেগুলোত বেকার এখন। ওদের অনেকেই খুব নীডি বুঝলে। তাদেরই কেউ কেউ আসছে। কিন্ত হেবী ডেইলি রেট দিতে হচ্ছে । দিনে দু হাজার।
- আচ্ছা দুলাল । দিনে দুহাজার দিলেই বডি পৌছানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে? তা তুই এক কাজ কর না । আমি তোকে পঁচিশ হাজার দিচ্ছি, তুই গাড়ি আর চারটে ছেলে জোগার করে দে। পঞ্চাশ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বাড়িতে মাও আছে। যা অবস্থা । আজ পঞ্চাশ দিলে, কাল লাগলে আর কিছু থাকবে না রে ভাই।
দুলাল এতটা ভাবে নি। আসলে দালালি করে অভ্যেস। দ্বায়িত্ব নেওয়ার ঝামেলায় থাকে না। মলয়দার প্রস্তাবটা খারাপ না। সত্যিই ত- ছেলেপুলের ত অভাব নেই। লোক ডাউনের বাজারে সবাই বেকার। কিছু ছেলেপুলে জুটে যাবে। পার্টি প্রতি ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা লাভ।
-মলয়দা, ইয়ে যা বলছেন। তাছাড়া কাকুর শেষ যাত্রা বলে কথা। ঠিক আছে। আমিই দেখছি। তোমাকে আর অন্যকোন খানে দেখতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নেব।
সাপ্লাই লাইন যে কখন কেউরাতলার লাইনে মিশে গেছে, কেইই বুঝে উঠতে পারে নি।

Saturday, March 21, 2020

১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্ল যে শিক্ষা নিতে পারি

মহামারীর ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেলাম। যার থেকে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছি। ভুল হতে পারে। কিন্ত এগুলো ফারদার ইগনোর করলে মুশকিল।
(১) ১৯১৮-১৯ সালে উত্তর ফ্রান্স থেকে যে স্প্যানিশ ফ্ল ছড়িয়েছিল, তাতে সব থেকে বেশী মারা যায় ভারতে। প্রায় ১ কোটি সত্তর লক্ষ। দেশভাগ বা কোন যুদ্ধে ভারতে এত লোক মারা যায় নি। গঙ্গা ভরে গিয়েছিল ভেসে ওঠা পচাগলা মৃতদেহে। অথচ ইতিহাসের এই পর্বটি সম্পূর্ন গায়েব।
এটির উৎপত্তিও মুর্গী থেকে। উত্তর ফ্রান্সে। প্রথম যুদ্ধ শেষে ফ্রান্স ফেরত ২০০ জন সৈনিক বোম্বেতে অবতরন থেকে এটা ভারতে ছড়ায়।
আস্তে আস্তে গঙ্গা ভেসে ওঠে মৃতদেহে। পোড়ানোর লোক পর্যন্ত ছিল না। কেশব বালিরাম হেজগাওগারের জীবনী পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম ১৯১৯ সালে মহামারী হয়েছিল। কারন এই মহামারীর বিরুদ্ধে তার স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের সাথে পরবর্তীকালে ১৯২৫ সালে আর এস এসের জন্মের একটা সম্পর্ক আছে। ঠিক একই সময় খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্থানের জন্মের বীজ ছিল খিলাফত আন্দোলনে। সুতরাং ১৯১৯ সালের মহামারীর ইতিহাস প্রায় মৃত, সব সার্চ লাইট খেয়েছে খিলাফত আন্দোলন। অথচ গান্ধীজি সহ কংগ্রেস নেতৃত্বের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন এই স্প্যানিশ জ্বরে।
মহামারীতে এত বিশাল মৃত্যু ভারত কেন কোন দেশই কোনদিন দেখে নি। অথচ, স্প্যানিশ ফ্ল ভারতের ইতিহাস থেকে উধাও!
কারন এই মৃত্যুর পেছনে যেহেতু ভাইরাস-সেহেতু ইতিহাসে ঢুকিয়ে কি হবে? পাওয়ার লবির পলিটিক্যাল গেইন নেই। বুঝুন কি অবস্থা। কিভাবে ইতিহাস লিখেছে কংগ্রেসের শিক্ষিত স্যাঙাত বাহিনী।
ইতিহাস পড়ার একটাই কারন। যাতে একই ভুল দুবার না হয়। এই ইতিহাস পড়া থাকলে শাহীনবাগ আর পার্ক সার্কাসে রাজনৈতিক সার্কাস নামাতে কেউ সাহস পেত না। আবার সরকারের উচিত ছিল আন্তর্জাতিক উড়ান অনেকদিন আগে বন্ধ করা। ট্রেইন বাস ও বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কিন্ত যে প্রজন্মের ১৯১৯ সালে মহামারীর ইতিহাস জানা নেই, তাদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব কি হতে পারে।
(২) অধিকাংশ ভাইরাসের জন্ম জীবজন্তর শরীরে। মানুষের ত্বক ভাইরাসের ঢোকার জন্য সাধারন ভাবে পুরু। সেই জন্য ভাইরাস ত্বকের দুর্বল অংশ দিয়ে ঢুকবে। এইচ আই ভি, ইবোলা, স্প্যানিশ ফ্ল ছাড়া , অধিকাংশ ঐতিহাসিক ভাইরাসের জন্ম চীনে। কারনটাও বোধগোম্য। যেহেতু তারা নানাবিধ পশু খায়। চোদ্দশ শতাব্দির ব্ল্যাক ডেথ ও চীন থেকে।
কিন্ত একটা ব্যাপার ভাবার আছে। উত্তর ফ্রান্স এবং ভারতের আবহাওয়া এক না। তাহলে স্প্যানিশ ফ্ল কিভাবে ভারতে বিধ্বংশী হয়? সাধারনত ভাইরাস যে আবহাওয়াতে জন্মেছে, তাতেই সক্রিয় থাকে বেশী। যেমন এখন যত কোভিড-১৯ স্ট্রেইন পাওয়া যাবে, সবই মেইড ইন চাইনা স্ট্যাম্প। এবং এগুলো ১০-২০ ডিগ্রি তামমাত্রায় বেশী এফেক্টিভ। ২৫+ হলে, এদের ওয়াল গলতে শুরু করে দেবে।
কিন্ত তার মানে কি ভারত নিরাপদ বেশী? উত্তর হ্যা এবং না।
যেটা হবে, ভারতে যে কোভিড-১৯ এল, এটা ভারতীয়দের দেহে মিউটেট করবে। অধিকাংশ মিউটেশন খতরনাক না। কিন্ত একটা বা দুটো মিউটেশন এমন হবে, যে তার ফলে যে নতুন ভাইরাস এল, সে কিন্ত ভারতের আবহাওয়াতে মানিয়ে নেবে। ফলে ডেঞ্জারেস ভাবে ছড়িয়ে যাবে ভারতে।
তার সম্ভাবনা কত? পুরোটাই নির্ভর করছে কত লোকে সংক্রামিত হচ্ছে। যদি কম লোক এফেক্টেড হয়, প্রোবাবিলিটিই বলে দেবে সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ভারতের ওয়েদারে মিউটেট করার সুযোগ পাবে না। কিন্ত যদি বেশী লোকে এফেক্টেড হয়, এটা মিউটেট করে , ভারতের ওয়েদারেও খতরনাক হবে।
এই জন্যেই স্যোশাল ডিস্টান্সিং, লকডাউন দরকার। যাতে করোনা মিউটেট করে ভারতের ওয়েদারে ডেঞ্জারেস না হয়। হলে আরেকটা ১৯১৯ অপেক্ষা করছে। কারন ১৯১৯ সাল যে স্প্যানিশ জ্বরে ভারতে বিধ্বংশী হয়, খুব নিশ্চিত ভাবেই তা মিউটেড। না হলে উত্তর ফ্রান্সের ঠান্ডা ওয়েদারের ভাইরাস গাঙ্গেয় উপত্যকার গরম সহ্য করে তান্ডব নৃত্য করতে পারে না।