বাঙালী সব কিছুতেই অলস। আমরা বলি বটে বাঙালী তার অতীত, রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিতে এতটাই আত্মমগ্ন, যে সেই ঐতিহাসিক অন্ধকূপ থেকে এই জাতিকে টেনে তোলা বেশ কষ্টের। আমরা বলি যে বাঙালী ব্যবসা বিমুখ, কারন সে অতীতের গৌরবে মগ্ন।
কিন্ত সত্যিই কি তাই? বাঙালীকি তার অতীতের চর্চাটাই ঠিক ভাবে করে? নাকি সেখানেও পাহাড় প্রমান আলস্য? কারন অতীতের চর্চা ঠিক ভাবে করতে গেলে দেখা যেত, যাদেরকে দিয়ে বাঙালী শ্রদ্ধাবাসর সাজাচ্ছে, তারা ব্যবসা এবং উদ্যোগেও সফল ছিলেন। সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না।
বাঙালীর অতীতচর্চার ক্ষেত্রেও আলস্যটাই চোখে আসে।
তারানাথ তর্ক বাচস্পতির কথা কজন জানেন? কালনার তারানাথ পন্ডিত ছিলেন উনবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত। তার লেখা সংস্কৃত ব্যকরন এবং অভিধান, পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রামান্য। কিন্ত সেটাই সবাই জানে। কেউ জানে না, তারানাথ একজন বিশাল সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁত, ঘি, কাঠের ব্যবসা করতেন গোটা ভারত জুরে। এবং সেই সময়ে তার ব্যবসায় হাজার হাজার লোক নিযুক্ত ছিল। যারা ভাবেন লক্ষী সবং সরস্বতীর সাধনা একসাথে হয় না, তারা বিরাট ভুল জানেন।
বিদ্যাসাগরের ব্যবসায়িক প্রতিভা নিয়ে কজন আলোচনা করেন? সংস্কৃত কলেজের চাকরি ছেড়ে ছাপাখানার ব্যবসায় নামেন বিদ্যাসাগর। স্কুল কলেজের পাঠ্যবই লিখবেন এবং ছাপাবেন। বস্তুত বাংলার বই এর ব্যবসা তার হাতেই তৈরী। দুবছরের মধ্যেই তার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
জমিদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের ওপর ভরসা করতেন বেশী। তবে রবীন্দ্রনাথ বা জ্যোরিরিন্দ্রনাথ কেউই তাদের ঠাকুর্দা দ্বারকানাথের ব্যবসায়িক প্রতিভা পান নি। সামান্য পাটের ব্যবসা করতে গিয়েও লোকসান খেয়েছেন। কিন্ত জমিদারিটা ভালো চালাতেন।
প্রিন্স দ্বারকানাথ বহুভাষায় পন্ডিত ছিলেন। তিনি আরবী ফার্সি ইংরেজি বাংলা সংস্কৃত-তখনকার দিনের সব ভাষাতেই কাজ চালাতে পারতেন। অনেকেই জানেন না দ্বারকানাথের উত্থানের পেছনে সব থেকে বেশী বড় ভূমিকা ছিল তার ভাষা এবং আইনের জ্ঞানের। নবাবদের আরবী ফার্সিভাষার দলিল, ইংরেজিতে তিনিই অনুবাদ করে ছিলেন। এই কারনে তিনি ইংরেজ এবং দেশী রাজন্যবর্গ-দুই দলের কাছেই এক্সেস পান, যা তার ব্যবসা প্রসারনে কাজে আসে।
সুতরাং যেসব বাঙালী, বাঙালীর গৌরবজ্জ্বল অতীতের কথা বলেন, তাদের এটাও জানা দরকার রেনেসাসের বাঙালী পুরুষরা লক্ষী এবং সরস্বতীর সাধনা একই সাথে করেছেন। কারন দেশ লক্ষীছাড়া হলে, সরস্বতী সেখানে থাকে না। আর আধুনিক ব্যবসার জন্য- জ্ঞান বিজ্ঞানের দক্ষতা বিশেষ ভাল ভাবেই দরকার। জাকারবার্গ, বিলগেটস, ইলন মাস্ক-এরা সর্বোচ্চ মানের ইঞ্জিনিয়ার ও ।
স্বাধীনতার পর, বাঙালীর ইন্টেলেকচুয়াল সার্কল কতগুলো অলস পরজীবি ( পড়ুন বামপন্থী) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরে, ভারতে বিরাট বিরাট ব্যবসায়ী ফ্যামিলি এবং কোম্পানীর জন্ম হয়ছে। এর একটাও বাংলার না। বাঙালীর না। মনমোহনের উদারনীতির পর, অন্তত ১৫০ টি আই টি এবং অন্যান্য ব্যবসা তৈরী হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য বিলিয়ান ডলারের বেশী (যাদের আমরা ইউনিকর্ন বলি)। এর মধ্যে টিসিএস, ইনফোসিস এর মতন আইটি কোম্পানী বা অরবিন্দ ফার্মা বাঁ সান ফার্মাও আছে। এর একটিও কোলকাতা বা বাঙালীর না।
স্বাধীনতাউত্তর কালে ভারতবাসীকে বাঙালীর শ্রেষ্ঠদান, "নক্সাল" শব্দটি। যা উপদ্রবের আরেকটি নাম। বাট, অধিকাংশ বাম বাঙালীর কাছে চারু মজুমদার এবং তাদের ভ্রান্ত সঙ্গীরা রোম্যান্টিক হিরো।
বাঙালী অর্থনীতিতে দুটো নোবেল দিয়েছে, সেটা গৌরবের ব্যাপার বুঝলাম। কিন্ত সেই গৌরব বেচে কি, বাঙালার বেকার ছেলেরা চাকরি পাবে? নোবেল বেচে কি বাংলার গ্রাম গঞ্জ থেকে যে লাখে লাখে বেকার শ্রমিকরা কেরালা, মহারাষ্ট্র গুজরাটে কাজের সন্ধানে যায়, তারা ঘরে ফিরতে পারবে?
বাঙালীর ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করে কলকাতার অলস বামবুদ্ধিজীবিরা। যাদের আমি আল্টিমেট লেভেলের ইডিয়ট বলে মনে করি। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই বামমুর্খামো একটা জাতির মধ্যে বদ্ধমূল ধারনা হিসাবে ঢুকে গেছে। এই ক্ষতি হাজারটা আমপানের ও বেশী।
1 comment:
বাঙালি বিশ্ব নাগরিক হতে চেয়েছে কিন্তু নিজের কথা ভাবার সময় হয় নি।
হিন্দু বাঙালি ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রবল সমর্থক। কিন্তু নিজেরা যে সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়ে সর্বস্য হারিয়েছে সেই ইতিহাস বলতেও লজ্জা পায়।
Post a Comment