ছোটবেলায় অঙ্ক বা গ্রামার ভুল করলে, ভারতের সব ছেলেমেয়েরাই কানমলা, ডান্ডা, চোখ রাঙানি,শেমিং, গালাগাল-সব কিছুর সাথেই পরিচিত। এর ফলে, ভারতীয় মনোবৃত্তিতে একটা ধারনা -ভুল করা মানেই লজ্জার। ডাঁহা ফেইল ইত্যাদি। অধিকাংশ ভারতীয়দের এটা পার্মানেট ব্রেইন ড্যামেজ যে জীবনের সব কিছুই পাশ-ফেলের খেলা! সে ডিগ্রি, বিয়ে চাকরি যাইহোক না কেন!
এখন জীবনটা যদি বই এবং অঙ্কের ফর্মুলার মতন কপিবুক হত, ভারতীয়দের কোন অসুবিধা হত না। ফর্মুলা লাগিয়ে ডিগ্রি, এরেঞ্জড ম্যারেজ পর্যন্ত চলে। তারপর সাংসারিক বা পেশাদার জীবনে কিন্ত ফর্মুলা খুব বেশী চলে না।
এই কারনে ভারতের সফটীয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের দুর্নাম যে তারা ভুল স্বীকার করে না। ভাবে ভুল স্বীকার করা ডিসক্রেডিট। ফলে ক্ষতি হয় প্রোজেক্টের।
কারন রিসার্চ ডেভেলেপমেন্ট ওভাবে কপিবুক হয় না। ভুলের বিশ্লেষন থেকেই ঠিক পথের সন্ধান পায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি। ভুল থেকে শেখাটাই প্রগতির একটা অংশ। যে ভুল করে নি, সে কিছুই শেখে নি।
আমি এদ্দিন শুধু ভারতের সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারদেরই গালি দিতাম। যে ছোটবেলার ভীতির কারনে, এরা ভুল স্বীকার করতে চায় না। এখন দেখছি এই ভীতি রাজনীতিবিদদের মধ্যেও! এই পাশফেল মানসিকতার পার্মানেন্ট ব্রেইন ড্যামেজ তাদের ও!
যেন পশ্চিম বঙ্গে বেশী কোভিড-১৯ পেশেন্ট হলে, সেটা মমতা ব্যানার্জির ডিসক্রেডিট। কেরলে কোভিড নির্মূল বলে চেঁচাচ্ছে। মোদি সরকার শুধু নাম্বার নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে ভারতে টেস্টিং এর হার সব থেকে কম। পশ্চিম বঙ্গে আরো কম। যত বেশী পেশেন্ট ধরা পড়বে, তত যে দেশের আর দশের লাভ-কে বোঝাবে? এত সেই সফটীয়ার বাগের মতন হল। যত বেশী বাগ ধরা যাবে আগে, প্রডাক্ট তত মজবুত হয়।
আমেরিকাতে কিন্ত রিপোর্টিং এ জল নেই। এপ্রিলে প্রতিদিন ৪০,০০০ নতুন রুগী, আর ৩০০০+ প্রতিদিন মারা যাচ্ছিল। এখন ২০,০০০ ইনফেকশন ৫০০-৬০০ ডেইলি ডেথ। আস্তে আস্তে ঠিকই নিয়ন্ত্রনে আসছে।
ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে এখন ৫০০০ ইনফেকশন রিপোর্টেড। মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর মধ্যে। বাস্তবে সংখ্যাটা কি ঠিক? আমার ত মনে হয় সর্বাত্নক টেস্টিং করলে এখন ডেইলি ৫০,০০০ সংক্রমন আর ৫০০+ মৃত্যু রিপোর্টেড হবে। অনেকেই অজানা জ্বরে বাড়িতে মরছে। আত্মীয় স্বজনেরা রিপোর্ট করছে না ভয়ে। কারন তাহলে টেস্টিং করবে, আর টেস্টিং পজিটিভ হলে, কোভিড হাসপাতালে পাঠাবে। যেখানে সত্যিকারের কোভিডে মৃত শবদেহের সাথে একসাথে থাকতে হবে। সব থেকে মজার ব্যাপার হল , কোভিড টেস্টিং এর ভুলের সংখ্যা ২০-৩০%। অর্থাৎ কোভিডে না ধরলেও আপনাকে জোর করে কোভিড রুগীদের সাথে পাঠাবে। এবং এমনিতে কোভিডে আপনার মৃত্যু হত না-কিন্ত একবার টেস্টিং করে পজিটিভ এলে ( যেখানে ভুলের সম্ভাবনা ২০-৩০%- এর বেশী একুরেসি সোয়াব টেস্টে সম্ভব না), কেলেঙ্কারি ব্যপার। কারন এমনিতে হয়ত আপনার কোভিড হয় নি। টেস্টে ভুল করেছে। যার সম্ভাবনা ১০ এ দুই বা তিন। কিন্ত কোভিড পেশেন্টদের সাথে একসাথে থাকলে সেটা হবেই!!
বুঝুন অবস্থা। তাহলে দাঁড়াচ্ছে জনগন, রাজনীতিবিদ সবাই কেস চাপতে চাইছে!
এর ফল হবে মারাত্মক। এমনিতে ভারতে লোকেদের বিসিজি টিকা নেওয়া আছে। গরম আদ্র ওয়েদার। ভারতে কোভিড স্ট্রেইন দুর্বল। এসব কারনে ভারতে কিন্ত কোভিডের আক্রমন তীব্র হওয়া উচিত না।
ফলে প্রচুর টেস্টিং করে, যদি সব আসল কোভিড পেশেন্টদের চিহ্নিত করা যেত, তাতে প্রথমে দুদিন নাম্বার বেশী আসত। কিন্ত আস্তে আস্তে কমত। যেমন আমেরিকাতে এখন অর্ধেকে নেমেছে। আরো নামবে। ভারতে কিন্ত বেড়েই চলেছে।
No comments:
Post a Comment