কোভিড নিয়ন্ত্রনে জার্মানীর সাফল্য এবং বিজ্ঞানী এঞ্জেলা মর্কেল -
****
(১)
ইউরোপের স্কোর এই রকম [ আজ অব্দি]
(১)
ইউরোপের স্কোর এই রকম [ আজ অব্দি]
আক্রান্ত ('০০০) মৃতস্পেন ২০৪ ২১,২৮৪
ইটালি ১৮৩ ২৪, ৬৪৮
ইংল্যান্ড ১২৯ ১৭, ৩৩৭
ফ্রান্স ১৫৮ ২০,৭৯৬
জার্মানী ১৪৮ ৫,০৩৩
ইটালি ১৮৩ ২৪, ৬৪৮
ইংল্যান্ড ১২৯ ১৭, ৩৩৭
ফ্রান্স ১৫৮ ২০,৭৯৬
জার্মানী ১৪৮ ৫,০৩৩
আমেরিকার কথা বাদ দিলাম। আউট অব কন্ট্রোল। ৮১৭,০০০ আক্রান্ত, ৪৫,২২২ মৃত।
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ইউরোপের হার্টল্যান্ডে স্পেইন, ইটালি, ফ্রান্সের আশেপাশে থেকেও, জার্মানীতে কিন্ত করোনাতে মৃত অনেক কম। যদিও আক্রান্তের সংখ্যা সমান।
জার্মানীর এই সাফল্যের কারন কি?
(২)
ঘুরেফিরে, চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মর্কেলের নেতৃত্বর স্টাইল সামনে আসছে। কেন সেটা ব্যখ্যা করি। তার আগে এঞ্জেলা মর্কেল সম্মন্ধে জানা যাক।
উনার জন্ম পূর্ব জার্মানীতে, কমিনিউস্ট শাসনের জমানায় ১৯৫৬ সালে। বাবা ছিলেন পাদ্রী। ফলে কমিনিউস্টরা কখনোই ভাল চোখে দেখে নি এই ফ্যামিলিকে। এঞ্জেলা, বার্লিন ওয়ালের পতন পর্যন্ত রাজনীতির ধারে কাছে যান নি। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রিতে পি এই চ ডি করে, গবেষক ছিলেন।
বার্লিন ওয়ালের পতনের সাথে সাথে,পূর্ব জামানীর লোকেরা গণতন্ত্রের স্বাদ পেল। পূর্ব জামানি তখন কমিনিউস্ট অপশাসনে তৃতীয় বিশ্বের সমতুল্য ( যদিও কমিনিউস্ট ব্লকের মধ্যে এদের অবস্থায় সর্বাধিক ভাল(!) ছিল । এঞ্জেলা মর্কেল তখনই রাজনীতিতে যোগ দেন এবং তার উত্থান ঈর্ষানীয়।
এঞ্জেলা মর্কেলে চরিত্রে অদ্ভুত গুন আছে। বহুদিন বিজ্ঞানী ছিলেন বলে, তথ্য প্রমান নাম্বার ছাড়া সিদ্ধান্ত নেন না আবেগের বশে। আবার কমিনিউস্ট নিপীড়নের মধ্যে বড় হয়েছেন বলে, রাষ্ট্র যাতে জোর করে নাগরিকদের ওপর না সিদ্ধান্ত চাপায়-সেই ব্যাপারেও সজাগ।
এবার দেখুন জার্মানী কি করেছে যা আমেরিকা বা প্রথম বিশ্বের লোকেরা করতে ব্যর্থ
- প্রচুর টেস্টিং। জার্মানী দুই মিলিয়ানের বেশী টেস্টিং করেছে। গণহারে। কোভিড-১৯ এর টেস্ট কিট ও প্রথম তৈরী হয়েছে জার্মানীতে। সরকারি খরচে গণহারে টেস্টিং করানো হয়েছে
- অন্যান্য দেশের মতন করোনা হাসপাতাল করে ফটো শেসন বা সেনসেশনের দিকে যায় নি জার্মানি। এরা যেহেতু তথ্য এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিরোধ সিস্টেম গড়তে চেয়েছে, সেহেতু দ্বিস্তরীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরী করেছে। করোনা আক্রান্ত রুগীদের প্রথমে দেখছে প্রথম স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা- ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানে আই সি ইউ বা ভেন্টিলেশন নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা করে বড় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকাতে বিশাল মৃত্যুর বড় কারন এই যে যখন হাসপাতালে রুগী আসছে, তখন তার মরার চান্স বিশাল। দ্বিস্তরীয় ব্যবস্থা থাকায়, জার্মানীতে ক্রিটিক্যাল পেশেন্টদের আরো আগে হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। সেখানেই প্রচুর প্রান বেঁচেছে। ভারতের দিকে তাকান। এক সমস্যা। অনেক রুগীর মারা যাওয়ার পর জানছে ( স্বর্গে বসে অবশ্যই), তারা করোনা আক্রান্ত।
- লক ডাউন করাতেও জার্মানীর সাফল্য বেশী।
তবে প্রচুর টেস্টিং এবং দ্বিস্তরীয় রেসপন্স জার্মানীকে সব থেকে বেশী সাফল্য দিয়েছে।
(৩)
এবার ট্রাম্প, মোদি মমতায় আসি। এই বিপুল জনপ্রিয় নেতারা এখনো হেডলেস চিকেনের মতন নাচানাচি করছেন। জার্মানী যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ট্রাম্প কিস্যুই করে নি। মোদিও আগে থেকে ইন্টান্যাশানাল ফ্লাইট রধ করে নি। ভারতে ডাক্তারদের জন্য পি পি এই পর্যন্ত নেই। কিন্ত এখনো পর্যন্ত ভারতে সেই ভাবে টেস্টিং ই শুরু করা যায় নি। মমতাদির কথা ছেড়েই দিলাম। পাবলিক হেলথ সিস্টেম ছাড়া করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব। ডিসেম্বর মাস থেকেই ভারতের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু ভারত এবং পশ্চিম বঙ্গে পাবলিক হেলথের অবস্থা খুব খারাপ। ভারতে শুনি এত এত আবিস্কার হচ্ছে, কিন্ত শেষে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ফল্টি টেস্ট কিট!
পশ্চিম বঙ্গে করোনায় মৃত্যু ছেড়ে দিলাম। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যা অবস্থা, কোন বয়স্ক লোকের হার্ট এটাক বা স্ট্রোক বা অন্য কোন কঠিন রোগ হলে মৃত্যু অবধারিত। যেসব মহিলাদের ডেলিভারী হবে, তাদের কথা, তাদের সন্তানদের কথা ভেবে ভয় হচ্ছে।
প্লেটোর রিপাবলিকে গুরু সক্রেটিস গনতন্ত্রের বেহাল দশাকে জাহাজের সাথে তুলনা করেছিলেন ( বুক-৬) । করোনা প্যানডেমিকে আমেরিকা ভারত পশ্চিম বঙ্গে যা নাটক দেখছি-গনতন্ত্রে যে এমনটাই হয়, সক্রেটিস আড়াই হাজার বছর আগেই লিখেছেন।
যেমন সক্রেটিস বলছেন-গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে সেই জাহাজের মতন-যেখানে জাহাজের ক্যাপ্টেনের ( বুরোক্রাট) ভাল জ্ঞান থাকলেও তাকে সেলরদের ( রাজনীতিবিদ) কথা শুনে চলতে হয়। যারা নিজেদের সব জান্তা বলে দাবী করে -কারন সেলররা মদ এবং গাঁজা খাইয়ে জাহাজের মালিকদের (জনগন ) হাত করেছে এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন ( বুরোক্রাটরা, এডমিনিস্ট্রেটররা ) যতই দক্ষ হোন না কেন, তাকে সেলরদের ভুলভাল নির্দেশেই জাহাজ চালাতে হবে।
গণতন্ত্রের সমস্যা এটাই যে এখানে ভোট পেতে গেলে, মানে যে নেতা হতে চাইবে- তাকে জনগনের নেতা হওয়ার জন্য -জনতাকে ঘুঁশ দেওয়া, ধর্ম জাতির আফিং খাওয়ানো এইসবই করতে হয়।
ফলে ট্রাম্প, মোদি, মমতা যারা ওই জনমোহনের কাজটি ভাল পারেন, তারাই নেতা। বিজ্ঞানীরা কি করে নেতা হবেন?
কিন্ত কোভিড-১৯ এর মতন অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়তে গেলে বিজ্ঞান ছাড়া গতি নেই। তখন দেশের লাগে একজন বিজ্ঞানী কম্যান্ডার ইন চিফ। যিনি জানবেন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দেশ বাঁচাতে হয়। এঞ্জেলা মর্কেল সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। রাজনীতিবিদের সাথে একজন বিজ্ঞানীর পার্থক্য কি।
মোদি ট্রাম্প মমতা? এখনো চিত্রনাট্য উপহার দিচ্ছেন। উনারা ওটাই ভাল পারেন। জনগন সেই জন্যে এদেরই ভোট দেয়। কিন্ত দুর্ভাগ্য নাটক সাজানো গল্পই। বাস্তব না। আপনে বিশ্বাস করলেও না।
( বিপ্লব পাল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২০)
No comments:
Post a Comment