ক্যাপিটালিজম এবং নেতৃত্ব
-বিপ্লব পাল ৪/১৩/২১
অনেকেই মনে করেন দরিদ্র ফ্যামিলিতে জন্মানো ডিজএডভান্টেজ! বড়লোক ফ্যামিলিতে জন্মানো ছেলেরা প্রচুর বাড়তি সুবিধা পায়। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এ স্বতসিদ্ধ!
আসলেই কি তাই? আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের সব ফাউন্ডিং ফাদাররাই ভীষন দরিদ্র ফ্যামিলি থেকে উঠে সেছে। রকাফেলার, ভান্ডারবিল্ট, এডিসন, কার্নেগী। শুধু তাই না। রকাফেলার বা ফোর্ড নিজেরাও জানতেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা প্রচুর্য্যের মধ্যে মানুষ হলে, অমানুষ হবে।
ফলে রকাফেলার তার ছেলেকে বহুদিন পর্যন্ত একটা গাড়ি কিনে দেন নি। স্কুলে পড়া কালীন সিনেমাতেও যেতে দিতেন না। বাপ ছেলের একমাত্র রিক্তিয়েশন ছিল- উইকেন্ডে বাইসাইকেল চালানো। গাড়ী নিয়ে ঘোরা ছিল বারন। উনবিংশ শতাব্দিতে আমেরিকার সব থেকে ধনী ব্যক্তিটি মাত্র ন বছর বয়স থেকে মায়ের তৈরী লজেন্স বেচে সংসার চালিয়েছেন। কারন তারা বাবা, মাকে ছেড়ে প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়েছিল। দারিদ্র তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল-যার জন্যে তিনি মনে করতেন, তার একমাত্র ছেলেকে কিছুতেই প্রাচুর্য্যের মধ্যে রাখবেন না। তার ধারনা ছিল প্রাচুর্য্য মানুষকে নষ্ট করে !
এরফলে রকাফেলারের ছেলে জন ডি রকাফেলার যখন বিয়ে করেন, তার বিবাহিত জীবন সুখী হয় নি। কারন তার স্ত্রী ভাবতেই পারে নি রকাফেলার পরিবার, যা আমেরিকার সবচেয়ে ধনী, তাদের ফাউন্ডিং ফাদার, খুব ইচ্ছাকৃত দরিদ্রের মধ্যে ছেলেকে মানুষ করেছেন। একই কাজ করেছিলেন ফোর্ড। এইজন্য বাপ ছেলের মধ্যে প্রচুর সংঘাত ও ছিল। যেটা গুরুত্বপূর্ন। এরা জানতেন, ছেলেমেয়েরা প্রাচুর্য্যের মধ্যে মানুষ হলে নষ্ট হবে। যার জন্য খুব সাধারন ভাবে নিজেদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে মানুষ করেছেন। যেহেতু এরা নিজেরা বুঝেছিলেন দরিদ্রের মধ্যে উঠে আসাটা তাদের কাছে সুবিধা দিয়েছে। অসুবিধা না।
যার জন্য আজকে আমেরিকার যারা বিলিয়ানার তাদের ৬৮% সেলফ মেড। তাদের কয়েকজনের বাবা হয়ত মিলিয়ানার ছিল। যেমন জেফ বেজোস। কিন্ত বিল গেটসের বাবা তা নন। কিন্ত এদের সকলের মধ্যে একটা মিল আছে। এরা সবাই উচ্চশিক্ষিত ফ্যামিলি থেকে এসেছেন। অর্থাৎ শিক্ষাটা কিন্ত বর্তমান সময়ে অর্থের থেকেও অনেক বেশী প্রিভিলেজ।
জেফ বেজোস পৃথিবীর ধনীতম ব্যক্তি এখন। তারা বাবা তাকে ৩০০,০০০ ডলারের লোন দিয়েছিলেন, সেটা গুরুত্বপূর্ন না। যেটা বুঝতে হবে ছাত্র হিসাবে তিনি মেধাবী ছিলেন। প্রিন্সটনে ফিজিক্স পড়তে গেছিলেন-যেখানে একদা পড়াতেন আইন্সটাইন এবং বর্তমানেও প্রচুর নোবেল লরিয়েট আছে। ফিজিক্সের সেরা ছাত্ররাই সেখানে পড়তে যায়। তিনিও ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ পাবেন। যাইহোক, ফিজিক্সে তার মোহভঙ্গ হয়। কম্পিউটার মডেলিং এ দারুন উতসাহ পেলেন। ফলে উঠতি ওয়েব টেকনোলজি জগতে ঢুকে গেলেন। ভুললে চলবে না , তিনি ম্যাথ ফিজিক্স শিখেছেন প্রিন্সটনের নোবেল লরিয়েট প্রফেসারদের কাছ থেকে। সাথে সাথে কঠোর পরিশ্রম ছিলই। এবার আপনারাই বলুন-কজন ম্যাথ ফিজিক্সের এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে, অধ্যাপনার আরামের চাকরি ছেড়ে ব্যবসার কঠিন জগতে নামবেন? তিনি পৃথিবীকে নতুন কিছু দিতে চেয়েছিলেন।
ইলন মাস্ক ও তাই। ফিজিক্সে পি এই চ ডি করতে করতে ড্রপ আউট করেন। পে প্যাল বানালেন। উনিও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের সন্তান।
বিল গেটস স্কুল বয়স থেকে প্রোগ্রামিং করছেন যখন গোটা আমেরিকাতে ১০০ টা কম্পিঊটার ছিল না। তিনি নিজেই তুখোর প্রোগ্রামার।
আর গোটা পৃথিবীতে গেটস, মাস্ক, বেজোসের প্রভাব আমেরিকার প্রেসিডেন্টের থেকে বেশী। মোদ্দা কথা এরা অসাধারন প্রতিভাবান, এবং পরিশ্রমী। বিল গেটস কখনো সখনো এক নাগারে না ঘুমিয়ে ৪০ ঘন্টা প্রোগ্রাম লিখতে পারতেন। বেজোস প্রতিদিন সকাল ৫ টা থেকে ১২ টা শুধু কাস্টমার প্রবলেম সল্ভ করতেন-দীর্ঘদিন এইকাজ করেছেন, নিজের ব্যবসা বোঝার জন্য। কি দরকার ছিল একজনের যিনি নোবেল লরিয়েটদের কাছে ফিজিক্স শিখেছেন-তিনি দিনের পর দিন একজন সাধারন কাস্টমারের কমপ্লেইন শুনছেন -কেন পাকেজিং বাজে। বা ভুল জিনিস গেছে। এবং সেই কমপ্লেইনকে ম্যাথেমেটিক্যাল এলগোরিদ্মে ভেঙে টিমকে ব্যখ্যা করছেন!! একটা জিনিস জানতে হবে। ১৯৯৫-৯৯। প্রায় ২০০০ ইকমার্স কোম্পানী আমেরিকাতে তৈরী হয়েছিল। অন্তত ৪০০ কোম্পানী ক্যাপিটাল পেয়েছিল। কিন্ত কেউ এমাজন হয় নি। হয়েছে জেফ বেজোসের কোম্পানী-কারন তার নেতৃত্ব। আর তিনি ওই নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন-কারন তার শিক্ষার লেভেল, বুদ্ধি এবং পরিশ্রম।
আজকের আমাজন, গুগল, নেটফ্লিক্স । অতীতের আমেরিকান স্টিল ( কার্নেগী), স্টান্ডার্ড ওয়েল ( রকাফেলার)। এগুলির ইতিহাস ডিটেলেসে পরলেই বোঝা যায়, মূলত নেতৃত্বের গুনেই এরা গোটা পৃথিবী জয় করেছিল। কারন একই সময় হাজারটা আমাজন,হাজারটা গুগল, হাজারটা ফেসবুক এসেছে। সফল হয়েছে মাত্র একটি করেই। কারন নেতৃত্ব। শুধু টাকা দিলেই এসব কোম্পানী তৈরী হয় না। একজন ইলন মাস্ক, একজন বিল গেটস একজন জেফ বেজোস লাগে। আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের সাফল্য এখানেই যে সিস্টেম এইসব অসাধারন লোকেদের নেতৃত্বে উঠতে দিচ্ছে। যা আর কোন সিস্টেমে হয় না
No comments:
Post a Comment